হারাতে_চাই_না_তোমায় #পর্ব-৫৫ এবং শেষ

0
1047

#হারাতে_চাই_না_তোমায়
#পর্ব-৫৫ এবং শেষ
#লেখিকাঃ_উম্মে_বুশরা

সকাল ৭ টা
জানালা দিয়ে আসা সকালের মিষ্টি রোদ ঢুকতেই আরুর ঘুম ভেঙে যায়।সারা রাত থমথমে আকাশ থাকলেও সূর্যের কিরণে সব কিছু ঝলমল করছে।সব কিছু সতেজ মনে হচ্ছে।
আরু কানের কাছে টিপটিপ আওয়াজে আসছে।আরু আস্তে করে চোখ খুললো।কোথায় আছে বুঝতে পারছে না।ভালো করে চোখ ডলে তাকিয়ে দেখে ওর মাথা আয়ানের উন্মুক্ত বুকে।আরু পাশ ফিরতে গেলে একটুও নড়তে পারছে না।কারন হলো আয়ান ওকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে আছে।আরু কাল রাতের কথা মনে পরে লজ্জা আবার আয়ানের বুকে মুখ লুকায়।
আর এবার মাথাটা একটু তুলে দেখে আয়ান গভীর ঘুমে মগ্ন।ঘুমানোর ফলে আয়ানকে কতোটা স্নিগ্ধ লাগছে।সিল্কি চুল গুলো ফ্যানের বাতাসে উড়ছে।আরু আয়ানের দিকে মায়া ভরা চোখে তাকিয়ে থাকে কতোক্ষন।তারপর আয়ানের গালে হাত রাখলো।আয়ানের খোঁচা খোঁচা দাঁড়িতে হাত বুলাতে লাগলো।কালকে পর্যন্ত ভেবেছিলো এই মানুষ টাকে ও হারিয়ে ফেলেছে।কিন্তু না হারায় নি।সারাজীবনের জন্য পাশে পেয়েছে।যাকে ভালোবেসেছে তাকে পেয়েছে।ওদের ভালোবাসা পূর্ণতা পেয়েছে।৬ বছর ওরা দূরে ছিলো।যদিও ৫ বছর হয় কিন্তু এই ১ বছর তো কেউ কারো কাছে আসতে পারে নি।ভালোবাসার দাবি করতে পারে নি।মন খুলে একে অপরের সাথে কথা বলতে পারে নি।পাশে বসে নিজেদের জড়তার কারণে কোনো কথা শুনা হয়নি।শত কিছু মাঝেও একটা দূরত্ব ছিলো।কিন্তু এখন নেই কোনো দূরত্ব,নেই কোনো জড়তা।এখন থেকে যা আছে বা থাকবে তা হলো।আরুর এখন নিজেকে দুনিয়ার সবচেয়ে বড় ভাগ্যবতী মন হয়।কারন ও যাকে ভালোবাসে সেই মানুষটাও ওকে ভালোবাসে।আরু এসব কথা ভেবে মুচকি হেসে আয়ানের বুকে একটা চুমু খেয়ে নাক ঘসতে থাকে।
আয়ান হটাৎ নড়ে উঠে ওকে আরো শক্ত করে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।আরু চুপ করে আয়ানের ভালোবাসা গুলো উপভোগ করে।হটাৎ আরুর মনে পরে সময়ের কথা।দেখে ৭‌.৪০ মিনিট।হায় আল্লাহ কতোটা বেলা হয়ে গেছে।নতুন বউ এতো বেলা করে ঘুমালে লোকে কী বলবে।কিন্তু আরু যে এখন উঠবে তারও কোনো উপায় নেই।কারণ আয়ান ওকে যেভাবে ধরেছে এর থেকে নিজেকে ছাড়াতেও ওর কষ্ট হচ্ছে।
