#___ফাগুন__প্রেম____পর্বঃ ৩৫ +৩৬

0
341

#___ফাগুন__প্রেম____পর্বঃ ৩৫ +৩৬
#_লিখাঃ Bornali Suhana

💛
জায়গাটা অনেক সুন্দর সাথে শীতল বাতাসে বর্ণালীর প্রাণটা প্রায় জুড়িয়ে গেছে। ইচ্ছে করছেনা এখান থেকে যেতে। চোখে ঘুম নেমে আসছে ওর। ইভান কিছুটা সরে আসে ওর দিকে। দুজনে একেবারে গা ঘেঁষে বসে আছে। আলতোভাবে চোখ বন্ধ করে নেয় বর্ণালী। নিজের অজান্তেই ইভানের কাঁধে ও মাথা রাখে। খুব ঘুম পাচ্ছে মনে হচ্ছে কত জনম ঘুমায় না। ঘুম ঘুম চোখেই আরেকটুখানি সরে যায় ইভানের দিকে। সারাদিনের ক্লান্তি শেষে এমন ঘুম আসারই কথা। আর এমন দিনে তো অলসতাটা একটু বেশিই জেঁকে বসে। বর্ণালী ইভানের একটা হাত জড়িয়ে ধরে। একটা মিষ্টি গন্ধ এসে লাগছে ইভানের নাকে। এই গন্ধটা বর্ণালীর চুল থেকে ভেসে আসছে। এমন একটা গন্ধ মাতোয়ারা করতে যতেষ্ট। নিজেকে সামলে রাখা দায় পড়ে। বর্ণালীর মুখটা ঠিক ইভানের গলার পাশে এসে ঠেকেছে। অন্যরকম একটা গন্ধ বর্ণালীকে যেনো অচেনা জগতে নিয়ে যাচ্ছে। নেশা ধরে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে ইভানের গলায় নিজের নাক স্পর্শ করায়। ইভানের ভেতরটা কেঁপে উঠে। চোখ বন্ধ করে নেয়। তার এভাবে কাছে আসাটা সবকিছুকে কেমন জানি উলট পালট করে দিচ্ছে। হৃদস্পন্দনের শব্দ পাল্লা দিয়ে বেড়ে যাচ্ছে। বর্ণালী ধীরে ধীরে নিজের নাক দিয়ে ইভানের গলায় স্লাইড করে গন্ধ নিয়ে যাচ্ছে৷ তার উষ্ণ নিশ্বাস যখনি গলায় এসে লাগছে ইভানের বুকের ভেতর যেনো আলোড়ন তৈরি করে দিচ্ছে। এই গন্ধটা ওকে খুব করে কাছে টানছে। এই মুহুর্তে কি হচ্ছে তার কোন হুশ নেই। দুজনেই যেনো কোন একটা ঘোরের মাঝে চলে গেছে। ইভান আলতো করে বর্ণালীর চিবুক ধরে মুখটা তুলে ধরে। বর্ণালীর এখনো ব্রু কুচকে চোখ বন্ধ করে আছে। নিশ্বাস ভারী হয়ে গেছে ওর। ইভানের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি বর্ণালীর শুকনো কাঁপা ঠোঁটের উপর। আলতো করে বৃদ্ধাঙুলি দিয়ে ঠোঁটের উপর স্লাইড করতে লাগে ইভান। বর্ণালী কেঁপে উঠে ইভানের হাত খামচে ধরে। ইভানের বুকের ধুকপুকানি আওয়াজটা বেড়ে চলেছে। এদিকে বর্ণালীর কোন হুশই নেই। ইভানের নিশ্বাস এসে ছুঁয়ে দিয়ে যাচ্ছে ওর মুখ। দুজনার মাঝে কিঞ্চিৎ পরিমাণ ফাঁকা নেই। দুই জোড়া ঠোঁট হুট করেই এক হয়ে যায়। বর্ণালী এক হাতে ঘাসের উপর খামচে ধরে মুটোয় নেয়। আরেকহাত ইভানের হাতের কনুইয়ের উপর শক্ত করে ধরে আছে। ইভানের হাত ওর কানের পেছনে স্লাইড করছে। আরেকহাতে জড়িয়ে ধরে আছে ওর কোমড়। কতক্ষণ যে ঠোঁটের সাথে ঠোঁটের কথা হলো সে সময়ের কোন হিসেব নেই। চুপ করে ইভানের ঠোঁটের সাথে মিশে আছে বর্ণালীর ঠোঁট। কোন নড়াচড়া নেই। ইভান আলতো করে সরে আসে ওর থেকে। খুব শান্তভাবে বর্ণালী নিজের মাথাটা এলিয়ে দেয় তার বুকে। হাতটা ঘাস থেকে আলগা হয়ে আসে। কিছুক্ষণ পর বর্ণালী ধীরে ধীরে চোখ খুলে।
