#বর্ষণের সেই রাতে পর্ব ৩৮+৩৯
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ৩৮
.
অনিমাকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে একটু ঘাবড়ে গেলেও আদ্রিয়ান একটু হাসার চেষ্টা করে করে বলল,
— ” তুমি ঘুমাও নি এখোনো।”
অনিমা কিছু না বলে অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে তাতে আদ্রিয়িনের ভয় আরো বেড়ে গেলো। আদ্রিয়ান কিছু বলবে তার আগেই অনিমা ভ্রু কুচকে বলল,
— ” এতো রাতে কার সাথে কথা বলছিলেন? আর কাকে কীসের সময় দেওয়ার কথা বললেন?”
আদ্রিয়ান কী বলবে বুঝতে পারছেনা। কারণ অনিমা যেই রকম মেয়ে তাতে ওকে আটকানোর চেষ্টা করবেই। ও চাইবেনা ওর মামা মামীর কোনো ক্ষতি হোক, মেয়েটা যে এরকমি। আর ও এখন অনিমাকে নিজের ব্যাপারে কিচ্ছু বলতে চায় না। তাই আদ্রিয়ান কিছু একটা ভেবে বলল,
— ” অ্ আসলে একজন ডিরেক্টর তার একটা ফিল্মের গান এর জন্যে বলছিলো এমনিতেই আমার কতোগুলো কনট্রাক্ট সাইন করা তাই আমি একটু সময় দিতে বললাম এই আর কী।”
অনিমা আদ্রিয়ানের দিকে সন্দিহান আর অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
— ” কিন্তু আপনিতো বললেন..”
অনিমাকে কিছু না বলতে দিয়ে আদ্রিয়ান বলল,
— ” ওসব ছাড়ো তুমি এখনো জেগে আছো কেনো? তুমি জানো তোমার শরীর ঠিক নেই। তোমার প্রপার ঘুমের প্রয়োজন। ”
অনিমা আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,
— ” হ্যাঁ কিন্তু…”
আদ্রিয়ান এবারো অনিমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
— ” আবার কথা বলে। চলো ঘুমোবে।”
বলেই অনিমাকে টেনে ভেতরে নিয়ে গেলো রুমে। অনিমা বেশ অবাক হলো। ওর মনে হচ্ছে যে আদ্রিয়ান কিছু লুকোচ্ছে। কিন্তু এটাও বুঝতে পারছে যে আদ্রিয়ান ওকে কিছু বলতে চাইছেনা আর আদ্রিয়ান যখন বলতে চাইছেনা তাই ও আর কথা বাড়ালোনা। কারণ যেটা আদ্রিয়ান ওকে জানাতে চায় না সেটা ও শুনতেও চায়না। ও জানে আদ্রিয়ান ওকে কতোটা ভালোবাসে আর ও কিছু লুকিয়ে থাকলে তার পেছনে যথেষ্ট কারণ থাকবে। আদ্রিয়ান অনিমাকে শুইয়ে দিয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে ওকে ঘুম পাড়িয়ে দিলো। অনিমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে আদ্রিয়ান মনে মনে বলল। আ’ম সরি জানপাখি। তোমাকে মিথ্যে কথা বলতে চাইনি আমি কিন্তু আপাদত আমার কাছে সেকেন্ড কোনো অপশন ছিলোনা। তবে কথা দিচ্ছি সময় এলে সব সত্যিটা তোমাকে বলবো। এসব ভাবতে ভাবতে আদ্রিয়ান কিছুক্ষণ অনিমার দিকে তাকিয়ে থেকে সোফায় শুতে চলে গেলো।
___________________
একটা স্টুডিও থেকে গানের রেকর্ডিং কম্প্লিট করে সোফায় বসে আছে আর ওর দুই পাশে আদিব আর আশিস। এখানে ওদের স্নাক্স এর ব্যবস্থা করেছে ডিরেক্টর তাই ওদের একটু বসতে হচ্ছে। আপাদত কফি দেওয়া হয়েছে ওদের। কিছুক্ষণ তিনজনেই চুপ ছিলো। কফির মগে চুমুক দিতে দিতে আদ্রিয়ান আশিসকে বলল,
— ” অরুমিতার সাথে কী চলছে তোর?
আশিস কফির মগে চুমুক দিতে গিয়েও থেমে গেলো, আর আদিব তাকালো আশিসের দিকে। আশিস জানে যে আদ্রিয়ানকে মিথ্যে বলে কোনো লাভ নেই। ও সব জেনেই তবে কাউকে প্রশ্ন করে এটাই ওর স্বভাব । তাই গলাটা একটু ঝেড়ে নিয়ে বলল,
— ” একচুয়ালি উই আর ইন এ রিলেশনশিপ।”
আদিব বেশ অবাক হলো কিন্তু আদ্রিয়ান একটুও অবাক হলোনা কারণ ও আগে থেকেই সব জানতো আর জেনে শুনেই জিজ্ঞেস করেছে। আদ্রিয়ান কফির মগটা টেবিলে রেখে বলল,
— ” দেখ তোকে আমি আগেও বলেছি। অরুমিতা মেয়েটা অন্যরকম। ও তোর ঐসব গার্লফ্রেন্ডস দের মতো নয়। তাই বলছি হয় ওর প্রতি পুরোপুরি সিরিয়াস হ নয়তো সম্পর্কটা এখানেই শেষ কর। এন্ড আ’ম ভেরি সিরিয়াস হ্যাঁ?
