নিখোঁজ_প্রেমের_শহরে #পর্বঃ ৬

0
437

#নিখোঁজ_প্রেমের_শহরে
#পর্বঃ ৬

বর্ষা আয়নার সামনে আয়োজন করে সাজতে বসেছে। তার সাজার কারণ এখনো বোঝা যাচ্ছে না। ঈর্ষা হা করে তার বোনের দিকে তাঁকিয়ে আছে। বর্ষার গায়ের রঙ শ্যামলা। কিন্তু চেহারায় কেমন যেনো মায়া আছে! সাজলে খুব সুন্দর লাগে। ফর্সা মেয়েদের সাজলেও এত সুন্দর লাগবে না। বর্ষার কালো কাজলের চোখগুলোর সাথে হরিণী চোখের তুলনা করা যায়। কি গভীর চাহনি! সমুদ্রের মত। এই গভীরতা নির্ধারন করা সম্ভব না। এই মেয়েটাকে চাইলেই কষ্ট দেয়া যাবে না। বুক কাঁপবে। যে কষ্ট দিতে পারবে সে অবশ্যই অমানুষদের গোত্রের।
বর্ষা মুখে দামি ক্রীম মাখলো। তার ওপর পাউডার লাগালো। ঠোঁটে লিপস্টিক লাগানোর সময় ঈর্ষার দিকে না তাঁকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
‘কিরে! কি দেখছিস?’
‘তোমাকে দেখছি আপা। কি সুন্দর দেখাচ্ছে!’
‘সুন্দর মানুষকে সুন্দর দেখাবে। এটাই স্বাভাবিক। হা করে দেখার কি আছে?মাশা’আল্লাহ বল।’
ঈর্ষা বলল,
‘মাশাল্লাহ।’
‘শুধু মাশাআল্লাহ বললে হবে না। সাথে থুথুথু দিতে হবে। বল, মাশা’আল্লাহ থুথুথু। ‘
ঈর্ষা বলল,
মাশা’আল্লাহ থুথুথু।
গুড। ভেরি গুড।
আপা তুমি কই যাচ্ছো?
কই যাচ্ছি জানি না। তবে বাসা ছেড়ে চলে যাচ্ছি এই সিদ্ধান্তগ্রহণ করেছি।
ঈর্ষা বড় বড় চোখ করে তাঁকিয়ে বলল,
বাসা ছেড়ে যাচ্ছো মানে?
মানে গতকাল বাবাকে বলেছি তার ঘাড়ের ওপর বসে আর খাবো না। ঘাড়ের ওপর বসে না খেতে চাইলে বাড়ি ছাড়া আবশ্যক। তাই বাড়ি ছাড়ছি।

আপা, তুমি পাগল হয়ে গেছো! বাড়ি ছেড়ে কই গিয়ে থাকবে?

সেটা তোদের না ভাবলেও চলবে। মেয়ে মানুষের থাকার জায়গার অভাব হবে না। তুই এক কাজ কর মাকে গিয়ে বল আমি ডাকছি। তার সাথে আমার অতি গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে। এর এক লাইন বেশি কিছু বলবি না। টু শব্দ পর্যন্ত হবে না। ক্লিয়ার?

ঈর্ষা মাথা নাড়ালো।

যা এখন। মাকে ডেকে নিয়ে আয়।

ঈর্ষা সাথে সাথে ঘর থেকে বের হয়ে গেলো না। বর্ষার দিকে বিস্মিত চোখে তাঁকিয়ে রইলো। হয়তো কিছু একটা বোঝার চেষ্টা করছে। তার বোনটা বেশ কদিন ধরেই অদ্ভুত আচরণ শুরু করেছে। গতকাল আজান দেওয়ার আগে বর্ষার খোঁজে ঈর্ষা ছাদে গিয়েছিলো। দেখলো, কার সাথে যেনো একা একাই অনর্গল কথা বলছে সে। ঠিক মত খেতে চাইছে না, অবেলায় গোসল করছে, সকালে উঠে সাজতে বসছে! কি পাগলামি শুরু করেছে এসব! অধিক শোকে মেয়েটা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছে না তো? কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ঈর্ষার চোখে হঠাৎ পানি চলে এলো। চোখের পানি আড়াল করতে সে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

রুমানার ঘরে আবছা অন্ধকার। ভারি পর্দাগুলো টেনে রাখা। বাতি নেভানো। এই নভেম্বর মাসেও সে ঘেমে একাকার। জবজবে অবস্থা। কাজেই ঘরে এসি চালিয়ে রাখা। গায়ে অবশ্য পাতলা একটি চাদর টেনে রেখেছে। সরাসরি এসির বাতাস গায়ে লাগলে শীত করছে, আবার এসি বন্ধ করলে শরীর ঘেমে উঠছে।
ঈর্ষা মায়ের ঘরে উঁকি দিলো। অন্ধকারের জন্য মায়ের চেহারা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না।
‘মা।’
রুমানা চোখ বন্ধ রেখেই উত্তর দিলো,
‘বল।’
‘তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে?’
‘হু’
‘বেশি খারাপ লাগছে নাকি কম খারাপ লাগছে?’
বিরক্তিকর সুরে রুমানা বলল,
কি বলবি বল তো!
ঈর্ষার মস্তিষ্কে দ্বন্দ্ব শুরু হলো। গলার স্বরে বোঝা যাচ্ছে মায়ের শরীর বেজায় খারাপ। এ অবস্থায় বড় বোনের বাড়ি ছাড়ার খবর শুনে প্রতিক্রিয়া কেমন হবে ঠাহর করা যাচ্ছে না।
রুমানা চোখ মেলে তাঁকালো। বলল,
বাঁশগাছের মত দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? কি বলবি বল। নইলে দরজা লাগিয়ে যা।
আপা তোমাকে ডাকছে।
কেনো ডাকছে?
জানি না। শুধু বলল তোমার সাথে অতি গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।
আচ্ছা তুই যা। আমি একটু পর আসছি।
একটু পর আসলে হবে না। এখুনি আসতে হবে।
ঠিকাছে আসছি।

