#সুখের_নেশায় পর্ব২১

0
720

#সুখের_নেশায় পর্ব২১
#লেখিকাঃআসরিফা_সুলতানা_জেবা

সাধাসিধে আটপৌরে কাপড়ে বিয়ে নামক নতুন বন্ধনে আবদ্ধ হতে যাচ্ছে চৈত্রিকা। ফাহমিদা মেয়ের ঘোমটা টা ভালো করে টেনে দিলেন। ভবিষ্যতে কি হবে তা নিয়ে না ভেবে মেয়ের বর্তমান নিয়ে আনন্দিত তিনি। শুধু কষ্ট এতটুকু মেয়ের সুখের জীবনে পদার্পণ টুকু আহমেদ সাহেব দেখে যেতে পারলেন না৷ আচ্ছা তিনি থাকলে কি আজ খুশি হতেন?মেনে নিতেন সাফারাতকে?মেয়ের জীবনের এই খুশির মুহুর্তে একটুখানির জন্য হলেও হয়ত উনার কঠিন মনটা গলে যেত। হয়ত বা না। বাহিরে বৃষ্টি থেমে গেছে। তবে প্রকৃতিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গিয়েছে শীতলতা। মৃদু ঠান্ডা। এই ঠান্ডার মাঝেও মাথার উপর ফ্যানটা ঘুরছে শব্দ সৃষ্ট করে। মিমের গা কাটা দিয়ে উঠছে। ওড়নার নিচে ঢুকিয়ে নিল হাত দু’টো। তার বরাবরই বসে আছে দিহান। একবার শুধু এই ছেলের দিকে তাকিয়েছিল মিম। দিহানের মুখে হাসির ছটা দেখে সেই যে মুখ নামিয়েছে আর ভুলেও তার দিকে ফিরে তাকায় নি। এই ছেলেকে দেখলে গা পিত্তি জ্বলে জ্বলে উঠে। সাফারাত গম্ভীর মুখে বসে আছে। অনেক সময় পেরিয়ে গেছে কাজী সাহেব এসেছেন। কাবিনের কাগজ রেডি করছেন। কিন্তু এতো দেরি ভালো লাগছে না সাফারাতের। বিরক্তিতে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে। গম্ভীর স্বরে বলে উঠল,

‘ একটু জলদি করুন। ‘

কাজী সাহেব হতভম্ব হয়ে গেলেন। দাঁত কেলিয়ে বললেন,

‘ শেষ। আর এক মিনিট বাবা। ‘

‘ এক মিনিটের বেশি যেন না হয়।’

লজ্জায় মরি মরি অবস্থা চৈত্রিকার। মিম,দিহান হাসছে। ফাহমিদা অন্যদিকে চেয়ে রইলেন। এই ছেলের কি একটুও তর সইছে না?বিয়ে তো তার কাছেই দেওয়া হবে। সাফারাত যে এতো বিয়ে পাগল তা আগে জানত না চৈত্রিকা। শেষমেশ এতগুলো মানুষের সামনে লজ্জায় ডুবতে হলো!সাফারাতের তাতেও কোনোরূপ প্রতিক্রিয়া নেই। বিরক্ত ভঙ্গিতে অপেক্ষা করে চলেছে। ফাহমিদা চৈত্রিকার কাছ থেকে একটু আকটু জেনেছে সাফারাতের পরিবার সম্পর্কে। বাবা আছে এটা শুনেছে। এতো বড় বাড়িতে মেয়ের বিয়ের চিন্তা উনার কল্পনায় আসত না৷ ঘুণাক্ষরেও ভাবেন নি মেয়ের কপালটা এতো ভালো হবে!মনের তৃপ্তির জন্য উনি একটা প্রশ্ন করেই বসলেন,

‘ সাফারাত তোমার পরিবার থেকে কেউ উপস্থিত থাকলে ভালো হতো। তোমার বাবা অথবা চাচা-চাচী। ‘

