#বর্ষণের সেই রাতে পর্ব ১০+১১

0
337

#বর্ষণের সেই রাতে পর্ব ১০+১১
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

.
— “যতো খুশি উড়ে নাও বেইবি। কারণ আবারও খাচায় বন্দি হবার সময় এসে গেছে তোমার। আমি খুব শিঘ্রই তোমাকে বলব ‘ওয়েলকাম ব্যাক টু মাই হেল সুইটহার্ট’। এতো বড় বুকের পাটা এখনো কারো হয়নি যে আমার হাত থেকে তোমাকে বাচাবে। কারো হয়নি ! কারোর না।”
রিক এসব বলতে বলতেই হনহন করে রিকের রুমে ঢুকলেন রঞ্জিত চৌধুরী। ওনার মুখে বিরক্তির ছাপ পরিষ্কার। ভ্রু কুচকেই সারারুমে চোখ বুলালেন উনি, এটা নতুন না প্রায় ড্রিংক করে বাড়ি ফিরে এইধরণের পাগলামী করে রিক। কিন্তু এই মুহূর্তে মিস্টার রঞ্জিত একটু বেশিই বিরক্ত হচ্ছেন, ছেলের এইরকম ছেলেমানুষি মোটেও সহ্য হচ্ছেনা তার তাই রাগী গলাতেই বললেন
— “কী শুরু করেছো তুমি রিক। এভরিথিং হ্যাস আ লিমিট।”
রিক হাতে ধরে রাখা ভাঙা বোতলটা মেঝেতে আছাড় মেরে কোনো মতে টলতে টলতে উঠে দাড়িয়ে চেচিয়ে বলল
— “লিমিট মাই ফুট। এন্ড ইউ প্লিজ ডোন্ট টক টু মি ড্যাড। তুমি একজন মিনিস্টার, তোমার তো এত্তো পাওয়ার। কিন্তু তোমার এইসব পাওয়ার আমার কোন কাজে লাগছে হ্যা? জাস্ট টেল মি? ”
মিস্টার রঞ্জিত রাগান্বিত গলায় বললেন
— “কী বলতে চাইছো তুমি?”
— “তোমার এত্তো পাওয়ার এত্তো লোক দিয়েও একটা সামান্য জার্নালিস্টের মেয়েকে খুজে বের করতে পারছোনা।”
— “ওর বাবা কোনো সামান্য জার্নালিস্ট ছিলোনা। একটা গোটা নিউস কম্পানি চলতো ওর বাবার কথায়, আর যাকে তুমি সামন্য জার্নালিস্ট বলছো সেই সামান্য জার্নালিস্টই তোমার বাবাকে শেষ করে দেবার ক্ষমতা রেখেছিলো। এই যে মন্ত্রীর ছেলে বলে এতো গর্ব করো সেটাও থাকতোনা। আজীবণ জেলের ঘানি টানতে হতো আমাকে। সেই জন্যেই ওকে শেষ করতে হয়েছিলো আমার। বুঝলে?”
রিক টি-টেবিলে একটা লাথি মেরে বলল
— “না না আমি কিচ্ছু বুঝিনি আর আমি এতো কিছু বুঝতে চাইও না। আই জাস্ট ওয়ান্ট হার। আমার শুধু ওকে চাই ড্যাড। এট এনি কস্ট ওকে এনে দাও আমার কাছে। হোয়াই ডোন্ট ইউ আন্ডারস্টান্ড? হোয়াই?”
এটুকু বলেই খাটে বসে পরল রিক, মিস্টার রঞ্জিত এবার একটু বিরক্তি নিয়ে বললেন
— “একটা সামন্য মেয়ের জন্যে এতোটা হাইপার হওয়ার কী আছে আমিতো সেটাই বুঝতে পারছিনা? তুমি একটা ইশারা করলে তোমার জন্যে মেয়েদের লাইন পরে যাবে কেনো ঐ মেয়ের পেছনে পরে আছো?”
