#_ফাগুন_প্রেমপর্বঃ ৪৭+৪৮

0
321

#_ফাগুন_প্রেমপর্বঃ ৪৭+৪৮

Written by: Bornali Suhana
💛
💛
রুমু, ইভান সহ সজিবের কাজিনরাও হো হো করে হেসে দেয়। বর্ণালী রাগছে না কিন্তু এই হাসিগুলো তার খারাপ লাগছেনা৷ সবার মাঝে ইভানের হাসিটাও যে আছে৷ যা দেখে তার ঘোর লেগে যাচ্ছে।
-“আপু বস না দাঁড়িয়ে আছিস কেন এভাবে?”
জেনি বর্ণালীর হাত ধরে টেনে পাশে বসিয়ে দেয়। সম্পর্কে বর্ণালীর ফুফাতো বোন হয়। এই প্রথম ওদের বাড়িতে পা রেখেছে। শুধু ও নয় বাকিরাও। ইভানের দিকে প্রখর দৃষ্টি বর্ষণ করছে জেনি। ওই চোখ দুটো তাকে যেনো টানছে।
-“আপু উনার নাম কি?”
-“উনার কার?”
-“ভাবীর ভাইয়ের নাম কি?”
জেনির প্রশ্ন শুনতেই বর্ণালীর কপালে সূক্ষ্ণ ভাঁজ পড়ে।
-“কেন?”
-“না এমনি জানতে চাচ্ছিলাম।”
-“ইভান।”
-“কিসে পড়ে সে?”
এবার বর্ণালীর কপালের ভাঁজের সূক্ষ্মতা আরো গভীর হলো। ইভান সম্পর্কে জানার এতো কেন আগ্রহ তার! একটু তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে জেনির দিকে তাকিয়ে বললো,
-“এবার ইন্টার পরীক্ষা দিয়েছে।”
-“ওহ আচ্ছা।”
জেনি আর কোন প্রশ্ন না করে গল্পে মনযোগ দেয়। ইভান বর্ণালীর দিকে বারবার আঁড়চোখে তাকাচ্ছে। রুমু বর্ণালীর পাশে এসে জায়গা করে বসে। সবার দিকে তাকিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,
-“ইভানের সাথে একটু কথা বল যা।”
-“আমি কেন কথা বলবো?”
-“তুই ভালো করেই জানিস যে, সে শুধু তোর জন্যই আসছে।”
-“না আসাই ভালো ছিলো তার।”
-“আচ্ছা তার অপরাধটা কোন জায়গায়?”
-“তুই কী বুঝিস না অপরাধ তার না অপরাধ আমার।”
-“নিজেকে দোষ দিয়ে মজা পাস না?”
কথাটা শেষ করতেই রুমুর ফোনের মেসেজ টোনটা বেজে উঠে।
-“একটু কথা বলিয়ে দাও না প্লিজ।”
রুমু ইভানের দিকে তাকিয়ে দেখলো ওর শুধু ঠোঁট নেড়ে প্লিজ বলছে। কিন্তু ওদের আলাদা কথা বলার সুযোগ কীভাবে করিয়ে দেবে! ভাবনায় পড়ে গেলো। এতো মানুষের মাঝে কীভাবে কি করবে!
কিন্তু না করলেও তো হচ্ছেনা।
-“ওয়াশরুমে যাবে বলো।”
ইভানকে রুমু এই মেসেজটা পাঠিয়ে চুপচাপ বসে রইলো। ইভান একটু নড়েচড়ে বসে সজিবকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-“ওয়াশরুমটা একটু দেখিয়ে দিবেন প্লিজ?”
-“চলো দেখিয়ে দিচ্ছি।”
সজিব উত্তর দেয়ার আগেই রুমু কথাটা বলে দেয়। রুমু বর্ণালীর হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। ইভান তাদের পিছু পিছু আসছে।
-“রুমু কি করছিস ছাড়।”
-“চুপচাপ আমার সাথে চল।”
-“মানে কী? তুই আমাকে কেন এভাবে নিয়ে এলি?”
-“প্রয়োজন আছে তাই নিয়ে এসেছি।”
-“এদিকে কোথায় যাচ্ছিস?”
