#__ফাগুন_প্রেম__পর্বঃ ২১+২২

0
601

#__ফাগুন_প্রেম__পর্বঃ ২১+২২
#_লিখাঃ Bornali Suhana

💛
ইভান গাড়ি স্টার্ট দেয়। জানালা বেয়ে টুপটুপ বৃষ্টির ফোটা গড়িয়ে পড়ছে। এই বৃষ্টিকণা গুলোকে দেখতে অন্যরকম এক ভালো লাগা কাজ করছে বর্ণালীর মনে। ঝাপসা হয়ে এসেছে জানালাটা। ভিজে যাওয়ায় অনেক শীত লাগছে ওর। শীতের কারণে সিটের মাঝে জেঁকে বসে আছে। ইভান খেয়াল করলো বর্ণালীর সিট বেল্ট বাঁধে নি। গাড়িটা ব্রেক করে এক সাইডে থামায়।
-“কি হলো এখানে গাড়ি থামালে?”
-“সিট বেল্ট বাঁধলে না কেন?”
-“আসলে…”
বর্ণালী যে এমন গাড়িতে আর কখনোই বসেনি। ওর জীবনের প্রথম এমন গাড়িতে চড়া। সিট বেল্ট কিভাবে বাঁধবে সেটাও তো জানেনা। ইভান ওর দিকে এগিয়ে আসে সিট বেল্টটা বেঁধে দেয়ার জন্য। বর্ণালী যেন একেবারে সিটের সাথে মিশে যাচ্ছে। ইভানের হাত ওর কোমড়ে লাগতেই চোখ বন্ধ করে নেয়। এমন কেন হয়! যখনি ইভান ওকে স্পর্শ করে ও আর নিজের মাঝে থাকেনা। নিশ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে যায়। মনে হয় এখনি হার্ট অ্যাটাক করে মারা যাবে। সিট বেল্ট বেঁধে ইভান নিজের সিটে গিয়ে বসে। বর্ণালী আলতো করে চোখ খুলে গভীর নিশ্বাস নিয়ে আবারো ঝাপসা হয়ে আসা জানালা দিয়ে বাইরে দেখার বৃথা চেষ্টা করছে। কিছুক্ষণ হলো গাড়ি স্টার্ট দিচ্ছেনা দেখে বর্ণালী ইভানের সিটের দিকে তাকায়। কিন্তু একি ইভান ওর সিটে নেই। পেছনে তাকিয়ে দেখে ওর ছাতাটাও নেই। অজানা এক ভয় এসে জেঁকে বসে ওর মাঝে। ফোন বের করে কল দেয় কিন্তু ফোনটাও গাড়িতে বাজছে। ফোন হাতে নিতেই ৪৪০ ভোল্টের শক খায় ওয়ালপেপারে নিজের ছবি দেখে। এটা কখন তুললো ইভান! নিজেই বলতে পারেনা। বসন্ত উৎসবের দিন যখন ও খালি পায় স্টেজে উঠছিলো তখনকার ছবি। একটু ডান দিকে কাত হয়ে চেয়ে আছে। এক হাতে মাইক রাখা অন্য হাতে চুল গুজে দিচ্ছে কানের পিছনে। ইভান এতো সুন্দর করে ছবি তুলবে ভাবতেও পারেনি। কিন্তু সবচাইতে অবাক করেছে ওর ছবি ওয়ালপেপারের মাঝে দেখে। মাঝে মাঝে মনে হয় আসলেই ইভান ওকে অনেক বেশি ভালোবাসে। কিন্তু পরক্ষনেই মনে হয় ওর এখন বয়স কম তাই হয়তো আবেগের বসে এমন করছে। এটাকে ভালোবাসা বলেনা। এটাকে মোহ বলে যা কয়েকমাসেই কেটে যায়। এসব ভাবনার মাঝেই ইভান গাড়ির দরজা খুলে দু ‘ কাপ চা এগিয়ে দেয় ওর দিকে। হা হয়ে তাকিয়ে আছে বর্ণালী। বৃষ্টির মাঝে এই ছেলে চা আনতে গিয়েছিলো! পাগল নাকি?
-“কি হলো এভাবে চেয়ে আছো কেন? চা টা ধরো না আমি ভেতরে ঢুকতে হবে তো।”
বর্ণালী চায়ের কাপ দুটো ওর হাতে নেয়। ইভান সিটে বসে ছাতাটা ভাঁজ করে পিছনের সিটে রেখে দরজা লক করে দেয়। ভিজে গেছে ইভান অনেকটাই।
-“পাগল নাকি তুমি? এই বৃষ্টিতে চা কেন আনতে গেলে?”
-“তোমার শীত লাগছিলো দেখলাম কাঁপছো তাই ভাবলাম চা খেলে একটু শরীরটা গরম হবে ভালো লাগবে।”
ইভান তাহলে খেয়াল করেছে এসব! কি আজব ছেলে! মাঝে মাঝে আমি ওকে বুঝতেই পারিনা। বর্ণালী আবারো বলে,
-“তোমাকে কে বলেছে আমাকে নিয়ে এতো ভাবতে?”