আশিস হেসে বলল,
— ” হুম।”
আদিব ভ্রু কুচকে আশিসের দিকে তাকিয়ে বলল,
— ” তুই আর সিরিয়াস? আদোও হতে পারবি তো ভাই?”
আশিস কিছু না বলে হাসলো খানিকটা। আদ্রিয়ান কিছু বলবে তার আগেই ওখানকার একজন এসে বললো,
— ” স্যার আপনার সাথে মিনিস্টার রঞ্জিত চৌধুরীর ছেলে রিক চৌধুরী এসছেন দেখা করতে। উনি ওয়েটিং রুমে আছেন। আসতে বলবো?”
আদ্রিয়ান এর ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটে উঠলো। আদ্রিয়ান লোকটির দিকে তাকিয়ে বলল,
— ” নাহ। ওনাকে ওখানেই বসতে বলো আমি যাচ্ছি।”
লোকটি মাথা নেড়ে চলে গেলো ওখান থেকে। আদিব অবাক হয়ে বলল,
— ” তুই কেনো যাবি? ওকে এখানে আসতে বলতি।”
আদ্রিয়ান খানিকটা আলসেমি ঝেড়ে বললো,
— ” কী সব বলিস তোরা? এতো নামিদামী একজন এতোটা পথ পেরিয়ে আমার সাথে দেখা করতে এসছে, আমিতো এটুকু তো যেতেই পারি। ”
বলেই মুচকি হাসলো আদ্রিয়ান উত্তরে আশিস আর আদিব ও হেসে দিলো। আদ্রিয়ান উঠে চলে গেলো রিকের সাথে কথা বলার জন্যে। গিয়ে দেখলো রিক সোফায় পায়ের ওপর পা তুলে বসে। আদ্রিয়ানকে দেখে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকালো। আদ্রিয়ান মুচকি হেসে গিয়ে রিকের সামনে বরাবর রাখা সোফায় পায়ের ওপর পা তুলে বসলো। রিক তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে ওর বসার ধরণটাও দেখলো। আদ্রিয়ান হাসি মুখেই বলল
— ” আজ হঠাৎ আমাকে আবার কেনো মনে পরলো রিক চৌধুরী?”
রিক চোখ মুখ শক্ত করেই বলল,
— “যেটা করছো সেটা কিন্তু মোটেও ভালো করছোনা। তুমি জানোনা আমি কতোটা ভয়ংকর হতে পারি। অনিকে দিয়ে দাও আমায়। এতে তোমারো ভালো হবে আর অনিরো!”
আদ্রিয়ান রিকের দিক থেকে চোখ সরিয়ে একটা তাচ্ছিল্যের বাঁকা হাসি দিলো তারপর আবারো রিকের দিকে তাকিয়ে বলল,
— ” আচ্ছা? তাই নাকি? তা কীকরে ভালো রাখবেন ওকে? নিজের বেল্ট দিয়ে মেরে? নাকি স্টিলের গরম নাড়ানি ওর হাতে চেপে ধরে? নাকি গরম জল মুখে ঢেলে দিয়ে? হুম? এসব করে ভালো রাখবেন ওকে?”
রিক রেগে গিয়ে বলল,
— ” বেশি বেশি বলে ফেলছো কিন্তু।”
আদ্রিয়ানও হেসে দিয়েই বলল,
— ” একটা কথাও বেশি বলিনি আমি। যা করেছেন সেটাই শোনাচ্ছি আপনাকে।”
এরপর বেশ কিছুক্ষণ দুজনেই চুপ ছিলো। এরপর কিছু একটা ভেবে রিক আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,
— ” কী চাই তোমার?”
আদ্রিয়ান ঠোঁটে হাসি রেখেই কপালটা কুচকে বললো,
— ” মানে?”
রিক একটু হাসলো তারপর নিজের থুতনিতে হাতে দুটো আঙ্গুল স্লাইড করে বলল,
— ” টাকার লোভ কম বেশি সবার থাকে। চলো একটা ডিল করা যাক। তোমার যতো টাকা লাগবে আমি দেবো তোমাকে। শুধু একবার না যখন যতো লাগবে ততোই দেবো। তুমি চাইলে আমি এগ্রিমেনট ও সাইন করাতে পারি। কিন্তু তার বদলে তুমি আমাকে আমার অনিকে দেবে। কী বলো? ডিলটা ভালো না? ”
আদ্রিয়ান খানিকটা বাঁকা হেসে বলল,
— ” হুমমম। বেশ ভালো ডিল। আমিতো রাজি।”
আদ্রিয়ানের উত্তর শুনে রিকের মুখে হাসি ফুটে উঠল। রিক হেসে বলল,
— ” বলেছিলাম না? টাকার কাছে সবাই মাথা নামিয়ে নেয়? বলো কতো চাই?”
আদ্রিয়ান হেসে বলল,
— ” আরে দাঁড়ান এতো তাড়ার কী আছে? আমি এই ডিলটা মানবো যদি আপনিও আমার সাথে একটা ডিল করেন তো।”
রিক ভ্রু কুচকে বলল,
— ” কীসের ডিল?”
আদ্রিয়ান সোফায় হেলান দিয়ে আয়েশ করে বসে বলল,
— ” আপনার হৃদপিণ্ড টা আমায় দিয়ে দিন। আর তার বদলে আমি আমার সমস্ত কিছু, প্রপার্টি ব্যাংক ব্যালেন্স সব আপনার নামে করে দেবো। বলুন? রাজী?”
রিক রাগে গজগজ করে বলল,
— ” মজা করছে আমার সাথে? যদি আমার হৃদপিন্ডটাই দিয়ে দেই তাহলে এই প্রপার্টি দিয়ে কী করবো?”