-“তোর রুমে।”
-“আমার রুমে কেন?”
-“গেলেই বুঝতে পারবি। চল না রে বাবা এতো কথা কেন বলিস!”
ইচ্ছে করেই বর্ণালীর ওয়াশরুমে নিয়ে যাচ্ছে ইভানকে। যাতে দুজনকে কথা বলিয়ে দিতে পারে। রুমে ঢুকেই দরজা লক করে দিলো রুমু। তিনজন মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে চুপচাপ। তাদের দুজনকে নিয়ে ব্যালকনিতে যায়। শান্তভাবে কথা বলার জন্য এটাই সবচেয়ে ভালো জায়গা।
-“তোমরা কথা বলো আমি একটু আসছি।”
-“আসছি মানে কোথায় যাচ্ছিস?”
-“ওইতো আমার একটা ইম্পর্ট্যান্ট কল করতে হবে আমি রুমেই আছি।”
রুমু মিথ্যে ফোনকলের বাহানা করে রুমে চলে আসে দুজনকে একা রেখে।
বর্ণালীর এখানে দাঁড়িয়ে থাকাটা কেমন অস্বস্তিকর লাগছে। ইভানও কিছু বলছে না। দুজনেই চুপ হয়ে আছে। অনেকক্ষণ এভাবেই চুপ থাকার পর ইভান কন্ঠস্বরকে নিচু করে বলে,
-“আমি তো কোন অপরাধ করিনি। তাহলে কিসের শাস্তিটা আমাকে দেয়া হচ্ছে একটু বলবে?”
ইভানের এমন কথায় বর্ণালীর গাল বেয়ে আলতো করে দু’ফোটা অশ্রু ঝরে পরে। আসলেই তো সে কিসের শাস্তি দিচ্ছে তার বসন্ত পথিককে! আদৌ কি সে তাকে শাস্তি দিচ্ছে নাকি নিজে পাচ্ছে?
কোন উত্তর পেলো না।
-“কথা বলবে না? আমি তোমার দেয়া এই শাস্তিটা মেনে নিতে পারছিনা বাসন্তী।”
বাসন্তী ডাকটা শুনেই বুকের ভেতরে কম্পন ধরায় ওর। কতদিন পর ইভানের মুখে বাসন্তী ডাক শুনতে পাচ্ছে। আরেকটাবার ডাকছে না কেন ইভান। মুখ ফুটে বলতেও পারছে না যে, বসন্ত পথিক আরেকটাবার কি আমাকে বাসন্তী বলে ডাকবে? বর্ণালীর চোখ আকাশের দিকে৷ সে অশ্রুসিক্ত চোখ দুটো যেনো তারারাজির মেলায় হারাচ্ছে। বারবার চোখের পাতা এক করে চোখের জলের সাথে লুকোচুরি খেলা খেলছে। এ খেলায় জয়ী হবে কিনা সে জানেনা।
ইভান বর্ণালীর দিকে এগিয়ে আসে। যত কাছে আসছে বর্ণালীর হৃদস্পন্দন ততো বেড়ে যাচ্ছে। দু’হাত দিয়ে ব্যালকনির রেলিংটাকে শক্ত করে চেপে ধরে আছে। ইভান তার ঠিক পেছনে এসে দাঁড়ায়। মুখের উপর ছড়িয়ে থাকা চুলগুলো আলতো করে কানের পেছনে গুজে দেয়। ও কেঁপে উঠে ইভান থেকে কিছুটা সরে যেতে চাইলেই দু’হাতের বেড়ায় আটকা পড়ে যায়। কোনদিকে যেতে পারছেনা।
-“পালিয়ে যেতে চাও?”
-“পালাতে কেন চাইবো?”
-“তাহলে এমন কেন করছো?”
-“কেমন করছি?”
-“প্রশ্নের উত্তর হয় বর্ণালী প্রশ্নের জবাবে কেউ প্রশ্ন করেনা।”
-“যেতে দাও। ঘরে অনেক মেহমান দেরি হলে সন্দেহ করবে সবাই।”
-“তাতে আমার কোন সমস্যা নেই।”
-“তোমার না থাকতে পারে আমার আছে।”
-“পেছন ফিরে আমার দিকে তাকিয়ে কথা বলো।”
-“ইচ্ছে করছে না।”
-“আমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে না?”
