#ফ্ল্যাট_নাম্বার_নয়_ছয়পর্বঃ ১৯

0
460

#ফ্ল্যাট_নাম্বার_নয়_ছয়পর্বঃ ১৯
#Lamyea_Chowdhury

মৌন থমথমে মুখে শায়েরীর দিকে তাকিয়ে বলল, “এই হচ্ছে ডাক্তার সায়াহ্ন শাহরিয়ার, আমার কাজিন।”
শায়েরী থতমত খেয়ে গেল। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছে তার। নির্বাক হয়ে সে নিশ্চুপ বসে রইল। সায়াহ্ন বিনম্র হাসি হেসে বলল, “ভালো আছেন?”
শায়েরী মুখ দিয়ে কোনো কথা বলতে পারলো না। মাথা ঝাঁকালো শুধু। মৌন আড়চোখে শায়েরীকে একবার দেখে নিলো। তারপর চোয়াল শক্ত করে সায়াহ্নকে বলল, “শায়েরী তোমাকে অন্য আরেকটা মেয়ের সাথে দেখেছে।”
সায়াহ্ন বিষয়টাকে হালকাভাবে নিয়ে বলল, “কলিগ হতে পারে, কেন বল তো?”
মৌন অবজ্ঞার হাসি হেসে বলল, “চাচা-চাচীকে বিয়েতে না করবার জন্য আর কোনো কারণ কি লাগবে?”
সায়াহ্ন প্রথমেই বিষয়টা ধরতে পারলো না। যখন বিষয়টা বুঝতে পারলো তখন বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে বলল, “কিসব আবোলতাবোল বলছিস মনু?”
শায়েরী কিছুটা বিচলিত বোধ করলো। কিন্তু কোথা থেকে কি শুরু করবে, কি করে দুজনকে বুঝাবে কিছুই ভেবে পেল না। মৌন শান্তস্বরে বলল, “আমার বান্ধবী তোমাকে জনসম্মুখে একটা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছে।”
সায়াহ্ন ভেতরে ভেতরে খুব ক্ষেপে গেল। কিন্তু, বাইরে তা প্রকাশ করলো না। ওয়েটারকে ডেকে কিছু খাবার অর্ডার করলো, বিলটাও মিটিয়ে দিলো। তারপর ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে বলল, “তোর মতের বিরুদ্ধে গিয়ে আমি বিয়েটা করব এটা তুই ভাবলি কি করে মৌন? তুই চিন্তা করিস না আমি একটা না একটা উপায়ে মা-বাবাকে ম্যানেজ করে নিবো।”
সায়াহ্ন কথা শেষ করে আর বসলো না। দ্রুত গতিতে পা চালিয়ে চলে যেতে নিলো। মৌন রাগতস্বরে গলা উঁচিয়ে বলল, “তুমি আমার প্রশ্নের জবাব দিয়ে যাও।”
সায়াহ্ন থমকে দাঁড়ালো। তারপর ঘাড় ঘুরিয়ে বলল, “তোমার প্রশ্নের কোনো জুতসই জবাব আমার কাছে নেই। কিন্তু, তোমার কাছে আমার একটা প্রশ্ন রয়েছে। বিয়ে করবেন না ভালো কথা, তাই বলে আমাকে আমার চরিত্র নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করবার সাহস হয় কি করে তোমার?”
মৌন তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো। রেগে গিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই শায়েরী মৌনর হাত চেপে ধরে বলল, “তুই চুপ কর প্লিজ। ভুলটা আমার ছিল।”
সায়াহ্ন ততক্ষণে চলে গেছে। শায়েরীও চেয়ার ছেড়ে হন্তদন্ত হয়ে সায়াহ্নর পিছন পিছন ছুটে গেল। সায়াহ্ন বাইক স্টার্ট দিচ্ছিলো। শায়েরী আহত কণ্ঠে পাশে দাঁড়িয়ে বলল, “আ’ম স্যরি ভাইয়া। ভুলটা আমার হয়েছিল। মৌনর কোনো দোষ নেই। আমি অন্য একজনকে…”
