#ফাল্গুনের প্রেমপর্বঃ ০৩ +৪

0
587

#ফাল্গুনের প্রেমপর্বঃ ০৩ +৪
#_লিখাঃ Bornali Suhana

ঈশা সেখানেই স্তব্ধ হয়ে ছোট ভাইয়ের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। যেখানে ও এখনো প্রেমই করলো না আর সেখানে কিনা তারই ছোট ভাই বিয়ে করে বাসায় বউ নিয়ে আসার কথা বলছে।
`
আজ খুব তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে ইভান বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে। কলেজ তো বড় কাজ নয় আজকে আবারো বর্ণালীর সাথে দেখা হবে এটাই বড় কাজ। জানিনা অন্য কারো বেলায় এমন হয় কিনা কিন্তু আমার বেলায় এমন হচ্ছে যে প্রথম দেখায় কোন মেয়ের জন্য এতোটা পাগল হয়ে গেছি। এক দেখায় কোন মেয়ের ভাবনায় এতোটা মাতোয়ারা হয়ে আছি। হয়তো এটাকেই লাভ এট ফাস্ট সাইড বলে। হুম এরকম কিছু একটাই Jubaida Sobti আপুর স্টোরিতে পড়েছিলাম। আজ নিজেকে সেই রাহুল মনে হচ্ছে। কিন্তু যার জন্য আমি এতো ভেবে মরছি কি জানি সে আমায় নিয়ে এরকম কিছু ভাবছে কিনা!
এদিকে ঈশা কত করে বললো,
-“তুই যখন যাচ্ছিস আমায় নিয়ে যা।”
ইভানের একটাই কথা,
-“আমার কাজ আছে পারবো না। তোকে রাজাসাহেব গাড়িতে করে দিয়ে আসবে।”
ঈশা ঠিকিই বুঝতে পারছে তার ভাইয়ের কি কাজ। কিন্তু কিছুই বলছেনা। ওর সামনে দিয়েই ইভান বেড়িয়ে গেলো। এখন আর কি করা রাজাসাহেব মানে দীপুই ওকে নিয়ে দিয়ে আসবে।
`
বর্ণালী ব্যাগ গুছাচ্ছে আর শারমিন বেগম নাস্তা হাতে মেয়ের পিছু পিছু ছুটছেন।
-“মা দেরি হয়ে যাচ্ছে। খেয়েছি তো আর কত খাবো?”
-“সারাদিন কত পরিশ্রম করিস কিছু তো খেয়ে যা। এমনিতেই শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছিস।”
-“কি যে বলো না মা। আমি ভালোই আছি দেখো না ফিট এন্ড ফাইন।”
সজিব অনেক্ষণ ধরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে মা-মেয়ের নাটক দেখছে। অনার্স কম্পলিট করেছে লাস্ট ইয়ার। এখন মাস্টার্স করছে। প্রতিদিনই একটা না একটা ইন্টারভিউ দিয়ে যাচ্ছে। একটা জবের অনেক প্রয়োজন। টিউশনির টাকায় আর চলেনা। ছোট বোনটা এই বয়সে অনেক খাটছে পরিবারের জন্য। বাবা তো থেকেও নেই। সারাদিন বাসায় ঘুমান, মাঝে-মধ্যে বাজারে যান। আর টাকা পেলেই নিয়ে জুয়ায় উড়িয়ে আসেন। ব্যাবসা তো নেই বললেই চলে সব জুয়ায় উড়িয়ে বসে আছেন। সজিব এতোক্ষণে কথা বললো,
-“মা আমিও তো বাইরে যাবো আমাকে তো নাস্তা দাও।”
-“হ্যাঁ রে বাবা টেবিলে আছে খেয়ে নে।”
-“হুম সব আদর তোমার মেয়ের জন্যই। আমি তো আর কেউ না।”
সজিব টেবিলে বসতে বসতে কথাটা বললো। বর্ণালী ব্যাগ হাতে বের হয়ে ভাইকে বললো,
-“কি যে বলো ভাইয়া মা তোমাকে আমার চেয়েও বেশি ভালোবাসেন।”
-“হুম তা তো দেখতেই পাচ্ছি।”
-“মা বাবা উঠেন নি?”
-“বাবার এখনো সকাল হয় নি বর্ণালী। তুই যা বাবার খুঁজ নিয়ে লাভ নেই।”
ছেলের কথায় শারমিন বেগম কোন কষ্ট পেলেন না। এমন অনেক কথা প্রায় প্রতিদিনই অনেকের মুখেই শুনতে হয় উনাকে। বর্ণালী আর কথা না বাড়িয়ে বাইরে চলে আসে। গেটের বাইরে পা রাখতেই ও অবাক! ইভান! এই ছেলে এখানে কেন? বর্ণালী নিজের পা খুব দ্রুত চালাচ্ছে। ইভান বাইক স্টার্ট দিয়ে বর্ণালীর পাশে পাশেই যাচ্ছে।
-“গুড মর্নিং।”
বর্ণালী শুনতে পেয়েও চুল ঠিক করছে আর দ্রুত চলছে। ভাগ্য ভালো রিকশাও পেয়ে যায়। রিকশায় উঠে বসে ড্রাইভারকে দ্রুত চালাতে বলে। ইভান বর্ণালীর কাজ দেখে কিছুটা কষ্ট পাচ্ছে। কিন্তু তবুও আবার রিকশার পাশে গিয়ে বলে,
-“এই যে একটা গুড মর্নিং ও কি বলা যায় না?”
-“হুম গুড মর্নিং।”
-“বাহ থ্যাংকস।”
ইভান আর কথা বলার কোন সুযোগ পায় নি। জ্যামের জন্য দুজনে আলাদা হয়ে যায়।
কলেজে এসেই বর্ণালী একজন মধ্যবয়সী মহিলার সাথে একগাল হেসে কথা বলতে বলতে গেটের ভেতর ঢুকে গেলো।
ইভান বাইক পার্ক করে কলেজে ঢুকে এদিক ওদিক খুঁজতে লাগলো। কিন্তু বর্ণালীকে না দেখে ক্লাসে যাবে ভেবে নিলো। ক্লাসে যেতেই মাঝখানের একটা বেঞ্চে বসে। পাশের ছেলেদের সাথে খুব জমিয়ে কথা শুরু করে।
-“হাই আমি ইভান। এখানে নতুন। তোমরা?”