বর্ণালীর ঘাড়ের ওপর থেকে চুলগুলো সরিয়ে এক পাশে নিয়ে রাখে ইভান। ইভানের হাত ওর ঘাড়ের ওপর স্পর্শ করতেই ভ্রু কুঁচকে চোখ বন্ধ করে দাঁতের সাথে দাঁত চেপে ধরে। নিঃশ্বাস গ্রহণ করে ত্যাগ করতে যেনো ভুলেই গেছে ও। ইভান ধীরে ধীরে আঙুলের সাহায্যে বর্ণালীর ঘাড়ের উপর কিছু একটা লিখছে। চোখ বন্ধ অবস্থাতেই মনোযোগ দিয়ে তা বুঝতে চেষ্টা করছে সে। সম্পূর্ণ লেখার পর বুঝতে পারলো কথাটা “I Love You”. বর্ণালী তখনও চুপ করে আছে। মৃদু বাতাসের সাথে মাঝেমধ্যে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে। দুজনের উষ্ণ শরীরকে ভেতর শীতল করে দিচ্ছে এই আবহাওয়া।
কিছুক্ষণ পর ঘাড়ের উপর কারো শুষ্ক ঠোঁটের স্পর্শে শিহরিত হয়ে উঠে বর্ণালী। রেলিঙের উপর হাতের বাঁধন আরো শক্ত হয়। না চাইতেও ইভানের দিকে নিজেকে ফিরায়। ইভানের দু’হাত এখনো বর্ণালীর দু’দিকে রেলিঙে ধরে বেঁধে রেখেছে। সে না পারছে এদিক যেতে আর না পারছে ওইদিকে যেতে।
চোখের পাতা আলগা করে তাকাতেই দেখে ইভান ওর দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ওই চোখে আর কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলে সে আর নিজেকে ওর থেকে দূরে সরাতে পারবে না। তাই চট করে চোখ নামিয়ে নেয়। রেলিঙের উপর থেকে ইভানের হাত সরানোর বৃথা চেষ্টা করে যাচ্ছে।
-” আমার একটা হাত সরানোরও শক্তি নেই তোমার? ছিঃ ছিঃ খাও না তুমি? একটু খেয়ে শক্তি সঞ্চয় করো। নাকি কলিকাতা হারবাল লাগবে?”
বর্ণালীর চোখ সাত আসমান উপরে উঠে যায়। এই ছেলে এসব কি বলে!
-“কিসব বলছো? লজ্জা তো একটুও নেই। এখন দেখছি কথা কীভাবে বলতে হয় সেই বোধশক্তিটাও রাখছো না।”
-“তোমার কাছে আমি সবসময় নির্লজ্জ হতে রাজি।”
-“সরাও হাত আমায় যেতে দাও।”
-“আচ্ছা আমাকে নিউ লুকে কেমন লাগছে বললে না?”
-“একদম ফেরিওয়ালা চাচা।”
-“মানে?”
-“মানে আমাদের বাসায় যে ফেরিওয়ালা চাচা আসে ঠিক তার মতোই লাগছে।”
-“এবার সরো।”
-“আচ্ছা! তবে রে।”
-“কি তবে রে?”
-“দেখাচ্ছি মজা।”
-“কি দেখাবে? মানে কি?”
-“দেখবে?”
-“হ্যাঁ দেখাও।”
ইভান বর্ণালীর গলায় নিজের মুখ ডুবিয়ে দাড়ি দিয়ে ঘষতে লাগে। দাড়ির খোঁচা খেয়ে বর্ণালী নিজের অবস্থান ঠিক রাখতে না পেরে পিঠ নিয়ে ঠেকায় রেলিঙের মাঝে। এই প্রথম কোন ছেলের দাড়ির খোঁচা খেয়েছে। চোখ বন্ধ করে খালি গলায় ঢোক গিলে ইভানের ঘাড়ের পাশে শার্ট খামচে ধরে। নখের আঁচড় বসিয়ে দিচ্ছে সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই তার। এ কেমন যন্ত্রণা! দাড়ির খোঁচাতে ব্যাথা পাচ্ছে বর্ণালী কিন্তু এই ব্যাথা তার কাছে ভালো লাগছে কেন! নাহ নিজেকে ধরে রাখতে পারছেনা সে। গায়ের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে ইভানকে ধাক্কা দিয়ে নিজে থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। ধাক্কা খেয়ে খানিকটা পেছনে চলে যায় সে। দ্রুত নিঃশ্বাস নিচ্ছে বর্ণালী।
-“কেমন লাগলো?”