নিমিষেই সাফারাতের মুখের ভাব সম্পূর্ণ পাল্টে গেল। ফর্সা মুখে গম্ভীরতার ছাপ। গলার স্বর ধারালো,তীক্ষ্ণ হয়ে উঠল। মাথা নত করে নিজেকে সংযত করে বললো,

‘ চাচা-চাচী নিজেদের কাজে ব্যস্ত। দাদি অসুস্থ। আম্মু মারা গিয়েছে অনেক বছর পেরিয়ে গিয়েছে। আর কেউ নেই আমার। যাকে মানুষ আমার বাবা বলে আখ্যায়িত করেন তিনি আমেরিকা থাকেন নিজের দ্বিতীয় স্ত্রীকে সাথে নিয়ে। আপাতত আপন বলতে এখানে উপস্থিত আছে দিহান। ‘

চৈত্রিকা চোখ তুলে মায়ের দিকে তাকালো। মেয়ের করুন চাহনি দেখে ফাহমিদার মনে হলো এই মুহুর্তে সাফারাতের বাবার নামটা না নিলে বেশ ভালো হত। চৈত্রিকা বিস্মিত হয়ে পড়ে সাফারাতের বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী আছে শুনে। তাই বলেই কি সাফারাত বাবাকে ঘৃণা করে নাকি অন্য কোনো কারণ? কাজী সাহেব কাগজ এগিয়ে দিতেই বিনা সময় ব্যায় করে ঝটপট সাইন করে দেয় সাফারাত। চৈত্রিকা সাইন করে অনেকটা সময় নিয়ে। ডান হাতটা ভীষণ কাঁপছিল তার। বাবার অভাব টা অনুভব করছিল খুব করে। খুব করে চাইছিল বাবার প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠুক চোখের সামনে। কিন্তু তা যে অসম্ভব। কবুল বলতে গিয়ে গলা ধরে আসছে। শব্দগুলো দলাপাকিয়ে আঁটকে যাচ্ছে কন্ঠনালিতে। পুরো শরীর জুড়ে তীব্র কম্পন। বিয়ে হয়ে গেল! সাফারাতের অর্ধাঙ্গিনী হয়ে গেল!সব কেন এতো দ্রুত হলো?এমন অপ্রত্যাশিত সুখময় মুহুর্ত জীবনে বার বার আসবে? চৈত্রিকার বিশ্বাস হচ্ছে না যেই মানুষটাকে এতো বছর খুঁজেছে,যার দেখা মিলে নি কতকাল, আজ সেই মানুষটা অকস্মাৎ নিজের আগমন ঘটিয়ে বিবাহ নামক বন্ধনে কত সহজে বেঁধে দিল তাকে।

চৈত্রিকার পানির পিপাসা পাচ্ছে খুব। কিন্তু এখান থেকে উঠার শক্তি পাচ্ছে না। পা দু’টো অসাড় হয়ে পড়েছে। ফাহমিদা কিচেনে গেল মিষ্টি আনতে। দিহান আসার সময় নিয়ে এসেছিল। মিম মনে মনে খুশিতে ডানা মেলে উড়ছে। বোনের দুঃখ বুঝি দূর হলো এবার। চৈত্রিকার কাছ ঘেঁষে ফিসফিস করে বললো,

‘ একটু হাসো না আপু। তুমি হাসো না একদম। এখন তো ভালোবাসার মানুষকে চিরতরে আঁচলে বেঁধে ফেললে। এবার তো হাসো বিজয়ী হাসি। ‘

চৈত্রিকা চোখ রাঙিয়ে চাইতেই মিম নিভে গেল মৃদু হাওয়ায় নিভু নিভু অনলের ন্যায়। মুখ বাঁকিয়ে পুনর্বার বললো,

