#___ফাগুন_প্রেম___পর্বঃ ৩১ +৩২
#_লিখাঃ Bornali Suhana
💛
-“ছাড়ো ইভান কেউ এসে পড়লে সমস্যা হয়ে যাবে। নিচে যেতে হবে ছাড়ো।”
-“ইভান তোমাকে ধরেছে ছাড়ার জন্য নয়। সারাজীবন এভাবেই আগলে রাখার জন্য।”
ইভান আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিজের শরীরের সাথে একেবারে মিশিয়ে নেয় বর্ণালীকে। এতোটাই কাছে যে ইভানের দু’পায়ের ফাঁকে বর্ণালীর দু’পায়ের স্থান হয়েছে।
কিছুক্ষণ পর বর্ণালী ইভানকে আলতো করে ধাক্কা দিয়ে বসে। ইভান বর্ণালীকে ছেড়ে দাঁড়ায়।
-“তুমি তোমার প্রমিজ ব্রেক করেছো ইভান।”
-“হ্যাঁ করেছি আর বারবার করবো।”
-“তুমি আমায় মিথ্যে কীভাবে বললে? এই তোমার ভালোবাসা?”
ইভান হাঁটু ভাঁজ করে ফ্লোরে বসে পড়ে। বর্ণালী ব্রু কুচকে ইভানের দিকে তাকায়। ইভান নিজের কান ধরে বলে,
-“সরিইইইইইই প্লিইইইইইইজ এবারের মতো ক্ষমা করে দাও না গো।”
ইভানের চেহারাটা কেমন বাচ্চা বাচ্চা লাগছে এই মুহুর্তে। অনেক বেশি কিউট লাগছে। সে এভাবে কখনোই দেখেনি ইভানকে। ছেলেটা আসলেই অনেক কিউট। রাগ করে থাকাই যায় না। কিন্তু তবুও থাকতে হবে। এতো বড় কথা কিভাবে লুকাতে পারলো এরা ভাই বোন।
-“এতো সহজে ক্ষমা করছিনা। উঠে নিচে আসো আমি গেলাম।”
কথাটা বলেই বর্ণালী রুম থেকে বেরিয়ে আসে। ইভান অসহায় হয়ে ফ্লোরে বসে পড়ে। কেন এমন করতে গেলাম ওর সাথে!!! আগেই যদি সত্যিটা বলে দিতাম তাহলে আজ এতো কিছু হতো না। ইভান নিজের মনেই নিজেকে বকে যাচ্ছে। রাগে হাত দিয়ে ফ্লোরে ঘুসি মারে।
👇
বর্ণালী আংটির দিকে অনেকক্ষণ ধরে তাকিয়ে আছে। ওরা এনেছে স্বর্ণের আংটি কিন্তু ঈশার তরফ থেকে সজিবের জন্য প্লাটিনামের উপর ডায়মন্ড বসানো আংটি। ওর কাছে কেমন যেনো লাগছে বিষয়টা। ভাইয়ের দিকে একবার তাকালো সজিবও অনেক অস্বস্তিবোধ করছে। শারমিন বেগম সজিবের দিকে আংটিটা এগিয়ে দিলেন। সজিব কাঁপা কাঁপা হাতে আংটিটা নিয়ে ঈশার হাতে পড়িয়ে দিলো। ঈশার যেনো খুশির শেষ নেই। আজ সজিব তাকে নিজের বলে মোহর লাগিয়ে দিলো। ঈশা আংটিটা হাতে নিয়ে সজিবের দিকে এগিয়ে দিতেই সজিব বলে,
-“বেয়াদবি মাফ করবেন আংকেল। আসলে আমি এই আংটিটা নিতে পারবো না।”
সজিবের কথায় সবাই থমকে যায়। ঈশার বুকের ধুকপুকানিটা বেড়ে যায়। সজিব কি করতে চাইছে! ও কি এনগেজমেন্ট ক্যান্সেল করে দিবে! না না এটা কখনোই করবে না সজিব। সজিবের কথা শুনে ফারহান আহমেদ বলেন,
-“কেন বাবা? কি হয়েছে?”