-“আমি রাফাত।”
-“আই এম হিমেল।”
-“এন্ড মি আসাদ।”
একে একে সবাই হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করলো। এক দিনেই ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেছে ওদের সাথে। স্কুল জীবনের প্রথম ক্লাসে সবার সাথেই হয়তো এমন হয়। যার পাশে বসেছো সেই তোমার প্রথম ফ্রেন্ড আর ইভানের সাথেও তেমন হয়েছে। ইভান কখন থেকেই ওদের সাথে তুমি তুমি করে কথা বলছে দেখে রাহাত বলে উঠে,
-“আমরা যেহেতু একই গ্রুপের সো তুমি না বলে তুই করেই বল ভাই। ভালো শোনায়।”
-“হাহাহা ওকে ইয়ার।”
কথা বলছিলো এমন সময় একটা মেয়ে এসে ওদের মাথার চুল ধরে টানতে শুরু করে। আর পৃথিবীর যা সব গালাগাল করেই যাচ্ছে।
-“কুত্তা, হনুমানের দল আমাকে কাল একা রেখে পার্টি করতে লজ্জা লাগলো না তোদের?”
-“আরে ছাড় শয়তানের সর্দারনী। তোকে যখন কল দিলাম রিসিভ করলি না কেন?”
-“ছাগল কোথাকার কই কল দিলি?”
ওর পাশে থাকা আরেকটা মেয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলো এতোক্ষণে কথা বললো সে।
-“আসলে মালিহা ও আমাকে কল দিয়েছিলো আর আমি তোকে বলতে ভুলে গেছি। সরি রে।”
-“মিথির বাচ্চা এখন না সত্যি ইচ্ছে করছে তোর চুল ছিড়ি। কিন্তু কি করবো বল তুই তো আমার জান পাখি। যাহ এবারো ছেড়ে দিলাম।”
দুজনেই হেসে একে অপরকে এক হাতে জড়িয়ে ধরলো।
-“এই চিকনাটা কে রে?”
-“ওহ হ্যাঁ পরিচিত হয়ে নে ও হলো ইভান। কলেজে নতুন এসেছে। এন্ড ইভান ও মালিহা আর ও মিথি। আমাদের বেস্ট ফ্রেন্ড।”
-“হাই।”
-“হ্যালো।”
`
ঈশা ভার্সিটিতে এসে নিজেকে খুব একা পাচ্ছে। কাউকে চেনে না জানেনা। কেমন একটা ভয় ভয় কাজ করছে। ডিপার্টমেন্ট কোন দিকে তাও বুঝতে পারছেনা। হুট করে একজনকে জিজ্ঞেস করে বসে। মেয়েটা কেমনভাবে তাকিয়ে বলে,
-“তুমি ম্যাথম্যাটিকস ডিপার্ট্মেন্টের?”
-“হুম আসলে নতুন এখানে। কাউকে চিনিও না।”
-“তাহলে তুমি ঠিক জায়গায় এসেছো বেবি আমিও ম্যাথম্যাটিকস ডিপার্ট্মেন্টের।”
-“ওহ ওয়াও।”
মেয়েটা এক হাত বাড়িয়ে বলে,
-“বাই দা ওয়ে অ্যাম রোহানি ফেরদৌসী।
-“উম হাই আই এম ঈশা আহমেদ।”
-“ওখেই এখন কিন্তু তুমি বলতে পারবো না। তুই করেই বলবো চলবে?”
-“আরে দৌড়াবে।”
দুজনে হেসে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে। যেনো কতবছরের চেনা। চট করে রোহানি একটা সেল্ফি তুলে নেয়। তারপর দুজনে ক্লাসের দিকে পা বাড়ায়।
`
আমরা ৬জন ক্যান্টিনে বসে আছি।
সবার সাথেই ভালো একটা ফ্রেন্ডশিপ হয়ে গেছে। তবে এখানে সব চেয়ে ভালো লেগেছে রাহাতকে।
-“এই রাহাত শুননা।”
-“হ্যাঁ বল।”
-“কাল একটা মেয়েকে দেখে ভালোবেসে ফেলেছি দোস্ত।”
সবাই আমার কথা শুনে যেনো বিষম খেলো।
-“কি একদিন আসতে না আসতেই ভালোবাসা?” (মালিহা)
-“ভালোবাসা পকেটে নিয়ে ঘুরিস নাকি দোস্ত?” (হিমেল)
-“এতো নয় কোন ভালোবাসা
হতে পারে নেশা,
কেটে গেলে এ নেশার ঘোর
ভেঙে যাবে সকল আশা।” (আসাদ)
সবাই আসাদের দিকে ব্রু কুচকে তাকিয়ে আছে। আসাদ একটু ভয় পেয়ে বলে,
-“না মানে আমি তো এমনি বলছিলাম আর কি।”
-“থামেন কবি সাহেব।” (মালিহা)
-“কেন ও তো সুন্দর কথাই বলেছে।”(মিথি)
-“এই যে আসছেন আরেকজন কবির কবিতা।” (রাহাত)
সবাই হোহো করে হেসে দেয়। মিথি কিছুটা লজ্জা পেয়ে যায়। এদের মাঝে কিছু একটা আছে। ইভান কোক খাচ্ছে আর ভাবছে এতোক্ষণে একবারও দেখলো না কেন তার বাসন্তীকে? কলেজেই তো এলো তাহলে গেলো কোথায়? নাকি ও অন্য কোন গ্রুপের?
-“কিরে মেয়েটা কে? নাম কি? কোন গ্রুপের?”(রাহাত)
-“হ্যাঁ হ্যাঁ সব বল তাহলে আমরা লাগিয়ে দিবো।”(হিমেল)
-“বাসন্তী।”
-“হুম! এই নামে তো মনে হয় এই জন্মে কেউ জন্মগ্রহণ করে নি।” (মালিহা)
-“আরে বাসন্তী তো মনে হয় ও ভালোবেসে নাম দিয়েছে।” (আসাদ)
আবারো সবাই হোহো করে হাসতে নিলে থেমে যায়। পাশ দিয়ে ম্যাডাম যাচ্ছিলেন দেখে সবাই সালাম দেয়। ইভানের সে দিকে কোন খেয়াল নেই। সে তার বাসন্তীকে দেখতে ব্যাস্ত। রাহাতের ধাক্কায় ঘোর কাটে। খেয়াল করলো ছোট বড় স্কুল লেভেল থেকে কলেজ লেভেলের সব স্টুডেন্ট তার বাসন্তীকে সালাম দিচ্ছে। আর ও ঠোঁট বাকা করে হালকা হেসে সালামের জবাব বলে হ্যাঁ সুচক মাথা নেড়ে যাচ্ছে। ইভানের মাথায় কিছুই ঢুকছে না। তার বাসন্তী এমন কে যে সবাই সালাম দিচ্ছে!
-“কি রে বল না কোন গ্রুপের? আর রিয়েল নাম কি?” (মালিহা)
-“বর্ণালী।”
-“মানে? কোন বর্ণালী?”(রাহাত)
সবাই চোখ বড় বড় করে ইভানের দিকে তাকিয়ে আছে। আর ইভান তার বাসন্তীর এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে হেসে হেসেই ওদের বললো,
-“ওই যে আমাদের ঠিক সামনের টেবিলে বসে আছে।”
ইভানের কথা শুনে পিছনে ফিরে তাকাতেই সবার চোখ কপালে উঠে যায়। মালিহা হুট করেই পানির গ্লাস এনে ইভানের মুখে মারে।
-“আরে আরে কি করলি এইটা?”
