#_ফাগুন_প্রেমপর্বঃ ৫১ +৫২

0
339

#_ফাগুন_প্রেমপর্বঃ ৫১ +৫২

লেখনীতেঃ Bornali Suhana
💛
💛
যদিও সে জানে রুমুর এই হাসি শুধু উপরে উপরেই। কিন্তু আসলে তার মনের আঙিনায় ধরেছে কষ্টের ঘুণপোকা। বেড়েছে যন্ত্রণার উপদ্রব। ক্ষয়ে যাচ্ছে ভেতরটায় লুকানো বাসিন্দা। ক্ষণেক্ষণে ঝরে পড়ছে অনুভূতিটাগুলো। যে অনুভূতির বিপক্ষে সে যেতে পারেনি আর হয়তো তার ঠাঁই নেই। বর্ণালী জানেনা ওদের জীবনের কি হবে কিন্তু সে এই পদক্ষেপ না নিলে হতো না। বান্ধবীর জন্য আজ একটু না হয় স্বার্থপর হলোই। কিন্তু রুমু কি রাজী হবে? হতে তো ওকে হবেই। আমার জন্য হলেও ওকে রাজী হতে হবে। এসব ভাবনা তাকে ভেতর থেকে ভাবাচ্ছে। গল্পের মাঝে ফোনের রিংটোন বেজে উঠে বর্ণালীর। স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে সেই ভালোবাসার নাম “বসন্ত পথিক”। ইভান ফোন করেছে। সবার মাঝ থেকে উঠে নিজের রুমে যেতে যেতে কল রিসিভ করে সে। ফোনের ওপাশে কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে সে নিজেই বলে,
-” ইভান….”
বর্ণালীর মুখে এভাবে নিজের নাম শুনে ইভানের কলিজাটায় যেনো পানি আসে৷ সিক্ত হয়ে যায় প্রাণ। মনে জেগে উঠে হাজারো প্রদিপ আর আলোকিত করে দেয় তার ভুবন। ইভানের ঘন নিঃশ্বাসের শব্দ বর্ণালী চোখ বন্ধ করে অনুভব করছে। মনে হচ্ছে যেনো ইভানের মুখটা ঠিক ওর মুখের সামনে। আর তার সম্পূর্ণ নিঃশ্বাস এসে ওর মুখের উপর লুটিয়ে পড়ছে৷ আয়নায় হাত দিয়ে ইভানের মুখটা স্পর্শ করার বৃথা চেষ্টা করছে।
-“কেন এমন করো আমার সাথে বাসন্তী?”
এই কণ্ঠে এতো নেশা কেন! কেমন মাতোয়ারা করে দেয়। এই বাসন্তী ডাকটা ওর মুখ থেকে বারবার শুনতে মন চায় ওর। কিন্তু বাস্তবতার সবকিছু যে ধুলোপড়া। ইভানের সাথে কেন ওর ভালোবাসা পূর্ণতা পাবে না? ভালোই তো বেসেছে। কেন ইভান? কেন আমায় তোমার প্রতি পাগল করলে? না পারছি এই দূরত্ব সইতে আর না পারছি তোমায় কাছে টেনে নিতে। বন্ধ চোখ দিয়েই গালের পাশ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। চোখ বন্ধ থাকলেও কেন এই জল বাঁধা মানেনা? সে কেন থমকে যায় না? এই অনর্থক প্রশ্নের কোন উত্তর নেই। তবুও মনের মাঝে তো আসতে বাঁধা মানেনা।
-“আমার বাসন্তী এখন কাঁদছে জানি।”
-“মিথ্যা।”
-“উহু সত্যি। যতই বলো না কেন আমি তোমার মুখের কথা বিশ্বাস করি না। আমি তোমার চোখে দেখতে পাই তোমার মুখ পড়তে পারি। তোমার চোখেমুখে স্পষ্ট দেখা যায় যে তুমি আমায় ভালোবাসো, আমায় তোমার করে চাও। কিন্তু তোমাকে আমার কাছে আসতে কিছু একটা বাঁধা দিচ্ছে। আর এই বাঁধাটা হয়তো আমাদের বয়সের পার্থক্য। যা আমাদের পরিবার ও সমাজ মেনে নিবে না ভাবছো। আমি সমাজের কথা বলবো না বাসন্তী কিন্তু তোমার আমার পরিবার ঠিকই রাজী করতে পারবো। একটা সুযোগ দাও না তোমার বসন্ত পথিককে।”
বর্ণালী নিজের কান্না আটকানোর চেষ্টা করে বলে,
-“আমাকে তুমি এভাবে আর কোন কল দিও না ইভান। নাহলে আমি তোমায় ব্লক দিতে বাধ্য হবো।”
কথাটা বলেই কল কেটে দেয়। কান্নাটা বেরিয়ে আসতেই চেয়েছিলো তখনই দরজায় কারো উপস্তিতি অনুভব করে। কেউ দরজা ধাক্কাচ্ছে। কয়েকটা লম্বা নিঃশ্বাস নিয়ে হাসিমুখে দরজা খুলতেই দেখে জেনি, নিধি আর রুমু। সবাই একসাথে বলে উঠে,
-“আজকে আমরা এখানে ঘুমাবো।”
-“হ্যাঁ এসো।”
-“সবার কি জায়গা হবে?”
