#_ফাগুন_প্রেম_পর্বঃ ৫৭+৫৮

0
223

#_ফাগুন_প্রেম_পর্বঃ ৫৭+৫৮

লেখনীতেঃ Bornali Suhana
💛
💛
সজিবের হাতে যখন চায়ের কাপ ধরিয়ে দিলো সজিবের দৃষ্টি ওর উপরই ছিলো কিন্তু ঈশা একবারের জন্যও তার দিকে তাকায় নি। ট্রে হাতে নিয়ে রান্নাঘরে চলে যায়। সজিব ওর যাবার পানে তাকিয়ে থাকে অনেকক্ষণ তারপর আলতো করে চায়ের কাপে চুমুক দেয়। চা টাও ঠান্ডা হয়ে গেছে। ঠান্ডা চা ওর একদম পছন্দ নয় কিন্তু এই মুহুর্তে তাকে এটাই খেতে হবে। টিভির চ্যানেল ঘুরাতে ঘুরাতে চা শরবতের মতো একটানে খেয়ে কাপটা যেইনা রাখতে যাবে তখনই ঈশা বিস্কুটের প্লেট নিয়ে আসে। চায়ের কাপ এখনও ওর হাতে ঈশার দিকে তাকিয়ে কয়েকটা দাঁত বের করে হাসার চেষ্টা করে।
-না মানে চা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিলো।
ঈশা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে গলার স্বর নিচু করে বললো,
-বললেই তো গরম করে দিতাম।
চায়ের কাপ ও বিস্কুটের প্লেট নিয়ে ফিরে আসে রান্নাঘরে। সজিব ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বসে একবার রান্নাঘরের দিকে তাকাচ্ছে তো একবার টিভির দিকে।
👇
ফ্যানের শা শা আওয়াজে বর্ণালীর মাথাটায় ভনভন করছে। দাঁড়ানো অবস্থা থেকে ধপ করে সোফায় বসে পড়ে। কানের পাশ দিয়ে ঘাম গলা বেয়ে পড়ছে। রুমুর ভাবী পাশেই দাঁড়িয়ে বর্ণালীর কাঁধে হাত রাখেন। ও মাথা তুলে তাকাতেই চোখ থেকে নিঃশ্বব্দে জল গড়িয়ে পড়ে। রুমু মা মাথায় কাপড় টানতে টানতে এগিয়ে ওর পাশেই বসেন।
-তুই কি খুশি হোস নি রে?
-ছোটমা ও আমায় একটাবার বলেও গেলো না কেন?
-সে কী! তাই নাকি? কিন্তু ও তো বললো তোকে বলেই আসছে।
রুমুর ভাবী বর্ণালীর হাত থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে বললেন,
-তোমারে রুমু মেসেজ দিয়ে গেছে, তুমি হয়তো খেয়াল করো নি।
বর্ণালী আর এক সেকেন্ড অপেক্ষা না করে মোবাইল বের করে মেসেজে খুঁজতে লাগে। জিপি থেকে এতো বেশি মেসেজ আসে যে, মেসেজ দেখার মতো সুযোগই পায় না। নাহলে হয়তো এই মেসেজটাও ওর চোখ এড়াতো না। মেসেজ ওপেন করতেই ওর চোখের জলের গতি বৃদ্ধি পায়। মেসেজ পড়ছে আর অনবরত চোখের জল ফেলছে।
“বর্ণ আমি চলে যাচ্ছি, আমার একটা জব হয়ে গেছে। তোর সাথে দেখা করার সময় পাই নি বলে মন খারাপ করিস না। বাসায় আসলে দেখা হবে নয়তো তুই চলে আসিস। ঢাকা থেকে সিলেট আর কতোই বা দূরে। ইভানকে নিয়ে ভালো থাকিস, ভালোবাসি রে জান”।
বর্ণালী এখানে বসেই রুমুর নাম্বারে আবারাও কল দেয় কিন্তু কোন রেসপন্স পায় না।
-রুমু আমার কল কেন ধরে না?
