হারাতে_চাই_না_তোমায় #পর্ব-৪৩

0
664

#হারাতে_চাই_না_তোমায়
#পর্ব-৪৩
#লেখিকাঃ_উম্মে_বুশরা

রাত ৮
আরু পেট চেপে শুয়ে আছে।বিকেলে ওর পিরিয়ড হয়েছে।সেই তখন থেকে পেট চেপে শুয়ে আছ।সারা শরীর ব্যাথা।বিশেষ করে পেটে।
আয়ান মাত্র এলো অফিস থেকে।এসে দেখে আরু শুয়ে আছে।এই সময় আরুকে শুয়ে থাকতো দেখে আয়ান অনেকটা অবাক হলো।কিন্তু এখন আরুকে কিছু জিজ্ঞেস না করে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।আয়ান ফ্রাশ হয়ে এসে দেখে আরু এখনো শুয়ে আছে।তাই আয়ান আরুর কাছে গিয়ে বললো,
আয়ানঃ কি হয়েছে?
আরুঃ জানি না।
আয়ানঃ জানি না মানে?

আরু এবার বিরক্ত হয়ে রেগে বললো,
আরুঃ বললাম তো জানি না।বিরক্ত করছেন কেনো?যান এখান থেকে।

আরুর এমন এমন ব্যবহার আর কথা শুনে আয়ানের মন খারাপ হয়ে গেলো।আরুর মনে এখনো ওর জন্য কোনো জায়গা তৈরি করতে পারে নি।আয়ান উঠে যেতে নিতেই দেখলো আরু পেট চেপে ধরে আছে।আয়ান কিছু একটা ভেবে মুচকি হেসে আরুর মাথয় একটু হাত বুলিয়ে দিয়ে উঠে চলে গেলো।
আরু একবার মাথা তুলে তাকিয়ে দেখলো আয়ানকে চলে যেতো।কিন্তু আরু কিছু বললো না।নিজের যন্ত্রণায় ও শেষ হয়ে যাচ্ছে।

প্রায় অনেকক্ষন পর,
আরু হটাৎ ওর পেটে গরম কিছু অনুভব করছে।চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে আয়ান ওর পাশে বসে হট ওয়াটার ব্যাগ দিয়ে ওর পেট হালকা চেপে রেখেছ।আরু অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো আয়ানের দিকে।আয়ানকে তো কিছু বলে নি ব্যাথা নিয়ে তাহলে আয়ান বুঝলো কী করে ওর ব্যাথা হচ্ছে।
আরুকে এমন অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে আয়ান বললো,
আয়ানঃ এতো অবাক হওয়ার কিছু নেই।এমনিই সব বুঝে গেছি।এখন এটা ভালো করে চেপে রাখো। আরাম লাগবে।
আরু এবার আরো অবাক হলো।আয়ান জানলো কীভাবে ও এটা ভাবছে।আরুকে আরো অবাক করে দিয়ে আয়ান বললো,
আয়ানঃ এতো জোড়ে জোড়ে ভাবলে সবটাই বুঝতে পারি।এখন ভাবাভাবি বাদ দিয়ে দেখো তোমার জন্য কী এনেছি।

আরু উৎসুক হয়ে তাকিয়ে রইলো আয়ানের দিকে।আয়ান আরুর সামনে ফুচকা ধরলো।ফুচকা দেখে আরু অনেকটা খুশি হয়ে গেলো।ও ফুচকা তে হাত দিতে গেলেই আবার কী ভেবে যেনো হাত উঠিয়ে নেয়।আয়ান এতোক্ষন সবটাই খেয়াল করলো।আরু হাত উঠিয়ে নিতেই আয়ান ভ্রু কুচকে এলো।
তারপর আরু বিছানা থেকে উঠতে নিলেই আরুর হাত ধরে আটকিয়ে দিলো।আরু জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলে আয়ানের দিকে।আয়ান বললো,
আয়ানঃ এখন উঠতে হবে না।উঠলেই আবার ব্যাথা বাড়বে।তুমি বসো আমি খাইয়ে দিচ্ছি।

আরু তাকিয়ে রইলো আয়ানের দিকে।মানুষটা কিভাবে এতো ছোট ছোট বিষয় খেয়াল করে।আরুর অনেক ভালো লাগছে আয়ানের এই বিষয় গুলো।আয়ান ওকে খাইয়ে দিচ্ছে আর আরু খাচ্ছে।
আয়ান বললো,
আয়ানঃ তোমার জন্য টক বেশি করে এনেছি।একদম টক,ঝাল,মিষ্টি।যেমনটা তুমি পছন্দ করো।

