#__ফাগুন__প্রেম___পর্বঃ ৩৭+৩৮

0
443

#__ফাগুন__প্রেম___পর্বঃ ৩৭+৩৮
#_লিখাঃ Bornali Suhana

💛
এদিকে বর্ণালী কোন কিছু না ভেবেই ইভানকে কল দিচ্ছে। কিন্তু ইভান কল রিসিভ করছে না। রুমুও বারবার কল দিচ্ছে কোন কল রিসিভ করছে না। করবেই বা কিভাবে ওর মাথায় এখন একটাই কথা ঘুরপাক করছে বর্ণালী কষ্ট পেয়েছে আমাকেও কষ্ট পেতে হবে। ফোন সাইলেন্ট করে রাখা আছে সেদিকে কোন খেয়ালই নেই। বর্ণালীর কান্নার মাত্রাটা বেড়েই চলেছে।
-“ইভান কল রিসিভ করছে নারে। ওর কি কিছু হলো? আমার ভয় করছে রুমু। কোথায় পাবো এখন তাকে?”
-“এদিকে অনুষ্ঠানও শুরু হতে বেশি সময় না। স্টুডেন্টরা আসা শুরু করে দিয়েছে।”
বর্ণালীর কান্নার মাত্রা আরো কয়েকগুন বেড়ে গেলো। রুমু বসা থেকে উঠে এসে বললো,
-“ঈশাকে বা ওর কোন ফ্রেন্ড কে কল দিবি?”
-“হু!! হ্যাঁ তাহলে ওর খবর জানা যেতে পারে।”
চোখ মুছে ঈশার নাম্বারে কল দেয়। কল দেয়ার সাথে সাথেই রিসিভ করে ঈশা।
-“কেমন আছিস রে তুই?”
-“ঈশা ইভান কি বাসায়?”
-“না তো। কেন? কিছু কি হয়েছে?”
বর্ণালী অনেকটা জোরে শব্দ করে কেঁদে দিলো। রুমু তার থেকে ফোন নিয়ে ঈশাকে পরে কথা বলছে বলে রেখে দিলো। এদিকে ঈশা টেনশন করতে শুরু করে কি হলো ভেবে পাচ্ছেনা। সে নিজেও ইভানকে কল দিতে লাগে। কিন্তু রিসিভ হচ্ছেনা।
👇
-“রা….রাহাত হ্যাঁ রাহাত ইভানের ক্লোজ ফ্রেন্ড ওকে কল দিলে ইভানের খবর জানতে পারবো।”
কথাটা বলেই বর্ণালী রুমুর থেকে ফোন নিয়ে চোখ মুছে রাহাতকে কল দেয়৷ ১ম বার রিসিভ না করলেও দ্বিতীয়বার রিসিভ করে নেয়।
-“হ্যা….হ্যালো রাহাত কোথায় তুমি?”
-“কেন ম্যাম কি হয়েছ?”
-“ইভান কোথায়?”
-“কেন ম্যাম?”
-“প্লিজ তুমি জানলে বলো ইভান কোথায়?”
-“ও তো বক্সিং এর জন্য যাচ্ছে।”
-“মানে?”
-“আমরা এখন একটা বক্সিং ম্যাচে আছি। ইভান রিং এর ভেতর।”
-“ইভান কেন বক্সিং খেলতে যাচ্ছে?”
-“আসলে খেলতে নয় ও মার খেতে যাচ্ছে।”
বর্ণালীর বুকটা ধুক করে ধরে আসে। বুকের মাঝে কেমন একটা ব্যাথা অনুভব করছে। চোখ দিয়ে অনবরত জল গড়িয়ে পড়ছে। হাত-পা কাঁপছে ওর। দাঁড়ানো থেকে ধপ করে চেয়ারে বসে যায়।
-“এ…..এসব কি বলছো রাহাত?”