-“ফ্লোরে বিছানা করে নিলে অনেক ভালো হয় তাই না?”
নিধির প্রশ্ন শুনে জেনি কথাটা বলেই ফ্লোরে বিছানা করতে লেগে যায়। বর্ণালীর কলেজ ব্যাগ ওখানেই ছিলো৷ বিছানার চাদর টান দেয়ার সাথে ব্যাগটা ঠাস করে ফ্লোরে পড়ে যায়। ভয়ে বিছানার চাদর রেখে ব্যাগের জিনিস তুলতে লেগে যায়। একটা বক্সের ভেতর থেকে নোজ পিন বেরিয়ে আসে। নোজ পিনটা দেখেই জেনির ভালো লেগে যায়। হাতে নিয়ে বলে,
-“আপু এটা আমায় দিয়ে দে না। এতো সুন্দর নোজ পিন!”
নোজ পিনের কথা শুনেই বর্ণালী দৌড়ে গিয়ে ওর হাত থেকে নেয়। এভাবে কেড়ে নেয়ায় জেনির চোখ বড়বড় হয়ে যায়।
-“এভাবে কেড়ে নেয়ার কী আছে? না দিলে বলেই দিতে আমি কী নিয়ে নিতাম?”
বর্ণালীর ওর কথায় কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। নোজ পিনটা হাতে নিয়ে দেখতেই মনে হয় সেদিনের কথা যেদিন পার্কে ইভান ওকে এটা গিফট করেছিলো। কিন্তু ও তো পার্কেই ইভানকে ফেরত দেয়ার পর সে তা ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলো।
-“এটা এখানে কীভাবে এলো!”
নিজের অজান্তেই কথাটা মুখ দিয়ে বের হয়ে গেলো ওর। রুমু পেছন থেকে বলে,
-“এটা তুই আজ দেখলি?”
-“মানে?”
-“সেদিন এটা আমি কুড়িয়ে নিয়ে তোর ব্যাগে রেখে দিয়েছিলাম। আর তুই এতোদিন খেয়ালই করিস নি?”
-“আরে আমি ব্যাগ ভালো করে চেকই করিনি।”
ওদের কথাবার্তা শুনে জেনি আর নিধি একে অপরের দিকে তাকাচ্ছে। কথাগুলোর আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছেনা তারা। তবে বুঝতে পারছে এটা কারো দেয়া গিফট হবে হয়তো। নিধি তো জিজ্ঞেস করেই বসে।
-“আচ্ছা এটা কী কেউ গিফট করেছে?”
-“ওই ইভ……”
-“রুমু…”
রুমু এক ধ্যানে ইভানের কথা বলে দিতে লেগেছিলো। বর্ণালী বাঁধা না দিলে তো বলেই ফেলতো।
-“কি হলো কিছু একটা বলছিলে রুমু আপু বলো।”
জেনির মনে কথাটা খটকা লাগে। রুমু যে কিছু একটা বলতেই চাচ্ছিলো আর বর্ণালী তাতে বাঁধা দিয়েছে তা সে বেশ বুঝতে পারছে। “ইভ” দিয়ে কি হতে পারে? ইভ….ইভান? মনের ভেতর কথাটা ভাবতেই উত্তর পেয়ে যায় জেনি। এটা ইভানের দেয়া গিফট। রুমু আপু কুড়িয়ে এনেছে মানে বর্ণালী আপু ফেলে দিয়েছিলো। বাহ সব ক্লিয়ার এখন। তার মানে ইভান ভাইয়া বর্ণপুকে ভালোবাসে কিন্তু সে বাসে না। না না সেও বাসে তবে স্বীকার করছে না। এই ব্যাপার দাঁড়াও বিচ্ছু দুটোকে মজা দেখাবো এবার।
জেনি একা একাই হাসছে। ওর মাথায় যে চরম দুষ্টুমি চেপেছে। ফ্লোরে বিছানা করে সবাই শুয়ে পড়লো।
👇
আজকে সজিবের, ঈশার গায়ে হলুদ ও মেহেদী অনুষ্ঠান। সজিব পুরো রাত ঘুমায় নি। এই একটা ব্যাপার ওকে ঘুমাতে দেয়নি। কাল রাত থেকে ঈশাকে কতটা যে কল দিয়েছে তার কোন হিসেব নেই। কিন্তু একটাও রিসিভ হয়নি। সকালেই কিছুটা চোখ লেগে এসেছিলো তখনই ঈশার কলে ঘুম থেকে ধরফরিয়ে উঠে। কীভাবে কথা বলবে ভাবতে ভাবতেই কেটে যায়। সে যখনই ব্যাক করবে তখন আবারো কল আসে। রিসিভ করে হ্যালো বলতেই,
-“সজিব ঠিক আছো তুমি? কিছু হয়নি তো তোমার? কাল রাত থেকে এতো কল কেন দিয়েছো? কিছু কি হয়েছে? কী হলো? বলছো না কেন? সজিব প্লিজ কথা বলো আমার প্রাণ বেরিয়ে যাচ্ছে।”
-“আমার সাথে একটু দেখা করতে পারবে?”