এক চোখ মেরে ইভান প্রশ্ন করে তাকে। ইভানের এমন প্রশ্নে বুকের ভেতর তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। ধুকপুক ধুকপুক করছে বুক। এ কেমন অনুভূতি ছিলো! বলে বুঝানো সম্ভব না তার পক্ষে।
দৌড়ে চলে যেতে চাইলেই ইভান তার একটা হাত চেপে ধরে।
-“বাসন্তী,”
আবারো সেই ভালোবাসার নামে ডাকছে ইভান তাকে। এতো সুখ লাগে কেন ওর এই ডাকে। বুকের ধুকপুকানিটা বেড়ে গেলো আরো কয়েকগুণ। ইভান আবারো বলতে শুরু করে।
-“আমাকে যতক্ষণ পর্যন্ত না তুমি আগের মতো মেনে নিচ্ছো মনে রেখো এমন আরো হাজারো মধুর জ্বালা সহ্য করতে হবে। নতুন নতুন রুপে জ্বালাবে তোমাকে তোমার এই বসন্ত পথিক।”
বর্ণালী কোন কিছু না বলেই ওর হাত থেকে নিজের হাত ছুটিয়ে দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়। রুমু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। এতোক্ষণ সে হুমায়ুন আহমেদের অপেক্ষা বইটি পড়ছিলো। সজিবের রুম থেকেই এনেছে বইটা সে। ইভানও ব্যালকনি থেকে রুমে আসে।
-“কিছু ঠিক হলো?”
ইভান দু’দিকে মাথা নেড়ে না করে।
-“ঠিক হয়ে যাবে টেনশন করো না। অনেক ভালোবাসে পাগলীটা তোমায়। কিন্তু মুখ ফুটে বলতে চায় না।”
-“জানি আমি আমার বাসন্তী তার বসন্ত পথিককে অনেক ভালোবাসে।”
-“আচ্ছা চলো বাইরে চলো।”
-“হুম চলো।”
ইভান আর রুমু বাইরে আসতেই দেখে বর্ণালী তার কাজিনদের সাথে বসে গল্প করছে আর পিয়াজু খাচ্ছে। ইভান ওর দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছে। পিয়াজু কেউ এভাবে খায় তার জানা ছিলো না। মুখের ভেতর একটা অংশ নিয়ে ঠোঁট দিয়ে চেপে ধরে দাঁত দিয়ে কামড়ে নেয়। ওর দিকে তাকাতে লেগে ইভান কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে প্রায় পরেই যাচ্ছিলো। কারো সরি শব্দে তার দেখায় ব্যাঘাত ঘটায়।
💛
#_____চলবে………..

#_ফাগুন_প্রেম
পর্বঃ ৪৮
Written by: Bornali Suhana
💛
💛
বর্ণালী তার কাজিনদের সাথে বসে গল্প করছে আর পিয়াজু খাচ্ছে। ইভান ওর দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছে। পিয়াজু কেউ এভাবে খায় তার জানা ছিলো না। মুখের ভেতর একটা অংশ নিয়ে ঠোঁট দিয়ে চেপে ধরে দাঁত দিয়ে কামড়ে নেয়। ওর দিকে তাকাতে লেগে ইভান কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে প্রায় পরেই যাচ্ছিলো। কারো সরি শব্দে তার দেখায় ব্যাঘাত ঘটায়। পাশে তাকিয়েই দেখে জয়। জয়! জয় এখানে কেন! ইভানের মাথার শিরাগুলো যেনো টনটন করছে। মুহুর্তেই তার চোখ দুটো লাল হয়ে এসেছে। জয়কে এখানে সে দেখবে কল্পনাও করতে পারেনি। জয়ের দিকে তাকিয়েই বর্ণালীর দিকে তাকালো। বর্ণালী চুপ মেরে বসে আছে। জয়কে দেখে ওর হাত-পা কাঁপছে। জয়কে এখানে দেখে সে নিজেও অবাক। তার উপর ইভানও এখানে। ইভান না জানি উলটা পালটা কিছু করে বসে। কলিজায় যেনো খরা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টির প্রয়োজন আর সেই বৃষ্টিটা ইভান ছাড়া আর কেউ নয়। ইভান নিজের রাগ কন্ট্রোল করে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বললো,
-“ইট’স ওকে।”
বর্ণালী চুপ হয়ে শুধু দেখছে। জয় পাশ কাটিয়ে শারমিন বেগমের কাছে যায়।
-“আন্টি, আঙ্কেল কোথায়?”