-“বারেহ!!! আমি ছাড়া আর কে আছে তোমাকে নিয়ে ভাবার? আছে নাকি? বলো?”
-“হ্যাঁ আছে আমার মা, বাবা, ভাইয়া আর প্রাণ প্রিয় বান্ধবীরা আছে আমাকে নিয়ে ভাবার জন্য।”
-“এখন থেকে আমিও আছি। আর আমার চাইতে বেশি তোমাকে নিয়ে আর কেউ ভাববে না আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি।”
-“হয়েছে এখন ডায়লগ মারা? নাও চা নাও।”
-“খেয়ে দেখো ঠিক আছে কিনা।”
বর্ণালী এক কাপে একটা চুমুক দিয়ে বলে হুম একদম ঠিকাছে। নাও খাও।”
ইভান বর্ণালী যে কাপে চুমুক দিয়েছে সেই কাপটাতেই হাত দেয় নেবার জন্য।
-“এটা থেকে আমি খেয়েছি ইভান।”
-“তো কি হলো? শুনেছি এভাবে খেলে ভালোবাসা বাড়ে। আর আমি চাই আমার ভালোবাসা তোমার জন্য দিনদিন বেড়েই যাক। তাতে তুমি আমায় ভালো না বাসলেও চলবে। আমার একার ভালোবাসাই আমাদের দুজনের জন্য যতেষ্ট।”
কিছুটা ফিসফিস করে কথাগুলো বললো ইভান। কথাগুলো যেনো সোজা ওর হৃদয়ে তীরের মতো লাগে। বর্ণালীর শরীর শিউরে ওঠে। ইভান চায়ের কাপটা নিয়ে নেয় ওর কাছ থেকে। আর কিছুই বলার সুযোগ দেয় নি। চুপচাপ চা খেয়ে শেষ করে। গাড়ি আবারো চলতে শুরু করে। ইভান গাড়িতে একটা গান প্লে করে দিলো।

♫♪
যদি বৃষ্টি হতাম
তোমায় ভিজিয়ে দিতাম
তোমাকে স্পর্শ থাকতো না অধরা
এতোটা কাছে তুমি তবুও যায় না ছোয়া
এতোটা ভালোবাসা তবুও হয়না দেয়া….
🎶
আবেগী বরষায় ভালবাসার কবিতা লিখে
দৃষ্টির সীমানায় মন চাই তোমাকে
এতোটা কাছে তুমি তবুও যায় না ছোয়া
এতোটা ভালোবাসা তবুও হয়না দেয়া।।
🎶
অদৃশ্য সীমানা তোমার আমার মাঝে
চাঁদ হারিয়ে যায় রাত ফুরোবার আগে
এতোটা কাছে তুমি তবুও যায় না ছোয়া
এতোটা ভালোবাসা তবুও হয়না দেয়া ।।
♫♪
গানের প্রতিটা কথা যেনো ইভান বর্ণালীকেই বলছে। বর্ণালী এই মুহুর্তে এই গানটায় কিছুটা অস্বস্তি বোধ করছে। হাতের সাথে হাত কচলে যাচ্ছে।
বর্ণালীর বাড়ির সামনে এসেই ইভান গাড়ি থামালো। জনমানবশূন্য রাস্তাটা আজ বৃষ্টির ছোঁয়া পেয়ে আরো বেশি সুন্দর লাগছে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বর্ণালী বলে,
-“কখন যাচ্ছ?”
-“বিকেলে।”
-“নিজের খেয়াল রেখো। ভালো করে পড়বে আর পরীক্ষা দিবে। ভালো রেজাল্ট আসা চাই কিন্তু।”
-“প্লিজ এভাবে বড় আপুর মতো কথা বলো নাতো।”
বর্ণালী খিলখিল করে হেসে দেয় ইভানের কথায়।
-“আমি তো তোমার বড় আপুই।”
ইভান খপ করে বর্ণালীর দু’বাহু ধরে কাছে টেনে বলে,
-“খবরদার আরেকবার বড় আপু বললে এখনি বউ বানিয়ে নিবো। আর ইভান যা বলে তাই করে কিন্তু।”
বর্ণালীর হাসি যেনো হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো। ভয়ে চুপসে গেছে।
এই পিচ্চি ছেলেটাকে ভয় পাচ্ছে ও! ভাবতেও অবাক লাগছে। কখনো বন্ধুর মতো আচরণ করে আবার কখনো ভয় পাইয়ে দেয়।
-“আমি ঘরে যাবো।”
-“চলো আমার ঘরে আমার মায়ের ছেলের বউ হয়ে।”
-“ইইইভান।”
-“হাহাহাহা আচ্ছা সরি ভয় পেতে হবে না। যাও ভালো থেকো কথা হবে কল দিবো প্রতিদিন, প্রতিরাত। তোমার বসন্তপথিকের অপেক্ষায় থেকো বাসন্তী।”
-“হুম।”
-“মিস করবো খুব বেশি।”
-“আমিও।”
-“ভালোবাসি খুব বেশি।”
-“আমিও।”
-“সত্যিই!!!”
