#সুখের_নেশায় পর্ব১৪

0
558

#সুখের_নেশায় পর্ব ১৪
#লেখিকাঃআসরিফা_সুলতানা_জেবা

‘ কি হলো দাঁড়িয়ে আছেন কেন চৈত্র? এদিকে আসুন। ‘

পুরুষালী ভরাট,গমগমে কন্ঠে থতমত খেয়ে গেল চৈত্রিকা। নজরে পড়ে গেল মিহিতার। অবাক চোখে চেয়ে আছে মিহিতা চৈত্রিকার পানে। সে যেন কোনো স্বপ্ন দেখছে গোধূলি এই লগ্নে চক্ষুদ্বয় মেলে। বিস্মায়াবিষ্ট হয়ে উচ্চ আওয়াজে প্রশ্ন করে বসল,
‘ চৈত্র তুই এখানে?’

চৈত্রিকা অপ্রতিভ হয়ে পড়ল নিমেষে। গলা শুকিয়ে এলো। ধীরভঙ্গিতে হেঁটে এসে চায়ের ট্রে টা টেবিলে রেখে সোফার এক কোণায় দাঁড়িয়ে রইল স্থির। মনে মনে গোছাতে শুরু করে ঠিক কি জবাব দিলে সমীচীন হবে। সাফারাত ফাইল টা চেক করে মিহিতার দিকে বাড়িয়ে বললো,
‘ এভরিথিং ইজ রাইট মিস.মিহিতা। আগামীকাল থেকে আমি অফিসে যাবো।’
‘ বাট স্যার, আপনি তো সিক।’
সাফারাত আঁড়চোখে চৈত্রিকার দিকে তাকাল। সোজাসাপ্টা বললো,
‘ সুস্থ হয়ে গিয়েছি। রোগ কে গুরুত্ব দিলেই তা শরীরে বাসা বাঁধতে সময় নেই না। মানসিক দুর্বলতা রোগের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। মানসিক ব্যাথা সেড়ে গেছে। মন থেকে ভীষণ স্ট্রং ফিল করছি আজ। ‘

মিহিতা সৌজন্যমূলক হাসি হাসল। আবারও তীর রেখা নজরে চাইল চৈত্রিকার উপর। সাফারাত বড় সোফাটায় বসে ছিল। এটাতে অনায়সে আরো দু’জন বসতে পারবে। অনেকখানি সরে গেল সাফারাত। চৈত্রিকার মায়ায় ভরপুর চেহারায় স্থিরচিত্তে চেয়ে বললো,
‘ এখানে বসুন চৈত্র। দাঁড়িয়ে আছেন কেন?’

হতভম্ব, নির্বাক চৈত্রিকা। তার যে মিহিতা কে ভয় লাগছে এমন কিছুই না। তবে সেদিন রাগ দেখিয়ে বলেছিল জীবনেও এই বাড়িতে রান্নার জব টা করবে না সে। মিহিতা অনেক বুঝিয়েছিল তবুও শুনে নি সে। উল্টো সেদিন মিহিতা অনেকগুলো ফোন দিলেও ধরে নি। আহমেদ সাহেবের এক্সিডেন্টের পর কোনো কিছুরই খবর ছিল না। এখন যখন চৈত্রিকা কে মিহিতা এই বাড়িতে অবেলায় দেখতে পেল নিশ্চয় মনে মনে ফুঁসছে। অত্যাধিক লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে পড়ে গেল চৈত্রিকা। ইতস্তত বোধ করে কোনো রকমে বসল। মিহিতা সরু দৃষ্টি নিক্ষেপ করল সঙ্গে সঙ্গে। চৈত্রিকার প্রতি সাফারাতের আচরণ দেখে তাজ্জব বনে গেল। ঠোঁট নাড়িয়ে পুনরায় প্রশ্ন করল,
‘ তুই এখানে কখন এলি চৈত্র?’
চৈত্রিকা মুখ ফোটে কিছু বলতে নিবে তার আগেই সাফারাত বলে উঠল,
‘ আপনি আসার কিছু সময় পূর্বে।’
সাফারাতের দায়সারা জবাবে চমকালো মিহিতা। কৌতূহল দমিয়ে রাখতে না পেরে বললো,
‘ আপনি কি আগে থেকে চৈত্র কে চিনেন স্যার?’
‘ অনেক আগে থেকে চিনি। তখন হয়ত আপনিও উনাকে চিনতেন না।’
মিহিতার চক্ষুজোড়া বৃহদাকার ধারণ করল। চৈত্রিকার এই মুহুর্তে নিজের মাথা ফাটিয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে। এই মেয়ে যা! এখন থেকে বেরোলেই ঝাপটে ধরবে তাকে। সবকিছু না জেনে একদম ছাড়বে না। সাফারাত এক কাপ চা বাড়িয়ে দিল মিহিতার দিকে। বিনা সংকোচে মিহিতা চায়ের কাপ নিয়ে নিল। আরেক কাপ চৈত্রিকার দিকে বাড়িয়ে দিতেই চৈত্রিকা ব্যগ্র কন্ঠে বলে উঠল,
‘ আমি খাবো না। আমার একদম ইচ্ছে নেই এখন চা খাওয়ার। ‘
চৈত্রিকার মুখ দেখে সত্যিই মনে হচ্ছে তার চা খাওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই। তাই সাফারাত আর সাধল না।