রিক ঝাড়া দিয়ে দাড়িয়ে চিৎকার করে বললো
— “কারণ আমার ওকেই চাই। আর আমি কোনো কিছু চেয়ে পাইনি এটা কখোনো হয়নি আর না হতে দেবো। তুমিতো ওকে মেরে ফেলতে চেয়েছিলে তাইনা? কাউকে লাগবেনা আমার। তোমাকেও না আমি একাই ওকে খুজে বার করতে পারবো। কাউকে লাগবে না।”
মিস্টার রঞ্জিত এবার একটু নরম গলায় বললেন
— “দেখো বেটা।”
— “লিভ মি এলোন।”
— “আমার কথাটা…”
রিক এবার চিৎকার করে বলল
— “আই সেইড লিভ মি এলোন”
মিস্টার রঞ্জিত বুঝে গেছেন এই ছেলে এখন আর তার কোনো কথাই শুনবে না। এই ছেলেকে তিনবছর ধরে বুঝিয়ে আসছে কিন্তু ছেলের মন কিছুতেই ঘোরাতে পারছেনা। যা করার ভেবে চিন্তে ঠান্ডা মাথায় করতে হবে। এসব ভেবে রুম থেকে চলে গেলেন উনি। রিক উঠে ধরাম করে দরজাটা লাগিয়ে দিলো তারপর দেয়ালে টানানো বিশাল এক ছবির দিকে তাকিয়ে বলল
— “আমার কাছ থেকে পালিয়ে তুমি একদমি ঠিক করোনি। তোমাকে এর অনেক বড় মূল্য দিতে হবে, অনেক বড়। আমার হিংস্রতার কিছুই তুমি দেখোনি তবে এবার দেখবে। এবার আর ড্যাডের আশায় বসে থাকবোনা আমি নিজে খুজবো তোমাকে নিজে। আই এম কামিং সুইটহার্ট।”
ছবিটার দিকে তাকিয়ে বাকা হেসে বিয়ারের বোতলে চুমুক দিলো রিক।

রাত ১২ টা ১৭, অনিমা ফোনটা সাইডে রেখে খাটে হেলান দিয়ে বসে কোলের ওপর ল্যাপটপ রেখে নিজের আর্টিকেল রেডি করছে। তবে বারবার আড়চোখে ফোনের দিকেও তাকাচ্ছে। নিজের অজান্তেই সে আদ্রিয়ানের ফোনের জন্যে অপেক্ষা করছে। কিন্তু এখনও ফোন আসছেনা বলে অনিমার মনটাও বেশ অনেকটাই খারাপ হয়ে আছে। বললোতো ফোন করবে সারে বারোটা বেজে গেছে এখোনো ফোন করলো না? হয়তো ভূলে গেছে, ওরতো আর কাজের অভাব নেই হয়তো কাজের চাপে মনে নেই ওর কথা এসব ভাবতে ভাবতে ফোনের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস নিলো অনি, তারপর আবারো কাজে মন দিলো। কিছুক্ষণ পরেই রিংটোনের আওয়াজে চমকে উঠল অনি। আদ্রিয়ানের চিন্তা বাদ দিয়ে কাজে মন দিয়েছিলো সে, তাই এই হঠাৎ আওয়াজে একটু কেপে উঠেছে। পাশের বালিশে মোবাইলের স্ক্রিণে চোখ পরতেই মুখে হাসি ফুটে উঠল ওর কারণ সেভ করা না থাকলেও নাম্বারটা চিনতে একটুও দেরী হয়নি। মুচকি হেসে ল্যাপটপটা অফ করে সাইডে রেখে ফোনটা রিসিভ করে বলল
— “হ্যালো”
— “এখোনো জেগে আছো? আমিতো ভেবেছিলাম ঘুমিয়ে পরেছো।”
— ” আপনার ফোনের জন্যেই জেগে ছিলাম।”
কথাটা বলার সাথে সাথেই জিবে কামড় দিলো অনিমা। আনমনে কী বলে ফেলল সেটা নিয়েই অফসোস হচ্ছে এখন ওর। আদ্রিয়ান নিশ্চই ওকে হ্যাংলা একটা মেয়ে ভাবছে। আসলে অনেক সময় এরকম হয় মানুষ যখন তার অনুভূতির চরম সীমায় পৌছে যায় তখন শব্দের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকে, উত্তেজনা এতো তীব্র পর্যায়ে চলে যায় যে নিজের বাক্যগুলোও তখন বড্ড অবাধ্য হয়ে যায়। এমনি অবস্হা হয়েছে অনিমার। আদ্রিয়ানও অনিমার কথা শুনে একটু অবাক হলো, পরোক্ষণেই ঠোটের কোণে হালকা হাসি ফুটে উঠল। আর অনিমা যে আনমনেই কথাটা বলে ফেলেছে সেটা বেশ ভালোই বুঝতে পারছে ও। অনিমাকে আরেকটু অসস্থিতে ফেলার জন্যে আদ্রিয়ান মুচকি হাসি দিয়ে বলল
—- “আমার ফোনের ওয়েট করছিলে?”
আদ্রিয়ান যে ওকে লজ্জায় ফেলতেই ঘুরিয়ে প্রশ্নটা করেছে সেটা অনিমা বেশ ভালোই বুঝতে পারছে। মনে মনে আদ্রিয়ানের ওপর একটু রাগও হচ্ছে, কিন্তু সেই রাগটা প্রকাশ করার কোনো উপায় নেই। এটা মানুষজাতির আরেকটা বিরম্বনা হঠাৎ পরিচিত, অল্প পরিচিত, সম্মানীয় এসব ব্যাক্তির ওপর বিরক্তি বা রাগের অনুভব হলেও সেটা প্রকাশ করা যায় না, যদি করা হয় তাহলে তাকে অশোভনীয় ব্যবহার বলা হয়। তাই অনি রেই রাগটা নিজের মধ্যে চেপে রেখে একটু ইতস্তত করে বলল
— ” আপনি বলেছিলেন তাই আরকি…”
— ” হুমম..ডিনার করেছো?”
— ” হ্যা অনেক আগেই। আপনি করেছেন?”
— “ডিনার করেই তোমাকে কল করলাম।”
— “এতো দেরীতে ডিনার করলেন?”
— “তোমাদের বাড়ি পাঠানোর পরেই স্টুডিওতে গিয়েছিলাম একটু আগে ফিরলিম।”
— “ওহ”
— “শুধুই কী আমার ফোনের জন্যে অপেক্ষা করছিলে নাকি অন্যকিছুও?”