আরু অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।ও ভাবছে এটাও আয়ানের মনে আছে।আরু বললো,
আরুঃ আপনার এখনো মনে আছে এটা আমার পছন্দ।

আয়ান কিছু না বলে আরুর দু হাতে চুমু খেলো।আরুর খুব ভালো লাগছে আয়ানের এই ছোয়া।আরুর মুড সুইংয়ের কারনে আজ আয়ানের এই ছোট ছোট ছোয়া,ভালোবাসা গুলো ওর অনেক ভালো লাগছে।একটু আগে যে আয়ানের সাথে খারাপ ব্যবহার করলো তা ভুলেই গেলো।আরুর মনে হচ্ছে এই সময়টা যেনো এখানেই থেমে যাক।আরু আবার বললো,
আরুঃ কি হলো বলুন?
আয়ানঃ উফ!বউ তুমি বড্ড বেশি কথা বলো।এখন চুপচাপ খাও।আর দেকো তোমার জন্য কী এনেছি।

আরু দেখে ড্রাইভার একটা কার্টন নিয়ে রুমে ঢুকছে।আরু তা দেকে ভ্রু কুচকে বললো,
আরুঃ এটাতে কী?
আয়ানঃ প্যাড(ফুচকা বানাতে বানাতে)
আরুঃ কী😳?এতো গুলো?আপনি কী পাগল?
আয়ানঃ কেনো কম হয়ে গেছে?সমস্যা নেই কাল গিয়ে আবার নিয়ে আসবো।
আরুঃ আরে আমি তা বলিনি।এগুলোর এখন কোনো দরকার ছিলো না।আমার যা আছে তা দিয়ে এইবার চলে যেতো পরে না হয় আনা যেতো।
আয়ানঃ তুমি বড্ড বেশি বকো।আর আমি তোমার জন্য কিছু করি নি।আমি আম……

আয়ানকে বলতে না দিয়ে ওর আরু বললো,
আরুঃ ‘আমি আমার বউয়ের এনেছি।তুমি বলার কে।’
এটাি তো বলবেন তাই না?

আয়ান চোখ ছোট ছোট করে বললো,
আয়ানঃ সব মুখস্থ তাই না?
আরুঃ হুম সব😊
আয়ান হালকা হেসে আরুর নাক টেনে দিয়ে বললো,
আয়ানঃ পাগলি।অনেক হয়েছে আর খেতে হবে না।এবার রাখো।
আরুঃ না আরেকটু প্লিজ🥺
আয়ানঃ না বেশি খেলে সমস্যা হবে।

আরু মুখ গোমড়া করে বসে রইলো।আয়ান তা দেখে হেসে আরুকে পানি খাইয়ে বললো ‘ও না আসা পর্যন্ত যেনো আর না উঠে।’ আরু ভদ্র মেয়ের মতো মাতা নেড়ে বললো ঠিক আছে।আয়ান নিচে বলে গেলে ডিনার করতে।নিচে গিয়ে সবাই আরুর কথা জিজ্ঞেস করলে আয়ান বলে ওর শরীর একটু খারাপ তাই আসবে না কিন্তু আয়ান খেয়ে ওর জন্য নিয়ে যাবে।
এই কথা শুনে আর কেউ কিছু বলে নি।
আয়ান খেয়ে আরুজ জন্যও খাবার নিয়ে গেলো।রুমে এসে আরুকে খাইয়ে দিয়ে প্লেট গুলো নিচে রাখতে গেলো।এসে এসে দেখে আরু বিছানা থেকে নামছে।আরুকে নামতে দেখে আয়ান তাড়াতাড়ি ওর কাছে এসে বললো,
আয়ানঃ কোথায় যাচ্ছো?
আরুঃ ওয়াশরুমে।
আয়ানঃ দাঁড়াও আমি নিয়ে যাচ্ছি।
বলেই আয়ান আরুকে কোলে তুলে নিলো।আরু পুরো অবাক হয়ে গেলো।আরু বললো,
আরুঃ আরে কী করছেন?নামান।
আয়ানঃ তোমার যেতে কষ্ট হবে।তাই চুপ থাকো।
আরুঃ এখান থেকে এখানে যেতে একটুও কষ্ট হবে না।
আয়ানঃ চুপ।
আরুঃ আপনি এমন ভাবে আমাকে ট্রিট করছেন মনে হচ্ছে আমি প্রেগন্যান্ট।

