#_ফাগুন_প্রেমপর্বঃ ৪৯+৫০

0
336

#_ফাগুন_প্রেমপর্বঃ ৪৯+৫০

Written By: Bornali Suhana
💛
💛
বাইরে আসতেই দূর থেকে লাইটের আলোয় ইভানকে দেখতে পাচ্ছে বর্ণালী। আশেপাশে মানুষজনের আনাগোনা অনেক বেশি। সবার চোখকে ফাঁকি দেয়া সম্ভব না। তবুও একরকম দৌড়ের উপর গাড়ির পাশে চলে যায় দুজনে। রুমু গাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে বর্ণালীকে ভেতরে যেতে বলে। বর্ণালীর তাকানো দেখেই রুমু ভয় পেয়ে যায়। মনে হচ্ছে যেনো রুমু তাকে কোন নদীতে ঝাপ দিতে বলেছে। ইভান গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে। বর্ণালী চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। রুমু একটু একটু করে তাদের থেকে সরে যাচ্ছে। আবারো ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। বর্ষাকালে এই বৃষ্টি কোন সময় অসময় দেখে না। হুটহাট শুরু হয় যায়। নিজের হাত দিয়ে নিজের এপাশ ওপাশ ঢেকে বৃষ্টি থেকে বাঁচার চেষ্টা করছে বর্ণালী। ইভান ওর হাত ধরে একটা গাছের ছায়ায় নিয়ে যায়। রুমু ততক্ষণে গাড়িতে উঠে বসেছে। এই বৃষ্টিতে ভিজলে নিশ্চিত ওর জ্বর আসবে। আর এই মুহুর্তে সে অসুখ বাঁধাতে চায় না। এমনিতেই আশেপাশের সবাই ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত। দুজনে পাশাপাশি নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে আছে। ইভানের গা বর্ণালীর শরীরের সাথে লাগতেই ওর থেকে কিছুটা দূরত্ব রেখে দাঁড়ায়। বৃষ্টির পানিতে ভিজে ঠান্ডা লাগছে। এই পানিটা এতো ঠান্ডা কেন! বরফের পানি গলে যতটা ঠান্ডা হয় তার চেয়েও বেশি ঠান্ডা এই পানি। আর কিছুক্ষণ থাকলে ঠান্ডা লেগেই যাবে। বর্ণালী যেইনা যেতে চাইলো ইভান ওর হাত ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে দাঁড় করায়। এমনিতেই শীতে কাঁপছিলো ইভানের এভাবে কাছে নেয়ায় ওর কাঁপুনি আরো বেড়ে যায়। নীচের ঠোঁট খুব বেশি কাঁপছে ওর। ইভান ওকে আরো কাছে টেনে নেয়। গাছের পাতা হতে টুপটুপ করে পানি বর্ণালীর চোখের উপর পানি পড়তেই চোখ বন্ধ করে নেয়। আবার খুলে উপরে গাছের দিকে তাকায়। পানি চোখ থেকে গাল বেয়ে চিবুকের একটু ডান পাশে আসতেই ইভান ঠোঁট স্পর্শ করায়। ও শিউরে ওঠে চোখ বন্ধ করে নেয়। শার্টের কলারের পাশে হাত দিয়ে খামচে ধরে। ঠোঁটের স্পর্শ গভীর থেকে আরো গভীর হচ্ছে। আলতো করে কোমড়ের পাশ থেকে ডান হাত ধীরে ধীরে উপরের দিকে তুলতে লাগে ইভান। শক্ত হতে লাগে বর্ণালীর হাতের মুঠো। ইভানের ঠোঁট চিবুকের নিচে নামতে থাকে। গলা থেকে কানের পাশে নিয়ে আলতো করে ঠোঁট দিয়ে চেপে ধরে। উষ্ণ নিশ্বাসের একেকটা স্পর্শ যেনো একেকটা কথা বলছে।
-“এবার তো বলো ভালোবাসি…..”
কানের মাঝে এমন একটা কথা আসতেই বর্ণালী চোখ খুলে খালি গলায় ঢোক গিলে। আবারো চোখ বন্ধ করে গভীর নিশ্বাস নিয়ে ইভানকে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে দূরে ঠেলে দেয়। ছিটকে গিয়ে গাছের সাথে ধাক্কা খায় সে। পড়েই যাচ্ছিলো হাত দিয়ে ধরে নেয়। বর্ণালীর জান বেরিয়েই যাচ্ছিলো। ইভানের পড়ে যাওয়া দেখে হালকা স্বরে ইভান বলে এগিয়ে আসতে গিয়েও থমকে যায় ওর হাতের ইশারায়। ইভান হায় তুলে এগুতে না করে। কনুয়ের পাশে জ্বলছে ওর মনে হয় ছিলে গেছে। চোখে জল নিয়ে গাড়িতে উঠে বসে। সে গাড়িতে উঠতেই রুমু বলে,
-“কি হলো ইভান?”