বর্ণালী চমকে উঠে ইভানের কথায়। কি থেকে কি বলে ফেললো ও। কিছুটা হচকচিয়ে যায়।
-“না মানে আমি ওইটা মিন করিনি। বন্ধু হিসেবে তো ভালোবাসতেই পারি না?”
-“না লাগবে না আমার বন্ধু হিসেবে ভালোবাসা। আমার প্রেমিক হিসেবে ভালোবাসা চাই, ভালোবাসার মানুষ হিসেবে ভালোবাসা চাই, স্বামী হিসেবে ভালোবাসা চাই, তোমার জীবনসঙ্গী হিসেবে ভালোবাসা চাই।”
-“আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে ইভান আমি যাই।”
-“একটু তোমার হাতটা ধরি প্লিজ?”
বর্ণালী কিছুক্ষণ ভেবে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ে। সাথে সাথে ইভান ওর হাত ধরে বসে। দুজনেরই হার্ট দ্রুত উঠানামা করছে। ধুকপুকানি শব্দটা নিজেই গুনতে পারবে। আলতো করে ইভান বর্ণালীর হাতের তালুতে চুমু একে দিলো। বর্ণালী কেঁপে উঠে হাত সরিয়ে নেয়।
-“এটা তোমাকে আমার কথা মনে করিয়ে দেবে। একটু অপেক্ষা করো এই এক্সামটা দিয়েই ফিরে আসবো। আমার জায়গাটা অন্য কাউকে দিও না প্লিজ। নয়তো আমি মরেই….।”
ইভানের ঠোঁটে হাত দিয়ে চেপে ধরে বর্ণালী। বিদায়ের সময় এমন বাজে কথা শুনতে চায় না ও।
-“আজেবাজে কথা বলো না ইভান। যাও ভালো মতো এক্সাম দিয়ে ফিরে এসো। আমি আছি থাকবো।”
বর্ণালী আর এক সেকেন্ডও না বসে গাড়ির দরজা খুলতে লাগে। কিন্তু পারছে না খুলতে। ইভান এগিয়ে এসে দরজাটা খুলে দেয়। গাড়ি থেকে বের হয়ে হাত নেড়ে বাই জানায় ইভানকে। ইভান বর্ণালীর যাবার পানে কিছুক্ষণ তাকিয়ে বাসার দিকে এগিয়ে যায়।
`
কলিংবেলে চাপতেই শারমিন বেগম এসে দরজাটা খুলে দেন। বর্ণালী আধ ভেজা অবস্থায় ঘরে ঢুকে।
-“যাহ ভিজেই তো গেলি তাহলে ছাতা সাথে নেয়ার মানে কি?”
-“মা বৃষ্টি অনেক বেশিই ছিলো তাই ভিজে গেলাম। আচ্ছা আমি চেঞ্জ করে আসছি।”
-“এসেছিস স্বরবর্ণ?”
-“ভাইয়া এই সময় তুমি বাড়িতে?”
-“আগে হা কর।”
-“মানে কি?”
-“নে না রে হা কর।”
বর্ণালী হা করতেই সজিব একটা মিষ্টি ওর গালে পুরে দেয়। বর্ণালী কোন কথাই বলতে পারছেনা। কি হয়েছে তাও বুঝতে পারছেনা। কোনরকম মুখের মিষ্টিটা শেষ করে ভাইয়ের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়।
-“কি হয়েছে ভাইয়া?”
-“সুখ কিনে এনেছি রে স্বরবর্ণ।”
-“মানে”
-“তোর ভাইয়ের চাকুরী হয়েছে তাও অনেক ভালো পজিশনে।”
বর্ণালী খুশিতে ভাইকে জড়িয়ে ধরে। কেঁদে বুক ভাসাচ্ছে। এ যে কান্না সুখের। নিজেই বিশ্বাস করতে পারছে না সে আজ প্রথম তার ভাইক জড়িয়ে ধরেছে। মধ্যবিত্ত পরিবারের এমনি হয়। উচ্চবিত্তদের মতো সবসময় জড়িয়ে ধরে আই লাভ ইউ ভাইয়া বা বোন, আই লাভ ইউ মা বা আই লাভ ইউ বাবা বলা হয় না। মাঝে মাঝেই তা হয়ে থাকে। যেমনটা আজ হচ্ছে।
`
সজিবের আজ চাকুরীর প্রথম দিন। অনেক দিন পর ফরমাল শার্ট-প্যান্ট, টাই, ব্ল্যাক শু পড়ে মাকে সালাম করে বেড়িয়ে গেলো। বর্ণালীও বেড়িয়েছে ভাইয়ের সাথে। বর্ণালীকে রিকশায় তুলে দিয়ে সজিব রিকশার জন্য অপেক্ষা করছে। তখনি একটা রিকশা এসে থামে ওর সামনে। অনেকদিন পর সেই মুখখানা দেখছে সজিব। আর কেউ নয় ঈশা এসে দাঁড়িয়েছে।
-“এসো।”
-“আমি অন্য রিকশায় চলে যাবো।”
-“আজ অন্তত আমার সাথে এভাবে কথা বলো না প্লিজ।”
সজিব আর কথা না বাড়িয়ে ঈশার সাথে রিকশায় চড়ে বসে। দূর থেকে কেউ একজন তা অবলোকন করছে। আর ভেতরে ভেতরে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে। সে যে ভাবতেও পারেনি কখনো এমন কোন কিছু দেখতে হবে। আসলেই তার দেরি হয়ে গেছে। বড্ড দেরি হয়ে গেছে। এতো দেরি না করলে হয়তো আজ নিজের চোখের সামনে এসব দেখতে হতো না। চোখের জল মুছে সিএনজি তে উঠে যায় সেই কেউ একজন।
-“এটাতে কি?”