আরু কী বলেছে নিজেও জানে না।এতোক্ষনে ওয়াশরুমের সামনে এসে পরেছে।আরুকে নামিয়েও দিয়েছিলো।আরুর এখন হুস এলো ও কি বলেছে।তাই তাড়াতাড়ি মুখ নিজের মুখ চেপে ধরলো।আয়ান আরুর কথা শুনে ওর দিকে ঝুঁকে বললো,
আয়ানঃ তাহলে চলো প্রেগন্যান্ট করে দি।
আরুঃ অসভ্য 😤
আয়ানঃ কিছু না বলে যেহেতু অসভ্য বলেছো তাহলে তো অসভ্যতামি করতেই হয়।কী বলো?(ভ্রু নাচিয়ে নাচিয়ে)

আরু এমন কথা শুনে তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে চলে গেলো।আয়ান হাসতে লাগলো ওর কথা শুনে।
———–
আরু ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে আয়ান শুয়ে পরেছে।তাই আরুও চুপচাপ শুয়ে পরলো।কিছুক্ষন পর আরু অনুভব করলো একটা হাত ওর পেটের উপর।আবার বুঝলো গরম কিছু ওর পেটের উপর।আরু দেখে আয়ান হট ব্যাগ ওর পেটের উপর রেখে ওর হাত দিয়ে রেখেছে।আরু বললো,
আরুঃ আরে কী করছেন?
আয়ানঃ চুপ।তুমি ঘুমাও।
আরুঃ আরে এটা রেখে দিন।আমার কষ্ট হচ্ছে না।
আয়ানঃ তোমাকে ঘুমাতে বলেছি না।(চোখ রাঙিয়ে)

আয়ানের এমন কথা শুনে আরু আর কিছু বলতে পারলো না।যদিও আরুর ব্যাথা করছে।তাই আরু আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে পরলো।
আরুকে ঘুমিয়ে পরতে দেখে আয়ান ব্যাগটা সরিয়ে ফেললো।আয়ানও ঘুমিয়ে পরলো।কিন্তু ঘুম আসছে না।তাই আরুকে টেনে ওর বুকে নিয়ে নিলো।এখন ঘুম আসছে।আরুকে বুকে নিয়ে আরু গালে,কপালে,চোখে সরা মুখে চুমু খেলো।
————–
সকাল ৭ টা।
আরুর ঘুম ভাঙলো আগে।ও উঠে দেখে ও আয়ানের বুকে।আরু ভালো করে দেখে আয়ানকে।আয়ানের কালচে লাল ঠোঁট ঘুন সিল্কি চুল গুলো কপালে পরে আছে।আরু একমনে আয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।আরু ওর এক হাত আয়ানের মুখের উপর নিলো।
আয়ান হটাৎ আরুর হাত ধরে ফেললো।আরুর এমন হাত ধরায় ও ভয় পেয়ে গেলো।আয়ান বাঁকা হেসে বললো,
আয়ানঃ সুন্দর ছেলে দেখে গিলে খাচ্ছো।জানি আমি সুন্দর।সব মেয়েরাই আমার জন্য পাগল।😎
আয়ানের কথায় আরু থতমত খেয়ে গেলো।কিন্তু নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,
আরুঃ এ্যহহহহ…আসছে।সাদা ভাল্লুক 😏।

আরুর কথা শুনে আয়ান ওকে আরো চেপে ধরলো।তারপর বললো,
আয়ানঃ এসব কী ভাষা?সাদা ভাল্লুক মানে কী?
আরুঃ উফফ..উঠুন উপর থেকে।ভাল্লুক এমনি এমনি বলেছি নাকী?
আয়ানঃ এই জন্যই বলি বেশি বেশি খাও।এরপর থেকে তো আমার ওজন তোমার সয্য করতে হবে।
আরুঃ মানে।(না বুঝে)

আয়ান দুষ্টহেসে আরুর কানের কাছে গিয়ে বললো,
আয়ানঃ তুমি যেই সফট এন্ড হট এতোদিন আর নিজেকে ক….
আরুঃ উফফ।চুপ করুন লুচু,অসভ্য।

আয়ানের মুখ চেপে ধরলো।আয়ান হেসে আরুর হাতে চুমু খেয়ে বললো,
আয়ানঃ বিয়ে হয়ে গেলো এতোদিন অথচ বাসর হলো না।কিন্তু এখন যদি তুমি লুচু বলো তাহলে তো অবশ্যই লুচুগিরী করতেই হয়।কী বলো?(ভ্রু নাচিয়ে)
আরুঃ চুপ😤