-“আজকে? কিন্তু আজকে কীভাবে করবো সজীব? কী হয়েছে ফোনেই বলো না।”
-“প্লিজ বেশি সময় নিবো না এসব কথা আমি ফোনে বলতে পারবো না।”
-“ঠিকাছে আমি বিকেলে পার্লারে যাবো তখন তুমি ওখানে এসো দেখা হয়ে যাবে।”
-“এর আগে পারবে না?”
-“না সজীব এর আগে বের হতেই দিবে না আম্মু। পার্লার থেকে মানুষ বাড়িতে আনাতো কিন্তু তুমি দেখা করতে বলছো তাই আমি নিজে যাবো ভাবছি।”
-“আচ্ছা ঠিকাছে।”
-“তুমি ঠিকাছো কোন কিছু হয়নি তো?”
-“নারে পাগলী কিছুই হয়নি। আচ্ছা শুনো না।”
-“হ্যাঁ বলো সজীব।”
-“আই লাভ ইউ।”
-“আই লাভ ইউ টু মি. সবজিওয়ালা। হাহা সরি আসলে এটা রুমু অনেক সুন্দর করে বলে তো তাই আমিও বললাম আজকে।”
রুমুর কথা শুনতেই সজবের বুকটা ধুক করে ধরে আসে। কেমন অসহনীয় ব্যাথা হচ্ছে। যতক্ষণ না রুমু ওকে ক্ষমা করছে ততক্ষণ ও শান্তি পাবেনা। কিন্তু রুমু ক্ষমা করলেই কি এই ব্যাথা সারবে? ঈশা সব শুনে কী বলবে? তাকে কি বিশ্বাস করবে? আগে রুমুর সাথে কথা বলাটা প্রয়োজন ওর। কিন্তু রুমু কি কথা বলবে? আর বর্ণালী যা বললো তার কি করবে ও? নাহ কিচ্ছু বুঝতে পারছেনা। মাথার চুল খামছে ধরতেই হাতের মাঝে ব্যাথা অনুভব করে। কাল রাত্রে কেটেছিলো এটা তার ব্যাথা। কোন রকম উঠে ফ্রেশ হয়ে বাইরে আসে৷ ক্ষুধা লেগেছে অনেক। রান্নাঘরে আসতেই রুমুর সামনে পড়ে। সবার সাথে কাজ করছে মেয়েটা কি সুন্দর। যেনো ওর পরিবার এটা।
-“মা কিছু খেতে দাও।”
সজিবের কথা শুনতেই শারমিন বেগম নাস্তার ট্রে রুমুর হাতে ধরিয়ে দেন। রুমু চোখ বন্ধ করে খালি গলায় ঢোক গিলে। কেটে যাওয়া ঠোঁটের কোণে হাসি ঝুলিয়ে সজিবের রুমে আসে নাস্তা নিয়ে। হয়তো সে পারতো অন্য কাউকে দিয়ে নাস্তা পাঠাতে কিন্তু এই মুহুর্তে তার সজিবের সামনাসামনি হওয়াটা জরুরী।
-“হেই সবজিওয়ালা তোর নাস্তা।”
রুমুর এমন স্বাভাবিক ব্যাবহার দেখে সজিব হা হয়ে তাকায়। এই কি কাল রাতের রুমু? না না আমার ওকে চিনতে কোথাও ভুল হচ্ছে।
-“কিরে হাবলার মতো তাকিয়ে আছিস কেন? আজকে তোর বিয়ে এভাবে চেহারা করলে কিন্তু ঈশা আসবে না হাহাহা।”
-“তুই ঠিক আছিস?”
-“কেন আমার কি হবে? আমি একদম ফিট এন্ড ফাইন।”
-“এভাবে কথা বলছিস কেন? আসলে কাল রাত্রের জন্য সরি।”
-“সরি? কাল রাত্রের জন্য? কাল রাতে কি কিছু হয়েছিলো?”
-“রুমু তুই এভাবে আচরণ করছিস কেন?”
-“এভাবেই করা উচিত সজিব। এটাই স্বাভাবিক আচরণ আমার। আমি সব ভুলে গেছি তুইও ভুলে যা এটাই তোর, আমার ও ঈশার জন্য ভালো।”
-“বর্ণ বলছিলো যে আমি যেনো এই বিয়েটা ভেঙে তোকে বিয়ে করি।”
-“ও পাগল হয়েছে আমার কথা ভেবে। তুইও কি পাগল হয়েছিস? আমার মত কি নিয়েছে সে? নেয়নি তো না? আমি তোকে কখনোই বিয়ে করবো না। তুই ঈশার জন্যই পারফেক্ট। তোদের দুজনকে আল্লাহ দুজনার জন্যই বরাদ্দ করে রেখেছেন। এখানে অন্য কারো কোন জায়গা নেই। তাছাড়া আমি অন্য একজনকে ভালোবাসি।”
-“তুই কি আমায় ক্ষমা করে দিবি প্লিজ?”
