হারাতে_চাই_না_তোমায় #পর্ব-২৩,২৪

0
678

#হারাতে_চাই_না_তোমায়
#পর্ব-২৩,২৪
#লেখিকাঃ_উম্মে_বুশরা

২৩
ভাগ্য মানুষকে কেথায়,কিভাবে নিয়ে দাঁড় করায় তা কেউ জানে না।কারো ভাগ্যতে থাকে লুকিয়ে থাকে অন্ধকার কোনো ভবিষ্যতে আবার কারো থকে সীমাহীন সুখ,ভালোবাসা।
অন্ধকার বেলকনিতে বসে আছে তন্নি।বাহিরের লেম্পপোস্টের আলো বেলকনিতে এসে পড়ছে।তাই বেলকনিতে অন্ধকারে সাথে কিছুটা আলোও আছে।তন্নি বসে বসে ভাবছে ওর আগামী জীবনের কথা।কী হতে চলেছে ওর সাথে।ভালো কিছু সত্যি আছে না কী কোনো দুঃখ,কষ্ট লুকিয়ে আছে।
তন্নির মনে জমেছে অভিমানের কালো মেঘ।সেই সাথে রাগ,দুঃখ।প্রিয় মানুষেটার দেওয়া এমন ব্যবহার তন্নি মেনে নিতে পারছে না।তন্নি তো চেয়েছিলো মানুষ টার মন জয় করে তার জীবনে সে রানীর মতো প্রবেশ করবে।কিন্তু ওর ভাবনা সব ভুল।মানুষ টাকে ও পেয়েছে ঠিক কিন্তু ভালোবেসে হয়তো পায়নি।পেয়েছে তার রাগের কারণ হয়ে।এই পাওয়াতে যে তন্নি খুশি নয়।”সেই মানুষটার কাছে কী সত্যি ও ভালো থাকবে,ভালোবেসে কাছে টেনে নিবে তো?মাঝে মাঝে তার চোখের দিকে তাকালে মনপ হয় আমার জন্য তার অফুরন্ত ভলোবাসা কিন্তু আবার মনে হয় এসব ফিকে।কিছু নেই তার মনে আমার জন্য।আমি এখন কী করবো মানুষটাকে ক্ষমা করে কী নিজের সাথে জড়াবো নাকী তার থেকে সরে আসবো।…..না সে আমাকে ভালো না বাসুক আমি তো বাসি।আমার ভালোবাসা দিয়ে তার মনে আমি ঠিক জায়গা করে নিবো”।তন্নি ওর বা হাতের অনামিকা আঙুলের আংটি টার দিকে তাকিয়ে এসব কথা ভাবছিলো।জী এই আংটি টা অনিমের নাম করে পড়ানো হয়েছে তন্নিকে।তন্নি চোখ বন্ধ করে সেই দিনটার কথা ভাবছে।

ফ্লাশব্যাক,,
সেইদিন তন্নি বাসায় গিয়ে শুনে ওকে আজ দেখতে আসবে।কিন্তু কে বা কারা তা জানার ওর বিন্দু পরিমাণ আগ্রহ ছিলো না।ওর ভাবনা শুধু একটাই ‘অনিম ওকে ভালোবাসে না।আর কখনো ওকে বুঝবেও না।তাহলে ওর জন্য অপেক্ষা করার কিছু নেই।ওদের মতো মধ্যবিওদের অনিম কেনো ভালোবাসবে।আর তাছড়া ও ওর বাবা-মা’র বড় মেয়ে।বাবা মা তো ওর জন্য খারাপ জায়গা থেকে সমন্ধ আনবে না।ভালোর জন্যই হয়তে এনেছে।এতে যদি বাবা মা খুশি হয় তাহলে ও চোখ বন্ধ করে বিয়ে করে নেবে’।এসব ভেবে তন্নি আর একটা কথাও বলে নি।শুধু চুপচাপ সব দেখে গেছে।একবার একটু শুনেছিলো যারা আসবে তারা নাকী পরিচিত।ওর মা অবশ্য ওকে জিজ্ঞেস করেছিলো এতে ওর মত আছে কি না?তন্নি শুধু বলেছিলো,
তন্নিঃ ‘তোমরা যা ভালো মনে করো তা করো।আমার কোনো আপত্তি নেই আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করো না।আর আমি জানি তোমরা আমার ভালোর জন্যেই সব করছো’।মেয়ের এমন কথা শুনে তন্নির মা খুশি হয়ে মেয়ে কপালে চুমু খেয়ে বললেন,
তন্নির মাঃ ‘দেখবি তুই খুব সুখী হবি।তোকে ওনারা মাথায় করে রাখবে।তোর কোনো কষ্ট হবে না ওখানে।আজ যদি পছন্দ হয় তাহলে আংটি পরিয়ে চলে যাবে।তারপর তোর পড়ালেখা শেষ হলে তোকে নিয়ে যাবে’।
আজই আংটি পরানোর কথা শুনে তন্নির মাথায় আকাশ ভেঙে পরলো।ও তো ভেবেছিলো শুধু দেখতে আসবে আর চলে যাবে।ও বিস্ময় নিয়ে ওর মা’কে বললো,
তন্নিঃ আজ আংটি পরাবে মানে কি?আমি তো এই ব্যাপারে কিছু জানি না।তোমরা আমাকে একবার বলতে পারতে।
তন্নির মাঃ ওনারা খুব ভালো।আর বিশেষ করে ওনারা দেরি করতে চায় না।তাই এতো তারাহুরো।ওনারা পারলে তোকে আজই উঠিয়ে নিয়ে যেতো কিন্তু ওনাদের মেয়ে এখন দেশে নেই তাই বিয়ের কাজ পরে করবেন।
তন্নিঃ তাই বলে আমাকে একবারো জিজ্ঞেস করবে না।আমার মত নিবে না।আমি কী চাই তা জানতে চাইবে না?
তন্নির মাঃ তুই তো বলেছিলি তুই রাজি।তাহলে এখন এমন করছিস কেনো?
তন্নিঃ হ্যা আমি বলেছিলাম।আমি জানতাম ওনারা এসে দেখে চলে যাবেন।কিন্তু আংটি বিয়ে এসব তো জানা ছিলো না।
তন্নির মা কিছু বলবেন তার আগে তন্নির বাবা এসে বললেন,
তন্নির বাবাঃ তুমি এখন কী চাও?ওনাদের এসব বলি আর তারা শুনে বিয়ে ভেঙে দিক আর আমার মুখে চুন কালি পরুক।
তন্নিঃ না বাবা আমি তা বলতে চাই নি।(নিচের দিকে তাকিয়ে কান্না আটকিয়ে রেখে)
তন্নির বাবাঃ তাহলে কী চাও বল?
তন্নি কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো,
তন্নিঃ আমি রাজি।তোমরা যা ভালো মনে হয় তা করো।(চোখ বন্ধ করে কথা গুলো বললো)
তন্নির বাবাঃ ওনারা কিছুক্ষন পর আসবে তৈরী হয়ে নাও।
এই বলে উনি চলে গেলেন।তন্নির মা ও মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বুঝিয়ে চলে গেলেন।আর ফেলে গেলেন তন্নিকে।ওর না বলা কথা কেউ শুনলো না।

