#এক_কাপ_চা পর্ব ৩৭

0
443

#এক_কাপ_চা পর্ব ৩৭
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)

(১৯০)
“রাশেদ যখন স্নেহার দায়িত্ব নিতে চায় তাহলে দিতে সমস্যা কোথায়?”

তাশদীদের মায়ের প্রশ্নে তার দিকে মুখ তুলে তাকালো সামিনা। স্নেহার গায়ে কাথা টেনে দিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো।তাশদীদের মায়ের প্রতি তার বিরক্তি এখন রাগে পরিণত হচ্ছে।কেন সে তার সন্তানকে অন্যের নামে পরিচিত করতে হবে?
তার চোখে এতদিন একটা কাপড় বাধা ছিল, ছিল অহমিকার পট্টি পড়ানো। আজ সে বাস্তবতা কে মেনে নিয়েছে। যে হারিয়ে যায় তার শূন্যস্থান সব সময় পূর্ণ করা যায় না।
ঠিক তেমনি দেরীতে হলেও সামিনা নিজের সব ভুল বুঝতে পেরেছে। সে লজ্জাসংকোচ নিয়ে এই পরিবারে এক কোণে থাকছে, ইখুমের চোখের দিকে তাকাতে পারে না। তবুও অপরাধ বোধ তাকে তিলে তিলে কষ্ট দিচ্ছে।তার অনুতপ্ততা কারোর চোখে না এলেও এতে কোনো আপত্তি নেই কিন্তু প্রায়শ্চিত্ত হিসেবে যে কেউ এসে তার সন্তানের দায়িত্ব নিতে চাইবে এটা সে মেনে নিতে পারবে না।

তার সন্তান শুধু তার স্বামীর নামেই পরিচিত হবে।এটা সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছে সে। তবুও কেন এতবার তাকে চাপ দেওয়া হচ্ছে?
সামিনাকে চুপ থাকতে দেখে তাশদীদের মা পুনরায় জিজ্ঞেস করলো,

“কী রে?কথা বলিস না কেন?”

“আপা আমার যা বলার আমি বলেই দিয়েছি।”

“এখন কেন না করছিস?আগে তো এটাই চাইতি!এই নিয়ে কত অভিনয়, কত রঙ তামাশা দেখিয়েছিস। ভুলে গেছিস?”

সামিনার অপরাধ বোধ তাকে আরো একবার আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো।লজ্জায় মাথা নিচু করে রইল সে। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর সে বলল,

“আমি অনেক ভুল করেছি আপা। এর মানে এই না যে আমি আমার ভুল বুঝতে পারিনি কিংবা অনুতপ্ত নই। আমি ইখুমের কাছে,আপনাদের সবার কাছে এই নিয়ে অনেক বার মাফ চেয়েছি।আরো একবার চাইছি, প্রয়োজনে সারা জীবন চাইবো কিন্তু আমাকে আর এভাবে লজ্জা দিয়েন না।”

“লজ্জার কাজ করেছিস,দেবরের কাছে বিয়ে বসতে চেয়েছিস মেয়ের দোহাই দিয়ে, তার বাচ্চাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিস। শুধু মাত্র নিজের মেয়ের ভবিষ্যৎ এর দোহাই দিয়ে তবে আজ যখন ওরা দুজনেই তোর মেয়ের দায়িত্ব নিতে চাইছে তখন উল্টো নাটক কেন করছিস? বিরক্ত লাগছে।”

“আমি জানি আপা আমি অনেক ভুল করেছি। আমাকে মাফ করে দেওয়ার মতো ভুল করিনি। কিন্তু আমি তখন ভুল ছিলাম।আজ আমি নিজের ভুলটা বুঝতে পারছি তাই আমার মেয়ে আমার থাকুক।তার কোনো বাবার প্রয়োজন নেই।আমিই ওর মা-বাবা হতে পারবো।”

সামিনার কথায় তাশদীদের মা প্রচন্ডরকম বিরক্ত হলেন।চেয়ার থেকে উঠে চলে যেতে যেতে বললেন,

“নয়শো নব্বইডা ইন্দুর মাইরা বিলাই এহন হজে বইছে।”

প্রতি উত্তর হিসেবে সামিনা মাথা নিচু করে বসে রইল। তার শরীরটা ইদানীং ভালো যাচ্ছে না।সে এখন পুরো সময় তার মেয়েকে দিতে চায়। অন্য কাউকে না।

(১৯১)

বরটা চলে গেল, মনটা ভেঙে গেল
প্রেস্টিজ যা ছিল পাংচার হয়ে গেল।
রেললাইনে গলা দেবো
তখন আমি ভেবেছিলাম,
তারপর হঠাৎ করেই
লাইফে আমার ঘন্টু এলো।

ও ঘন্টু সোনা দুটো হাম্পি দেনা
আমি মাইরি বলছি আর খৈনি খাব না,
চাঁদনী রাতে আমি ঘন্টুর সাথে
যাবো ডিনার ডেটে পোচ মামলেট খেতে ..