আদ্রিয়ান মুচকি হেসে দিয়ে স্হির গলায় বলল,
— ” তাহলে আমি আমার হৃদপিণ্ডটা আপনাকে দিয়ে দিলে ঐ টাকা দিয়ে কী করবো? ও তো শুধু আমার হৃদপিণ্ড নয় আমার শরীরের অর্ধেক অংশ। পৃথিবীর কোনো কিছুর বিনিময়ে ওকে দিতে পারবোনা আমি । আর আপনি ওকে নিয়ে ডিল করছেন?”
এটুকু বলার পরেই আদ্রিয়ানের চোখে মুখে চরম রাগ ফুটে উঠলো আদ্রিয়ান রাগী কন্ঠে বলল,
— ” আমি আপনাকে আগেও বলে দিয়েছি যে ও কোনো জিনিস নয়। আমাকে ওর সেই মামা আর মামী পেয়েছেন নাকি কটা টাকার লোভ দেখাবেন আর আমি ওকে বেঁচে দেবো? তখন আপনি সেটা করতে পেরেছিলেন কারণ ওর পাশে কেউ ছিলোনা। কিন্তু এখন এসব চিন্তাও করবেন না কারণ ওর পাশে আমি আছি। ওর সব বিপদে ওর সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়াবো আমি। তাই এখনও বলছি ওর কথা ভুলে যান।”
রিক কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে তারপর আদ্রিয়ানের কথাগুলো মাথায় যেতেই চরম মাত্রায় রেগে গিয়ে বলল,
— ” এভাবে মানবেনা তুমি তাইনা?”
বলেই উঠে নিজের পেছন থেকে গান বেড় করে আদ্রিয়ানের দিকে তাক করল কিন্তু আদ্রিয়ানের চোখে মুখে ভয়ের কোনো ছাপ নেই। রিক রেগে গিয়ে একটা হাওয়ায় একটা শুট করলো আদ্রিয়ানের পাশ দিয়েই। আদ্রিয়ান হুট করেই রিকের হাতে একটা লাথি মারলো। বন্দুকটা রিকের হাত ফসকে ওপরে উঠে যেতেই আদ্রিয়ান ওটা ক্যাচ করে রিকের চারপাশ দিয়ে পরপর বিরতিহীন পাঁচটা শুট করলো। সবগুলো গুলি রিকের পাশ ঘেসে ঘেসে চলে গেলো কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো একটা গুলিও রিকের গায়ে লাগলোনা। রিক তাল সামলাতে না পেরে সোফায় পরে গেলো ও হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান রিকের কাছে গিয়ে ওর পাশে সোফার ওপর পা রেখে শক্ত কন্ঠে বলল,
— ” আমি এমনিতে খুব ভালো। কিন্তু যদি একবার খারাপ হয়ে যাই না তাহলে সামনে উপস্হিত ব্যাক্তিটির জন্যে সেটা ভীষণ ভারী হয়ে পরে। তাই বলছি এরপর আমার সাথে ভেবে চিন্তে কথা বলবেন আর কাজ করবেন।”
এটুকু বলে গানটা রিকের হাতে ধরিয়ে দিয়ে আদ্রিয়ান চলে গেলো ওখান থেকে। রিক বেশ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো আদটরিয়ানের যাওয়ার দিকে আর বিড়বিড় করে বলল,
— ” ও শুধু একজন সিঙ্গার হতে পারেনা। ইম্পসিবল।”
আদ্রিয়ান ওখান থেকে আদিব আর আশিসের কাছে গিয়ে বসে কাউকে ফোন করে বলল,
— ” তোমার ম্যামকে ঠিকভাবে খাবারটা দিয়ে এসো আর ওকে বলো আমার আসতে লেট হবে, অপেক্ষা যাতে না করে। এক জায়গায় যাবো আমি।”
এটুকু বলে ফোনটা রাখতেই আদিব জিজ্ঞেস করলো,
— ” কোথায় যাবি?”
আদ্রিয়ান বাঁকা হেসে বলল,
— ” হিসেব মেটাতে। এখোনো অনেকের সাথে অনেক হিসেব মেটানো বাকি। কিছু অমানুষকে মানুষ করতে হবে।”
এটুকু বলে ও আবার আরেকজনকে ফোন করে বলল,
— ” ফোনে অর্ক মৃধা বলে একজনের ডিটেইলস পাঠাচ্ছি ও এখন কোথায় আছে আধা ঘন্টার মধ্যে জানান আমাকে।”
______________________
সোফায় বসে টিভি দেখছিলেন আফরাফ মৃধা। আর তার পাশে বসে ফোনে অনলাইনে শাড়ি দেখছেন মিসেস রাহেলা। আশরাফ মৃধা বহুত টেনশনে আছেন এতোটা টেনশনে আছেন যে টেনশনে চা ও ঠিকভাবে খেতে পালছেননা। উনি বিরক্ত হয়ে ওনার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বলল,
— ” আমি ওই হুমকি ফোনের টেনশনে বাঁচি না আর তুমি এসব ফালতু জিনিস দেখছো?”
