ছায়া নীল!
৯.
হঠাৎ অনুমতি চাচ্ছে কেনো?? ও কি কোনো বিষয় নিয়ে টেনশনে আছে??
মেসেজ রিপ্লে দেয়ার মতো ব্যালেন্স নাই। এখন বাবার কাছে ফোন চাইলে সন্দেহ করতে পারে। কী করবো বুঝতে পারছি না।
আবার মেসেজ টোন বাজলো। মেসেজ চেক করলাম ওর মেসেজ। লিখেছে
– আমাকে এখন সহ্য হয়না??
আরে এ কী বলতেছে??? আমার ওকে কেনো সহ্য হবে না?
ফোন হাতে নিয়ে বসে রইলাম। ঘুমাতেও পারছি না।
মহাপাগলের পাল্লায় পড়েছি। ঝিমুচ্ছিলাম হঠাৎ করে ফোন বেজে উঠলো।
ওর ফোন, রিসিভ করলাম। আমি আগে কথা বললাম
– সৌরভ…
– কী আমাকে তোমার পছন্দ হয়না এখন???
– কেনো পছন্দ হবেনা??
– তুমি এতো সুন্দর….
– তো কী??? তুমি এতো পাগলামি কেনো করছো???
– আমার ভালো লাগছে না। আমার তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে!
– এখন এতো রাতে তুমি কীভাবে আসবে??
– শারলিন….
– হুম বলো!
– আমার জন্য তুমি অনেক কষ্ট সহ্য করেছো কিন্তু আমি তো কিছুই করিনি।
– এখন এই রাতে এগুলো নিয়ে আলোচনা করার সময় না।
– তুমি ঘুমাচ্ছো?
– নাহ।
– তুমি দরজা টা খোলো তো!
– মানে???
– তোমার বাড়ির দরজা খুলো। আমি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছি।
– সৌরভ তুমি পাগলামি করছো কেনো???
– আমি সত্যি বলছি শারলিন।
– বাবা জানতে পারলে ঝামেলায় পড়বো।
– কোনো ঝামেলায় পড়বা না। দরজা খোলো।
– আচ্ছা।
কী বিশ্রী ব্যাপার, ও এতো রাতে আমাদের বাসায়। তাও বাবা জানে না। আমার তো মাথায় কিছুই ঢুকছে না।
ফোন হাতে নিয়ে দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।
খুব আস্তে আস্তে দরজা খুললাম। যাতে কোনো শব্দ না হয়।
দরজা খুলেই দেখি ও দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখে হাতের গোলাপ ফুল আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো
– নাও তোমার জন্য।
আমি ফুল হাতে নিলাম। ওর চেহারা কেমন কেমন লাগছে।
চুলগুলো কেমন আওলা ঝাওলা হয়ে আছে।
এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে আমার ভালো লাগছে না আবার বাসায়ও তো ঢুকাতে পারছি না।
বাবা ঘুমাচ্ছে, পুরো বাড়িতে আমি ধরা যায় একা।
সৌরভ বলল
– তোমার নীলকে ভিতরে যেতে দিবে না???
– হ্যা হ্যা আসো।
ও ভিতরে ঢুকে সরাসরি আমার রুমে চলে গেলো।
আমি তাড়াতাড়ি করে দরজা আটকে দিয়ে আমার রুমে এসে রুমের দরজা বন্ধ করে দিলাম।
রুমে ডিম লাইট জ্বলছে। ওর হাটাচলা কেমন কেমন লাগছে।
আমি নিচু স্বরে বললাম
– তুমি কিছু বলবা???
– তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে জানো??
– দেখা হয়েছে আমাকে???
– আরে কই দেখতে পারলাম! একটু আলো জ্বালাও দেখি তোমাকে।
আমি লাইট জ্বালালাম। ও আমার কাছে এসে দাঁড়ালো।
উটকো গন্ধ নাকে আসলো। এরকম গন্ধ কেনো???
নাকে হাত দিয়ে বললাম
– এরকম গন্ধ কেনো???
– কিছু খেয়েছি তো তাই…!
– মদ তাই না??