সন্ধ্যা ৬ টা,
সবার সামনে মাথা নিচু করে বসে আছে তন্নি।কাউকে চিনে না।অবশ্য চিনবে কী করে ওতো মাথা উঠিয়ে কাউকে দেখে নি।শুধু কথা শুনছে।আর ওর মনে হচ্ছে কন্ঠ গুলো ওর খুব পরিচিত।কিন্তু কার তা এখন এই বোথা মাথায় ঢুকছে না।ওর একবার মনে হচ্ছে ও সব হারিয়ে ফেলবে আবার মনপ হচ্ছে সব নতুন করে ফিরে পেতে চলেছে।ওর এমন আকাশ কুসুম ভাবনার মাঝেই কেউ ওর হাত ধরলো।তন্নির হাতে কারো স্পর্শ পেয়ে ভাবনা থেকে বেড়িয়ে আসলো আর দেখে ওর পাশে বসা মহিলা ওর হাত ধরে আছে।আর বলছে,
মহিলাঃ মেয়ে যেহেতু আমাদের পছন্দ,চেনাজানার ভিতরে,আর ছেলেও আপনাদের পছন্দ তাহলে শুভ কজটা আর দেরী করতে চাই না।কী গো ঠিক বলেছি না?
পুরুষঃ হুম টিক বলেছো।এখন আংটিবদল হোক পরে সামাজিক ভাবে বিয়ে পরিয়ে তন্নিকে মা’কে আমরা উঠিয়ে নিবো।আর ততোদিনে আমার মেয়েটাও দেশে আশুক।আপনার কোনো আপত্তি নেই তো ভাই?
তন্নির বাবাঃ না আমাদের কোনো আপত্তি নেই।ও তো এখন আপনাদেরও মেয়ে।
মহিলাঃ তাহলে শুভ কাজ শুরু হোক?বাবু আয় তন্নি মাকে আংটি টা পরিয়ে দে।
তন্নির মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।এখন কী বলবে বা করবে তাও ওর মাথায় আসছে না।ও যেনো এক রোবট হয়ে গেছে।কিছু বলতে চাইছে ও কিন্তু পারছে না।এমন হচ্ছে কেনো ওর সাথে।গলার স্বর ওর সাথে আজ বেঈমানী করছে।তন্নিতো কিছু বলতে চায় তাহলে পারছে না কেনো?এসব ভাবতে ওর হাতে কোনো পুরুষালি হাতের ছোয়া পেলো।সাথে সাথে ও কেপে উঠলো আর চোখ বন্ধ করে ফেললো।কিছু সময় পর বুঝতে পারলো ওর হাতে আংটি পরানো হয়েছে।সাথে সাথে ওর চোখ দিয়ে দু ফোটা পানি গড়িয়ে পরলো।আজ থেকে অন্য কারো হয়ে গেলো।হলো না ওর অনিমের সাথে ওর সারাজীবন কাটানো।তন্নির মাথা এখনো নিচের দিকে।
মাহিলা বললো,
মহিলাঃ ওদের এক সাথে একটু কথা বলা দরকার।
মহিলার কথা শুনে সবাই এক মত হলো।তখন তন্নির মা বললো,
তন্নির মাঃ তনু যা।ওকে তোর রুমে নিয়ে যা।

তন্নি কিছু সময় বসে থেকে উঠে দাঁড়ালো।আর পা বাড়ালো রুমের দিকে।ও পিছনে না তাকালেও বুঝতে পারছে ওর পিছনে কেউ আসছে।আর বুঝতে পারছে যার সাথে কিছুক্ষন আগে ওর জীবন জড়ালো সেই ব্যাক্তিই আসছে।তন্নি রুমে এসে বেডের দিকে মুখ করে আছে।পিছনে না তাকিয়েও বুঝলো লোকটা দরজা আটকাচ্ছে।তন্নি এবার ভয়ে ঢোক গিললো।ও ভাবছে লোকটা উল্টো পাল্টা কিছু করবে না তো।তন্নি সাহস নিয়ে পিছনে তাকিয়ে তাড়াতাড়ি করে বলতে লাগলো,
তন্নিঃ আরে আপনি দরজা আটকাচ্ছন কেনো?বাহিরে মা…………….