মানুষ মাত্রই তো ভুল। আর রাগের মাথায়ই মানুষ ভুল বেশি করে। তুই যেহেতু ইচ্ছে করে করিস নি আর নিজের ভুলের জন্যও অনুতপ্ত সেহেতু আমি কেন এসব কথা মনে রাখবো? আমি তো কাল রাতেই এসব ঝেড়ে ফেলেছি। তুইও এসব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দে। নিজের নতুন জীবনে এগিয়ে যা। আসি আমি।”
রুমু আর দাঁড়ায় না। রুম থেকে বেরিয়ে যায়। বেরুতেই একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে চোখের জল মুছে নেয়। বর্ণালী আড়াল থেকে দেখছিলো সবকিছু। সেও চোখের জল মুছে ভাইয়ের রুমে আসে। সজিবকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে বলে,
-“রুমুর ব্যাবহারে অবাক হচ্ছো না? এটাই আমার কলিজা রুমু। দেখলে তো তোমায় এতো বড় ভুলের পরেও ক্ষমা করে দিলো।”
-“আমায় ক্ষমা করে দে না বাচ্চা।”
-“রুমু ক্ষমা করলেও আমি তোমায় ক্ষমা করবো না ভাইয়া। আর হ্যাঁ ঈশাকে কি কথাগুলো বলেছো? অন্তত ওর ভালোবাসা নিয়ে খেলা করো না। ওকে আগে বলে দাও সব নাহলে আমি বলতে বাধ্য হবো। কেননা আমি চাই না আমার বান্ধবী কোন অন্ধকারে থাকুক। সত্যি জানার পর যদি ও তোমায় বিয়ে করতে রাজি হয় তাহলেই এই বিয়ে হবে না-হয় হবে না।”
সজিবকে আর একটা কথা বলারও সুযোগ দেয়না বর্ণালী। রান্নাঘরে এসে কাজে লেগে পড়ে। ফোনে টুং করে রিং বেজে উঠতেই লক খুলে স্ক্রিনে দেখে হোয়াটসঅ্যাপে ইভানের মেসেজ আসছে। ঢুকতেই দেখে ইভান পাঞ্জাবী ট্রাই করে করে ছবি দিচ্ছে। একের পর এক ছবি আসতেছে। তার মানে সে চায় ও পছন্দ করে দিতে। কোন কিছু না বলেই ফোন রেখে চলে যায়। ইভানের ফোনে টুং করে মেসেজ আসার সাথেসাথেই দেখে বর্ণালী সরষে ফুলের মতো হলুদ রঙের পাঞ্জাবীটা সিলেক্ট করে মেসেজ পাঠিয়েছে। ইভান মেসেজ দেখে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। এতো জোরে চিৎকার করে সাথে সাথে দোকানে আশেপাশের সবাই এসে জড়ো হয়। হিহি করে হেসে চুপচাপ পাঞ্জাবীটা কিনে নেয়। বাসন্তীর জন্য কি কিছু না নিলে হয়! তার পাঞ্জাবীর সাথে মিলিয়ে ওর জন্য শাড়ি কিনে নেয়। বাসায় যাবার আগেই তো ওদের বাড়ি যাবার সময় না হয় দিয়ে গেলো।
বাড়ির সামনে এসে রুমুকে কল দেয় ইভান৷ কল পেয়ে রুমু বের হয়ে প্যাকেট নিয়ে চলে যায় সোজা বর্ণালীর রুমে। বর্ণালী ওর হাতে প্যাকেট দেখে জিজ্ঞেস করে,
-“এটাতে কী? কোথায় পেলি?”
-“এটা আপনার নেন।”
-“আমার মানে?”
-“ইভান দিয়ে গেছে না?”
-“এইতো বুদ্ধি বেড়েছে তাহলে তোর।”
-“তুই কেন আনতে গেলি আমায় না বলে?”
-“হইছে ভাব দেখিও না জান আমার সামনে। তাকে যে পাঞ্জাবি পছন্দ করে দিয়েছিস তা তো বললি না?”
-“মানে কী? আমি কখন দিলাম? পাগল হয়েছিস?”
-“শেষ পর্যন্ত তুই আমার সাথে মিথ্যা বলতে পারলি?”
-“আই সোয়ার রুমু আমি দেই নি পছন্দ করে।”
-“আচ্ছা! তাহলে ইভান কেন বললো তুই ওকে সরষে ফুলের মতো রঙের পাঞ্জাবী পছন্দ করে দিয়েছিস তাই সে তোর জন্য সেই রঙেরই শাড়ি এনেছে। আচ্ছা তোর হোয়াটসঅ্যাপের ইনবক্স চেক করতো।”
বর্ণালী ইনবক্স চেক করে কোন মেসেজ পায় না। রুমুকেও দেখায়। তাহলে কি ইভান মিথ্যা বললো নাকি মজা করলো? হ্যাঁ তাই হবে। হয়তো মজাই করেছে। দরজার ওপাশ থেকে জেনি কথাগুলো শুনে হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে। পাশে নিধিও হাসছে ওদের এমন কনফিউশান দেখে।
-“আচ্ছা জেনি এসব করতে তো মজাই লাগছে৷ পরে যদি কোন সমস্যা হয়?”