-ও কারোর কল রিসিভ করে না বর্ণ। শুধু মায়ের সাথে কল দিয়ে কথা বলবে প্রতিরাতে।
ভাবীর কথা শুনে বর্ণালী রুমুর মায়ের দিকে ফিরে তাঁর দু’হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো,
-ছোটমা ওকে একবার বলবে আমার সাথে শুধু একটিবার কথা বলতে? প্লিজ ছোটমা।
– হ্যাঁ রে আচ্ছা আজ কল দিলে বলবো।
-বলো আমি ভালো নেই, আমায় যেনো একটা কল দেয়।
-আচ্ছা রে বলবো তো। এখন তুই বস, না খেয়ে যাবি না।
-না ছোটমা আজকে বিকেলে ভাইয়া,ভাবী তাদের বাড়িতে যাবে। এখন আমি উঠি, অন্যসময় এসে খেয়ে যাবো।
-আচ্ছা ঠিকাছে তাহলে কিন্তু রুমু নেই বলে আবার আসা বন্ধ করে দিস না, আমাদের দেখতে আসিস।
-অবশ্যই আসবো ছোটমা।
বর্ণালী তপ্ত দুপুরে রোদের মাঝে হাঁটছে। মাথাটা এই নিয়ে দু’বার ঘুরে আসলো। একটুর জন্য পড়েই যাচ্ছিলো আবার নিজেকে সামলে নেয়। পাশেই লেবুর শরবত বানিয়ে বেচতে দেখে ওখানে যায়। এই রোদে এক গ্লাস লেবুর শরবত খেলে মন্দ হয় না।
-ভাইয়া এক গ্লাস লেবুর শরবত দেন তো।
-৫টাকা? না ১০টাকা?
বর্ণালী কিঞ্চিৎ অবাক হলো ৫টাকারটা খাবে নাকি ১০টাকারটা! ১০টাকারটা হয়তো বেশি স্বাদ হবে। তাই আর না ভেবে ছেলেটাকে ১০টাকারটা দিতে বলে। ছেলেটা বেশ ফর্সা, উষ্কখুষ্ক চুলগুলো কেমন লালচে-ধূসর। পড়ালেখা করলে খুব সম্ভবত এইবার অনার্স প্রথম বর্ষে অথবা অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়তো। চোখে কেমন মায়া মায়া ভাব আছে রোদে জ্বলে হাত কালো হয়ে গেছে ছেলেটার। সামনে বসেই অনেক ছেলে মেয়ে ফুচকা খাচ্ছে আর আড্ডা দিচ্ছে। চোখের সামনে রুমুর সাথে কাটানো দিনগুলো ভেসে ওঠে। আবারো সেই চোখে জল জমা হয়। কুচকুচে কালো আর অনেকটা মোটা একটা ছেলের পাশে দারুণ সুন্দরী একটা মেয়ে বসে ফুচকা খাচ্ছে। ছেলেটা মাঝেমধ্যে ওকে মুখে তুলে খাইয়ে দিচ্ছে।
-আপা নেন শরবত।
ছেলেটার কথায় বর্ণালীর ধ্যান সেদিক থেকে সরে। সূর্যকে আড়াল করে একটু গাছের ছায়ায় গিয়ে দাঁড়ায় ও। ছেলেটা কি স্বাদের শরবত বানায়। কীভাবে বানালো দেখতে হবে। একটু তাকাতেই দেখলো লেবু চেপার মেশিন দিয়ে চট করে গ্লাসের ঠান্ডা পানির মাঝে লেবুর রস ঢেলে দিলো। তারপর আরেকটা বোতল থেকে কি একটা দিয়ে একটুখানি ঝেঁকে দিয়ে দিচ্ছে। ওর মনে প্রশ্ন জাগে ওই বোতলে কি আছে পানির মতো! হয়তো চিনির সিরা হবে। শরবতের টাকা দিয়ে ছেলেটাকে তার নাম জিজ্ঞেস করলো,
-আচ্ছা তোমার নাম কি?
-ছামী আপা ক্যান?
-পড়ালেখা ছেড়ে দিছো?