-“কিছু না রুমু। ওর কাছে যাও তুমি, আমি বাসায় যাচ্ছি।”
-“তোমার কনুইয়ের পাশে তো অনেকটা জায়গা ছিলে গেছে, রক্ত বেরুচ্ছে।”
-“হুম ভালোবাসার দেয়া আরেকটা উপহার।”
কথাটা বলেই ইভান মৃদু হাসে। রুমুর আর বোঝার বাকি নেই বর্ণালী আবারো উল্টো কিছু করেছে। তাই আর কোন কথা না বলে বেরিয়ে যায় গাড়ি থেকে। সাথে সাথে ইভান স্টার্ট দিয়ে চলে যায়। বর্ণালী ঠায় দাঁড়িয়ে চোখের জল ফেলছে। আজ যে সে আরো একবার তার ভালোবাসাকে কষ্ট দিয়ে দিলো।
-“ন্যাকা কান্না করছিস কেন?”
রুমুর কথায় কোন জবাব দেয়না সে। তার কোন জবাব দেয়ার নেই। যেভাবে আজ ইভানকে কষ্ট দিয়েছে তারপর ওর কান্না করাটা মানায় না। তাহলে কেন সে কান্না করছে! তার এই কান্নাকে তো যে কেউই ন্যাকা কান্না বলবে।
-“তুই ইভানকে কষ্ট দিয়ে কি খুশি আছিস? নিজেও তো কান্না করছিস। তাহলে কেন ওকে এভাবে কষ্ট দিস তাও বারবার। সে তোকে পাগলের মতো ভালোবাসে তাই তো তোর হাজার অবহেলা, অবজ্ঞাকে ভুলে আবারো ফিরে আসে তোর কাছে। এটা তুই কেন বুঝতে চাস না?”
বর্ণালী কোন কথা না বলে ভেতরে যাবার জন্য পা বাড়ায়।
-“পালাচ্ছিস আমার এই প্রশ্নগুলো থেকে নাকি নিজের অনুভূতি থেকে?”
তাও একটা শব্দ বের করে না সে এমনকি দাঁড়ায়ও না। ভেতরে ঢুকতেই দেখে ওর কাজিনরা বেশ জমে গেছে গানের কলি খেলায়। ওকে দেখেই জয় এগিয়ে আসে। কিন্তু মাঝখান দিয়ে জেনি এসে পড়ে।
-“আরে আপু ভিজলে কীভাবে?”
-“আরে ওই রুমু নিয়ে ভিজিয়ে দিলো।”
-“হ্যাঁ রে আমার প্রচন্ড ইচ্ছে করছিলো বৃষ্টিতে ভেজার।”
রুমু পেছন নিজের চুল ঠিক করতে করতে থেকে জবাব দেয়। জেনি বর্ণালীর একদম কাছে এসে বলে,
-“এই জয় ছেলেটা এমন চিপকো কেন?”
-“কেন? কী করছে?”
-“আরে যেইনা দেখলো তোমরা বাইরে গেছো বারবার জিজ্ঞেস করতেছিলো যে, কোথায় গেলে আর কতবার বাইরে যাবার জন্য উঠলো। কিন্তু আমি কি আর কম নাকি? এই চিপকোটাকে এমনভাবেই চিপকাইছি যে আর উঠতে পারেনাই হিহি।”
বর্ণালী জয়ের দিকে তাকিয়ে রুমে চলে যায়। জয় ওর পিছু যেতে নিয়েও থমকে যায়। রুমু সব কান পেতে শুনছিলো। জেনির কথায় খুশি না জয়ের উপর রাগবে বুঝতে পারছেনা। তবে আজকে মেয়েটা কাজের মতো কাজ করেছে।
-“যা একটা কাজ করেছিস না পিচ্চিটা। আয় বুকে আয়৷ না থাক পরে আসবি নে এখন ভিজে গেছি।”
জেমি থ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা দুজনই তাকে রেখে চলে যায়।
রুমু চুল ঠিক করতে করতে সামনের দিকে যাচ্ছিলো ওমনি সজিবের সাথে ধাক্কা খায়। সজিবও ভিজে আছে। রুমুর হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ কি এমন হলো যে এভাবে ওকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে! কিছুই বুঝতে পারছেনা।
-“সজিব কী করছো? এভাবে কেন টানছো? কী হলোটা কী তোমার?”