— “নাহ মানে সময় কাটানোর জন্যে আর্টিকেল টাইপ করছিলাম।”
এরপর ওরা দুজনেই কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো, কেউ কিছুই বলছেনা কিন্তু একে ওপরের নিশ্বাসের শব্দ মন দিয়ে শুনছে, আর সেটাও দুজন দুজনের অজান্তেই। এই নিরবতায়ও এক অদ্ভুত শান্তি আছে, যেই শান্তিটা দুজনেই অনুভব করতে পারছে। নিরবতা ভেঙ্গে আদ্রিয়ান নিজেই বললো
— “আজকের দিনটা কেমন লাগল?”
অনি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো
— “সত্যি বলবো?”
— “আই হেইট লাইং।”
— “অনেকদিন পর মন খুলে হেসেছিলাম”
অনিমার উত্তরটা শুনে আদ্রিয়ান কেনো জানি মনের ভেতরে এক অদ্ভুত শান্তি অনুভব করলো। তাই ও হেসে দিয়ে বলল
— “যাক কারো হাসির কারণ তো হতে পারলাম।”
অনি কিছু না বলে কানে ফোন নিয়েই ধীরপায়ে হেটে ব্যালকনিতে চলে গেলো। অনিকে চুপ থাকতে দেখে আদ্রিয়ান বলল
— “কখন থেকে আমিই বকরবকর করে যাচ্ছি। কিছুতো বলো?”
— “কি বলবো?”
— “আচ্ছা তুমি এতো শান্ত কেনো বলোতো? একদম চুপচাপ। কিন্তু তোমাকে দেখে কিন্তু মনে হয়না যে তুমি এতো শান্ত। মনে হয় একটা চাঞ্চল্য আছে তোমার মধ্যে যেটা কোনো কিছুর নিচে চাপা পরে গেছে।”
খানিক চমকে উঠলো অনিমা। এটাতো সত্যিই যে ও এতো শান্ত ছিলোনা। পরিস্হিতি ওকে চুপ করিয়ে দিয়েছে। একসময় ওর চাঞ্চল্য আর দুষ্টুমী আশেপাশের মানুষকে অতিষ্ট করে তুলতো আর আজ? একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো অনিমার ভেতর থেকে। তারপর নিজেকে কোনোরকমে সামলে বলল
— “নাহ সেরকম কিছু না”
— ” আচ্ছা বাট অ..নি..মা.. কতো বড়ো নাম তোমার? আমি এতো বড় নামে ডাকতে পারবোনা তোমাকে।”
অনিমা তো চূড়ান্ত পর্যায়ে অবাক হলো। ‘অনিমা’ নামটা ওনার কাছে এতো বড় মনে হলো? অনিমা নিজের বিষ্ময় কাটিয়ে ওঠার আগেই আদ্রিয়ান বলল
— ” তাই তোমাকে আমি ইন শর্ট অনি বলে ডাকবো ওকে?”
অনিমা অবাক হলেও নিজেকে সামলে নিয়ে বলল
— “তীব্র অরু আমাকে এই নামেই ডাকে আপনিও ডাকতে পারেন সমস্যা নেই।”
— “সমস্যা থাকলেও আমার কিছু করার নেই।”
অনিমা হাসলো। আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বললো
— “তোমার ব্যাগ খুলেছিলে এসে?”
ভ্রু কুচকে গেলো অনিমার। অবাক হয়ে বললো
— “নাহ কেনো?”
— “এখোনো খোলনি? আচ্ছা ঠিকাছে এখন গিয়ে ব্যাগের মাঝের জিপটা খোলো।”
— “বাট হোয়াই?”
— “আরে খুলেই দেখো।”
— ” ওকেহ”
অনিমা রুমে ঢুকে ব্যাগ হাতে নিয়ে মাঝের জিপটা খুলল। তারপর আদ্রিয়ানকে জিজ্ঞেস করলো
— “এরপর?”
— “ভেতরে হাত ঢুকিয়ে দেখোতো কিছু পাও কী না?”
অনিমা প্রচন্ড কৌতুহল নিয়ে ব্যাগের ভেতরে হাত দিয়েই একটা প্যাকেট পেলো, সেটা দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো
— ” এটা কী?”
— “খুলে দেখো।”
অনিমা প্যাকেটের ভেতরে হাত ঢুকিয়ে কিছু একটা পেলো সেটা বের করে এনে দেখলো একটা কিরিং তাও বিরবিকিউসহ। প্রচন্ড কিউট লাগছে দেখতে। বারবিকিউটা নীল রঙয়ের ড্রেস পরা আর পায়ের দিকের অংশটা নীল রং এর পালক দিয়ে ঘেরা। চুলগুলোও এক সুন্দর স্টাইলে ঝুটি করা। অনিমাতো নিজের ওপর নিয়ন্ত্রন হারিয়ে চুমু দিয়ে দিলো ওটার ওপর। তারপর এক্সাইটেড হয়ে আদ্রিয়ানকে জিজ্ঞেস করলো
— “এটা আমার?”
আদ্রিয়ান অনিমার কন্ঠে খুশির আমেজ স্পষ্ট অনুভব করলো তাই মুচকি হেসে বলল
— “তোমার ব্যাগে যখন পেয়েছো অবশ্যই তোমার। ব্যাগে আরো কিছু আছে দেখো?”
অনিমা আবারো ভ্রু কুচকে বলল
— “আবার কী?”