মিসেস রাহেলা ফোনের দিকে তাকিয়েই ভ্রু কুচকে বললো,
— “তুমি এতো বেশি কেনো ভাবছো সেটাইতো বুঝতে পারছিনা? কাল রাত থেকেই জালিয়ে মারছো আমাকে। বললাম তো অসব ফাঁকা আওয়াজ। কিচ্ছু হবেনা।”
— ” আরে তুমি বুঝতে পারছোনা ও…”
আর কিছু বলবে তার আগেই হঠাৎ সামনে কিছু পড়ার শব্দে পেয়ে ওনারা চমকে তাকালেন আর তাকিয়ে যা দেখলেন তাতে ওনারা অবাক হয়ে গেলেন। কারণ ওনাদের সামনে ওনাদের ছেলে আহত অবস্হায় পরে আছেন। ওনারা কিছু বলবেন তার আগেই শিস বাজাতে বাজাতে এনট্রি নিলো আদ্রিয়ান । আদ্রিয়ানকে দেখে ওনারা আরো অবাক হয়ে গেলেন। মিসেস রাহেলা বিষ্মিত কন্ঠে বললেন,
— ” গায়ক? আদ্রিয়ান আবরার জুহায়ের?”
আদ্রিয়ান মুচকি হেসে পকেটে হাত ঢুকিয়ে বলল,
— ” বাহ চিনে ফেলেছেন দেখছি? তবে আমার আরেকটা পরিচয় হলো আপনাদের জামাই রাজা ওরফে যম।”
বলে ফ্লোরে পরে থাকা অর্কের ওপর নিজের পা রাখলেন। আশরাফ মৃধা চেঁচিয়ে বললেন,
— ” ওই ছাড়ো আমার ছেলেকে। তুমি ফোন করেছিলে না?”
আদ্রিয়ান অর্কর ওপর পা রেখেই বলল,
— ” আরে বাহ? আপনি খুব বুদ্ধিমান মামাবাবু কেমন ঝটাক করে ধরে ফেললেন।”
মিসেস রাহেলা এগিয়ে আসতে নিলেই হঠাৎ বেশ কিছু লোক ভেতর চলে আসলো আর ওরা আশরাফ মৃধা আর মিসেস রাহেলা কে আটকে রেখে দিলো। মিসেস চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বলল,
— ” আমার ছেলের কষ্ট হচ্ছে ওকে ছেড়ে দিন প্লিজ!”
আসলেই অর্কর অবস্হা খুবই খারাপ দেখেই বোঝা যাচ্ছে ভীষণ মেরেছে ওকে। বেচারা ঠিক করে কথাও বলতে পারছেনা। আদ্রিয়ান হেসে দিয়ে বলল,
— ” আরে বাহ মামী শাশুড়ি, আপনার ছেলের কষ্টে আপনার কতো কষ্ট হচ্ছে। অথচ বাপ মা হারা একটা অসহায় মেয়েকে রোজ অমানুষের মতো মারার সময় মনে হয় নি যে ওর ও কষ্ট হচ্ছে? নাকি ওর হয়ে কেউ বলার ছিলোনা বলে আপনারা বুঝতেই পারেননি?”
অর্ক অস্ফুট স্বরে বলে উঠল,
— ” বাবাহ আমাকে বাঁচাও।”
আদ্রিয়ান এবার ইশারা করতেই কিচেন থেকে ওর এক লোক একটা মগে করে গরম পানি নিয়ে এলো। আদ্রিয়ান একহাটু ভেঙ্গে অর্কের সামনে বসে ওর হাত ধরে সেই মগের মধ্যে চুবিয়ে দিলো। জ্বালায় চিৎকার করে উঠল অর্ক, আদ্রিয়ান ওপর হাতে ওর চুলের মুঠি ধরে উঁচু করে বলল,
— ” খুব কষ্ট হচ্ছে বুঝি? অথচ এই কষ্টটাই অন্যকে দিতে খুব মজা লাগে তাইনা? আমারও লাগছে। ওয়েট, মজাটা আরো বাড়ানো যাক।”
বলেই আদ্রিয়ান পকেট থেকে একটা ছুড়ি বের করল। সেটা দেখে মামা মামী আর অর্ক তিনজনেরই আত্মা শুকিয়ে গেলো। আদ্রিয়ান ছুড়িটা অর্কর হাতে বসিয়ে জোরে একটা টান মারলো অর্ক চিৎকার করে উঠল সাথে আশরাফ মৃধা আর মিসেস রাহেলাও। কিন্তু লোকগুলো ঘিরে রেখেছে বলে ওনারা যেতে পারছেননা মিসেস রাহেলা কাঁদতে কাঁদতে বলল,
— ” দয়া আমার ছেলেটাকে ছেড়ে দাও। ও মরে যাবে।”
আদ্রিয়ান অর্কের পিঠে ছুরি দিয়ে একটা টান মারলো। এভাবে আশরাফ মৃধা আর মিসেস রাহেলাকে দেখিয়ে একটার পর একটা ছুরির আঘাত করতে লাগলো অর্কর শরীরে আদ্রিয়ান। অর্কর একেকেটা চিৎকারে বাড়ি কেঁপে উঠছে। ওনারা দুজন আর সহ্য করতে পারলেন না। নিজের সন্তানের এই অফস্হা কেউ সহ্য করতে পারেনা সে যেমন মানুষই হোক। কাদঁতে কাঁদতে বসে পরে আশরাফ মৃধা হাত জোর বললেন,
— ” তোমার যা চাই আমরা দিয়ে দেবো কিন্তু আমার ছেলেকে ছেড়ে দাও দয়া করে।”
আদ্রিয়ান এবার মুখটা একটু চিন্তিত করে বলল,
— ” কিন্তু আপনার ছেলের কলিজাটা তো আমার চাই মামাবাবু । যে কলিজা নিয়ে ও আমার জানপাখিকে ছোয়ায় সাহস দেখিয়েছে সেই কলিজাটাকে কেটে কুচিকুচি না করা অবধি যে আমার ঘুম হবে না। কী করি বলুনতো? আ’ম হেল্পলেস। তবে একটা কাজ করছি আমি। আপনাদের ছেলের কলিজাটা আমি নিয়ে নিচ্ছি তার বদলে আপনাদের আমি আপনাদের খুব পছন্দের একটা জিনিস দেবো। আপনাদের যতো টাকা লাগে দেবো। দরকার পরলে ব্লাঙ্ক চেইক ধরিয়ে দেবো। ভাবুন তো কতো টাকা পাবেন? বাকি জীবণটা বসে বসে টাকা উড়িয়ে উড়িয়ে খরচ করলেও শেষ হবেনা এতো টাকা দেবো আপনাদের। কিন্তু তার বিনিময়ে একটা সামান্য জিনিস চাই। আপনার ছেলের কলিজা। ডিলটা দারুণ না? বলুন রাজি তো?”