তার কোন কথার উত্তর না দিয়ে নিজের রুমে নিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। দরজার সাথে রুমুকে ঠেকিয়ে ওর একদম মুখের কাছে মুখ এনে বলে,
-“ইভানের সাথে বর্ণ কী করছিলো হ্যাঁ? আর তুই ইভানের গাড়িতে বসে ওদের পাহারা দিচ্ছিলি? তোর কি মাথায় সামান্যতম বুদ্ধি নেই? এতোটাই মাথামোটা তুই? আমার বোনকে তুই নষ্ট করছিস? এই সেই ছেলে না যার জন্য বর্ণ এতোটা দিন ঘরবন্দী ছিলো?”
-“ছাড়ো সজিব। কী করছো?”
-“আমি কী করছি? করেছিস তো তুই। তুই আমার বোনের সাথে এভাবে করতে পারলি? ওর থেকে বয়সে একটা ছোট ছেলের সাথে ওকে প্রেম করতে সুযোগ করে দিচ্ছিস?”
-“ছাড়ো সজিব। আমার হাতে ব্যাথা পাচ্ছি। আমার কথা শুনো আগে।”
-“কী শুনবো হ্যাঁ? আর কি শুনাবি তুই?”
রুমুর চোখ দিয়ে অবিরত জল ঝরছে। সজিব ওর হাত এমনভাবে ধরেছে যে ওর হাতে স্পষ্ট লাল দাগ হয়ে গেছে। রক্ত জমাট বেঁধে গেছে। আর সইতে না পেরে রুমু সজিবকে ধাক্কা দিয়ে দেয়। চোখের জল মুছে এক হাতে অন্য হাত ঘষতে লাগে। সজিবের এমন রুপ সে কখনোই দেখেনি। সজিব আবারো তেড়ে আসে ওর দিকে। দু’বাহু ধরে দরজায় চেপে ধরে বলতে লাগে,
-“কাল পর্যন্ত সময় দিলাম। আমি যেনো আমার বোনকে ওই ছেলের সাথে না দেখি।”
রুমুর চোখ দিয়ে এখন প্রায় রেগে আগুন বের হচ্ছে। ভ্রু কুঁচকে চোখ ছোট ছোট করে তাকায়। রাগের সময় তাকালে অনেকের চোখ বড় হয় কিন্তু ওর চোখ বরাবরই ছোট হয়। হাত জ্বালা করছে ওর। কিন্তু না এবার তাকে আর চুপ থাকলে হবেনা। অনেক সহ্য করেছে আর না।
-“পেয়েছো কি তুমি হ্যাঁ? নিজে প্রেম করলে কিছুনা আর তোমার বোন প্রেম করলেই সমস্যা না? ভালোবাসা কি বোঝো? ইভান বর্ণকে ভালোবাসে আর বর্ণ ভালোবাসে ইভানকে। আর এটা তোমার মেনে নিতেই হবে।”
রুমুর এমন কথায় সজিবের হাত আরো শক্ত হয়ে আসে। দাঁত চেপে ব্যাথা সহ্য করছে সে। কলিজার টুকরো বান্ধবীর জন্য এই ব্যাথা তো কিছুই নয়। সে আরো ব্যাথা সহ্য করতে পারবে। সজিবের চোখ লাল হয়ে গেছে। চোখে জল টলমল করছে। তীব্র রাগে কাঁপছে সে। রুমুর এতোটাই কাছে এসেছে যে ওর ভেজা চুল থেকে জল গড়িয়ে রুমুর মুখে গলায় বেয়ে পড়ছে। রাগে সে বুঝতে পারছেনা কি করছে না করছে।
#______চলবে………..

#_ফাগুন_প্রেম
পর্বঃ ৫০
Written by: Bornali Suhana
💛
💛
সজিবের চোখ লাল হয়ে গেছে। চোখে জল টলমল করছে। তীব্র রাগে কাঁপছে সে। রুমুর এতোটাই কাছে এসেছে যে ওর ভেজা চুল থেকে জল গড়িয়ে রুমুর মুখে গলায় বেয়ে পড়ছে। রাগে সে বুঝতে পারছেনা কি করছে না করছে।
-“ছাড়ো সজিব, আমার লাগছে।”
-“ছেড়ে দিবো? যেসব কাজ তুই করছিস তারপরেও তোকে ছেড়ে দিবো? তুই বর্ণকে এসব ব্যাপারে সাহায্য করিস না?”