আর কিছু বলতে পারলো না।যাকে দেখলো তাকে দেখে ৪৪০ ভোল্টেজের শক খেলো।এ কাকে দেখছে ও?যেই মানুষটার থেকে দূরে যাবে বলে কষ্ট পাচ্ছিলো সেই মানুষটাই এখন ওর সামনে।ও কী স্বপ্ন দেখছে না কী বাস্তব?নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে।অবাক ও বিস্ময় নিয়ে বললো,
তন্নিঃ আ…আপ…আপনি এ…খানে?
অনিমঃ কেনো আসতে পারি না নাকী?
তন্নিঃ আ..পনি এখানে কি করে এলেন?
অনিমঃ মানুষ যেভাবে আসে আমিও সেভাবেই এসেছি।
তন্নিঃ কে..কেন এসেছেন এখানে?
অনিমঃ বারে!আমি আসবো না?আমার বউকে আমি আংটি পরাবো আমি আসবো না তো কে আসবে?
তন্নিঃ বউ মানে কার বউ?😳 (অবাক আর বিস্ময় নিয়ে বলল)
অনিমঃ যে সামনে দাঁড়িয়ে আছে সে?
তন্নিঃ কি সব পাগলের মতো কথা বলছেন?
অনিমঃ এখানে পাগল কোথায় পেলে তুমি?
তন্নিঃ আপনি যা বলছেন তাতে তো আপনাকে পাগলই মনে হচ্ছে।
অনিমঃ সে তোমার মনে হতেই পারে।( তন্নির দিকে আগাচ্ছে আর বলছে )
তন্নিঃ আপনি সামনে আগাচ্ছেন কেন?(ভয়ে ভয়ে বললো)
অনিমঃ তুমি পিছাচ্ছো কেন?
তন্নিঃ দেখুন এগোবেন না বলে দিলাম?
অনিমঃ এগালে কি করবে?আর আমি আমার বৌয়ের দিকে আগাচ্ছি তাতে তোমার কি?
তন্নিঃ আবার বৌ বলছেন আপনি?কে বউ কার বউ?
অনিমঃ এই যে এইটা আমার নামে পড়ানো হয়েছে।(তন্নির হাত ধরে আংটিটার দিকে ইশারা করে)
তন্নিঃ কে বলেছে আপনাকে এটা?
অনিমঃ কউকে বলতে হবে কেন নিজে হাতে পড়িয়েছি আর নিজে জানব না?
তন্নিঃ কী????
অনিমঃ জী মেডাম।

তন্নির মনটা খুশিতে নেচে উঠলো।অবশেষে ও মানুষটাকে পেতে চলেছে সারা জীবনের জন্য।এটা কি সত্যি তন্নি যেনো নিজের নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছে না।তন্নির মনে হচ্ছে পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি সুখী মানুষ ও। কিন্তু পরক্ষণে অনিম যা বলল তাতে ওর খুশিটা মিয়িয়ে গেল।অনিম বলল,
অনিমঃ বলেছিলাম না আমার খাঁচায় ডানা মেলার জন্য তৈরি হও।যেখানে আমার ইচ্ছে মত ডানা মেলবে।সেই দিনের কিচ্ছু ভুলিনি।এবার দেখলে তো কে তোমার হবু স্বামী আর কে না।
তন্নিঃ (চুপ কিন্তু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে অনিমের দিকে)
অনিমঃ তবে একটা জিনিস দিয়ে ফ্রি আছো।আর তা হল আরু না আসা পর্যন্ত তোমাকে আমার জীবনের সাথে পুরাপুরি যাচ্ছি না।…..এখন থেকে আমাকে না বলে বাসার বাইরে একটা পা তোমার ফেলা নিষেধ।আমার পারমিশন ছাড়া যদি কিছু করেছ তো আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না।কথাটা মাথায় ঢুকিয়ে নিও।(কিছুটা সামনে এগিয়ে আবার ফিরে এসে বললো)আর হ্যা এই কথা যেনো আরু না জানে।সময় হলে আমি ওকে সব বলবো।