#পর্ব- ৩৯
.
আদ্রিয়ানের কথা শুনে চরম অবাক হলো আশরাফ মৃধা আর মিসেস রাহেলা। এমন ভয়ংকর ডিল কেউ করতে পারে তা জানা ছিলো না ওনাদের। নিজের ছেলের প্রাণের বিনিময়ে টাকা নেবে? কোনো বাবা মা এই কথা চিন্তাও করতে পারেনা। আশরাফ মৃধা এবার রাগী গলায় বললেন,
— ” কী বলছো কী তুমি হ্যাঁ? আমার ছেলের জীবনের থেকে টাকা বড় নাকি? আমাদের কিচ্ছু চাইনা শুধু আমার ছেলেকে ছেড়ে দাও।”
আদ্রিয়ান হালকা হেসে দিয়ে বলল,
— ” আরে কী বলছেন কী টাকার চেয়ে মূল্যবান কিছু আছে নাকি? সো আপনারা দেখুন আমি আমার কাজ করি।”
বলেই অর্কর শরীরে ছুড়ি দিয়ে আরেকটা টান মারতেই মিসেস রাহেলা চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বললেন,
— ” এভাবে জানোয়ারের মতো আমার ছেলেটাকে মেরে যাচ্ছো। তার ওপর বাবা মায়ের সামনে সন্তানের প্রাণ নিয়ে ডিল করছো? তুমি কী মানুষ?”
এবার আদ্রিয়ান অর্ককে ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে ওদের সামনে গিয়ে বলল,
— ” বাহ। আজ খুব মনুষ্যত্ব জেগে উঠেছে দেখছি? আপনারা আমাকে আজ মনুষ্যত্ব শেখাচ্ছেন? কিন্তু টাকার কাছে তো মনুষ্যত্ব খুব সহজেই বিক্রি হয়ে যায় তাইনা। টাকার কাছে তো সবকিছুই মূল্যহীন। সেটা ছেলে হোক বা ভাগ্নী?”
এবার আশরাফ মৃধা আর মিসেস রাহেলা দুজনেই মাথা নিচু করে ফেললেন। আদ্রিয়ান একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,
— ” এখন মাথা নিচু করে ফেলছেন কেনো? আচ্ছা এতো লোভ ছিলো আপনাদের? যেই মেয়েটা জন্ম থেকে মায়ের আদর পায়নি, সদ্য বাবা হারা হয়েছে সেই মেয়েটার ওপর একটুও সহানুভূতি হয়নি আপনাদের? অথচ নিজের ছেলের এই কষ্টটুকু দেখে আপনাদের বুক ফেটে যাচ্ছে। অথচ মেয়েটার ওপর ওরকম অত্যাচার করার সময় মনে পরেনি যে ওও কারো মেয়ে। মেয়েটার কান্না আপনাদের মনকে একটুও গলাতে পারেনি তাইনা? আপনাদের এই গুনধর ছেলের কষ্টে কাঁদার জন্যে আপনারা আছেন আর ওর তখন কেউ ছিলোনা বলে আপনারাও এতো নির্দয় হয়ে গেছিলেন? ওই সময়টাতে ওর সবচেয়ে বেশি দরকার ছিলো কারো সাপোর্ট কারো ভালোবাসা কিন্তু আপনারা?”