-“হ্যাঁ করি আর করবোও। ওদের আমি এক হতে দেখতে চাই।”
-“এক হওয়া মাই ফুট। বর্ণকে না বুঝিয়ে তুই উলটো ওকে সাহায্য করছিস?”
-“হ্যাঁ হ্যাঁ করছি, কেননা আমি জানি ভালোবাসা না পাওয়ার কষ্ট। আরে তুমি তো ভালোবাসা অল্পতেই পেয়ে গেছো তুমি কি বুঝবে ভালোবাসা না পাওয়ার কষ্টটা কি!”
এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে রুমু থামে। সজিবের হাত অনেকটা হালকা হয়ে এসেছে। আগে যতটা শক্ত করে ধরেছিলো এখন ততোটা না। রুমুর চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়তে দেখে সজীবের মনের মাঝে কোথাও কষ্ট লাগছে। ও তো কাঁদাতে চায়নি তাকে। কেন এমন করলো সে! রুমু কাউকে ভালোবাসতো? সে তার ভালোবাসা পায় নি? কিন্তু আমি কেন জানিনা! সজিবের মনের মাঝে প্রশ্নগুলো ঘুরপাক করছে। মুহুর্তেই ওকে জিজ্ঞেস করে,
-“তুই কাকে ভালোবাসতি?”
-“ভালোবাসতাম না ভালোবাসি আর বাসবোও।”
-“কে সে?”
-“আমি তোকে বলতে বাধ্য নই।”
-“বাহ এখন আবার তুমি থেকে তুই তে এসে গেলাম?”
-” হ্যাঁ, আমায় যেতে দে।”
-“আমার প্রশ্নের উত্তর দে তুই কাকে ভালোবাসিস?”
-“তোকে বলে আমার লাভটা কি হবে?”
-“আমায় বলবি তুই ব্যাস।”
-“আমি বলবো না মানে বলবো না।”
-“দেখ রুমু আমার মাথা গরম করবি না।”।
-“ছাড় আমায়, যেতে দে নাহলে খারাপ হয়ে যাবে।”
-“কি খারাপ করবি?”
-“লোকজন ডেকে বলবো তুই আমার সাথে খারাপ কাজ করতে চেষ্টা করেছিস।”
সজিব ওকে ছেড়ে হাসতে লাগে। হো হো করে হাসছে সে৷ ওর হাসিটাও রুমুকে মুগ্ধ করছে। হাসির প্রতিটা শব্দ কানে এসে যেনো বারবার প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। ইচ্ছে করছে ওই হাসির মাঝেই নিজেকে হারিয়ে নিতে। হাসি থামিয়ে ওর কাছে এসে বলে,
-“তুই যে এসব কিছুই করবি না আমি জানি। আর করলেও কেউ বিশ্বাস করবেনা তোকে এখানে। সো এসব বাদ দিয়ে আমার কথা মনযোগ দিয়ে মাথায় ঢুকিয়ে নে। আমি যেনো বর্ণকে আর ইভানের সাথে না দেখি। ইভানকেও যাতে আর ওর আশেপাশে না দেখি।”
-“এটা কখনোই সম্ভব নয় সজিব। ওরা দুজন দুজনকে ভালোবাসে। তুই তোর ভালোবাসাকে পেলে তারা কেন পাবেনা? ইভানের কিসের কমতি আছে?”
-“চুপ, একদম চুপ।”
-“আমাকে চুপ করতে বলছো কেন? গায়ে লাগে কথা? নিজের ভালোবাসা ঠিকই বুঝো আর ওদের ভালোবাসা বুঝো না?”
সজিব রেগে রুমু চুলের পেছনে ধরে ওর মুখটা একদম কাছে নিয়ে আসে।
-“দেখ রুমু আর একটা কথাও বলবি না। নাহলে আমি কি করে বসবো জানিনা। ইভানের সাথে আমাদের বর্ণের কখনোই কিছু হবার নয়। ইভান বয়সের তুলনায় বর্ণ থেকে ছোট। আর আমাদের সমাজ এসব নিয়ে নানাধরণের কথা বানাবে।”
-“আচ্ছা? সমাজ ওদের নিয়ে কথা বানাবে তাই বুঝতেছো আর তোমার আর ঈশাকে নিয়ে যে কথা বানায় তা চোখে পড়ে না? তা কানে লাগে না? নাকি শুনেও না শুনার ভাব নিয়ে চলো?”
-“মানে কী? কী কথা বানাচ্ছে সমাজ?”