অনেক চেষ্টার পর আয়ানের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়েছে।তারপর আস্তে আস্তে উঠে পরে যাতে আয়ান টের না পায়।যদি আয়ান জেগে যায় তাহলে ওকে লজ্জায় পরতে হবে।আরু তাড়াতাড়ি সরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো।
টানা ১ ঘন্টা সাওয়ার নিয়ে আরু বের হয়।আরু চুল মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখে আয়ান উপর হয়ে ঘুমাচ্ছে।আয়ানকে এমন ভাবে ঘুমাতে দেকে আরু ফিক করে হেসে দেয়।তারপর আয়নার সামনে এসে নিজেকে তৈরী করে নেয়।ও আজ একটা মিষ্টি কালারের কাতান শাড়ি পরেছে।সাথে খুবই মিষ্টি লাগছল ওকে দেখতে।প্রায় ১৫ মিনিট পর আরুর সাজ শেষ হয়।কিন্তু এখনও আয়ান উঠছে না।আরু এবার ভাবলো আয়ানকে একটু জ্বালানো যায়।আরু আয়ানের কাছে গিয়ে ওর পিঠে নিজের চুলের পানি ফেলে।আয়ান বারবার নড়েচড়ে উঠছে আর তা দেখে আরু হাসছে।অনেকবার এমন করার পর আয়ান নড়াচড়া বন্ধ করে দেয়।আরু তা দেখে অবাক।তাই ও আয়ানের আরো একটু কাছে গিয়ে ওর ভেজা চুলের নিচের অংশ টুকে নিয়ে আয়ানের কানে সুড়সুড়ি দিতে থাকে।একা বার দেওয়ার পর দ্বিতীয় বার করতে যাবে তার আগেই আয়ান ওকে এক টানে নিজের বুকের উপর নিয়ে একেবারে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।
সবটা কাজ এতো তাড়াতাড়ি হওয়াতে আরু কিছু বুঝতেই পারল না।ও আহাম্মকের মতো তাকিয়ে আছে।আয়ান একটু চোখ খুলে দেখে আরু এমন করে তাকিয়ে আছে তা দেখে আয়ান হেসে আরু গলায় মুখ ডুবিয়ে দিলো।
হটাৎ আরুজ গলায় খোঁচা খোঁচা কিছু অনুভব হতেই ওর হুস আসে।আরু বারবার ঠেলছে আয়ানকে নিজের থেকে দূরল সরাতে কিন্তু পারছে না।
আয়ান আরুর গলা থেকে মুখ উঠিয়ে বিরক্ত হয়ে বললো,
আয়ানঃ এমন করছো কেনো?চুপচাপ থাকো।
আরুঃ আমাকে ছাড়ো।
আয়ানঃ কেনো ছাড়বো কেনো?
আরুঃ কারণ আমি নিচে যাবো।বাসায় কতো মানুষ।নতুন এতো বেলা হয়েছে এখনো নিচে নামে নি।কী ভাববে সবাই।
আয়ানঃ কউ কিছু ভাববে না।সবাই জানে তুমি অসুস্থ।আর তাছাড়া তুমি তোমার স্বামীর সাথে আছো অন্য কারো সাথে নেই।
আরুঃ অন্য কারো সাথে থাকি বা স্বামীর সাথে থাকি তা পরে বুঝবো।এখন ছাড়ো।
আয়ানঃ না ছড়বো না।
আরুঃ ছাড়ো না।(নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে)
আয়ানঃ বলছিতো না।আর এতো লাফালাফি করছো কেনো?
আরুঃ এমনই করবো।তুমি ছাড়ো নয়তো আরো বেশি করে করবো।
আয়ানঃ করো তাহলে আমার টর্চারও বেশি বেশি হবে।