— “নিজেই দেখ নারে পাগলী।”
অনিমা কেপে উঠলো আদ্রিয়ানের এরকম আদুরে শব্দে। বুকের ভেতরের ধুকপুক শব্দটা বাইরে থেকেও জেনো শুনতে পাচ্ছে। একটা আজব অনুভূতি যেটা ব্যাখ্যা করার মতো শব্দ অনিমার ছানা নেই। বহু কষ্টে নিজের অনুভূতিকে দমিয়ে প্যাকেটে দ্বিতীয়বার হাত দিলো আর এবার বের হয়ে এলো একটা চকলেট বক্স। অনিমার খুশি দেখে কে। চকলেট ওর অন্যতম প্রিয় খাবার। ও এবার খুশিতে বাচ্চাদের মতো বলে উঠল
— “চকলেট?”
আদ্রিয়ান অনিমার এই উচ্ছাসিত বাচ্চা কন্ঠ শুনে হেসে দিলো, এই মেয়ে নিজেকে যতোই ম্যাচিউর দেখানোর চেষ্টা করুকনা কেনো মনের দিক থেকে এখোনো একটা বাচ্চা। এসব ভেবেই মুচকি হেসে বলল
— “হ্যা আর পুরোটাই তোমার।”
অনিমা কিছু একটা ভেবে নিজের খুশিটা দমিয়ে নিচু কন্ঠে বলল
— “এগুলো কখন করলেন?”
— “গল্প করার মাঝখানে ব্যাগে ঢুকিয়ে দিয়েছি।”
— “তখন সামনাসামনি দিলে কী হতো?”
— “এখন হঠাৎ করে পাওয়ায যেই খুশিটা পেলে, তখন দালে এটা পেতে?”
অনিমা কিছু না বলে চুপ করে রইলো। আদ্রিয়ান নিজেই বলল
— “আচ্ছা ঘুমিয়ে পরো এখন অনেক রাত হয়েছে। গুড নাইট।”
অনিমা মুচকি হেসে নিচু কন্ঠে বলল
— “গুড নাইট।”
ফোনটা রেখে ক্রিনে তাকিয়ে মুচকি হাসলো অনিমা তারপর কিরিং আর চকলেট বক্সটার দিকে তাকিয়ে নিজের অজান্তেই হেসে দিলো। তিনদিন আগে অবধি যেই মানুষটাকে শুধু টিভিতে আর ইউটিউব এই দেখে এসছে, যার সাথে দেখা হওয়াও ওর কাছে সপ্ন মনে হতো, তার সাথে একটা রাত কাটানো, একটা দিন ঘোরা, ফোনে কথা বলা, তারওপর তার কাছ থেকে গিফট পাওয়া ভাবতেই কেমন যেনো লাগছে অনিমার। সবকিছু সপ্নের মতো লাগছে। কিরিং এর বার্বিকিউ টাকে হাতে নিয়ে কয়েকবার চুমু খেলো অনিমা। দুহাত ছড়িয়ে রুম জুরে ঘুরতে ঘুরতে মুহুর্তটা উপভোগ করছে ও, আজ খুব বেশি ফুরফুরে লাগছে ওর নিজেকে যার কারণ ওর অজানা। কিছুসময়ের জন্যে ও ভূলেই গেছে ওর সেই লোমহর্ষক ভয়ংকর অতীতকে।

রিক চৌধুরী দেয়ালে টানানো অনিমার ছবিটির দিকে তাকিয়ে একটার পর একটা চুমুক দিয়ে যাচ্ছে বোতলে। বাজ পাখির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ছবিটার দিকে। একটা হিংস্র পশু তার শিকারকে ধরার প্রস্তুতির সময় শিকারের দিকে যেভাবে তাকায় সেভাবেই তাকিয়ে আছে যেনো এক্ষুনি ঝাপিয়ে পরবে নিজের শিকারের ওপর। হাত দিয়ে ঝরতে থাকা রক্তের দিকে নজর নেই তার। সে শুধু একটা কথাই বলছে
— “গেট রেডি ফর ব্যাক টু দ্যা হেল বেইবি।”

ফোন রাখার পর থেকেই মোবাইল স্ক্রিনে অনিমার ছবির দিকে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ান। অনিমার অগোচরেই তুলেছে ছবিটা যেটাতে অনিমা মুচকি হেসে কপালের চুলগুলো সরাচ্ছে। ছবিটার দিকে তাকিয়েই আদ্রিয়ান বলল
— “জানিনা কী এমন দেখেছি তোমার মধ্যে যেটা অন্য কারোর মধ্যে দেখিনি। তোমাকে ভালোবাসি কি না এখোনো জানিনা। জানতে চাইও না। কিন্তু আমার অস্তিত্বে মিশে গেছো তুমি, তাই তুমি আমার। যদি তোমার মনে জায়গা করতে পারি তো ধুমধাম করে আনন্দের সাথে নিজের কাছে আনবো তোমাকে আর যদি সেটা না পারি তো…”
বলেই হালকা হাসলো আদ্রিয়ান তারপর ছবিতে হাত বুলিয়ে বলল
— “তবে যাই হোক। তোমার অতীত যে খুব একটা সুখকর না সেটা আমি সেদিন রাতেই বুঝেছি। কিন্তু তোমার অতীত যাই হোক আর যতো খারাপই হোক আমি তোমাকে দূরে ঠেলে দেবোনা। বরং আজ এই মুহুর্ত থেকে তোমার জীবণ থেকে তোমার অতীতের কালো ছায়াগুলো সরানোর দায়িত্ব নিজের কাধে তুলে নিলাম। আমি জানি তোমার মধ্যে এক চঞ্চল হাসিখুশি অনি চাপা পরে আছে, তাকে অামি বের করে আনবো আই প্রমিস।”

#পর্ব- ১১
.
