#তাসনিম_তামান্না
#প্রেমপ্রলয়
পর্ব-১৫
আজকের সকালটা একেবারে ঝকঝকে তকতকে নীল আকাশে শুভ্র রংয়ের মেঘকুজ্ঞগুলো এদিক থেকে ওদিকে ভেসে বেড়াছে। রোদের তীব্র ঝাঁজে আর ভ্যাপশা গরমে জানান দিচ্ছে গ্রীষ্মের আগমন ঘটছে। কাক গুলো তৃষ্ণায় কা কা করে সারা আকাশময় চক্রর দিচ্ছে। মাঝে মাঝে দমকা হওয়া দিচ্ছে। জিমি এখন আগের থেকে অনেকটা সুস্থ তিনদিন আগেই জিমিকে বাসায় আনা হয়েছে। বাসায় আসা থেকে বসে বসে মাতৃআজ্ঞা পালন করছে লিলির একথাই কথা সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত কোথাও যাও চলবে না সারাদিন বাসায় রেস নিতে হবে সে তোমার যতই জরুলি কাজ হোক। সেই সকালে ঘুম থেকে উঠে খেয়ে জানালার পাশে বসেছে সেই থেকেই আকাশপানে একমনে তাকিয়ে প্রকৃতিরলীলা খেলা দেখায় মক্ত হয়ে আছে। আগে কখনো এভাবে আকাশ দেখেছে বলে মনে পড়ছে না জিমির কিন্তু আজ আকাশ দেখতে খুব ভালো লাগছে এযেনো আকাশের নতুন রূপ। এই রূপটা কি শুধু-ই তার কাছে নতুন না-কি সবার কাছে? জিমি কিছুক্ষণ ভাবলো না তার কখনো আকাশ দেখার সময় ছিলো না। চোখের সামনে তুড়ি বাজতেই জিমির ভাবনার সুতো কাঠলো সাথে চমকালোও বেশ পাশ ফিরে মিলি, লিলি, জুলি, সামি, জাকিকে দেখে আরো চমকালো। সামি বলে উঠলো
-‘ ম্যাডাম আপনার ধ্যান ভাংলো নাকি আরো কিছুক্ষণ চলবে কাইন্ডলি জানাবেন প্লিজ তাহলে আমরা বাইরে গিয়ে অপেক্ষা করি’
জুলি বেগম বলেন
-‘ সামি মজা করছিস কেনো? মেয়েটা অসুস্থ। কেমন আছো জিমি মামনি?’
-‘ আলহামদুলিল্লাহ আন্টি। তোমরা কেমন আছে?’
-‘ আলহামদুলিল্লাহ। মাথা ব্যাথা কমছে?’
-‘ হ্যাঁ আন্টি তোমরা দাঁড়িয়ে আছো কেনো বসো। আজ কিন্তু থাকতে হবে’
-‘ সে পরে দেখা যাবে খন’
-‘ দেখা যাবে মানে? আজ নো ছাড়াছাড়ি আজ তোমাকে থাকতেই হবে’
-‘ তা কি করে হয় তোর আঙ্কেল তো অফিসে বাসায় গিয়ে খুঁজেবে’
-‘ আঙ্কেলকেউ আসতে বলো’
-‘ দেখো পাগলি মেয়ের কান্ড’
আরো কিছুক্ষণ কথা বলে লিলি বেগম ওদের নাস্তা করাতে নিয়ে গেলেন। সামি গেলো না দেওয়ালে হেলান দিয়ে জিমি দিকে তাকিয়ে আছে। সামির এমন কাজে জিমি বেশ অস্থিতে পড়লো। নিজেকে স্বাভাবিক রাখার প্রয়াস চালিয়ে কপাট রেগে বলল
-‘ অ’স’ভ্য, নি-ল-র্জ্জ এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো?’
-‘ উহুম দেখছি!’