বলেই ওর গলায় একটা কামড় বসিয়ে দিলো।আরু হটাৎ ব্যাতা পেয়ে ‘ আহ’ করে উঠলো।আয়ান সাথে সাথে ওর মুখ চেপে ধরলো।তারপর বললো,
আয়ানঃ বাসায় মানুষ।এমন সাউন্ড করলে মানুষ কী ভাববে।

আরু ‘উম’ ‘উম’ করছে।মানে ওর মুখ থেকে হাত সরাতে।আয়ান বুঝতে পেরে ‘ সরি’ বলে হাত সরিয়ে নিলো।আরু রাগ নিয়ে বললে,
আরুঃ এখন মনে পরেছে বাসায় মানুষ আছে।আর আমি যে এতোক্ষন বলছি।
আয়ানঃ সকাল সকাল নিজের বরকে ছেড়ে পালাতে চাইছো এটা কী ঠিক?
আরুঃ হুম এটাি ঠিক।
আয়ানঃ যানো যখনই ভাবি তোমার প্রেমে আর পরবো না তখনই তুমি নতুন করে নিজের প্রেমে পরতে বাধ্য করো।এটা কী ঠিক বলো?(আরুর কপালে কপাল ঠেকিয়ে)
আরুঃ মানে?
আয়ানঃ এই যে ভেজা খোলা চুল,সাথে শাড়ি।আমাকে ঘায়েল করতে এতোটুকুই যথেষ্ট।

আরু লজ্জায় চোখ নামিয়ে নেয়।আয়ান মুচকি হেসে আবার বলে,
আয়ানঃ এতোদিন শুনতাম মেয়েরা বিয়ে পর সুন্দর হয়ে যায়।আজ নিজ চোখে দেখলাম।কিন্তু বুঝতে পারছি না এটা কী মেকআপের কামাল না কী আমার আদরের।
আরু লজ্জা পাচ্ছে তবুও মিছে রাগ দেখিয়ে বললো,
আরুঃ আসভ্য।

আয়ান হেসে আরুর কপালে একটা গভীর ভালোবাসার পরস দিয়ে ওকে ছেড়ে দিলো।আরু ছাড়া পেতে নিজেকে ঠিক করে নিচে নেমে গেলো।
———-
সন্ধ্যায় ৭
রিসেশনে সবাই একে আসতে শুরু করেছে।রিসিপশনের অনুষ্ঠান করা হয়েছে আয়ানদের বাড়ির সামনের বাগানে।জায়গাটা খুব খোলামেলা।আয়ান আপাতত কিছু গেস্ট দের সাথে কথা বলছে।ও এখনো রেডি হয়নি।আসলে রুমে আরু রেডি হচ্ছে তাই ও যেতে পারছে না।কিছুক্ষন পর আয়ান দেখলে এক এক করে সবাই বের হচ্ছে।তা দেখে আয়ানা বললে,
আয়ানাঃ এবার তুই গিয়ে রেডি হয়ে নে।গেস্ট মোটামুটি সবাই এসে পরেছে।আর বাকী যারা আছে বাব আর তোর ভাইয়া সামলে নিবে।
আয়ানঃ আচ্ছা।আমি গেলাম।

আয়ান উপরে চলে গেলো।গিয়ে রুমের দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে আয়ান হা হয়ে আছে।আরুকে আজ লাল ব্রাইডাল গাউন পরানো হয়েছে।সাথে মাচিং জুয়েলারি।আরুর পুরো সাজে যেনো ওকে ফুটে উঠেছে।
আরু দরজার আওয়াজ পেয়ে পাশে তাকিয়ে দেখে আয়ান নেশা ভরা চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।আর লজ্জায় মাথা নামিয়ে নিলো।আয়ান এক পা এক পা করে সামনে এগিয়ে আসছে।আয়ান যতো আগাচ্ছে আরুর বুক ততো টিপটিপ করছে।আয়ান আরুর সামনে এসে দুহাত দিয়ে আরুর মুখটা উপরে তুলে কপালে অনেকক্ষন সময় নিয়ে চুমু খেলো।
আয়ানঃ একদম আমার রাজ্যের রাণীর মতো লাগছে।
আরুঃ এবার রাজা কেও তৈরি হয়ে আসতে হবে।
আয়ানঃ কিন্তু ছাড়তে যে ইচ্ছে করছে না।মন চাচ্ছে সারাদিন এভাবে থাকি।
আরুঃ আমি পালিয়ে যাচ্ছি না।অনেক সময় আছে এভাবে থাকার।
আয়ানঃ পালাতে চাইলেও আর দিবো না পালাতে।।
আরুঃ হুম হয়েছে।এবার যাও।
আয়ানঃ বেশ এখন ছাড়লাম কিন্তু রাতে না।তখন কোথায় পালাবে।

