হারাতে_চাই_না_তোমায় #পর্ব-১৯,২০

0
858

#হারাতে_চাই_না_তোমায়
#পর্ব-১৯,২০
#লেখিকাঃ_উম্মে_বুশরা
১৯
বছরের মাঝামাঝি সময়।সময়টা এখনজুন মাস।সময়ের সাথে সাথে বদলে গেছে অনেক কিছু।আরুর এইস.এস.সি পরীক্ষা শেষ।আরু এডমিশনের জন্য কোন কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়নি।মারিয়া আর তন্নী ভর্তি হয়েছে।কিন্তু আরু হয় নি আর কেনো হয়নি তা তো মনে হয় অবশ্যই বুঝতে পেরেছেন?
এই কয়েক দিনে বদলে গেছে অনেক কিছু।অনিম পারেনি নিজের প্রিয়সি কে নিজের করে একেবারে আনতে।অনিম ভেবেছিলো তন্নিদের পরীক্ষা শেষ হলে তন্নি দের বাসায় ওর বাবা মাকে পাঠাবে।কিন্তু মাঝে দিয়ে আরু অন্য দেশে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে সব ওলট পালট করে দিল।কারণ অনিম চায়না নিজের বোনের অনুপুস্থিতিতে ওর বিয়ে হোক।আর অনিম এটাও জানে তন্নিও আরুর অনুপস্থিতিতে বিয়ে করবে।এটা যে কোনো জায়গায়ই হোক না কেনো।তাই অনিম আবারও অপেক্ষায় বসে দিন কাটাতে লাগলো।
এই কয়েকদিনে আরুর সাথে আয়ানের কোন দেখা হয়নি।অবশ্য আরু ইচ্ছে করেই আয়ানের সামনে যাতে না পড়তে হয় তাই ও বাসা থেকে একেবারে কম বের হতো।আরু উপরে দিয়ে যতই শক্ত থাকুক কিন্তু ভেতরে ভেতরে গুমড়ে মরছে।কিন্তু নিজের আত্মসম্মানে আর আঘাত হানতে দেয়নি।কারণ আরু ভাবে আয়ানের সামনে গেলে আয়ান ওকে আবারও অপমান করবে।আরু ভাবে আয়ানের মনে ওর জন্য কোনো ভালোবাসা নেই তাহলে ও কেনো বারবার বেহায়ার মতো ওর কাছে যাবে?তাই ও ইচ্ছে করে নিজের রাগ,জেদ ও আত্মসম্মান বজায় রেখে আয়ানের সামনে যায়নি আর যাতে কোন দিন না যেতে পারে ও এখন সব সময় করে।
এদিকে আয়ানের দিন ভালোই কাটে আরুকে ছাড়া কিন্তু রাতের একাকিত্ব যখন ওকে গ্রস করে তখন আরুর কথা খুব মনে পরে ইচ্ছে করে ছুটে গিয়ে আরুকে জাড়িয়ে ধরতে।কিন্তু আরুর দেওয়া আঘাত মনে করতেই চোখ মুখ শক্ত হয়ে যায় রাগে।আয়ান চাইলে পারতো আরুর লাইফ হেল করে দিতে কিন্তু আয়ান করে নি।আয়ান ভাবে,আরু আমাকে না ভালোবাসলেও আমিতো ওকে ভালোবেসি।তহলে কী করে ওর ক্ষতি করবে।

দুজন দুপাশে নিজেদের মনের মতো কথা সাজিয়ে দূরে সরে যাচ্ছে।ওরা কী কখনো নিজেদের সব ভুল ভাবনা,ইগো,রাগ সাইডে রেখে এক হবে সেটাই এখন দেখার বিষয়।

এয়ারপোর্টে বসে আছে আরু।হুম আরু আজ চলে যাচ্ছে।এই দেশ ছেড়ে।সদূর আমেরিকায়।ওখানে ওর মামার কাছে চলে যাচ্ছে।পরিবার,বন্ধ,নিজের অবেগ-অনূভুতি সব পিছনে ফেলে চলে যাচ্ছে।এই অনূভুতি যেনো ওকে আর তাড়া না করে তাই স্বার্থপরের মতো নিজের আপন মানুষ গুলো ছেড়ে চলে যেতে হচ্ছে।শুধু মাএ একটা মানুষের জন্য।আরু এখানে থাকলে পারবেনা নিজেকে মানিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে।এতো কিছুর পরেও আরুর চায় আয়ান যেনো ভালো থাকে।
তবে আরুর যাওয়া নিয়ে অনেক খাটনি খটতে হয়েছে।অনেক কষ্টের বিনিময়ে ওর পরিবারের সবাইকে বুঝিয়ে,মানিয়ে আসতে পেরেছে।আরুর বাবা-মা ভাই কিছুতেই আরুর এভাবে যাওয়া মেনে নিতে পারেনি।
আরু এখন বসে আছে ওয়েটিং রুমে।কিছুক্ষনের মধ্যে ওর নাম ডাকা হবে।আরু বসে থেকে ভাবছে এই কয়েকদিনের কথা।