ঘন্টু,
নাকে নাক ঘষে দেনা,ঘন্টু
তুই আমার পুঁচকি সোনা।

সকাল সকাল তাশদীদের ঘুম ভাংলো সাগরিকার গাওয়া গান শুনে। ওয়াশরুমে গোসল করছে সে। আর জোরে জোরে গান গাইছে। যে কোনো গানের বারোটা বাজানোর জন্য সাগরিকা একাই যথেষ্ট। তাশদীদ এখন এসব অভ্যস্ত হয়ে গেছে। বেড টেবিলের উপর থেকে ফোন নিয়ে দেখতে পেল বেলা এগারোটা বাজে। এতক্ষণেও সাগরিকা তাকে ডাকেনি এটা বড়ই আশ্চর্যের বিষয়।
বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে তাশদীদ তাদের ঘরের লাগোয়া বারান্দার স্লাইডিং ডোর খুলে দিলো।বাইরে মেঘ করেছে। ফিরে এসে বিছানা গুছিয়ে নিলো সে। সাগরিকা সম্পূর্ণ ভাবে তাশদীদের রুমে শিফট হয়েছে। এর সাথে শিফট হয়েছে সাগরিকার অগোছালো স্বভাব।একটা মেয়ে এতটা অগোছালো হতে পারে এটা সাগরিকাকে না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না।
তার ক্লোজেট, ড্রেসিং টেবিল সব সময় অগোছালো, সেই অগোছালো মেয়েটা এসে পড়েছে তাশদীদের গোছালো জীবনে।
প্রথম প্রথম তাশদীদের কিছুটা সমস্যা হলেও ইদানীং আর হচ্ছে না। সে জানে সাগরিকা এমনটাই কিন্তু এটাও ঠিক যদি তাশদীদ একবার সব কিছু গুছায় তবে সাগরিকা যথেষ্ট চেষ্টা করে সেগুলো নষ্ট না করার। তবে সেটা চেষ্টা অবধিই সীমাবদ্ধ।

সাগরিকার গান বন্ধ হয়নি এখনো। সে অনবরত গেয়েই চলেছে

“ঘন্টু! ,
নাকে নাক ঘষে দেনা,ঘন্টু
তুই আমার পুঁচকি সোনা।”

তাশদীদ ওয়াশরুমের দরজায় আঘাত করতেই সাগরিকার গান বন্ধ হয়ে গেল।কোনো সাড়া শব্দ না পাওয়াতে তাশদীদ বলল,

“দুই মিনিটের মধ্যে বের না হলে তুই যে নাক তোর ঘন্টুর নাকে ঘষতে চাইছিস তা ফাটিয়ে দিবো।”

সাগরিকা বেরিয়ে দেখতে পেলো তাশদীদ রুমে নেই।দ্রুত বের হয়ে নিচে নেমে এলো সে।ড্রয়িং রুমে বসতেই স্নেহা ছুটে এসে বলল,

“আপু!চাচ্চুড় খাবে?”

“চাচ্চুর না স্নেহা চানাচুর হবে।হুম খাবো দাও।”

“তাহলে রান্না ঘরের উপর থেকে পারতে হবে। যাবা?”

“আচ্ছা চলো যাই। তোমার চাচ্চুড় আর আমার একমাত্র আলাভোলা জামাইয়ের জন্য চা বানায় নিয়ে আসি।”

স্নেহা কী বুঝলো তা সাগরিকাও বুঝতে পারলো না। তবে মাথা দুলিয়ে চলল তার সাথে।সাগরিকা স্নেহাকে রান্না ঘরের একটা টুলে বসিয়ে তাকে চানাচুর খেতে দিলো।আর চায়ের পানি চুলোয় দিয়ে স্নেহার জন্য চকলেট মিল্কশেক বানাতে লাগলো।চা হয়ে এলে তাশদীদের জন্য নিয়ে ফিরে এলো স্নেহার সাথে। ইতিমধ্যে ড্রয়িং রুমে সবার মধ্যেই চিন্তার ছাপ পড়েছে।
তাদের চিন্তার ধরন দেখে সাগরিকা প্রায় ভয় পেয়ে গিয়েছে। তবে কী বুড়ি সত্যি টপকে গেছে?এবার তো তাহলে তাকেও বুড়ির জন্য কাঁদতে হবে।কিন্তু তার তো কান্না আসবে না।এবার উপায়?