-“আরে কোন সমস্যা হবে না। জেনি যেখানে সমস্যা নেই সেখানে। সো চিল বেইবস৷ আর তাছাড়া ওরা দু’জনই দু’জনকে ভালোবাসে। আমরা যদি মিলিয়ে দেই তাদের তাহলে সওয়াব ও পাবো।”
-“এসবে আল্লাহ আরো নারাজ হোন। পাপ হয় পাপ।”
-“হইছে হুজুরাইন সাহেব থামেন। চলেন নেক্সট প্যান করি।”
👇
সজিব ঈশার পাঠানো এড্রেসে সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছে। এদিকে সন্ধ্যাও হয়ে আসছে। এতো সময় লাগে নাকি পার্লারে? দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে ওর পায়ে ব্যাথা হয়ে গেছে। হঠাৎ করে দেখতে পেলো পার্লার থেকে কেউ একজন লেহেঙ্গা দু’হাতে ধরে তুলে তার দিকেই এগিয়ে আসছে। যত কাছে আসছে চোখে ততোই স্পষ্ট দেখছে সে৷ না এ কোন সাধারণ মেয়ে নয়, হলুদ কোন পরী আসছে। কাছে এসেই ভুবন ভুলানো হাসি দিলো ঈশা। একদম বাচ্চাদের মতো ওর হাসি। ওকে দেখেই মনে হচ্ছে আজকে ও কতটা খুশি। একটুও সাজ নেই ওর মুখে। মাত্র মনে হয় লেহেঙ্গাটা পড়েছে। সাজলে না জানি কত সুন্দর দেখায়। সজিব চোখ ছোট ছোট করে ওর পানে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। যেনো অনেকদিন পর দেখছে সে তাকে।
💛
💛
#______চলবে…………

#ফাগুন_প্রেম
পর্বঃ ৫২
লেখনীতেঃ Bornali Suhana
💛
💛
কাছে এসেই ভুবন ভুলানো হাসি দিলো ঈশা। একদম বাচ্চাদের মতো ওর হাসি। ওকে দেখেই মনে হচ্ছে আজকে ও কতটা খুশি। একটুও সাজ নেই ওর মুখে। মাত্র মনে হয় লেহেঙ্গাটা পড়েছে। সাজলে না জানি কত সুন্দর দেখায়। সজিব চোখ ছোট ছোট করে ওর পানে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। যেনো অনেকদিন পর দেখছে সে তাকে। ঈশা আশেপাশে তাকিয়ে হুট করেই সজিবকে জড়িয়ে ধরে। নিজের মাথা নিয়ে রাখে তার বুকে। সজিবের হাত উঠছেনা। ঈশাকে জড়িয়ে ধরতে কাঁপছে তার হাত। কাল যে ভুল করেছে তার ক্ষমা না পাওয়া অবধি সে ঈশাকে স্পর্শ করবেনা।
-“এটা আমাদের শেষ জড়িয়ে ধরা।”
সজিব চমকে উঠে। ঈশা কি সব জেনে গেলো? বর্ণ কি সব বলে দিয়েছে ওকে? না না সে কী করে সম্ভব? সে তো তাকে শেষ সুযোগ দিয়েছে। সজিব ওর দু’বাহুতে ধরে বুক থেকে তুলে জিজ্ঞেস করে,
-“শেষ জড়িয়ে ধরা মানে?”
-“প্রেমিক-প্রেমিকা হিসেবে শেষ জড়িয়ে ধরা না? কাল তো আমরা দম্পতি হিসেবে একে অপরকে জড়িয়ে ধরবো। উফ সজিব আমার ভাবতেই সুখে কান্না আসছে৷ আমি তোমার বউ হতে চলেছি! আমার ভালোবাসা তার গন্তব্য পাচ্ছে।”
এসব কথা বলছে আর কাঁদছে ঈশা কিন্তু ঠোঁটের কোণে হাসি ঠিকই রয়েছে। সজিব কীভাবে তার ভালোবাসার কাছে নিজের জঘন্যতম অপরাধের কথা বলবে! নাহ আমাকে বলতেই হবে। মনে মনে নিজেকে শক্ত করে সজিব।
-“আমার কিছু কথা ছিলো ঈশা।”
-“হ্যাঁ বলো, জনাবের আমায় এতো জরুরী তলব করা হলো কেন?”
-“ঈশা আমি অনেক বড় একটা ভুল করে ফেলেছি। আসলে ভুল না পাপ, জঘন্য পাপ। আল্লাহ আমায় কখনো ক্ষমা করবেন না, তার মাঝে আমি তোমার কাছে নির্লজ্জের মতো ক্ষমা চাইতে এসেছি।”
-“ছিঃ সজিব এসব কী বলছো? কী হয়েছে বলো আমায়।”
-“বলতেই তো এসেছি ঈশা। আমি কাল রুমুর সাথে খারাপ ব্যবহার করেছি।”
-“মানে?”
-“অনেক রেগে গিয়েছিলাম আমি ঈশা। আমার মাথা কাজ করছিলো না। বর্ণ আর ইভানকে একসাথে দেখে মাথা ভনভন করছিলো। যার রাগ আমি রুমুর উপর মিটয়েছি।”
-“ইভান আর বর্ণ একে অপরকে ভালোবাসেন সজিব।”
-“তুমিও জানো তা?”