-“আমি এতো দামী আংটি নিতে পারবো না আংকেল। এটা আমার যোগ্যতার বাইরে।”
-“কে বললো এটা তোমার যোগ্যতার বাইরে? আমরা তোমার যোগ্যতা দেখেই এটা এনেছি।”
ইভান এতোক্ষণ চুপচাপ সব শুনছিলো এবার সে বলতে শুরু করে,
-“ভাইয়া ছোট মুখে বড় কথা মাফ করবেন। কিন্তু যোগ্যতা কখনোই টাকা পয়সা দিয়ে বিচার করা হয় না। একজন মানুষের যোগ্যতা তার লেখাপড়া দিয়েও বিচার করা যায় না। আসল যোগ্যতা তার পরিবারের শিক্ষা থেকেই হয়। কে কতটা যোগ্য তার ব্যাবহারে প্রকাশ পায়। তার মন মানষিকতায় প্রকাশ পায়। এমন অনেক মানুষ আছে যারা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তো নিয়েছে ঠিকই কিন্তু কার সাথে কিভাবে ব্যাবহার করতে হয় সেটাও জানেনা। ছোট-বড়কে স্নেহ বা সম্মান করতে জানেনা। নিজের মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী- সন্তান আর আত্মীয় স্বজনের সম্মান, অধিকার কিছুই দিতে জানেনা। আর আপনি সেদিক থেকে অবশ্যই এই ছোট একটা আংটির কেন আমার বুমনিরও যোগ্য। তাই তো বুমনি আপনাকে তার নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছে।”
ইভানের কথা শুনে সবাই যতটা অবাক হয়েছে তার চেয়ে বেশি অবাক হয়েছে বর্ণালী। এই ছেলে এই বয়সে কিভাবে এতো বড় কথা বলতে পারে!!! সজিব আর কোন কিছু না বলেই নিজের হাত বাড়িয়ে দেয়। ঈশার চোখের কোনে জল জমে গেছে। তার হাত কাঁপছে। সজিবকে কিছুক্ষণের মধ্যেই সে নিজের করে নেবে। কাঁপা কাঁপা হাতে ঈশা সজিবের আঙুলে রিং পড়িয়ে দেয়। সবাই একসাথে হাততালি দিয়ে উঠে। রানু মিষ্টি নিয়ে আসে সবাই মিষ্টি মুখ করতে ব্যাস্ত। ইভান চামচের মাঝে মিষ্টির এক টুকরো নিয়ে বর্ণালীর দিকে এগিয়ে দেয়। বর্ণালী ইভানের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকায়। ইভান একটা চোখ মেরে ওর দিকে তাকায়। বর্ণালী একটা ঢোক গিলে আশেপাশে তাকিয়ে মৃদু হেসে আলতো করে মিষ্টি টুকু মুখে নিয়ে নেয়। এখানে কিছু বলতেও পারবেনা তাই চুপচাপ খেয়ে নেয়। তারপর রুমুকেও মিষ্টি খাওয়ায়।
ইভান ক্যামেরা এনে সবার ছবি তুলতে ব্যাস্ত। কিন্তু সবার কম বর্ণালীর ছবি বেশি তুলছে। আর বর্ণালী তা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে। কেমন অস্বস্তি লাগছে ওর। রুমুর মন বসছে না এখানে। কেন যেন ওর দম বন্ধ হয়ে আসছে। নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। তবুও বর্ণালী ও বাকি সবার সাথে গল্প করছে। রানুর সাথে ওদের গল্প বেশ জমেছে। মেয়েটা ভারী মিষ্টি করে কথা বলে।
ঈশা আর সজিব পাশাপাশি বসে আছে ঠিকই কিন্তু কোন কথা বলতে পারছেনা। ঈশার যে খুব ইচ্ছে হচ্ছে সজিবের মুখে ভালোবাসি কথাটা শোনার। তখনই যেনো সাহারা বেগম ওর জন্য আর্শীবাদ হয়ে আসেন।
-“ঈশা যা সজিবকে তোর রুম দেখিয়ে আন।”
মায়ের এমন কথায় ঈশার ইচ্ছে করছে তাঁকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে একটা চুমু দিয়ে দিতে। কিন্তু এখন সে এরকম কিছুই করতে পারবে না। তাই আলতো করে মাথা নেড়ে মাকে বললো,
-“হ্যাঁ মা।”
ঈশা সজিবের দিকে তাকিয়ে উঠে দাঁড়ায়। সজিবও উঠে ঈশার পিছু পিছু এগিয়ে যায়।
ঈশার রুমে এসে সজিব বিছানায় বসে পড়ে। ঈশা দরজা আলতো করে লাগিয়ে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়ায়।
-“দরজা বন্ধ করলে কেন? কেউ এভাবে দেখলে খারাপ ভাববে ঈশা।”
-“এখন আমাদের টিকেট আছে সাহেব।”
-“কিসের টিকেট?”