সাগরিকা অবশ্যই বুদ্ধিমতি মেয়ে।কয়েক সেকেন্ডে ভেবে বের করে ফেলল।যদি তার কান্না না সে তবে অর্ধেক পেয়াজ এনে চোখের সামনে ধরবে।ব্যস কান্না না এসে যাবে কই?

এবারো সাগরিকা অদৃশ্য হাত দিয়ে নিজের পিঠ নিজে চাপড়ে দিলো।এরপর নিজে নিজেই মনে মনে বলল,

“আমি এত বুদ্ধি নিয়ে ঘুমাই কিভাবে?নিশ্চয়ই বালিশের নিচে মাথা দিয়ে।”

তাশদীদের হাতে চায়ের কাপ দিতেই তাশদীদ ইশারা করলো তার ডান পাশে বসতে। কিন্তু তার ডান পাশে একটু খানি জায়গা।এই জায়গায় সে বসবে কী করে?তবুও হুকুম যখন এসেছে পালন তো করতেই হবে। তাশদীদের পাশে বসতেই তাশদীদ কিছুটা সরে বসে তাকে জায়গা করে দিলো।সাগরিকার আজ নিজেকে বড় বড় মনে হচ্ছে। কারণ এর আগে ফ্যামিলি মিটিংয়ে দাঁড়িয়েও থাকতে দেয়নি আজ সরাসরি বসতে বলছে। তবে কী সত্যি বুড়ি নেই?তার তো এখন পেয়াঁজ দরকার।সবার মুখ থমথমে অথচ তার কান্না আসবে না।এবার কী হবে?

সাগরিকার চিন্তায় ব্যাঘাত ঘটলো যখন ডাক্তার আংকেল এসে জানালেন তাশদীদের মায়ের ব্লাড প্রেসার নেমে গেছে। এই কারণে বমি আর মাথা ঘুরাচ্ছে।বিশ্রাম নিলে ঠিক হয়ে যাবে। চিন্তার কিছুই নেই।তবুও সবার মন খারাপ রইল।কারণ তাদের পরিবারে বিপদ লেগেই আছে। তাশদীদের মা কে বিশ্রাম করতে দিয়ে তারা যে যার ঘরে চলে এলো।নিজ রুমে ফিরে সাগরিকা বিছানায় বসে তাশদীদ কে উদ্দেশ্য করে বলল,

“আমি কিন্তু চমচম খাই না। আমি কালোজাম খাবো।”

“ফ্রিজে থাকলে এনে খেয়ে নে।না থাকলে অর্ডার কর।”

“উহু এখনি না নয় মাস পর খাবো। কালোজাম খাবো মিষ্টি না।সু-সংবাদ আসতেছে যেহেতু।”

সুসংবাদ বলতেই তাশদীদের টনক নড়ে উঠলো।বুঝতে বাকী রইল না সাগরিকা কী বলছে। সে সাগরিকাকে মেকি ধমক দিয়ে বলল,

“ফাজলামো হচ্ছে?”

“বাহ্ রে। বড় মার মাথা ঘুরছে, বমি করছে তবে কী আমরা সু-সংবাদ পেতে যাচ্ছি না?”

তাশদীদ চোখ গরম করে তাকাতেই সাগরিকা দৌড়ে রুম ছেড়ে পালালো।তাকে চলে যেতে দেখে তাশদীদ মুচকি হেসে মনে মনে বলল,

“এই পানসে জীবনে নোনতা-মিষ্টি সাগরিকা আর তার পাগলামো না থাকলে হয়তো কবেই সে বয়সের আগে বুড়িয়ে যেত।”

চলবে( যারা গল্প পড়েন তারা রেসপন্স করবেন অনুরোধ রইল।কারণ পেজের রিচ আমার একদম নেই বললেই চলে।আপনারা রেসপন্স না করলে হয়তো অনেকে তার প্রিয় গল্পটা যে শুরু হয়েছে এটাও জানতে পারবে না।”

#ছবিয়ালঃ Nazneen art

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here