চৈত্রিকা হাত ঘড়িটার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করল। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হওয়ার অভিপ্রায়। এখন বাড়ি ফিরতে হবে তার। নয়ত ফাহমিদা চিন্তিত হয়ে পড়বেন। সাফারাতের দিকে বিচলিত নেত্রে চেয়ে বললো,
‘ আমার যেতে হবে।’
সাফারাত তীক্ষ্ণ নজরে তাকালো। তৎপরে মোবাইলের স্ক্রিনে নজর রেখে নিরলস ভঙ্গিতে বললো,
‘ ঠিক আছে। ‘
মিহিতা সাথে সাথে বলে উঠল,
‘ আমিও চৈত্রর সাথে যাই স্যার। ‘

চৈত্রিকা ও মিহিতা দু’জনে উঠে দাঁড়াল। কয়েক পা এগিয়ে যেতেই সাফারাতের গাম্ভীর্যের স্বর শোনা গেল। সেই কন্ঠের ডাকে এলোমেলো হয়ে গেল চৈত্রিকার অভ্যন্তর। থমকে যায় দুই পা।
‘ চৈত্র! ‘
চৈত্রিকা পিছনে তাকিয়ে সাড়া দেয়,
‘ বলুন।’
সাফারাত সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। মিহিতার দিকে সুস্থির দৃষ্টি ফেলল। তৎক্ষনাৎ মিহিতা ছোট্ট করে আওড়ালো,
‘ বাহিরে অপেক্ষা করছি চৈত্র। ‘
চৈত্রিকা রিনঝিনে কন্ঠে প্রশ্ন ছুঁড়ে সাফারাতের দিক,
‘ কিছু বলবেন? ‘
‘ আমি প্রতিদিন সুখ সুখ অনুভূতি পেতে চাই। ‘
চমৎকৃত, স্থবির দৃষ্টি নিক্ষেপ করল চৈত্রিকা। কন্ঠে একরাশ বিস্ময় নিয়ে বললো,
‘ মানে?’
‘ আপনার হাতের চা দিয়ে প্রত্যেক টা সন্ধ্যার লালচে-কমলা রূপ উপভোগ করতে চাই। আপনি কি আমার জন্য প্রতি সন্ধ্যে বেলায় এক কাপ চা বানানোর দায়িত্ব নিতে পারবেন? ‘
চৈত্রিকার মস্তিষ্কের শিরা উপশিরায় তরঙ্গিত হতে লাগল সাফারাতের কন্ঠনালি হতে বেরিয়ে আসা প্রত্যেক টা শব্দ। সাফারাতের অনিমেষ মাদকতাময় নেত্র হৃদয় এফোঁড় ওফোঁড় করে দিয়ে যাচ্ছে। কি নিঃসংকোচ আবেদন!অনুরোধ। চৈত্রিকা ফিরিয়ে দিতে পারল না এতো সুন্দর আবেদন টুকু। অনুভূতির কাছে হেরে গিয়ে স্মিত হেসে সম্মতি দিয়ে দিল।
‘ আমি প্রতিদিন আপনার বাড়ির সামনে দিয়ে যাতায়াত করি। নতুন টিউশন টার জন্য এদিক দিয়ে যেতে হয়। আপনার প্রতিটা সন্ধ্যে রাঙিয়ে তুলতে পারব কি-না জানিনা। তবে আপনাকে আমার হাতের এক কাপ চা খাওয়া থেকে বঞ্চিত করব না। ‘
সাফারাত কড়া সুরে বললো,
‘ উপহাস করা হচ্ছে? ‘
চৈত্রিকা বিন্দু মাত্র ভয় অনুভব করল না তীক্ষ্ণ কন্ঠে। বরং আলতো হেসে প্রতুত্তর করে,
‘ একদমই না। আসি এখন। আরেকটা কথা?’
সাফারাত প্রশ্নবিদ্ধ দৃষ্টিতে তাকাল। চৈত্রিকা ঠোঁট প্রসারিত করল। বললো,
‘ আপনার রুমে দেখেছিলাম আমার একটা ছবি আছে। মানুষের অজান্তে তার উল্টা পাল্টা ছবি রাখা ঠিক নয়। আপনি তো সুন্দর করে দাঁড়িয়ে ছিলেন অথচ আমি মাথা চুলকাচ্ছিলাম। মানুষ তো ভাববে আমি পেত্নী। উকুন টোকাচ্ছিলাম মাথায়।’

