#বিষাক্তফুলের_আসক্তি পর্ব-২৫

0
434

#বিষাক্তফুলের_আসক্তি পর্ব-২৫
লেখনীতেঃ তাহমিনা তমা

কাঁধে কারো হাতের স্পর্শে পেছনে ফিরে তাকালো তাজ, আহান দাঁড়িয়ে আছে তার পেছনে। সেদিন আহানও তো কেঁদেছিল, এভাবেই কেঁদেছিল তুতুলকে হারিয়ে।

নিজেকে সামলান তাজ ভাইয়া। এভাবে কাঁদলে কী তিতির ফিরে আসবে ? আসবে না, আর কোনোদিন ফিরে আসবে না। আসলে প্রবলেমটা কোথায় জানেন ? আমরা মানুষরা নিজের কাছের জিনিসটার মূল্য দিতে জানি না। যখন সেটা চিরতরে হারিয়ে যায় তখন তার মূল্য বুঝে হাহাকার করতে থাকি।

আহানের কথায় তাজের চোখের পানির পরিমাণ বাড়লো বই কমলো না। বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে নিলো ধ্রুবকে।

আহান ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে বললো, ভেতরে চলুন বাইরে অনেক ঠান্ডা পড়েছে। ধ্রুবর ঠান্ডার প্রবলেম আছে।

তাজ তাকালো ঘুমন্ত ধ্রুবর দিকে। এই মুখটার দিকে যতবার তাকাচ্ছে ততবার বুকটা পোড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে তাজের। তাজ উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলে আহান তাকে দাঁড়াতে সাহায্য করলো। তাজ এলোমেলো পায়ে এগিয়ে যেতে লাগলো বাড়ির দিকে। আহান তাকালো তিতিরের দিকে।

ধরা গলায় বললো, তুতুল তুই সত্যি খুব বেশি স্বার্থপর। এতগুলো মানুষের চোখের পানি তোর হৃদয় একটু নাড়াতে পারলো না।

কথাগুলো তিতির শুনতে পেলে হয়তো বললো, রাতের পর রাত আমার কান্নার আওয়াজ তো কেউ শুনতে পায়নি আহু। আমার চোখের পানিগুলো তো বরাবর সবার কাছে নাটক মনে হয়েছে। আমার আত্মচিৎকার তো পারেনি কারো হৃদয় স্পর্শ করতে। তবু দিনশেষে স্বার্থপর উপাধিটা কেনো আমার জন্যই থেকে যায় ? সত্যি কী স্বার্থপর শুধু আমি একাই ছিলাম ? মৌ আপু তাজকে ভালোবেসে রায়হানের সাথে অন্যায় করেও সে স্বার্থপর হয়নি। রায়হান মৌকে ভালোবেসে একটা নোংরা খেলা খেলে সবার জীবন এলোমেলো করে সেও স্বার্থপর হয়নি। অন্ধের মতো শুধু নিজের ক্যারিয়ারের দিকে দৌঁড়ে স্বার্থপর হয়নি তাজও। স্বার্থপর শুধু তিতির কারণ এই জীবন গল্পে বিষাক্তফুলের নাম যে তিতির। এই বিষাক্তফুল তার স্বার্থপরতার শাস্তি পেয়ে গেছে, এবার বাকি সবার পালা।

কী জানি আহান তিতিরের না বলা কথাগুলো শুনতে পেলো কিনা তবে চোখ থেকে তার নোনাজল ঠিকই গড়িয়ে পড়লো। আহান আর দাঁড়ালো না, তাজের পিছনে পিছনে ভিতরে চলো গেলো।

তিতির মনে হয় পেছনে থেকে বললো, এবার পালিয়ে যাচ্ছিস কেনো আহু ?

আহান তাজকে ড্রয়িংরুমের সোফায় বসিয়ে দিলো। দৌঁড়ে এগিয়ে এলো ইরিনা আর ইকবাল। তাদের আহান বলে গিয়েছিল সে তাজকে নিয়ে আসছে।

ইরিনা বললো, কোথায় গিয়েছিলি বাবা ?