-“ওহ প্লিজ এভাবে জেনেও না জানার ভান করো না। তুমি যে বড়লোক বাবার মেয়ে বিয়ে করে নিজের জীবন গুছাচ্ছো তা কি কেউ বুঝেনা ভাবছো? তাহলে বর্ণের আর ইভানের সম্পর্কে সমস্যা কোথায়? ইভানও তো বড়লোক বাবার একমাত্র ছেলে। বর্ণ ওর সাথেই সুখী হবে। নাকি তুই বর্ণের খুশি দেখতে……”
কথাটা সম্পূর্ণ করার আগেই ওর মুখ বন্ধ করে দিলো সজীব। ঠোঁটে কামড়ে দিচ্ছে দাঁত দিয়ে। রুমুর কষ্টে ভেতর ফেটে যাচ্ছে৷ একদিকে চুলে এমনভাবে ধরেছে যে মনে হচ্ছে কতগুলো ছিঁড়ে নিয়ে আসছে। অন্যদিকে তার ঠোঁট দুটো যেনো কামড়ে খাচ্ছে। সজীব রাগে এমন কোন কাজ করবে ভাবতেও পারেনি। রাগের মাথায় বোধ শক্তিটাও হারিয়ে ফেলেছে সে। এই মুহুর্তে তার রুমুকে চুপ করানোই সবচেয়ে জরুরী মনে হচ্ছিলো। কিন্তু এভাবে! রুমুর চোখ দিয়ে জল পড়ার পরিমাণ বাড়তে লাগলো। ওর ভালোবাসার দেয়া প্রথম উপহার এটা তাও কষ্ট দেবার জন্য দিচ্ছে। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে ওর। হাত দিয়ে সজিবের বুকে মারতে লাগলো। নখের আঁচড় বসিয়ে দিয়েছে কত তার কোন হিসেব নেই। ঠোঁটের মাঝে সজীবের কামড় অনুভব করতে না পেরে এই মুহুর্তে আরো দুইজোড়া ঠোঁটের স্পর্শ পেলো রুমু। যে হাত দিয়ে তার মারছিলো সে হাত এখন শার্ট খামচে ধরেছে। ঠোঁটের ভাঁজে ঠোঁট গভীর হচ্ছে। রুমু হারিয়ে যাচ্ছিলো সজিবের মাঝে হুট করে সেদিনের দেখা ঈশার সাথে ওর কাছে আসার মুহুর্তটা চোখের সামনে ভেসে উঠে। চোখ খুলতেই সজিবের মুখের দিকে দৃষ্টি পড়ে। এতোটা কাছ থেকে সে কখনোই দেখে নি। সে চোখজোড়া বন্ধ করে আছে। রুমু দু’হাত ওর বুকের উপর রেখে ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই সজিব ওকে ছেড়ে দেয়। দুজন দু’প্রান্তে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। নীরবতা ছেয়ে গেছে সম্পূর্ণ পরিবেশটা। যে চোখে কিছুক্ষণ আগেও আগুন ঝরছিলো সে চোখে এখন ভয়। আরও এক জোড়া চোখ থেকে বৃষ্টির ধারার মতো নিশ্চুপ জল পড়ছে। দুজনার দৃষ্টি একে অপরের দিকেই আছে। রুমু কাঁপা কাঁপা হাতে দরজা খুলে একটা দৌড় দেয়। দরজাটা এমনভাবে খুলেছে যে খোলার সাথে সাথে ধাক্কা খেয়ে আবার লেগে গেছে। সজীব অপরাধীর মতো মাথায় হাত দিয়ে বিছানার কাছে ফ্লোরে বসে যায়।
-এ আমি কী করলাম? রুমুর সাথে এসব কীভাবে করতে পারলাম আমি? আমি কীভবে মুখ দেখাবো ওর সামনে? ঈশাকে কী জবাব দেবো আমি? ওর সাথে যে বেঈমানী করে ফেললাম। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে খাটের মাঝে বারবার মেরেই যাচ্ছে। হাত ফেটে রক্ত বের হয়ে যাচ্ছে।
👇
ইভান কলিংবেল চেপে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। রানু এসে দৌড়ে দরজা খুলে দেয়। ভেতরে মেহমান হাতে গোনা কয়েকজন মাত্র। সম্পূর্ণ ভেজা শরীরে হাঁচি দিতে দিতে রুমের দিকে যেতে লাগে। সাহারা ইসলাম ছেলেকে ভেজা শরীরে দেখে এগিয়ে আসেন। শাড়ির আঁচল দিয়ে ছেলের মাথা মুছে দিতে দিতে বলেন,
-“কীভাবে ভিজলে? একদম নিজের খেয়াল রাখতে শিখলে না? আমি আর এভাবে কতদিন খেয়াল রাখবো?”