-“আরে জয়! এসেছিস তুই?”
-“না এসে পারি? আমাদের সজিবের বিয়ে বলে কথা।”
-“অনেক কাজ পড়ে আছে রে। যা তোর আঙ্কেলের কাছে যা। সেই কখন থেকে জয় এসেছে? জয় এসেছে? জিজ্ঞেস করতে করতে আমার কান শেষ করে দিয়েছে।”
-“জ্বি আন্টি যাচ্ছি।”
জয় বর্ণালীর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে হেসে হেসে হাবিব হাসানের রুমে চলে যায়। বর্ণালীও তার দিকেই তাকিয়ে ছিলো। জয় রুমে যেতেই ওর দৃষ্টি ইভানের উপর যায়৷ ইভান এমনভাবে তাকিয়ে আছে যেনো ওকে এখনই খেয়ে ফেলবে। খালি গলায় ঢোক গিলে কাজিনদের সাথে গল্প জুড়ে বসে। ইভান ঠিক তার সামনের সোফায় বসে আছে। দু’জনেই দু’জনার দিকে আঁড়চোখে তাকাচ্ছে। মাঝেমধ্যে চোখে চোখ পড়ে ধরা খেতেই বর্ণালী দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয় কিন্তু ইভান না।
👇
-“আসসালামুআলাইকুম আঙ্কেল।”
-“ওয়ালাইকুমআসসালাম। আয় জয় তোর জন্য অনেক কাজ আটকে আছে। দায়িত্ব দিচ্ছি সব কিন্তু ঠিকঠাক হওয়া চাই।”
-“অবশ্যই আঙ্কেল আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।”
-“কাল সজিবের গায়ে হলুদ৷ তার সবকিছু কিন্তু তোকেই দেখতে হবে।”
-“চিন্তা করবেন না আঙ্কেল সবকিছু আমি নিজে দেখেশুনে করবো।”
জয়কে সবকিছু বুঝিয়ে দিয়ে একটু চিন্তামুক্ত হোন হাবিব হাসান। বিছানায় গা এলিয়ে দেন। কিন্তু বাইরের চিল্লাপাল্লায় ঘুম হচ্ছেনা তার। মেহমানরা কেন যে এতো তাড়াতাড়ি আসে। বিয়ের দিন এসে খেয়ে দোয়া করে গেলেই তো পারে। এসব আকাশপাতাল চিন্তা করে চোখের চশমাটা পাশেই খুলে রাখেন হাবিব হাসান। জয় ধীরেধীরে হেঁটে ড্রয়িংরুমে আসে। শারমিন বেগম নাস্তা নিয়ে আসেন।
-“জয় বস।”
-“না আন্টি এখন না। অনেক কাজ আছে।”
-“আরে ১০মিনিট বসলে তোর কাজ আটকে থাকবে না।”
জয় আর কথা না বাড়িয়ে সেখানেই বসে যায়। ইভানের রাগ যেনো বেড়েই যাচ্ছে। কিন্তু এই মুহুর্তে সে নিশ্চুপ। সবাই পিয়াজু খেতে ব্যাস্ত। বর্ণালী শরবতের গ্লাস থেকে অল্প অল্প করে খাচ্ছে। ইভান সেই দৃশ্যটাও মন ভরে দেখছে। আজ তার ইচ্ছে করছে যদি সে বর্ণালীর হাতের ঐ গ্লাস হতে পারতো।
-“আপু ইভান ভাইয়া আর তোর মাঝে কি কিছু চলছে?”