ফ্লাশব্যাক,
যেদিন থেকে আরু বলেছে ও আমেরিকা যেতে চায়।আর বাকী পড়াশোনা ওখানে শেষ করতে চায়।ওর বাবা বলেছিলো দ-তিন দিন পর জানাবে কিন্তু ওর বাবা কিছু জানায় নি।আরু ভাবে জানাবে জানবে এই আশায় আরু ওর বাবকে কিছু বলেনি।আরু জানে এই বিষয়টা ওর বাবা মেনে নিতে পারে নি।খুব কষ্ট পেয়েছে।আরুরও কষ্ট হচ্ছে কিন্তু ওর কিছু করার নেই।বসায় বা তন্নি আর মারিয়াও ওকে এ নিয়ে কিছু বলে নি।কারণ আরু বলেছিলো,’আমি আমার ডিসিশন জানিয়ে দিয়েছি’।এই কথার পর আর কেউ কিছু বলে নি।কিন্তু এর মাঝে অনিম অনেক বার জানতে চেয়েছে হটাৎ কেন এই সিদ্ধান্ত নিলো।আরু তখন কিছু বলে নি শুধু চুপ করে ছিলো।আসলে ওর বলার কিছু নেই।অনিমও এটা মানতে কষ্ট হচ্ছে ওর আদরের বোন দূরে চলে যাবে।একেবারে না হলেও কিছু সময়ের জন্য তো।যে অনিম সামান্য ব্যাথা পেলে মনে হয় অনিম নিজে ব্যাথা পেয়েছে।ও যেদিন বাসায় থাকে ওইদিন আরু কলেজ থেকে ফিরতে দেরি হলে ও দিক বেদিক হারিয়া রাস্তায় বেড়িয়ে যায় সেই অনিম ওর আদরের বোনকে ছাড়া কিভাবে এতোগুলো দিন থাকবে।এটা মানতেই ওর কষ্ট হচ্ছে।অনিম ওদের ব্যবসা তে জয়েন হবার পর থেকে আরুর প্রতি তেমন একটা খেয়াল রাখতে পারেনি।যদি খেয়াল রাখতো তাহলে হয়তো ও বুজতে পারতো কোন আরু এমন সিদ্ধান্ত নিলো।আরু অনিমের,ওর বাবা-মা’র কষ্ট দেখে নিজের কষ্ট,কান্না দমিয়ে রেখে শক্ত হয়ে অনিমের সাথে কথা বলেছে।অনিম অনেক বার জিজ্ঞেস করার পর যখন আরু কিছু বলতে পারেনি তখন আরু কতা ঘুরানোর জন্য বলেছিলো,

অনিমঃ আমাদের ছেড়ে চলে যাবি? থাকতে পারবি আমাদের ছাড়া?
আরুঃ (কান্না আটকিয়ে)আচ্ছা ভাইয়া আমি কী একবারে চলে যাচ্ছি?তোরা এমন ভাবে মুক করে রেখেছিস যেন আমি একবারে চলে যাচ্ছি।আরে যাবো তো কয়েক বছরের জন্য।সময় কখন চলে যাবে বুঝতেই পারবি না।
অনিমঃ কষ্ট হচ্ছে না তোর?আমি জানি না তুই কেনো হটাৎ এমন ডিসিশন নিলি কিন্তু একটা বার ভেবে দেখ তুই থাকতে পারবি তো?
আরুঃ…… আরে ভাইয়া কষ্ট তো হচ্ছেই তোদের রেখে যাতে।কিন্তু এটা আমার একটা স্বপ্ন ভাইয়া।আমি চাই ওখানে স্টাডি কমপ্লিট করে আসতে।
অনিমঃ কিন্তু এমন স্বপ্ন তো আগে কোনোদিন শুনি নি তোর থেকে।
আরুঃ এটা কিছু দিন আগে মাথায় এসেছে।..(কথা ঘুরিয়ে)আর তাছাড়া আমি গেলে তোরও ভালো আমরা ও ভলো।
অনিমঃ 🤨মানে?
আরুঃ আরে আমি গেলে তোর আমার উপর এসব অত্যাচার গুলো সয্য করতে হবে না।উফ!আমি বাঁচবো এগুলো থেকে।আমার জীবনটা তুই পুরো ত্যানা ত্যানা করে দিলি।
অনিমঃ কী বললি তুই 😤
আরুঃ হে হে…আরে চেতস কেন।শুন তোরও ভালো।আমি চলে গেলে বাবাও তোকে বেশি বেশি আদর করবে।বাসায় আম্মুর হাতের রান্না গুলো তুই একা সাবার করতে পারবি।আম্মুরও সব আদর তুই পাবি।আমি তখন থাকবো না কি না 🙁।সব তোর ভাগেই যাবে।
অনিমঃ তোর কী মনে হয় এমনি বাবা আমাকে আদর করে না যে তুই গেলেই বেশি করবে।আর কি যেনো বললি?আম্মুর হাতের রান্না সব আমি খাবো?আমাকে দেখে কি তোর রাক্ষস মনে হয়😤
আরুঃ হবে হয়তো তুই রাক্ষস ই😁
অনিমঃ কী বললি তুই?দাঁড়া…

বলেই আরুকে দৌড়ানি দিলো।আরুও ভো করে পালিয়ে গেলো।পুরো বাড়ি ওর দৌড়াচ্ছে।কিছুক্ষন পর আরু কাহিল হয়ে অনিম কে বললো,
আরুঃ ভাইয়া আর পারছি না এবার থাম।
অনিমঃ কেনো আমাকে রাক্ষস বলার সময় মনে ছিলো না।
আরুঃ আচ্ছা তোকে আর বলবো না ‘রাক্ষস’😅
অনিমঃ একবার তোকে হাতে পাই।তখন তুই শেষ আমার হাতে।

আরু আর দৌড়াতে না পেরে যখন আস্তে দৌড়াচ্ছিলো তখন অনিম ধরে ফেলে।অনিম কান বলে,
অনিমঃ এবার কোথায় পালাবি।
আরুঃ আহহ।ভাইয়া ছাড় লাগছে।আম্মু ছাড়তে বলো তোমার ছেলেকে।
অনিমঃ আমাকে বলার সময় মনে ছিলো না লাগার কথা।
আদিরা আহমেদঃ আহ!বাবু কী করছিস ছাড় ওকে।
আরুঃ ভাইয়া ছেড়ে দে আর বলবো না।