সায়াহ্ন শায়েরীর দিকে তাকালো না পর্যন্ত। শুনেও না শোনার ভান করে ভোঁ করে বাইক নিয়ে চলে গেল। শায়েরী মাথায় হাত দিয়ে রাস্তায় পায়চারি করতে লাগলো। তার দ্বারা এত বড় ভুল কি করে হলো সে ভেবেই পাচ্ছে না। কি করবে সে এখন? তার জন্য মৌন আর সায়াহ্নর ভিতর এত বড় ঝামেলা লেগে গেল। তাছাড়া, সায়াহ্নই’বা তাকে কেমন মেয়ে ভাবছে! যন্ত্রণায় মাথাটা কেটে ফেলে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে। তার জীবনেই কেন সবসময় এত এত ঝামেলা লেগে থাকে? রীতিমত হাত পা কাঁপছে তার। আগে মাথা ঠাণ্ডা করতে হবে, তারপর ঠাণ্ডা মাথায় পরিস্হিতি সামালাতে হবে। পাশেই একজন লেবুর শরবত বিক্রি করছে। এগিয়ে গিয়ে সে এক গ্লাস লেবুর শরবত দিতে বলল। শরবতের গ্লাসে চুমুক দিতেই পিছন থেকে কেউ একজন তার কাঁধ স্পর্শ করলো। শায়েরী ফিরে তাকালো। নীল জিন্স আর সবুজ ফতুয়া পরিহিতা মেয়েটাকে সে ঠিক চিনে উঠতে পারলো না। মেয়েটাই প্রথম কথা বলল, “তুমি নক্ষত্রের বোন শায়েরী না?”
শায়েরী মাথা ঝাঁকিয়ে মৃদু হেসে বলল, “হ্যাঁ, আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না।”
“আমি বিপাশা, নক্ষত্রের ব্যাচমেট।”
শায়েরী গাল ভরতি হেসে বলল, “ওহ আপনিই তাহলে বিপু আপু? আপনার কথা কত শুনেছি।”
বিপাশা উৎসুক হয়ে বলল, “তাই নাকি?”
“হ্যাঁ, প্রহর কত বলেছে আপনার কথা!”
বিপাশা ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে বলল, “আমিও প্রহর থেকেই তোমার কথা শুনেছি। মেয়েটা কিন্তু ভারি দুষ্টু।”
শায়েরী সায় দিয়ে বলল, “আলবত দুষ্টু। আমার ভাইবোনগুলা সবগুলো একটার চেয়ে একটা বেশি দুষ্টু।”
বিপাশা চোখের সানগ্লাস মাথায় গুঁজে বলল, “নক্ষত্রও দুষ্টু নাকি?”
শায়েরী হাসতে হাসতে বলল, “না না আমি ভাইয়ের কথা বলিনি। আমার ছোট ভাই শিকুর কথা বলেছি। শিকু তো প্রহর থেকেও এক ডিগ্রী উপরে।”
বিপাশা গলায় জোর দিয়ে বলল, “নক্ষত্র আরো বেশি দুষ্টু। সে হলো মিচকা শয়তান।”
শায়েরী স্মৃতিচারণ করে বলল, “হ্যাঁ, ছোটবেলায় নক্ষত্র ভাই সবসময় সব দুষ্টুমি করতো আর বকুনি শুনতে হতো আমায়। নিজের সব দোষ আমার উপর দিয়ে নিজে সাধু সেজে থাকতো।”
বিপাশা বলল, “এখনও এমনি করে। সব টিচারদের কাছে নিজে সাক্ষাৎ ফেরেশতা সেজে আমাদের বন্ধুদের ইবলিশের নানা নানি সাজিয়ে রাখে।”
শায়েরী আন্তরিকভাবে বলল, “আপু আপনাকে শরবত দিতে বলি? কিংবা অন্যকিছু খাওয়াই চলেন।”
বিপাশা শায়েরীর চিবুক ছুঁয়ে বলল, “না আপু আজ নয়। আজ আমার তাড়া আছে। আরেকদিন জম্পেশ খাওয়া দাওয়া চলবে। তবে তুমি আমাকে নয় আমি তোমাকে খাওয়াবো। আমি তোমার সিনিয়র তাই ট্রিটটাও আমার পক্ষ থেকেই হওয়া উচিত।”
শায়েরী ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে বলল, “ঠিক আছে।”
বিপাশা চোখ টিপে বলল, “অমন করে হেসো না, রাস্তাঘাটের সবাই মাথা ঘুরে পড়ে যাবে। এত সুন্দর হাসি দেখলে ছোকরাদের মাথা ঠিক থাকে নাকি?”
শায়েরী ছেলেবেলা থেকেই তার হাসির প্রশংসা শুনে এসেছে। তারপরও খানিক লজ্জা পেয়ে বলল, “ধ্যাত!”
বিপাশা তার ফোন নাম্বার শায়েরীকে দিয়ে বলল, “কথা হবে, আজ আসছি ডিয়ার।”
শায়েরী বলল, “আমার ফোন নাম্বার আছে আপনার কাছে?”
“হ্যাঁ আগে থেকেই আছে।”
শায়েরী হকচকিয়ে গেল কিন্তু মুখে কিছু বলল না। বিপাশা চলে গেল। মৌন শায়েরীর জন্য রেস্টুরেন্টের ভিতরে বসে অপেক্ষা করছিল। শায়েরী তাই দ্রুতপায়ে মৌনর কাছে গেল।
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here