ঈশা একটা বক্স বের করেছে দেখে সজিব কৌতুহল বশত জিজ্ঞেস করে বসে।
-“দাঁড়াও দেখাচ্ছি কি আছে।”
ঈশা বক্স খুলে এক চামচ পায়েস এগিয়ে দেয় সজিবের দিকে।
-“নাও হা করো।”
-“এসব কি ঈশা?”
-“ইস সজিব হা করো তো। মা বলে ভালো কোন কাজে যাবার আগে মিষ্টি মুখ করে যেতে হয়।”
সজিব ঈশার ব্যাবহারে খানিকটা অবাক হয়। ওকে নাম ধরে ডাকছে!
-“কি হলো হা করবে?”
সজিব কিছু না বলেই হা করলো। ঈশা ওকে পায়েস খাইয়ে সেই চামচ দিয়ে নিজেও খেয়ে নিলো।
-“এবার ভালোবাসাটা বেড়েই যাবে।”
ফিসফিসিয়ে কথাটা বলেই দাঁত দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরে হাসছে ঈশা। সজিব হতভম্ব হয়ে গেছে ওর এমন ব্যাবহারে। প্রায় অফিসে কাছাকাছি আসতেই ঈশা বললো,
-“বেস্ট অফ লাক। খুব তারাতাড়ি লাইফে সাকসেসফুল হও এবং আমাকে বউ করে নিজের ঘরে তুলে নাও।”
বলেই সজিবে গালের নিচে আলতো করে একটা চুমু একে দেয়। চোখ বড় বড় করে তাকায় সজিব ঈশার দিকে। কিন্তু ঈশার দৃষ্টি আপাতত মোবাইলে। ইচ্ছে করেই ও এমন করছে। লজ্জায় যে মাথা তুলে তাকাতে পারছেনা। হঠাৎ এমন কিছু করে বসবে ভাবতেও পারেনি সজিব।
-“কি করছো এসব ঈশা?”
-“কিছুই তো করলাম না তুমি চাইলে আরো অনেক কিছু করতে পারি।”
মোবাইলের দিকে তাকিয়েই কথাগুলো বললো ঈশা।
-“থামেন মামা এসে পড়েছি।”
রিকশা থামতেই সজিব নামতে যায়। ঈশা ওর হাত ধরে নেয়।
-“প্লিজ সজিব কল দিলে কলটা রিসিভ করো। আমাকে এভানে এভয়েড করো না।”
-“হুম।”
-“প্রমিজ মি?”
-“ওকে প্রমিজ। এখন তো যেতে দাও।”
ঈশার চোখে জল জমে গেছে। সজিব ওকে কথা দিয়েছে ভাবতেই পারছেনা।
-“এভাবে কাঁদলে তো যেতে পারবো না।”
সজিবের কথায় ঈশা হেসে দেয়।
-“হুম যাও। এবার থেকে কল না রিসিভ করলে সোজা তোমার বাড়িতে গিয়ে উঠবো বলে দিলাম।”
-“আচ্ছা সে পরে দেখা যাবে। এখন আসি।”
-“আচ্ছা বেস্ট অফ লাক সজিব।”
-“থ্যাংকস।”
সজিব অফিসে ঢুকতেই ঈশা রিকশা ভার্সিটির দিকে ব্যাক করে। আজ ওর মনটা অনেক ভালো। বারবার নিজের ঠোঁটের মাঝে হাত দিয়ে স্পর্শ করছে। খোচাখোচা দাড়িতে এই ঠোঁট দিয়ে কিছুক্ষণ আগেই তো ভালোবাসার পরশ দিয়ে দিলো। সজিবের গায়ের স্মেলটা কত সুন্দর ভাবতেই পারেনি ও। ইচ্ছে করছিলো আরো কিছুক্ষণ এভাবেই থাকতে।
`
রুমু বর্ণালীর স্কুলে এসে অফিসে বসে আছে। বর্ণালীর ক্লাস চলছে তাই দেখা করতে পারছেনা। অপেক্ষা করতে হচ্ছে। সামনের গ্লাসে রাখা পানিটা ঢকঢক করে খেয়ে গ্লাস হাতে নিয়েই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছে। যদিও এই সামান্য গ্লাসের মাঝে দেখার মতো স্পেশাল কিছু নেই তবুও এটাতে ও যেনো অন্য কিছু একটা আবিষ্কার করার চেষ্টা করছে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই বর্ণালী ক্লাস শেষ করে অফিসে আসে।
-“কেমন আছিস জান?”
