ছায়া নীল!
১১.
আসলে সত্য অনেক তিতা হয়। যেটা হজম করা খুব কষ্টের। কিন্তু একবার হজম হয়ে গেলে তারপর আর সেই তিতা আর গায়ে লাগে না। ও যদি অন্যের শোধ আমার উপর নিতে পারে তাহলে আমি আমার শোধ কেনো ওর উপর নিতে পারবো না। ও আমাকে তিলে তিলে ধ্বংস করেছে। ওর জন্য আমাকে প্রতিবেশীরা পাগল ভাবে। আমি নাকি খারাপ মেয়ে। ও আমাকে ছেড়ে দেবার জন্য যতবার চেষ্টা করবে আমি ওকে ততবার নিজের দিকে টানবো।
আমি ওকে এতো সহজে চলে যেতে দিবো না। একমাত্র ওর জন্য আমার পুরো পরিবারকে কথা শুনতে হয়েছে।
আমাকে নিয়ে খেলেছে আমিও এই খেলা তে হারছি না।
মনে হচ্ছিলো ফোন ভেঙে ফেলি কিন্তু পরক্ষণেই মনে হলো ফোন ভাঙলে নতুন ফোন কবে পাবো তার ঠিক নেই। আর মা চলে আসলে তো আমার খাওয়া দাওয়াও বন্ধ করে দিতে পারে। ফোন তো দূরে থাক।
এতো খেলা খেলেও আবার বলে বিশ্বাস ভাঙতে পারবে না।
ওকে ভালবাসছি তো ওকে আমার করেই ছাড়বো। বদনাম হয়েছি তো ওকে নিজের করেই ক্ষান্ত হবো আমি।
ফোন টাকে বালিশের নিচে রেখে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম।
কিন্তু বারবার মাথায় এক চিন্তাই আসছে ও বাসায় গেছে তো নাকি এখনো রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে?
মোবাইলে টাইম দেখলাম ১.২৫ বাজে। এই সময় ছিনতাই কারী থাকে, খারাপ লোক থাকে, ওর যদি খারাপ কিছু হয়ে যায়।
ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুম ভাংলো বাবার ডাকে। বাবা বললেন
– নাস্তা টেবিলে রাখা আছে আর পাশে মেডিসিন রাখা আছে খেয়ে নিও।
বাবাকে দেখে মনে হলো কোথাও যাবে। বাবাকে বললাম
– কোথাও যাচ্ছো?
বাবা বললেন
– তোর মাকে নিয়ে আসতে যাই। তুই কোনো কাজ করার চেষ্টা করিস না।
বাবা চলে গেলেন আমি দরজা আটকে দিয়ে ব্রাশ করতে বাথরুমে গেলাম। ব্রাশ করে বের হবার পরপর মনে হলো ফোন বাজছে।
রুমে এসে ফোন রিসিভ করলাম হ্যালো বলবো আর জড়ালো কণ্ঠে সৌরভ বলল
– আমি সৌরভ বলছি।
– হ্যা বলো।
– তুমি বাসায় একা তাই না?
– হ্যা, আর এটা কার নাম্বার দিয়ে ফোন করেছো?
– আরে দোকানদারের নাম্বার। আমি বাসায় আসছি দরজা খোলো।
– এখন?
– হ্যা এখন।
ফোন কেটে গেলো। কী ঝামেলা রে। এ হুটহাট করে বাসায় চলে আসে কেউ একবার দেখলেই হয় কিয়ামত ঘটে যাবে তাও আমি একা।
দরজা খুলে দাঁড়িয়ে রইলাম। প্রায় ১০ মিনিট পর সৌরভ চোখ ডলতে ডলতে বাসার মধ্যে ঢুকলো। আমি দরজা আটকে দিয়ে ওকে জিজ্ঞেস করলাম
– এভাবে হুটহাট করে বাসায় চলে আসবা না।
– মামার বাড়িতে আমি আসতেই পারি তোমার কী?
– আমি একা তাই নিষেধ করছি।
কোনো কথা বললো না। সরাসরি আমার রুমে গিয়ে কী যেন খুঁজছে। সৌরভ কী খুজছো আমাকে বললেই হয়।
– তোমার মোবাইল চার্জার কই?
পড়ার টেবিলের ড্রয়ার থেকে বের করে দিলাম। ও মোবাইল চার্জ দিয়ে সোজা বাথরুমে চলে গেলো।
আমি খাবার টেবিলের চেয়ারে বসে রইলাম।
বাথরুম থেকে বের হয়ে বলল
– নাস্তা আছে?
– হ্যা আছে।
এদিকে আমার পেটে ইঁদুর ছুটাছুটি করছে। খাবার তো মনে হয় আমার যোগ্য।
ও আমার পাশে চেয়ার টেনে বসলো। আমি জিজ্ঞেস করলাম
– রাতে কই ছিলে?
– রাস্তার উপর ঘুমিয়ে ছিলাম।
– বাসায় কী সমস্যা?
– সমস্যা না, এমনি যেতে ইচ্ছে করেনি তাই যাইনি।
– যদি খারাপ কিছু হয়ে যেতো তখন?
– হয়নি তো দেখছোই তাহলে প্রশ্ন করে কী লাভ?
– এমন আর করবে না।
– তোমার রুমে এসে পড়ে থাকবো তখন পাড়ায় বদনাম রটে যাবে। অমুকের মেয়ে ঘরে ছেলে নিয়ে থাকে।
– শুনো এমনিতেই আমার বদনামে পুরো পাড়া ভরপুর। যাকেই জিজ্ঞেস করবা সেই বলবে শারলিন একটা নিকৃষ্ট মেয়ে।
– sorry !
– জানো সেটা কার জন্য?
– আমার জন্য তাই তো।
– হ্যা। নাস্তা করবে বলে নাও টেবিলে খাবার আছে খেয়ে নাও।
– আসো ভাগ করে খাই।
– নাহ আমার খাওয়ার দরকার নাই। তোমার কথায় পেট ভরে গেছে।
ও খাবারের প্লেট সামনে নিলো। বাবা অনেক খাবার রেখে গেছেন। হোটেল থেকে আমার পছন্দের খাবার কিনে এনেছেন। পরোটা আর ডিম ভাজি আর ডাল।
খুব খিদে পেয়েছে কিন্তু ওকে তো বলেই ফেললাম আমি খাবো না।
সৌরভ পরোটা ছিড়ে ডিম দিয়ে আমার মুখের সামনে ধরলো তারপর বলল
– আর এমন হবে না। সত্যি শারলিন আমি আর করবো না।
– আমার খিদে নেই।
– তোমার মুখ দেখেই মনে হচ্ছে কিছুই খাওনি আর তোমার খুব খিদে পেয়েছে।
পরোটার টুকরো টুকো মুখে নিলাম। ও খাচ্ছে আমি হাত দিয়ে নিতে গেলাম, তখন ও বলল
– আমি খাইয়ে দিচ্ছি।
পুরো প্লেট ফাকা হয়ে যাবার পর সৌরভ বলল
– পেট ভরেছে?
– হ্যা, তোমার?
-হ্যা।
মেডিসিন খেয়ে নেবার পর সৌরভ কে বললাম
– একটা প্রশ্ন করবো ঠিক তার উত্তর দিবে?
সৌরভ পানির গ্লাস হাতে নিয়ে বলল
– হ্যা করো।
– আমি তোমার কত নাম্বার প্রেমিকা?
চলবে….!
#Maria_kabir