চৈত্রিকার কথায় না চাইতেও সাফারাত মুচকি হেসে উঠল। প্রগাঢ় দৃষ্টিতে মগ্ন হয়ে তাকিয়ে রইল চৈত্রিকা সেই হাসিতে। হৃদয়ে শীতল স্রোত বয়ে যাচ্ছে তার। রন্ধ্রে রন্ধ্রে ভালো লাগার,সুখের শিহরণ। শিরায় শিরায় বাহিত রক্ত পর্যন্ত হিম হয়ে আসছে। ছবিটা ওদের কলেজের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ছিল দু’জনে। কে তুলেছে,কখন তুলেছে চৈত্রিকা জানে না। কিন্তু সে যখন সাফারাতের রুমে ছবিটা দেখেছিল খুশিতে চোখের কোলে জল জমে গিয়েছে।

দেরি হয়ে যাচ্ছে বিধায় চৈত্রিকা সাফারাত কে বিদায় জানিয়ে বেরিয়ে এলো। সাফারাতও এলো পিছু পিছু। ড্রাইভার কে বললো চৈত্রিকাদের পৌঁছে দিতে। অনেকবার নিষেধ করার দরুনও শুনে নি সাফারাত। মিহিতা নাকচ করে নি দেখে চৈত্রিকা রাজি হয়ে যায়। সাফারাত একপাশের ডোর খুলে চৈত্রিকা কে বশতে ইশারা করল।