আরু লজ্জা পেয়ে মাথা নামিয়ে নিলো।আয়ান তা দেখে বললো,
আয়ানঃ এতো লজ্জা এখনো?সব তো শেষ হলো কাল…
আরু আয়ানের মুখ চেপে ওর বাকী কতা আটকে দিলো।
আরুঃ চুপ অসভ্য।যাও রেডি হতে
আয়ানঃ যাচ্ছি

আয়ান চলে গেলে আরু মুচকি হাসে।আর দোয়া করে সারাজীবন যেন এই মানুষটা ওকে এমন করেই ভালোবাসে আর এমন করেই আগলে রাখে।ব্যাস আর কিছু চাই না।
———
তন্নিঃ তুই কী আমাদের উপর রেগে আছিস?
আরুঃ না রাগ করব কেন?
মারিয়াঃ কিন্তু আমাদের মনে হচ্ছে তুই আমাদের উপর রেগে আছিস।
আরুঃ আরে না।তোরা তো আমার ভালোর জন্য খুশির জন্য এমন করেছিস।তাহলে না রাগ করবো কেনো?তবে হ্যা প্রথমে রেগে ছিলাম কিন্তু পরে আয়ান সবটা বুঝিয়ে বলায় একন আর রেগে নেই।
তন্নিঃ যাক।জানিস গলায় কাটা আটকে ছিলো এটা ভেবে যে তুই রেগে আছিস।
মারিয়া হুম।আচ্ছা দোস্ত কাল রাত কেমন কাটলো?(চোখ টিপ মেরে)
আরুঃ তোর যেমন কাটলো আমারও ঠিক তেমন?
মারিয়াঃ আমার আবার কেমন কাটবে ওই নিরামিষটাকে নিয়ে।
তন্নিঃ আহা কী সুন্দর কথা।
মারিয়াঃ হু।দোস্ত তুই বল ভাইয়া কী কী দিলো?
আরুঃ ওই যে বললাম তোর সাথে যা হয়েছে আমার সাথেও তেমন?
মারিয়াঃ ওহহ আমার সাথে রাফসান ওই…..আব কিছু না।(লজ্জা পেয়ে)
আরুঃ না পুরোটা শেষ কর।
মারিয়াঃ দূর কথাই বলবো না

মারিয়ার কান্ড দেখে আরু আর তন্নি হাসতে হাসতে শেষ।
সুন্দর শান্তি শৃঙ্খলা ভাবে ওদের রিসিপশনের র অনুষ্ঠান শেষ হয়ে যায়।
আরুদের আজ ওর বাবার বাসায় যাওয়ার কথা ছিলো কিন্তু আয়ান বলেছে কাল সকালে আরু নিয়ে যাবে।এটা শুনে সবাই আর কিছু বলে নি।
———-
আয়ান রুমের দরজার সামনে এসে দেখে রাফসান,মারিয়া,তন্নি ওর আরো কাজিন ওর রুমের সামনে দাড়িয়ে আছে।অনিম ওদের থেকে একটু দূরে দাড়িয়ে আছে।আসলে ও বড় ভাই হয়ে ছোট বোনের বাসর ঘরের সামনে থাকবে এটা কেমন যেনো দৃষ্টি কটু লাগে তাই।আয়ান ওদের সামনে এসে ভ্রু কুচকে বললো,
আয়ানঃ তোরা এখানে?
রাফসানঃ আমরা থাকবো না তো কারা থাকবে?
আয়ানঃ ওহ বুঝেছি।যাই হোক এতোক্ষন আমার বউকে পাহারা দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।এখন যেতে পারিস।
মারিয়াঃ আমরা আমাদের পাওনা না নিয়ে যাচ্ছি না।
আয়ানঃ কিসের পাওনা।
রাফসান ওই যে তোর রুম এতো কষ্ট করে এতো সুন্দর করে সাজালাম তার জন্য।
তন্নিঃ কাল কোমো ঝামেলা ছাড়া রুমে ঢুকেছেন বলে যে আজও ঢুকবেন তা তো হয় না।
আয়ানঃ বেশ।কী চাস বল।
রাফসানঃ বেশি না। ৩০,০০০
আয়ানঃ কী পাগলা নাকী?এখন এতো টাকা নেই।পরে।
মারিয়াঃ বাকীর কাম পাকি।তাই এখনই দিতে হবে।