-“হ্যাঁ আমি প্রথম থেকেই জানি।”
-“কিন্তু তুমি রুমুর সাথে কী করেছো? ওর কি দোষ ছিলো? বলো সজিব আমার ভয় হচ্ছে।”
-“আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে কাল রাত…..”
-“কাল রাত কি সজিব?”
-“আ……আমি রুমুকে….”
-“তুমি রুমুকে কী?”
সজিব ঈশার দিকে চোখ তুলে তাকাতে পারছেনা। বলবে কীভাবে!
-“আমার দিকে তাকাও সজিব। বলো আমার ভয় হচ্ছে। তুমি রুমুকে কী করেছো? বলছো না কেন?”
-“কি….কিস করেছি।”
ঈশার পায়ের নীচ থেকে যেনো মাটি সরে গেছে। নিজেকে শূন্যে অনুভব করছে। ঝিইইইইইং করে কানের মাঝে শব্দ হচ্ছে। মাথার ভেতর থেকে কান দিয়ে যেনো রক্ত ফেটে বেরিয়ে আসবে এখনই। কি শুনেছে সে বিশ্বাস করতে পারছেনা। চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যেতে লাগলেই সজিব তাকে ধরে নেয়৷ ঈশার শরীরে যেনো কোন শক্তি নেই তাও সে সজিবের হাত ছিটকে ফেলে দেয়। নিজেকে ওর থেকে ছাড়িয়ে নেয়। চোখ দিয়ে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়তে লাগে। এদিক ওদিক তাকাচ্ছে আর কাঁদছে সে। সজিব অপরাধীর মতো দাঁড়িয়ে চোখের জল ফেলছে। ঈশা ওর কাছে এসে জিজ্ঞেস করে,
-“আমার কোন কিছুতে কি কমতি রয়ে গিয়েছিলো সজিব?”
-“এমনটা নয় ঈশা। আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি সত্যি। রুমুর সাথে ওইটা এক্সিডেন্টাল ছিলো।”
-“এক্সিডেন্টাল কিস হয়? নিজের ইচ্ছে না থাকলে কাউকে কিস করা যায়? কোথায় কিস করেছো সজিব? ঠোঁটে?”
সজিব চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে দেখে ঈশা চিৎকার করে জিজ্ঞেস করে,
-“বলছো না কেন? কোথায় কিস করেছো ঠোঁটে?”
-“হু…”
ঈশা সজিবের আরো কাছে আসে।
-“আমার থেকে কি ওর ঠোঁটে বেশি স্বাদ?”
-“ঈশা কি বাজে কথা বলছো?”
-“তুমি করলে বাজে হলো না? আমি বলতেই বাজে হয়ে গেলো? বলো না সজিব রুমুর ঠোঁটের স্বাদ কি আমার ঠোঁট থেকেও বেশি ছিলো?”
-“চুপ করো, প্লিজ ঈশা চুপ করো।”
-“কেন শুনতে খারাপ লাগে? করতে একবারও খারাপ লাগেনি? একটাবার আমার কথা খেয়াল হলো না তোমার? যত ইচ্ছে আমায় কিস করতে৷ আমি তোমার সব চাওয়া পূরণ করতাম। প্রয়োজনে তোমার সাথে বিছানায়ও…..”
ঠাস করে সজিব ঈশার গালে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। থাপ্পড় মেরে নিজেই নিজেকে দোষ দিতে লাগে। কীভাবে নিজের ফুলের মতো ভালোবাসাকে আঘাত করলো সে! এতো বড় ভুল সে কীভাবে করতে পারলো! ঈশা হোহো করে হাসছে। ঈশার হাসি দেখে সজিব ভেজা চোখে ওর দিকে এগিয়ে এসে দু’বাহু ধরতে চেষ্টা করে। ঈশা পেছনে সরে যায়।
-“ঈশা ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড প্লিজ। আমি ওইটা রাগের মাথায় করেছি।”
-“কোনটা রুমুকে কিস নাকি আমায় থাপ্পড়? আমাকে তো রাগের মাথায় থাপ্পড় মারলে, রুমুকে কেন কিস করলে? বলো সজিব উত্তর দাও।”
-“ঈশা আমার কথা শুনো তখন আমার মাথায় কিছুই আসেনি। আমি নিজের অজান্তেই এমন করেছি। রুমু আমায় এই ভুলের জন্য ক্ষমা করে দিয়েছে। আমি তোমার থেকে সত্যি লুকাতে পারতাম না তাই তো বলতে চলে এলাম। বর্ণালী আমাকে শেষ কথা বলেছে তুমি ক্ষমা করে এই বিয়েতে রাজি হলে তবেই এই বিয়ে হবে নয়তো আমায় রুমুকে বিয়ে করতে হবে। প্লিজ ঈশা আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না। আমি তোমাকে আমার জীবনে চাই। আমি তোমাকে ভালোবাসি। ওইটা একটা এক্সিডেন্ট ছিলো ঈশা বিশ্বাস করো। আমায় ক্ষমা করে বিয়েতে রাজি হয়ে যাও ঈশা প্লিজ।”