‘ হাসবা কেন?ভাইয়ার যা অ্যাটিটিউড দেখলাম আজ। যেই মেয়ে দেখবে নিঃসন্দেহে ফিদা হয়ে যাবে। ফিদা। তখন তো কষ্টে জর্জরিত হয়ে কপাল চাপড়াবে। ‘

চৈত্রিকা একটু চিন্তায় পড়ে গেল। হুট করে মনে পড়ল জেরিনের কথা। জেরিন তো বললো সাফারাতের সাথে ওর বিয়ে ঠিক। সাফারাত হয়ত পরিবারের কাউকে ওদের বিয়ের কথা জানাই নি। দাদি মানবে তো চৈত্রিকাকে?

সাফারাত মোবাইলে অফিসের কাজে ব্যস্ত। মিমের ফোন পেয়ে অর্ধেক মিটিং ফেলে চলে এসেছে। চৈত্রিকার ইচ্ছে করল মোবাইল টা টেনে এনে জানালা দিয়ে ফেলে দিতে। সদ্য বিয়ে হয়েছে এই ছেলের অথচ লজ্জার শ্রী মাত্র নেই। ভাব এমন যেন কিছুই হয় নি। কাজী সাহেব মিষ্টি খেয়ে উঠে পড়লেন। দিহান গেল উনাকে এগিয়ে দিতে। ফাহমিদা একটা মিষ্টি সাফারাতকে সাধতেই সে সাফ সাফ জানিয়ে দেয়,

‘ আমি মিষ্টি খাই না মা। ‘

সাফারাত মিষ্টি খেতে নিষেধ করায় তিনি একটুও কষ্ট পান নি বরঞ্চ আবেগে আপ্লুত,সিক্ত হয়ে পড়লেন ‘ মা ‘ ডাক শ্রবণ হতেই। সঙ্গে সঙ্গে মন বললো মেয়ের জন্য সঠিক মানুষটাই এসেছে জীবনে। চৈত্রিকা বলেছে আপাতত বিয়ে হবে। একমাস পর শশুরবাড়ি চলে যাবে ও। তা মনে পড়তেই ফাহমিদা উত্তেজিত সুরে বলে উঠলেন,

‘ তুমি কিন্তু আজ যাবে না সাফারাত। আজকে থেকে যেতে হবে। ‘

মায়ের কথা কর্ণধারে পৌঁছাতেই চৈত্রিকার ভ্রুঁ জোড়া কপালে উঠে গেল। সাফারাতের নম্র কন্ঠস্বর।

‘ থাকব মা। ‘

হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেল চৈত্রিকার। থাকাটা কি জরুরি?অন্তস্থল কাঁপছে ক্ষণে ক্ষণে। ভয়ে না-কি লজ্জায় চৈত্রিকা বুঝতে পারছে না। সাফারাত এখন তার স্বামী। থাকলে তো নিশ্চয়ই তার রুমে থাকবে একসাথে। তাছাড়া সাফারাত বলেছে যদি দু’জন কাছাকাছি আসে তাহলে একদম উঠিয়ে নিয়ে যাবে। নিজের ভালোবাসার মানুষের সামনে,স্বামীর সামনে বদ্ধ রুমে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলবে না তো!কিশোরী মেয়েদের মতোন চৈত্রিকার লজ্জায় আরক্তিম অবস্থা।
________________

দিহান বসে আছে সোফায় হেলান দিয়ে। সে যেন এই জগতে নেই। হাত পা ছড়িয়েই বসে আছে। মিম রান্নাঘর থেকে টেবিলে এনে খাবার সাজাচ্ছে। দিহান চলে যেতে চেয়েছিল কিন্তু ফাহমিদা স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন লাঞ্চ করা ব্যতীত এক পাও নড়তে পারবে না। এর ফাঁকে মায়ের চৈত্রিকাকে কথার মাধ্যমে আঘাত করার জন্য অনেকবার ক্ষমা চাইল দিহান। ফাহমিদা আলতো হেসে বলেছেন,