-“ইভান অনেক ডিস্টার্ব। কি সব উদ্ভট কথা বলছিলো নিজেকে নাকি শাস্তি দিবে। তাই তো মার খেতে এখানে এলো।”
-“তুমি ওকে বাঁধা দাও রাহাত প্লিজ। ওকে থামাও বক্সিং করা থেকে।”
-“সে আমার কথা শুনবে না ম্যাম।”
-“তোমরা কোথায় আছো আমাকে এড্রেসটা মেসেজ করো তাড়াতাড়ি।”
-“জ্বি ম্যাম।”
বর্ণালী চোখ মুছে দ্রুত উঠে দাঁড়ায়।
-“কোথায় যাচ্ছিস?”
-“ইভানের কাছে। ওকে আটকাতে যাচ্ছি।”
-“আমিও আসি।”
রুমু আর একমুহূর্তের জন্যও না দাঁড়িয়ে বর্ণালীর পিছু যায়। রাহাত মেসেজ করে বর্ণালীর ফোনে এড্রেস সেন্ড করে দেয়। সেই এড্রেসে দুজনে পৌঁছে যায়। সিএনজি ভালো করে দাঁড়ানোর আগেই বর্ণালী নেমে দৌড় দেয়। রুমু ভাড়া মিটিয়ে বর্ণালীর পিছু যায়। কিন্তু দরজায় আসতেই গার্ড দুজকে আটকে দেয়। ভেতরে যেতে দিচ্ছেনা।
-“দেখুন আমাদের ভেতরে যাওয়া অনেক বেশি জরুরী। প্লিজ আমাদের ভেতরে যেতে দেন।”
-“ম্যাম আপনারা ভেতরে যেতে পারবেন না। আপনাদের কে কার্ড ছাড়া এন্ট্রি দেয়া যাবেনা।”
-“দেখুন ভেতরে আমাদের পরিচিত দুজন আছে আমরা শুধু তাদের কাছে যেতে চাই। প্লিজ একটু বুঝার চেষ্টা করেন।”
বর্ণালী গার্ডদের সাথে কথা বলেই যাচ্ছে। রুমু আর অপেক্ষা না করে বর্ণালীর ফোন দিয়ে রাহাতকে কল দেয়। রাহাত ফোন পেয়েই বাইরে আসে।
-“উনারা দুজন আমাদের সাথের। সো তাদের ভেতরে আসতে দেন।”
রাহাতের কথায় গার্ড তাদের দুজনকে ভেতরে যেতে দেয়। বর্ণালী ভেতরে ঢুকেই এদিক ওদিক খুঁজতে লাগে ইভানকে। চোখ বক্সিং রিং এর ভেতরে যেতেই বুকটা কেঁপে উঠে তার। চোখ জোরা দিয়ে অঝোরে পানি পড়ে যাচ্ছে। ইভান ফ্লোরে পড়ে আছে। এভাবে কেউ কাউকে মারে! পুরো শরীর -মুখ লাল গেছে। ঠোঁটের কাছে খানিকটা কেটে গেছে। ইভানকে এভাবে দেখে আত্মা কেঁপে উঠে বর্ণালীর।
-“ইভান, ইভান, ইভান উঠো প্লিজ ইভান উঠো। দেখো এভাবে রেগে থেকো না। আমি কি কখনোই তোমাকে বলেছি নিজেকে শাস্তি দিতে? উঠো ইভান প্লিজ উঠো।”
ইভান ধীরে ধীরে চোখ খুলে বর্ণালীর দিকে তাকায়। উঠে দাঁড়াতে চেষ্টা করছে আবারো ফ্লোরে পড়ে যাচ্ছে। এসব দেখে বুকটা কষ্টে ফেটে যাচ্ছে ওর৷ নিজেকে সামলে রাখতে পারছেনা। অনেক দেরি করে ফেলেছে আসতে।
রাহাত রিং এর ভেতরে ঢুকে ইভানকে ধরে বাইরে নিয়ে আসে। ধীরে ধীরে একটা চেয়ারে বসিয়ে দেয়। বর্ণালী একরকম দৌড়ে ইভানের কাছে আসে। দু’হাত দিয়ে ইভানের মুখে আলতো করে ধরে সে। আশেপাশে যে এতো মানুষ আছে সেদিকে ওর কোন খেয়ালই নেই।
-“ইভান তুমি ঠিক আছো? কেন ইভান? কেন এমন করতে গেলে? নিজেকে কেন কষ্ট দিলে?”
