মায়াবন্দী লেখিকা-তাসনিম তামান্না পর্ব-১

0
727

#মায়াবন্দী
লেখিকা-তাসনিম তামান্না
পর্ব-১

☆☆☆

-সিয়া তুই জানিস তোকে পুরা জোকারের মতো দেখতে তার ওপরে আবার মেকাপ করছিস তাহলে ভাব তোকে কেমন লাগছে পুরাই হুতুমপেঁচা (সাদমান)

-একটা কথা কি জানো ভাইয়া কাকে ময়ূরের পেখম লাগালে কাক কখনোই ময়ূর হয় না কাক কাকই থাকে। (রুমা)

-সিয়া আপু তুমি মেকাপ করছো ঠিক আছে একটু ভালো করে করতে যাতে তোমার কালো রংটা ডেকে যায়। আর তুমি তো ঢাকায় থাকো আপু ফর্সা হওয়ার ক্রিম মাখতে পারো তো আপু(সুমা)

সিয়ার চোখ ছলছল করে উঠলো ওদের কথা শুনে এদিক ওদিক তাকিয়ে চোখের পানিটা বের করতে চাইছে না। সবাই ফ্রী তে মজা নিচ্ছে। কেউ কেউ মুখ টিপে হাসছে। সিয়া কিছু না বলে ওখান থেকে চলে আসলো পিছন থেকে সাইমা অনেক বার ডাকলো কিন্তু শুনলো না। সাইমা রেগে বলল

-ভাইয়া এমন ভাবে না বলেও পারতিস তুই এমন কথা না বললে সুমা আর রুমা আপু এভাবে অাপুকে অপমান করার সুযোগ পেতো না (সাইমা)

-সিয়া আপুকে অপমান করলাম কখন যেটা সত্যি সেটাই বলছি (রুমা)

-না সেটা সত্যি না আপু মটেও কালো নই আপু শ্যামলা (সাইমা)

-ঔ একই হলো আর তুই এতো কথা বলছিস কেনো ছোট ছোটর মতো থাক বড়দের মাঝে কথা বলতে আসবি না (রুমা)

-তুমিও তো সিয়া আপু আর ভাইয়ারর ছোট তাহলে তুমি আর তোমার বোন ওদের মাঝে কথা বললে কেনো? (সাইমা)

-সাইমা তুই কিন্তু বে…..(রুমা)

-স্টপ কি শুরু করছিস তোরা আর সাদমান, সুমা,রুমা তোরা সিয়ার সাথে মটেও ঠিক করিস নি সবসময় সিয়াকে সবার সামনে ছোট না করলে হয় না তোদের (আয়মান)

আয়মান কথাটা বলে উঠতে চাইলে সাইমা বাঁধা দিয়ে বলল

-ভাইয়া তুমি কোথায় যাচ্ছো (সাইমা)

-সিয়া বোনটা কষ্ট পাইছে ওর কাছে যাচ্ছি (আয়মান)

-তুমি বসো ভাইয়া তোমার বিয়ে তুমি না থাকলে লোকে খারাপ ভাববে আর আপুকে এখন শত ডাকলেও আপু আসবে না পরে কথা বলো (সাইমা)

আয়মান আর উঠলো না। সাদমান মাথা নিচু করে হাত মুট করে বসে আছে। সাদমানের ফেন্ড সুমন বলল

-এভাবে সিয়াকে না বলেও পারতিস ছোট বোন হয় তো আপন না চাচাতো বোন তো (সুমন)

সাদমান রাগে লাল হওয়া চোখ দিয়ে সুমনের দিকে তাকিয়ে বলল

-এখন কি আমার তোর কাছ থেকে শিখতে হবে কার সাথে কি ভাবে কথা বলবো (সাদমান)

-আরে আমি তো তেমনটা ব…..(সুমন)