— “তবে যাই হোক। তোমার অতীত যে খুব একটা সুখকর না সেটা আমি সেদিন রাতেই বুঝেছি। কিন্তু তোমার অতীত যাই হোক আর যতো খারাপই হোক আমি তোমাকে দূরে ঠেলে দেবোনা। বরং আজ এই মুহুর্ত থেকে তোমার জীবণ থেকে তোমার অতীতের কালো ছায়াগুলো সরানোর দায়িত্ব নিজের কাধে তুলে নিলাম। আমি জানি তোমার মধ্যে এক চঞ্চল হাসিখুশি অনি চাপা পরে আছে, তাকে অামি বের করে আনবো আই প্রমিস।”

সকালে ফুরফুরে এক মেজাজ নিয়ে ঘুম থেকে উঠল অনিমা। ও নিজেও জানেনা আজকে কেনো এতো হালকা লাগছে ওর। আজ একটু বেশিই তাড়তাড়ি উঠেছে ঘুম থেকে। লম্বা এক সাওয়ার নিয়ে। কিচেনে গেলো কফি করতে। আজ সবকিছুই কেনো জানি ভালো লাগছে ওর। আদ্রিয়ানের বলা প্রতিটা কথা ওর মনে এক অন্য অনুভূতির সৃষ্টি করেছে। সেই শব্দগুলো যেনো ওর কানে বাজছে। কিছু কিছু কথা মনে পরতেই মনে এক শীতল শিহরণ বয়ে যাচ্ছে ওর। এক অদ্ভুত ভালোলাগা। আর মজার ব্যাপার হলো এই ভালোলাগার কারণ ওর নিজেরও অজানা। কফি করে ব্যালকনিতে দাড়িয়ে মিষ্টি এই সকালটা দেখছে ও। আজকের সকালটা একটু বেশিই সুন্দর লাগছে ওর কাছে। আজকের সকালটাই এতো সুন্দর নাকি ওর কাছেই এতো সুন্দর লাগছে সেই প্রশ্ন অনিমার মনে উঠলেও সে পাত্তা দেয়নি নিজের মতো করে উপভোগ করছে কোমল রোদমিশ্রিত এই মিষ্টি সকালের মিষ্টতা। অফিসে বেরোনোর আগে আদ্রিয়ানের দেয়া কীরিং টায় চাবি সেট করে বারবিকিউটার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। তারপর ওটাকে হাতের মুঠোয় নিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বলল
— ” আমি একজন মেয়ে তাই এটুকু বুঝতে পারছি যে আপনি আমার জন্যে কিছুতো ফিল করেন। কিন্তু সেটা কী? টান? মোহ? নাকি ভালোবাসা? ভালোবাসা? আপনার মতো একজন আমার মতো একটা মেয়েকে কেনো ভালোবাসবে? আপনার মনে কী আছে সেটাতো আমার জানা নেই কিন্তু আমার মনে কী চলছে আমিতো নিজেই বুঝতে পারছিনা। আপনি আমার ক্রাশ, আপনার গান আমার ভালো লাগে, সেটাতো শুধুই একটা ভালোলাগা। কিন্তু আপনার সংস্পর্শে এলেই আমার এমন কেনো ফিল হয়? আপনি যখন আমার হাত ধরেছিলেন তখন হার্টবিট প্রচুর বেড়ে গেছিলো, শরীর কাপছিলো, আপনার কথা শুনে একটা আজব অনুভূতি হচ্ছিলতো। এগুলো কী শুধুই ভালোলাগে বলে? ”
আপন মনেই কথাগুলো বলে একটা শ্বাস নিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পরল অনিমা।

অফিসে এসেই অরু একটা কথাও না বলে মুখ ফুলিয়ে ডেস্কে বসে একমনে কাজে লেখে গেলো। তীব্র অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো অরুর দিকে কিন্তু কিছু বলতে গিয়েও বললোনা। অরু কিছু না বলে চুপচাপ কাজ করছে তীব্র কয়েকবার আড়চোখে দেখেছে ওকে কিন্তু কিছুই বলেনি, আসলে অনিমার আসার জন্যে অপেক্ষা করছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই অনিমা এসে হাজির হলো ডেস্কে বসে কম্পিউটার অন করে প্রথমে তীব্রর দিকে তাকালো তারপর অরুর দিকে তাকাতেই অনিমার ভ্রুজোরা কুচকে গেলো। তীব্রর দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে ইশারা করে জিজ্ঞেস করল কী হয়েছে। তীব্র ঠোঁট উল্টে ঘার সংকোচিত করে বোঝালো যে ও নিজেও জানেনা। অনিমা আরেক দফা অরুর দিকে তাকালো অরু বেশ বিরক্ত সেটা বোঝাই যাচ্ছে। অনিমা তীব্রকে ইশারা করে বলল এখন চুপ থাকতে।
লাঞ্চ টাইমে ওরা তিনজনেই ক্যান্টিনে খেতে বসলো। অনিমা এবার অরুকে জিজ্ঞেস করল
— “কী ব্যাপার বলতো সকাল থেকে দেখছি মুখ ভার করে বসে আছিস? কেনো?”