-“এই তো রে ভালো আছি। তুই?”
-“আমিও ভালো। কিন্তু তোকে দেখে তো মনে হচ্ছে না যে তুই ভালো আছিস। মন খারাপ? কিছু কি হয়েছে?”
-“আর বলিস না তোর দেয়া পায়েলটা হারিয়ে ফেলেছি রে।”
-“সেকি কবে?”
-“আজকেই।”
-“আচ্ছা বাবু মন খারাপ করিস কেন? আমি তোকে সেইম আরেকটা নিয়ে দেবো।”
-“তাহলে এখনি চল। ভার্সিটি থেকেও গিয়ে আসবো। একটু আড্ডা দিবো।”
-“কিন্তু আমার যে ক্লাস আছে রে।”
-“প্লিজ না জান।”
-“আচ্ছা ঠিকাছে তুই বস আমি আসছি।”
রুমু বসা থেকে উঠে বর্ণালীকে জড়িয়ে ধরে বলে,
-“উফফফফ লাভ ইউ জান।”
-“হুম হয়েছে এবার ছাড় আগে ছুটি নিয়ে আসি।”
`
বর্ণালী ঠিক আগের মতোই দুইটা পায়েল কিনলো। একটা দিলো রুমুকে আরেকটা নিজের কাছেই রাখলো। দুজনে ভার্সিটিতে ঢুকতেই দেখলো সিঁড়িতে ঈশা একা একা বসে আছে আর মোবাইল টিপছে। বর্ণালীর ফোনটা বেজে উঠতেই দেখলো ইভানের ফোন। প্রতিদিন পরীক্ষা শুরুর আগে ও শেষ করেই ইভান ওকে কল দিবে এটা যেনো ওর নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্ণালীরও যেনো না চাইতেও ইভানের অভ্যাসটা খুব করেই হয়ে যাচ্ছে।
💛
#_____চলবে………..

#__ফাগুন_প্রেম__
#_লিখাঃ Bornali Suhana
#_পর্বঃ ২২
💛
দুজনে ভার্সিটিতে ঢুকতেই দেখলো সিঁড়িতে ঈশা একা একা বসে আছে আর মোবাইল টিপছে। বর্ণালীর ফোনটা বেজে উঠতেই দেখলো ইভানের ফোন। প্রতিদিন পরীক্ষা শুরুর আগে ও শেষ করেই ইভান ওকে কল দিবে এটা যেনো ওর নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্ণালীরও যেনো না চাইতেও ইভানের অভ্যাসটা খুব করেই হয়ে যাচ্ছে।
-“রুমু তুই ঈশার কাছে গিয়ে বস আমি কলটা রিসিভ করে আসছি।”
-“ইভানের কল?”
-“হুম।”
-“আচ্ছা তুই কথা বলে নে আমারও তোর সাথে কিছু কথা আছে।”
-“আচ্ছা আসছি।”
রুমু ঈশার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। পাশে গিয়েই সিঁড়িতে বসে পড়লো রুমু। রুমু ঈশাকে আলতো করে ধাক্কা দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-“মোবাইলের ভেতর ঢুকে যা না। দেখ মোবাইল বেচারা তোকে ছাড়তেই চায় না।”
-“আরে রুমু কখন এলি?”
-“যখন তুই মোবাইলের সাথে প্রেম করছিলি।”
-“বাহ মনে হচ্ছে আমি একাই মোবাইলের সাথে প্রেম করি। নিজেরটা বল না।”
-“আমি তো প্রেম করি না বেবি।”
-“আচ্ছা তাহলে?”
-“আমি ফুলসজ্জা করি।”
-“এতো দূর!”
-“কত দূর?”
দুজনেই হো হো করে হেসে দিলো।
-“কিরে রোহানী আসে নি?”
-“নারে ওকে নাকি আজ কনে দেখতে আসবে।”
-“আরে ব্যাস!!! কি বকিস এসব?”
-“হ্যাঁ রে।”
-“ধ্যাৎ!!! হে আল্লাহ আমার কপালে কি তুমি এসব রাখো নাই? নাকি আমার জামাই এক্সিডেন্টে মইরা গেছে?”
আকাশের দিকে তাকিয়ে দু’হাত তুলে রুমু কথাগুলো বলছে আর ঈশা পাশ থেকে হেসেই কুটিকুটি হয়ে যাচ্ছে।
-“পরীক্ষা কেমন হলো?”