তাজের মুখে কোনো উত্তর নেই, সে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ধ্রুবর দিকে। বিড়বিড় করে কিছু বলছে মনে হয়।

আহান ধ্রুবর দিকে হাত বাড়িয়ে বললো, দিন রুমে শুইয়ে দিচ্ছি বাবাইকে।

তাজ ফট করে ধ্রুবকে নিজের বুকে জড়িয়ে নিলো, না না ওকে কারো কাছে দিবো না আমি। ও আমার কাছে থাকবে। নাহলে ও তিতিরের মতো ফাঁকি দিয়ে চলে যাবে আমাকে একা রেখে।

ধক করে উঠলো আহানের বুক। তবে কী এবার যার আমানত তাকে ফিরিয়ে দেওয়ার সময় হয়ে গেছে ? কিন্তু এই ধ্রুবতারাটা ছাড়া আহানও যে দিকভ্রষ্ট হয়ে যাবে। পথ হারিয়ে ফেলবে জীবন চলার। তাজ ধ্রুবকে বুকে জড়িয়ে কিছু বিড়বিড় করছে। তাজের আচরণ অস্বাভাবিক লাগছে আহানের কাছে। ধ্রুবকে আর নিলো না তাজের বুক থেকে।

৩১.
দেখতে দেখতে কেটে গেলো কয়েকটা দিন। তাজ কেমন চুপ হয়ে গেছে। ধ্রুব ছাড়া কারো সাথে কথা বলে না তেমন। পুকুর পাড়ের সিঁড়িতে বসে তিতিরের কবরের দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে। আহান গিয়ে বসলো তাজের পাশে।

তাজ আনমনে বলে উঠলো, মুসকান এভাবে সবার হাসি কেড়ে নিয়ে চলে গেলো কেনো আহান ?

আহান চমকে উঠলো তাজের কথায়। তিতিরকে মুসকান বলে একমাত্র তিতিরের বাবা ডাকতো। তখন তিতিরের মুখে সারাদিন হাসি লেগেই থাকতো। পাঁচ দিনের নবজাত শিশুর হাসি দেখেই আবির মাহমুদ তার নাম রেখেছিল মুসকান আর তিতির নাম রেখেছিল তিতিরের মা। সবার কাছে তিতির নামটা বেশি পরিচিত হয়ে গেলেও আবির মাহমুদ মুসকান বলেই ডাকতো, তার হাসিতে যেনো আবির মাহমুদের দুনিয়া হাসতো। এটা মামির কাছেই শুনেছিল আহান। আহান ছিলো তিতিরের মাত্র পনেরদিনের বড়। তিতিরের সাথে এই মাহমুদ ভিলাতেই কাটতো তার সারাদিন।