সুমন আর কিছু বলার আগে সাদমান ওখান থেকে উঠে চলে গেলো।

★★★

সিয়া রুমে এসে দরজা বন্ধ করে কাঁদতে কাঁদতে হাতের কাচের চুরি, গলার সিম্পিল হার, কানের দূল খুলে ছুড়ে ফেলে দিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে মুখ ধুয়ে আয়নার দিয়ে নিজের দিকে তাকিয়ে বলল

-এমনটা না করলেও পারতেন আমি তো আপনার সাথে বা আপনার ব্যাপারে কোনো কথা বলতে যায় না তাহলে কেনো বার বার আপনি আমাকে যখন তখন সবার সামনে এভাবে অপমান করেন কি দোষ আমার? আমার তো কোনো দোষ নেই? তাহলে কেনো আমি সবার সামনে হাসির পাত্রি হই। অন্য কিছুর মর্যাদা নাই দিতে পারেন বোন হিসেবে একটু তো ভালো ব্যবহার করতে পারেন। যতটা না আমি আপনার কথায় কষ্ট পায় ততটা অন্য কারোর কথায় কষ্ট পাই না কেনো বুঝেন না আপনি, আমি কখনোই আপনার সামনে আসতাম না শুধু আম্মু জোর করে এখানে নিয়ে আসছে আর সিয়া জোর না করলে আমি শাড়ি কেনো সেজে ওখানে যেতামও না (সিয়া)

সিয়া মুখে হাত দিয়ে চেপে ধরে বেশ কিছুক্ষণ কান্না করে শাড়ি চেঞ্জ করে ওয়ানামেন্টগুলো গুছিয়ে রেখে বারান্দায় দাঁড়িয়ে রাতের চাঁদ তাঁরা বিহীন আকাশটার দিকে তাকিয়ে বলল

-তুমি তো ওখানে গিয়ে ভালোই আছো তাই না শুধু আমার জীবনটাই ‘সাদমান নামক নড়ক’ বানিয়ে দিয়ে গেলে (সিয়া)

দরজা ধাক্কা দেওয়ার শব্দ শুনে সিয়া একটা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে চোখ মুখ ভালো করে মুছে দরজা খুলে দিলো। দরজা খুলে নিজের মায়ের হাসি মাখা মুখ দেখে কষ্ট গুলো তুচ্ছ মনে হতে লাগলো সবাই অবহেলা করলেও মা কখনো অবহেলা করতে পারবে না যতই রাগ করুক না কেনো দিন শেষে আগলে রাখবে তার কোলে মাথা রাখলেই সব কষ্ট দুঃখ গুলো যেনো ভয়ে নিমিষে পালিয়ে যায় আবার নতুন করে বাঁচতে ইচ্ছে করে। সিয়ার তার বাবা মায়ের সাথে বন্ধুসুলভ সম্পর্ক। নিজের মাকে দেখে মুচকি হেসে দরজা ছেড়ে বেডে গিয়ে বসতে বসতে বলল

-সাদিয়া বেগমের সিদ্রাতুল সিয়ার কথা মনে পড়লো নাকি সে ভুলে গেছে তার একটা মেয়ে আছে (সিয়া)

-তার মতো ফাজিলের হাড্ডিকে কি কখনো ভোলা যায় (সাদিয়া)

-হ্যাঁ তা তো দেখতে পাচ্ছি সারাদিন শুধু খাওয়ার সময় ছাড়া তার দেখা পাওয়া বড় দাই হয়ে গেছে (সিয়া)

-বিয়ে বাড়িতে কম কাজ তাও তো বেশির ভাগ গ্রামের লোকজনই করে দিচ্ছে না হলে অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যেতো আচ্ছা ওসব বাদ দিয়ে বলতো তোর বাপ কই (সাদিয়া)

-আমার বাপ কই মানে তুমি একটু লাজুক হেসে বলবা তোমার বরটা কই তা না করে ধমক দিয়ে বলতাছ আমার বাপ কই (সিয়া)

-আমার এখন এসব ঢং আসছে না তোর বাপকে আমি খুজেই পাচ্ছি না (সাদিয়া)