-“আমি যে অপরাধ করেছিলাম বর্ণালী। আর সেটার শাস্তি তো আমারই প্রাপ্য তাই না?”
বর্ণালী তার কথা শুনে কান্নার মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেয়। নিজেকে সামলে আরেকটু কাছে এগিয়ে আসে। গালে হাত রাখাতে ইভান ব্যাথায় আহ শব্দ করে উঠে। বর্ণালী ভয়ে হাত সরিয়ে নেয়। দুজনের চোখেই জল। কেউ কারো সাথে কথা বলছেনা। ইভানের ঠোঁটের কোণে রক্ত দেখে বর্ণালীর ভেতরটা কেঁদে উঠে। আলতো করে ইভানের গালে হাত রেখে নিজের মুখটা ইভানের মুখের একদম কাছে নিয়ে আসে৷ কি করতে যাচ্ছে সে নিজেও বুঝতে পারছেনা। ইভান ওর চোখের মাঝেই হারিয়ে গেছে। রুমু আর রাহাতের সাথে সব মানুষ পাশে থেকেই চেয়ে দেখছে ওদের। বর্ণালী নিজের ঠোঁট ইভানের রক্তমাখা ঠোঁটের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আজ সে ইভানের রক্ত পান করতে চায়। নিজের ঠোঁটের আলতো ছোঁয়ায় ইভানের ব্যাথা সারাতে চায়। ইভানের রক্ত নিজের রক্তের সাথে মিশিয়ে নিতে চায়। যাতে তাদের মাঝে কোন দূরত্ব না থাকে।
💛
#_____চলবে………..

#_ফাগুন_প্রেম_
#_পর্বঃ ৩৮
#Written_by_ Bornali Suhana
💛
বর্ণালী নিজের ঠোঁট ইভানের রক্তমাখা ঠোঁটের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আজ সে ইভানের রক্ত পান করতে চায়। নিজের ঠোঁটের আলতো ছোঁয়ায় ইভানের ব্যাথা সারাতে চায়। ইভানের রক্ত নিজের রক্তের সাথে মিশিয়ে নিতে চায়। যাতে তাদের মাঝে কোন দূরত্ব না থাকে। আশেপাশে যে এতো লোক দাঁড়িয়ে আছে সেদিকে ওর বিন্দুমাত্র খেয়াল নেই। আলতো করে ইভানের ঠোঁটের কোণে চুমু খেয়ে ঠোঁট ওভাবেই ঠোঁটের সাথে লাগিয়ে বসে থাকে। দুজনের গাল বেয়েই জল গড়িয়ে পড়ছে। চোখের নোনাজলের সাথে দুজনে মধুও পান করছে। এ মধু সারাজীবন পান করলেও মিষ্টতা একটুও কমবে না। আশেপাশের সব কিছু যেনো থমকে গেছে। রুমু এমন কিছু দেখবে কল্পনাতেও ভাবেনি। সবার চোখ যেনো কুঠুরি থেকে বেরিয়ে আসবে। ইভানের চোখ দুটো খোলা ছিলো কিন্তু যখনই বর্ণালী নিজের ঠোঁট ওর ঠোঁটে স্পর্শ করালো সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে নেয়। কিছুটা ব্যাথায় আর কিছুটা আবেশে। আবারো ঠোঁট খানিকটা আলগা করে তার ঠোঁট নিজের ঠোঁটের ভেতর পুরে নেয়। কিছুক্ষণ এভাবেই বসে থাকার পর বর্ণালী ইভান থেকে দূরে সরে আসে। দুজন-দুজনার চোখের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। বর্ণালীর ঠোঁটের কোণে রক্ত লেগে আছে। কাঁদতে কাঁদতে চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে। ইভানের প্রতিটা ক্ষতস্থানে একের পর এক চুমু দিতে লাগে। ওর পাগলের মতো ব্যাবহার দেখে আশেপাশের অনেকেই হাসছে, অনেকে ইমোশনাল হচ্ছে আবার অনেকেই নির্লজ্জ বলে এড়িয়ে যাচ্ছে। কিন্তু রুমু আর রাহাতের চোখে জল। হয়তো দুটি ভালোবাসা এক হতে দেখে তাদের মনটাও ভরে উঠেছে।