-“এভাবে বন্ধ দরজার ভেতর থাকার।”
ঈশা মাথা থেকে শাড়ির আঁচল ফেলে সোজা হয়ে দাঁড়ায়।
-“বললে না তো আমাকে কেমন লাগছে? নাকি এটা বলতেও শুভ মুহুর্ত লাগবে?”
-“ভালো লাগছে।”
ঈশা একটু রেগে গেলো। এতো সুন্দর করে সাজলো ২ঘন্টা লাগিয়ে তারপরও সজিব ওকে শুধুই ভালো লাগছে বলছে!
ঈশা সজিবের একদম কাছে এসে ঠিক ওর মুখের উপর কিছুটা ঝুঁকে বলে,
-“ভালো করে দেখে বলো তো কেমন লাগছে?”
ঈশার নিশ্বাস এসে সজিবের মুখে পড়ছে। সজিব কিছুটা পেছন দিকে সরে গিয়ে বলে,
-“খ….খুব ভালো।”
ঈশা আরেকটু কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলে,
-“এবার বলো কেমন লাগছে?”
সজিব ঈশার এমন ব্যাবহারে অনেকটা ভয় পেয়ে যায়। খালি গলায় ঢোক গিলে বলে,
-“অ…..অনেক সু….সুন্দর লাগছে।”
-“এভাবে তোতলানো হচ্ছে কেন?”
-“ক…..কই? নাতো।”
ঈশা সজিবের থেকে সরে গিয়ে হেসে দেয়। সজিব হা হয়ে ওর হাসি দেখছে। ওর হাসিটা একদম মনের ভেতর গিয়ে লাগে।
-“ভালোবাসি।”
হুট করেই সজিবের মুখে এমন কথা শুনে ঈশার হাসি থেমে যায়। শরীরে এক অজানা শিহরণ বয়ে যায়। চোখটা কেমন শান্ত হয়ে আসে। সজিব বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। ঈশার একদম কাছে এসে ওর দু’হাত ধরে নিজের বুকের উপর রাখে।
💛
#______চলবে………
#__ফাগুন_প্রেম__
#_লিখাঃ Bornali Suhana
#_পর্বঃ ৩২
💛
-“ভালোবাসি।”
হুট করেই সজিবের মুখে এমন কথা শুনে ঈশার হাসি থেমে যায়। শরীরে এক অজানা শিহরণ বয়ে যায়। চোখটা কেমন শান্ত হয়ে আসে। সজিব বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। ঈশার একদম কাছে এসে ওর দু’হাত ধরে নিজের বুকের উপর রাখে।
-“অনেক আগে থেকেই ভালোবাসি কিন্তু ভয়ে বলা হয় নি।”
-“কিসের ভয়?”
-“তোমার আর আমার মাঝে যে তফাৎ আছে সেটার।”
-“আমি তো কোন তফাৎ দেখি না।”
-“এটা তোমার ভালো মন মানুষিকতারর পরিচয়।”
-“মানে?”