ওনারা দুজনেই মাথা নিচু করে চুপ করে আছেন। কী আর বলবেন? বলার মতো বাকি কী আছে আর? এতোদিন না বুঝলেও যেই মুহূর্তে আদ্রিয়ান ওনাদেরকে নিজের ছেলের বিনিময়ে টাকা অফার করেছে সেই মুহূর্তে ওনারা বুঝে গেছেন যে টাকার চেয়েও বড় অনেক কিছুই আছে, সম্পর্কের মূল্য টাকার চেয়েও বেশি। আদ্রিয়ান একটা শ্বাস ফেলে বলল,
— ” আপনারা যদি ওকে একবার বলতেন যে আপনাদের ওর প্রপার্টি চাই তাহলে ও কোনো প্রশ্ন না করে হাসি মুখেই আপনাদেরকে দিয়ে দিতো সব প্রপার্টি। কিন্তু আপনারা তো.. যাক ছাড়ুন এসব আপনারা বুঝবেন না। আমার কাজ আমি করে চলে যাচ্ছি। বলেই অর্কর গলায় ছুড়ি ধরলো। অর্ক অস্ফুট স্বরে বলল,
— ” ছেড়ে দাও আমায়।”
আদ্রিয়ান দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
— ” সেদিন শুধু তোর হাত ভেঙ্গেছিলাম কারণ আমার লোকরা বলেছিলো তুই অনির হাত ধরেছিলো। আর তারপরেই অনির হাতে ঐ অবস্হা দেখেছিলাম। কিন্তু যদি তোর অন্যসব কুকীর্তি তার আগে জানতে পারতাম তাহলে তোর শরীরের একটা হাড় ও আস্তো রাখতাম না।”
অর্কর আপাদত আর কিছু বলার শক্তি নেই। আশরাফ মৃধা কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,
— ” আমাদেরকে ক্ষমা করে দাও। আমার ছেলে টাকে মেরোনা।”
আদ্রিয়ান অর্কর গলায় ছুড়ি রেখে বলল,
— ” আচ্ছা ছেড়ে দেবো যদি একটা পেপারে সাইন করে দেন তো।”
মিসেস রাহেলা উত্তেজিত হয়ে বললেন,
— ” তোমারা যা বলবে করবো তবুও আমার ছেলেটাকে ছেড়ে দাও।”
আদ্রিয়ান ইশার করতেই ওর লোকেরা আশরাফ মৃধার দিকে একটা উইল এগিয়ে দিলেন। আশরাফ মৃধা উইল এর দিকে তাকিয়ে দেখলেন ওখানে লেখা আছে যে ওনার সমস্ত প্রপার্টি উনি অনিমার নামে করে দিচ্ছেন। সেটা দেখে আশরাফ মৃধা অবাক হয়ে বললেন,
— ” এসব কী?”
আদ্রিয়ান একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বলল,
— ” যদি নিজের ছেলেকে বাঁচাতে চান তো আমার এটুকু কথা তো মানতেই সবে। পেপার টাতে চুপচাপ সাইন করে দিন।”
মিসেস সাহেলাও কাগজটা নিয়ে পড়ে যা দেখলেন তাতে চিৎকার করে বলে উঠলেন,
— ” নাহ। আমরা এসব কাউকে দিতে পারবোনা। এগুলো আমাদের।”
আদ্রিয়ান অর্কর গলাত ছুড়িটা আরেকটু জোরে ধরল আর অর্কর গলার কোণ হালকা কেটে চুইয়ে চুইয়ে রক্ত পরতে লাগল। তারপর ওনাদের দুজনের দিকে তাকিয়ে বলল,
— “এবার আপনার ঠিক করুন যে আপনাদের কী চাই? নিজের ছেলের প্রাণ নাকি নিজেদের প্রপার্টি।”
কোনো উপায় না পেয়ে সাইন করে দিলেন আশরাফ মৃধা আর মিসেস রাহেলা কাঁদতে শুরু করলেন। আদ্রিয়ান পেপারটা নিজের হাতে নিয়ে তারপর ওর লোকদের মধ্যে একজনকে অর্ককে দেখিয়ে বলল,
— ” ওকে নিয়ে হসপিটালে এডমিট করে দে।”
বলায় সাথে সাথেই কয়েকজন লোক অর্ককে তুলে নিয়ে গেলো। আশরাফ মৃধা আর মিসেস রাহেলা বসে বসে কাঁদছেন। আদ্রিয়ান কিছুক্ষণ চুপ করে ওনাদের দিকে তাকিয়ে থেকে তারপর ওনাদের কাছে গিয়ে বলল,
— ” আপনারা যেমনি হন কিন্তু আমার থেকে বয়সে বড়। তবুও আপনাদের আমার সামনে নিজেদের হাত জোর করতে হয়েছে। ইনফ্যাক্ট আমি করতে বাধ্য করেছি। তারজন্যে আমি আপনাদের কাছে হাত জোর করে ক্ষমা চাইছি।”
এটুকু বলে আদ্রিয়ান নিজের হাত জোর করল ওনাদের সামনে। আশরাফ মৃধা আর মিসেস রাহেলা দুজনেই বেশ অবাক হলো। একটু আগের হিংস্র মানুষটার সাথে একে মেলাতে পারছেনা। আদ্রিয়ান একটা নিশ্বাস ফেলে বলল,
— ” কিন্তু কী বলুনতো? কর্মের ফল সবাইকেই ভোগ করতে হয়। তাই আপনাদেরও করতে হচ্ছে এবং হবে। মানুষ ভূল করে তবে আপনারা যেটা করেছেন সেটা ভূল না পাপ। ভূল যেমন সংশোধন করা যায় ঠিক সেই ভাবেই পাপের প্রাশচিত্যও হয়। আপনারাও চাইলে নিজেদের শুধরে নিতে পারবেন। সেই সময়টা দিলাম আমি আপনাদের। হয়তো সব ফেরত পেলেও পেতে পারেন। ”
আশরাফ মৃধা আর মিসেস রাহেলা আবারো মাথা নিচু করে ফেললো। আদ্রিয়ান আবারও বলল,