চোখ বন্ধ করে গভীর নিশ্বাস নিয়ে চুপ করে অনেকক্ষণ বসে আছে বর্ণালী। আর ইভান তার এই রুপের মাঝেও নিজেকে হারাচ্ছে। পরিবেশটা কেমন থমথমে হয়ে আছে। ধীরে ধীরে চোখের পাপড়ি আলগা করে তাকায় বর্ণালী।
-“আ….আমি তোমাকে কিছুক্ষণের মধ্যে কলেজে দেখতে চাই।”
কথাটা বলতে বর্ণালীর গলা ধরে আসছিলো তাও বলে হনহন করে বেরিয়ে যেতে লাগে।
-“বর্ণালী দাঁড়াও। প্লিজ বর্ণালী দাঁড়াও বলছি।”
-“বর্ণ দাঁড়া।”
-“ম্যাম।”
পেছনে সবাই ডাকছে কিন্তু সে চোখ মুছে মুছে দ্রুত বেরিয়ে যায়। রুমু ইভানকে ইশারা দিয়ে সেও তার পেছনে দৌড় লাগায়।
এক রকম দৌড়ের উপর সিএনজিতে উঠে রুমু। নাহলে আবার বর্ণালীকে ছাড়া একা আসতে হতো ওর। কিন্তু সে তো বর্ণালীকে একা ছাড়তে পারবে না এই মুহুর্তে।
দুজনেই সিএনজিতে চুপচাপ বসে আছে।
-“বর্ণ….”
-“এই বর্ণ এদিকে তাকা।”
এসব কথা যেনো তার কানেই যাচ্ছেনা। নিশ্চুপ হয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। একটা কথাও মুখ দিয়ে বের করছে না। বর্ণালীর দু’গালে ধরে নিজের দিকে ফিরায় রুমু। ব্যাগ থেকে টিস্যু বের করে ঠোঁট মুছে দিতে লাগে। তখনোও সে নিশ্চুপ হয়ে আছে। ওর মাথায় কি ঘুরছে কে জানে। ঠোঁটে লাগানো রক্ত মুছে টিস্যুটা ফেলে দিতে গেলেই রুমুর হাত ধরে নেয়।
-“কি হলো?”
-“এটা আমায় দে।”
-“এটা তো…”
-“দে প্লিজ কিছু জিজ্ঞেস করিস না।”
-“হুম নে।”
টিস্যুটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ভাঁজ করে ব্যাগের ভেতর রেখে দেয়।
-“তুই যে এতো এক্সপার্ট জানা ছিলো না।”
-“মানে?”
-“এসবের অভিজ্ঞতা কোত্থেকে হলো জান?”
-“কিসের?”
-“আহা আমার সোনা বাবুটা। বাই দা হাইওয়ে, তোর ভালোবাসায় এতো পাগলামো তা আজ না দেখলে বুঝতামই না।”
এতোক্ষণে বর্ণালী হাসলো। হ্যাঁ এই হাসিটা লজ্জায় ভরা। সে কিছুক্ষণ আগে কি করেছে তা ভেবেই লজ্জায় মরে যাচ্ছে। করার সময় ভাবলো না আর এখন কেন সে লজ্জা পাচ্ছে! নিজেও অবাক হচ্ছে।
-“কিরে এতো সুন্দর লিপকিস কোত্থেকে শিখলি?”
-“রুমু প্লিজ।”
-“বাহ যখন সবার সামনে এমন কাজ করলে তখন লজ্জা পেলে না আর এখন লজ্জা পাওয়া হচ্ছে।”
-“উফ ছাড় না জান।”
-“হুম আচ্ছা ছাড়লাম। কিন্তু এভাবে চলে এলি কেন সেখান থেকে?”