এই বলে অনিম চলে গেল তন্নির রুম থেকে।অনিল যাওয়ার পর তন্নি ধপ করে বিছানায় বসে পড়ল।অনিম কি বলে গেল?অনিম কী তাহলে ভালোবেসে ওর জীবনে তন্নিকে নেয় নি নিয়েছে জেদের বসে রাগের বসে।না এটা হতে পারে নাএটা কিছুতেই হতে পারে না।তন্নি কাঁদতে কাঁদতে নিচে বসে পরলো।এভাবেই কাঁদতে কাঁদতে সারা রাত পার হয়ে গেলো।
পরদিন মারিয়া এলো এলে ওকে সব বলি দিলো।মারিয়া সব শুনে খুশি অবাক সব হলো।এটা কী করে হতে পারে।অনিম তাহলে ওকে ভলোবাসে কিন্তু ভালো বাসলে তো কেউ এমন করে না।তবে যাই হোক তন্নিকে এখন সামলাতে হবে।তারপর মারিয়া তন্নিকে সামলাতে লাগলো।আর সারাদিন তন্নির সাথে থেকে চলে গেলো।
প্রায় ৫ দিন পর,
তন্নি বের হয়েছে ওর দরকারী কিছু কিনতে কিন্তু এই কথা অনিমকে ও জানায় নি।এই কয়দিন ও বাসা থেকে
বের হয়নি তাই আজ হটাৎ বের হওয়াতে ও অনিমকে জানাতে পারে নি।
তন্নি বের হয়েছে ভেবেছিলো বাসার কাছেই পেয়ে যাবে কিন্তু পেলো না তাই একটু হেটে সামনে এগালো বর পেয়েও গেলো।নিয়ে আসার সময় সামনে অনিম নিজে।অনিমকে দেখে তন্নি ঘাবড়ে গেলো।কিছু বলার আগেই অনিম তন্নির হাত ধরে ওর বাসার সামনে এনে হাত ছেড়ে বললো,
অনিমঃ কাজটা ভালো করলি না।আমাকে না বলে বের হয়ে।

এই কথাটা বলেই অনিম চলে গেলো।আর তন্নি অনিমের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।দু ফোটা পানি ফেলে তন্নি ভিতরে চলে গেলো।
তন্নি ওর ভাবনা থেকে বের হয়ে ঘুমাতে চলে গেলো।

In America
আরু দাড়িয়ে আছে বেলকনিতে।শীতের মৌসুম এখন তার উপর স্নো পরছে।এই ঠান্ডাতে আরু বাহিরে দাড়িয়ে আছে।আর ভাবছে বিগত কয়েক মাসের কথা। ও এখানে এলো তারপর সব ঘুছিয়ে লেখাপড়াতে মন দিয়েছে।আরু প্রথমে ওর মামার বাসায় থকতে চায় নি।ও চেয়েছে আলাদা থাকতে।ওর বাবা তো দেশ থেকে টাকা পাঠায়ই আর বাকীটা এখানে কোনো পার্ট টাইম জব নিয়ে চলবে।তারপরও ও কারো কাছে বোঝা হবে না।কিন্তু ওর মামা মামি বেকে বসেছে।ওনারা বলেছেন আরু যেনো কোথায়ও না যায়।অনেক বোঝায় ওনারা আরুকে।পরে আরু সবার কথা রাখতে ওর মামার কাছেই থেকে যায়।ওর মা ও অবশ্য এতে খুশি।কারন মেয়ে যদি পরিচিত কারো কাছে থাকলে তিনি নিশ্চিন্তে থাকতে পারবেন।
আরু ভাবছে,যার জন্য এতো দূরে চলে আসলাম সে ভালো আছে তো?……. হুম অবশ্যই ভালো আছে।এখন
তোর আমার মতো অসয্য মেয়েকে সয্য করতে হয় না।আমার মুখও দেখতে হয়না।ভালোই আছে এখন।আমিই কতো বোকা।যা আমাকে ভালোবাসে না তার পিছু পিছু আমি ছুটেছি এতো দিন।
বলেই নিজের উপর তাছিল্য হাসলো।আরুকে এমন হাসতে দেখে ইশিকা এসে বললো,
ইশিকাঃ এমন পাগলের মতো একা একা হাসছিস কেনো?
আরুঃ আমি পাগল?
ইশিকাঃ তা নয় তো কি।…এবার বল একা একা হাসছিস কেনো?
আরুঃ ভাবছি আমি কতো বোকা ছিলাম।ও আমাকে ভালোবাসে না জানার পরও ওর পেছনে পরে ছিলাম।
ইশিকাঃ কী বলছিস তুই এসব😳
আরুঃ হুম🙂
ইশিকাঃ a-z সবটা বল।কিছু বাদ দিবি না।আর এমনিতেও এখানের আসার পর তুই হাসতে ভুলে গেছিস।সব টা বল।

আরিশা এবার একে একে ইশিকাকে সবটা খুলে বললো।সব শুনে ইশিকা তব্দা মেরে গেলো।ও অবাক হয়ে বললো,
ইশিকাঃ তুই যা যা বলছিস সবটা কী সত্যি.?
আরুঃ হুম।(অন্য দিকে তাকিয়ে চোখের পানি আটকিয়ে)
ইশিকা আরুর অবস্থা বুঝতে পারলো।ওকে কী স্বান্তনা দেবে ও জানে না।ইশিকা এখন ভবছে এজন্যই আরু মন মরা থাকতো।ওরা ভাবতো হয়তো সবাইকে ছেড়ে এসেছে তাই মন খারাপ কিন্তু এর পেছনে আসল কারণ আজ বুঝতে পারলো।ইশিকা আরুকে কিছু বলতে নিতেই আরু বললো,
আরুঃ স্বান্তনা দিতে হবে না।আমি এখন নিজেকে শক্ত করে নিয়েছি।ওইসব নিয়ে আমার এখন কোনো মাথা ব্যাথা নেই।আমি সব ভুলে সামনের দিকে আগাতে চাই।
ইশিকাঃ সত্যি কী সব ভুলে গেছিস?
আরুঃ হুম সবটা।
ইশিকাঃ তাহলে তোর চোখে পানি কেনো?
আরুঃ ওই টা কিছু না।….এতোটা বোকা ছিলাম কেনো তাই এখন ভবছি আর নিজের উপর জেদ উঠছে।
ইশিকাঃ আচ্ছা এসব বাদ দে।….কী বলবো বা কী বলে স্বান্তনা দেবো তা জানি না।আমার জানা নেই।শুধু বলবো সামনের দিকে আগাতে চাস আগা আমি তোর পাশে আছি।আর ফুফি-ফুফার দিকে তাকিয়ে সবটা ভুলে নিজেকে শক্ত কর।কেউ যাতে তোকপ আর দুর্ভল ভাবতে বা করতে বা পারে।
আরুঃ হুম।
ইশিকাঃ আচ্ছা ভিতরে চল।