– হো আপা, পড়ালেহা কইরা কী লাভ? চাকরী তো নাই, এর থাইকা বাপ মায়েরে রুজি কইরা খাওয়াইলেও ভালো।
বর্ণালী ছেলেটার দিকে একটু তাকিয়ে ওই কপোত-কপোতীর দিকে আরো একবার তাকায় তারপর বাড়ির পথে পা বাড়ায়। ছামী যদি কোন বড়লোক বাবার ছেলে হতো বা কোন ভালো চাকুরীজীবি হতো তাহলে হয়তো ও এভাবে সুন্দরী কোন প্রেমিকা বা বউ নিয়ে ফুচকা খেতে আসতো, হতো কতশত প্রেমালাপ। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস যেখানে বড়লোকের কালো, মোটা, খাটো ছেলেদেরও দাম বেশি সেখানে গরীবের বা মধ্যবিত্তের ঘরে জন্ম নেয়া ফর্সা, সুদর্শন ছেলের কোন দাম নেই। এই জিনিসটা শুধু ছেলেদের বেলায় না মেয়েদের বেলাতেও হয়। ওইতো সেদিন পাশের বাসার আন্টির মেয়ে নাজিবার বিয়ে হচ্ছিলো না, শুধুমাত্র ও একটু কালো মোটা আর খাটো বলে কিন্তু যেই না শুনলো ওর আমেরিকা যাবার যে এপ্লাই ছিলো সেটার প্রসেসিং সাকসেস হয়ে গেছে সাথেসাথে একশোটা ছেলের জন্য বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে হাজির তাদের বাড়ির ঘাস মেরে ফেলতেছিলো এমন অবস্থা। কিন্তু পরে দেখা গেলো নাজিবা এখন বিয়ে করবে না বলে আমেরিকা চলে গেলো।
-আপা যাবেন?
রিকশাওয়ালার ডাকে ওর ভাবনায় ছেদ পড়ে। বাস্তবতা অনেক সুন্দর নয়তো অনেক বিশ্রী। এটা যে দেখছে তার দেখার উপর নির্ভর করে।
-ও আপা যাবেন?
– হ্যাঁ চলেন।
ওর কথা শুনে মনে হয় রিকশাওয়ালা অনেকটা অবাক হলো। রিকশায় উঠে আরেকবার ভাবলো ও কি বললো যার জন্য ছেলেটা ওর দিকে এভাবে তাকালো। হয়তো আপনি করে বলায় রিকশাওয়ালা ছেলেটা অনেক অবাক হয়েছে। কেননা সাধারণত ওদের মতো মানুষদের কেউ আপনি করে বলে না। বর্ণালী রিকশাওয়ালা ছেলেটার ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসির রেখা ফুটে উঠতে দেখে গভীর একটা নিশ্বাস নেয়। আবারো রুমুকে কল লাগায় কিন্তু এবারও সেই আগের মতোই রিসিভ করেনি।
👇
ঈশা বাড়িতে যাবার জন্য রেডি হচ্ছে কিন্তু সজিবের মন মানছে না যেতে। তবু কিছু করার নেই, যেতে তাকে হবেই। সে ভেবেছিলো ঈশা হয়তো ড্রেস পরেই যাবে কিন্তু রুমে এসে একরকম টাস্কি খায় সে। হালকা বেগুনির মাঝে এক রঙের একটা শাড়ি পরেছে। বর্ণালীকে পাশে দেখে বুঝে গেছে নিশ্চয়ই ও তাকে শাড়ি পরিয়েছে।চোখ ধাধানো সুন্দর লাগছে ঈশাকে।
-বর্ণ তুই রেডি হয়ে নে।
-মানে কী?
-মানে হচ্ছে তুইও আমার সাথে যাচ্ছিস।
-আরে নাহ, জেনি ওরা যাক আমি না হয় পরে যাবো।
-তুই না গেলে আমিও যাচ্ছি না।
-কিন্তু ঈশা….
-তুই গেলেই আমি যাবো।
-ঠিকাছে বাবা রেডি হই তাহলে আমি গিয়ে।
– হ্যাঁ দ্রুত।
বর্ণালী যেতেই সজিব শার্ট, প্যান্ট নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। ঈশা ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে কাপড় গুছাতে লাগে।
-এতো কাপড় নিচ্ছো! কয়দিন থাকার প্ল্যান?
-দুজনেরই কাপড় এখানে আর বেশি না ২দিনই থাকবো।
ঈশা পাশ কাটিয়ে যেতে নিলেই সজিব ওর হাত ধরে টান দিয়ে বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়।
-কী শুরু করলে সজিব?
-শুরু করতে দিলে কই?