-“ঠিকি করেছে। দিনের বেলা ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছিলি তাই জাগিয়ে তুলছে তোকে।”(হিমেল)
-“হুম আর স্বপ্ন দেখতে হবে না ভাই।” (রাহাত)
-“তোর মাথা ঠিক করে নে। উনি স্কুল লেভেলের ইংলিশের ম্যাডাম।”(আসাদ)
-“তাছাড়া ম্যাম অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ছেন। ভুলে যা আমাদের বড় আপুর বয়সি উনি।”(মিথি)
-“হ্যাঁ রে অন্ততপক্ষে ম্যাডাম তোর থেকে ৩বছরের বড় হবে।”(মলিহা)
ইভান যেনো আকাশ থেকে পড়লো। ওর মাথা ঘুরছে। চোখে ঝাপসা দেখছে। সামনের সবগুলো যেনো ঘোলাটে হয়ে যাচ্ছে।
কি শুনছে ও?
কোন কিছু ভুল শুনছে না তো?
বোতল থেকে পানি নিয়ে মাথায় আর মুখে দিতে লাগলো।
বর্ণালী দূর থেকে বসে আড় চোখে সব দেখছে। আর মিটিমিটি হাসছে। বুঝতেই পারছে ইভান ওর পরিচয় জেনে গেছে৷ কাল তো খুব লাফাচ্ছিলো আজকের পর আর এমন কিছু করবে না৷ এতটুকুন একটা পিচ্চি ছেলে আর আমার কাছে প্রেমের প্রস্তাব নিয়ে আসে! ওর পাশেই ফাহমিদা ম্যাডাম বসে আছেন। দুজনের হাতেই কফি। টিফিন পিরিয়ডে কফি না খেলেই নয়। ঘুম চলে আসে ক্লাস করাতে করাতে। তারউপর বাচ্চাদের সাথে চিল্লিয়ে গলা ব্যাথা করে।
ইভানের অবস্থা দেখে ওর বন্ধুরা সবাই উঠে ইভানকে ধরে।
-“কিরে ঠিক আছিস?”(রাহাত)
-“খারাপ লাগছে?(হিমেল)
-“ডাক্তার ডাকবো নাকি হসপিটাল যেতে হবে?”(মিথি)
-“মিথি চুপ যা মেরি মা।”(মালিহা)
-“আমি কি সত্যি শুনেছি?”
-“কঠিন হলেও এটাই সত্যি। উনি স্কুল লেভেলের একজন ম্যাডাম।” (আসাদ)
ইভান এক দৃষ্টিতে বর্ণালীর দিকে তাকিয়ে নীরবে চোখের জল ফেলছে। এতোক্ষণ বর্ণালীর মজা লাগলেও এখন কেন জানি ওর চোখের জল দেখে খারাপ লাগছে। নাহ আর বসে থাকা যাবেনা।
-“ম্যাডাম চলেন টিফিন পিরিয়ড শেষ হয়ে এসেছে।”
-“হ্যাঁ চলো।”
বিল পে করে দুজনে উঠে ইভানকে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। ইভান তখনো সেই শূণ্য টেবিলের দিকেই এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ওরা যেতেই সে উঠে দাঁড়ায়। আজ আর তার ক্লাস করা হবেনা।
-“আ….আমি চলিরে। কা….কাল দেখা হবে।”
সবাই ওর মনের অবস্থা বুঝতে পারে।
-“চল আমি তোকে পৌঁছে দেই।” (রাহাত)
-“হ্যাঁ রে তুই এই অবস্থায় ড্রাইভ করতে পারবি না। আমরা কেউ একজন তোকে পৌঁছে দেই।”(হিমেল)
-“হু তোরা টেনশন নিস না। আই এম ওকে। আমি যেতে পারবো।”
ইভান আর কিছু না বলেই বেড়িয়ে যায়। এমন কেন হলো? ওর সাথে তো এমন না হলেও পারতো। যাকে দেখে প্রথম মনের মাঝে অন্যরকম অনুভূতি হলো তাকেই সে পাবেনা! একমনে কথাগুলো ভেবে হেঁটে যাচ্ছে তখনি বর্ণালীকে দেখলো বাচ্চাদের সাথে হেসে হেসে ক্লাসে যাচ্ছে। ওর এই হাসিটাই তার বুকটা ছিড়েখুঁড়ে দেয়ার জন্য যতেষ্ট। বর্ণালীর চোখ তার দিকে পড়তেই দেখে ইভান চোখ ছোট ছোট করে অসহায়ভাবে তাকিয়ে আছে। চোখে জল টইটুম্বুর করছে। ওই চোখ যেনো অনেক না বলা কথাই বলে দিচ্ছে। কিছুক্ষণের জন্য বুকের ভেতরটা যেনো মুচড় দিয়ে উঠে। কিন্তু এসব ভাবতে ভাবতেই হাতে টান অনুভব করে। স্টুডেন্টরা ওকে ক্লাসে নেয়ার জন্য টানছে। ও মৃদু হেসে পিচ্চিটার দিকে তাকিয়ে ক্লাসে চলে যায়।
`
ইভান ধপ করে এসে বিছানায় শুয়ে পড়ে। ওর ভীষণ কান্না করতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু কিভাবে কাঁদবে! ও যে ছেলে ওর যে কাঁদতে মানা। ছেলেরা তো কাঁদেনা। কিন্তু ও যে পারছেনা। সাইড টেবিলে রাখা ঘড়িটা ঠাস করে ফ্লোরে ছুড়ে মারে। পরক্ষণেই হৃদয় কাঁপানো চিৎকারে পুরো রুমটাই যেনো কেঁদে উঠে।
-“আহহহহহহহহহহ কেন? আল্লাহ কেন? যদি তাকে আমার কপালে লিখো নি তাহলে কেন দেখা হলো? তাকে যদি নাই বা পাবো তাহলে কেন আমার মন ওর প্রতি দূর্বল করে দিলে? কেন কেন কেন?”
ইভানের কান্না ঈশার কান এড়াতে পারলো না। ওর ভাবনায় একটাই কথা ছোট ভাইটা এক দিনে কিভাবে এমন হয়ে গেলো? কি এমন হলো যার জন্য তার এতো কষ্ট হচ্ছে? নাহ এসবের উত্তর যদিও ওর জানা নেই কিন্তু জানতে দোষ কোথায়?