-“আরে সেইরকম ভালো।”
-“হুম তা তো রেজাল্ট আসার পরেই বুঝতে পারবো। যদি রেজাল্ট খারাপ আসে না তাহলে বুঝে নিও তোমার কপালে খারাপ আছে।”
-“এই সেদিন না বললাম একদম বড় আপুদের মতো কথা বলবা না? একদম তুলে নিয়ে বিয়ে করে ফেলবো বলে দিচ্ছি।”
-“আচ্ছা? তাই নাকি ছোট ভাই? এইতো ছোট ভাই বললাম দেখি না কি করতে পারো।”
-“আজ শুধু আমি ওইখানে নেই তাই এসব বলার সাহস পাচ্ছো যদি সামনে থাকতাম না তাহলে বুঝিয়ে দিতাম বউ বানিয়ে।”
বর্ণালী ইভানকে জব্দ করতে পেরে হো হো করে হেসে দেয়। দূর থেকেই ঈশা আর রুমু এটা শুনে তারাও হাসছে।
-“ইভুর সাথে কথা বলছে নাকি?”
-“হ্যাঁ আর কে হবে। মেয়েটা তোর ভাইকে ভালোবেসে ফেলেছে তবুও মানতে নারাজ।”
-“আরে আমার ভাই বলে কথা দেখিস মানিয়ে নেবে। এটা আমরা ভাই-বোন খুব ভালো করেই জানি।”
রুমু কোন কিছু না বলেই শুধু একবার ঈশার দিকে তাকায়। আসলেই কি তাই?
পারবে তো ইভান বর্ণালীকে মানিয়ে নিতে? পারলেই হলো। জানটার দুঃখটা কিছু হলেও গুছবে।
-“ইভান না এখানে এডমিশন নিলো তো পরীক্ষা রাজশাহী কেন দিচ্ছে?”
-“আরে ওর রেজিষ্ট্রেশন তো ওইখানেই হয়েছে। এখানে তো জাস্ট আপাতত ক্লাস করার জন্য বাবা এডমিশন করিয়ে দিয়েছিলো।”
-“ওহ তাই বল।”
ইভান কথা বলে বলেই বাসায় এসে ঢুকে। কলেজ থেকে বাসা খুব বেশি দূর নয়।
-“তুমি কোথায় এখন?”
-“এইতো ভার্সিটি আসলাম।”
-“সাথে কে?”
-“রুমু আর ঈশা।”
-“ওহ ওরা কি কাছেই?”
-“না দূরে বসে আছে। কেন?”
-“নাহ এমনিতেই। কি করছো এখন?”
-“দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তোমার সাথে কথা বলছি। তুমি?”
-“চেঞ্জ করছি।”
কথাটা শুনা মাত্রই বর্ণালীর হাত পা কাঁপতে শুরু করে। এসব কথাও বলতে হয় নাকি!
-“আচ্ছা ঠিকাছে পরে কথা বলি। তুমি ফ্রেশ হয়ে খেয়ে রেস্ট নাও। আর এভাবে বারবার কল না দিয়ে একটু পড়তে বসো। আর কয়টা পরীক্ষা রয়েছে?”
-“হুম আমাকে সহ্য করতে পারো না তাই না? ঠিকাছে এতো বেশি ডিস্টার্ব করবো না। আর ৪টা এক্সাম বাকি আছে। ১৫ দিন পরেই ব্যাক করছি ঢাকা। ভালো থেকো। বাই।”
-“ইইইভ….”
ইভান কোন কিছু শোনার আগেই লাইনটা কেটে দেয়। এই ছেলেটা আসলেই একটা বাচ্চা। কিছু বললেই এভাবে রাগ দেখাবে আবার পরক্ষণেই সবকিছু ভুলে কল দিবে। বর্ণালী ঈশাদের দিকে এগিয়ে যায়।
-“কি গো বাসন্তী কথা বলা শেষ হলো?”
-“ঈশা তুইও না।”
-“আমিও না কি?”
-“পাগল।”
-“ভুল বললি ওইটা পাগলী হবে।”
সবাই হো হো করে হেসে দিলো। বর্ণালী ব্যাগে রাখা আরেকটা পায়েল বের করে ঈশার দিকে এগিয়ে দিলো।
-“ওয়াও আমার জন্য?”
-“হ্যাঁ রুমুর জন্য একটা নিলাম ভাবলাম তোর জন্যও একটা নেয়া উচিৎ তাই তোর জন্যও একটা নিলাম।”
-“থ্যাংকস ইয়ার। উম্মম্মমাহ।”
রুমু মৃদু হাসি দিলো। ভালো লাগছে না ওর এসব। বান্ধবীটাকে কি হারিয়ে ফেলছে নাকি? এই ভয়টা ওর উপর প্রচন্ডভাবে চেপে বসেছে। সে নিজের বান্ধবীকে কারো সাথে শেয়ার করতে চায় না। তখনি বর্ণালী বলে উঠে,
-“চল না আজকে আমাদের বাসায়।”
-“কেন তোর বাসায় কি আজকে?”