-কেনো খুঁজে পেয়ে কি প্রেম করবা (সিয়া)

সাদিয়া চোখ দিয়ে শাশালো সেটা দেখে হেসে বলল

-হিহিহিহি তোমার বরকে ঔষধ দিয়েছি আর সেটা তিনি খেয়েছে এখন ওনি ওনার পুরনো বন্ধুদের সাথে হাসিতামাশায় মেতে আছেন (সিয়া)

-তা না হয় বুঝলাম তা আপনি এখানে কি করছেন ছোটরা সবাই ছাদে মজা করছে আর আপনি রুমে বসে ফোন গুতাছেন (সাদিয়া)

সিয়ার ছাদের কথা মনে পড়তেই মন খারাপ হয়ে গেলো কিন্তু সেটা মাকে বুজতে না দিয়ে বলল

-আমার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দাও তো ছাঁদে গান বাজনাই মাথাটা ব্যাথা করছিলো তাই চলে আসছি (সিয়া)

সাদিয়া তারাহুরো করে এসে সিয়ার মাথায় গলায় হাত দিয়ে চেক করলো অনেক সাধনার পর একমাত্র মেয়ে কি না!

-না জ্বর টর তো নাই শুধু গা গরম (সাদিয়া)

-হ্যাঁ তো! তোমাকে কে বললো আমার জ্বর আসছে (সিয়া)

-ত্যাড়ামি না করে শুয়ে পড় (সাদিয়া)

-তোমার কোলে মাথা রাখবো (সিয়া)

সাদিয়াও মুচকি হেসে বসতেই সিয়া সাদিয়ার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো সাদিয়াও মায়াময় হাতে সিয়ার মাথায় হাত বুলাতে লাগলো। সিয়া চোখ বন্ধ করে নিলো।

-মাথায় তেল দিবি (সাদিয়া)

-উহুম বাসায় গিয়ে এখন ঘুম পাচ্ছে (সিয়া)

-সেকি খাবি না? (সাদিয়া)

-উহুম স্যান্ধার দিকে পকরা খাইছি এখন আর খেতে পারবো না (সিয়া)

-আচ্ছা ঘুমা (সাদিয়া)

-আম্মু (সিয়া)

-হুম (সাদিয়া)

-আমার এখানে না আসলেও হতো (সিয়া)

-কেনো কেউ কিছু বলছে তোকে (সাদিয়া)

সিয়া ঝট করে চোখ খুলে সাদিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল

-ককি বলছো আমাকে আবার কে কি বলবে আমার ইয়ার চেঞ্জ এক্সাম তাই আর কি বলছিলাম (সিয়া)

-তাই তাহলে কাঁদছিলি কেনো (সাদিয়া)

-মামানে ককই কখন তুমি….(সিয়া)

-থাক আর গুছিয়ে মিথ্যা বলতে হবে না সবার চোখকে ফাকি দিতে পারলেও মায়ের চোখকে কখনো ফাকি দেওয়া যায় না বুঝলি তোর তো মাথা ব্যাথা করছে ঘুমিয়ে পর আমি আছি (সাদিয়া)

সিয়ার আর কিছু না বলে আস্তে আস্তে ঘুমের দেশে পাড়ি দিলো। সিয়া ঘুমিয়ে যেতেই সাদিয়াও আরো কিছুক্ষণ থেকে দরজা চাপিয়ে চলে গেলেন।

.

মাঝরাতে সিয়ার মুখে কারোর উষ্ণ নিশ্বাস পড়তে পিটপিট করে চোখ খুলে মুখের সামনে থাকা রক্ত চক্ষু মানবকে দেখে ভয়ে সিয়ার ঘুম ভাব উরে গেলো ভয়ে শ্বাস আটকে যাওয়ার উপক্রম।

#চলবে
#Tasnim_Tamanna

[ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গঠন মূলক কমেন্ট করবেন। নতুন গল্প কেমন লাগলো যানাবেন]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here