অনিম ছেড়ে দিলো আরুকে।আরু মুখে ভেঙ্গচি কেটে চলে যেতে বলে,
আরুঃ তোর বউর কাছে সব বিচার দিবো তখন তোর বউ যেনো তোর মাথর চুল সব ছিঁড়ে ফেলে।আমি বদদোয়া দিলাম।
অনিমঃ দাড়া তুই।

আরু দৌড়।এভাবেই দু দিন পর আরুরা বাবা ওর রুমে আসে,এসে আরুকে বলে,
আশরাফ আহমেদঃ কী করছে আমার মা?
আরুঃ এইতো বাবা কিছু না বসো তুমি।
কিছু ক্ষন কতা বলে ওর বাবা বললেন,
আশরাফ আহমেদঃ মা তোমার এভাবে চলে যাওয়াটা তোমার মা আর আমি মেনে নিতে পারছি না।

আরু ওর বাবার কোলে মাথা রেখে বলে,
আরুঃ আমি জানি বাবা।আমারও কষ্ট হচ্ছে।কিন্তু বাবা আমি যেতে চাই।প্লিজ তোমারা মন খারাপ করো না।তোমার এমন থাকলে আমার গিয়েও শান্তি হবে না।
আশরাফ আহমেদঃ মারে বাবা মা’য়ের কাছে তার সন্তানরা যে কী তা শুধু বাবা মা জানে।
আরুঃ….
আশরাফ আহমেদঃ তুমি তাহলে যাবে ঠিক করেছো?তাহলে তোর আর কিছু বলার নেই।
আরুঃ বাবা তোমারাও চলো না।সবাই এক সাথে যাই।
আশরাফ আহমেদঃ শোনো বোকা মেয়ের কথা।তা কী হয়?আমার সব এখানে ওখানে চলে গেলে এদিকটা সামলাবে কে।
আরুঃ…মন খারাপ করো বাবা।কয়েকটা বছর তো দেখবে চোখের পলকে চলে গেছে।আর আমি তো আবার তোমাদের কাছে চলেই আসবো তাই না?
আশরাফ আহমেদঃ…………তোমার মা তো টেনশনে আছে
আরুঃ আমি তো অন্য কোথাও যাচ্ছি না আমি মামার কাছেই যাচ্ছি।তহলে এতো টেনশনের কী আছে।জানি তোমাদের টেনশনে হবেই কিন্তু বিশ্বাস করো আমি ওখানে ভালো থাকবো আর তাড়াতাড়ি চলে আসবো।
এবার হাসো।
আশরাফ আহমেদঃ…..😊।বেশ তুমি যখন যাবে তাহলে আমি তেমার সব ব্যবস্তা করছি।

আরু আর ওর বাবা আরো কিছুক্ষন কথা বলক বলে ওর বাবা চলে গেলো।আরু ওর বাবা যাওয়ার পর কয়েক ফোটা চোখের পানি ফেললো।

১৫ দিন পর
আরুর যাওয়ার সব কাগজ রেডি।আর ৩ দিন পর ফ্লাইট।আজ তন্নি আর মারিয়াকে আসতে বলেছে।ওরা বিকালে এসেছে।এখন আরুর রুমে বসে আছে।তন্নি বললো,
তন্নিঃ তাহলে তুই চলে যাচ্ছিস?
আরুঃ হুম।দেখতে পাচ্ছিস তো।
তন্নিঃ একজনের উপর রাগ করে কেনো নিজের আপন মানুষদের কেন কষ্ট দিচ্ছিস?
আরুঃ আমি কারো উপর রেগে নেই।এটা আমার স্বপ্ন ছিলো।আর বাবা মাকে ছেড়ে যেতে আমারও কষ্ট হচ্ছে কিন্তু কিছু করার নেই।আর কয়েক বছর এমনিই চলে যাবে।
মারিয়াঃ আমাদের কথা তোর মনে পরবে না?আর ওখানে গিয়ে যদি আমাদের তুই ভুলে যাস?🥺
আরুঃ সব সময় তোদের কথা আমার মনে পরবে🥺।আমি আমি তোদের ভুলবো কেনো?
মারিয়াঃ বিদেশে গিয়ে সাদা চামড়ার বান্ধবী পেলে আমাদের ভুলে যাবি।
আরুঃ তোরা তো আমার জানে জিগার।আমি তোদের ভুলি কী করে?
তন্নিঃ এতোই যখন জানে-জিগার মানিস তাহলে আমাদের কথা মেনে নিয়ে যাওয়া ক্যানসেল করে দে।
আরুঃ এটা হয় না তনু।এটাই আমার সিদ্ধান্ত।এর বাইরে আর কথা নয়।(শক্ত কন্ঠে বলে উঠে)

আরুকে এভাবে বলেতে দেখে তন্নি আর মারিয়া কিছু বলে না।ওদের চুপ থাকতে দেখে আরু আবার বললো,
আরুঃ তোদের আমি যে কারনে ডেকেছি।শুন।
মারিয়াঃ কী?
আরুঃ আমার যাওয়ার কথা যেনো কেউ জানতে না পারে।শুধু তোরা আর বাসার মানুষ।আর একটা মানুষও না।
তন্নিঃ কিন্তু কেনো?
আরুঃ আমি বলেছি তাই।(শক্ত গলায়)…..কথা দে?