-“আরে কলেজে দেরি হয়ে যাচ্ছেনা। অনুষ্ঠান শুরু করতে হবে তো।”
-“দেখিস মাথায় আবার কোন গোল পাকাস নে।”
-“আরে না। ভাইয়া একটু জলদি চালান তো। আমাদের একটু দ্রুত পৌঁছাতে হবে।”
ড্রাইভারকে উদ্দেশ্য করে কথাটা বলে আবারো দুজনে চুপ হয়ে যায়। কিন্তু রুমু একা একা মিটমিটিয়ে হেসে যাচ্ছে। আর বর্ণালী তা বুঝতে পেরে বাইরে তাকিয়ে হাসি লোকাচ্ছে।
👇
কলেজে ঢুকতেই পিয়ন এসে বলে প্রিন্সিপাল স্যার অনেক আগে থেকে তাকে খুঁজছেন৷ আসার সাথে সাথেই অফিস রুমে গিয়ে হাজিরা দিতে হবে তাকে। অসহায়ভাবে রুমুর দিকে তাকিয়ে অফিসে গিয়ে ঢুকতেই প্রিন্সিপাল জারি করতে লাগেন।
-“বর্ণালী এতো দেরির কারণ কি আমি জানতে পারি? তুমি তো এতোটা ইরেসপন্সিবল নও।”
-“সরি স্যার একটা কাজে আটকে গিয়েছিলাম। আমি এখনি সব শুরু করে দিচ্ছি।”
-“দ্রুত যাও। আর কোন কথা শুনতে চাচ্ছি না।”
-“জ্বি স্যার।”
অফিস রুম থেকে বের হয়ে দ্রুত স্টেজে গিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করে।
প্রথমেই ও গান ধরে।

শোন গো দখিনো হাওয়া, প্রেম করেছি আমি
লেগেছে চোখেতে নেশা দিক ভুলেছি আমি

মনেতে লুকানো ছিল সুপ্ত যে পিয়াসা
জাগিল মধু লগনে বাড়ালো কি আশা
উতলা করেছে মোরে, আমারি ভালোবাসা
অনুরাগে প্রেম শরীরে ডুব দিয়েছি আমি
শোনগো মধুর হাওয়া প্রেম করেছি আমি

দহনো বেলাতে আমি, প্রেমেরো তাপসী
বরষাতে প্রেম ধারা, শরতের শশী

রচিগো হেমন্তে মায়া, শীতেতে উদাসী
হয়েছি বসন্তে আমি বাসনা বিলাসী

শোনগো মধুর হাওয়া প্রেম করেছি আমি
লেগেছে চোখেতে নেশা দিক ভুলেছি আমি

এটা প্রতি অনুষ্ঠান শুরুর একটা নিয়ম হয়ে গেছে। অনুষ্ঠান শুরুর আগে বর্ণালীকে গান গাইতেই হবে।
ইভান চুপ হয়ে একটা কোণায় দাঁড়িয়ে বর্ণালীর গান শুনছিলো। এতো আবেগ দিয়ে গানটা গাইলো যেনো সম্পূর্ণটা ইভানকে উৎসর্গ করেই গেয়েছে। ইভানকে দেখে মালিহা দৌড়ে আসে।
-“ইভু তোর কি হয়েছে? এই অবস্থা কেন তোর? তুই ঠিক আছিস?”
-“হ্যাঁ আমি ঠিক আছি টেনশন নিস না।”
-“তাহলে এসব কিসের দাগ?”
-“ওই ছোট একটা এক্সিডেন্ট হয়েছিলো।”
-“কি বলছিস এক্সিডেন্ট? আরে আগে কেন বললি না? ঠিক আছিস তুই?”