— ” অর্কর তেমন কিছুই হয়নি। ছুড়ির আঘাতে শুধু চামড়া গুলোই কেটেছি আমি। ওকে আঘাত করার উদ্দেশ্য শুধু আপনাদের ভয় দেখানো ছিলোনা। আপনারা হয়তো জানেনা ও অনিকে রেপ পর্যন্ত করতে চেয়েছিলো। যদি সেদিন অনি এই বাড়ি থেকে না পালাতে পারতো তো আপনার ছেলে ওর সাথে কী করতো সেটা নিশ্চয়ই বুঝতে পারত। ওর শাস্তি এর চেয়েও ভয়ানক হওয়া উচিত ছিলো কিন্তু শুধু আপনাদের কথা ভেবে ওকে ছেড়ে দিলাম আমি।”
ওনারা দুজনে এবারও অবাক হলেন ওনারা এটা জানতেন না। আদ্রিয়ান চলে যেতে নিয়েও থেমে গিয়ে বলল,
— ” আর শুনুন এই বাড়ি এখন আর আপনাদের নয় তাই এই বাড়িটা ফাকা করে ফেলুন এক্ষুনি। আমার একটা গাড়ি বাইরে ওয়েট করছে। আপনাদেরকে হসপিটালে ড্রপ করে দেবে। আমি জানি অর্কর চিকিৎসার টাকা এখন আর নেই আপনাদের কাছে। ওর চিকিৎসার সব খরচ সময়মতো হসপিটালে পৌছে যাবে। তবে হ্যাঁ শুধু চিকিৎসার টাকা টুকুই।”
বলে ওখান থেকে চলে গেলো আদ্রিয়ান। আর আশরাফ মৃধা আর মিসেস রাহেলাও ছুটলেন হসপিটালের উদ্দেশ্যে।
____________________
বেডে শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে অনিমা আর বার বার দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে। আদ্রিয়ান কেনো এখোনো আসছেনা সেই চিন্তাই করে চলেছে ও। যদিও একজন সার্ভেন্ট এসে বলে গেছে যে আদ্রিয়ানের আসতে লেট হবে কিন্তু অনিমার মনে একটা চিন্তাই ঘুরপাক খাচ্ছে এতোরাত অবধি কোথায় আছে লোকটা কোনো বিপদ হয়নি তো? এসব নানারকম চিন্তা করতে করতে রুমের দরজা খোলার আওয়াজ পেয়েই উঠে বসল ও। তাকিয়ে দেখলো আদ্রিয়ান এসছে। অনিমার দিকে তাকিয়েই আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে বলল,
— ” কী ব্যাপার ঘুমাওনি এখনো?
অনিমা মাথা নাড়লো। আদ্রিয়ান টি টেবিলের দিকে তাকিয়ে দেখলো রাতের খাবারটা এখনো পরে আছে, খায়নি অনিমা। এবার একটু রাগী গলায় বলল,
— ” সমস্যা কী তোমার বলবে? এতো করে বলি যে টাইমলি খাওয়া আর ঘুমটা তোমার জন্যে কতোটা ইমপর্টেন্ট? তবুও তুমি একি কাজ করবে? এতো বাচ্চামো করলে চলে?”
অনিমা কিছু না বলে মাথা নিচু করে আছে। আদ্রিয়ান একটা শ্বাস ফেলে অনিমার দিকে তাকিয়ে তারপর ওয়াসরুমে চলে গেলো। এরমধ্যে একজন সার্ভেন্ট এসে আদ্রিয়ানের খাবারটাও দিয়ে গেলো। কিছুক্ষণ পর আদ্রিয়ান ভেজা চুল নাড়তে নাড়তে বাইরে এলো। অনিমা তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে। আজকেও আদ্রিয়ানকে আফটার শাওয়ার লুকে বেশ সুন্দর লাগছে। আদ্রিয়ান একটু চুল নিয়ে ওদের সামনে বসে ওর দিকে খাবারের প্লেটটা নিয়ে পরোটা ছিড়ে অনিমার মুখের সামনে ধরতেই আদ্রিয়ান দেখলো অনিমা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান মুচকি হেসে একটা কাশি দিলো আর অনিমা চমকে উঠলো। অাদ্রিয়ান মুখে এক দুষ্ট হাসি রেখেই বলল,
— ” আমাকে দেখার জন্যে অনেক সময় পাবে আপাদত খেয়ে নাও।”
অনিমা সাথে সাথেই চোখ সরিয়ে নিলো আদ্রিয়ানের থেকে। ভীষণ লজ্জা পেলেও নিজেকে সামলে বলল,
— ” বয়েই গেছে আপনাকে দেখতে।”
আদ্রিয়ান হেসে দিয়ে বলল,
— ” আচ্ছা ঠিকাছে ম্যাডাম খেয়ে আমাকে উদ্ধার করুন।”
অনিমা আর কথা না বাড়িয়ে খেতে শুরু করলো। আদ্রিয়ান অনিমাকে খাইয়ে দিয়ে বলল,
— ” এবার আর একটা কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ শুয়ে পড়ো।”
অনিমা এক্কেবারে বাদ্ধ মেয়ের মতো চুপচাপ শুয়ে পরলো। আদ্রিয়ান ওর খাবারের প্লেটটা নিয়ে সোফায় চলে গেলো। কিন্তু অনিমা শুয়ে শুয়ে আদ্রিয়ানকেই দেখে চলেছে। আদ্রিয়ান সবে খাবারের এক লোকমা মুখে দিয়েছে অনিমাকে ওভাবে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে চিবোতে চিবোতে বলল,
— ” কিছু বলবে?”
অনিমা নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে একটু চুপ থেকে তারপর বলল,
— ” আপনার আজ এতো লেইট হলো যে?”