এটা শুনে অরু মুখের থেকে চামচ নামিয়ে অনিমার দিকে তাকালো। তীব্রও উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অরু আবার খাওয়ায় মনোযোগ দিয়ে বলল
— “কিছু না তো।”
অনিমা এবার বিরক্ত হয়ে বলল
— “এই ড্রামাকুইন। তোর পেটে কোনো কথা একদিনো ঠিকভাবে বসে থাকেনা আমরা সেটা ভালোকরেই জানি। একটু পর নিজেই সুরসুর করে বলতে শুরু করবি।”
তীব্রও অনিমার কথায় সায় দিয়ে বলল
– “কিন্তু তখন আমরা কাজে ব্যস্ত থাকবো আর তুই পকরপকর করে আমাদের ডিস্টার্ব করবি। তাই টাইম ওয়েস্ট না করে এখনি বলে ফেল ”
অরুমিতা এবার শব্দ করে চামচটা টেবিলে রেখে বলল
— ” ঐ আশিস না ফাসিস পেয়েছেটা কী হ্যা। যা খুশি করছে। কালকে জোর করে নাম্বার নিয়েছে। কাল সারারাত ফোন করে জ্বালিয়েছে জানিস? প্রথমে ভদ্রতার খাতির ভালো করে কথা বললেও পরে বিরক্ত হয়ে কটা শুনিয়ে দিয়েছি তবুও জ্বালিয়েছে ইডিয়েটটা। খালি ফ্লির্টি মার্কা কথা বলে। মাথা ব্যাথা বানিয়ে দিয়েছে।”
একনিশ্বাসে কথাটা শেষ করে অরু অনিমা আর তীব্রর দিকে তাকালো, দুজনেই হা করে তাকিয়ে আছে অরুর দিকে। সেটা দেখে অরু ভ্রু কুচকে ওদের দুজনের সামনে তুরি বাজিয়ে বলল
— “হ্যালো? কোথায় হারিয়ে গেলি?”
অনিমা কোনরকমে নিজেকে সামলে বলল
— “তুই কী আদ্রিয়ান এর বন্ধু আশিস ভাইয়ার কথা বলছিস?”
অরু বিরক্তিকর দৃষ্টিতে অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল
— “না আমি আমার জামাইর কথা বলছি। অবশ্যই ওই বান্দরের কথাই বলছি।”
অনিমা কিছু বলবে তার আগেই তীব্র বলল
— “কিন্তু আশিস ভাই তোকে বিরক্ত কেনো করছে?”
অরুমিতা মুখ ফুলিয়ে বলল
— “আমি কি জানি? আমার হাসিতে নাকি সে খুন হয়ে গেছে, মুখ ভেংচি দেখে নাকি ওনার হার্টে ধাক্কা লেগেছে। এইসব রিডিউকিলাস কথাবার্তা বলে কান ঝালাপালা করে দিলো।”
অনিমা আর তীব্র কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে একসাথে শব্দ করে হেসে দিলো আর অরুমিতা মুখ ফুলিয়ে খেতে শুরু করল। অনিমা হাসি থামিয়ে বলল
— “আদ্রিয়ান তো বলেছে আশিস ভাইয়া একটু অন্যরকম তাই হয়তো..”
তীব্র অনিমাকে থামিয়ে দিয়ে এক ভ্রু উচু করে অনিমাকে উদ্দেশ্য করে বলল
— “এস পার আই নো আদ্রিয়ান,আদিব আর আশিস ভাইয়ের সেইম এজ। কিন্তু আদিব আর আশিস ভাইদের বেলায় ভাইয়া আর আদ্রিয়ান ভাই এর বেলায় শুধুই আদ্রিয়ান? কেস কী বলতো?
তীব্রর কথা শুনে অরুমিতাও খাওয়া ছেড়ে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকালো অনিমার দিকে। অনিমাতো পরলো মহা অসস্তিতে। ঠিকই তো ও কেনো আদ্রিয়ানকে ভাই বলতে পারেনা? কেনো জানি আদ্রিয়ানের প্রতি ওর ভাই শব্দটা আসেইনা। তাই কোনো উত্তর দিতে না পেরে মাথা নিচু করে প্লেটে স্পুন ঘসতে লাগলো। অরুমিতা ঠেস মেরে বলল
— “শুধু কী তাই? রাত তিনটে বাজে ফোন করা, কফিশপে হাতের ওপর হাত রেখে বসা, লেকপার্কে আমাদের চোখে ফাকি দিয়ে আলাদা সময় কাটাতে চলে যাওয়া। আহা !আহা!”
তীব্রও ওর কথায় সায় দিয়ে বলল
— “হ্যা ইয়ার। একদিনের আলাপেই দেখা করতে ডেকে নিলো? তারপরে আসার সময়ও কানে ফিসফিস করে কী জেনো বলছিলো উনি। এদের কিচ্ছা দেখে আমার তো ঐ গানটা মনে পরছে।”
অরুমিতা কৌতুহলী হয়ে জানতে চাইলো
— “কোনটা রে?”