ঈশা অনেক্ষণ দরজা ধাক্কালো কিন্তু ইভানের একটাই কথা,
-“আমাকে কিছুক্ষণ একা থাকতে দে প্লিজ।”
সন্ধ্যে গড়িয়ে রাত নেমে এসেছে। ইভান কাঁদতে কাঁদতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছে বলতেই পারেনা। উঠে ফ্রেশ হয়ে বাইরে আসে। ক্ষুধার জ্বালায় পেটে চু চু করছে। সেই দুপুরে একটা কোক খেয়েছিলো সকাল থেকে এখন পর্যন্ত কোন দানা পেটে যায় নি। না খেয়েও থাকতে পারছে না। নিচে টেবিলে বসে মাকে খাবার দিতে বলে।
-“কিরে তোকে কতবার ডাকলাম এভাবে ঘুমাচ্ছিলি কেন? শরীর খারাপ হলো নাকি?”
-“আরে না মা। আমি ঠিক আছি খাবার দাও প্লিজ খুব ক্ষুধা পেয়েছে।”
ততক্ষণে ঈশা এসে চেয়ার টেনে বসে। ভাইয়ের চেহারা দেখেই বুঝতে পারছে মনের খবর। কিন্তু কি হয়েছে সেটা জানতে হবেই।
-“কিরে আজকে কলেজ কেমন গেলো?”
-“হুম ভালোই। তোমার ভার্সিটি কেমন গেলো?”
হুম আমার ভাইটা খুব সিরিয়াস তাই তো তুই থেকে তুমিতে উঠে গেছে। সাধারণত সিরিয়াস নাহলে সে কখনোই তুমি বলেনা।
-“হুম আমার তো দারুণ লেগেছে। প্রথম দিনেই মনের মতো ফ্রেন্ড পেয়ে গেছি। তোর বন্ধু হলো?”
-“হ্যাঁ হয়েছে।”
চুপচাপ খেয়ে ইভান উঠে রুমে যায়। ঈশাও তার পিছু পিছু রুমে গিয়ে নক করে।
-“কিরে আসবো?”
-“হ্যাঁ বুমনি এসো।”
বিছানায় শুয়ে গিটারে টুংটাং বাজাচ্ছিলো আমায় দেখে উঠে বসে। আমি গিয়ে ওর পাশেই বসলাম। দুজনেই কিছুক্ষণ চুপ।
-“কি কিছু বলবে?”
-“কি হয়েছে তোর?”
-“কই কিছু নাতো।”
-“তোর বুমনির কাছ থেকে লোকাবি? পারবি লুকাতে?”
ইভান আর থাকতে পারেনা। ফুঁপিয়ে কেঁদে ঈশাকে জড়িয়ে ধরে। ঈশা চুপ করে ভাইয়ের পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
-“বলবি তো কি হয়েছে?”
-“বু….বুমনি বর্ণালী….”
-” তো মেয়েটার নাম বর্ণালী?”
-“হ্যাঁ। তা কি হয়েছে? রিজেক্ট করে দিয়েছে?”
-“উহু।”
-“তাহলে?”
-“ও আমাদের কলেজের স্কুল লেভেলের ম্যাডাম।”
ঈশা কিছুক্ষণ চুপ হয়ে যায়। তারপর ভাইয়ের মুখটা তুলে ধরে চোখ মুছে ধরে।
-“এভাবে বাচ্চাদের মতো কাঁদছিস কেনো? চুপ কর আগে।”
ইভান মাথা নিচু করে চুপ হয়ে বসে আছে কিন্তু এখনো হিচকি তুলছে।
-“কোন ইয়ারে পড়ে?”
-“অনার্স তৃতীয় বর্ষে।”
-“আচ্ছা। তাহলে প্রবলেম কোথায়?”
-“মানে?”
-“হ্যাঁ আমি তো প্রবলেম দেখছিনা।”
-“ও আমার থেকে ৩বছরের বড় হবে।”
-“পাগল নাকি? তুই এস.এস.সি একবার ফেল করেছিস। আর দেখতে গেলে পড়ায় গাধা ছিলি তাই হয়তো তোকে মা দেড়িতে এডমিশন করিয়েছিলো। সে হিসাবে তোর বড় হবে বলে মনে হয় না। তাছাড়া ২-১বছর বড় হলেও তো প্রব্লেম নেই।”
-“কিন্তু ও কি মানবে?”
-“সেটা তুই জানিস কিভাবে মানাবি।”
বলেই ঈশা উঠে চলে যেতে লাগে দরজায় গিয়ে আবার বলে,
-“রাসূল (সঃ) ও যখন বিয়ে করেন উনার বয়স ২৫ ছিলো কিন্তু উনার বিবির বয়স ৪০। কোন হাদিসে নেই যে বড় কে বিয়ে করা যায় না।”
বলেই ঈশা বেড়িয়ে চলে যায়। ইভান এখনো চুপ করে বসে আছে। আসলেই তো আমি কেন শুধু শুধু কষ্ট পাচ্ছি। কথায় আছে না ভালোবাসলে ভালোবাসার মানুষকে পাওয়ার জন্য শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত চেষ্টা করে যেতে হয়। আমি না হয় তাই করলাম। আমি তোমায় ভালোবাসি বর্ণালী তুমিই আমার ফাগুন প্রেম। আর আমি তোমাকে আমার করে ছাড়বোই।
#_______চলবে………..
[ভালোবাসা সবার ভাগ্যে থাকেনা। যারা পেয়েছেন তারা ভালোবাসাকে ভালোবেসে আগলে রাখেন। আর তাদের নিয়ে অনেক অনেক অনেক বেশি ভালো থাকেন।

#____ফাগুন_প্রেম____
#_লিখাঃ Bornali Suhana
#_পর্বঃ ০৪
💛
কথায় আছে না ভালোবাসলে ভালোবাসার মানুষকে পাওয়ার জন্য শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত চেষ্টা করে যেতে হয়। আমি না হয় তাই করলাম। আমি তোমায় ভালোবাসি বর্ণালী তুমিই আমার ফাগুন প্রেম। আর আমি তোমাকে আমার করে ছাড়বোই।
`
ঘুমঘুম চোখে হাতিয়ে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে ১০টা বেজে গেছে। ইভান লাফ মেরে বিছানা থেকে উঠে বসে। চটপট ফ্রেশ হয়ে একটা সেন্ডউইচ মুখে নিয়ে বেরিয়ে পরে। রাত্রে ঘুম না হলে যা হয় আর কি। সকালে ঘুমের শয়তান এসে চেপে ধরে। খুব দ্রুত বাইক চালাচ্ছে। আজকে যেনো আরো বেশি দেরি হচ্ছে যেতে। রাস্তাটা শেষই হচ্ছে না।
`
ভালোই হলো আজকে ছেলেটা আর পিছু নেয় নি। ভালো ফ্যামিলির মনে হয় তাই তো আমার সম্পর্কে জেনে ভালোই ভালোই সরে গেছে। পিচ্চি এতটুকুন একটা ছেলে এসেছিলো আমার সাথে প্রেম করতে। বর্ণালী ক্লাসে বসে আনমনে এসব ভেবে যাচ্ছে আর হাসছে। হাসবেই বা না কেন? এমন পাগলও হয় নাকি!