আয়ান মুচকি হেসে আরুর মাথাটা ওর বুকের সাথে চেপে রেখে বললো,
আরুঃ আরো ঘুমাও।এমনিতেই শরীর খারাপ।আরো পরো উঠো।

আরু কিছু না বলে আবার ঘুমিয়ে পরলো।আয়ান ও আবার ঘুমিয়ে পরলো।
——–
সকাল ১০ টা,
আয়ান ঘুম থেকে উঠে দেখলো আরু পা দুটি গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে।আয়ান তা দেখে মুচকি হাসলো।এই ঘুম কুমারী এখন ওর বুকে রাজত্ব করছে।এই ঘুম কুমারীকে পেতে ওর কতো কিছু করতে হলো।পুরো ৫ বছর ওর থেকে দূরত্ব ছিলো।এই ৫ বছর কতো যেনো ৫ যুগ।ফাইনালেী ওর মায়াপরী ওর বুকে।আয়ান এসব ভেবে আরুকে আরো কাছে টেনে নিলো।এমন ভাবে ধরলো যেনো একটু ছাড়া পেলে আরু কোথাও হারিয়ে যাবে।আয়ান আরুর চুলে মুখ ডুবিয়ে দিলো।আয়ানের মনো হলো যেনো এক মিষ্টি ফুলের সুভাস আসছে।আয়ান আরুর সারা মুখে চুমু খেলো।আয়ানের মনে হচ্ছে সারাজীবন চুমু খেলেও ওর মন ভারবে না।আয়ান ওর সারা মুখে চুমু খেলেও ঠোঁটে দিলো না।শুধু আঙ্গুল দিয়ে স্লাইড করে দিলো।আরু যখন নিজ ইচ্ছায় ওকে এই অমৃত পান করতে দেবে সেই দিন ও পান করবে।সেই দিনের জন্য আয়ান অপেক্ষা করছে।
আয়ান এসব ভেবে আরুর কপালে চুমু খেয়ে উঠে গেলো।
————–
বিকাল ৪ টা
আরু বেলকনিতে বসে আছে।আজ সারাদিন কেমন যেনো ভালো লাগা,খারাপ লাগ নিয়ে।মুড সুইংয়ের জন্য কখনো মন ভালো আবার খারাপ।এমনই কেটেছে।ও সকালে উঠে দেখে আয়ান নেই।তাই ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে ড্রেসিং টেবিলের আয়ানায় ছোট চিরকুট লাগানো।আরু হাতে নিয়ে দেখে
বউ উঠে ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করে নিও।ঠিক মতো করবে।সরি তোমাকে না জানিয়ে এসে পরেছি।এতো সুন্দর করে ঘুমালে তাই জাগাতে ইচ্ছে করেনি।থাকে সন্ধ্যায় দেখা হবে।লাভ ইউ।উম্মাহ

আরু পড়ে হেসে দিলে।তারপর নিচে গিয়ে নাস্তা করে নিলো।এভাবেই সারাদিন কাটলো।
করো কথায় ঘোর কাটলো আরুর।তাকিয়ে দেখে চম্পা।
চম্পাঃ ভাবি কারা যেনো এসেছে।খালাম্মা কইছে নিচে যাইতে।
আরুঃ আচ্ছা আসছি।

আরু সিঁড়ি নিচে নামতে দেখে ২/৩ জন মহিলা।আরু একটু ভ্রু কুচকালো।পরে বুঝলো এরা হলো তথাকথিত পাশের বাসার আন্টি।যাদের কাজ হলো এইখানের কথা ওইখানে লাগানো,কারো সুখ সয্য করতে না পারা।আরু এসব বাদ দিয়ে নিচে গেলো।আরু গেলে আয়ানের মা বললো,
আফিয়া রাহমানঃ আরু তোমার শরীর এখন কেমন?
আরুঃ ভালো মা।
আফিয়া রাহমানঃ মা এরা তোমাকে দেখতে এসেছে।

আরু অনেক আগেই বুঝতে পেরেছে।কিন্তু কিছু না বলে ওনাদের সালাম দিলো।ওনারাও ওকে কিছু জিজ্ঞেস করলো।আরুর এখন বিরক্ত লাগছে।ও এখান থেকে উঠতে চায়।কিন্তু পারছ না।এমন সময় দেখলো আয়ানের মা উঠছে তাই আরু বললো,
আরুঃ মা কোথায় যাচ্ছেন?
আফিয়া রাহমানঃ দেখি চম্পা কতদূর ব্যবস্তা করলো।
আরুঃ ওও।আপনি বসুন আমি যাচ্ছি।
আফিয়া রাহমানঃ আরে তোমার শরীর এমনিতেই খারাপ।তোমার কিছু করতে হবে না তুমি বসো।
আরুঃ আপনি বসুন।কিছু হবে না।