চলবে……

#হারাতে_চাই_না_তোমায়
#পর্ব-২৪
#লেখিকাঃ_উম্মে_বুশরা

১ সপ্তাহ পর,
আয়ান আজ সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে করপই হোক আরুর খবর পেয়েই ছাড়বে।হটাৎ করে মেয়েটা এমন গায়ের হলো কী করে।এই ৭ দিনে আয়ান অনেক চেষ্টা করেছে আরুর একটা খবর জানার কিন্তু ও পায়নি।রাফসানের সাথেও এখন আর কথা হয় না।দুজন এখন দুজনের রাস্তায় চলে।আয়ান ওর মনের অবস্থা ভলো না থাকার কারণে সবার সাথে কথা বলা,যোগাযোগ করা বন্ধ করে দিয়েছে।আর রাফসান আয়ানের প্রতি রাগের কারণে বন্ধ করেছে।রাফসান ভবে আয়ানের সাথে ছোট বেলা থেকে বড় হয়েছে।দুজন দুজনের সব খবর জানে,কিন্তু কী এমন হলো যার জন্য আরুকে দূরে ঠেলে দিলো আর সবার সাথে যোগাযোগ বন্ধ।সেই রাগে রাফসান আয়ানের সাথেকথা বলে নি।আয়ান যখন আরুর খোজ পাচ্ছিলো না তখন রাফসানের সাথে কথা বলার অনেক চেষ্টা করেছ কিন্তু রাফসান আয়ানের থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে।আয়ান সরিও বলেছে অনেক বার তাও রাফসান কিছু বলে নি।আরু যেখানে যেখানে যেতে পারে সব জায়গায় আয়ান খোঁজ করেছে কিন্তু কোথায়ও আরুকে পায়নি।আয়ান মাঝে মাঝে আরুর বাসার সামনে এসে আরুর রুমের বেলকনির দিকে তাকিয়ে থাকতো।ভাবতো এই হয়তো আরু বেরিয়ে আসবে কিন্তু না।আরুর রুমের এবং বেলকনির লাইট সব সময় অফ দেখতো।এভাবে প্রায় ৩/৪ ঘন্টা বসে থেকে যখন দেখে আরু আসে তখন চলে যায়।এমনই করে আসছে গতো ১ মাস ধরে।তাই আজ যে করেই হোক রাফসানের সাথে কথা বলে জানার চেষ্টা করবে আরু কোথায় আছে।ভালো আছে কী না।
রাত এখন ১০ টা
আয়ান জানে রাফসান এখন কোথায় আছে।সেখানেই বাইক নিয়ে ছুটলো।কিছুক্ষনের মাঝে একটা পর্কে এসে বাইক থামায় আয়ান।’ওইতো রাফসানের বাইক দেখা যাচ্ছে।তাহলে তো রাফসান এখানেই আছে’।এই ভেবে আয়ান সামনের দিকে অগ্রসর হলো।সেখানে গিয়ে দেখে ওদের আরো অনেক বন্ধুরা সেখানে বসে আড্ডা দিচ্ছে।কিন্তু রাফসান নেই।আয়ান এসে চারদিক তাকাচ্ছে।আর রাফসানকে খুজচ্ছে।আয়ানকে দেখে ওদের এক বন্ধু বললো,
তানজিলঃ কি ব্যাপার বন্ধু?হটাৎ এখানে?এতো দিন পর আমাদের মনে পরলো?
আয়ানঃ আরে তেমন কিছু না।নিজেকে কাজে ব্যস্ত রাখছি আরকী।তাই সময় দিতে পারি না।তোদের অবস্থা বল।
নাহিদঃ আমাদের আর কী বল?এইতো আড্ডা দিয়ে রাত দিন যাচ্ছে।তোদের তো শালা কপাল ভলো।নিজেদের ব্যবসা আছে পড়ালেখা শেষ করে সেখানে জয়েন করবি।আর আমাদের কপাল দেখ নিজের ভাগ্য নিজেকে তৈরী করতে হবে।
আয়ানঃ তো কর এখানে বসে থাকলে তো ভাগ্য তৈরী করতে পারবি না।
এভাবেই ওরা আরো কিছুক্ষন কথা বলে।আর আয়ান শুধু চারদিকে তাকাচ্ছে আর রাফসানকে খুজচ্ছে।আয়ানকে এমন তাকাতে দেখে তানজিল বললো,
তানজিলঃ তুই কী কাউকে খুজচ্ছিস আয়ান?আসার পর থেকে দেখছি এদিক-ওদিক তাকাচ্ছিস।
আয়ানঃ ওই আসলে।রাফসানকে দেখছি না।ওর বাইক দেখলাম কিন্তু ওকে দেখছি না।
নাহিদঃ আর বলিস না ভাই।গার্লফ্রেন্ড যে কী প্যারা।যার আছে সে বুঝে।