-“তুমি ও তোমার পরিবারের সবার মন মানুষিকতা অনেক ভালো ঈশা। আমি ভাবতেও পারনি সবাই জিনিসটা এতো সহজে নেবেন।”
-“সত্যি বলতে আমিও ভাবিনি এতো সহজে সব হয়ে যাবে। আচ্ছা এখন তো আমার সাথে প্রতিদিন কথা বলতে কোন সমস্যা নেই?”
-“আগেও ছিলো না ঈশা। আর এখন তো আরো আগে নেই।”
-“সজিব কবে বিয়ের তারিখ রাখছো?”
-“কেন?”
-“একটু তাড়াতাড়ি রেখো প্লিজ।”
-“আরে মেয়েটা দেখছি বিয়ের জন্য পাগল হয়ে গেছে।”
ঈশা লজ্জায় সজিবের বুক থেকে হাত সরিয়ে ওর বাহুর উপর কয়েকটা চাপড় বসিয়ে দেয়। সজিব ঈশার হাত ধরে আলতো করে নিজের কাঁধে রাখে। আর নিজের দু’হাত নিয়ে ঈশার কোমড়ে। ঈশার সমস্ত শরীর যেনো শিউরে ওঠে। সজিব তাকে আজ এতো কাছে টেনে নিয়েছে। সজিবের মুখ ক্রমাগত ঈশার মুখের কাছে আসছে। কি করতে চাচ্ছে সজিব! ঈশা চট করে চোখ বন্ধ করে নেয়। নিশ্বাস ভারী হয়ে আসছে ওর। আজ মনে হয় ওর ভালোবাসার প্রথম ছোঁয়া পাবে। সজিব আলতো করে ঈশার নাকের সাথে নিজের নাক ঘষে দিলো। ঈশা কেঁপে উঠে সজিবের কাঁধ খামছে ধরে। নাকের ডগায় আলতো করে একটা চুমু খেয়ে জড়িয়ে ধরে ঈশাকে। ঈশাও সজিবকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। নিজে নিজেই ঈশা হেসে মরে যাচ্ছে ভেবেছিলো কি আর হয়ে গেলো কি!
কিছুক্ষণ পর সজিব ঈশাকে ছেড়ে বলে,
-“চলো নিচে যাওয়া যাক।”
-“হু।”
ঈশা লজ্জায় কথা বলতে পারছেনা। এর আগে তো ঈশা নিজেই সজিবের কপালে চুমু খেয়েছিলো তখন ওর লজ্জা কোথায় গিয়েছিলো? আজ কেন এতো লজ্জা পাচ্ছে ও! নিজেই বুঝে উঠতে পারছেনা।
👇
ইভান বারবার বর্ণালীর দিকে আড় চোখে তাকাচ্ছে। বর্ণালী তা দেখতে পেয়েও না দেখার ভাব নিয়ে বসে আছে। কখন থেকেই চাচ্ছে বর্ণালীর সাথে একটু কথা বলতে কিন্তু পারছেনা। হুট করেই ইভান এসে বর্ণালীর পাশে বসে গেলো। বর্ণালী উঠতে নিলেই খপ করে ওর হাত ধরে নেয়। আশেপাশে তাকিয়ে মৃদু হাসার চেষ্টা করে ইভানকে ফিসফিস করে বলে,
-“ইভান হাত ছাড়ো।”
-“উহুউউ।”
-“কেউ দেখবে ইভান ছাড়ো।”
-“আগে বলো ক্ষমা করেছো। রাগ করো নি।”
-“এসব কথা পরে হবে।”
-“তাহলে হাতও পরে ছাড়বো।”
বর্ণালী হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছেনা। ইভান আশেপাশে তাকিয়ে দেখে সবাই গল্প করতে ব্যস্ত। সবার চোখের আড়ালে বর্ণালীর হাতের মাঝে চুমু খেয়ে বসে। বর্ণালীর পুরো শরীরে যেনো কম্পন বয়ে যায়। থমকে গেছে ওর নিশ্বাস। ইভান এমন কিছু করবে ভাবতেও পারেনি। নাহ আর এভাবে বসে থাকতে পারবেনা ও। বর্ণালী চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে বলে,
-“আচ্ছা রাগও করিনি আর মাফ করে দিলাম। এবার ছাড়ো।”
-“সত্যি?”