বলেই আরু উঠে চলে।ও একটু সরতেই মহিলাদের কথা শুরু হলো।একজন বললো,
মহিলাঃ ভাবি বউকে এতো লাই দিবেন না।এতো লাই দিলে কবে দেখবেন আপনাদের পায়ের তলায় নিয়ে রাখবে।
আফিয়া রাহমানঃ আরে না ভাবি।আরু ওই রকম মেয়ে না।
আরেক মহিলাঃ নতুন নতুন সবাই ভালো ভাবি।কিন্তু কয়েক বছর গেলে তারপর বুঝা যায়।সেই রকম আপনিঔ এখন কিছু বুঝবেন না।
আরেক মহিলাঃ তা ভাবি শুনলাম বউ নাকী তোমার ছেলেকে এখনো মেনে নেয় নি নিজের স্বামী বলে।
আফিয়া রাহমানঃ আরে না তেমন কিছু না।
আরেক মহিলাঃ তাল শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে হবে না।এসব কথা চাপা থাকে না।বুঝেছেন।
আরেক মহিলাঃ হায় আল্লাহ!কী বলেন ভাবি?মেনে নেয়নি মানে?কেমন মেয়ে গো।
মহিলাঃ হ্যা তাহলে আর বলছি কী?আবার শুনলাম বউ এতো বছর বিদেশে ছিলো।নিজের পরিবার ছেড়ে।
আফিয়া রাহমানঃ ওটা আয়ানের কারনেই ও ওর পরিবার ছেড়ে এতো দূরে ছিলো।কিন্তু ওখানে ওর মামা ছিলো।
মহিলাঃ ছাড়েন তো ভাবি।মামা থাকলেই কী আর না থকলেই কী।মামা কী সবসময় নজরে রেখেছে।আর আয়ানের জন্য যে বলছেন।ছেলেরা এমন একটুআধটু করেই তাই বলে চলে যাবে।
মহিলাঃ দেখো আয়ানকে মেনে না নেওয়ার পিছনে নিশ্চয়ই ওখানে কিছু করে এসেছ।বাপ ভাই তো ওখানে কেউ ছিলো না।সুযোগ ও পেয়েছে ভালোই।তাই ওকে মানতে পারছে না।
মাহিলাঃ হুম আমারো তাই মনে হয়।আজকালর মেয়ে তো বিশ্বাস করা যায় না।আপনাকে ভাবি কতো বার বলছিলাম আয়ানের জন্য আমার মেয়েকে নিন।আমার মেয়ে সব দিক দিয়ে আয়ানের সাথে ঠিকঠাক।
আফিয়া রাহমানঃ আয়ানের যা ঠিক মনে হয়েছ করেছে।ওর উপর আমরা জোর করতে পারি না।

আয়ানের মা’র বিরক্ত লাগছে এই মহিলাদের কথায় কিন্তু কিছু বলছে না সন্মানের জন্য।
এর মাঝেই চম্পা এলো খাবার নিয়ে।আয়ানের মা চম্পাকে জিজ্ঞেস করলো,
আফিয়া রাহমানঃ চম্পা আরু কোথায়?
চম্পাঃ ভাবি তো রান্নাঘরে আমারে দিয়ে পাঠালো এগুলো।

চম্পা চলে গেলো।মহিলাগুলো আবার বললো,
মহিলাঃ দেখেছেন কেমন মেয়ে।গুরুজনেরা এসেছে এসে কথা বলবে তা না কাজের লোক দিয়ে খাবার পাঠালো।কেমন শিক্ষা দিয়ে বাপ মা পাঠিয়েছে।