বর্ষার সাজের পর্ব শেষ।
সে ব্যাগ হাতে নিয়ে বিছানায় বসে আছে। রুমানাকে ঘরে ঢুকতে দেখে উঠে দাঁড়ালো। ঈর্ষাও মায়ের পিছে পিছে ঘরে ঢুকলো। বর্ষা শীতল গলায় বলল,
তুই অন্যঘরে যা। মায়ের সাথে আমার পার্সোনাল কথা আছে।
ঈর্ষা পুনরায় বেরিয়ে গেলো।
বর্ষা বলল,
মা, বাবা কোথায়?
তোর বাবা চৌধুরি আংকেলের বাসায় গিয়েছে।
বর্ষা বাচ্চাদের মত উত্তেজিত হয়ে বলল,
পার্ফেক্ট টাইমিং। মা শোনো, আমি শাহানাদের বাসায় যাচ্ছি। ওর বড় ভাইয়ের জন্মদিন। দাওয়াত দিয়েছে।
শাহানার বড় ভাইয়ের জন্মদিনে তোকে দাওয়াত দিবে কেনো?
না দেওয়ার কোনো কারণ আছে কি? যদি থাকে তাহলে বলো। অবশ্যই যুক্তিসংগত কারণ বলবে। অযৌক্তিক কারণ বলবে না।
রুমানা বিভ্রান্তিতে পরে গেলো। যুক্তিসংগত কোনো কারণ খুঁজে পেলো না।
বর্ষা বলল,
আচ্ছা বাদ দাও। বলতে হবে না। দেখো তো মা, আমাকে কেমন লাগছে?
সুন্দর লাগছে।
কতখানি সুন্দর লাগছে? মেপে বলো।
কি মেপে বলবো?
আকাশ মেপে বলবে।
আকাশ মাপা যায় না।
কেনো যায় না?
আকাশ খোলা জায়গা। এর শেষ কোথায় কেউ জানে না।
তুমি আকাশে গিয়ে দেখে এসেছো?
আমি গিয়ে দেখে আসবো কেনো? বিজ্ঞানীরা বলেছে।
যা নিজের চোখে দেখবে না। তা বিশ্বাস করবে না। বিজ্ঞানীরা বলেছে বলেই বিশ্বাস করতে হবে এমনটা কোথাও লিখা নাই। এখন বলো, কতটুকু সুন্দর লাগছে।
পুরো আকাশ সমান সুন্দর লাগছে।
মিথ্যা বললে। আমি এতটাও সুন্দরী নই। অর্ধেক আকাশ সমান সুন্দরও লাগছে না। যাইহোক। শোনো মা, আমার কিছু টাকা লাগবে। শাহানার ভাইয়ের জন্য গিফট কিনবো।

গতকাল রাতে বলে রাখতি। তোর বাবার কাছে চেয়ে রাখতাম।

তুমি অবশ্যই বাবার কাছে টাকা চাবে না। আমি প্রতিজ্ঞা করেছি তার কাছ থেকে টাকা নিবো না। আমি জানি, আলমারিতে তোমার ব্যক্তিগত টাকা আছে। সেখান থেকে দিবে।

তুই কিভাবে জানলি?

বাবা তোমাকে হাত খরচ দেয় না। তার কাছে টাকা চেয়ে নিতে তোমার ভালোও লাগে না। দুই মামা, প্রতি মাসে তোমাকে আড়াই হাজার করে টাকা দেয়। সেই টাকা কাঠের আলমারির নীল রঙের শাড়ির নিচে রেখে দাও।

তুই আমার আলমারি চেক করিস?

বর্ষা হেসে বলল,
মা আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে। টাকা দাও। এক হাজার টাকা দিবে। দামী গিফট দিতে হবে। সস্তা গিফট নিয়ে ও বাড়ি ঢোকা যাবে না। ছোটলোক ভাববে।

রুমানা নিজের ঘরে ফিরে গেলো। আবারো শরীর ঘেমে গেছে। নতুন উপসর্গ যুক্ত হয়েছে। মাথা দপদপ করছে। বাম পাশটা ব্যাথায় অবশ হয়ে আসছে। সে ঘরের বাতি জ্বালালো না। আলমারি খুলে নীল শাড়ির নিচে হাতড়িয়ে এক হাজার টাকার নোট বের করলো। তারপর মেয়ের ঘরের দিকে পা বাড়ালো।

(চলবে….)

লিখা, আতিয়া আদিবা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here