এক ঝাটকায় ইভানের কাছ থেকে সরে যায়৷ একটু আগে কি হয়েছে তা বুঝতে বাকি রইলোনা ওর। চোখ বেয়ে নিঃশব্দে কয়েক ফোটা জল গড়িয়ে পড়ে। ওর সমস্ত শরীর থরথর কাঁপছে। চোখ থেকে জল পড়া বন্ধ হওয়ার নামই নেই।
চোখ মুছে বসা থেকে উঠে একটা দৌড় লাগায় বর্ণালী। ইভান বুঝতে পারছেনা না কি থেকে কি হয়ে গেলো। ও তো এমন কিছু করতে চায় নি। বর্ণালীর পিছু দৌড়ে গিয়ে পথ আগলে ধরে।
-“আই এম সরি বর্ণালী। আসলে…..আসলে আমি ইচ্ছে করে এমন কিছু করিনি।”
বর্ণালী এবার ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে। ইভান যতই থামানোর চেষ্টা করছে ওর কান্নার আওয়াজ ততোই বেড়ে চলেছে। কিভাবে কি বলে থামাবে কিছুই ভেবে পাচ্ছেনা। এই মুহুর্তে ওর কি করা উচিৎ তাও সে জানেনা। বর্ণালীকে বুকের মাঝে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ইভান। সে ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করছে কিন্তু ইভানের থেকে ছাড়ানো সহজ না। একসময় হাল ছেড়ে বর্ণালীও ইভানকে জড়িয়ে ধরে।
-“কেন হলো এমন ইভান কেন?”
-“হুস শান্ত হও। তেমন কিছুই হয়নি বর্ণালী। আমি তোমাকে ভালোবাসি আর তুমিও আমাকে ভালোবাসো।”
বর্ণালী কাঁদতে কাঁদতে হেচকি তুলছে। ইভান ওর চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,
-“এটা যদি আমার অপরাধ হয় তাহলে তুমি আমাকে যাই শাস্তি দেবে আমি মাথা পেতে নিতে রাজি। তবুও তুমি এভাবে কেঁদো না প্লিজ। আমি তোমার কান্না সহ্য করতে পারছি না।”
বর্ণালী নিজেকে কিছুটা শান্ত করে বলে,
-“আমি বাড়ি যাবো ইভান।”
-“কিন্তু।”
-“আমি বাড়ি যাবো৷”
-“হু চলো।”
চারিদিকে সন্ধ্যা নেমে এসেছে। গাড়ি তার আপন গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। দুজন মানুষ যারা কিছুক্ষণ আগেও খুব কাছে ছিলো যাদের মাঝে একটু আগেও বিন্দু পরিমাণ ফাঁকা জায়গা ছিলো না এখন এই দুজন মানুষ কতটা দূরে বসে আছে। কিছুক্ষণ আগেও যাদের ঠোঁটে ঠোঁটে হাজারো কথা হচ্ছিলো এখন তারাই কতটা নীরব হয়ে আছে।
👇
পুরোটা রাস্তা কান্না করতে করতে এসেছে বর্ণালী। ইভানের আজ নিজেকে অনেক বড় অপরাধী মনে হচ্ছে। কিন্তু সে তো ইচ্ছে করে কোন কিছুই করেনি। যাই হয়েছে সব নিজের অজান্তে। তখন তো সে নিজের মাঝে ছিলোনা। গাড়ি থামিয়ে দিলো ইভান।
-“চলে এসেছি।”
-“হু! হ্যাঁ।”
গাড়ির দরজা খুলে দিতেই বর্ণালী নেমে যায়। এখনো ওর শরীর কাঁপছে। ইভান গাড়ি থেকে বেরিয়ে ওর খানিকটা কাছে এসে দু’গালের মাঝে হাত রেখে বললো,
-“তুমি আমারই বউ হবে বর্ণালী। কথাটা মাথায় রেখো।”