মারিয়া আর তন্নি কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো,
মারিয়া আর তন্নিঃ আচ্ছা বেশ।তুই যা চাস।

ওরা আরো কিছুক্ষন থেকে চলে যায়।আরুও গোছগাছ শুরু করে দেয়।

আরুরা এয়ারপোর্টে আসলে ওর মা অনেক কান্না করে।আরুর চোখেও পানি কিন্তু আরু নিজেকে শক্ত রেখে ওর মাকে স্বান্তনা দিয়ে চলে আসে।

আরিশা আহমেদ
নাম এনাউন্সমেন্ট হতেই ও ভাবনা থেকে বেড়িয়ে আসে।ও উঠে বেরিয়ে পরে।এখন পারি জমাবে অজানার উদ্দেশ্যে।যেখানে ওর স্মৃতি গুলো মেন করিয়ে দিতে কেউ থাকবে না।বারবার কারো কাছে ফিরে যেতে হবে না।বারবার অপমানিত হতে হবে না।

প্লেন যখন আকাশে তখন আরু ডুব দেয় অতীতে।

চলেবে…..

#হারাতে_চাই_না_তোমায়
#পর্ব-২০
#লেখিকাঃ_উম্মে_বুশরা

নাম আরিশা আহমেদ।ক্লাস ৮ এর ছাএী। চঞ্চল,দুষ্টুমি,বন্ধুদের সাথে আড্ডা,মা বাবা ভাই এর আদর ভালোবাসা নিয়ে বড় হয়ে উঠা,পড়াশোনা নিয়ে দিন ভালোই কাটে।আরিশার ছোট বেলার বান্ধবী তন্নি জামান।ছোট থেকে ওর সাথে বড় হয়ে উঠা।একদিন আরিশা আর তন্নি স্কুলে এসে ক্লাসে চলে আসে।ক্লাসে এসে ওরা কথা বলছে তখন দেখে পিছনে একটা মেয়ে একা বসে আছে।আরিশা আর তন্নি মেয়েটাকে দেখে নতুন মনে হচ্ছে।কারন এর আগে কখনো এই মেয়েকে দেখে নি।আরিশা আর তন্নি ওই মেয়েটার কছে গেলো।গিয়ে জানতে পারলো মেয়েটা নতুন এসেছে কাউকে চেনে না।তাই একা একা বসে আছে।আরিশারা ওর নাম জিজ্ঞেস করতেই মেয়েটা বলল ওর নাম মারিয়া আক্তার।আরিশারা পরিচয় হতে হতে এক সময় বন্ধু হয়ে গেলো।তখন থেকে তাদের এক সাথে চলাফেরা করা।এভাবেই দিন কাটছিলো।হটাৎ একদিন আরু সাথে হয় এক কাহিনী।যা আরু কখনো ভুলবে না।

সময়টা ছিলো এপ্রিল মাস।আরু আর তন্নি স্কুলে এসে অপেক্ষা করছে মারিয়ার জন্য।অনেকটা সময় অপেক্ষা করার পর মারিয়া এলো।মারিয়া আসতেই আরু বর তন্নি রেগে তাকালো।মারিয়া এক কানে হাত দিয়ে সরি বললো।আরুরাও আর কিছু বললো না।তারপর আরিশা,তন্নি আর মারিয়া এক সাথে ক্লাসের দিকে হাঁটা দিলো।আরুরা দুষ্টুমি করছে আর হাঁটছে।এক সময় আরু উল্টো দিক হয়ে সামনের দিকে হাঁটছে।আর তন্নি আর মারিয়ার সাথে হেসে হেসে কথা বলছে।তন্নি ওকে রাস্তা বলে দিচ্ছে আর পিছনে কেউ আছে কি না তা বলছে।আরু এভাবে হাঁটতে হাঁটতে একটা ক্লাসের সামনপ এসে ওর পিঠের সাথে কেউ ধাক্কা খায়।আরু সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে।দেখে আরুর মনে হচ্ছে এই স্কুলেরই কিন্তু স্কুলের ড্রেস নেই।আরু রেগে বললো,
আরুুঃ চোখে দেখে হাঁটতে পারেন না?😤
ছেলেটাঃ তুমি সামনের দিকে তাকিয়ে হাঁটতে পারো না?🤨
আরুঃ আপনি আমাকে ধাক্কা দিয়ে এখন আবার আমাকে কথা শুনচ্ছেন।😤
ছেলেটাঃ আমি তোমাকে কখন ধাক্কা দিলাম😦?তুমিই তো উল্টো দিকে হয়ে হাটছো পিছনে কে আছে তা না দেখে।
আরুঃ আব…আমি না হয় উল্টো দিক হয়ে হাঁটছিলাম কিন্তু আপনি তো সামনে তাকিয়ে হাটছিলেন।তাহলে দেখে শুনে কেনো ধাক্কা মারলেন?😤
ছেলেটাঃ হোয়াট?তোমার কি মনে হয় আমি তোমাকে ইচ্ছে করে ধাক্কা দিয়েছি?তাও তোমার মতো পিচ্চি একটা মেয়েকে।
আরুঃ হু😏নিজের দোষ নিজে কেউ কখনো স্বীকার করে না।
ছেলেটাঃ আচ্ছা?আচ্ছা মানলাম আমি ইচ্ছে করে এমন করেছি।কিন্তু তুমি কেনো উল্টো হয়ে হাটছো🤨।
আরুঃ আমার ইচ্ছা তাই😒
ছেলেটাঃ দেখে তো প্রতিবন্ধী মনে হয় না।তাহলে এভাবে হাটার মানে কী?(আরুকে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত দেখে)
আরুঃ কী বললেন আপনি 😡আপ…..