আয়ানঃ কেন তোর আবার কী হলো?
নাহিদঃ আরে আমার না।রাফসানের কথা বলছি।আমাদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলো তখন মারিয়া কল করলো আর সেই বান্দা উঠে চলে গেলো প্রেম আলাপ করতে।
তানজিলঃ হুম সেই যে গেছে এখনো আসার নাম নেই।শালা আমাদের পোড়া কপাল আমারাই কোনো গার্লফ্রেন্ড নেই।থাকলে আমরাও এমন সবাইকে দেখিয়ে প্রেম করতে পারতাম।
ওদের এমন কথা শুনে সবাই হেসে ফেললো।আয়ান ওদের জিজ্ঞেস করলো রাফসান কোন দিকে।ওরা ইশারায় অন্য পাশ দেখাতেই আয়ান সেখানো গেলো।
আয়ান গিয়ে দেখে রাফসান ফোন কানে নিয়ে কথা বলছে আর হাসছে।আয়ান ভাবলো ‘এখন ওদের কথার মাঝে ডিস্টার্ব করবে না নাকী চলে যাবে’।আবার ভাবলো ‘সারাদিনই কথা বলে এখন আমার দরকার তাই এখন এই সময় কথা না বললে কিছু হবে না’।এই ভেবেই রাফসানের কাছে গিয়ে ওকে ডাক দিলো।রাফসান ফোনে কথা বলার ওর নাম ধরে কেউ ডাকাতে পিছন ফিরে দেখে আয়ান দাঁড়িয়ে আছে।আয়ানকে দেখে রাফসান অনেকটা অবক হলো আর ভাবছে ও এখানে কেনো এলো।ফোনের ওপাশে মারিয়ার কথাতে রাফসানের ধ্যান ভাঙে।আর আয়ানও ইশারা করছে ‘ফোনটা কেটে দিতে’।তাই রাফসান মারিয়াকে ‘ পরে কথা বলছি।এখন রাখি’। এই বলে কল কেটে দিলো।রাফসান এবার আয়ানের দিকে তাকায়।
রাফসানের তাকানো দেখে আয়ান বললো,
আয়ানঃ কেমন আছিস?
রাফসানঃ ভালো।তুই?
আয়ানঃ আছি এক রকম।
রাফসানঃ ওহহ তা হটাৎ এখানে?
আয়ানঃ কেনো আসতে পারি না?
রাফসানঃ তা নয়।অবশ্যই আসতে পারিস।হটাৎ অনেকদিন পর এলি তো তাই।
আয়ানঃ হুম……..হয়তো নিজের আসল ব্যাক্তিত্বকে ভুলে যাচ্ছিলাম তাই সবার থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছি।ভেবেছিলাম সব ভুলে ভালো থাকতে পারবো কিন্তু না।দিন শেষে আমার ভাবনা ভুল প্রমানিত হলো।
রাফসানঃ কী হয়েছে?হটাৎ এমন কথা বলছিস?
আয়ানঃ চল ওখানটায় বসি।(সাইডে ঘাসের দিকে ইশারা করে)
রাফসানঃ চল।
ওরা ওই খানে বসার পর কিছুক্ষন চুপ ছিলো।তারপর নিরবতা ভেঙে আয়ান বললো,
আয়ানঃ তা কেমন চলছে তোদের সময়?
রাফসানঃ ভালোই।তোর?
আয়ানঃ এই তো কোনোরকম?
রাফসানঃ কোনো রকম কোনো?এখন তো ভালো থাকার কথা।তোকে বিরক্ত করার কেউ নেই এখন।সবাইকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিস।
আয়ানঃ কথা শুনাচ্ছিস?
রাফসানঃ কথা শুনানোর মতো কাজ করেছিস।কথা তো শুনবিই।তা সেই কথা যতোই তেতো লাগুক।
আয়ানঃ তোরা সবাই আমার উপরটা দেখেছিস।আর তা দেখেই তোরা বিচার করছিস।একবারো আমার ভিতরটা কেউ জানতে চাইলি না।
রাফসানঃ তুই জানতে দিশেছিস কউকে?সবাইকে দূরে ঠেলে দিয়েছিস।জানি না কী কারণে এমন করেছিস।
আয়ানঃ আরুর ধোকাটা আমি নিতে পারিনি। সবাইকে
তখন আমার শত্রু মনে হতো।ভাবতাম আরুর মতো সবাই আমার মন ইমোশন নিয়ে খেলছে।তাই সবার থেকে দূরে সরে গিয়েছি।
রাফসানঃ আরুর ধোঁকা মানে?আরু তোকে কী ধোঁকা দিলো?
আয়ানঃ ছাড় না সেসব কথা।ভালো লাগছে না কিছু।
রাফসানঃ কিছু তো একটা হয়েছে।বল কী হয়েছ?
আয়ানঃ বল্লাম তো কিছু না।