এমন কথা শুনেই বর্ণালীর ভেতরটা নাড়া দিয়ে উঠে। বুকটা ধুকপুক করতে শুরু করে। একটা শীতল অনুভূতি বয়ে যায় মনের ভেতর। কেঁপে উঠে আরো একবার। চোখ পিটপিট করে হা হয়ে তাকিয়ে আছে ইভানের দিকে। ইভান আলতো করে ওর কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিলো। চোখ বন্ধ করে নেয় বর্ণালী। ইভান কাছে আসলে কেন এমন হয় ওর! কেন নিজেকে সামলে রাখতে পারেনা! আর এক মুহুর্তের জন্যও এখানে না দাঁড়িয়ে একটা দৌড় দিয়ে বাড়ির ভেতর চলে যায়। ইভান ওর চলে যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে গাড়ি স্টার্ট দেয়।
👇
একটা নির্ঘুম রাত কাটালো তিনজন মানুষ। একদিকে বর্ণালী আর ইভান অন্য দিকে নিজের মাঝে বিভোর রুমু। সে নিজেও জানেনা কেন তার রাতে ঘুম হলো না। কিন্তু ইভান আর বর্ণালীর ঘুম না হওয়ার পেছনে কারণ আছে।
বর্ণালী রুমুর বাসার নীচে এসে দাঁড়িয়ে আছে। দুজনে আজ একসাথেই যাবে। রুমুর কথা ছিলো আজকের দিন বর্ণালীকে হেল্প করার। কিছুক্ষণের মধ্যেই রুমু কালো একটা ড্রেস পড়ে নীচে নেমে আসে। বর্ণালীর মুখটা কেমন ফ্যাকাসে লাগছে। হালকা বেগুনি রঙের একটা শাড়ি পড়েছে। বেশ ভালো লাগছে ওকে দেখতে কিন্তু চেহারায় বিন্দুমাত্র সাজ-সজ্জা নেই।
-“কিরে কি হয়েছে তোর? তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন? উপরে আসলি না যে? ভাবী তোর কথা জিজ্ঞেস করছিলো।”
-“চল রুমু সময় নেই।”
-“কি হয়েছে তোর? আমার থেকে কি লুকাচ্ছিস?”
-“ক….কই কিছুই না তো।”
-“মিথ্যা তো তুই একদমই বলবিনা।”
-“পরে বলি প্লিজ। এখন চল স্কুলে যেতে লেইট হয়ে যাবে নাহলে।”
-“আচ্ছা সে না হয় পরে বলবি। কিন্তু এখন হাসতেও কি তোর টাকা লাগবে?”
বর্ণালী নিঃশব্দে হেসে দেয়। দুজনে একটা রিকশা করে কলেজে চলে যায়। কলেজে আসতেই ইভানের সামনে পড়তে হয় তাদের৷ রুমু ইভানের দিকে এগিয়ে যেতে নিলেই বর্ণালী ওর একটা হাত ধরে নেয়। ইশারায় মাথা নেড়ে রুমুকে না করে বর্ণালী। রুমু খেয়াল করলো মালিহা বর্ণালীর দিকে অস্বাভাবিকভাবে তাকিয়ে আছে। ওর চোখে যেনো কেমন অগ্নিবর্ষণ হচ্ছে।
💛
#______চলবে………

#___ফাগুন__প্রেম___
#_লিখাঃ Bornali Suhana
#_পর্বঃ ৩৬
💛
কলেজে আসতেই ইভানের সামনে পড়তে হয় তাদের৷ রুমু ইভানের দিকে এগিয়ে যেতে নিলেই বর্ণালী ওর একটা হাত ধরে নেয়। ইশারায় মাথা নেড়ে রুমুকে না করে বর্ণালী। রুমু খেয়াল করলো মালিহা বর্ণালীর দিকে অস্বাভাবিকভাবে তাকিয়ে আছে। ওর চোখে যেনো কেমন অগ্নিবর্ষণ হচ্ছে। এই তাকানোটা সাধারণ নয়। মনের মাঝে কেমন উসখুস করছে।
বর্ণালীর চোখ-মুখ কেমন ফুলে আছে। লাল হয়ে আছে চোখ। মনে হচ্ছে কাল রাতে খুব কেঁদেছে। ইভানের কলিজাটা মোচড় দিয়ে উঠে তাকে এমন অবস্থায় দেখে। বর্ণালী রুমুর হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলে ইভান এগিয়ে আসে ওদের সামনে।
-“কেমন আছো?”