আর বলতে পারলো না।তখনই ক্লাসের বেল বেজে গেলো।আরু কিছু বলবে তন্নি ওকে টেনে নিয়ে চলে গেলে।আরু যাওয়ার সময় ছেলেটার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে গেলো।আরুরা চলে যাচ্ছে আর ছেলেটা ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।হটাৎ ক্লাস থেকে অন্য একটা ছেলে বেড়িয়ে এসে এই ছেলেটাকে বললো,
ছেলেটাঃ আয়ান তুই এখানে কী করছিস?কখন থেকে তোকে খুজছি।আর এভাবে কী তাকিয়ে আছিস?
আয়ানঃ আব..না কিছু না।বল কি জন্য খুজছিলি?
ছেলেটাঃ কী জন্য মানে?স্যার তোকে ডাকছে।তখন তো কী কারণে হটাৎ এভাবে বেড়িয়ে গেলি আর আসার নাম নেই।তোকে আসতে না দেখে স্যার আমাকে বললে,
‘রাফসান দেখে এসো আয়ান কোথায়’।এসে দেখি তুই এখানে একা দাড়িয়ে আছিস।
আয়ানঃ ভাগ্যিস এসেছিলাম নাহলে হয়তো এই ঝগড়ুটে পিচ্চিকে দেখতে পেতাম না।(বিরবির করে)
রাপসানঃ কী বিরবির করছিস?
আয়ানঃ আব…না কিছু না চল।

আয়ান আর রাফসান চলে যায় আবার স্যারের কাছে।

আসলে তখন আয়ানও ক্লাস থেকে বের হয়েছিলো বর আরুও উল্টো দিক ছিলো।আরুর এমন হটাৎ আক্রমন ও বুঝতে পারেনি আর তন্নিও তখন ওর হাতের বইটা ব্যাগে রাখছিলো তাই আরুকে বলে পারেনি।

এভাবেই দিন কাটছিলো।কেউ কারো সাথে আর দেখা হয়নি।ওইদিনের ওই ঘটনা দুজনের কারো মনে নাই।এইভাবেই প্রায় ৫ মাস কেটে গেলো।

৫ মাস পর
আরুরা টিফিন টাইমে ক্লাসের বাহিরে দাড়িয়ে দুষ্টামি করছিলো।হটাৎ মারিয়া কী একটা বলে যেনো আরুকে রাগিয়ে দিয়েছিলো।আরু তখন বোতল থেকে পানি খাচ্ছিলো।মারিয়ার কথা শুনে আরু রেগে মারিয়াকে পানি নিয়ে তাড়া করছিলো।ওরা দৌড়েতে এক জায়গায় এসে পরে সেখানে অনেক সিনিয়ররাও ছিলো কিন্তু ওরা একজন আরেকজনপর পিছনে দৌড়াতে ব্যস্ত।হটাৎ মারিয়া একজায়গায় থেমে যায়।ও কাহিল হয়ে গেছে।মারিয়াকে থামতে দেখে আরু মারিয়াকে পানি ছুড়ে মারলো।কিন্তু ভাগ্য বসতো পানি মারিয়ার গায়ে না পরে পরলো একটা ছেলের গায়ে।ছেলেটা উল্টো হয়ে ছিলো।আরুর পানি মারাতে পুরো পিঠ ভিজপ গেছে।(আসলে মারিয়া আরুকে পানি মারতে দেখে ও সরে যায় তাই মারিয়ার গায়ে পানি লাগেনি)

আয়ান পিঠে ভিজা অনুভব হতেই পিছনে হাত দিয়ে দেখে ওর পিঠ ভিজা।তারপর সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে সেইদিনের ঝগড়ুটে মেয়েটা হাতে পানির বোতল।আয়ানের আর বুঝতে বাকী নেই এই মেয়েটা ওকে পানি মেরেছে।আয়ান রেগে আরুর দিকে এগিয়ে আসছে।
আরু ভুল জায়গায় পানি ছুড়ে মেড়ে বেকুব হয়ে গেলো।এবং দেখলো সেই ছেলেটা।ছেলেটাকে রাগতে দেখে আরু ভয়ে মাথা নিচু করে রাখে।
আয়ান আরুর সামনে এসে রেগে বলে,
আয়ানঃ ইউ😡…..কানা নাকী চোখে দেখো না?পুরো ভিজিয়ে দিলে😤
আরুঃ…….( নিচের দিকে তাকিয়ে আছে)
আয়ানঃ চুপ করে আছো কেনো?ওইদিন মনে হয়েছিলো প্রতিবন্ধী,এখন মনে হচ্ছে কানা ও।আচ্ছা তুমি ইচ্ছে করে এমন করেছো তাই না।
আরুঃ মাথা নাড়ায়।আর্থাৎ ‘না’।
আয়ানঃ কথা বলছো না কেনো?বোবা ধরলো নাকী?
তাকাও আমার দিকে।

আরু ভয় চোখে আয়ানের দিকে তাকালো।ভয়ে আরুর চোখ ভিজে আসছিলো।এই ভয়ে+ছলছল চোখ দেখে আয়ানের যেন চোখ আটকিয়ে গেল।ওর রাগ যেন পানি হয়ে গেল।আয়ান যেন এইচোখের মায়ায় পড়ে গেল।মারিয়া দূরে দাড়িয়ে দেখছিলো হটাৎ আরুর দিকে চোক যেতেই মারিয়া তাড়াতাড়ি আরুর কাছে আসলো।অবস্থা বুঝে মারিয়া আয়ানকে বললো,
মারিয়াঃ ভাইয়া আসলে সরি।ও বুঝতে পারেনি।ও আমাকে পানি মারতে চেয়েছিলো কিন্তু আমি সরে যাওয়াতে আপনার গায়ে পানি পরলো।ওর হয়ে আমি সরি বলছি।

এবার ওদের কাছে রাপসান এলো।এসে আনানকে বললো,
রাফসানঃ আরে বাদ দে না।না বুঝে ভুল করে ফেলেছে।ছাড়।

