ভাড়াটিয়া পর্ব-১৪

0
200

ভাড়াটিয়া-১৪

মামুন অফিস ঘরে বসে আছে। এখন দুপুর দুইটা বাজে। এ সময় অফিসে সবাই লাঞ্চ করে। মামুনের কিছুই খেতে ইচ্ছে করছে না।

মামুন অফিসে আসতে আসতে লাঞ্চের সময় হয়ে গেছে। কারো সাথে কথা বলা হয়নি। ইচ্ছেছিলো লাঞ্চের আগে অফিসে আসবে। রাস্তায় জ্যামের কারণে দেরি হয়ে গেছে!

ঢাকা শহরে চলাচল করাটা বড্ড কষ্টকর হয়ে গেছে! অনেকটা সময় রাস্তায় চলে যায়!

যদিও স্যারের সাথে একটু কঠিন করে কথা বলেছে। কাজে অতিরিক্ত চাপ নিতে চায় না। কাজ হবে তার নিজের মতো। খুব দ্রুত স্যার কে একটা রেজাল্ট দেখাতে চায় মামুন।

আজই কাজে নেমে পড়তে হবে। মেয়েটাকে শেষবার ওয়ারিতে দেখা গেছে। এখান থেকেই শুরু করতে হবে।

জয়ি লাঞ্চ শেষ করে এসে দেখল মামুন স্যার এসেছেন। আগে দেখলে লাঞ্চের ওফার করা যেত। স্যার কখনো লাঞ্চ টাঞ্চ আনেন না। কেন আনেন কে জানে?

অবশ্য অফিসের নিচে একটা ক্যান্টিন আছে। ওদের খাবারটা খারাপ না। ভালোই রান্না করে।

জয়ি দরজায় দাঁড়িয়ে বলল,” ভিতরে আসব স্যার?”

মামুন জয়ির দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বলল,” এসো জয়ি।” জয়ি এ গোয়েন্দা বিভাগের একজন নতুন অফিসার। দারুণ মেধাবী আর দুরন্ত সাহসি। লম্বায় পাঁচ ফুট সাড়ে পাঁচ ইঞ্চি লম্বা। ফিট বডির অধিকারী।

“লাঞ্চ করেছেন স্যার?”

মামুন কোনো জবাব দিলো না। আবার হালকা করে হাসল। এ হাসির মানে কী? তা জয়ি বুঝতে পারল না! মামুনের স্যারের মাঝে একটা গাম্ভীর্য ভাব আছে। সব সময় কেমন একটু দূরত্ব বজায় রাখে। এ জন্য সবাই তাকে একটু ভয়ও পায়!

“বোস জয়ি। ইসমাইল কোথায়?”

“নতুন কোনো কেস আছে স্যার?”

“হ্যাঁ, আই জি স্যারের কেস একটা পাওয়া গেছে।”

এ সময় ইসমাইল ঘরে ঢুকে সালাম দিলো। ইসমাইলের দিকে তাকিয়ে মামুন বলল, “এসো ইসমাইল।”

সামনের চেয়ারটা টেনে বসল ইসমাইল। ইসমাইল একজন কম্পিউটার ইন্জিয়ার। দেখতে শুনতে দারুণ স্মার্ট একটা ছেলে। বয়স পঁচিশ ছাব্বিশ হবে।

মামুন বলল, “জয়ি এক কাজ করো শাহাদাত ভাই কে ডেকে নিয়ে এসো। আর ইসমাইল তুমি এ ছবিটা প্রোজেক্টের সেট করো।”

জয়ি ঘর থেকে বের হলো শাহাদাত ভাইকে ডাকার জন্য। শাহাদাত এ অফিসের সবচেয়ে বয়স্ক এবং অভিজ্ঞ অফিসার। অফিসের প্রধান মামুন হলেও শাহাদাত কে সবাই সম্মান করে। খুব মজার মানুষ শাহাদাত।

শাহাদাতের প্রিয় কাজ হচ্ছে খাওয়া। সব সময় কিছু না কিছু খেতেই থাকে। এবং সাস্থটা হয়েছে সেই রকম। ফ্যামিলি প্যাক বডি। কাঠেলর মতো একটা বুড়ি বের হয়ে আছে।

শাহাদাত কে পাওয়া গেল। ওয়েটিং রুমে। হাতে একটা বড়ো মাপের কফির কাপ। কাপে চুমুক দিচ্ছে আর মোবাইলে কথা বলছে।

জয়ি কে দেখে একটু হাসল শাহাদাত। জয়ি ইশারায় ডাকার কথা জানাল। ইশারায় অপেক্ষা করতে বলল জয়ি কে।

শাহাদাত এসে মামুনের ঘরে এসে বসতে বসতে বলল, “নতুন কেস মনে হচ্ছে? ”

মামুন শাহাদাতের দিকে একটু হাসি দিলো।

ইসমাইল প্রোজেক্টরে সুইটির ছবিটা দেখাল।

ছবি দেখে শাহাদাত বলে উঠল।” আরে বাপস্ এত পুরাই আগুন! দেখতে তো সেই মেয়েটা!”

সবাই একটু হাসল।

মামুন বলা শুরু করল। এই ম্যাডাম আমাদের আই জি স্যারের খুব আপন! স্যারের খুব ইচ্ছে ওনাকে একটু আপ্যায়ন করবেন। কিন্তু ম্যাডাম শুক্রবার থেকে লাপাত্তা!

খুব দ্রুত ম্যাডাম কে খুঁজে বের করতে হবে। স্যার আমাদের কে চব্বিশ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছেন!