আহান মলিন হেসে বললো, জানেন ভাইয়া তুতুলের জীবনের সুখের সময়ের মেয়াদকাল ছিলো খুবই কম। তার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় ছিলো শৈশবের নয় বছর। রাজা রানির সাত বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ঘন কুয়াশা ঘেরা এমনই এক শীতের সকালে নাকি জন্ম হয়েছিল এই মাহমুদ ভিলার রাজকন্যা তুতুলের। সবাই খুব ভালোবাসতো মেয়েটাকে। বাড়ির কাজের লোকগুলোরও চোখের মণি ছিলো তুতুল। তার হাসির আওয়াজে যেনো পুরো মাহমুদ ভিলা খিলখিলিয়ে হাসতো। রাজা, রানি, রাজকন্যা আর একটা সুখের সাম্রাজ্য। কিন্তু সেখানেই নজর লাগে আব্দুর রহমান চৌধুরী নামক লোভী অমানুষের। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তিনি আমার জন্মদাতা পিতা। মামার মেডিকেল ইকুইপমেন্টের বিজনেস ছিলো সাথে একটা হসপিটাল। সেখানেই ইন্টার্নি চিকিৎসক হিসাবে জয়েন করে আমার বাবা। আমার মা আনিতা মাহমুদের সাথে সেখানেই পরিচয় হয় আমার বাবার। পরিচয় থেকে ভালোলাগা একসময় তা ভালোবাসা। মামা সব জেনে গেলে অমত করেনি, বোনের সুখের কথা চিন্তা করে বিয়ে দিয়ে দেয়। আমার নানা-নানি ছিলো না, মায়ের বিয়ের পর মামা একা হয়ে যায়। এরপর মা নাকি মামিকে পছন্দ করে মামার সাথে বিয়ে দেন, সব ভালোই চলছিল। বাবা-মার বিয়ের এক বছরের মাথায় ভাইয়ার জন্ম। কিন্তু মামির বাচ্চা হচ্ছিল না, অনেক চিকিৎসা করেও লাভ হয়নি, শেষে আশা ছেড়ে দেয়। ভাইয়া বড় হতে থাকে, তার যখন পাঁচ বছর তখন আবার আমার আগমনের বার্তা পায় মা। এর মাস খানেক পর মামী বুঝতে পারে সেও মা হতে চলেছে। সেদিন নাকি মামা পুরো শহরের অসহায় মানুষদের পেট ভরে খাইয়েছিলো খুশি হয়ে। সবাই খুশি হলেও খুশি হতে পারেনি আমার বাবা। সে ভেবেছিলো মামার কোনো সন্তান না হলে সমস্ত সম্পত্তি তার হয়ে যাবে। যখন তুতুল হলো তখন বাবা ভাবলো যেভাবেই হোক তুতুলের সাথে ভাইয়ার বিয়ে দেবে আর সমস্ত সম্পত্তি দখল করবে। সে তার পরিকল্পনা অনুযায়ী চলতে থাকে। তুতুল হওয়ার পর মামী আর কনসিভ করতে পারেনি তাতে আমার বাবা খুশী হন। চলতে থাকে দিন ভালোভাবে। বড় হতে থাকি আমি আর তুতুল। আমি তুতুলকে ছাড়া কিছুই বুঝতাম না।

তাজ তাকালো আহানের দিকে। আহানের চোখদুটো জ্বলজ্বল করছে। যেনো আহান হারিয়ে গেছে সোনালী সেই অতীতে। আহানের চোখের ভাষা বুঝতে পারলো তাজ। মনে মনে প্রশ্ন জেগে উঠলো আহান ভালোবাসতো তিতিরকে ?

আহান মুচকি হেসে বললো, ভাইয়া আর আমার ছোটবেলা থেকে বনিবনা হতো না। ভাইয়া মাঝে মাঝে তুতুলকে বকতো তাতেই হাতাহাতি লেগে যেতো আমাদের দুজনের। আমাকে আর ভাইয়াকে একসাথে রাখা দিনদিন অসম্ভব হয়ে যাচ্ছিল। শেষে বাবা-মা বাধ্য হয়ে ভাইয়াকে ঢাকা পাঠিয়ে দেয় আমার ফুপুর কাছে। আমি ছোট ছিলাম তাই বাবা-মা আমাকে কাছে রাখে। সময়ের সাথে বড় হতে থাকি আমি আর তুতুল। নিজের বাড়ি রেখে আমি পরে থাকতাম তুতুলের কাছে। মাহমুদ ভিলায় আবার খুশীর সংবাদ আসে নয় বছর পর। তুতুলের ভাইবোন আসতে চলেছে, তুতুলের খুশী দেখে কে। সব মেয়েরা ভাই চায় কিন্তু তুতুল সবসময় বোন চাইতো। সে নিজের বোনকে কত ভালোবাসবে তা বলে বলে কান পঁচাতো আমার। আমি তাকে রাগানোর জন্য বলতাম তার বোনকে বিয়ে করবো, মাঝে মাঝে সেটা মেনেও নিতো তুতুল। সব ভালো লাগলেও এটা ভালো লাগতো না। ছোটবেলা থেকে তুতুলের সাথে বর বউ খেলে এখন অন্য কাউকে বউ বানাবো শুনেও তুতুল যখন রাগ না করে খুশী হতো আমার মুখ কালো হয় যেত।

আহান সত্যি হারিয়ে গেছে অতীতে। তাই সব যে তাজকে বলে দিচ্ছে সেদিকে তার খেয়াল নেই। তাজ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আহানের দিকে। কথাগুলো শুনতে তার ভালো লাগছে নাকি খারাপ সে নিজেই বুঝতে পারছে না।