আয়ান এখনো আরুর দিকে তাকিয়ে আছে।কিছুক্ষণ পর আয়ান আরুর থেকেই চোখ সরিয়ে হেসে বলল,
আয়ানঃ আচ্ছা যাও তবে সামনের থেকে দেখেশুনে কাজ করবে। মনে থাকবে?
আরু মাথা নারিয়ে হ্যা বললে আয়ান বলে,
আয়ানঃ এবার যাও।

আয়ান যাও বলতেই আরু আর মারিয়া চলে গেলো।আয়ান ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাসছে।আয়ানের হাসি দেখে রাফসান (🤨🤨)এমন হয়ে আছে।রাপসানকে এভাবে তাকাতে দেখে আয়ান বললো,
আয়ানঃ এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো?
রাফসানঃ কাহিনী কি🤨
আয়ানঃ কিসের আবার কাহিনী?
রাফসানঃ সেটা তো তুই ভালো জানিস।
আয়ানঃ তোর মাথা চল।

আয়ান আর রাফসান চলে গেলো।
এদিকে মারিয়া এসে তন্নিকে সব বললে ওরা হাসতে হাসতে শেষ।ওদের হাসি দেখে আরু রেগে অন্য দিকে চলে গেলো।আরুকে রেগে চলে যেতে দেখে মারিয়া আর তন্নি আরুর কাছে গেলো ওর রাগ ভাঙাতে।

আরুরা এবার ক্লাস নাইনে।আরু নাইনে হলেও ওদের সাথে সিনিয়রদের ভালো সম্পর্ক।একদিন সিনিয়র মেয়েরা(আয়ানদের ব্যাচের) বসে আড্ডা দিচ্ছে।তখন আরিশা,তন্নি আর মারিয়া ওখানে গিয়ে বসলো।ওরা বসে সবার সাথে কথা বলছে আর দুষ্টামি করছে কথার বলার এক পর্যায়ে আরু বলে,
আরুঃ আমার একটা প্রেম করতে মন চায়। কেউ আমারে একটা বফ খুজে দাও।
বৃষ্টিঃ এতো প্রেম করতে মন চায় কেন?
আরুঃ আরে আপু চারিদিকে সবাই প্রেম করে।ওদের দেখে আমারও করতে মন চায়।আর তাছাড়া যেদিকে তাকাই সেদিকেই জোড়ায় জোড়ায় দেখি।ওদের দেখে আমার হিংসা হয়।
মারিয়াঃ সামনের ঝালমুড়ি মামার পাশে গিয়ে দাঁড়া।তখন তুইও জোড়া হয়ে যাবি।😂

মারিয়ার কথা শুনক সবাই হেসে দিলো।আরু মারিয়ার দিকে রেগে তাকিয়ে বললো,
আরুঃ মারুর বাচ্চা।তোকে তো আমি….
বৃষ্টিঃ আচ্ছা আচ্ছা থামো।তা আরু তোমার কেমন ছেলে পছন্দ?
আরুঃ হ্যান্ডসাম,গুড লুকিং,কিউট একটা ছেলে।যে আমাকে অনেক ভালোবাসবে,আমাকে কোনো কষ্ট দিবে না।সব সময় আমাকে আগলে রাখবে।আর অন্য কোনো মেয়ের দিকে ভুলেও তাকানো যাবে না।
মারিয়াঃ দাড়া গুগুলের সার্স দিয়ে দেখি এমন ছেলে কোথায় পাওয়া যায়।😅
আরুঃ 😡।… গুগুল লাগবে না।আমার মন বলছে এমন একটা ছেলে ঠিকিই আসবে আমার জীবনে।😇😊
বৃষ্টিঃ হুম বুঝলাম।……..আচ্ছা ধরো তোমাকে যদি এখন বলি কেউ তোমাকে পছন্দ করে তখন কী বলবে তুমি?(মজা করে বললো)
আরুঃ সত্যি কেউ আমাকে পছন্দ করে?ছেলেটা কী সুন্দর,কিউট?
বৃষ্টিঃ হুম অনেক।
আরুঃ তহলে আমি রাজি তাকে বলে দিও।😁
বৃষ্টিঃ সেকী না দেখে রাজি হয়ে গেলে তাকে একবার দেখবে না?
আরুঃ না😇
বৃষ্টিঃ বুঝলাম পুরো মাথায় এখন প্রেমের বসবাস।
সবাইঃ 😂🤣😂🤣

এভাবেই একদিন আয়ানরা আড্ডা দিচ্ছিলো তখন বৃষ্টি আয়ানকে বললো,
বৃষ্টিঃ কী কোনো মেয়েকে পছন্দ হলো এখন অবধি?
আয়ানঃ আর বলিস না।পোরা কপাল।কোনো মেয়ে এই কপালে নেই।সারাজীবন মনে সিঙ্গেলই থাকতে হবে।
সবাইঃ 🤣🤣
বৃষ্টিঃ আচ্ছা যদি তোকে বলি কেউ তোকে পছন্দ করে তখন কী বলবি?
আয়ানঃ মেয়ে ভালো হলে আমি রাজি।
বৃষ্টিঃ মেয়েটাকে একবার দেখবি না?মেয়েটা কেমন?
আয়ানঃ না কী আর দেখবো।
বৃষ্টিঃ আমার কাছে একটা ভালো মেয়ের সন্ধান আছে।প্রেম করবি?
আয়ানঃ হুম করবো।(হটাৎ আয়ানের চোখে আরুর মুখটা ভেসে উঠলো)
বৃষ্টিঃ সিউর?
আয়ানঃ হুম (আনমনে)