-দেখো সজিব এখন আমার এসব ভালো লাগছে না, প্লিজ ছাড়ো।
সজিব ঈশাকে ছেড়ে দেয়।
-আমাকে শাস্তি দিচ্ছো তো? ঠিকাছে দাও যত দিতে পারো দাও। আমিও দেখবো কত শাস্তি দিতে পারো।
ঈশার মাথা রাগে ফেটে যাচ্ছে। নিজেকে কন্ট্রোল করে সজিবের কাছে এগিয়ে যায়। সজিব অন্য পাশে তাকিয়ে ছিলো ওর গালের পাশে হাত দিয়ে ধরে নিজের দিকে মুখ ফিরায়। সজিবের চিবুকে আলতো করে চুমু খায়। ঈশার কোমড়ে হাত রেখে আরো কাছে টেনে নেয়। ওর নিশ্বাস ঘন হয়ে আসছে। চুলের পেছনে হাত রেখে ঈশার ঠোঁটের ভাঁজে নিজের ঠোঁট গুজে দেয় সজিব। ঈশা পা আলগা করে তার কাঁধে শক্ত করে ধরে দাঁড়ায়। ওর হৃদস্পন্দন দ্রুত হয়ে এসেছে। সজিবের বুকের ধুপধুপ আওয়াজটা স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে। হুট করেই ঈশা ওর থেকে সরে আসে। সজিব আবারো এগিয়ে আসতে লাগলে ঈশা বাঁধা দিয়ে বললো,
-পেয়ে গেছো যেটা চাও?
-মানে?
-তুমি তো এসবই চাও। সমস্যা নেই আজ রাতে যা চাও সব করো, আমি বাঁধা দিবো না। নাহলে না আবার অন্য কারো কাছে চলে যাও।
-ঈশা…..
-চিৎকার করে কাকে শুনাচ্ছো?
-কীসব বলছো তুমি? আমি তোমায় ভালোবাসি।
-বিশ্বাস করিনা, যেদিন বিশ্বাস করাতে পারবে সেদিন বলো। এখন ব্যাগ নিয়ে বাইরে এসো। নাহলে যেতে লেট হবে।
-ঈশা শুনো,
ঈশা আর দাঁড়ায় না। চোখ-মুখ শক্ত করে রুম থেকে বাইরে চলে আসে। বর্ণ ও বাকি সবাই রেডি হলো কিনা দেখতে যায়। রুমে এসে দেখে বর্ণালী রেডি হয়ে ফোনে কথা বলছে আর বাকিরা মেকাপ করতে মহাব্যস্ত। ওদের মেকাপ দেখে হেসে দেয় ঈশা।
💛
💛
#_____চলবে……….

#ফাগুন_প্রেম
পর্বঃ ৫৮
লেখানীতেঃ Bornali Suhana
💛
💛
ঈশা আর দাঁড়ায় না। চোখ-মুখ শক্ত করে রুম থেকে বাইরে চলে আসে। বর্ণ ও বাকি সবাই রেডি হলো কিনা দেখতে যায়। রুমে এসে দেখে বর্ণালী রেডি হয়ে ফোনে কথা বলছে আর বাকিরা মেকাপ করতে মহাব্যস্ত। ওদের মেকাপ দেখে হেসে দেয় ঈশা। মেকাপের জিনিসগুলো আনতে হবে। বিয়ের সময় কিছুই আনা হয় নি।
-কার সাথে কথা বলছিস?
বর্ণালী পেছন ফিরে ঈশাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়। ঈশা কিছুই বুঝতে পারছে না। নিধি আর জেনিও মেকাপ রেখে তাদের পাশে এসে দাঁড়ায়। হুট করেই ওর কি হলো কেউ কিছুই বুঝতে পারছে না।
-বর্ণালী কী হয়েছে তোর?
-রুমু,
-রুমু! কী হয়েছে ওর?
-রুমু চলে গেছে।
– চলে গেছে মানে? কোথায় গেছে?
– ও এখান থেকে চলে গেছে।
-কেন কোথায়?
-ওর জব হয়ে গেছে, সেজন্য সিলেট চলে গেছে।
-কিহ!!!