শেষে অনেক কথা বলার পর আয়ান বিশ হাজার দিয়েছে।আর দশ হাজার ওর কাছে এখন ছিলো না বলে দিতে পারছে না।তবে কাল সকালে দিয়ে দিবে বলেছে।প্রথমে ওরা না মানলেও পরে সবাই মেনে রুমের সামনে থেকে সরে যায়।আয়ানও হাপ ছেড়ে বাঁচে।
—-
রুমে এসে দেখে আরু ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে গলার পিছনে যেনো কী করছে।আয়ান দরজা লক করে আরুর পিছনে গিয়ে দাড়ালো।আরু কারো উপস্থিতি টের পেয়ে আয়নায় তাকিয়ে দেখে আয়ান।
আয়ানঃ কী হয়েছে?
আরুঃ দেখো না কিভাবে যেনে চুলের সাথে পেচিয়ে গেছে।
আয়ানঃ সরো আমি দেখছি।

আরু হাত ছেড়ে দিলো।আয়ান কিছুক্ষন চেষ্টা করলো হলো না।তাই ঝুকে দাত দিয়ে খোলার চেষ্টা করলো।
হটাৎ আয়ানের নিশ্বাস উন্মুক্ত ঘাড়ে পরতেই আরুর শরীর কেঁপে উঠে।তারপর আয়ানের খোঁচ দাড়ি স্পর্শ ওর ঘাড়ে ঘসা লাগতেই আরু আর নিজেকে সামলাতে পারলো না।শক্ত করে শাড়ি দুপাশে মুঠো করে চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিলো।
আয়ানের কাজ হয়ে যেতেই ও উঠে আরুর দিকে তাকিয়ে দেখে আরু চোখ বন্ধ করে আছে।আয়ান আরুর কানে ফু দিয়ে ফিসফিস করে বললো,
আয়ানঃ এখন লজ্জা না পেয়ে কিছু বাঁচিয়ে রাখো একটু পর কাজে লাগবে।

হটাৎ করে এমন কথা শুনে আরু কিছুটা কেপে উঠে।তাড়াতাড়ি চোখ খুলে নিজের কাজে মন দেয়।আয়ান তা দেখে নিঃশব্দে হেসে দেয়।আরুর গহনা খোলার কাজ শেষ হলে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে যেতে নিলেই আয়ার আরুর হাত ধরে ওর বুকের কাছে এনে দু-হাত দিয়ে আরুর কোমর আটকে ধরে।আরু প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আয়ানের দিকে।আয়ানঃ কোথায় যাচ্ছো?
আরুঃ ম..মানে ফ্রেশ হতে।
আয়ানঃ কেনো?
আরুঃ কেনো মানে?
আয়ানঃ মানে হলো।একটু পর তো সব খুলত……..

আর বলতে পারলো না তার আগেই আরু আয়ানের মুখ চেপে ধরলো।আয়ান হেসে আরুর হাতে চুমু খেলো।আরুর সাথে সাথে হাত নামিয়ে নিলো।আয়ান ওকে ছেড়ে দিলো।আরু চলে গেলো ফ্রেশ হতে।
আরু ফ্রেশ হয়ে এলে আয়ান ওকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে কোলে নিয়ে বিছানার দিকে আগায়।
———-
৬ মাস পর,
পাল্টে গেছে অনেক কিছু।কেউ নতুন সম্পর্কে জড়িয়েছে কেউ নতুন অনূভুতির সাথে পরিচয় হয়েছে।
অনিম আর তন্নির কোল জুড়ে এসেছে একটা ছেলে।নাম হলো তানিম।দেখতে খুবই মিষ্টি।
এর মাঝে ইশিকা আর শাকিলের বিয়ে হয়ে গেছে।ওদের রিলেশন চলছিলো এতোদিন তা কেউ জানতে পারে নি।ওদের সম্পর্কে সবাই খুশি।
———-
আরুঃ আয়ান উঠো।অফিসের টাইম হয়ে যাচ্ছে।
আয়ানঃ প্লিজ ঘুমাতে দাও।সারা রাত তোমার জন্য ঘুমাতে পারি নি।(চোখ বন্ধ করে)
আরুঃ মানে?আমি তোমাকে ঘুমাতে দেই নি মানে কী?তুমি সারা রাত আমাকে জ্বালিয়েছো।