তীব্র খানিকা সুর দিয়ে বলল
— ” দো দিল মিল রাহে হ্যা, মাগার চুপকে চুপকে”
অনি বিরক্তিকর দৃষ্টিতে ওদের দিকে তাকিয়ে বলল
— “থামবি তোরা? কোথাকার কথা কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস?”
অরুমিতা আর তীব্র হাসতে হাসতে একসাথেই বলল
— “হ্যা এখনতো আমরাই থামবো। চালিয়ে তো তোরা যাবি।”
অনিমা কিছু না বলে খাওয়ায় মন দিলো কারণ ও জানে এদের এখন যতোই বলুক ওরা থামবেনা। আর ওদের কথায় অনিমা অনেকটা লজ্জাও পাচ্ছে কিন্তু সেটা বহিপ্রকাশ করা যাবেনা তাহলে ওরা আরো পেয়ে বসবে।

আদ্রিয়ান আদিব আর আশিসের সাথে রেস্টুরেন্টে ঢুকছে। আদ্রিয়ানকে দেখেই হৈ হুল্লোর পরে গেছ সবার মধ্যে। সেলফি অটোগ্রাফ এর জন্যে হুমরি খেয়ে পরছে অনেকেই। আশিস বিরক্ত হয়ে বলল
— “এসে গেছে তিতি মুরগীর দল”
আদ্রিয়ান চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই আশিস চুপ হয়ে গেলো। আদ্রিয়ান যতটা সম্ভব সামাল দিয়ে তারপর গার্ডসদের ইশারা করতেই তারা সবাইকে সরিয়ে জায়গা করে দিলো। এরপর ওরা সোজা ওদের বুক করা আলাদা রুমে গিয়ে বসল। আদ্রিয়ান বসেই আশিসকে উদ্দেশ্য করে বলল
— ” ওরা কোনো তিতি মুরগী না। ওরা আছে বলেই আজ আমি সেলিব্রিটি। সো এসব আর বলিসনা আমার পছন্দ না।”
আশিস বেচারা ভদ্র ছেলের মতো মাথা নাড়ল কারণ আদ্রিয়ান এইসব বিষয়ে খুব সেনসেটিভ। খাবার আসার পর ওরা খেতে শুরু করল। হঠাৎ আদিব বলল
— ” অনিমাকে নিয়ে কী ভাবলি?”
আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে বলল
— “মানে?”
— ” দেখ এখন এটা বলিসনা যে ওর প্রতি তোর কোনো ফিলিংস নেই। যেই ছেলে হুট করে অপরিচিত কোনো মেয়ের সাথে কফি খেতে বসতেও পছন্দ করে না সে ছেলে একটা অপরিচিত মেয়েকে নিজে ডেকে এনে তারসাথে সারাদিন কাটালো সেটা এমনি এমনি হতে পারেনা বস।”
আশিস তাল মিলিয়ে বলল
— ” তাও আবার আলাদা নিয়ে গিয়ে ঘোরা।”
আদ্রিয়ান কিছু বললোনা। আদিব এবার আস্তে করে জিজ্ঞেস করল
— “ভালোবাসিস ওকে? ”
আদ্রিয়ান প্লেটের দিকে তাকিয়েই বলল
— ” আই ডোন্ট নো ইয়ার। বাট ওর প্রতি একটা আলাদা টান তৈরী হয়ে গেছে। এরকম মনে হয় ওকে সবসময় আমার সামনেই রাখি। এতো অল্প সময়ে কারো প্রতি এতোটা টান তৈরী হতে পারে আগে জানতাম না। আমার ওকে চাই ইয়ার সারাজীবনের জন্যে, এনি হাউ।”
আদিব হালকা হেসে জিজ্ঞেস করল
— ” যদি ও তোর হতে না চায়?”
উত্তরে আদ্রিয়ান বাকা একটা হাসি দিলো আর আদিব আশিস দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে ছোট্ট নিশ্বাস নিলো। তারপর আশিস বলল
— “বুঝলাম”
আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে বলল
— “কী বুঝলি?”
আদিব আর ইশরাক একসাথে জোরে চেচিয়ে বলে উঠল
— “ইউ আর ইন লাভ”
আদ্রিয়ান তাড়াতাড়ি কানে আঙ্গুল দিয়ে বলল
— “আরেহ ইয়ার।”

চৌধুরীর মেনশনে ডাইনিং টেবিলে বসে আছেন মিস্টার রঞ্জিত ওনার স্ত্রী আর শালক কবির শেখ। মানে রিকের মামা, শকুনী মামাও বলা যেতে পারে কারণ ভাগ্নের সব কুকর্মে শুধুযে তার সমর্থন থাকে তাই না ভাগ্নেকে কুমন্ত্রণা দিতেও সে সমান পারদর্শী। মহাভারত সিরিয়ালের ডিরেক্টর রবি চোপড়া যদি রিক আর কবির শেখ কে আগে দেখতেন তাহলে নিশ্চই দুর্যোধন আর মামা শকুনীর ক্যারেক্টার এর অফার ওদেরকেই করতেন। মিস্টার রঞ্জিত ডায়নিং টেবিলে লাঞ্চ করতে বসে ছেলেকে দেখতে না পেয়ে ভ্রু কুচকে মিসেস লিমা চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বললেন
— “তোমার ছেলে কোথায়?”