কিছুক্ষণের মধ্যেই পরিবেশটাতে স্তব্ধতা ছেয়ে গেছে। ঈশার মুখ দিয়ে কোন কথাই বের হচ্ছে না। নিস্তব্ধতার মাঝে শুধু বর্ণালীর হেচকি তোলার শব্দ কানে বাজছে৷ ঈশার চোখের কোণ বেয়ে জল আসতে না আসতেই দু’হাতের বৃদ্ধাঙুলি দিয়ে মুছে দেয়। দীর্ঘ একটি নিশ্বাস নিয়ে হাসির চেষ্টা করে বর্ণালীর দু’বাহু ধরে বললো,
-চিন্তা করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে।
-কিন্তু ও তো কোন উপায়ে যোগাযোগই করছে না।
-তোর সাথে ও যোগাযোগ না করে থাকতেই পারবে না দেখে নিস।
-এমনই যেনো হয়।
– হ্যাঁ হবে, এবার রেডি হয়ে নে।
-আর কী রেডি হবো? আমি তো রেডিই।
-মানে কী! এভাবে যাবি তুই?
– হ্যাঁ তো?
– এই ড্রেসটা চেঞ্জ কর আমার মা। ওখানে কেউ তোকে দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।
বর্ণালী লজ্জায় চোখ নামিয়ে নেয়।
-আহারে আমার লজ্জাবতী ভাবী।
-ঈশা, তুইও না।
-আমিও না কী! তোদের রোমান্সের সুযোগ করে দিবো দেখিস। এবার দাঁড়া আমি ড্রেস চুজ করে দেই।
ঈশা আলমিরা থেকে সম্পূর্ণ সাদা রঙের একটা ড্রেস, প্লাজো আর লাল রঙের কাতান কাপড়ের একটা ওড়না বের করে দেয়।
-নে এবার পরে নে।
বর্ণালী ড্রেস পরে এসে হিজাব পরতে নিলেই ঈশা ওর হাত ধরে বললো,
-এখানে চুপচাপ বস আমি তোকে রেডি করে দেই।
-কিন্তু,
-কোন কিন্তু না।
ঈশা তাকে হালকা মেকাপ করিয়ে কানে দু’জোড়া ঝুমকা পরিয়ে দিলো। তারপর ওড়না কাঁধের এক পাশ দিয়ে পিন করে দেয়। চুলগুলো খোলা রেখে অনেকাংশ দু’দিকে ছড়িয়ে ওর গালে চুমু এঁকে দিয়ে এক চোখ মেরে বললো,
-ভাইয়ের আগে আমিই চুম্বন করলাম সুন্দরী।
বর্ণালী ঈশার মাথায় একটা চাপড়ে আয়নায় নিজেকে একবার দেখে নেয়।
👇
মেয়ের আগমনে বাড়িতে যেনো প্রাণ ফিরে এসেছে। উৎসবমুখর পরিবেশে রূপ নিয়েছে। আশেপাশের সবাই ওদের দেখতে এসেছে। হরেকরকম রান্না করা হয়েছে নতুন জামাইয়ের জন্য। সজিব ভিজে বিড়ালের মতো এক জায়গায় বসে আছে। আর সবাই তাকে ঘিরে বসেছে। নিজেকে এখন চিড়িয়াখানার গাধা মনে হচ্ছে। সে যতবারই চিড়িয়াখানায় গেছে ততবারই গাধাকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখছে। কিন্তু গাধাটা অনেক সুন্দর ছিলো। কি সব ভাবছে এসব সে! তার মানে কি সে গাধা! ঈশার বেশ মজা লাগছে সজিবকে এভাবে দেখে। জামাই আদর ভালো করে উপভোগ করুক। ভেংচি মেরে নিজের রুমে চলে যায়। ইভান এই মাত্র বাইক নিয়ে এসে ঢুকেছে। কোনরকম বাইক পার্ক করেই গাড়ির আয়নায় চুল ঠিক করে দৌড়ে ভেতরে ঢুকে। বর্ণালী মাত্র সোফা থেকে উঠে ঈশার কাছে যাচ্ছিলো তখনই ইভান ড্রয়িংরুমে দৌড়ে ঢোকার কারণে পা স্লিপ খেয়ে একদম ওর মুখোমুখি এসে দাঁড়ায়। আরেকটু হলে ওকে নিয়েই ফ্লোরে পড়ে যেতো। ইভানের হাসি থামছেই না। দ্রুত নিশ্বাস নিচ্ছে। বর্ণালীর হৃদস্পন্দন যেনো থমকে গেছে মুহুর্তের জন্য। জিভ আলতো করে ঠোঁটে ছুঁইয়ে চোখ বড় বড় করে খালি গলায় ঢোক গিলে লম্বা নিশ্বাস ছাড়ে। ওড়নাটা ঠিক করতে করতে ইভানের পাশ কাটিয়ে উপরে উঠে যায়। ইভানকে আজ এতো আকর্ষণীয় লাগছে কেন ওর কাছে! চোখ ফেরানো মুশকিল ছিলো। ঘামে ভিজে সাদা টি-শার্ট ওর গায়ের সাথে লেগে আছে৷ চুলগুলো কপালে এসে পড়েছে। আর ঠোঁটে সেই খুন হবার মতো হাসি। চোখ গভীর সমুদ্র যেখানে একবার হারালে তার তল খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাকে দেখামাত্রই শরীরের শিরা দিয়ে একটা শিহরণ বয়ে গিয়েছিলো। ইচ্ছে করছিলো তার কপালে ওই ঘামে ভেজা চুলগুলো সরিয়ে আলতো করে একটা ভালোবাসার স্পর্শ এঁকে দিতে। ইভানের দৃষ্টি বর্ণালীর উপরই থমকে গেছে। পেছন থেকে যেনো একদম একটা পরী লাগছে ওকে। চুলগুলো ওর হাঁটার সাথে তাল মিলিয়ে দোল খাচ্ছে। ওড়নাটা ফ্লোর পরিষ্কার করার জন্য যথেষ্ট মনে হচ্ছে।
-হেই ইভু!