বর্ণালী চুপ হয়ে আছে। রুমু কিছুটা আঁচ করতে পারছে এদের মাঝে তো কিছু একটা হয়েছে। তাই তো ওকে দেখতে অস্বাভাবিক লাগছে। রুমু সিচুয়েশনটা সামলে নিতে বলে,
-“হ্যাঁ আমরা তো ভালো আছি একদম টিপটপ। তুমি তোমার খবর বলো?”
ইভান বর্ণালীর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“আছি একরকম।”
-“চল রুমু একবার স্যারের সাথে দেখা করতে হবে।”
-“আচ্ছা ইভান পরে কথা বলছি।”
-“কিন্তু স্যার তো এখনো আসেন নি।”
ইভানের কথা শুনে বর্ণালী অফিসের দিকে যেতে লাগে।
-“বর্ণালী শুন….”
বর্ণালী তাও এগিয়ে যায়। রুমু ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। ইভানও চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। মালিহা আর মিথি পিছনে দাঁড়িয়ে সব দেখছে।
-“কি হয়েছে মি.আশিক?”
-“ভুল হয়ে গেছে অনেক বড়।”
-“তো এখানে দাঁড়িয়ে থাকলে কি ভুলের মাশুল দেয়া হবে? যাও তোমার বাসন্তীর পিছু ছেড়ো না। মানিয়েই তারপর ছাড়বে।”
ইভান মৃদু হেসে বলে,
-“উহু তারপরও পিছু ছাড়বো না। সারাজীবন এভাবেই ওর পিছে পড়ে থাকবো।”
কথাটা বলেই ইভান দৌড় লাগায় বর্ণালীর পিছু। রুমু পিছন ফিরে তাকিয়ে মালিহার কাছে আসে।
-“এই মেয়ে তোমার নাম যেনো কি?”
-“কার আমার?”
-“হ্যাঁ তোমার।”
-“মালিহা।”
-“আচ্ছা তো মালিহা। ইভানের ফ্রেন্ড?”
-“হ্যাঁ।”
-“ফ্রেন্ড হলেই ভালো।”
মালিহা ব্রু কুচকে তাকায় রুমুর দিকে। রুমু সেদিকে খেয়াল না করে ফোন নিয়ে সিঁড়িতে বসে পড়ে। এখানে একা বসে না থেকে গল্প পড়লে মন্দ হয়না। একবার ফেইসবুক ঢো মেরে আসা যাক। সকালের আবহাওয়াটা বেশ ভালোই লাগছে ওর কাছে। মাঝেমধ্যে মৃদু বাতাস বইছে। সূর্যটা এখনো পুরোপুরি দেখা যাচ্ছেনা। মেঘে ঢেকে আছে।
ইভান বর্ণালীর পিছু পিছু অফিসের ভেতর চলে আসে। এতো সকালে কেউই আসেনি। শুধুমাত্র তারা ৫জন আর পিয়ন এসেছে। সে সব রুম খুলতে ব্যাস্ত।
বর্ণালী ইভানকে অফিস কক্ষে দেখে চমকে উঠে। ব্রু কুচকে চোখ ছোট ছোট করে তাকায় তার দিকে।
-“তু….তুত…..তুমি এখানে কি করছো?”
-“তুমি আমাকে এভয়েড করছো কেন?”
-“ক….কই এভয়েড করলাম?”
-“তা নয়তো কি? কথা বললে না কেন আগে?”