-“আপনি এভাবে হাসলে তো আমি হার্ট অ্যাটাক করবো।”
কথাটা শুনেই বর্ণালী পাশ ফিরে তাকায়। ক্লাসের বাইরে ইভান দাঁড়িয়ে আছে। চোখ কুচকে তাকায় ইভানের দিকে। এই ছেলে এখানে কেন? ও চেয়ার থেকে উঠে বাচ্চাদের চুপ থাকতে বলে ক্লাসের বাইরে আসে।
-“আশ্চর্য আপনি আমার ক্লাসের বাইরে কি করছেন?”
-“কেন থাকতে পারি না?”
-“না পারেন না।”
-“আমার ইচ্ছে আমি কোথায় থাকবো বা না থাকবো।”
-“আচ্ছা আপনি থাকেন আমিই চলে যাই।”
-“I Love You.”
বর্ণালী পিছন ফিরে ক্লাসে ঢুকতেই ছিলো এমন কথা শুনে ওখানেই থমকে যায়। চোখ কপালে উঠে গেছে এই ছেলে কি আসলেই পাগল নাকি? পিছন ফিরে দেখে হাতে গুলাপের এক গুচ্ছ নিয়ে হাঁটুর উপর ভর দিয়ে বসে আছে। ভাগ্যিস বারান্দাটা খালি এই মুহুর্তে ক্লাস চলছে কিন্তু কেউ দেখলে কি ভাববে! ভয়ে জানটা বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম। চাকুরীটাও যেতে পারে। কত কষ্ট করে রুমু ওর মামাকে বলে এখানে ঢুকিয়ে দিয়েছে। এই এই পড়ালেখায় জব পাওয়াই মুশকিল। না না এই জব কখনোই হারাতে পারবো না। ভয়ে ভয়ে বর্ণালী বলে উঠে,
-“এই দে…..দেখুন উঠে দা….দাঁড়ান। কেউ দেখে ফেললে আ….আমার প্রবলেম হবে।”
-“তার আগে বলো তুমি আমাকে ভালোবাসো কিনা?”
-“জ্বি না আমি আপনাকে ভালোবাসি না।ভালোবাসার প্রশ্নই আসেনা।”
-“তাহলে আমিও উঠছি না। এভাবেই থাকবো। যে দেখার দেখুক আই ডোন্ট কেয়ার।”
-“প্লিজ দেখুন এভাবে জেদ করবেন না। আমার প্রব্লেমটা একবার বুঝেন প্লিজ। তাছাড়া সিম্পল একটা জিনিস কেন বুঝেন না আপনি আমার ছোট ভাইয়ের মতো।”
-“এই এই চুপ চুপ ছিঃ কি ছোট ভাইয়ের মতো বলছো হ্যাঁ? একদম মেরে ফেলবো। আর কি ছোট ছোট লাগিয়ে রেখেছো? এক দিকে আপনি ছাড়া কথা বলো না আরেক দিকে ছোট বলছো?”
-“ওকে ওকে এই প্রবলেম! দেখো আমাকে প্লিজ ডিসটার্ব করো না। নয়তো…”
-” নয়তো কি?”
-“নয়তো….নয়তো আমি প্রিন্সিপাল স্যারকে তোমার কমপ্লেইন করে দিবো।”
-“করো না কে না করেছে? চলো আমিও তোমার সাথে যাবো।”
এ কোন মহা পাগলের পাল্লায় পড়লাম?
হে আল্লাহ আমাকে উদ্ধার করো। কেন যে এর সাথে দেখা হতে গেলো আমার!
-“কি ভাবছো যাবে না?”
-“পি….প্লিজ উঠো বলছি। কেউ দেখলে আমার প্রবলেম হবে সেটা কেন বুঝতেছো না?”
ইভান কি যেনো ভাবলো তারপর বললো,
-“আচ্ছা ঠিক আছে উঠে দাঁড়াবো। আমিও চাই না তোমার কোন প্রবলেম হোক। কিন্তু কথা দাও ছুটির পর আমার সাথে বকুলতলায় দেখা করবে?”
-“পারবো না।”
-“তাহলে আমিও উঠছিনা।”
বর্ণালী রাগে জ্বলে যাচ্ছে। তারউপর পুরো গা শিরশির করছে ভয়ে। যদি কেউ এভাবে দেখে ফেলে তাহলে তো ওর চাকুরীটা যাবেই। কিন্তু এই সিচুয়েশান থেকে বেড়িয়ে আসতে হলে ওর কথাই মেনে নিতে হবে। এই ছেলের কোন ভরসা নেই। যা হয় পরে দেখা যাবে। তাই দাঁত খিঁচিয়ে বললো,
-“আচ্ছা দেখা করবো।”
-“প্রমিজ?”
এক হাত বাড়িয়ে দিলো ইভান। কেন জানি বর্ণালী ওর হাতের উপর হাত রাখতে পারছেনা।
-“কি হলো করো প্রমিজ।”
-“আ….আচ্ছা প্রমিজ।”
কেঁপে কেঁপে হাতের উপর হাত রাখলো। সাথে সাথে ইভান খপ করে ওর হাত ধরে আলতো করে একটা চুমু খেয়ে সোজা হয়ে উঠে দাঁড়ালো। বর্ণালী এমন কিছু কল্পনাও করেনি। দাঁতে দাঁত চেপে চোখ বড় বড় করে চেয়ে আছে। শরীরটা যেনো ফ্রিজ হয়ে গেছে।
-“গেলাম। আর আমি অপক্ষায় থাকবো। মনে থাকে যেনো।”
কথাটা বলেই ওর হাত ছেড়ে চলে গেলো। বর্ণালী চোখ বন্ধ করে একটা ভারী নিশ্বাস নিয়ে আশেপাশে তাকিয়ে এক হাতে আরেক হাত কচলাতে কচলাতে ক্লাসে ঢুকে গেলো। ওমনি টিফিন আওয়ারের ঘন্টা বেজে উঠলো। ব্যাগ হাতে নিয়ে অফিসে চলে গেলো। ফাহমিদা ম্যাডাম এসে বললেন,
-“কি গো বর্ণ ক্যানটিনে যাবি না?”
-“হু? না হ্যাঁ হ্যাঁ চলেন ম্যাডাম।”
-“কি হয়েছে? তুমি ঠিক আছো?”
-“জ্বি ম্যাডাম ঠিক আছি চলেন।”
-“আজকে বাসা থেকে টিফিন এনেছো নাকি?”
-“জ্বি এইতো মা জোর করে ব্যাগে ভরে দিয়েছে।”
ক্যানটিনে বসে আছি তখনই রুমুর কল আসে।
-“কি রে কেমন আছিস?”
-“ডারলিং বয় ফ্রেন্ড পেয়ে ভুলে গেলি আমায়?”
-“ধুর পাগলি কি আবোলতাবোল বকছিস?”