সামির কথায় জিমি অবাক হওবার সাথে সাথে রেগে বলল
-‘ এই আপনি আমার রুমে কি করছেন? যান রুম থেকে বের হন’
সামি সোজা হয়ে দাঁড়ালো জিমি ভাবলো সামি চলে যাবে কিন্তু না জিমির ভাবনা সম্পূর্ণ ভুল প্রমান করে দিয়ে চলে যাবার বদলে হুট করে সামি জিমির কাছে চলে আসলো। জিমি বড়বড় চোখ করে সামির দিকে তাকিয়ে দেওয়ালে লেপ্টে রইলো সামি চোখে ঘোর নিয়ে জিমির দেওয়ারের হাত দিয়ে আটকে রাখছে যেনো যেতে না পারে। জিমির হঠাৎ ভয় পেতে শুরু করলো গলা শুকিয়ে গেলো। লজ্জায় অস্থিরতায় এলোমেলো দৃষ্টি ফ্লোরের দিকে। সামি দুষ্টু হেসে জিমির মুখে ফুঁ দিলো জিমি চোখ বন্ধ করে মুখ একপাশে করে হাত খামছে ধরে দাঁড়িয়ে রইলো কথাও যেনো মুখ দিয়ে বের হচ্ছে না। কথাপাখিরাও লজ্জায় স্থান ত্যাগ করছে মনে হয়। সামি একহাত দিয়ে জিমির সামনের বেবি হেয়ার গুলো কানের পিটে গুঁজে দিয়ে বলল
-‘ লজ্জামিশ্রিত তুমির সাথে আজ নতুন পরিচয় ঘটলো। তোমাকে লজ্জা লাগলে অন্য রকম লাগে যেনো এক লজ্জাবতী গাছ। চোখ বন্ধ পাপড়িগুলো মৃদু নড়ছে মুখের দুপাশটা হালকা গোলাপি, রক্তিম শুষ্ক ঠোঁট গুলো যখন কামড়ে ধরলে তখন বড্ড হিংসে হলো তোমার ঔ ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে হলো আমার দিবো কি ছুঁয়ে?’
সামির কথাগুলো শ্রবণ হতেই জিমির লজ্জায় আরোষ্ট হয়ে গেলো। আর সময় বিলম্ব না করে জিমি সামিকে দু’হাতে দিয়ে ধাক্কা দিলো। সামির থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে প্রাণভরে শ্বাস টেনে নিয়ে রেগে বলল
-‘ শয়*তান ছেলে আমার রুম থেকে বের হ’
-‘ ভয় পাচ্ছো না-কি?’
-‘ তোকে ভয় পাওয়ার কি আছে?’
-‘ প্রেমে পড়ার ভয়’
জিমির ভ্রু কুচকে এলো অস্ফুটস্বরে বলল ‘প্রেমে পড়া বারণ কারণে-অকারণে!’
-‘ প্রেমে পড়া বারণ কেনো? একবার প্রেমে পড়েই দেখো না ঠকবে না হান্ড্রেডট পারসেন্ট গ্যারান্টি’
-‘ দূর যান তো এখান থেকে আপনাকে দেখলেই আমার রাখলে’
-‘ কেনো একটু প্রেম প্রেম পাই না? ব্যাপার না আস্তে ধীরে পেয়ে যাবে’
-‘ অসহ্য মানুষ তো আপনি। দেখে আপনাকে আমি জাস্ট নিতে পারছি না তাও আপনি আমাকে ডিস্টার্ব করছেন কেনো?’
-‘ আপনাকে ডিস্টার্ব করতে আমার ভালো লাগে একটা অন্য রকম শান্তি পাই’
জিমি এবার রেগে বম হয়ে দু’হাত এগিয়ে সামির গলায় হাত বাড়াতে নিলেই নিজেকে সংযত করে নিলো। সামি সেটা দেখে খুশি তে গদগদ হয়ে বলল
-‘ ওয়াও ওয়াও তুমি আমারকে নিজের ইচ্ছেতে টার্চ করতে গেছিলে?’
-‘ না আপনাকে খু-ন করতে গেছিলাম এনি ডাউট?’
-‘ সে তুুমি যাই করতে আসো নিজের ইচ্ছেতে তো আমার টার্চ করতে আসছিলে’
-‘ টার্চ করতে গেছিলাম করি নাই তো’
-‘ কেনো করলে না? নিজেকে ধন্য মনে করতাম।’
জিমি এবার কি ক্লান্তি হয়ে অসহায় মুখ করে বলল
-‘ আমাকে এতো জ্বালাছেন কেনো বলুন তো?’
-‘ ভালোবাসি তাই’
-‘ ভালোবাসা আমি বিশ্বাসি নই তাই অযথা এগুলো নিয়ে আমার সাথে ফান করবেন না’
-‘ আমার ভালোবাসাটা তোমার কাছে ফান মনে হচ্ছে? আমি তোমাকে সত্যি ভালোবাসি ‘
-‘ এগুলো আমার কাছে থেকে কখনোই পাবেন না অন্য কাউকে খুঁজে নেন প্লিজ আর আমি বুঝতে পারছি না আমার মধ্যে কি এমন আছে যার জন্য আমাকে ভালোবেসে ফেললেন?’
-‘ এই উত্তরটা আমি আগেও তোমাকে বলছি প্রেমে পড়ার কোনো কারণ লাগে মানুষ হুট করে প্রেমে পড়ে অতঃপর মায়ায় পড়ে ভালোবেসে ফেলে’
-‘ এসব নিয়ে পিএইচডি করছেন না-কি? আগে কয় জনের সাথে ফ্লাট করছেন?’
জিমির কথায় সামি গা দুলিয়ে হোহো করে হেসে দিয়ে বলল
-‘ আর ইউ জেলাস?’
চলবে