-“এমনিতেই আমার ইচ্ছে হয় নি।”
-“রাতে নিশ্চই খাও নি? সারারাত কি কেঁদেই পার করেছো?”
বর্ণালী কিছুই বলছেনা।
-“কি হলো? কিছু বলছো না যে?”
-“তুমি এখান থেকে যাও ইভান। কেউ এসে তোমাকে এখানে দেখলে সমস্যা হয়ে যাবে।”
ইভান রেগে বর্ণালীর কাছে এগিয়ে যায়। দু’বাহু চেপে ধরে বলে,
-“কি সমস্যা তোমার বর্ণালী? হ্যাঁ কি সমস্যা?
কাল কি দোষ আমার একার ছিলো? তুমি আমাকে বাধ্য করেছিলে তোমার দিকে এগিয়ে যেতে। তুমি নিজে এগিয়ে এসেছিলে আমার দিকে। তবে কেন এখন এমন আচরণ করছো যেনো সব দোষ আমার? কেন?
তুমি চাইলেও তো আমাকে বাধা দিতে পারতে।
পারতে না? কিন্তু তুমি কি আমাকে একটা বারের জন্যও বাধা দিয়েছিলে? তুমি আমাকে বাধা দিলে কি আমি তোমাকে চুমু খাওয়ার সাহস করতাম? না বর্ণ। তুমি আমাকে কখনোই বাধা দাও নি।
সত্যি কথা কি জানো, তুমি আমার স্পর্শগুলোকে ভালোবাসো, আমার তোমাকে এভাবে কাছে টানাকে ভালোবাসো, তোমাকে এভাবে দেখাকে ভালোবাসো আর তুমি আমাকে ভালোবাসো এইজন্যই বাধা দাও নি।”
বর্ণালী এমন কোন কথা শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না। চোখ দিয়ে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে। ইভান ধীরে ধীরে ওর হাত ছেড়ে খানিকটা দূরে গিয়ে দাঁড়ায়।
-“আচ্ছা সরি ঠিকাছে? হ্যাঁ সব দোষ আমার। তুমি আমাকে শাস্তি দাও প্লিজ। আমি তোমাকে না চাইতেও বারবার কাঁদাই। প্লিজ তুমি আমাকে শাস্তি দাও।”
বর্ণালী এখনো নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে চোখের জল ফেলছে।
-“তুমি আমাকে শাস্তি দেবে নাতো? ঠিকাছে তাহলে আমিই নিজেকে শাস্তি দেবো।”
কথাটা বলেই ইভান হনহন করে রুম অফিস রুম থেকে বের হয়ে যায়। বর্ণালী যেনো ইভান বলে ডাকতে চেয়েও ডাকতে পারেনা।
রুমু ইভানকে দেখেই আৎকে উঠে। ওর চোখ জোরা লাল হয়ে আছে। রাগে মাথার দু’পাশের শিরা বারবার উঠানামা করছে। সম্পূর্ণ মুখ লাল হয়ে আছে। খুব বেশি ঘেমে গেছে। ইভান ওদের সামনে দিয়ে হেঁটে গাড়ি নিয়ে চলে যায়। মালিহা, আর রুমু কতবার ডাকলো কিন্তু কোন সাড়া দিলো না।
রুমু দ্রুত পা বাড়ায় অফিস রুমের দিকে। বর্ণালীকে খুব শান্ত অবস্থায় চেয়ারে বসে থাকতে দেখে রুমুর ভেতরটা কেঁপে উঠে। একটু কাছে যেতেই দেখে ওর চোখে জল। পাশে বসে ওর কাঁধে হাত রেখে ধীর গলায় জিজ্ঞেস করে,
-“কি হয়েছে বর্ণ?”
-“শেষ পর্যন্ত আমি নিজেকে আর আটকে রাখতে পারলাম নারে।”
-“কেন কি হয়েছে? বলবি তো আগে। এভাবে ভয় দেখাচ্ছিস কেন?”