-“হুম কি জানি বাবা আবোলতাবোল নাকি সত্যি। বাই দা ওয়ে তুই কি খাচ্ছিস?”
-“এই তো মা বিরিয়ানি করে দিয়েছে।”
-“এই এই একদম ওটাতে হাত দিবিনা। তুই আমাকে রেখে কিভাবে বিরিয়ানি মুখে তুলছিস? তাও আন্টির হাতে রান্না করা। এই তুই না বিরিয়ানি খাস না?”
-“হে আল্লাহ এতো কথা বলিস কিভাবে? আমি তো খাই না জানিস একটু মুখে দিয়েছি মাত্র। আম্মু টিফিন পুরো ভর্তি দেখলে কত কথা শুনাবে জানিসই তো।”
-“হ্যাঁ তাই তো কলেজে থাকতে যতদিন তুই বিরিয়ানি করে আনতি ততদিন আমি খেতাম। হিহিহি। মনে আছে?”
-“আলবাত মনে আছে জান। আচ্ছা ভার্সিটি গিয়েছিলি?”
-“হ্যাঁ এই শুন রেজিষ্ট্রেশন চলছে কবে করবি আমাকে জানাস কেমন? তাহলে এক সাথে গিয়ে করে আসলাম।”
বর্ণালী কিছুক্ষণ ভেবে,
-“আচ্ছা ঠিক আছে জানাবো তোকে। এখন রাখছি। কিছু খেয়ে নেই টিফিনের টাইম শেষ হয়ে যাচ্ছে।”
-“আচ্ছা বাই মেরি জান।”
-“বাই।”
`
ঈশা ভার্সিটির গেট দিয়েই বের হচ্ছিলো
একটু দূরেই দেখতে পেলো সেদিনের সেই ছেলেকে। ওই যে রিকশা নিয়ে ওদের ফলো করছিলো সেই ছেলেটাই। হাতে ফাইল নিয়ে রাস্তার পাশেই বসে আছে। মুখে স্পষ্ট বিষন্নতার ছাপ। কেন জানি ওর এভাবে দেখতে ভালো লাগছেনা। ঈশা রোহানীকে বাই বলে হেঁটে হেঁটে ছেলেটার পাশে এসেই বসলো।
-“অল্পতেই ভেঙে পড়া কিন্তু ঠিক না।”
পাশে কারো কথা শুনে সজিব একটু চমকে গেলো। এখানে এতো মানুষের ভিরে কে তার পাশে এসে কথা বলছে! মাথা ঘুরিয়ে দেখতেই যেনো আকাশ থেকে পড়লো। এ তো সেদিনের সেই অপরিচিতা। সজিব কিছু বললো না। উঠে সোজা হাঁটা শুরু করলো। ঈশা ওখানেই দাঁড়িয়ে রইলো। হয়তো ছেলেটা একা থাকতে চাইছে। একবার ভাবলো দীপুকে কল দিবে গাড়ি নিয়ে আসার জন্য কিন্তু আর দিলো না। একটা রিকশা ডেকে উঠে পড়লো। রিকশা করেই যাবে।
সজিব একা একা হাঁটছে আর ভাবছে অপরিচিতা ঠিকি বলেছে আমাকে এভাবে অল্পতেই ভেঙে পড়লে হবেনা। এই ইন্টারভিউয়ে সিলেক্ট হই নি তো কি হয়েছে? পরেরবার ঠিকি হয়ে যাবো। পকেটে হাত দিয়ে দেখে রিকশা ভাড়াটাও নেই। যাহ এখন হেঁটেই যেতে হবে। মাসের শেষ আসলে এই এক প্রবলেম। ৪-৫ তারিখেই আর টিউশনির টাকা পাবে। এখন পকেট একদম ফাঁকা হয়ে আছে। আনমনে হেঁটেই যাচ্ছিলো সজিব পাছে কারো আওয়াজ পেয়ে থেমে দাঁড়ায়। একটা রিকশা এসে থেমেছে আর রিকশাতে তার অপরিচিতা বসে আছে।
-“আমাকে একটা হেল্প করবেন প্লিজ?”
-“জ্বি বলেন?”
ঈশা রিকশা থেকে নেমে সজিবের সামনে এসে বললো,
-“একটু এদিকে আসেন না প্লিজ।”
সজিবের কেন যেনো খটকা লাগলো তবুও ওর পিছনে এগিয়ে গেলো।
-“কিছু বলবেন?”
-“দেখুন আমি এই এলাকায় নতুন আসলে আমি রিকশায় উঠতেও চাই নি কিন্তু বাসায় তো যেতেই হবে। রিকশায় উঠার পর আমার কেন জানি ড্রাইভারকে সুবিধার মনে হচ্ছেনা। আপনি কি প্লিজ আমার সাথে যাবেন?”
সজিব একবার রিকশাওয়ালার দিকে তাকালো আবার ঈশার দিকে তাকালো। কি যেনো ভেবে বললো,
-“ঠিক আছে চলেন।”
-“থ্যাংক ইউ সো মাচ।”
দুজনেই রিকশাতে পাশাপাশি বসে আছে। একজনের গায়ের সাথে আরেকজনের গা বার বার লাগছে। ঈশার ভেতরটা যেনো কেমন করছে। সজিব যতোই সরে বসতে চেষ্টা করছে কিন্তু পরক্ষনেই রিকশার ঝাটকায় আবার এসে গায়ে লাগছে। অনেক্ষণ ধরে দুজনেই চুপচাপ বসে আছে। ঈশা নীরবতা ভেঙে কথা বলা শুরু করে দিলো,
-“আমি ঈশা, ঈশা আহমেদ আপনি?”
-“আমি সজিব ইসলাম।”
-“নাইস নেইম। আমরা এই এলাকায় নতুন এসেছি। এখানেই ভার্সিটিতে অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ছি। আপনি কি কোন জব ইন্টারভিউ দিতে গিয়েছিলেন?”
-“হু।”
-“হয় নি?”
-“না।”
-“পড়ালেখা কতদূর?”
-“এইতো মাস্টার্স করছি।”
-“ভালো করে জবের জন্য পড়েন দেখবেন কোথাও না কোথাও হয়েই যাবে।”
সজিব একটু মৃদু হাসলো। রিকশাতে বসে বসেই ভাবনার জগতে পাড়ি জমালো।
সেদিন ঈশার প্রানবন্ত হাসি দেখে কিছুক্ষণের জন্য ওর সম্পূর্ণ পৃথিবীটাই থমকে গিয়েছিলো। খুব ভালো লেগে গিয়েছিলো তাকে। ওর মাঝে কেমন অস্থিরতা কাজ করছিলো। তাই তো পিছু নিয়েছিলো। কিন্তু যখন দেখলো অনেক বড় একটা বাড়ির সামনে এসে রিকশাটা থেমেছে তখনি ও আর ভয়ে আগায় নি। জেগে জেগে খুব বড় স্বপ্ন দেখতে নেই এই স্বপ্নগুলো মুহুর্তেই ভেঙে যায়।
ঈশার ডাকেই ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে আসে।
-“আমি এসে গেছি। আপনি কি এই দিকেই যাচ্ছেন?”
