ভাড়াটিয়া-১৩
রায়হান ঘরে বসে বসে একটা বই পড়ছে। পড়তে ভালো লাগছে না! বারবার মেয়েটার কথা মনে পড়ছে। আজব একটা মেয়ে!
বাসায় চুরি করার জন্য বিয়ের নাটক করার কী আছে।
মায়ের সাথে তো ভালোই সম্পর্ক করে ফেলেছিল। চুরি তো করাই যেত। বিয়ের নাটক করার প্রয়োজন ছিল না।
বাইরে যেতেও ইচ্ছে করছে না! মানুষজন কী ভাববে কে জানে? অবশ্য খুব কাছের কয়েকজন ছাড়া কেউ জানে না। তবুও কেমন একটা খারপ লাগা কাজ করছে!
ফাতেমা এক কাপ চা নিয়ে রায়হানের ঘরে হাজির হলো। আনোয়ারা ফাতেমা কে পাঠিয়েছে। ছেলেটা ঘর থেকে বের হচ্ছে না। ওনার খুব খারাপ লাগছে!
ফাতেমা রায়হানের পাশে বসল। ফাতেমার দিকে আড় চোখে তাকাল রায়হান।
“ভাইয়া তোমার চা।”
রায়হান চা টা নিলো। এক কাপ চা পেয়ে তার ভালোই লাগছে। মাথাটা কেমন ঝিম মেরে ছিলো। রায়হান ফাতেমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসল।
“কি করো ভাইয়া?”
“একটা বই পড়ছি। তোর কোচিং এ ক্লাস নাই?”
“আজ ক্লাস নাই।”
“এ কয়দিন তো পড়াশোনা হয়নি। ভালো করে পড়।”
মামা জিজ্ঞেস করল,” তুমি কি ঘুরতে যাবা?”
“কোথায় যাবে?”
“এখন ঠিক করেনি। তুমি গেলে ঠিক করবে।”
“তোরাও যাবি নাকি?”
“হ্যাঁ।”
“না, না তোর এখন কোথাও যাওয়ার দরকার নাই। পরীক্ষার তো সময় বেশি বাকি নাই। এখন এ সব ঘুরাঘুরি বন্ধ। ”
“দুইদিনের জন্য গেলে কী হয়!”
“এখন বাদ দে। তোর পরীক্ষার পরেই সবাই মিলে যাব। যা পড়তে বোস।”
ফাতেমা মনখারাপ করে উঠে দাঁড়াল। ভাইয়াটা জানি কেমন!
মামুন এসে বসে আছে অফিস ঘরের বারান্দায়। এ অফিসটা পুলিশের আইজির। মামুন একজন গোয়েন্দা অফিসার। ইদানিং কয়েকটা জটিল কেস সমাধান করায় বেশ নামডাক হয়েছে।
গতকাল রাতে মিলন সাহেব মামুন কে অফিসে দেখা করতে বলেছেন। মিলন সাহেব মামুন কে খুব পছন্দ করেন। পছন্দের মাত্রাটা একটু বেশিই বলা যায়!
মামুন নয়টার সময় এসে বসে আছে। মিলন সাহেব এখনো অফিসে আসেননি।
দশটার পরে মিলন খন্দকার অফিসে এলেন। মামুন কে দেখে একটু হাসি দিয়ে বললেন, “কেমন আছ মামুন?”
“ভালো আছি স্যার।”
“কখন এসেছ? তোমাকে মনে হয় অনেকক্ষণ বসিয়ে রেখেছি!”
“না স্যার। খুব বেশি সময় হয়নি স্যার।”
“এসো ভিতরে এসো। ”
ঘরের ভিতরে ঢুকলেন। সরকারি অফিস খুব বেশি ঝাঁকঝমক না। সাদামাটা একটা বড়ো ঘর। একটা বড়ো টেবিল আর গুটিকয়েক চেয়ার। দেয়ালে জাতির পিতার একটা বড়সড় ছবি ঝুলছে।
মিলন খন্দকার চেয়ারে গিয়ে বসলেন। মামুন ঘরে ঢুকে দাঁড়িয়ে আছে।
মিলন খন্দকার মামুনের দিকে তাকিয়ে বললেন,” দাঁড়িয়ে আছে কেন মামুন! বোস। এ চেয়ারটাতে বোস।”
মামুন ওনার সামনের চেয়ারটাতে বসল। মামুন ঠিক বুঝতে পারছে না কেসটা কী? কোনো ভয়ংকর কেস টেস বলে মনে হচ্ছে না। তেমন কিছু হলে স্যার কে চিন্তিত লাগত!