আহানের কথাতেই আবার ঘোর কাটলো তাজের, দু’দিন ধরে টানা বৃষ্টি চলছিল সিলেটে। বিকেলে বৃষ্টিতে ভিজে তুতুলের সাথে খেলে বাড়ি চলে যাই আমি৷ পরদিন যখন এই বাড়িতে আসি চারদিকে কেমন নিস্তব্ধতা। একরাতে আমার চেনা জীবন বদলে গেলো। বেলা গড়াতেই অ্যাম্বুলেন্স করে বাড়ি ফিরলো মামা মামির র*ক্তা*ক্ত লা*শ।

গলা ধরে এলো আহানের। তাজ বুঝতে পারছে আহানের বলতে কষ্ট হচ্ছে।

তাজ আগ্রহ নিয়ে বললো, তারপর ?

জানাজানি হলো মামার বিশ্বস্ত বডিগার্ড নুরুল মামা মামিকে খু*ন করেছে আর তুতুলের কোনো খোঁজ নেই।

একটু দম নিলো আহান তার চোখ টলমল করেছে পানিতে, আসলে বাবা নাকি মামাকে মজার ছলেই ভাইয়া আর তুতুলের বিয়ের কথা বলেছিলো। কিন্তু মামা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলো বাবা যেনো এসব মাথায় না আনে। তার কাছে ভাগ্নে ভাগ্নের জায়গায় আর মেয়ের জামাই তার জায়গায়। বাবা বুঝতে পেরে যায় তার পরিকল্পনা কাজ করবে না। এদিকে ভাবতে থাকে এবার যদি ছেলে হয় তাহলে তো সব পরিকল্পনা ভেস্তে যাবে। তাই পথের কাটা সরিয়ে দিয়েছিলো। তুতুলকে হারিয়ে তখন আমি পাগল প্রায়। একসময় অতিষ্ঠ হয়ে বাবা আমাকে পাঠিয়ে দিলো দূরদেশ লন্ডন।

টপটপ করে পানি পড়ছে আহানের চোখ থেকে। ছেলেদের কাঁদতে হয় না আরো একবার মিথ্যা প্রমাণ করলো এই কথা।

তাজ নিজের জিহবা দিয়ে শুকনো ঠোঁট ভিজিয়ে বললো, এসব তুমি কীভাবে জানলে ?

আহান শান্ত গলায় বললো, বাবা বলেছে নিজের মুখে।

তাজ চমকে উঠলো আহানের কথায়, তোমার বাবা ?

আহান নিজের চোখ মুছে বললো, ভাইয়া তুতুলের খোঁজ পাওয়ার কয়েক মাসের মাথায় বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ে। বাবা কিংবা ভাইয়া কারো সাথেই আমার তেমন ভালো সম্পর্ক নয়। তাই তাদের সাথে আমার যোগাযোগ হয়ে উঠতো না খুব একটা। বাবা অসুস্থ এই খবরও আমি জানতাম না। আন্ডারওয়ার্ল্ডের সাথে জড়িত ছিলো বাবাও। সেখানেই এক ঝামেলায় বাবার হাতে গুলি লাগে। ডায়াবেটিকস ছিলো বাবার, ক্ষত স্থানে পচন ধরে যায়। একসময় কেটে ফেলতে হয় হাত, তবে সুস্থ হয় না পুরোপুরি বরং বাড়তে থাকে। ধীরে ধীরে শরীরে ছড়িয়ে পরে এটা, অবস্থা খারাপের দিকে যায়। দীর্ঘ দুই বছর ধুঁকে ধুঁকে নিজের পাপের ফল ভোগ করে বাবা। যখন নিজের ভুল বুঝতে পারে তখন তুতুলের সাথে দেখা করতে চায়। তুতুল আমার সাথে যাওয়ার এক মাস পরেই বাবার অসুস্থতার কথা জানতে পারি। তিতির কখনো আমার বাবার পাপের কথা আমাকে বলেনি। ও চায়নি আমি আমার বাবাকে ঘৃণা করি। কিন্তু বাবা নিজের প্রায়শ্চিত্ত করার জন্য তুতুলের কাছে মাফ চায় আর সব সত্যি স্বীকার করে। সবচেয়ে খারাপ লেগেছে কী জানেন ভাইয়া ?