বর্ণালী রুমুর দিকে তাকিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কেঁদে দেয়। এই কান্না যে কতদিনের জমানো তা কেবল বর্ণালীই জানে। নিজেকে আর আটকে রাখতে পারছেনা। আর কত এভাবে ভেতরে ভেতরে কাঁদবে সে। আজকে আর পারলো না। কান্না থামাতে কতই না চেষ্টা করছে রুমু কিন্তু সব চেষ্টা বিফলে যাচ্ছে। রুমু ওর এভাবে কান্না দেখে নিজেই কেঁদে দিয়েছে। বান্ধবীর কষ্টটা খুব ভালো করেই সে অনুভব করতে পারছে।
-“প্লিজ বর্ণ দেখ এবার কান্না থামা। আমার কিন্তু তোর কান্না সহ্য হচ্ছে না। দেখ আমিও কেঁদে দিয়েছি।”
বর্ণালী মাথা তুলতেই রুমু ওর চোখ মুছে দেয়। নিজেরও চোখ মুছে। কান্না থেমেছে ঠিকই কিন্তু হেচকি তুলছে এখন। রুমু পানি এগিয়ে দেয় ওর দিকে। গটগট করে পানি খেয়ে নেয় বর্ণালী।
-“ঠিক আছিস?”
-“হু।”
-“কি হয়েছে?”
বর্ণালী রুমুর দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো। কিভাবে বলবে সে এমন কথা। গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছেনা ওর। লজ্জা আর অপরাধবোধ কাজ করছে তার মাঝে।
-“আমি তোর বেস্ট ফ্রেন্ড বর্ণ। আমাকে কোন কথা বলতে তোর কোন সমস্যা থাকতে পারেনা। আমাদের একে অপরের আত্মার সাথে সম্পর্ক। তাছাড়া….”
বর্ণালী রুমুকে কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে নিজে বলতে শুরু করে,
-“কা…..কাল বিকেলে ই…..ইভান আমাকে নিয়ে পার্কে গিয়েছিলো। সে……সেখানে আমাদের মাঝে…… মানে আমি তাকে…. সে আমাকে…..”
-“কিস করা হয়েছে?”
বর্ণালী মাথা নিচু করে বলে,
-“হু।”
-“লিপ কিস?”
-“হু।”
-“ভালোবাসিস?”
-“হু।”
কথাটা বলেই বর্ণালী কথা পালটে দিতে বলে,
-“না মানে জানিনা।”
-“আচ্ছা বাঁধা দিয়েছিলি তুই?”
-“উহু।”
-“কেন?”
-“জানিনা।”
-“ভালোবাসিস।”
-“জানিনা।”
-“আমি তোকে জিজ্ঞেস করিনি বলেছি। তুই ইভানকে ভালোবাসিস। আর কত না করবি?”
-“কিন্তু…”
-“তুই যদি ভালো নাই বাসতি তাহলে তাকে বাঁধা দিলি না কেন?”
বর্ণালী চুপ হয়ে আছে। চোখ দিয়ে আবারো টপটপ করে পানি পড়ছে।
-“কি হলো? কাঁদছিস কেন আবার?”
-“আমি অনেক চেষ্টা করেছিলাম রে কিন্তু পারিনি। পারিনি ওর থেকে দূরে থাকতে। সে দিন থেকেই আমি তাকে ভালোবাসতে শুরু করি যেদিন ও আমার জন্য না খেয়ে হাত কেটে বসেছিলো।”
-“আমি তো আগেই জানতাম যে তুই তাকে ভালোবাসিস। বলিস না কেন তাকে? কেন এতো কষ্ট দিচ্ছিস? আর নিজেও কেন এতো কষ্ট পাচ্ছিস?”
-“কষ্ট কি আর আমি ইচ্ছে করে দিচ্ছি? অনেক চেষ্টা করেছিলাম তার প্রতি আমার যে অনুভূতি হচ্ছে তা দাবিয়ে রাখার কিন্তু পারিনি। বারবার চেষ্টা করেছি ওর থেকে দূরে থাকার কিন্তু পারিনি। ও সামনে আসলেই আমার সবকিছু ওলট-পালট হয়ে যায়। কাল আমাদের মাঝে যেটা হলো সেটা হওয়াতে আমি তার প্রতি আরো বেশি দূর্বল হয়ে পড়েছি। আর আমি তাও জানি যে সে নিজেও আমার প্রতি আরো বেশি দূর্বল হয়ে পড়েছে। আমি এটাই চাই নি। আমাদের মাঝে যে এমন সম্পর্ক হওয়ার কোন সুযোগ নেই রে। আমি ভালোবাসলেও তাকে কোনদিন আপন করে পাবোনা।”
-“কে বলেছে পাবিনা?”