ম্যাডামের সম্ভবত ছদ্মনাম সুইটি। শেষবারের মতো উনাকে ওয়ারিতে দেখা গেছে। ”

শাহাদাত একটু আফসোসের সুরে বলল, “ওহ! চিটিং কেস! এই মেয়ের পাল্লায় পড়লে বড়ো মাথাওয়ালার মাথাও ঠিক থাকবে না! নিশ্চয়ই বড়ো স্যারের মাথা খেয়ে ভাগছে!”

মামুন একটু কড়া দৃষ্টিতে শাহাদাতের দিকে তাকাল।

জয়ি বলল, “শুধু একটা ছবি দিয়ে মেয়েটা কে খুঁজে বের করা তো কঠিন হয়ে যাবে স্যার।”

“কঠিন বলেই তো দায়িত্বটা আমাদের কে দেয়া হয়েছে জয়ি। মাথা খাটাও।”

শাহাদাত কে গভীর ভাবে ভাবতে দেখা যাচ্ছে৷ কিছুটা সময় অতিবাহিত হলো। হঠাৎ করে শাহাদাত বলল, “আচ্ছা মেয়েটা কে ওয়ারিতে দেখা গেছে বৃহস্পতিবার রাতে। মানে শুক্রবার সকাল পালিয়েছে। এক কাজ করা যায়। শুক্রবারের ঢাকা শহরের রাস্তার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ চেক করে দেখা যায়। কোথায় কোথায় গেছে। বাড়ি থেকেই যদি ছদ্মবেশে বের হয় তাহলো হয়ত বের করা করা যাবে না। কিন্তু বাড়ি থেকে ছদ্মবেশে বের হওয়ার কথা না।”

মামুন বলল, “গুড পয়েন্ট শাহাদাত ভাই। আপাতত এটা ধরেই আমরা আগাই দেখি কী পাওয়া যায়। ইসমাইল তুমি এক কাজ করো। শুক্রবারের ঢাকা শহরের সকল রাস্তার ফুটেজ দেখার ব্যবস্থা করো।”

ইসমাইল বলল, “ওকে স্যার।”

ট্যাফিক কন্টোল রুমে বসে আছে ইসমাইল। ঢাকা শহরের যে সব রাস্তায় ক্যামেরা আছে তার ফুটেজ দেখা হচ্ছে।

মালিবাগ রেল ক্রোসিংয়ের একটা ক্যামেরা ফুটেজে সুইটি এবং একজন বয়স্ক মহিলার ফুটেজ পাওয়া গেছে। এটা সকাল আটটার সময়ের ফুটেজ।

ইসমাইল ঘটনাটা মামুন কে জানাল।

মামুন বলল, “আর কোনো জায়গায় এদের দেখা গেছে? ”

“সুইটি মেয়েটা আর কোথায় দেখা যায়নি। তবে সুইটির সাথের মহিলাটিকে গাবতলি একটা ক্যামেরা ফুটেজে দেখা গেছে। ”

“তারমানে সুইটি ছদ্মবেশ ধারণ করেছে। বা বোরকা টোরকা পরে ঘুরছে। তুমি মহিলার একটা ছবি প্রিন্ট করে নিয়ে আস।”

অনেকটা কাজ হয়ে গেছে। সুইটি মেয়েটা মনে হয় ঢাকা শহরেই আছে। বা ছদ্মবেশে ঢাকা শহরের বাইরে গেছে। তবে মামুনের মনে হচ্ছে মেয়েটা ঢাকাতেই আছে।

যেহেতু সাথের মহিলাটি ছদ্মবেশ ধারণ করেনি। তারমানে এ সব ক্যামেরার কথা ওদের মাথায় ছিলো না।

গাবতলি দেখা গেছে মানে ঢাকার বাইরে কোথাও গেছে। গাবতলি থেকে কত জায়গার গাড়ি যায়। কোথায় গেছে? কী করে পাওয়া যাবে!

অফিস ঘরে বসে আছে সবাই। কী করা যায়। যে সূত্র পাওয়া গেছে তা দিয়ে এই মহিলা কে খুঁজে বের প্রায় অসম্ভব!

জয়ি বলল, “স্যার ইদানিং দূর যাত্রার বাসগুলো ছাড়ার পূর্বে যাত্রীদের ভিডিও করা হয়। আমরা যদি গাবতলীর বাসগুলোর শুক্রবারের ভিডিওগলো চেক করি তাহলে কিছু একটা পাওয়া যেতে পারে।”

শাহাদাত ভাই বলল,” খুব ভালো আইডিয়া জয়ি!”

ইসমাইল বলল, “আইডিয়া খারাপ না। কিন্তু স্যার একদিনে কত হাজার বাস গাবতলি থেকে ছেড়ে যায় কে জানে? সব বাস এমন ভিডিও করে কিনা! জানি না।”

মামুন বলল, “খোঁজ নিয়ে দেখা যাক কী পাওয়া যায়।”

শাহাদাত বলল, আমরা এক কাজ করতে পারি। বাস সমিতির সাথে কথা বলে। সকল ক্যামেরাম্যান কে একজায়গায় করা যেতে পারে। তাহলে ভিডিও চেক করা সহজ হয়ে যাবে। না হলে এত এত ফুটেজ চেক করা কঠিন হয়ে যাবে। আমরা মহিলার ছবি দেখিয়ে বলে দিলাম।

সবাই চেক করে দেখ কার ক্যামেরায় মহিলা কে দেখা গেছে। সেখান থেকে বুঝা যাবে কোন বাসে মহিলা উঠছে। জানি না কতটা সফল হওয়া যাবে!”

মামুন বলল, “এ ছাড়া তো কোনো পথ নেই শাহাদাত ভাই। দেখা যাক কী পাওয়া যায়?”

চলবে–

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here