তার কথায় এখন ভালোবাসার পরিমাণ বেশি দেখা যাচ্ছে। কেননা যখন ছেলে মেয়ের প্রতি যত্নটা বেড়ে যায় তখনই তিনি তাদের তুমি করে সম্ভোধন করেন। যেমন এখন করছেন।
-“মা তুমি এমন করছো কেন? আমি কি এখনও বাচ্চা রয়েছি?”
-“শুধু তুই না ঈশাও এখনো আমার কাছে বাচ্চাই রয়ে গেছে। বাবা-মায়ের কাছে তাদের সন্তান কখনোই বড় হয়না। আজীবন বাচ্চাই রয়ে যায়।”
ছেলের মাথা মুছে কপালে চুমু এঁকে দেন। সে আর কথা না বাড়িয়ে সিঁড়ি গুলোতে একরকম দৌড়ে উপরে চলে যায়। ঈশা সজিবকে কল দিতে চেষ্টা করছে কিন্তু পারছেনা। কাজিনরা ও ভাবী সেই কখন ওর থেকে ফোন ছিনিয়ে নিয়ে গেলেন আর ফেরত দেন নি। কতবার করে চাইলো উল্টো ওকে আরো কত খোঁচানোমূলক কথা শুনতে হলো। বেচারি চুপিচুপি কাজিনরা যে রুমে আছে সেখানে গিয়ে টুপ করে ফোনটা নিয়ে আসে। লুকিয়ে সজিবকে কল দিতে লাগে। কিন্তু সজিব ফোন রিসিভই করছেনা। দ্বিতীয়বার কল দিতে গেলেই হাত থেকে কেউ একজন ফোন কেড়ে নিলো। পেছনে তাকিয়ে দেখে ওর ভাবী। একমাত্র ফুফাতো ভাইয়ের বউ। তার মুখে অসম্ভব শয়তানি হাসি।
-“কি গো একটুও তর সয়না? এতো ভালোবাসা? আহারে! কিন্তু আমার যে কিছুই করার নেই। কথা তো এখন আর হচ্ছেনা। একটু অপেক্ষা করো একেবারে বিয়ের পর কথা বলবা তাও বাসর রাতে।”
-“ভাবী কি সব বলো!”
ঈশার চোখে মুখে স্পষ্ট লজ্জা ফোটে উঠেছে। বাসর রাতের কথা সে কখনো ভাবেই নি। ভাবার সময়টুকুই সে কখনো পায়নি। এই মুহুর্তে সজিবের সাথে কথা বলার জন্য ওর মনটা কেমন যেনো করছে। রাগ লাগছে কিন্তু কিছু বলতে পারছেনা। সারা সন্ধ্যা থেকে একটাবারও কথা বলতে পারেনি। রাগ লাগারই কথা তবুও কন্ট্রোল করলো।
ইভান ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দেয়। দরজার পাশে সাজানো ফুলের টবটা লাথি মেরে ফেলে দেয়। ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে পুরো রুমে ছড়িয়ে যায়। আশেপাশে যা কিছু আছে ভেঙেই চলেছে। নীচ থেকে ভাঙার আওয়াজ শুনে সাহারা ইসলাম দৌড়ে উপরে আসেন। অনেকদিন পর ছেলের এমন রাগ দেখছেন তিনি। যদিও ওর এই রাগের সাথে পূর্ব পরিচিত। ঈশাসহ সকল কাজিন ও বাকি মেহমানরা এসে ভীড় জমায়। সবাই একই কথা জিজ্ঞেস করছে, “কী হলো ছেলেটার? উলটা পালটা কিছু করে ফেলবে না তো?” ঈশা জানে ইভান অল্পতেই ভেঙে পড়ার নয়। আর এটা সে ভালোভাবেই বুঝতে পারছে যে বর্ণালীর সাথে আবারও কিছু হয়েছে। তাই এখন এই পরিস্থিতি সামলাতে হবে তার। সবাইকে নীচে নিয়ে যাওয়ার জন্য ভাবীকে ইশারা করে।
-“কে কে চা খাবেন চলেন। সবার জন্য গরম গরম চা বানানো হবে তাও আমাদের কনে বানাবে।”
সাথে সাথে সবাই নীচে ড্রয়িংরুমে চলে আসেন। টিভি অন করে মুভি লাগিয়ে দিয়ে ঈশা আর ওর ভাবী রান্নাঘরে চলে যায়। সাহারা ইসলামও ধীরপায়ে রান্নাঘরে প্রবেশ করেন। রাত্রের খাবার নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়েন। দীপুটাকে সেই কখন বাজারে পাঠিয়েছেন এখনও আসার নাম নেই।
👇
রুমুর সম্পূর্ণ শরীর কাঁপছে। কী হয়ে গেলো একটু আগে। রুমে ঢুকতেই বর্ণের চোখ পড়ে রুমুর উপর। ওর এই অবস্থা দেখে তার মাথায় খটকা লাগে। সে বুঝতে পারছে রুমুর সাথে কিছু একটা হয়েছে যা হওয়া উচিৎ ছিলো না।
-“কি হয়েছে রুমু?”