-“আরে এমনিতেই অনেক দিন হলো তোরা কেউ যাস নে আর ঈশা তুই তো মাকে বলেছিলি যখন ইচ্ছে যাবি তোর এই ইচ্ছেটাকি আর হয় না?”
-“যেতে তো চাই। একেবারেই যেতে চাই।”
-“মানে?”
-“মানে ঘোরার ডিম। আচ্ছা রুমু দেখ না ওই ছেলেটা কি কিউট না?”
-“লাগবে নাকি নাম্বার?”
-“আমার এর চেয়ে কিউট ছেলে আছে। তোর লাগলে বল এনে দিই আমি।”
বর্ণালী কিছুটা অবাক হয় ওদের কথায়।
-“ঈশা তোর লাইফে কেউ আছে বললি না তো?”
-“আরে ধুর মজা করলাম ওইরকম কেউ নেই।”
অতি সহজেই ঈশা কথাটা এড়িয়ে গেলো। এখনো তেমন কিছুই হয় নি তাই ও কিছু বলতে চায় না৷ কিছু একটা হয়ে গেলে বলে দেবে। বান্ধবীদের কাছ থেকে লুকাতেও যে ভালো লাগেনা।
-“আমার প্রয়োজন নেই বাপু এতো কিউট ছেলে।”
-“কিউট তো আমাদের ইভু। হাজারে একজন ছেলে। আমাদের বর্ণালী খুব ভাগ্য করেই এমন ছেলে পেয়েছে।”
বর্ণালী ব্রু কুচকে তাকায় ওদের দিকে।
-“এই দেখ প্রথমত ইভান আমার না। ও জাস্ট আমার ফ্রেন্ড নাথিং এলস। আর অন্য কিছু হওয়ার সম্ভাবনাও নেই।”
রুমু বর্ণালীকে নিজের দিকে করে বলে,
-“বলেছিলাম না তোর সাথে কিছু কথা আছে?”
-“হুম তো বল।”
-“দেখ বর্ণালী খুব কপালজোরে ভালোবাসাটা পাওয়া সম্ভব হয়। তোর ভাগ্য তোকে সেই সুযোগ দিচ্ছে। সময় থাকতে নিজের ভাগ্যটাকে হাতের মুঠোয় আগলে রাখ। এমন কিছু ভুল করিস নে যাতে সময় গেলে পরে আফসোস করতে হয়। আর দেরি করিস না বর্ণালী। দেরি হয়ে গেলে অনেক কিছুই বদলে যায়।”
বর্ণালী নিশ্চুপ হয়ে কথাগুলো শুনছে। রুমু কেন এভাবে কথা বলছে! ও তো কখনোই এভাবে কথা বলে নি।
ঈশাও চুপ হয়ে আছে। আজ যেনো রুমুর কথার মাঝে চাপা কষ্টটা বের হয়ে আসছে। ও কি তাহলে কিছু হারিয়েছে? নাহ এমন কিছু তো বললো না কখনো।
-“তুই ঠিক আছিস?”
-“হাহাহাহা আরেহ আমার আবার কি হবে? রুমু সিরিয়াস হলে একটু ওরকম শোনায়। তাই তো সিরিয়াস হই না। দেখ অল্পতেই তোরা ভয় পেয়ে গেলি।”
-“উফফফ আসলেই রুমু তুইও না।”
-“রুমু কিন্তু একদম ঠিকই বলেছে বর্ণ। সময় থাকতে সব ঠিক করে নেয়াই ভালো।”
-“হয়েছে থাম তো তোরা তোদের ভাষণ শুনতে শুনতে কান শেষ। চল এবার নোটিশ দেখে আসি।”
-“হুম চল। তবুও বলবো ভেবে দেখিস।”
-“আচ্ছা বাবা ভেবে দেখবো।”
`
বর্ণালী সজিবের কথায় টিউশনিগুলো ছেড়ে দিয়েছে। কোচিংটাও ছাড়তে বলেছিলো কিন্তু এখন ও কোচিং ছাড়তে রাজি না। ভাইয়ের চাকুরীর এক মাস হতে আর কয়েকটা দিন বাকী। এখনো বেতন পায় নি। কিভাবে ছেড়ে দেয় কোচিংটা। কোচিং-এ পড়ালে কিছু টাকা পাওয়া যায়। ভাইয়ের বেতন না পাওয়া পর্যন্ত তো ছাড়ছেই না। খেয়ে বাঁচতে হবে তো এই ক’দিন। তাছাড়া পড়ালে নিজেরও একটা চর্চা থাকে।
ডায়েরিটা হাতে নিয়ে বেলকনিতে বসে আছে। ছুটির দিনে একটু লেখালেখির সুযোগ পায় ও। তাই ডায়েরি নিয়ে বসে পড়ে। আজকেও তাই করেছে। বসে বসে কিছু একটা লেখার চেষ্টায় আছে। গান, কবিতা, গল্প, উপন্যাস এসব টুকটাক লেখালেখি করে। কিন্তু আজকাল ডায়েরিতে ইভানকে নিয়ে অনেক কথাই লেখা হয়েছে ওর। যাই লিখেছে সবই কেমন আবোল-তাবোল।
কলিংবেলের শব্দ ভেসে আসে শারমিন বেগমের কানে। হাতের কাজ রেখে আসতেও পারছেন না।
-“বর্ণ, এই বর্ণালী?”
