ছায়া নীল পর্ব-৬

0
437

ছায়া নীল!

৬.

ও বলেছিলো, স্পর্শ করলেই আমাকে চিনতে পারবে।
ওর হাত ধরাতেই আমি বুঝতে পেরেছি এই মানুষ টাই আমার স্বপ্নের নীল।
আজ ৬ বছর যাবত যাকে আমি শুধুই স্বপ্নে খুঁজে ফিরেছি, সে আমার সামনে।
আমার হাত ছেড়ে দিয়ে পকেট থেকে মোবাইল বের করে কেবিনের বাইরে চলে গেলো।
ওর আমাকে পরিচয় দেয়ার কোনো দরকার নেই ঠিক তেমনিভাবে আমার ওকে জিজ্ঞেস করারো নেই ও কে???
আশেপাশে কেউ নাই। দেয়ালের ঘড়িটা নষ্ট মনে হয়। সময় দেখাচ্ছে ৬ টা। কিন্তু জানালা দিয়ে আকাশ দেখে তো সেটা মনে হয় না।
ও আবার ফিরে এলো তবে একা না সাথে একজন নার্স।
নার্স আমাকে জিজ্ঞেস করলেন
– এখন কেমন বোধ করছো???
– ভালো।
আমার চোখ শুধু ওর উপরই আটকে আছে। কিন্তু ও একবারো আমার দিকে তাকাচ্ছে না। নার্স যা যা করছেন ও সেদিকেই তাকিয়ে আছে।
বাবা আর একজন মহিলা কেবিনে এলেন।
নার্স চলে গেলেন। বাবা আমার কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।
বাবার চোখ দিয়ে দুফোটা জল গড়িয়ে পরলো।বাবা বললে
– মামণি এরকম কাজ করতে হয়না।
আমার কিছু বলার মতো নেই। আমি যেটা করেছি সেটা অনেক বড় ভুল কিন্তু তাছাড়া কোনো উপায়ও ছিলো না।
বাবার সাথের সেই মহিলা বললেন
– ভাইজান এখন এসব রাখেন তো। পরে কথা বলবেন।
বাবা বললে
– নাহ, মেজো। আমার মেয়ে বড় জেদি। আরে বিয়ে করবি না বুঝলাম তাই বলে সুইসাইড কেউ করতে যায়????
বাবা ওনাকে মেজো কেনো বলল??? বাবা তো মেজো ফুপুকে মেজো বলে ডাকতেন। বাবার মুখেই ওনার গল্প শুনেছি কিন্তু সবাই তো বলে উনি মারা গেছেন।
সেই মহিলা বললেন
– আরে মারা তো যায়নি। ভাগ্যিস আমার সৌরভ দেখেছিলো রাস্তা থেকে যে আপনার মেয়ে হাত কাটছে।
কথাটা বলে নীলকে সেই মহিলা কপালে চুমু দিলেন।
বাবা বললেন
– মেজো তোর ছেলে হয়েছে খুব ভালো।
আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না। কী ঘটছে আর এই মহিলা কে???
বাবাকে জিজ্ঞেস করেই বসলাম
– বাবা, এরা কারা?? আমি তো এদের চিনতেই পারছি না।
বাবা বলল
– এই হলো তোর মেজো ফুপু আর এইযে ছেলেটাকে দেখছিস তোর ফুপাতো ভাই সৌরভ।
– কিন্তু বাবা তুমি তো বলেছিলে যে….
বাবা আমাকে আর বলতে দিলেন না। আমার কথার মাঝে কথা বলে ফেললেন।
– বাসায় গিয়ে সব বলবো।
বাসার কথা বলাতে মায়ের কথা মনে পড়লো।
বাসায় যে কী অবস্থা চলছে আল্লাহ জানে।
সৌরভ বলল
– মামা আজকে মনে হয় শারলিন কে ছেড়ে দিবে। আপনি ডাক্তারের সাথে কথা বলে আসুন। তাহলে ভালো হবে।
বাবা বলল
– প্রথম থেকে তো তুমিই কথা বলেছো। তাই এখন তুমি গেলেই ভালো হয়।