রাফসান আর জোর করলো না।আয়ান যেহেতু বলে চায় না তাহলে হাজার চেষ্টা করলেও ওর মুখ দিয়ে বলানো যাবে না।যখন ওর ওর নিজের ইচ্ছে হবে তখন ঠিকিই বলবে।এই ভেবে রাফসান চুপ হয়ে থকে।প্রায় অনেকক্ষন দুজনের মাঝে নিরবতা বিরাজ করে।নিরবতা ভেঙে আয়ান বলে,
আয়ানঃ একটা প্রশ্ন করার ছিলো।ঠিকঠাক উত্তর দিবি?
রাফসানঃ বল…
আয়ানঃ আসলে……আব..ওই..
রাফসানঃ নির্ভয়ে বল।…বল কী জানতে চাস?
আয়ানঃ আরুর কোনো খবর জানিস?(চোখ বন্ধ করে কথাটা জিজ্ঞেস করলো।)
আয়ানের প্রশ্ন শুনে রাফসান অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।আয়ান কী বললো?আরুর কতা জানতে চাইছে আয়ান?এটা কী সত্যি?কিন্তু এতোদিন হটাৎ কেনো জানতে চাইছে?কারণ কী?আরু কোথায় আছে এটা জানার পর কী আয়ান সেখনে যাবে?আবার নতুন করে আরুকে কষ্ট দিতে?আমি কী বলবো আরু কোথায় আছে?কিন্তু আরু তো আমাকে বলতে বারন করেছিলো।ও বলেছিলো কেউ যেনো না জানে।কী বলবো এখম আয়ানকে?….না আয়ান এতোটাও খারাপ না।আরুকে আবার নতুন করে কষ্ট দেবে।হয়তো এতো দিন পর মনে পরেছে তাই জিজ্ঞেস করছে।রাফসানের এমন বিভিন্ন ভাবনার মাঝেই আয়ান আবার বললো,
আয়ানঃ কী হলো?আমি জানি তুই জানিস ও কোথায় আছে।কিন্তু আমাকে বলতে চাইছিস না।
রাফসানঃ আসলে সেরকম কিছু না।আ….
আয়ানঃ হয়তো ভাবছিস ও যেখানে আছে সেখানে গিয়েও ওকে কষ্ট দেবো।তাই বলতে চাইছিস না তাই তো?
রাফসানঃ তুই ভুল ভাবছিস?…..আচ্ছা হটাৎ ওর কথা জানতে চাইছিস কেনো?ওর চেহারা তো তুই দেখতে চাস না তাহলে ও কোথায় তা কেনে জানতে চাইছিস?
আয়ানঃ…………..
রাফসানঃ তুই যা চেয়েছিস তাই তো ও করেছে?ওর চেহারা তো তোকে দেখাচ্ছে না।তুই ভালো আছিস রিয়াকে নিয়ে।আরুও তোর অবহেলা অপমান ভুলে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।তাহলে হটাৎ ওকে কেনো দরকার?
আয়ানঃ আর বলিস না প্লিজ।আচ্ছা আমার দোষটা সবাই দেখলি আরু যে আমাকে টকালো এটা কেউ দেখলি না কেনো?
রাফসানঃ আরু তোকে ঠকায় নি আয়ান।আমি আগেও বলেছি। আরুকে চিনতে বুঝতে তোর কোথাও ভুল হচ্ছে।তারপরও তুই কেনো ওর সাথে এমন করলি জানি না।
আয়ানঃ…………….
রাফসানঃ এখন কথা নেই তাই তো?আর থাকবেই বা কী করে।ছাড় এসব।
আয়ানঃ………. বলনা ও কোথায় আছে?ওর বাসার সামনে গিয়ে ছিলাম অনেক বার,তাছাড়া আরো বিভিন্ন জায়গায় খুজেছি কিন্তু পাই নি।
রাফসানঃ….( দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো)..চলে গেছে ও।পরিবার,বন্ধু,নিজের চেনা জায়গা সব ছেড়ে চলে গেছে।যাতে ওর চেহারা তুই দেখতে না পারিস।