রুমু কোন কথা বলছে না। ভেজা শরীরেই বিছানায় বসে আছে চুপচাপ। শরীরের কাঁপুনি দেখে বর্ণালী ওর দিকে এগিয়ে আসে। ওর কাঁধে হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করে,
-“রুমু কথা বলছিস না কেন? কী হয়েছে তোর? এভাবে কাঁপছিস কেন?”
রুমু এক দৃষ্টিতে বর্ণালীর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে কান্নায় ভেঙে পড়ে। বসা অবস্থাতেই ওর কোমড় জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগে। কখনোই সে তাকে এভাবে কাঁদতে দেখেনি। আজ কি এমন হলো যে সে এভাবে কাঁদছে। ওর কান্না দেখে বর্ণালীও কেঁদে দেয়।
-“প্লিজ রুমু বল কী হয়েছে? না বললে কীভাবে বুঝবো? বললে তো আমি বিষয়টা সমাধান করতে পারি কিনা দেখবো। প্লিজ বলনা জান।”
ও নিজেকে কন্ট্রোল করে কান্না থামিয়ে নেয়। বর্ণালীকে ছেড়ে চোখের জল মুছে উঠে দাঁড়ায়।
-“আমি বাসায় যাবো রে।”
-“বাসায় যাবি মানে কী?”
-“হ্যাঁ আমি বাসায় যাবো।”
-“কাল বাদে পরশু ভাইয়ার বিয়ে আর তুই বাসায় যাবি তাও এই এতো রাত্রে? মাথা খারাপ?”
-“হ্যাঁ আমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। আমায় যেতে দে প্লিজ।”
-“তোর ঠোঁটের কোণা কেটেছে কীভাবে?”
রুমু এমন কথায় থতমত খেয়ে যায়। এই কথার কোন জবাব না দিয়ে সে অন্য দিকে পাশ ফিরে নিজের ব্যাগ গুছাতে লাগে। বর্ণালী টান দিয়ে ওকে নিজের দিকে ফিরিয়ে ব্যাগে যা কাপড় গুছিয়েছিলো বের করে বিছানায় ছড়িয়ে দেয়।
-“কী করছিস এসব? আমি কত কষ্ট করে ব্যাগ গুছালাম আর তুই সব ফেলে দিলি?”
বর্ণালী তার হাতে একটা ড্রেস ধরিয়ে দিয়ে বলে,
-“যা চেঞ্জ করে আয়।”
-“কিন্তু…”
-“বলেছি তো চেঞ্জ করে আয় আগে।”
রুমু আর কোন কথা না বলে ওয়াশরুমে চলে যায়। বর্ণালী ভাইয়ের রুমের দিকে পা বাড়ায়। সে জানে রুমুর সাথে যাই হয়েছে তার মাঝে সজিব জড়িত আছে। দরজা খোলা দেখে কোন নক না করেই রুমে ঢুকে যায়। সজিবকে মাথায় হাত দিয়ে ফ্লোরে বসে থাকতে দেখে ওর আর বুঝতে বাকি রইলো না। হাতের উপরে রক্তে ভরে গেছে। ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে ভায়ের সামনে বসে যায়। হাত টান দিয়ে নিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিতে লাগে। সজিব ব্যাথা পাচ্ছে কিন্তু কিছুই বলছে না। বর্ণালী ওকে কিছু জিজ্ঞেস করতে এসেছে সে জানে। কিন্তু জিজ্ঞেস করছে না কেন? হাত ব্যান্ডেজ করে দিয়ে বেরিয়ে যেতে নিলেই সজিব পেছন থেকে ওকে আওয়াজ দেয়।
-“বর্ণ….”