‘ আমার মনে কোনো কষ্ট নেই। তুমিও ভুলে যাও। ‘

চৈত্রিকার মায়ের অমায়িক, মমতাময়ী ব্যবহারে দিহান হতাশাজনক নিঃশ্বাস ফেলে। তার মা এমন হলেই পারত। তার মা খারাপ এমনটা না। তবে মানুষকে কথার মাধ্যমে আঘাত,কষ্ট দিয়ে ফেলে অহরহ। সাফারাতের ফোন পেয়ে হন্তদন্ত হয়ে অফিস থেকে ছুটে এসেছে। দিনটাই যেন আজ ছোটাছুটির। ক্লান্ত মস্তিষ্ক টা সোফায় এলিয়ে ঘাড় বাঁকিয়ে চাইতেই নজর ঠেকল মিমের মুখের দিকে। মিম ভড়কে গেল। কারণ ওর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিও নিবদ্ধ ছিল দিহানের দিক। মিমের ভ্যাবাচেকা খাওয়া চেহারা দেখে ঢের মজা পেলো দিহান। হাসলো ঠোঁট দুটো প্রসারিত করে। কৌতুকপূর্ণ কন্ঠে ডেকে উঠল,

‘ মিম-ডিম এক গ্লাস পানি দিয়ে যাও তো। ‘
রাগে কঠিন দৃষ্টি নিক্ষেপ করল মিম। সাফারাত আঁড়চোখে তাকালো দিহান ও মিমের দিক। মিম পানি তো দিল না বরং উল্টো ঘুরে চলে যেতে শুরু করে। মাঝপথে থেমে যায় সাফারাতের ডাকে। বিনয়ী স্বরে বলে,
‘ জ্বি ভাইয়া। ‘
‘ চৈত্র কোথায়?উনি কি খাবেন না?’
‘ আমি আসতে বলছি ভাইয়া। ‘
‘ যাওয়ার আগে এক গ্লাস পানি দিয়ে যাও। ‘
মিম পানি এনে টেবিলে রাখল সাফারাতের সামনে। নিচু স্বরে সূক্ষ্ম হাসি নিয়ে বললো,
‘ আপুকে ডেকে আনছি। ‘
দিহান ঢকঢক করে পুরো এক গ্লাস পানি খেয়ে নিল। দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে রসাত্মক কন্ঠে বলে উঠল,
‘ তোর শালী দেখি তোর ভক্ত রে ভাই। ‘
সাফারাত শক্ত গলায় বললো,
‘ ওকে বিরক্ত করলে তোর অবস্থা খারাপ হবে। ‘
‘ আমি তো করি না। করে তোর ধানিলংকা শালী সাহেবা। কেমন চোখ দিয়ে ভস্ম করে আমাকে। উফ!’

চৈত্রিকা ভেজা চুল বেঁধে বেড়িয়ে এলো। মুখে কোনো প্রসাধনী নেই। কলিং বেল বেজে উঠতেই অন্তর আত্মা শুকিয়ে যাবার উপক্রম, অভিপ্রায়। তাহাফের কথা প্রায় বেরিয়ে গিয়েছিল মাথা থেকে বিয়ের টেনশনে। দরজা খুলছে না বিধায় দেয়ালের ওপারের মানুষটা বোধহয় ব্যাপক বিরক্ত,রাগান্বিত। অনবরত কলিং বেল চাপছে। সাফারাত ভ্রুঁ কুঁচকে বললো,

‘ খুলছেন না কেন?’