গতবারের জটিল কেসটার জন্য যখন তাকে ডাকা হলো। স্যার খুব টেনশনে ছিলেন। মন্ত্রণালয়ের চাপ আরেকদিকে মিডিয়ার চাপ ছিলো।
এমন কোনো কেসের খবর তো শোনা যাচ্ছে না। নাকি স্যার অন্যকোনো কারণে ডেকেছেন কে জানে?
“চা খাবা মামুন?”
মামুন একটু হেসে না বলল। ছেলেটাকে এই জন্যই মিলন খন্দকারের আর ভালো লাগে! খুব সুন্দর করে না বলতে পারে।
“খাও এক কাপ। তোমার সাথে চা খাব বলে আমার চা খাওয়া হয়নি।”
এখন আর না বলা যায় না। ইচ্ছে না করলেও খেতে হবে। এক কাপ চা অবশ্য খাওয়া যায়। মিলন মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ বলল।
মিলন খন্দকার একটা বেল চাপল। একজন পিয়ন ছুটে আসল সাথে সাথে।
“দুই কাপ চা দাও।”
মিলন খন্দকার একটা পাসপোর্ট সাইজের ছবি টেবিলে রাখলেন। মামুনের দিকে তাকিয়ে বললেন, “এই ছবিটা দেখ মামুন”
মামুন দেখল। নীল রংয়ের একটা শাড়ি পরা মেয়ের ছবি। মেয়েটা দেখতে বেশ সুন্দরী! চোখদুটো খুবই মায়াবী। দেখলেই কেমন আকর্ষণ করে।
“এই মেয়েটির নাম সুইটি। বাবার নাম আসলাম আর মায়ের নাম রাশিদা বেগম। ”
মামুন একটু অবাক হলো। এমন একটা মেয়ের জন্য স্যার মামুন কে ডেকেছেন!
“আমার ধারণা এ সব তথ্য সব ভুয়া। মেয়েটার নামও হয়ত সুইটি না। এ ছাড়া যে সব কাগজ পত্র আছে সব ভুল হওয়াটাই স্বাভাবিক।”
মামুন বুঝতে পারল। এটা একটা ঠকবাজি কেস।
“তাই বলা যায়। আমাদের কাছে শুধু এক কপি ছবিই আছে। এ ছাড়া তোমাকে আমি কিছু তথ্য দিতে পারি। মেয়েটাকে শেষবার ওয়ারির একটা বাড়িতে দেখা গেছে গত বৃহস্পতিবার।”
মামুন হালকা একটু হাসি দিলো।
“মামুন আমি তোমাকে চব্বিশ ঘণ্টা সময় দিলাম। তুমি মেয়েটা কে খুঁজে বের করো। তোমাকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।”
“মামুন একটু হেসে বলল, স্যার, চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে কেস সমাধান করে ফেলা। এ সব সিনেমা টিনেমায় হয়! চব্বিশ ঘণ্টা খুব সামান্য সময় না। কিন্তু আপনি জানেন, খুবই সাধারণ কেস। দেখে মনে হয় এটা তো মুহূর্তেই সমাধান হয়ে যাবে। এমন অনেক কেস আছে আমরা চব্বিশ বছরেও সমাধান করতে পারিনি! আবার অনেক জটিল কেস খুব অল্প সময়ে সমাধান হয়ে গেছে।
আমি আপনাকে এটা বলতে পারি। এ কেসটা আমি আমার সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করব এবং যত দ্রুত সম্ভব একটা সমাধান দিবো। ইনশাআল্লাহ।”
মিলন খন্দকার মামুনের দিকে তাকিয়ে রইলেন কিছুটা সময়। কিছু বললেন না। মামুন বাস্তব কথাই বলেছে। স্যার কে খুশি করার জন্য যা ইচ্ছা বলেনি।
পিয়ন দুই কাপ চা নিয়ে এলো। মিলন খন্দকার ও মামুন দুইজনই এখন নীরব হয়ে বসে আছেন।
“চা নাও মামুন।”
মামুন চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে আলত চুমুক দিয়ে আড় চোখে স্যারের দিকে তাকাল। স্যারের এক্সপ্রেশন বুঝতে চেষ্টা করল। ও বুঝতে পারছে। মেয়েটা স্যারের কোনো কাছের মানুষ কে ধোঁকা দিয়েছে!
চলবে–