আয়ানকে হুম বলতে দেখে সবাই অবাক।আয়ানের যখন হুস আসে কী বলেছে তখন মানা করতেই বৃষ্টি বলে,
বৃষ্টিঃ কলেজের পিছনে গিয়ে দাঁড়া।আমি ১০ মিনিটে আসছি।
আয়ানঃ বৃষ্টি শুন…আরে বৃষ্টি শুননা।…যাহ!চলপ গেলো।
রাফসানঃ ভাই এবার তোর কপাল খুললোরে।

আয়ান চলে গেলো কলেজের পিছনে।আয়ান যেতে চাইছিলো কিন্তু আবার পরে ভাবলো একবার গিয়ে দেখি কী হয়।
আয়ান দাঁড়িয়ে আছে।কিন্তু বৃষ্টির আসার খবর নেই।হটাৎ পিছনে করো গলার শব্দ হতেই আয়ান পিছনে তাকিয়ে দেখে বৃষ্টির সাথে ওই মেয়েটা আসছে।আয়ান হা করে তাকিয়ে আছে আরুর সামনে।বৃষ্টি আয়ানের সামনে এসে বললে,
বৃষ্টিঃ নে তোরা দুজন দুজনের সামনে।আরু দেখতো,সুন্দর আর কিউট কিনা?আর আয়ান তুই ও দেখ সুন্দর আর ভালে কী না।
বৃষ্টির কথা শুনে আরু একটু লজ্জা পেয়ে মাথা নামিয়ে ফেললো।বৃষ্টি আসতে আসতে ওকে কিছুটা বলেছে।বৃষ্টি দেখলো আয়ান আরুর দিকে তাকিয়ে আছে তাই বৃষ্টি বললো,
বৃষ্টিঃ তোরা কথা বল।আমি আসছি।

বৃষ্টি চলে গেলো।আয়ান আরুর সামনে এগিয়ে বললো,
আয়ানঃ তোমার নাম কী?
আরুঃ আরিশা আহমেদ।(কাঁপাকাপা গলায়)
আয়ানঃ কোন ক্লাস?
আরুঃ নাইন।
আয়ানঃ এই বয়সে প্রেম?বাহ!বেশ এডভান্স তো।
আরুঃ আসলে আপনি ভুল বুখছেন।এটা সম্পূর্ণ দুষ্টুমির বসে বলা কথা।কিন্তু আপু এটা সিরিয়াস নিয়ে হয়তো আপনাকে কিছু বলেছে।(তাড়াতাড়ি করে বলে ফেললো)
আয়ানঃ আরে রিলাক্স।আমি মজা করছি।আমার নাম জানো?
আরু মাথা নাড়ায় ‘না’
আয়ানঃ আমার নাম আয়ান রহমান।
আরুঃ ওহ।

কেউ আর কিছু বললো না।আরুর বেশ আনিজি ফিল হচ্ছে।আরুকে দেখে আয়ান বুঝে গেলো।তাই আয়ান বলে,
আয়ানঃ যাও একন তুমি আবার পরে কথা হবে।
আরু চলে গেলো।আয়ান ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললো।

প্রায় ১ মাস পর
আজ আয়ান আরুকে প্রপোজ করবে।এই ১ মাস আরু যেনো আয়ানের ঘুম কেড়ে নিয়েছে।যেখানে যায় সেখানে আরুর মুখটা ভেসে উঠে।আরু যেনো আয়ানকে শান্তি দিচ্ছে না।আয়ান বুঝপ গেছে আরু ওর মন চুরি করে নিয়েছে।এটা ভেবেই আয়ান এক প্রশান্তির হাসি দিলো।আবার ভেবে বলে,’আমাকে এখনে অশান্ত করে তুমি শান্তি তে থাকবে তা তো হয় না।তোমাকেও আমি অশান্ত করবো।আর তা করতপ আসছি আমি।বি রেডি জান’।
আরু কলেজ থেকে বেড়িয়েছে সাথে তন্নি আর মারিয়াও আছে।ওরা যাওয়ার দিকে পা বাড়াতেই পিছন থেকে রাপসান বলে আরুকে একটু কলেজের পিছনে যেতে।আরু কেনো জানতে চাইলে রাফসান বলে ও জানে না।তাই আরু ভয়,বিষ্ময় নিয়ে কলেজের পিছনে গেলো।গিয়ে দেখে রাফসান দাঁড়িয়ে আছে।আরুকে আসতে দেখে আয়ান একটা হাসি দিয়ে আরুর সামনক যায়।আরু ভ্রুকুচকে চেয়ে আছে আয়ানের দিকে।আয়ান সোজাসুজি বললো,
আয়ানঃ আমি ঘুরিয়ে পেচিয়ে কথা বলা পছন্দ করি না।তাই আমি সোজাসুজি বলছি,তেমার রাগী চোখে তাকানো,কোমড়ে হাত দিয়ে ঝগড়া জরা,ওই কাজল কালো ভয় পাওয়া চোখ,সেই মায়াবী চোখে পানির ঢেউ খেলা,ওই ঘন কালো কেশ।যা দেখে আমি নিজের চোখকে শান্ত রাখতে পারিনি।পারিনি নিজের মনকে শান্ত করতে।অশান্ত করেছো তুমি আমায়।সেই শাস্তি হিসেবে আজ আমি বলছি ‘আই লাভ ইউ’ আরু।আমি ভালোবাসি তোমাকে।(আমি বেশু ঘুচিয়ে এই অংশটা লিখতে পারিনি)
আরু অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।আয়ানও উওর জানার জন্য আরুর দিকে তাকিয়ে আছে।আরু কিছু না বলে বলে উঠে
আরুঃ আমি বাসায় যাবো।
আয়ান হতাস হলো।তারপর অসহায় চোখে বললো,
আয়ানঃ আমার উওর টা?
আরুঃ আমি কী যেতে পারি?
আয়ান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
আয়ানঃ বেশ যাও।কিন্তু আমি আমার উওর চাই।হ্যা হলেও চাই না হলেও চাই।