চৈত্রিকা জবাবে কোনো সুদুত্তর খুঁজে পাচ্ছে না। আকস্মিক শ্বাস ফেলতে কষ্ট হচ্ছে ভীষণ। মিম কতটুকু বলেছে সাফারাতকে?সেদিন ছাদের ব্যাপারটা বলে দেয় নি তো?মিমের কাছে কথাটা শেয়ার করেছিল চৈত্রিকা। আর তাহাফের রিয়েক্ট কেমন হবে?মাথাটা ব্যাথায় ছিঁড়ে যাচ্ছে। নেত্রদ্বয় ঝাপসা হয়ে আসছে অতিরিক্ত ঘাবড়ানোর দরুন। দিহান উঠে এসে বললো,

‘ ঠিক আছো চৈত্রিকা?দরজা মেলছো না কেন?’
‘ তাহাফ ভাইয়ার ফ্যামিলি এসেছে হয়ত। ‘

দিহান, সাফারাত, মিম এতক্ষণে কারণ টা বুঝতে পারল। দিহান গিয়ে দরজা মেলে দেয়। এক পলকেই চট করে দিহান কে চিনে নেয় তাহাফ। ক্রুদ্ধ চোখে চেয়ে ভিতরে প্রবেশ করে। ফাহমিদা এসে তাহাফের বাবা-মা’র সাথে কুশল বিনিময় করে বসতে বলেন। তাহাফ শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সাফারাত ও দিহান কে দেখে। পরিস্থিতি বিগড়ে যাক তার পূর্বেই ফাহমিদা মুখে হাসি ফুটিয়ে বললেন,

‘ দাঁড়িয়ে আছো কেন?বসো। ‘

তাহাফ না বসে তীর্যক কন্ঠে প্রশ্ন করে,

‘ ওরা কি আকদ উপলক্ষে এসেছে এখানে?’

মুহুর্তেই একটা ভরাট,গম্ভীর স্বর শোনা গেল।

‘ না তো। বিয়ে করতে এসেছি। করা শেষ। মাথায় ঘোমটা টেনে রাখা মেয়েটা বর্তমানে আমার বউ। ‘

হতভম্ব, বিস্মিত, চমক,অবাকতা সবগুলো শব্দের দেখা মিলল উপস্থিত সকলের মুখশ্রীতে। কেবল বাদ পড়ল সাফারাত। তার অভিব্যক্তি নির্বিকার,নির্লিপ্ত। চৈত্রিকা,দিহান কারো ভাবনায় আসে নি এভাবে ফট করে সত্যটা প্রকাশ করবে সাফারাত। তাহাফ চৈত্রিকার দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে চেয়ে কঠিন গলায় জিজ্ঞেস করে,

‘ কি বলছে এসব?’

চৈত্রিকা নিরুত্তর। ফাহমিদা বুঝানোর চেষ্টা করে বলতে লাগলেন,

‘ সাফারাত ও চৈত্রিকা একে অপরকে পছন্দ করে। একটু আগেই ওদের বিয়ে হয়েছে। আমি মেয়ের সাথে তো জোর করতে পারি না। সবকিছু বলতাম আপনাদের। মোবাইলে বলার চেয়ে সরাসরি কথা বলাটা উচিত মনে হয়েছে আমার। তাই,,’

তাহাফের বাবা তেতে উঠলেন। ফাহমিদার কথাটা অসমাপ্ত রেখে বললেন,

‘ আপনার একদম উচিত হয় নি আমাদের সাথে মেয়ের বিয়ের পাকা কথা দিয়ে অন্যের সাথে বিয়ে দেওয়ার। ‘
‘ আমি মানছি। কিন্তু আপনারা একটা দিক ভেবে দেখুন চৈত্রিকা আপনার ছেলের বউ হয়েও অন্য কাউকে মনে ধরে রাখত সেটা কি ভালো হতো?সংসারে অশান্তি বৈ কিছুই হত না। তাছাড়া ওদের জীবনটা নষ্ট হত। ‘