-“এই বিয়ে হবে। আমি আমার পরিবার ও ও তোমার পরিবার কারো মানসম্মানই নষ্ট হতে দিবো না। কিন্তু তোমাকে আমায় একটা প্রমিজ করতে হবে।”
-“হ্যাঁ বলো ঈশা আমি সব ধরনের প্রমিজ করবো।”
-“তুমি কখনো বর্ণ আর ইভানের সম্পর্কের মাঝে আসতে পারবে না। তুমি আমি যেভাবে দুজন দুজনকে ভালোবাসি ঠিক সেভাবে তারা দুজনও দুজনকে ভালোবাসে। আর আমি বর্ণকে আমার ভাইয়ের জন্য চাই। প্রমিজ মি তুমি যেভাবেই হোক ওদের বিয়ে করাবে।”
সজিব কিছুক্ষণ নিচের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“আই প্রমিজ ঈশা। আমি তোমার ও আমার বোনের সুখের জন্য সব করবো।”
-“তাহলে বিয়েটা হচ্ছে।”
-“আই এম সরি ঈশা।”
ঈশা সজিবের একদম কাছে চলে আসে। তার চোখের জল মুছে দিয়ে নিজের দু’ ঠোঁটের মাঝে ওর ঠোঁট পুরে নেয়। সজিব চোখ বন্ধ করে নেয়। ঈশার হাত সজিবের চুল খামচে ধরে। সজিব আরো গভীরভাবে আঁকড়ে ধরে ওর ঠোঁট। একজনের নিঃশ্বাসের সাথে অন্যজনের নিঃশ্বাস এসে মিশে যাচ্ছে। উষ্ণ নিঃশ্বাসের সাথে দুজনের শরীর উষ্ণ হয়ে উঠছে। ঈশা পেছনে সরতে লাগে সজিব তার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট চেপেই এগুতে লাগে। পিট গিয়ে ঠেকে গাড়ির সাথে। তার গাল থেকে সজিবের হাত ধীরে ধীরে গলা বেয়ে নামছে। ঈশার সম্পূর্ণ শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছে৷ বুকের উঠানামা বাড়ছে। বাম হাতের পাঁচ আঙুলের ভেতর সজিব নিজের আঙুল লুকিয়ে গাড়ির সাথে চেপে ধরে। গলা থেকে হাত নীচের দিকে নামিয়ে পেটের মাঝে আলতো করে চাপ দেয়। ঈশা সাথে সাথে সজিবের ঠোঁট কামড়ে ধরে। সে পালটা ওর ঠোঁটে চুমু খেতে লাগে। পেটের মাঝে চাপ দিয়ে হাত আবারো উপরের দিকে তুলতে লাগে সজিব। ঈশা হুট করেই সজিবকে ধাক্কা দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে দ্রুত নিশ্বাস নিচ্ছে। সজিবও দ্রুত নিঃশ্বাস নিচ্ছে। ঈশা হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,
-“আমার দেরি হচ্ছে আসি। তুমি বাসায় গিয়ে বর্ণকে জানিয়ে দাও বিয়েটা হচ্ছে।”
ঈশা যেতে নিলেই সজিব ওকে পেছন থেকে আওয়াজ দেয়,
-“ঈশা…..”
-“হু?”
-“সরি।”
-“ইট’স ওকে তবে আজকে বাসায় গিয়ে একটু ভেবে দেখো তো আমার ঠোঁটের স্বাদ মিষ্টি নাকি রুমুর?”
সজিব ঠিকই বুঝতে পারছে ঈশা ওকে কষ্ট দেয়ার জন্য এমন কথা বলছে। সে সব কষ্ট মাথা পেতে নেবে। ভুল করেছে আর তার মাসুলও তাকেই দিতে হবে।
👇
সজিব ও ঈশাকে হলুদের জন্য পাশাপাশি বসানো হয়েছে। ঈশা ওর দিকে একবারও চোখ তুলে তাকায় নি। সবার সাথে ঠিকই হেসে হেসে কথা বলছে কিন্তু ওর দিকে তাকাচ্ছেও না। ঈশার এমন ব্যাবহার তার ভেতরটাকে দুমড়ে মুচড়ে দিচ্ছে। দেখাতে পারছেনা সে নিজের কষ্টটা। আজ তার একটা ভুলের জন্য কয়টা মানুষ কষ্ট পাচ্ছে।
কথা ছিলো আলাদা অনুষ্ঠানের কিন্তু ইভানের কথায় ইভানদের বাসার ছাঁদে হলুদ ও মেহেদী সন্ধ্যা হচ্ছে একসাথে বর-কনের। বর্ণালী, রুমু বা তাদের কোন এখনও আসেনি। শুধু সজিব ও তার মা-বাবা আর কিছু আত্মীয় এসেছে। ইভান বর্ণালীর ফোনে অনেকটা কল দেয় কিন্তু রিসিভ হয়না। তাই আবার রুমুর ফোনে বারবার কল দিচ্ছে কিন্তু রুমুও উঠাচ্ছে না। ওর মাকে জিজ্ঞেস করলেই ভালো হবে তাই সে বর্ণালীর মায়ের দিকে এগিয়ে যায়।
-“আন্টি বর্ণালী, রুমু বাকি কাজিনরা যে এখনও এলো না?”
-“আর বলো না বাবা ওরা সবাই…..”
