ছায়া নীল পর্ব-১০

0
197

ছায়া নীল!

১০.
সৌরভ বলল
– আমি তো ভূত না যে তুমি ভয় পাবে?
– হুম
– তাহলে ভয় কেনো পেলে?
– এমনি।
– এমনি আবার কেউ ভয় পায় নাকি?
– আরে আমি ভয় পাই নাই।
– কী বলো?। একটু আগেও তো বললে ভয় পাইছো।
– শুনো আমি ভয় পাইছি । কারণ টা হলো – এতো রাতে এভাবে কারো বাসায় আসে?
– কারো বাসায় না মামার বাড়ি আমার।
মাতালরা নাকি সত্য কথা বলে। আমার যে ব্যাপার গুলোতে কনফিউশন আছে এখন জিজ্ঞেস করলে সত্যটা জানা যাবে।
– আচ্ছা সৌরভ এতো দিন তোমাদের তো আমাদের বাসায় আসতে দেখলাম না। কেনো?
– খুব সোজা, তোমাদের সাথে আমাদের ঝগড়া ছিলো।
– কী নিয়ে ঝগড়া ছিলো?
– তুমি জানো না?
– আমি জানলে তোমাকে জিজ্ঞেস করতাম না।
– জানো কখন তোমায় প্রথম দেখেছিলাম?
– হ্যা স্বপ্নে!
ও প্রসঙ্গ পাল্টাতে চাচ্ছে যেভাবেই হোক আমাকে সব খবর বের করতে হবে।
– না না স্বপ্নে না। তোমার ছবি মা আমাকে প্রথম দেখিয়েছিলেন।
– কী? দেখে কী মনে হয়েছিলো?
– শুনো তখন আমি ইন্টারে পড়ি আমার প্রথম প্রেমের ফুললি ব্রেকাপ হলো।
তারপর চুপ। কোনো সাড়াশব্দ নেই। কুকুরের ঘেউ ঘেউ কানে আসছে।
সৌরভ এমনভাবে কথা বললো তাতে মনে হলো ও ফিসফিস করে বলছে।
– হুশশ শারলিন কথা বলে না। কথা বললে কুকুর কামড়ে দিবে। তারপর ৭ টা ইনজেকশন দিবে।
কী বলবো আমি ওকে ?
ও আবার বললো
– কুকুর টা চলে যাচ্ছে বুঝছো? এইতো এইতো যাচ্ছে…
– তুমি এখনো বাসায় যাও নি?
– নাহ আসছিলাম তোমার কাছে তুমি তো খেদিয়ে দিলে!
আল্লাহ আমি ওকে খেদিয়েছি নাকি ও নিজেই বের হয়েছে।
– বাসায় যেতে কতক্ষণ লাগবে?
– সারারাত লাগবে।
– কেনো তোমার বাসা কি আমাজানে?
– নাহ, আমি বাসায় যেতেই চাই না এখন।
– ব্রেকাপ এর পর কী হলো?
– প্রথম প্রেমে ছ্যাকা খেয়ে আমি ব্যাকা হয়ে গিয়েছিলাম।
– তারপর?
– তোমার ছবি দেখে ভালো লাগলো। তারপর ভাবলাম একটু মজা করি।
– তুমি আমাকে ভালবাসো না মজা করেছো আমার সাথে?
– নাহ রে পাগলী। আসলে বিশ্বাস করার ক্ষমতা ছিলো না। ভালোই কাটছিলো তুমি সুইসাইড করে বসলা সব ফিনিশ।
– ফিনিশ না শুরু।
– না তুমি বুঝবা না এটাই ফিনিশ।
– তাহলে বুঝাও।
– শুনো কালো অন্ধকার রাতে আমি একা রাস্তায়। খুব মজার ব্যাপার।
– তুমি বাসায় যাও তো।
– বাসায় তুমি নাই কী করতে যাবো?
– এতদিন বাসায় কেনো যেতে?
– ওহ শারলিন তুমি তো অনেক স্মার্ট!
– ফুপু আমার ছবি কীভাবে পেয়েছিলো?
– শুনোনা শারলিন। যখন সত্যি ভালোবেসে কষ্ট পেলাম। জানো ও আমার জীবন টাকে পুরো নষ্ট করে দিয়েছিলো। তখন মনের ভেতর আগুন জ্বলছিলো। তোমার ছবি যখন পেলাম তখন তুমি ক্লাস ৭ বা ৮ রাইট?
– হ্যা। ক্লাস ৭ এর মাঝামাঝি তে।
– তোমার সেই পিচ্চি পিচ্চি চেহারাটা আমাকে পাগল করেছিলো কিন্তু আমি চাচ্ছিলাম আমাকে যেমন ঠকিয়েছে আমিও একজনকে ঠকাবো। আমাকে নিয়ে ও যেমন খেলেছে আমিও কারো সাথে খেলবো।
কথাগুলো আমাকে খুব কষ্ট দিচ্ছিলো। ও এইজন্যই আমাকে এই অবস্থায় বলতে চায়নি। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে ওকে জিজ্ঞেস করলাম
– তুমি তো সামনাসামনি এসেই আমার সাথে সম্পর্ক চালিয়ে যেতে পারতে। স্বপ্নের ব্যাপার টা কেনো করলে? স্বপ্ন বাদে আসলে তুমি তো আমাকে বেডেও নিয়ে যেতে পারতে।
– শারলিন আমি সেটা জীবনেও করতে পারবো না। আজকে পারলেই আমি পারতাম। তুমি আমাকে যে পরিমাণ বিশ্বাস করো। আমি অবশ্যই এর ফায়দা নিতে পারতাম।
– কেনো নিলে না?
– তোমার চোখে আমার জন্য যে ভালবাসা, বিশ্বাস দেখেছি আমি চাই না ভাঙতে । আমি এই প্রথম মা ছাড়া অন্য কারো চোখে এতো ভালবাসা আর বিশ্বাস দেখেছি।
– তুমি তো আমার সাথে মজা করেছো তাহলে….
– হ্যা করেছিলাম কিন্তু……
– কিন্তু কী?
– পরে বলবো!
এই কথা এখন আর বের করা যাবেনা।
– আচ্ছা তুমি স্বপ্নের ব্যাখ্যা টা দিবে?
– কীরকম ব্যাখ্যা?
– আমার ছবি দেখার পর তুমি স্বপ্নে কীভাবে এসেছিলে?
– আরে ওটা একটু কঠিন….
– বলোই না।
– ব….
আর শুনতে পারলাম না। ফোন কেটে গেলো । য ধুত্তুরি ফোন কেটে যাওয়ার সময় আর পেলো না।
এখন ওর আবার ফোন করার অপেক্ষায় থাকা ছাড়া উপায় নাই।
গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর গুলোই পেলাম না।
একজন মানুষ দিনের পর দিন আমার সাথে অন্যের কর্মের প্রতিশোধ তুলেছে। আর আমি সেটাকে ভালবাসা মনে করে বসে আছি।
কেউ খেলা করেছে আর আমি নিজেকে শুধুই কষ্ট দিয়েছি।
আমি এতো বড় ভুল করেছি তার প্রায়শ্চিত্ত কীভাবে করতে হবে আমার জানা নেই।

চলবে……!

#Maria_kabir

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here