-“আরে বাবা হ্যাঁ তো আমি ঠিক আছি। তুই যা তোর কি কাজ কর গিয়ে। আমি খাবারের দিকটা দেখে আসি।”
-“হুম ঠিকাছে।”
বর্ণালী স্টেজে থাকলেও ওর দৃষ্টি বারবার ইভানের দিকে এসে পড়ছে। ওর মনের মাঝে এই প্রথম কেমন যেনো করছে। একটাই ভাবনা আসছে -কি এতো কথা বলছে মালিহার সাথে!
এদিকে মালিহার নজর কিছুই এড়ালো না। ভালো করেই বুঝতে পারছে ইভানের এই অবস্থার পেছনে বর্ণালীই দায়ী। রেগে আগুন হয়ে ফোনে কারো নাম্বার ডায়েল করে সেখান থেকে হনহন করে বেরিয়ে যায়।
-“হ্যালো কোথায় তুই? কাজ কি শেষ?”
-(ওপাশ)
-“এত্তো সময় লাগে তোর এই একটা কাজ করতে ****বাচ্চা একটা। তোকে আমি ১০মিনিট সময় দিচ্ছি। এই ১০মিনিটের মধ্যে কাজ শেষ করে কলেজে না আসলে আর কোনদিন কলেজে পা রাখতে পারবি না।”
মিথি পাশে দাঁড়িয়ে সব শুনছিলো। ওর মনের মাঝে কাজটা করার আগেই অপরাধবোধ অনুভব করছে। কিছুই যেনো ঠিক হচ্ছে না।
কল কেটে পেছনে ফিরতেই মালিহা মিথিকে দেখে বলে,
-“এভাবে মুখ বাংলার পাঁচের মতো করে রেখেছিস কেন?”
-“না মানে দেখ মালিহা মাথা ঠান্ডা করে কথাটা আরেকবার ভেবে দেখ। কাজটা কি ঠিক হচ্ছে?”
-“তোকে আমি আর আমার চোখের সামনে দেখতে চাই না। চলে যা এখান থেকে। আজ থেকে তোর সাথে আমার কোন ফ্রেন্ডশিপের সম্পর্ক নেই।”
-“মালিহা প্লিজ এমন কথা কেন বলছিস?”
-“তুই দেখেছিস? একবার ইভানের অবস্থা দেখেছিস? ইভানের এমন অবস্থার জন্য তোর ওই বর্ণালী ম্যাম দায়ী। যাকে তুই ইনোসেন্ট বলিস।”
-“এমনও তো হতে পারে আমাদের বোঝার মাঝে কোন ভুল হচ্ছে।”
-“মিথি…..! তোকে তো বলেছি আমার কাজে তোর হেল্প লাগবে না আমি একাই পারবো। চলে যা তুই। আমি আর তোর কোন কথা শুনতে চাচ্ছি না।”
-“আচ্ছা ঠিকাছে আমি আর কিছু বলবো না তোকে। আমার যতটুকু বোঝানোর আমি তোকে বুঝালাম। এখন বাকিটা তোর উপর। আমি তোর ফ্রেন্ড সবসময় তোর সাথেই থাকবো।”
মালিহা আর কোন কথা না বলে দ্রুত এখান থেকে বেরিয়ে গেটের দিকে যায়। মিথিও পিছু পিছু যায়।
👇
একে একে গান, নাচ, অভিনয় সব পর্ব শেষ হতে লাগে। সব শেষে বড় পর্দার মাঝে পুরো কলেজ জীবনের জার্নিটা দেখানোর আইডিয়া রাখে মালিহা আর মিথি। তাদের কলেজের সব বন্ধুদের পুরো দুইটা বছরের স্মৃতি দেখাতে চায় তারা।
-“স্যার আমরা কি দেখাবো?”
-“হ্যাঁ অবশ্যই।”
সবাই যার যার জায়গায় বসে পরে। মালিহা ভিডিও প্লে করে। পিকনিকের সব ছবি, কলেজের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সব ছবি একসাথে করে ভিডিও বানানো হয়েছে। একেকটা ছবি যাচ্ছে আর সবার চোখ অশ্রুসিক্ত হচ্ছে। হুট করেই এমন একটা ছবি আসে যা দেখে সবাই বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়। সবাই নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেনা।
💛
#_____চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here