তাজ কাঁপা গলায় বললো, কী ?

আহান তাচ্ছিল্যের সুরে বললো, আমার মাকেও খু*ন করেছিলো আমার বাবা। যাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলো তাকেও সম্পত্তির লোভে শেষ করে দিয়েছে। মামা-মামীকে খু*ন করার বছর দুয়েক পরে মা সব সত্যিটা জানতে পেরে যায়। মা ভেঙে পড়েছিলো প্রাণপ্রিয় স্বামীর এমন জ*ঘ*ন্য রুপ দেখে। পুলিশের কাছে সব বলে দিতে চাইলে মাকে গলা টিপে খু*ন করেছে আমার বাবা নামের অমানুষটা। মায়ের কথাটা ভাইয়াও জানে না। বাবা আমাদের জানিয়েছিলো মা হার্ট অ্যাটাক করে মারা গেছে। নিয়তি দেখেছেন ভাইয়া, আমার বাবা যে হাতে গলা টিপে নিজের ভালোবাসার মানুষের জীবন নিয়েছিলো। মৃত্যুর সময় সেই হাত উনি সাথে নিয়ে যেতে পারেননি। এই পৃথিবীর বুকে থাকতেই সেই হাত পঁচে গলে গেছে। পাপ করে কেউ ছাড় পায় না। আমার বাবাকে এই পৃথিবীর কোনো দেশের আইন শাস্তি দিতে পারেনি কিন্তু উপরওয়ালার আদালতে ঠিক শাস্তি হয়েছে তার। জীবিত অবস্থায় একটু একটু করে পঁচে গলে গেছে তার শরীর। ভ*য়ং*ক*র মৃ*ত্যু হয়েছে তার।

তাজ হাত রাখলো আহানের কাঁধে। ছেলেটার ভেজা চোখদুটো টকটকে লাল বর্ণ ধারণ করেছে। হয়তো রাগে কিংবা কষ্টে।

আহান নিজের চোখ মুছে নিজেকে শক্ত করে নিলো, আগামীকাল দুপুরের ফ্লাইটে আমরা লন্ডন ব্যাক করছি।

বুক কেঁপে উঠলো তাজের। এতগুলো বছর অপেক্ষা করে একজনের দেখা না পেলেও অন্যজনকে ফিরে পেয়েছে। তাকেও কী হারাতে হবে এবার ? তাজ এবার আর বাঁচবে না ধ্রুবকে হারিয়ে ফেললে।

আহান তিতিরের রেখে যাওয়া ডায়েরিটা নিজের সাথে করেই নিয়ে এসেছিলো। যতবার বাংলাদেশে আসে সাথে করেই নিয়ে আসে৷ কখন তাজের সাথে দেখা হয়ে যাবে এই ভেবে। ডায়েরিটা দিতেই এখন তাজের কাছে আসা আহানের।

ডায়েরিটা এগিয়ে দিলো তাজের দিকে, এটা আপনার জন্য রেখে গেছে তুতুল৷ জানি এটা এতে কী আছে, তবে আশা করি অনেক প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন। এটাও জানতে পারবেন আপনি ধ্রুবকে পাবেন কী, পাবেন না। আমি কেবল তুতুলের ইচ্ছে পূরণ করবো।

আহান উঠে চলে গেলো তাজের কাছে থেকে। তাজ তাকিয়ে আছে ডায়েরির দিকে। নীল রঙের ডায়েরির উপরে লেখা “বিষাক্তফুলের আসক্তি ”
তাজ আলতো হাতে স্পর্শ করলো লেখাটা। সামনে একবার তিতিরের কবরের দিকে তাকালো। হাত কাঁপছে তাজের, কী লেখা আছে এটাতে ? এই ডায়েরির উপরই কী নির্ভর করছে ধ্রুবকে তাজ পাবে কিনা ?

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here