-“আমাদের বয়সের অনেকটা তফাৎ আছে। কেউ আমাদের সম্পর্ক মেনে নেবে না।”
-“মেনে তো নিতেও পারে। আর তুই ইভানের উপর ভরসা রাখ ও সবকিছু সামলে নেবে। বয়স কম হলেও সে অনেক কিছুই বুঝে। আর এখন বয়সের ব্যাপারটা খুব বড় কিছু নয়। কতইবা ছোট তোর থেকে! বেশ হলে ২-৩বছর। এমন বিয়ে অনেক হয়েছে।”
-“হয়তো হয়েছে। কিন্তু সবাই এটা স্বাভাবিকভাবে নেয় না রে। পারবো না রে রুমু আমি পারবোনা তার সাথে ভালোবাসার কোন সম্পর্ক তৈরী করতে। পারবো না আমি আমার বসন্তপথিকের পথে তার বাসন্তী হয়ে পা বাড়াতে। পারবোনা তার সাথে সেই পথে চলতে পারবোনা।”
বর্ণালী ঠোঁট চেপে একনাগাড়ে কেঁদেই যাচ্ছে। আর কথা বলতে গেলে খুব তাড়াতাড়িই কথা বলছে। মাঝে মাঝে হাতের উলটো পাশ দিয়ে চোখের জল মুছে দিচ্ছে। রুমুর মায়াটা ওর প্রতি আরো বেড়ে গেছে। এই মেয়েকে কোনদিন এভাবে কাঁদতে দেখেনি সে।
-“ইভান আমার কাছে আসলে আমি নিজেকে সামলে রাখতে পারিনা রুমু। পারিনা নিজেকে ওর কাছ থেকে দূরে রাখতে। ইচ্ছে করে ওর মাঝেই হারাই আর সে আমায় খুঁজে নিক।”
-“এতো ভালোবাসিস তো কেন এমন করছিস? একটা সুযোগ দে ইভানকে। সে তোকে অনেক ভালোবাসে। দেখ এখন রাগে কলেজ থেকে বেড়িয়ে গেছে। না জানি কি উলটো পাল্টো কাজ করে বসে।”
-“মানে? কোথায় ও?”
-“দেখ কল দিয়ে। তোকে কিছু বলে যায় নি?”
বর্ণালীর বুকটা ধুকপুক করছে। ইভান যাওয়ার সময় তো নিজেকে শাস্তি দেয়ার কথা বলে গিয়েছিলো। কি করছে এই ছেলেটা? কোথায় আছে এখন? কোন ভুল করে ফেললাম নাতো!
বর্ণালী ভয়ে চুপসে গেছে। ইভানের কিছু হয়ে গেলে ও কিভাবে নিজেকে ক্ষমা করবে! কিভাবে নিজেকে সামলে রাখবে! ইভান ছাড়া যে নিজেকে ভাবতেই পারেনা ও।
ইভান পাগলের মতো গাড়ি ড্রাইভ করছে। কোথায় যাবে সে ঠিক করে নিয়েছে। এই মুহুর্তে নিজেকে শাস্তি দেয়াটা জরুরী। তার জন্যই বর্ণালীর আজ এমন অবস্থা। চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ার আগেই জল মুছে নেয় ইভান। এদিকে বর্ণালী কোন কিছু না ভেবেই ইভানকে কল দিচ্ছে। কিন্তু ইভান কল রিসিভ করছে না। রুমুও বারবার কল দিচ্ছে কোন কল রিসিভ করছে না। করবেই বা কিভাবে ওর মাথায় এখন একটাই কথা ঘুরপাক করছে বর্ণালী কষ্ট পেয়েছে আমাকেও কষ্ট পেতে হবে। ফোন সাইলেন্ট করে রাখা আছে সেদিকে কোন খেয়ালই নেই। বর্ণালীর কান্নার মাত্রাটা বেড়েই চলেছে।
💛
#______চলবে_____

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here