আরু আর চুপ থাকতে পারলো না।এতোক্ষন ও রান্নাঘরে দাড়িয়ে সবটা শুনেছ।রান্নাঘর থেকে সবটা শুনেছে ও।কিন্তু এখন যখন ওর বাবা মা’কে নিয়ে বললো তাই ও চুপ থাকতে পারলো না।আরু সবার সামনে এসে বললো,
আরুঃ সরি আন্টি মাপ করবেন।আমার বাবা মা আমাকে যথেষ্ট শিক্ষা দিয়েছে।আর কোথায় গিয়ে কাকে কি বলতে হয় তা খুব ভালো করে শিখিয়েছে।কিন্তু আমার মনে হয় আপনাদের সেই শিক্ষা নেই।তাই আমার বাবা মা’র শিক্ষা দেওয়া সম্পর্কে কোনো কথা বলবেন না।আর আমি বিদেশে কি করেছি না করেছি তা আপনাদের না জানলেও চলবে।কারন আমি আপনাদের ঘরে থাকতেও যাবো না আপনাদের টা খেতে ও যাবো না।যাদের কাছ থাকবো তারা যেহেতু আমাকে কিছু বলে নি তাই এইসব থার্ড পার্সন দের কথায় আমার কিছু যায় আসে না।আমার স্বামীকে আমি মেনে নিতে পারি নি এটা সম্পুর্ন আমাদের ব্যাপার আপনাদের এখানে কথা বলার জন্য কেউ ইনভাইট করে নি।তাই অন্যের সংসারে গিয়ে এসব কথা না বলে নিজের সংসারে মন দিন।এমন ও হতে পারে আমাকে যা বললেন এসব কাজ আপনাদের ছেলে মেয়েরা করে।
বলেই আয়ানের মা’র দিকে তাকিয়ে বললো,
আরুঃ মা আমি উপরে যাচ্ছি।আবার পেট ব্যাথা উটেছে।
আফিয়া রাহমানঃ আচ্ছা।
————-
রাত ১১টা
অফিসে খুব চাপ।তাই আজ আসতে আসতে দেরী হয়ে গেছে।ও রুমে এসে দেখে পুরো রুম অন্ধকার।আরুকে খুঁজছে কিন্তু নেই পরে বেলকনিতে দেখে আরু দাড়িয়ে আছে।আয়ান চলে গেলো ফ্রেশ হতে।
আরু দাড়িয়ে আছে বেলকনিতে।কিছু ভালো লাগছে না ওর।হুট করে ওর জীবন টা বদলে গেলো।না পারছে আয়ানকে মেনে নিতে না পারছে সব ভুলে কাছে টেনে নিতে না পারছে এই বাড়ির যোগ্য বউ হতে।আরু আয়ানকে মাফ করেছে কিন্তু আবার আয়ানের করা কাজ গুলো মনে করে ওকে আবার সেই পুরোনো ঘা তাজা করেছ।কিন্তু এই বাড়ির সবাই খুব ভালো।আরু এক দোটানায় পরে আছ।
আরুর এসব ভাবনার মাঝেই পর পিছন থেকে কে যেনো ওকে জড়িয়ে ধরলো।আরু জানে এটা আয়ান।
আরু জাটকা মেরে আয়ানের হাত ছাড়িয়ে নিলো।
এমন করাতে আয়ান কিছু রেগে গেলো।সারাদিন অফিস করে এসে এখন আরুর এই ব্যবহার মানতে কেমন যেনো লাগছে।তাই আয়ান রেগে বললো,
আয়ানঃ কী সমস্যা?
আরুঃ কী সমস্যা মানে?আপনাকে বলেছিনা আমাকে স্পর্শ না করতে।😠
আয়ানঃ আমার বউকে আমি যখন মন চদয় তখন স্পর্শ করবো।কার কী বলার আছে।
আরুঃ কোন অধিকারে? স্বামীর অধিকারে?কিন্তু তা তো আমি দেই নি।এখন বিয়ে করেছেন শরীর চাই তাই তো?
আয়ানঃ আরু….
আরুঃ গলা নামিয়ে কথা বলুন।আমি ডির্ভোস চাই।
আয়ানঃ কী বলছো তুমি?
আরুঃ বাংলা বুঝেন না? নাকী ইংলিশে বলতে হবে😠

আয়ানের মন খারাপ হয়ে গেলো।ও ভেবেছিলো আরু হয়তো মেনে নিচ্ছে সবটা।কিন্তু না….।আয়ানের বুকের বা পাশে ব্যাথা হচ্ছে।আয়ান অসহায় গলায় বললো,
আয়ানঃ আমি কী এতোই খারাপ যে আমার সাথে থাকা যায় না।?
আরুঃ এতো কিছু জানি না।আমাকে ভালোবেসে থাকলে ডির্ভোস দিবেন শেষ।

বলেই আরু অন্য দুকে ঘুরে নিজের চোখের পানি মুছে নিলো।

দিলাম আরু আর আয়ানরে আলাদা করে🥱।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here