আরু এতোক্ষন কী বললো আয়ান শুনলো না।কারণ সে আবার ঘুমের দেশে।আর বিরক্ত হয়ে আয়ানের পাশে বসে ওকে ডাকতে লাগলো।আয়ান এবার হটাৎ করে আরুর কোলে শুয়ে কোমর জড়িয়ে ওর পেটে মুখ গুজে দেয়।আরু এমন কান্ড দেখে হাসছে।আয়ান বললো,
আয়ানঃ এখন সব দোষ এই মাসুম ছেলেটার।
আরুঃ হুম সব দোষ তোমার।একটু না হয় অসুস্থ ছিলাম তাই বলে সারা রাত জেগে বসে থাকবে।আর আমি তোমাকে বলেছি ঘুমাতে কিন্তু তা করো নি।এখন আমাকে দোষ দিচ্ছো।এখন তাড়াতাড়ি উঠো।
আয়ানঃ না ঘুমাবো।মাথায় হাত বুলিয়ে দাও।
আরুঃ এখন ঘুমালে অফিস যেতে লেইট হয়ে যাবে।
আয়ানঃ উফ!দজ্জাল বউদের মতো এমন করছো কেনো?বর কাছে আছে কোথায় একটু রোমাঞ্চ করবে তা না ঠেলে অফিস পাঠাচ্ছো?(বিরক্ত হয়ে)
আরুঃ হ্যা আমি দজ্জাল বউ খু……

আরু আর বলতে পারলো না।তার আগেই মুখে হাত চেপে আয়ানকে ঠেলে ওয়াশরুমে রুমে চলে গেলো।
আরুর হটাৎ এমন আচরণে আয়ান পুরো অবাক।কিন্তু অবাক হওয়া সাইডে রেখে আরুর পিছন গিয়ে দেখে আরুর গড়গড় করে বমি করছে।আয়ান কিছুটা বয় পেয়ে গেলো।হটাৎ কেনো এমন হচ্ছে।
এদিকে আরু বমি করে করতে কাহিল হয়ে গেছে।আয়ান পিছন থেকে আরুকে ধরে রাখায় ওর পুরো ভর আয়ানের উপর দিয়ে দিয়েছে।
আয়ানঃ ঠিক আছো?
আরুঃ হুম
আয়ানঃ আর করবে?
আরুঃ না।

আয়ান আরুকে কোলে নিয়ে রুমে এনে বিচানায় বসিয়ে পানি দিলো।আরু খেয়ে নিলো।
আয়ানঃ হটাৎ এমন হলো কী করে?নিশ্চয়ই খাওয়া নিয়ে অনিয়ম করো।আরু তুমি কী এখনো বাচ্চা যে তোমাকে বলে বলে খাওয়াতে হবে।
আরুঃ বাচ্চা না কিন্তু বাচ্চার মা হবে কিছু দিন পর।
আয়ানঃ কথা ঘুরাবে না একদ….কী বললে তুমি?
আরুঃ (কিছু না বলে নিচে তাকিয়ে আছে আর হাসছে)
আয়ানঃ এটা..এটা কী স..সত্যি?
আরুঃ হুম
আয়ানঃ কবে থেকে?তুমি আমাকে বললে না কেনো?
আরুঃ বলতাম আজই অফিস থেকে ফিরলে কিন্তু তার আগেই
আয়ানঃ সে সব বাদ দাও।..আরু….আরু আমি যে কী খুশি তোমাকে বলে বোঝাতে পারবো না।আমি.. আমি বাবা হবো।ছোট হাত পা দিয়ে সে খেলবে,আদো আদো বুলিতে আমাকে বাবা ডাকবে।