-“হ্যাঁ মা।”
-“দেখ না দরজায় কে এসেছে। দরজাটা খুলে দে।”
-“আসছি মা।”
বর্ণালী ডায়েরিটা বন্ধ করে এসে দরজা খুলে দেয়। দরজা খুলে কাউকে দেখতে পেলো না। যেই না দরজা বন্ধ করতে যাবে তখনি ঈশা আর রুমু ভুউউউউ করে দরজা ধাক্কা দিয়ে দেয়। বর্ণালী প্রায় পড়তে পড়তে দাঁড়ায়। এদিকে ঈশা আর রুমু হো হো করে হেসে যাচ্ছে।
-“আরে তোরা?”
-“কেন আসবো না নাকি?”
-“সেটা কখন বললাম? ভয় পাইয়ে দিলি তো। আসবি তো একটা কল দিলি না কেন?”
-“বারে তোর বাড়িতে আসতে হলে আগে কল করে পারমিশন নিতে হয় তা তো জানতাম না।”
শারমিন বেগম তখনি বাইরে আসেন। ঈশা আর রুমুকে দেখে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে৷ উনি বর্ণালীকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
-“আরে যা বলার ভেতরে নিয়ে বল না। আর কতক্ষণ বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখবি?”
রুমু বর্ণালীকে ধাক্কে ভেতরে ঢুকেই শারমিন বেগমকে জড়িয়ে ধরে।
-“উম্মম্মম্মাহ। বড় আম্মু কেমন আছো?”
-“ছাড় আমায়। আমাকে ধরবি না।”
-“আরে বেগম রাগ করেছেন কেন?”
-“চুপ বেয়াদপ মেয়ে মায়ের সাথে এভাবে কথা বলিস লজ্জা শরম করে না?”
-” না না সে আমি অনেক আগেই বেঁচে চানাচুর খেয়ে নিয়েছি হিহিহিহি।”
-“ছাড় আমার সাথে কথা বলবি না।”
-“কেন আমি করলাম?”
-“এখানে কবে এসেছিলি মনে আছে? বাড়িতে আসতে মন চায় না তোর? ভুলেই গেছিস না?”
-“আরে বড় আম্মু একেবারেই তো আসতে চেয়ে ছিলাম কিন্তু তা আর কপালজোরে হলো কই!”
-“হু তুই আর তোর এই মুখ। সব ভুলিয়ে দিস। কপালের দোষ না দিয়ে চেষ্টা করলেই এসে পড়তি।”
-“আসলেই বড় আম্মু একবার চেষ্টাটাও করলাম না। বড্ড দেরি করে ফেলেছি।”
-“হ্যাঁ তা করেছিস ঠিকই।”
শারমিন বেগম কেন এখানে উপস্তিত কেউই রুমুর কথার গভীরতায় পৌঁছাতে পারে নি।
-“আরে ঈশা মা কেমন আছো? সেই যে গেলে আর আজকে এলে?”
রুমুকে রেখে শারমিন বেগম ঈশার কাছে এসে জড়িয়ে ধরে কথাটা বললেন। রুমু ধপাস করে সোফায় বসে পড়ে। বর্ণালীও ওর পাশেই গিয়ে বসে গল্প জোরে দেয়।
-“আসলে আন্টি আসতে চেয়েছিলাম কিন্তু সময় হয়ে উঠে নি।”
-“হ্যাঁ এখানে আসার সময় তোমাদের কারো হয়ে ওঠে না।”
-“সরি আন্টি এখন থেকে সময় পেলেই আসবো ইনশাআল্লাহ।”
-“আচ্ছা তোমরা বস। আমি নাস্তা পাঠিয়ে দিচ্ছি।”
শারমিন বেগম রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ান। আজকে অনেকদিন পর ঘরটা কেমন উল্লাসে জমে উঠেছে। আসলেই একটা ঘরের সৌন্দর্য্যই হলো মেয়ে। যে ঘরে মেয়ে নেই সে ঘরে কোন সৌন্দর্য নেই। এইযে সজিব ঘরে থাকলেও ওর চোখ দেখা যায় না৷ ও যেনো ঠিক মেহমান হয়ে ঘরে থাকে।
সজিব হাতে একটা আইসক্রিমের বক্স নিয়ে ভেতরে ঢুকে। সজিবের চোখ ইশাকে দেখে ওখানেই ওর পা থমকে যায় আর ঈশার চোখ গিয়ে থমকে যায় সজিবের উপর। থ্রী কোয়াটার টাউজার আর টি শার্ট পড়ে আছে। টি শার্টটা পিঠের দিকে ঘেমে গায়ের সাথে লেগে আছে।
💛
#____চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here