আরু কিছু না বলে চলে গেলো।
এভাবেই দিন কেটে প্রায় ১ মাস পর আরু রাজি হয়।এই ১ মাসে আয়ান অনেক বার অনেক ভাবে আরুকে প্রপেজ করেছে কিন্তু আরু কিছু বলতো না।অবশেষে আয়ানের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আরু ‘হ্যা’ বললো।

এভাবেই ওদের রিলেশন সামনের দিকে এগাতে লাগলো।আরু যেমন চেয়েছিলে তেমনই পেয়েছে আয়ানকে।এতে আরু খুশি।এর মাঝে আয়ান ভার্সিটি চলে গেলো।আরুও এস.এস.সি পরীক্ষা দিয়ে এখন কলেজ লেভেলে।ওরা আনন্দেই দিন কাটাচ্ছে।প্রায় ২-২.৫ বছর ভালোই কাটছিলো সব।কিন্তু ওদের এই আনন্দ বেশি দিন টিকলো না।

একদিন আয়ান এসেছিলো আরুর সাথে কথা বলতে কলেজের পিছনে।ওরা কথা বলছিলো কিন্তু হটাৎ করে প্রিন্সিপাল স্যার দেখে ফেলে ওদের।আর দেখার সাথে সাথে আয়ানকে নিয়ে যায় ওনার রুমে।আরুকে একটু পরে ডাকবে বলে বাহিরে দাড় করিয়ে রাখে।আয়ান এই কলেজের ছাএ ছিলো বলে সবাই ওকে চেনে।আয়ান যখন ভিতরে কথা বলছে তখন একটা মেয়ে এসে আরুকে বলে,প্রিন্সিপাল স্যার নাকী ওর বাবার কাছে সবটা বলে দিবে যদি ও সত্যিটা বলে।ভিতরে গিয়ে যেনো ও মিথ্যা কথা বলে।আরুর ভয় +ছোট মনে এমন কথা শুনে ও আরো ভয় পেয়ে যায়।আরু তখন ভাবে ভিতরে গিয়ে কী বলবে।তখনই মেয়েটা বলে,আরু তুমি ভিতরে গিয়ে বলবে তুমি আয়ানকে চিনো না।আর আয়ান তোমাকে জোর করে ওখানে নিয়ে গেছে।তাহলে তুমি বেঁচে যাবে।আরুর ছোট মনে এই কথটা গেথে যায়।আয়ান ভিতরে বেশ সাহস জুগিয়ে বলে,’ও আরুকে ভালোবাসে আর ওরা রিলেশনে আছে।ওরা একে অপরকে ভালোবাসে।বিশ্বাস না হলে আরুকে জিজ্ঞেস করতে।’
আয়ানের এমন কথা শুনে স্যার রা আরুকে ভিতরে ডেকে পাঠায়।আরু ভয়ের কারণে মাথা নিচু হয়ে কাদছে।এক সময় আরুকে জিজ্ঞেস করা হলে ও কিছুক্ষন চুপ থেকে বাহিরের মেয়ের শিখিয়ে দেওয়া কথা বলে দেয়।এসব শুনে আয়ানের মাথায় আকাশ ভেঙে পরে।আরুর দিকে এক ভাবে তাকিয়ে আছে।স্যার রা আরুর কথার সত্যতা যাচাই করতে আয়ানকে জিজ্ঞেস করে আরুর কথা সত্যি নাকী মিথ্যা।আয়ান কিছু বলে না।শুধু আরুর দিকে তাকিয়ে আছে।আয়ানকে চুপ থাকতে দেখে স্যাররা ধরে নেয় আরুর কথা সত্যি।আয়ান পূর্ব পরিচিত,ভালো ছাএ বলে ওকে বুঝিয়ে পাটিয়ে দেয়।আরুও মাথা নিচু করে চলে যায়।আয়ানের সামনে আর যায় না।এই ঘটনার পর আয়ানও আরুর সামনে আর আসে না।
প্রায় ২ মাস পর,
আরু এতোদিন ভেবেছিলো স্যার রা ওর বাবাকে কিছু বলবে কিন্তু এতদিন যাওয়ার পর যখন বলে নি তাই আরু এখন নিশ্চিন্ত।কিন্তু এখন আয়ানের সামনে গিয়ে দাঁড়াবে কোন মুখে।তারপরও অনেক সাহস জুগিয়ে আয়ানের কাছক গিয়েছে।গিয়ে বলেছে ও তখন বুঝতে পারেনি ভয়ে এমন কথা বলে দিয়েছে।সরি ও বলেছপ অনেক বার।কিন্তু আয়ানের মন গলে নি।আরুও হাল ছাড়ে নি।পুরো ৪ মাস আয়ানকে সরু বলে মানিয়ে নিয়েছে।
৬ মাস পর।এই ৬ মাস ওদের স্বপ্নের মতো কেটেছে।সব ভুলে নতুন করে শুরু করেছিলো।কিন্তু এই ওদের এই সুখটাও কেউ সয্য করেনি।হটাৎ একদিন আয়ানের কথায় সব এলোমেলো হয়ে যায় ওদের জীবন।
তবে তা কী কারণ তা আরু জানে না।

আরু অতীত থেকে বেরিয়ে আসে।আর কয়েক ঘন্টা পর ও আমেরিকার মাটিতে পা দিবে।অতীত ভাবতে ভাবতে কখন সময় চলে গেলো বুঝতে পারেনি।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here