জেনির কথায় বর্ণালী বিষম খেয়ে যায়। এই পুচকে মেয়ে এসব কি বলে!
-“মানে কি?”
-“না তখন থেকেই খেয়াল করছি তোমাদের চোখেচোখে কথা আদান-প্রদান হচ্ছে।”
-“চুপ কর। কি যাতা বলিস? এসব কিছুই না।”
-“হ্যাঁ ইভান তো তোমার থেকে ছোট তোমাদের মাঝে কিছু হওয়ারও সম্ভাবনা নেই আমি শুধুই এসব উলটা পালটা ভাবছি।”
-“ছোট আর বড় এর মাঝে যে কিছু হয়না তা কোন হাদিসে আছে?”
-“না তা বললাম নাকি। তার মানে তোমাদের মাঝে কিছু একটা হওয়ার সম্ভাবনা আছে।”
-“বেশি পকপক করা শিখে গেছিস না?”
জেনি নিজের অবস্থান থেকে উঠে বলে,
-“আচ্ছা আমার চোখকে ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করলেও সবার চোখকে কিন্তু পারবে না৷ খেয়াল রেখো।”
-“জেনিইইই!”
জেনি এক দৌড়ে সজিবের পেছনে গিয়ে লুকায়। বর্ণালী জেনিকে ধরার চেষ্টা করছে। ও ডানদিকে গেলে সে বাদিকে যাচ্ছে কোন অবস্থাতেই ধরা দিচ্ছে না।
-“আচ্ছা মানলাম তোমার কথা ঠিক। তো তোমার কিছু না থাকলে আমায় লাইন লাগিয়ে দাও।”
সজিব চোখ ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে,
-“কিসের লাইন?”
-“না না ভাইয়া কিছু না। জেনি আমার সাথে চল।”
-“না আমি যাবো না। আচ্ছা আজকে যেহেতু সবাই একসাথে আছি আর কনের ভাইও এখানে তো একটা গেইম হয়ে গেলে কেমন হয়?”
ইভান অভাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,
-” কিসের গেইম?”
-“এই ধরেন গানের কলি।”
-“আমি তো গান জানিনা।”
-“আরেহ জেনি অনেক জ্ঞানী সো নো টেনশন। আমি আছি না? আমি আপনার টিমে আমি আছি।”
বর্ণালীর দিকে চোখ মেরে জেনি কথাটা বলে। এই মেয়ের মাথায় কি পাকাচ্ছে কে জানে। বর্ণালী নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালেই জেনি দৌড়ে গিয়ে ওকে ধরে ফেলে।
-“গেইম না খেলে এখান থেকে কেউ যাচ্ছেনা।”
-“দেখ জেনি আমার গেইমে কোন ইন্টারেস্ট নেই। প্লিজ আমায় যেতে দে।”
-“তাহলে ইভানের সাথে আমায় লাগিয়ে দাও।”
বর্ণালী রেগে দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলে,
-“নিজের বয়স দেখেছিস?”