ঈশার কথা শুনে সজিবের বুকটা কেঁপে উঠে। এখন যদি ওকে রিকশা ভাড়াটা দিতে হয়?
কিন্তু ওর কাছে তো ভাড়া নেই। মাত্র ২০টাকা আছে। এখন সে কি করবে?
-“এই যে কোথায় হারিয়ে গেলেন?”
-“হু? হ্যাঁ না আসলে আমি একটু পিছনে যাবো। আমার বাড়িটা পিছনে ফেলে এসেছি।”
-“ঠিক আছে মামা উনাকে সেখানেই নামিয়ে দিয়ে যেও। ওকে তো গেলাম আমি বাই। ভাগ্যে থাকলে আবারো দেখা হবে।”
ঈশা তো মনেমনে তাই প্রার্থনা করছে যেনো প্রতিটাদিন দেখা হয়।
-“না না আমি ওইটুকু হেঁটেই যেতে পারবো।”
-“আরে রিকশা যেহেতু সেদিকেই যাবে আপনি হেঁটে কেন যাবেন? ওটাতেই যান।”
-“আচ্ছা আসি আল্লাহ হাফেজ।”
-“হুম আল্লাহ হাফেজ।”
যা ভয় পাচ্ছিলো তাই হলো। এখন মায়ের কাছে কোন মুখে গিয়ে টাকা চাইবে? বর্ণালীও এই সময় বাসায় থাকবেনা। এসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতেই বাড়ির সামনে এসে গেলো। মামা থামান এসে গেছি। ভয়ে ভয়ে পকেটে হাত দিতে দিতে জিজ্ঞেস করলো,
-” ভাড়া কত হয়েছে?”
-“ভাড়া তো ওই আফা রিকশায় উঠনের আগেই দিয়া দিছে।”
রিকশাওয়ালা কথাটা বলেই রিকশা টান দিয়ে চলে গেলো। সজিব এখনো হতবাক হয়ে রিকশার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
`
ইভান বাইকের উপর একটু কাত হয়ে বসে আছে। আর সেই স্বপ্নের ভাবনায় ডুবে যাচ্ছে।
প্রত্যেক রাতেই ও স্বপ্নে দেখে একটা মেয়ের ছায়া। যার কোমড় বরাবর চুলগুলো বাতাসে এদিক ওদিক দুলিয়ে ওর সামনে দিয়েই হেঁটে ওকে হাতের ইশারায় ডেকে আবারো হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। শুধুমাত্র ওর ছায়া আর হাতে ছোট ছোট নানা রংয়ের ক্রিস্টাল পাথর ঝুলানো একটা ব্রেসলেট আর তার ঝুমঝুমি আওয়াজ ছাড়া স্বপ্নে আর কিছুই দেখেতে বা শুনতে পায় না। কিন্তু এই ব্রেসলেটের ঝুমঝুমি আওয়াজ সারাক্ষণ ওর কানে বাজে।
সেদিন যখন বর্ণালীকে দেখেছিলো প্রথম দেখেই প্রেমে পড়ে গিয়েছিলো। সব কিছু যেনো ওর স্বপ্নের সেই ছায়াবতীর সাথে মিলে যাচ্ছিলো।
কিন্তু হঠাৎ করেই ওর হাতের ব্রেসলেট দেখে আরো বেশি অস্থির হয়ে যায়। তাই তো সবকিছু ভুলে ওকে প্রপোজ করে বসে। এসব ভাবছে তখনি ইভানের ফোনে কল আসে।
-“হ্যাঁ মা বলো।”
-“কই তুই?”
-“এইতো কলেজে। কেন?”
-“আরে বিকেল হয়ে আসছে এখনো বাসায় আসছিস না যে?”
-“এইতো মা এখনি আসছি।”
ফোন রেখেই ইভান এদিক-ওদিক খুঁজতে লাগলো কিন্তু বর্ণালীকে কোথাও দেখতে পেলো না। পুরো কলেজে খুঁজে দেখলো কোথাও নেই। রাগে ইভানের মাথা টনটন করছে। বর্ণালী গেলো কোথায়? কলেজ ও তো ছুটি হয়ে গেছে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ২ঃ৩০ বেজে গেছে। সামনে এগুতেই পিয়নকে দেখতে পায়।
-“পিয়ন দা বর্ণালী ম্যামকে কোথাও দেখেছো?”
-“ম্যাডাম তো ২টার দিকেই চইলা গেছে।”
ইভানের মাথা যেনো বাজ পড়লো। রাগে দাঁতে দাঁত চেপে হাতের আঙুল মুঠিবদ্ধ করে দেয়ালে ঘুষি মারে। সাথে সাথে চার আঙুল ফেটে রক্ত বেরিয়ে যায়। পিয়ন এই অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে যায়৷ ইভান বুঝতে পারে পিয়ন ভয় পেয়েছে।
-“সরি পিয়ন দা। আচ্ছা আমি যাই।”
-“আইচ্ছা।”
ইভান কিছুদূর এগিয়ে গিয়ে আবার ফিরে আসে।
-“পিয়ন দা শোন তোমার কাছে কি বর্ণালী ম্যামের মোবাইল নাম্বার আছে?”
-“হু এই নেন মোবাইলে আছে।”
পিয়ন এখনো ভয়ের মাঝে আছে। তাই বলার সাথে সাথেই মোবাইল দিয়ে দেয়। নাম্বার নিয়ে ইভান বেরিয়ে যায়।
বর্ণালীর বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে ইভান। বাইরে থেকেই উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করছে বর্ণালীকে দেখা যায় কিনা। একটা ছেলে বাড়ির ভেতর থেকে বারবার ওর দিকেই তাকাচ্ছে। কিন্তু না অনেক্ষণ হলো বর্ণালীকে দেখা গেলো না৷ যেই ভাবলো কল দিবে তখনি ওর পিছনে একটা গাড়ি হর্ণ দিয়ে উঠে।
-“ইভু তুমি এখানে কি করছো?”
ইভান তার বাবাকে দেখে চমকে উঠে।
-“বা….বাবা হ্যাঁ এইতো…”
-“বাইক নষ্ট হয়ে গেছে নাকি?”