চৈত্রিকা নিঃসংশয়ে বসে পড়ে। মিহিতার ফোন আসায় সে দু’টো মিনিট অপেক্ষা করতে বললো। মিহিতার ফিয়ান্সে কল দিয়েছে। সাফারাত তখনও গাড়ির দরজা ধরে দাঁড়িয়ে আছে। দৃষ্টি অন্যদিকে। মিহিতাকে আসতে দেখে দরজা লাগাতে গিয়ে দেখে চৈত্রিকার ওড়না টা নিচে পরে আছে অর্ধেকাংশ। সেটা তুলে দিয়ে কোলে রাখতেই চৈত্রিকা ভড়কে গেল। অজানা কারণে বুঁজে এলো চোখ দুটো। আখিঁপল্লব কাঁপছে ক্ষীণ। সাফারাতের নিঃশ্বাস তার চোখ মুখে আছড়ে পড়ছে সমুদ্রের ঢেউয়ের ন্যায়। আকস্মিক গালে উষ্ণ পরশে এক নিদারুণ কম্পন ছড়িয়ে পড়ে সারা অঙ্গ -প্রত্যঙ্গে। চৈত্রিকার অনুভূতিরা তখন উম্মাদ প্রায়। ধপ করে চক্ষু মেলে তাকালো।
কেউ নেই! সবে মাত্র মিহিতা এসে পাশে বসেছে। সাফারাত ড্রাইভারের সাথে কথা বলছে। তাহলে এটা কি তার ভ্রম ছিল!চৈত্রিকার মনে হলো স্পর্শ টা এখনও তার গালে লেগে আছে। অস্বস্তি লাগছে তার। পুরো দেহ জমে যাচ্ছে বরফের মতো কঠিন রুপে। সাফারাত এতো কাছে হওয়ায় হঠাৎ হয়ত ভ্রম জেঁকে ধরেছিল। এটাই ধরে নিল চৈত্রিকা।
সাফারাত ড্রাইভারের সাথে কথা বলে নিষ্পলক তাকিয়ে রইল কতক্ষণ। অতঃপর ভিতরে চলে গেল। চৈত্রিকা আখিঁ যুগল নির্মলিত করে ভাবতে শুরু করে। মাথায় বারংবার হানা দিচ্ছে মিনার বলা কথাগুলো। চৈত্রিকার মনে হচ্ছে সাফারাত ভালো নেই। একদমই ভালো নেই। অতীব পরিমাণে বিষাক্ত যন্ত্রণা জমিয়ে রেখেছে হৃদয়পটে,বক্ষপিঞ্জিরায়। হয়ত তার জীবনের থেকেও সাফারাতের জীবনে সুখের প্রচন্ড অভাব। হতে পারে সাফারাত কাতরাচ্ছে, তাপড়াচ্ছে তারই মতো করে প্রতিনিয়ত সুখের নেশায়!
_______________

মিহিতা এতক্ষণে মোক্ষম সুযোগ পেল। গাড়ি সাফারাতদের বাড়ির গেইট দিয়ে বের হতে না হতেই চৈত্রিকা কে ঝাপটে ধরল সে। চৈত্রিকা ক্ষিপ্রদৃষ্টিতে তাকালো। তাতে বিশেষ কোনো লাভ হলো না। মিহিতা একদমই দমে যাবার মেয়ে নয়। মুখ বাঁকিয়ে বললো,
‘ ভালো ভালোই কথার ঝুলি খুলবি নাকি আমাকে কোনো স্টেপ নিতে হবে?স্যারের সাথে তোর কি সম্পর্ক? ‘
চৈত্রিকার সাদামাটা উত্তর,
‘ বেস্ট ফ্রেন্ড। ‘
মিহিতা আনন্দে লাফিয়ে উঠল। চৈত্রিকা টেনে ঠিক করে বসালো তাকে। সামনে ড্রাইভার। তিনি শুনে ফেললে শেষ। চৈত্রিকা সতর্ক দৃষ্টিতে সাবধান করল। মিহিতা কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিচেল স্বরে জিজ্ঞেস করলো,
‘ স্যারই কি তোর সেই মানুষ টা?যার জন্য তুই অসংখ্য ছেলের প্রপোজাল প্রত্যাখ্যান করেছিস সুন্দরী?আমার এখনও মনে আছে এক সিনিয়র ভাই তো তোর জন্য অনেক পাগল ছিল চৈত্র। তুই দ্বিতীয় বর্ষে উঠে যখন ভার্সিটি যাওয়া বন্ধ করে দিলি উনি হন্য হয়ে খুঁজেছেন তোকে। আমার কাছে কতক বার তোর নাম্বার চাইল। কিন্তু তোর কড়া নিষেধ হওয়ায় আমি দেই নি। এড্রেসও দেই নি। বেচারা তোরে সত্যিই ভালোবাসত চৈত্র। আর তুই কি-না আমার অফিসের স্যার কেই এতো বছর ধরে ভালোবাসিস?সুদর্শন পুরুষ সাফারাত এহমাদ কে?’
চৈত্রিকা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
‘ হুম।’
‘ চৈত্র তুই সবসময় বলেছিস তুই তোর কাছের এক বন্ধুকে ভালোবাসিস। কিন্তু কখনও বলিস নি তোদের অতীত সম্পর্কে। আর তোরা এতো ভালো বন্ধু অথচ এতো বছর দূরে ছিলি কেন একে অপরের থেকে। স্যার তোকে ভালোবাসে চৈত্র? ‘