-“আচ্ছা তার মানে তুমি খেলবে তবু ইভানের সাথে আমায় লাগিয়ে দেবে না। তাহলে চলো।”
বর্ণালী ওর কথার কি জবাব দেবে ভেবেই পায় না। কোন কিছু বলার আগেই জেনি ওকে টেনে বসিয়ে দেয়। দুটো টিমে সবাইকে ভাগ করে দিলো। ইভান, জয়, জেনি আর সায়ান ও আইনান টিম A আর সজিব, বর্ণালী, রুমু, আদনান, ও নিধি টিম B. কে গাইবে প্রথমে এটা নিয়ে কথা উঠিতেই জেনি সবাইকে চুপ করিয়ে বলে,
-“যেহেতু বর্ণ আপু গান গায় তো সবার আগে সেই শুরু করবে।”
-“আমি কেন? তুই আগে শুরু কর। গেইম খেলার প্ল্যানটাতো তোর”
-“আচ্ছা ঠিকাছে আমিই আগে শুরু করছি।”
পালাক্রমে একের পর এক গান গেয়েই যাচ্ছে সবাই। বর্ণালীও অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে গেছে। ওকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে চোখেমুখে হাসি ঝলমল করছে। ওকে খুশি দেখে সবাই অনেক খুশি। এদিকে রাত ১১টা হয়ে এসেছে। শারমিন বেগম টেবিলে খাবার দিয়ে সবাইকে ডাক দেন। সবাই উঠে যেতে লাগলেই জয় বর্ণালীর এক হাত টেনে ধরে। সবাই ডাইনিং টেবিলের দিকে এগিয়ে গেছে। বর্ণালী নিজের হাত ছাড়ানোর জন্য চেষ্টা করছে কিন্তু পারছেনা।
-“জয় কি করছো? হাত ছাড়ো।”
-“তোমার সাথে আমার কথা আছে তা শুনে নাও তাহলে ছেড়ে দিবো।”
-“আমার তোমার কোন কথা শুনার বা বলার ইচ্ছে, সময় কোনটাই নেই।”
-“শুনতে তো তোমাকে হবেই।”
জয় বর্ণালীর হাত টেনে নিয়ে যেতে চাইলেই রুমু আর জেনি এসে সামনে দাঁড়ায়। রুমু হাতের দিকে তাকিয়েই সবকিছু বুঝে নেয়। হাতের দিকে রুমুর দৃষ্টি দেখতেই জয় ওর হাত ছেড়ে দেয়।
-“কোথায় যাচ্ছিলে? টেবিলে খাবার দেয়া হয়েছে চল।”
-“হ্যাঁ চল।”
রুমুর সাথেই বর্ণালী চলে যায়। সবাই যে যার মতো চেয়ারে বসে পড়েছে। একমাত্র ইভানের পাশের চেয়ার খালি। রুমু বর্ণালীকে বসতে বলে। সবার সামনে কিছু না বলে চুপচাপ ওর পাশেই বসে পড়ে।
-“জয়ের সাথে ওখানে কি কথা হচ্ছিলো?”
বর্ণালী চোখ তুলে ইভানের দিকে তাকায়। ওকে দেখেই মনে হচ্ছে ভীষণ রেগে আছে। মুখে শুধু হাসিটা রাখার চেষ্টা করছে।
-“কি হলো বলো।”
ইভান ফিসফিসিয়ে কথাগুলো বলছে।
-“সব কথা কি তোমাকে বলতে হবে?”
-“হ্যাঁ হবে অবশ্যই বলতে হবে।”
-“আমি বলতে বাধ্য নই।”
-“আচ্ছা ঠিকাছে এর পর যা হবে তুমি তার জন্য আমাকে কোন প্রশ্ন করতে এসো না।”
-“মানে কি?”
-“মানেটা আমার কাজেই দেখে নিও।”
আর কথা না বাড়িয়ে খেতে লেগে যায় ইভান। বর্ণালী ভেতরে ভেতরে ভয় পাচ্ছে। এই ছেলে কি করে না করে তার কোন ভরসা নেই।
-“কি করতে চাচ্ছো তুমি?”
-“কিছুনা।”
-“ইভান দেখো উলটা পালটা কিছু করতে যেও না।”
-“তুমি কি আমায় সব বলো যে আমি তোমায় বলবো?”
-“ইভ….”
-“খাও চুপচাপ নাহলে সবার সামনে আমি তোমাকে খাওয়াবো।”
বর্ণালী ভয়ে চুপচাপ খেতে লাগে। ইভান একহাতে খাচ্ছে অন্য হাত দিয়ে হুট করেই বর্ণালীর একটা হাত চেপে ধরে। সাথে সাথেই বিষম খায় ও। স্বাভাবিকের চাইতে চোখ বড় হয়ে যায়। ভয়ে ওর হাত-পা থরথর কাঁপছে। সব কাজিন বসে আছে কেউ দেখে ফেললে সর্বনাশ হয়ে যাবে। ইভান ওর হাতের তালুতে আঙুল দিয়ে ধীরেধীরে আঁকিবুঁকি করতে লাগলো। বর্ণালীর সুড়সুড়ি লাগছে। আবার মনের ভেতর কেমন কেমন জানি করছে। ইভানের প্রতিটি স্পর্শই সবসময় ওর মনের ভেতর উলটপালট করে দেয়। হাত ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করে যখন পারেনা তখন ইভানকে বলে,
-“হাত ছাড়ো ইভান কেউ দেখলে সমস্যা হয়ে যাবে।”
-“আচ্ছা! আমি ধরলেই যত সমস্যা আর জয় যখন ধরলো তখন সমস্যা ছিলো না?”