-“হ্যাঁ সত্যি।”
ইভান হাত ছেড়ে দিতেই বর্ণালী হুরহুর করে উঠে মায়ের কাছে গিয়ে বসে। সজিব আর ঈশা উপর থেকে নেমে আসে। কিছুক্ষণ আলাপ-আলোচনা করে ১৫দিন পর বিয়ের তারিখ ঠিক করা হয়। ধুমধামেই বিয়েটা হবে। সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বের হয়ে যায় তারা।
👇
-“আমি আসিরে। অনেকদিন তো থাকলাম।”
বাড়ির সামনে এসেই রুমু বর্ণালীকে কথাটা বলে। বর্ণালী চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলে,
-“বললেই হলো? কাল যাবি আজ না। আজকে অনেক দেরি হয়ে গেছে।”
-“প্লিজ বর্ণ বুঝার চেষ্টা কর। আমার বাসায় যাওয়া জরুরী।”
-“তা কি এমন জরুরী আমিও শুনি একটু। তারপর ভেবে দেখবো যাবি কিনা।”
রুমু আর কিছুই ভেবে পেলো না কি বলবে।
-“আচ্ছা কাল সকালে তোর সাথেই বেরিয়ে যাবো।”
-“আচ্ছা বাবু ঠিকাছে।”
রুমুকে অনেক শান্ত লাগছে আজ। ওকে এমন কখনোই দেখেনি সজিব। সজিব রুমুর কাছে আসে কথা বলার জন্য।
-“তোর কি কিছু হয়েছে রুমু? শরীর খারাপ?”
-“আমার চল্লিশা খাবে ভাবছো নাকি সবজিওয়ালা? এই স্বপ্ন এতো তাড়াতাড়ি পূরণ হতে দিবো না আমি।”
সজিব খানিকটা হাসে। ও শুধু শুধুই টেনশন করছিলো৷ এখন রুমুকে রুমু বলে মনে হচ্ছে।
-“তোর চল্লিশা খাবো আমার বয়েই গেছে।”
-“হ্যাঁ হ্যাঁ বুঝি সব মনের মাঝে কি চলে। তোর বিয়ে খাবো তারপর তোর ছেলেপেলে, নাতিনাতনি তারপর ভেবে দেখবো চল্লিশা খাওয়ানো যায় কিনা।”
কথাটা বলেই হুড়মুড়িয়ে ভেতরে ঢুকে যায় রুমু। সজিব পেছনে দাঁড়িয়ে একা একাই হাসছে আর মনে মনে বলছে,
-“এই মেয়েটাকে এভাবেই মানায়। কিন্তু আস্ত একটা পাজি।”
রাতে খেয়ে যে যার মতো ঘুমাতে চলে গেলো।
বিয়ের জন্য আজকে থেকেই কাজ শুরু করে দিতে হবে বলে ভেবে নিলেন হাবিব সাহেব। একমাত্র ছেলের বিয়ে বলে কথা। কিন্তু শারমিন বেগম ভাবছেন অন্য কথা। বিয়ে তো ধুমধামে করতে চান আর তাতে অনেক টাকারও প্রয়োজন। এতো টাকা আসবে কোত্থেকে?
সজিব অনেকক্ষণ ধরেই ঈশার সাথে ফোনে বলছে। ওর ফোনে সেই আননউন নাম্বারে একটা কল আসে। ওয়েটিংয়ে দেখে কল কেটে দেয়। সাথে সাথে সজিব খেয়াল করে একটা মেসেজ এসেছে। কিন্তু এখন ওর ঈশার সাথে কথা বলাটা বেশি ইম্পর্ট্যান্ট। আজকে মনে হচ্ছে অনেক জনম পর ভালোবাসার মানুষের সাথে কথা বলছে।
👇
বর্ণালী অনেকক্ষণ ধরে রুমুর চুল নিয়ে খেলছে। রুমুও চুপটি মেরে শুয়ে আছে বর্ণালীকে জড়িয়ে ধরে।
-“তুই কি কোন কিছু নিয়ে চিন্তিত?”