মিহিতার ব্যাকুলতা দেখে চৈত্রিকার হাঁপিয়ে যাওয়ার উপক্রম। কন্ঠস্বর মলিন,নিষ্প্রভ।
‘ না। আর আমি তোকে সব বলব। কিন্তু গাড়িতে না। ‘
‘ তাহলে এখন সোজা আমার বাসায় গিয়ে বলবি।’
‘ কিন্তু! ‘
‘ আমি আন্টি কে ম্যানেজ করে নিব। তোকে আজ ছাড়ছি না আমি। যতক্ষণ না তোর কাছ থেকে সব না শুনব আমার ঘুম আসবে না।৷ আর আমি আমার ঘুম হারাম করতে একদম রাজি না।’
এতটুকু বলে সূক্ষ্ম একটা নিঃশ্বাস ছাড়ল মিহিতা। তারপর সুর টেনে গাইতে লাগল,
‘ আমি ঘুম ভালোবাসি রে,,,! ঘুম ভালোবাসি রে,,।’
‘ স্টপ মিহিতা। ডিজগাস্টিং সুর তোর।’
মিহিতা অট্টহাসিতে ফেটে পড়ার মাঝেই গাড়ি থেমে গেল। চৈত্রিকা চিন্তিত স্বরে ড্রাইভার কে জিজ্ঞেস করে,
‘ কি হয়েছে? ‘
‘ সামনে জেরিন ম্যাম। ‘
চৈত্রিকা হতবিহ্বল কন্ঠে বলে উঠল,
‘ জেরিন কে?’
সাথে সাথে একটা মেয়েলি কর্কশ কন্ঠ শুনতে পেল।
‘ এই মেয়ে বেরিয়ে আসো।’
মিহিতা ও চৈত্রিকার দু’জনের দৃষ্টি মেয়েটার মুখশ্রীতে। চৈত্রিকা তুখোড় দৃষ্টিতে তাকালো। মেয়েটাকে চিনতে একটুও সময় লাগে নি তার। অনতিবিলম্বে গাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ল সে। জেরিনের চোখ থেকে যেন অগ্নি ঝরছে। তখন যাওয়ার সময় চৈত্রিকাকে ভালো করে খেয়াল না করলেও পরক্ষনে টনক নড়ে তার। গাড়ি ঘুরিয়ে ব্যাক করে আসে। গেইটের কাছে অপেক্ষা করে চৈত্রিকার বের হওয়ার। যখন দেখল ওরা সাফারাতের গাড়ি করে যাচ্ছে তখন দ্রুত বেগে গাড়ি চালিয়ে আটকায় ওদের। চৈত্রিকা গলার স্বর নরম রেখে বললো,
‘ কিছু বলবেন?’
জেরিন ক্রুদ্ধ স্বরে চেঁচালো,
‘ তোমার লজ্জা নেই?নির্লজ্জ, অ/স/ভ্য মেয়ে। স্লা/ট একটা। সাহস কি করে হয় আবারও ওই বাড়িতে পা রাখার?নাকি এক থাপ্পড় খেয়ে শিক্ষা হয় নি তোমার। বস্তির মেয়ে কোথাকার! ‘
কথাটা বলেই হাত উঠিয়ে চপেটা/ঘাত করতে উদ্যত হয় জেরিন। চৈত্রিকা হাত টা চেপে ধরে শক্ত করে। চোখ বুঁজে ফেলল। স্লাট?তাকে স্লা*ট বলে সম্বোধন করল এই মেয়ে?রাগে,ক্ষোভে কাঁপতে লাগে চৈত্রিকার সম্পূর্ণ দেহ। সেই চাইলে এখন এই মেয়ের জিহ্ব টেনে ছিঁড়ে ফেলতে পারে তাকে মিথ্যে অপবাদ দেওয়ার কারণে। নিজেকে সামলে প্রতিবাদ করে বলে উঠল,