জেনির ডাকে ইভান বর্ণালীর অনুপস্থিতি টের পায়। এতোক্ষণ ভাবছিলো এখনও তার সামনে দিয়েই যাচ্ছে। কিন্তু সে যে অনেক আগেই চলে গেছে খেয়ালই করেনি। জেনির ও নিধির কাছে গিয়ে হায় বলে হাত মেলায় দুজনের সাথে। সজিব বুক মেলানোর জন্য উঠে দাঁড়াতেই ইভান বললো,
-দুলাভাই ঘেমে একাকার হয়ে গেছি আগে ফ্রেশ হয়ে আসি তারপর কোলাকুলি করবো।
-হাহা আচ্ছা শালাবাবু।
ইভান ১০টা সিঁড়ি লাফে উঠে যায়। ঈশার রুমে ঢুঁ মেরে দেখে বর্ণালী ওখানে নেই। ঈশার ওয়াশরুমের দরজা লাগানো। ঈশা হয়তো ওয়াশরুমে। আগে ফ্রেশ হয়ে নিক তারপর বোনের সাথে দেখা করে নিবে। নিজের রুমে ঢুকে দরজা লক করেই ইভান টি-শার্ট খুলে ছুঁড়ে মারে বিছানায় কিন্তু টি-শার্টটা গিয়ে পড়ে বর্ণালীর মুখে। মুখ থেকে টি-শার্ট সরিয়ে হাতে নিয়ে একদৃষ্টিতে ইভানের দিকে তাকিয়ে আছে। চওড়া মসৃণ লোমহীন বুক দেখে নিজের বুকটা ধুকধুক করতে শুরু করে ওর। ইভান ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। বর্ণালী অনেকটা অপ্রস্তুতকর অবস্থায় পড়ে গেছে। একদিকে ইভানকে দেখতে মন চাচ্ছে কিন্তু অন্যদিকে এইমুহূর্তে ও লজ্জাজনক পরিস্থিতির স্বীকার। চোখ অন্যদিকে ফিরিয়ে গলা ঝেড়ে আমতা আমতা করে বললো,
-স….সরি, আসলে ঘুরতে ঘুরতে ভুল করে তোমার রুমে এসে পড়েছি।
-ভুলে এসেছো কিন্তু সঠিক রুমেই এসেছো।
-আ….আমি যাচ্ছি পরে কথা হবে।
-বাসন্তী দাঁড়াও।
বর্ণালী তাড়াহুড়ো করে দরজাটা খুলেই রুম থেকে বেরিয়ে আসে। এমনভাবে দরজা খুলেছে যে এখনও দরজার পাখা নড়ছে। ইভান পিছু পিছু কয়েকবার ডাকে দাঁড়ানোর জন্য। কিন্তু বর্ণালীর হাত-পা কাঁপতে শুরু করেছে। এখানে আর দাঁড়ানো যাবে না। ইভান দরজায় দাঁড়িয়ে দাঁত দিয়ে নীচের ঠোঁট কামড়ে মিটিমিটি হাসছে।
💛
💛
#______চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here