-“কিসব উলটা পালটা বলছো? আমি ইচ্ছে করে ওকে নিজের হাত ধরতে দিয়েছি নাকি?”
-“হু তা তো দেখলামই।”
-“ছাড়ো ইভান কেউ দেখবে যে।”
-” আমি কারো ভয় পাইনা তা তো তুমি জানোই।”
-“ইভান প্লিজ।”
-“তাহলে আমাকে এগিয়ে দিতে বাইরে যাবে বলো।”
-“এটা কেমন কথা?”
-“তাহলে হাত ছাড়ছিনা।”
বর্ণালী নিজেকে অনেক অসহায় মনে করছে এই মুহুর্তে। কিন্তু এভাবে থাকলেও সমস্যা। কোন উপায় না দেখে হ্যাঁ বলে দেয়। ইভান যেনো হাতের কাছে চাঁদ পেয়ে গেছে। দুষ্টু হাসি দিয়ে ওর হাত ছেড়ে দেয়। সাথেসাথেই নিজের হাত নিয়ে টেবিলের উপর রাখে ও।
👇
ইভান সবার থেকে বিদায় নিয়ে নেয়। কাল আসবে আবার হলুদ নিয়ে। বর্ণালী চুপচাপ এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ দিয়ে ইশারা করে ওকে আগের কথাটা স্বরণ করিয়ে দেয়। রুমু পাশ থেকে সবকিছু অবলোকন করে। জেনি গলা ঝেড়ে বলে,
-“কোথাও ঝড় হচ্ছে। আর কোথাও হবে মনে হচ্ছে।”
বর্ণালী রুমুর দিকে আর রুমু তার দিকে তাকায়। এই মেয়েটা আসলেই পাজি। কে বলবে এই মেয়ে মাত্র এইচএসসি দিয়েছে! এর এমন ভাব যেনো সে মাস্টার্স পাস করে বসে আছে। সায়ান বর্ণালীর মামাতো বোন পাশ থেকেই বলে,
-“গরমে মরে যাচ্ছি আর তোর কোনদিকে ঝড় হবে মনে হচ্ছে? এই ঝিরিঝিরি বৃষ্টি আরো গরম বাড়িয়ে দিচ্ছে ”
-“এই বৃষ্টি খালি চোখে দেখা যায় না পাগলী।”
-“তুই বেশি পেকে গেছিস। ফুফুকে সব বলতে হবে।”
রুমুর কথা শুনে জেনি চুপসে যায়। ওর মা যে পরিমাণ রাগী এসব জানলে ওকে মেরেই ফেলবেন। এই মুহুর্তে আর কোন কথা না বলাই ওর জন্য ভালো।
-“বর্ণালী চল।”
-“কোথায়?”
-“ওয়াশরুমে যাবো। আমি তো আবার তোকে ছাড়া এটাও করিনা তাই তুই আমার সাথে যাবি।”
-“এ্যাহ! মানে কি?”
-“এভাবে জিজ্ঞেস করলে তো এটাই জবাব দিবো।”
বর্ণালীর হাত ধরে ঘরের মেইন দরজা দিয়ে বের হয়ে যেতে নিলেই থেমে যায় রুমু।
-“এই জেনি শুন, কেউ জিজ্ঞেস করলে কি বলবি আমরা কোথায়?”
-“তোমরা এইতো আশেপাশেই আছো।”
-“গুড গার্ল।”
বাইরে আসতেই দূর থেকে লাইটের আলোয় ইভানকে দেখতে পাচ্ছে বর্ণালী। আশেপাশে মানুষজনের আনাগোনা অনেক বেশি। সবার চোখকে ফাঁকি দেয়া সম্ভব না। তবুও একরকম দৌড়ের উপর গাড়ির পাশে চলে যায় দুজনে। রুমু গাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে বর্ণালীকে ভেতরে যেতে বলে।
#_____চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here