-“হ্যাঁ না মানে বাইকটার কেন জানি স্টার্ট বন্ধ হয়ে গেছে।”
-“চলো গাড়িতে উঠো বাইক দীপু এসে নিয়ে যাবে।”
-“এইতো বাবা দেখি আরেকবার স্টার্ট হয়ে যাবে।”
ইভান আরেকবার বাড়ির দিকে তাকিয়ে বাইক স্টার্ট দেয়। ফারহান আহমেদ মৃদু হেসে ড্রাইভারকে গাড়ি স্টার্ট দিতে বলেন। ইভান বাবার পিছু পিছু বাইক নিয়ে এগিয়ে যায়।
`
রাত ১০টা বাজে। ইভান এদিক-ওদিক হাঁটছে। কয়েকবার বর্ণালীর নাম্বার ডায়েল করে আবারো কেটে দিচ্ছে। নাহ একেবারে সরাসরি দাঁড়িয়ে কথা বলবো। এই কথা ভেবেই ইভান হলরুমের দিকে পা বাড়ায়। দরজার কাছে গিয়েই ঈশার সম্মুখীন হতে হয়।
-“কোথায় যাচ্ছেন প্রেমিক সাহেব?”
-“প্রেমিকার কাছে।”
-“কি নির্লজ্জ ছেলে এভাবে বড় বোনের সাথে কেউ কথা বলে?”
-“হাহাহা তাই নাকি? তুই আমার থেকে মাত্র দুই বছরের বড় বুমনি।”
-“হয়েছে তা মাকে কি বলে যাবি?”
-“কেন? মাকে বলার জন্য তো তুই আছিস।”
-“এ্যাহ আমি বলবো? বয়েই গেছে আমার।”
-“দেখ তোরই লাভ হবে আইসক্রিম নিয়ে আসবো।”
-“ঘুস দিতে চাচ্ছিস?”
-“না না ঘুস হতে যাবে কেন? এটা তো উপকারের কৃতজ্ঞতা জানানোর মাধ্যম মাত্র।”
-“হু আচ্ছা কিন্তু সাথে চকলেটও নিয়ে আসতে হবে।”
-“আচ্ছা বাবা তাই হবে।”
-“এই শোন ভাবীর জন্যেও নিয়ে যাস।”
ইভান লজ্জামাখা হাসি দিয়ে বাইক নিয়ে বেরিয়ে গেলো। ঈশা বসে টিভি দেখছে।
-“কিরে ইভান কোথায় গেলো এতো রাতে?”
-“এইতো মা আমি একটু বাইরে পাঠিয়েছি। আমার প্রয়োজনে।”
-“ওহ আচ্ছা।”
`
বাইরে আকাশের অবস্থা ভালো নেই। মেঘ চাঁদকে আড়াল করে আছে। এমন মনে হচ্ছে যেনো মেঘ তার গভীর ভালোবাসায় চাঁদকে বাহুডোরে লুকিয়ে রেখেছে। হয়তো যেকোন সময় মেঘ বৃষ্টি হয়ে ঝড়ে পৃথিবীকে তার নিজের মতো করে নতুন রুপে রাঙিয়ে দিয়ে যাবে।
বর্ণালীর বাসার থেকে কিছু দূর বাইক পার্ক করে ইভান কাঠের গেট ঠেলে ভেতরে ঢুকতে গেলেই গেটটা ক্যাচাং করে শব্দ করে উঠে৷ ভয়ে ওখানেই মাটিতে বসে পড়ে। কিন্তু না কেউ বের হলোনা ঘর থেকে। তাই ও আবারো দাঁড়িয়ে পা মেরে মেরে সুপারি বাগানের দিকে এগিয়ে যায়। সুপারি বাগানটা অনেক বড় জায়গা জুড়ে আছে। গাছগুলো অনেক সুন্দর সোজা দাঁড়িয়ে আছে। সবগুলো গাছের নিচের দিকে সাদা রং করে দেয়া আছে। বাগানের ভেতর যেতেই দেখতে পেলো মাঝখানে দুইটা নারকেল গাছ দাঁড়িয়ে আছে। গাছের নিচে রাউন্ড করে কিছু জায়গা পাকা করে ঢালাই দেয়া আছে। বসার জন্য পারফেক্ট জায়গা এটা। আর নারকেল গাছের পাশেই বড় বড় দুটো ল্যাম্পপোস্ট স্থাপন করা আছে। ল্যাম্পপোস্ট থেকে লাল রঙের মৃদু আলো নারকেল গাছের নিচের সম্পূর্ণ জায়গা আলোকিত করে আছে। অনেক রোমান্টিক লাগছে জায়গাটা। ওখানে বসেই ইভান বর্ণালীর ফোন নাম্বারটা ডায়েল করলো। কয়েকবার রিং হতেই বর্ণালী কল রিসিভ করে। রিসিভ করতেই ময়ূরকণ্ঠীর আওয়াজ ভেসে আসে।
-“আসসালামুয়ালাইকুম। কে বলছেন?”
এতোক্ষণে যেনো ইভানের প্রান ফিরে আসে। এই আওয়াজে মনের ভেতর কেমন একটা তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। ইভানের বুকটা কেমন ধুকপুক করছে।
-“হ্যালো কে বলছেন?”
-“একটু বাইরে আসবে?”
-“জ্বি? কে আপনি? কি বলছেন এসব?”
-“বাইরে এসো তাহলেই দেখতে পাবে।”
-“আপনি মনে হয় ভুল নাম্বারে কল দিয়েছেন। আগে নাম্বার দেখেন তারপর কল দেন।”
-“উহু আমি ঠিক জায়গাতেই কল দিয়েছি।”
-“আচ্ছা? তা কে আপনি?”
-“বাসন্তীর বসন্তপথিক।”
বর্ণালী বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। ভয়ে ফোনটা হাত থেকে খসে বিছানায় পড়ে যায়। পুরো শরীর থরথর কাঁপছে। ও আসলে কি ঠিক শুনলো নাকি ভুল? ফোন থেকে কিছু কিছু আওয়াজ আসছে।
-“বাসন্তী, এই বাসন্তী কি হলো? কথা বলো?”
বর্ণালী ফোন হাতে নিয়ে কানের মাঝে লাগায়। ভয়ে ভয়ে বলে,
-“হ্যা….হ্যালো।”
-“কি হলো ভয় পাচ্ছো?”
-“তু….তুত…..তুমি এ….এখানে কিভাবে এলে?”
-“বাইকে এসেছি। বাইরে এসো তাড়াতাড়ি নয়তো তোমার ঘরে চলে আসবো।”
-“কি সব যা-তা বলছো? তুমি এখানে কেন এসেছো?”
-“তোমার সাথে দেখা করতে। দেখো তাড়াতাড়ি বাইরে এসো প্লিজ। আমি আর অপেক্ষা করতে পারছিনা। অনেক অপেক্ষা করিয়েছো।”
বর্ণালী বই রেখে চশমা চোখে নিয়েই এক দৌড়ে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়। আশেপাশে তাকিয়ে দেখছে আসলেই এই পাগলটা এসেছে কিনা?
নাকি ওকে মিথ্যে বলছে?
কিন্তু পাগলটাকে কোথাও দেখতে পাচ্ছেনা।
💛
#______চলবে………
[ভালোবাসার মানুষদের ভালো রাখবেন এবং ভালো থাকবেন। ভুলত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here