‘ আমার গাল সরকারি না। যখন মন চাইবে আঘাত করবে,থাপ্পড় মারবে। আরেকটা কথা আমি বস্তির মেয়ে বা স্লা*ট নই। তোমার চিন্তা ভাবনা,ব্যবহার বস্তির মানুষের চেয়েও,পতিতাপল্লির পতিতাদের চেয়েও নিকৃষ্ট। জেনে রাখো– আমি নিজ থেকে ওই বাড়িতে পা রাখি নি। সাফারাতের আহ্বানেই রেখেছি। অনুমতি পেয়েছি বলেই রেখেছি। তুৃমি তো আকুতি মিনতি করে অনুমতি পেতে ব্যর্থ। ‘

কথাটা বলে ঝারি মেরে জেরিনের হাত টা সরিয়ে দিল চৈত্রিকা। অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে জেরিন। চোখ মুখ তীব্র লাল হয়ে আছে। চৈত্রিকা কে ভস্ম করে দিতে পারলে যেন আনন্দ পাবে সে। দাঁতে দাঁত পিষে বললো,
‘ সাফারাতের সাথে আমার ভবিষ্যৎ জুড়ে আছে। তোমাকে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিচ্ছি আমার নানু সাফারাত আর আমার বিয়ের কথা দিয়েছে। খুব শীগ্রই হবে। সাফারাত কখনও ফেলতে পারে না নানুর কথা। তাই ভুলেও ওর দিকে হাত বাড়ানোর চেষ্টা করবে না। করার আগে নিজের যোগ্যতা দেখে নিবে। ‘

মুহুর্তেই চৈত্রিকার ভিতরটা দুমড়েমুচড়ে যেতে শুরু করে। মিহিতাও করুন চোখে তাকায়। চৈত্রিকার গলায় কথাগুলো আঁটকে আসছে। জেরিনের দিকে তাকিয়ে ম্লান হেসে বললো,
‘ সাফারাত আমার কাছের মানুষ। কাছের মানুষ মানে প্রেমিক নয়। বন্ধু। শুধুই বন্ধু। তার ঊর্ধ্বে কিছুই না। বাকি রইল যোগ্যতা?আমার যোগ্যতা তোমার থেকেও বেশি। কারণ আমি সুন্দর আচরণ করতে শিখেছি। যার অভাব আছে তোমার মধ্যে। সুন্দর আচরণ বিহীন কেউই পারফেক্ট হয় না। ‘

কথাগুলো বলে তড়িৎ গতিতে গাড়িতে গিয়ে বসল চৈত্রিকা। উপস্থিত মানুষের দৃষ্টির অগোচরে এক ফোঁটা নোনতা জল গাল ভিজিয়ে দিল। মনে মনে এই বলে নিজেকে সান্ত্বনা দেয় -‘ জীবন কঠিন। কঠিন জীবনে সকল কিছু মেনে নিয়ে বাঁচাতেই শান্তি। কিন্তু সেই শান্তিতে সুখ নেই। দশজনের মুখে হাসি ফোটাতে যদি একজনের সুখ বিসর্জনের তালিকায় উঠে যায় তবুও কষ্ট নেই। এইটা তো গর্বের বিষয়। সেই একজন তুই চৈত্র। তোর নিজেকে নিয়ে গর্ব করা উচিত। মা,মিম,বাবা শান্তিতে থাকুক এতেই তোর শান্তি। ‘

জেরিন রাগে আক্রোশে ফেটে পড়ল। গাড়িতে উঠে মোবাইল বের করে কল দেই সাফারাতের দাদি কে। রিসিভ হতেই অশ্রুসিক্ত কন্ঠে,মেকি কান্নার ভান করে বলে উঠল,
‘ নানু মণি এক সপ্তাহের মধ্যে আমি সাফারাতের বউ হতে চাই। ‘

#চলবে,,!
(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here