আয়ানের চোখের কোনা চিকচিক করছে।আরু তা দেখে নিজেও কেঁদে দেয়।এ যে সুখের কান্না।আয়ান আরুর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে আরুর পেটে আলতো করে চুমু দিয়ে বলে,
আয়ানঃ প্রিন্সসেস তাড়াতাড়ি চলে এসো।বাবা ওয়েট করছে।
আরুঃ সবে দেড় মাস আয়ান।আর কে বললো প্রিন্সসেস?প্রিন্স হবে।
আয়ানঃ না আমি আমার আরুপাখির মতো প্রিন্সসেস চাই।
আরুঃ না আমি আমার বরের মতো প্রিন্স চাই।
আয়ানঃ আচ্ছা আচ্ছা উত্তেজিত হতে হবে না।যা চাও তাই হবে।তবে ২ টা এক সাথেও হতে পারে।
————
হাসি মাজ,আনন্দ,কান্নার মাঝে চলে গেছে ৫ বছর।এই ৫ বছরে সবার ভালোবাসা কারো কমে নি বরং বেরেছে।
আজ আরিশা ও আয়ানের ছেলে মেয়ের জন্মদিন।হ্যা ওদের জমজ ছেলে মেয়ে হয়েছে।যেদিন বাচ্চারা হলো সেদিন আয়ান ছেলে মেয়েকে কোলে নিয়ে কেঁদে দিয়েছিলো।এই ছেলে মেয়ে গুলো ওর অংশ।ওদের পবিত্র ভালোবাসার প্রতীক।
ছেলের নাম আরিয়ান রহমান।আর মেয়ের নাম আরিয়া রহমান।
মারিয়া আর রাফসানের একটা মেয়ে সাড়ে ৩ বছর বয়স।নাম মাইশা।
ইশিকা আর শাকিলের মেয়ে ইশরা।৩ বছর বয়স।
অনিম আর তন্নির ছেলের এখন ৬ বছর চলছে।
এদিকে মায়ানের এখন ১১ বছর চলছে।
——
আয়ান রুমে এসে দেখে আরু আয়নার সামনে দাড়িয়ে রেডি হচ্ছে আর ওদের মেয়ে আরিয়া মা’র মেকআপ এটা সেটা হাত দিতে চাচ্ছে।আজ মা মেয়ে সেম কালার শাড়ি আর ড্রেস পরেছে।হালকা ব্লু কালারের শাড়ি পরেছে আরু আর ওর মেয়ে একটা পার্টি ড্রেস।
আয়ান পিছন থেকে বললো,
আয়ানঃ হলো তোমাদের?আর কতোক্ষন লাগবে?
আরুঃ ছেলেকে রেডি করিয়েছো?
আরিয়ানাঃ আমি রেডি মা।

আরু পিছনে তাকিয়ে দেখে বাবা ছেলে সেম কালার স্যুট।ব্লু কালারের কোর্ট,প্যান্ট ভিতরে সাদা শার্ট।বাবা ছেলে দু’জনের এক।
আরু মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে,
আরুঃ আমার বাবকে পুরো প্রিন্স দের মতো লাগছে।(কপালে একটা চুমু দিয়ে)
আরিয়াঃ আর আমাকে?
আয়ানঃ আমার মা’কে একদিন পরীর মতে লাগছে।(মেয়েকে কোলে নিয়ে)
আরিয়াঃ আর মা’কে?

আয়ান চুপ হয়ে আছে।আয়ান মেয়েকে চুমু খেয়ে কোলে থেকে নামিয়ে বললো,
আয়ানঃ মা বাব নিচে গিয়ে দেখো তো মাইশা,ইশরা আর তোমাদের তানিম ভাইয়া এসেছে কী না?
আরিয়ান আর আরিয়াঃ ওকে বাবা

ওরা চলে গেলো।ওরা গেলে আয়ান আরুকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে বললো,
আয়ানঃ জন্মদিন কী ছেলে মেয়ের না-কি ওদের মা’র?এতো সেজেছো কেনো?
আরুঃ দেখি কাউকে পটাতে পারি কীনা?
আয়ানঃ এই জীবন থাকতে নয়।আমি যে #হারাতে_চাই_না_তোমায়। রেখে দিতে চাই মনে পিঞ্জরে।

আরু ঘুরে আয়ানের বুকে মাথা রেখে বলে,
আরুঃ ভালোবাসি।
আয়ানঃ ভালোবাসি।

–সমাপ্ত —

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here