মিসেস লিমা ইতোস্তত করে বললেন
— ” ডাকতে গেছিলাম কিন্তু দরজা খোলেনি এখনো ঘুমোচ্ছে মনে হয়।”
রঞ্জিত চৌধুরী ভ্রু কুচকে বললেন
— “হ্যা সেই। সারারাত মদ গিলবে তারপর সারাদিন মরার মতো বিছানায় পরে থাকবে।”
মিসেস লিমাও এবার বিরক্তি নিয়ে বললেন
— “মেয়েটাকে এনে দিচ্ছোনা কেনো বলোতো, তাহলে হয়তো..”
মিস্টার রঞ্জিত ধমকি দিয়ে বললেন
— “তাহলে কী? বলো? ঐ মেয়ে থাকতে তোমার ছেলে নেশা করতোনা? মাঝে মাঝেই নেশা করে গিয়ে অকারণেই কতো মারধোর করতো মেয়েটাকে ভূলে গেছো?”
মিসেস লিমা কান্নাজরিত কন্ঠে বললেন
— ” আমি কিছু জানিনা। আমার ছেলের এই অবস্হা আমি আর মানবোনা তুমি যেভাবেই হোক ঐ মেয়েকে খুজে আনো।”
— ” আচ্ছা দেখছি তুমি ভেতরে যাও।”
— ” কিন্তু?”
মিস্টার রঞ্জিত ধমক দিয়ে বললেন
— “যাও।”
মিসেস লিমা ভেতরে চলে গেলেন। এবার কবির শেখ মুখ খুললেন। একটা হাসি দিয়ে বললেন
— ” ঐ মেয়েটা যখন ছিলো তখন কিন্তু বাবাই এমন ছন্নছাড়াভাবে চলতো না তাইনা?”
রঞ্জিত চৌধুরী জুসের গ্লাসে চুমুক দিয়ে বললেন
— ” আমি জানি আর আমি ইচ্ছে করেই ঐ মেয়েকে খুজিনি এতোদিন। কারণ আমি চাইনা ও আমার বাড়িতে উঠুক। কারণ বিষধর সাপের বাচ্চা বিষধরই হয়। তোমার কী মনে হয় যার বাপ এতো ভয়ংকর সাহসী ছিলো তার মেয়ে এতো ভীতু?”
কবির খান অবাক হয়ে বললেন
— “মানে?”
— “মানে ওর বাবার অসম্পূর্ণ কাজটাকে সম্পূর্ণ করার জন্যে উঠে পরে লেগেছে ও। ওর জীবণের একটাই লক্ষ্য আমাকে এক্সপোস করে শেষ করে দেওয়া। আর সেই কাজটাই দিনরাত খেটে করছে ও। হ্যা ও ভয় পায় ঠিকি, কিন্তু সেটা শুধু এবং শুধুই রিক কে। কারণ রিক ওর ওপর যেই টর্চারগুলো করতো, সেটা কোনো শক্ত হৃদয়ের মানুষেরও গা হিম করে দেবে। কিন্তু ঐ মেয়ের কাছ থেকে বাচতে হলে ওর বাপের মতো ওকেও সরিয়ে দিতে হবে। এতোদিন আমি শুধু আমি রিক এর ওকে ভূলে যাওয়ার অপেক্ষা করছিলাম কিন্তু এই ছেলেতো যতো দিন যাচ্ছে ততই পাগল হচ্ছে ঐ মেয়ের জন্যে। কী দেখেছে ঐ মেয়ের মধ্যে কে জানে।”
কবির শেখ কিছুক্ষণ চুপ করে কিছু একটা ভেবে বললেন।
— “আমার কাছে একটা প্লান আছে জিজু। যাতে সাপও মরবে আর লাঠিও ভাঙবেনা।”
মিস্টার রঞ্জিত ভ্রু কুচকে বললেন
— ” কী প্লান?”
— ” দেখুন খুনাখুনি করে বাবাইর মনে ক্ষোভ তৈরীর দরকারটা কী? যেহেতু মেয়েটা বাবাইকে ভয় পায় আর বাবাইকে আমি যতদূর চিনি ও ঐ মেয়েকে খোলা রাখবেনা বন্দি করেই রাখবে। তাই ওই মেয়েও আপনাকে এক্সপোস করার প্রমাণ খুজতে বাইরেও যেতে পারবেনা। এতে দেখুন আপনিও নিরাপদ থাকবেন আর আমার বাবাইও খুশি হবে। তাই বলছি মেয়েটাকে খুজে বাবাই এর হাতে তুলে দিন বাকিটা বাবাই সামলে নেবে”
মিস্টার রঞ্জিত কোনো উত্তর দিলেন না। তবে বুদ্ধিটা মন্দ লাগেনি তার। উনি জুস খেতে খেতে ভাবলেন,ঠিকি তো বিষধর সাপকে পিটিয়ে মেরে ফেললে মজা আছে নাকি? বিষধর সাপের বিষদাঁত ভেঙ্গে তাকে নিজের মতো করে নাচানোতেই তো আসল মজা। কথাটা ভেবেই আপন মনে শয়তানী হাসি দিলেন মিস্টার রঞ্জিত।
#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here