আয়ানের বুকটা ধক করে উঠলো।কী বললো রাফসান?চলে গেছে মানে?কোথায় গেছে?না আরু আমাকে ছেড়ে কোথাও যেতে পারে না।…নিশ্চয়ই রাফসানের কোথাও ভুল হচ্ছে।আয়ান কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,
আয়ানঃ চ…চলে গে..গেছে মানে?কোথায় গেছে?
রাফসানঃ এই শহর ছেড়ে,এই দেশ ছেড়ে অনেক দূরে।কবে আসবে বা আদেও আসবে কী না তা কেউ জানে না।কিন্তু কোন দেশে আছে এটা আমি তোকে বলতে পারব না।সরি।
আয়ান আর কিছু বললো না।এসব শুনে কেমন যেনো বুকটা ব্যাথা করছে।কেনো এমন হচ্ছে আয়ান বুঝতে পারছে না।রাফসান আরো কিছু বলতে চেয়েছিলো কিন্তু আয়ানের মুখের অবস্থা দেখে আর কিছু বললো না।হয়তো আয়ানের কষ্ট হচ্ছে।হোক আরুকেও এমন কষ্ট দিয়েছিলো।এখন আয়ানও পাক।
আয়ান কিছু না বলে উঠে দাঁড়িয়ে ‘আসছি।পরে দেখা হবে’ বলে চলে গেলো।
আয়ান চলে গেলো।রাফসানও আর আটকালো না।রাফসান ভাবছে আরুর কথা গুলো।আরু যে চলে গেছে এটা রাফসান যেনে ছিলো আরু আমেরিকা যাওয়ার প্রায় ১৫ দিন পর।মারিয়া বলেছিলো রাপসানকে।প্রায় অনেক দিন পর আরু রাফসানের সাথে কথা বলে।ওদের সম্পর্কটা ভাই বোনের মতো।একদিন আরু কল দিয়ে ‘কেমন আছে?সময় কেমন কাটছে?মারিয়ার সাথে ঝগড়া হয় কী না?’এসব কথা বলছিলো।রাফসানও ঠিকটাক উত্তর দিয়েছে।আরু যেই কারনে কল করেছিলো তা বলতে পারছে না। রাফসান তা বুঝে বললো,
রাফসানঃ আরুর আমার মনে হয় তুমি আমাকে কিছু বলতে চাও।
আরুঃ আসলে ভাইয়া…
রাফসানঃ হুম বলো?
আরুঃ ভাইয়া আমি যে আমেরিকা এসেছি এটা যেনো কেউ জানতে না পারে।প্লিজ ভাইয়া।
রাফসানঃ কেউ বলতে তুমি আয়ানকে বুঝিয়েছো তাই তো?
আরুঃ (চুপ)
রাফসানঃ বুঝতে পেরেছি।চিন্তা করো না কেু জানবে না।যতোদিন না তুমি চাইছো কেউ জানবে না।
আরুঃ থেংক ইউ ভাইয়া।
রাফসানঃ তা দেশে ফিরবে কবে?
আরুঃ জানি না।কোনো দিন ফিরবো কি না তাও জানি না।আর ফিরে কী করবো?পুরোনো স্মৃতি গুলো পিছনে তাড়া করবে।
রাফসানঃ এসব থেকে বাঁচতে বুঝি পালিয়ে গেলে?
আরুঃ পালিয়ে যাই নি তো।তিক্ত অতীত ভুলতে।ওখানপ থাকলে তো ভুলতে পারতাম না।
রাফসানঃ চাইলে কী সবটা ভুলা যায়?
আরুঃ………… বাদ দিন না ভাইা এসব কথা।
রাফসান বুঝলো আরু এসব কথা শুনতে চায় না।তাই রাপসান আর কিছু বললো না।কিছুক্ষন কথা বলে রেখে দিলো।
রাপসান অতীত থেকে বেরিয়ে এলো।এবং চলে গেলো বাসার উদ্দেশ্যে
————————-
একটা রুমে রেড ওয়াইন হাতে নিয়ে দুজন যুবক যুবতি বসে আছে।কিছু কথা বলছে আর হাসাহাসি করছে।এক সময় হাসি থামিয়ে যুবকটি বললো,
যুবকঃ আচ্ছা অনেক দিন প্রায় ৬ মাসের মতো আরুর কোনো খবর পেলাম না।জানিস কিছু?
যুবতীঃ না ভাই।আমিও দেখেনি।এই কয়েক মাসে শুধু ওর বান্ধবীদের দেখতাম কিন্তু আরুকে দেখতাম না।
যুবকঃ হুম খোজ নেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু পাই নি।
যুবতীঃ জাহান্নামে যাক আরু।আমি তো আয়ানকে পাবো এটাই বড় কথা।
যুবকঃ পাবো মানে আয়ানের মনে এখনো তোর জন্য জায়গা করতে পারিস নি?
যুবতীঃ আসলে ভাই আয়ান কেমন যেনে হয়ে গেছে।এখন পড়ালেখা,ওর বাবার অফিস সামলানো এসব নিয়ে থাকে।আর গত ১৫ দিনের মতো কেমন অন্যমনস্ক থাকে।মনে হয় কাউকে যেনো খুজছে কিন্তু পাচ্ছে না।
যুবকঃ খুজচ্ছে মানে?…আয়ান কোনো মতে আরুকে খোজার চেষ্টা করছে না তো?
যুবতীঃ না না।আয়ান কিছুতেই আরুর হতে পারে না।আয়ান শুধু আমার।ভাই তুমি কিছু করো।আয়ান যেনো না জানে আরু কোথায় আছে।প্লিজ ভাই।
যুবকঃ আচ্ছা তুই যা আমি দেখছি।

যুবতী চলে যায় রুম থেকে।যুবকটি আরুর একটা ছবি বের করে বলতে লাগলো,
যুবকঃ কোথায় তুমি ডার্লিং?কোথায় গা ঢাকা দিয়েছো?যেখানেই থাকো তুমি তোমাকে তো আমি খুজে বের করবোই।আজ হোক বা কাল।
————————
রাত ২ টা আয়ান বসে আছে আছে সিগারেট টানছে।এই সিগারেটও আজ ওর মন শান্ত করতে পারছে না।কী করবে ও?আরুর কথাটা বারবার মনে পরছে।সেই কান্না ভেজা চোখ,মুগ্ধকর সেই হাসি,হৃদয়কারার মতো সেই চোখের চাহনি।কী করে এসব ভুলবে আয়ান।
আয়ান এক সময় না পেরে জোরে ‘আরু’ বলে চিল্লিয়ে উঠলো।
——————
সময় তখন বিকাল ৪ টা।আরু সবে ভার্সিটি থেকে বের হতে নিতেই হটাৎ পিছনে তাকালো।আরুর মনে হলো আয়ান ওকে ডেকেছে।আরু খুজছে আয়ানকে।কিন্তু পেলো না।পরক্ষনে আরু নিজের বোকামির জন্য নিজের উপর রাগ হলো।রেগে নিজের মনে মনে বললো,
আরুঃ আয়ান এখানে কীভাবে আসবে।আমারই মনের ভুল।ওকে যতো ভুলতে চাই ততো যেনে মনের মাঝে যেকে বসছে।আর পারছি না। উফ।

ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে হাঁটা দিলো।

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here