তাহাফের বাবা-মা কিয়ৎপরিমাণ ভাবলেন। ফাহমিদার কথাটা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া চৈত্রিকার অমতে জোর করে বিয়ে তো সম্ভব ছিল না। আহমেদ সাহেবের খুব ভালো বন্ধু তাহাফের বাবা। তিনি নিজের ছেলের দিক টা না ভেবে বন্ধুর মেয়ের দিকটাও ভাবলেন। ছোট্ট করে বললেন,

‘ ঠিক বলছেন ভাবী। ‘

বাবার উত্তর টা বিন্দু মাত্র পছন্দ হলো না তাহাফের। হিংস্র বাঘের মতো গর্জে উঠল সে। চৈত্রিকাকে না পাওয়ার হার মানতে পারবে না,মানবেও না।

‘ মিথ্যে বলছে এরা। এই মেয়ে আমার কাছে বিয়ে না বসার জন্য যত মিথ্যে, বানোয়াট অভিনয় করছে। বানিয়ে বলছে সবাই। চৈত্র কে ছাড়া আমি যাব না এখান থেকে। ‘

চৈত্রিকা মৌনতা ভেঙে বললো,

‘ মিথ্যে অভিনয় কেন করবো?আপনার কুকীর্তি জেনে ফেলেছি বলে?’

কথাটা সহ্য হলো না তাহাফের। এক প্রকার হুলস্থুল বেঁধে গেল। দিকবিদিক ভুলে চৈত্রিকার দিকে তেড়ে যেতেই সাফারাতের বলিষ্ঠ হাতের আঘা*তে ছিটকে পড়ল মেঝেতে তার শক্তপোক্ত দেহটা। ঘটনার আকস্মিকতায় হতবাক সবাই। তাহাফের ঠোঁটের কার্ণিশ হতে তরল রক্তবিন্দু গড়িয়ে যাচ্ছে। সাফারাতের রক্তাক্ত,লাল আভায় সিক্ত চক্ষু তাহাফের উপর। রাগের প্রদাহে কপালের শিরা-উপশিরা ফুলেফেঁপে উঠেছে। চৈত্রিকার হাত মুঠোয় পুড়ে ঝাঁঝালো গলায় চিৎকার করে বলে উঠল,

‘ চৈত্র আমার বউ। আমার সুখ। ‘

কথাটা বলেই থেমে থাকল না। হাতের বাঁধন শিথিল করে লাথি বসিয়ে দিল তাহাফের পুরুষা*ঙ্গে।

‘ শা*লা। চৈত্রকে পাওয়ার অনেক শখ না তোর। আজ সব শখ মিটিয়ে দিব আমি। ‘

তাহাফ উল্টো আ/ঘাত করল সাফারাতের বুকে। তবুও থেমে নেই সাফারাত। চৈত্রিকার চোখ দিয়ে জল পড়ছে। দিহান সাফারাতকে থামাতে পারছে না। ফাহমিদা বুঝতে পারলেন আগের কোনো রেশ ধরে সাফারাত তাহাফকে আক্র/মণ করছে। তাহাফের বাবা-মা সবাই মিলে চেষ্টা করছে থামানোর। পরিস্থিতি এতো ঘোলাটে হয়ে যাবে চৈত্রিকা ভাবে নি। জল বেশিদূর গড়িয়ে যাওয়ার আগে উচ্চ আওয়াজে বললো,

‘ প্লিজ ছেড়ে দিন সাফারাত। ছাড়ুন উনাকে। ‘

কর্ণে চৈত্রিকার কথাটা পৌঁছালেও তোয়াক্কা করল না সাফারাত। ইচ্ছে করেই শুনছে না। চৈত্রিকা হাত টা ধরে আকুতি -মিনতি করতে শুরু করে। সে চায় না তার কারণে পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে উঠুল। বুকে একটা লাথি দিয়ে সাফারাত সরে এলো। রোষপূর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে টেনে রুমে নিয়ে এলো চৈত্রিকাকে।

#চলবে,,,!
(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। তাহাফের জন্য কষ্ট অনুভব করবেন না কেউ।🥴)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here