আদ্রিয়ান স্বাভাবিকভাবেই খেতে খেতে জবাব দিলো,
— ” কাজ ছিলো একটু।”
অনিমা আর কিছু না বলে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে রইলো সেটা দেখে আদ্রিয়ান লোকমা মুখে দিতে গিয়েও থেমে গিয়ে বলল,
— ” অনেক রাত হয়েছে চোখ বন্ধ করো।”
অনিমা চোখ বন্ধ করলো আদ্রিয়ানও খাওয়ায় মন দিলো। কিছুক্ষণ পর তাকিয়ে দেখলো অনিমা আবারও ওর দিকে তাকিয়ে আছে। আদ্রিয়ান চোখ রাঙিয়ে বলল,
— ” চোখ বন্ধ।”
অনিমা আবারো চোখ বন্ধ করে ফেললো। আদ্রিয়ান মুচকি হেসে খাওয়াটা শেষ করে সোফায় শুয়ে পরলো। অনিমা এখনো ঘুমায়নি সেটা আদ্রিয়ান ভালোই বুঝতে পারছে। কারণ অনিমা বারবার পিটপিটে চোখে দেখে চলেছে আদ্রিয়ানকে। আদ্রিয়ান সেটা খেয়াল করছে। অনিমাকে চমকে দিয়ে হঠাৎ করেই আদ্রিয়ান বলল,
— ” আমাকে আসতে হবে?”
অনিমা ভয় পেয়ে খিচে বন্ধ করে রাখলো আদ্রিয়ানও মিটমিটিয়ে হাসছে অনিমার বাচ্চামো গুলোকে দেখে। এভাবে নানারকম খুনশুটির মধ্যে দিয়েই রাত পার হয়ে গেলো।
___________________
স্নিগ্ধা কফির মগ নিয়ে রিকের দরজার কাছে গিয়ে দেখলো যে দরজাটা ভিরিয়ে রাখা। ভেতরে যাবে কী না ভাবতে লাগলো। তিন বছর আগে হলে এতো চিন্তা করতোনা হুট করেই ঢুকে যেতো। কিন্তু এখনতো রিক ওকে একপ্রকার সহ্যই করতে পারেনা। পরে নিজেই নিজেকে বললো,
— ” কাম অন স্নিগ্ধা। কী আর করবে? বড়জোর আবার অপমান করবে। ইউ ডোন্ট কেয়ার।”
নিজের মনে এসব আউল ফাউল বকে ভেতরে চলে গেলো আর ভেতর বেশ কয়েক কদম এগিয়ে সামনে তাকাতেই স্নিগ্ধা তো অবাক। কারণ রিক জাস্ট একটা টাওয়েল পরে ড্রেসিন টেবিলের সামনে দাড়িয়ে চুল আচড়াচ্ছে। সিগ্ধা চোখ বন্ধ করে হালকা চেঁচিয়ে বলল,
— ” ইইইহ। ড্যাম ইট।”
রিক পেছনে ঘুরে স্নিগ্ধাকে দেখে চমকে গিয়ে বলল,
— ” আব্বে, তুই? এখানে কী করছিস?”
স্নিগ্ধা চোখ খুলে তাকিয়ে রিকের অবস্হা মনে পড়তেই আবার চোখ বন্ধ করে বলল,
— ” রুমের দরজা লক না করে এভাবে থাকাটা কোন ধরণের ম্যানার্স?”
রিক হেয়ার ব্রাশটা রেখে স্নিগ্ধার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল,
— ” কারো রুমে নক না করে ঢোকাটাও কোন ধরণের ম্যানার্স সেটা আমিও বুঝতে পারছিনা।”
স্নিগ্ধা চোখ বন্ধ করেই বিরক্তিকর কন্ঠে বলল,
— ” তাই বলে তুমি এভাবে থাকবে?”
রিক হাত ভাজ করে বলল,
— ” ওয়ে ড্রামাকুইন ড্রামা বন্ধ কর। তুই যে এতোটা লজ্জা পাওয়ার মতো জিনিস না সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি।”
স্নিগ্ধা এবার চোখ খুলে বিরক্ত হয়ে বলল,
— ” তুমি কী জানো যে তুমি কতোটা ইরেটেটিং একটা মানুষ।”
রিক মুখ ঘুরিয়ে বলল,
— ” তোর চেয়ে অনেক কম। আর তোকেনা বলেছি আমার আশেপাশে আসবিনা।”
সিগ্ধা মুখ ফুলিয়ে কফিটা টি টেবিলে রেখে বলল,
— ” তোমার কফিটা দিয়ে গেলাম। যত্তোসব ফালতু লোক। অনিমা এসে কফি আনলে ঠিক খুশিতে গদগদ হয়ে নিতো। আমি আনলেই ফোসকা পরে।”
বলেই চলে যেতে নিলেই রিক হাত ধরে বলল,
— ” তুই কিন্তু বেশি কথা বলছিস আজকাল।”
স্নিগ্ধা মুখ ভেংচি কেটে বললো,
— ” আমার মুখ আমি যা খুশি তাই বলবো তোমার কী? তুমি তোমার অনিমাকে নিয়েই থাকো।”
রিক স্নিগ্ধাকে আরেকটু কাছে বলল,
— ” ওর সাথে নিজেকে কম্পেয়ার করছিস?”
স্নিগ্ধা মুচকি হেসে বলল,
— ” আমি জানি আমি তোমার অনিমার মতো অতো সুন্দরী বা পার্ফেক্ট নই। নতুন করে মনে করাতে হবে না।”
বলেই রিকের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে রুম চলে গেলো স্নিগ্ধা। রিক স্নিগ্ধার যাওয়ার দিকে তাকিয়েই বলল,
— ” তোকে কীকরে বলবো যে তোকে নিজের থেকে দূরে রাখার একটাই কারণ তোর আর ওর অদ্ভুত কিছু মিল। তোদের দুজনের মিলটাই তো আমাকে আরো জ্বালায়। তোর উপস্হিতি আমাকে ওর কথা আরো বেশি করে মনে করিয়ে দেয়। আই এম সরি সিগ্ধু।”
#চলবে…