-“তোকেও তো দেখে মনে হচ্ছে তুইও কোন কিছু নিয়ে টেনশনে আছিস।”
রুমুর কথার জবাব না দিয়ে বর্ণালীও তাকে পালটা প্রশ্ন ছুড়ে মারে।
রুমু মাথা তুলে বর্ণালীর মুখের কাছে এনে বলে,
-“আগে বল কি হয়েছে তোর?”
-“কি বলবো দেখ ইভান আর ঈশা আমার সাথে কেমন মিথ্যে একটা নাটক করলো।”
-“শুধুই ইভান আর ঈশা নয় আরো একজন আছে যে সব জেনেও তোকে বলে নি।”
-“মানে? কে সে?”
-“সে হলো রুমু।”
বর্ণালী শুয়া থেকে উঠে বসে যায়। অবাকের চরম সীমায় পৌঁছে গেছে ও।
-“কি বললি?”
-“হ্যাঁ আমি অনেক আগে থেকেই জানতাম কিন্তু কিছুই বলিনি। আসলে বলার মতো অবস্থা ছিলো না।”
-“তুইও শেষ পর্যন্ত আমার সাথে এমন করতে পারলি?”
-“আরে জান বিষয়টাকে তুই নরমালি নে না। এখানে তো খারাপ কিছুই হয় নি।”
-“আচ্ছা? আর এই মিথ্যে কি খারাপ নয়?”
-“হ্যাঁ এটা খারাপ। কিন্তু ভালোর জন্য একটা মিথ্যে বললে কিছুই হয় না।”
রুমু বর্ণালীর কোলে মাথা রেখে আবার বলে,
-“এবার দে তো মাথায় বিলি কেটে দে।”
বর্ণালী কোন কিছুই বললো না। কিইবা আছে বলার। আসলেই কি জিনিসটা এতো সাধারণ! আবারো রুমুর মাথায় আলতো করে বিলি কেটে দিতে লাগে বর্ণালী। কোলের উপর যেনো কেমন ভিজে ভিজে লাগছে বর্ণালীর। রুমুর মাথা তুলে দেখে আসলেই ভেজা। রুমু কাঁদছে! কিন্তু কেন? বর্ণালী রুমুকে কোল থেকে তুলে বসিয়ে দেয়। রুমুর চোখ লাল দেখে ভয় পেয়ে যায়। অজানা এক ভয়ে ভেতরটা কেঁপে উঠে তার।
-“রুমু এই রুমু কি হয়েছে? এভাবে কাঁদছিস কেন জান? বল কি হয়েছে? দেখ এভাবে ভয় দেখাবি না বলে দিলাম। বল কি হয়েছে? আরে বলবি তো আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি।”
রুমু তখনো নিশ্চুপ। বর্ণালী আবারো রুমুকে ঝাঁকিয়ে বলল,
-“তুই কাঁদছিস কেন? কি লুকাচ্ছিস আমার থেকে?”
রুমু থতমত খেয়ে যায়। আসলেই ও কাঁদছে কেন? কি জবাব দেবে এখন বর্ণালীকে!
-“কি হলো বলছিস না কেন? কি হয়েছে তোর? কাঁদছিস কেন? একবার শুধু আমায় বল। কেউ কিছু বলেছে?”
রুমু এবার আর নিজেকে সামলে রাখতে পারলো না। বর্ণালীর বুকে মাথা রেখে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দেয়। বর্ণালী কিভাবে রুমুকে শান্তনা দিবে তা জানা নেই ওর। কিন্তু তারপরও রুমুর এই কান্নার কারণ ওকে জানতেই হবে। রুমুকে সে কখনোই কাঁদতে দেখে নি। কেন আজ এভাবে কাঁদছে মেয়েটা।
💛
#______চলবে_____