সৌরভ চলে গেলো। মেজো ফুপুকে ভালোভাবে দেখছি। মায়ের মুখে শুনেছি তার সাথে নাকি আমার চেহারার অনেক মিল।
বয়স হয়ে যাওয়াতে তেমন একটা মিল খুঁজে পাচ্ছি না।
তবে চোখ আর গায়ের রঙটাতে মিল আছে।
বাবা আর মেজো ফুপু কেবিনের বাইরে চলে গেলো আমাকে বিশ্রাম করতে বলে।
আফরোজার কথার অর্থ এখন বুঝতে পারলাম।
সৌরভ, নামটা খারাপ না। নীল বলে আর ডাকবো না। সেতো স্বপ্নের মানুষ টার নাম।
তারপরও নীল নামটা কে বেশি কাছের মনে হয়।
কিন্তু… থাক না ওকেই জিজ্ঞেস করবানি।
কী ঘটছে সেটা বুঝতে পারছি না। আমি জানতাম মেজো ফুপু মারা গেছেন আবার আজকে তাকে জীবিত দেখলাম তাও সাথে একজন ছেলেসহ।
আমাকে ছেড়ে দেয়া হলো।
বাবা, মেজো ফুপু, সৌরভ আর আমি বাসায় আসলাম।
পুরো বাসা নীরব। নীরব থাকাটাই স্বাভাবিক। যে কাণ্ড করেছি তাতে বিয়ে তো অবশ্যই ভেঙেছে। আর যেহেতু বিয়ে ভেঙেছে সেহেতু আত্মীয় স্বজন দের থাকার কথা না।
বাবা আমাকে আমার রুমে রেখে গেলেন।
কাটা হাত টা দিয়ে কিছুই করতে পারছি না। এক হাত দিয়ে আর কতটুকুই করা যায়।
ড্রেসিং টেবিলের উপর আমার ফোন পরে আছে।
বাসায় কি কেউই নাই???
ফোন বন্ধ হয়ে আছে, চার্জার খুঁজে ফোন চার্জে দিলাম।
আমি তো শাড়ী পড়া ছিলাম। কোন সময় যে আমাকে এই পোশাক পড়িয়েছে তাও জানি না।
যাই হোক কাপড় বদলে নিলাম। কাপড় বদলানোর সময় হাতে একটু ঝাকি লেগেছিল। মনে হলো আমার পুরো শরীর কেপে উঠলো ব্যাথায়।
বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম। মনে হলো কতদিন পর এখানে এলাম।
বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামছে। এই সময় টা প্রকৃতি এতো সুন্দর থাকে, বলার মতো না।
আমার খুব ভালো লাগছিলো আজকে। অনেকদিন পর আমার খুব ফ্রেশ লাগছে।
বাবা আর মেজো ফুপুর কণ্ঠ শোনা যাচ্ছে।
বাসায় কেউ নাই কেনো???
মনে হলো কেউ আমার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে।
পিছনে ঘুরবো আর তখন পুরুষ কণ্ঠ বলল
– পিছনে ঘুরো না। গোধূলি লগ্ন দেখো আর ভাবো কুকর্ম করার ফলাফল কী পেয়েছো???
কণ্ঠ শুনে বুঝতে পারলাম নীল মানে সৌরভ।
আমি বললাম
– কুকর্ম কেনো করেছি সেটা তুমি জানো।
– একটা লিমিট আছে, শারলিন।
– তোমাকে ভদ্রভাবে আমি অনেকবার বলেছিলাম, মনে পড়ে????
– আমিও ভদ্রভাবে বলেছিলাম সম্ভব না।এতো জেদ ভালো না শারলিন।
– তোমাকে কাছে পাওয়াটা যদি জেদ করা হয়ে থাকে। তাহলে আমি আরো বেশি করে করবো।
– তুমি যা করেছো সেটা বড় ধরনের ঝামেলা তৈরি করেছে।
– সবকিছুর জন্য তুমি দায়ী।
– আমি দায়ী????

চলবে…….!

# Maria_kabir

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here