অশ্রুসিক্ত চোখে ভাই-বোন একজন আরেকজনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। এখানে একজনের চোখের জল অপরাধবোধের আর অন্যজনের জল নিশ্চুপতার। কেননা ইচ্ছে থাকা সত্তেও বর্ণালী তার ভাইকে কিছুই জিজ্ঞেস করতে পারছেনা।
-“রুমুর অবস্থার জন্য আমি দায়ী।”
সজিবের মুখে এমন কথা শুনে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস বেরিয়ে এলো ভেতর থেকে। ভেতরের কষ্টটা তাকে ভেঙে চুরমার করে দিচ্ছে। এই দীর্ঘ নিঃশ্বাস সে কষ্টেরই বহিঃপ্রকাশ।
-“আচ্ছা।”
বর্ণালীর মুখে আচ্ছা কথাটা সজিব ঠিক মানতে পারছে না। আজ সে তার বোনের চোখেও অপরাধী, খারাপ, নীচ প্রমাণিত হয়ে গেলো। চোখ তুলে তাকাতে পারছে না ওর দিকে। বর্ণালী চলে যেতে চাইলেই সজিব ওকে পেছন থেকে বলে,
-“দাঁড়া বর্ণ। এভাবে তোর ভাইয়াকে রেখে যাস নে। আমি যে অপরাধ করেছি তার কীভাবে প্রায়শ্চিত্ত করবো বলে যা প্লিজ।”
-“রুমুকে বিয়ে করতে পারবে?”
এমন কথা শুনে সজিবের মাথায় যেনো বাজ পড়লো। আশপাশ যেনো নিস্তব্ধতায় ঢেকে গেছে। চোখে ঝাপসা দেখছে। চোখের জল মুছে বর্ণালীর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“আমি ঈশাকে ভালোবাসি।”
-“এ তোমার কেমন ভালোবাসা যে ভালোবাসা অন্য একটা মেয়ের নিকটে যাবার সময় ভুলেই গিয়েছিলে। একটাবারও কি তখন ঈশার কথা মনে হয়েছিলো? যে ভুল তুমি করেছো তার জন্য কী ঈশা তোমায় ক্ষমা করবে? তুমি কি ক্ষমার যোগ্য? নাকি রুমু তোমায় ক্ষমা করুক এটা তুমি চাও? আসলেই কি রুমুর তোমাকে ক্ষমা করা উচিৎ?”
যদি প্রশ্নগুলোর উত্তর পাও তাহলে এসো কথা বলতে। আমি অপেক্ষায় আছি। আর ঈশাকে এই বিষয়ে তুমি বলবে না আমি বলবো তাও ঠিক করে নিও।”
কথাটা বলে সে আর কোন জবাবের অপেক্ষা না করে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। ড্রয়িংরুমে আসতেই রুমুর হাসির শব্দ শুনতে পায়। রুমু হাসছে! বর্ণালী এগিয়ে যেতেই দেখে জেনি, সায়ান, আদনান ও আইনানের সাথে বসে গল্প করে হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আইনান ও আদনান জেনির আপন ভাই। সায়ান বর্ণালীর চাচাতো ভাই। সায়ান অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ছে। আইনান জেনির বড়। মাস্টার্স কম্পলিট করে ব্যাংকে জব করছে এখন। আদনান মাত্র নাইনে উঠেছে। ওদের দেখে মনে হচ্ছে বেশ ভাব জমে গেছে রুমুর সাথে। সজিবও পেছনে দাঁড়িয়ে রুমুর এমন অবস্থা দেখে অবাক হয়ে যায়। একটু আগেই যে মেয়ে কান্না করছিলো এখন সে এভাবে কথার খই ফোটাচ্ছে আর হাসছে! কীভাবে সম্ভব? বর্ণালী তাদের পাশে গিয়ে বসে গল্পে মনযোগ দেয়। দূর থেকে সজিবকে দেখে চোখ ফিরিয়ে নেয় রুমু। সজিব নিজের রুমে এসে ভাবনায় পড়ে যায়। তার কী করা উচিৎ? কালকে যেভাবেই হোক আগে ঈশার সাথে ওর কথা বলতে হবে। নাহলে অনেক দেরি হয়ে যাবে।
রুমুর ওদের সাথে বেশ জমে গেছে। মনেই হচ্ছেনা এদের ও চিনেনা। বর্ণালীও রুমুর এই হঠাৎ পরিবর্তনে অনেকটা অবাক হয়। কিন্তু ভালোও লাগছে ওকে দেখে। যদিও সে জানে রুমুর এই হাসি শুধু উপরে উপরেই। কিন্তু আসলে তার মনের আঙিনায় ধরেছে কষ্টের ঘুণপোকা। বেড়েছে যন্ত্রণার উপদ্রব। ক্ষয়ে যাচ্ছে ভেতরটায় লুকানো বাসিন্দা। ক্ষণেক্ষণে ঝরে পড়ছে অনুভূতিটাগুলো। যে অনুভূতির বিপক্ষে কখনো যেতে পারেনি আজ হয়তো তার ঠাঁই দিতে চায়না বিন্দুমাত্র।
💛
#______চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here