ও আমার কপাল থেকে চুল সরিয়ে দিয়ে কপালে আংগুল বুলিয়ে দিচ্ছিলো। হাত এতো ঠাণ্ডা পুরো শরীরে কাটা দিয়ে উঠলো।
– তুমি অনেক সুন্দর জানো তো??
– হ্যা জানি।
– রাগ করেছো??
আমি ওকে দূরে সরিয়ে দিয়ে বললাম
– দূরে থাকো!
– আমার স্পর্শ এখন ভালো লাগছে না??
– তুমি নেশাগ্রস্ত। স্বাভাবিক হয়ে আমাকে স্পর্শ করবে।
– আচ্ছা আচ্ছা আমি আর এমন করবো না।
– নেশা করার কারণ??
– অনেক খারাপ লাগছিলো।
– তুমি ডেইলি খাও তাই না??
– নাহ, যখন খুব খারাপ লাগে তখন দুই একটু খাই।
– আজকে খারাপ লাগার তো তেমন কিছুই হয়নি।
– আমার জন্য তোমাকে কতো কষ্ট করতে হচ্ছে!
– তাই বলে…
– আমি যাই, তোমাকে ডিস্টার্ব করবো না। তুমি ঘুমাও।
– বাসায় যেতে পারবে একা একা??
– হ্যা খুব পারবো। তুমি ঘুমাও আমি ঠিক বাসায় যেতে পারবো।
– আচ্ছা তুমি কী কারণে এসব ছাইপাঁশ খেলে??
– আরে সখী বলবো। তুমি ঘুমাও শারলিন।অনেক জ্বালাইলাম তোমারে।
ও চলে যাচ্ছিলো আবার ফেরত আসলো তারপর বললো
– তোমাকে তো দেখতেই পারলাম না।
– চোখ বুজে ছিলে নাকি??
– আরে তুমি এতো প্যাঁচাল পারলা তাই দেখতে পারলাম না।
– আচ্ছা আমি চুপ করলাম।
আমার চারপাশ দিয়ে ও ঘুরলো। সাত পাক ঘুরে যে বিয়ে করে আমার মনে হয় ও আমার সাত পাক ঘুরছে। আল্লাহ কী মহাপাগলের পাল্লায় পড়লাম।
হুট করে আমার কাটা হাত ধরলো।এমনিতেই ব্যথা তার উপর ও যেভাবে ধরেছে তাতে তো মনে হলো আমি শেষ!
দাঁতে দাঁত চেপে বললাম
– উরে আস্তে আস্তে গেলাম আমি!
– আরে sorry sorry!
ও নিজেই দরজা খুলে চলে গেলো।আমি পিছুপিছু গিয়ে দরজা বন্ধ করলাম।
গোলাপ ফুলটা এখনো আমার হাতে। ওর কর্মকাণ্ডে আমার এখন হাসি পাচ্ছে। শুনেছিলাম মাতালদের পাল্লায় পড়লে নাকি পাগল হয়ে যাবার মতো অবস্থা হয়।
হাতের ব্যথাটা বাড়ায় দিয়ে গেলো।
রুমে এসে লাইট অফ করে ডিম লাইট জ্বালিয়ে দিয়ে আবার বিছানায় শুইলাম। আবার ফোন বেজে উঠলো, রিসিভ করলাম
– শুনো তোমাকে বিয়ে করার পর আমি আর মদ খাবো না।
আমি যাই বলবো তাতেই ও প্যাঁচাবে। তাই হ্যা, না দিয়েই কাজ চালাতে হবে!
– হুম
– আমি বাসায় যাচ্ছি। বুঝছো??
– হ্যা বুঝেছি।
– শুনো হাতে ব্যথা দিয়েছি তাই sorry!
– it’s ok.!
– ভয় পাইছো??
– হুম।
পুরেটা রাত আমার মনে হচ্ছে এভাবেই কেটে যাবে। ওর মদ খাওয়ার ফলাফল আগামীকাল পাবে। এখন কিছু থেকে কিছু বললে ও আবার বাসায় চলে আসবে।
কারে ভালবাসলাম আমি??
চলবে……!
#Maria_kabir