কথাটা শেষ করার আগেই শারমিন বেগম সবাইকে দেখতে পেয়ে বলেন,
-“আরে এইতো ওরা এসে গেছে।”
ইভান ধীরে ধীরে পেছন ফিরে তাকায়। পেছনে তাকাতেই ৪৪০ভোল্টেজ এর শক খায় সে৷ চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেছে৷ বর্ণালী তার দেয়া শাড়ি পড়েছে! প্রথমে ভাবে হয়তো এটা ওর মনের ভুল তাই চোখ কচলে আবার তাকিয়ে দেখে না সে সত্যিই দেখছে। তার মানে বর্ণালীর অভিমান আর নেই গ্রিন সিগনাল এটা তার পক্ষ থেকে। ভাবতেই সে খুশিতে হাবুডুবু খাচ্ছে। হলুদে পরী না না তার বাসন্তীকে দেখছে সে। সেই প্রথম দিনের কথা মনে পড়ে গেলো। পহেলা ফাল্গুনের বসন্ত উৎসবে দেখেই তো সে তার প্রেমে পড়েছিলো। যত কাছে আসছে ততই যেনো ইভানের চোখে ঘোর লেগে যাচ্ছে। কিন্তু ঘোর কাটতে সময় লাগেনা। পেছনে জয়কে দেখেই ইভানের চোখের নেশা ভাব চলে গিয়ে রাগে পরিণত হয়। জয় কেন ওদের সাথে! তাহলে কি জয়ের সাথে সবাই পার্লারে গিয়েছিলো? ওরা কাছে আসতেই ইভান রুমুকে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করে,
-“জয় কি তোমাদের সাথে ছিলো?”
-“হ্যাঁ কি করবো বলো আঙ্কেল আমাদের একা যেতে দিচ্ছিলো না।”
ইভান আর কোন কথা বাড়ায় না। বর্ণালীর পাশ ঘেঁষে দাঁড়ায় একদম গায়ের সাথে লেগে। কাছে যেতেই আরো বেশি অবাক হয় ও। বর্ণালীর নাকে তার দেয়া নোজ পিন। এটা কোথায় পেলো!
-“নোজ পিন তো ফেলে দিয়েছিলে এটা কোথায় পেলে?”
বর্ণালী ভয় পেয়ে যায় এভাবে হুট করে কথা বলায়। ব্লাউজের ভেতর দিয়ে বুকের মাঝে ফুঁ দিতে নিলে, ইভান মাথা কাত করে তাকানোর চেষ্টা করতেই কনুই দিয়ে ওর পেটের মাঝে গুতো দিয়ে দেয়। আউচ বলে পেটের মাঝে ধরে ইভান। পাশ থেকে সবাই তার দিকেই তাকাচ্ছে। সে হেসে সবাইকে কিছুনা বলে দেয়।
দুজনের হলুদের কেক কাটার জন্য সবাই বর-কনে কে ঘিরে দাঁড়ায়। বর্ণালী সজিবের পাশে দাঁড়িয়েছে। রুমুকে নিয়েই তো এদিকে এসেছিলো। কিন্তু গেলো কই সে! রুমু সবার পেছনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। পাশ দিয়ে ওয়েটার যাওয়ার সময় এক গ্লাস শরবত হাতে নেয়। আলতো করে গ্লাসে চুমুক দিতেই পাশে কারো উপস্থিতি টের পায়। পাশে তাকাতেই দেখে আইনানও সেইম শরবত খাচ্ছে। মৃদু হেসে সামনের দিকে তাকিয়ে থাকে রুমু। আইনান শরবতের গ্লাসে চুমুক দিয়ে জিজ্ঞেস করে,
-“তুমি এখানে একা কেন? সামনে বর্ণ তোমায় খুঁজতেছিলো।”
-“তাই নাকি? সবাই ভীড় করে আছে তো তাই আগাই নি। আমার আবার ভীড় পছন্দ না।”
-“আমারও না।”
-“বাহ ভালোই।”
রুমু পাশ কাটিয়ে শরবতের গ্লাস রাখতে চলে যায়। আইনানও ওর পিছু পিছু যাচ্ছে।
ইভান, বর্ণালী সহ সব কাজিন ঈশা ও সজিবের হাত ধরে কেক কেটে নেয়। সাথে সাথে অনেকগুলো আতশবাজি ফোটানো শুরু হয়ে যায়। যার আওয়াজ শুনে রুমু কান বন্ধ করে নেয়। আইনান রুমুর এমন বাচ্চামো চেহারা দেখে মুগ্ধ হচ্ছে। হালকা হলুদের মাঝে শাড়ি আর মেহেদী রঙের ব্লাউজে ওকে দারুণ লাগছে। যদিও মুখে নেই কোন সাজ গায়ে নেই কোন অলংকার। শুধু কানে একজোড়া দুল হাঁটার সময় আপন মনে দুলতেই থাকে। আর পায়ের পায়েলের ঝুনঝুন আওয়াজটা বাতাসের সাথে যেনো এক ধরনের শব্দের সৃষ্টি হয়। আসার পর থেকে খুব কাছ থেকেই খেয়াল করেছে সে তাকে।
সবাইকে কেক প্লেটে করে দেয়া হয়েছে। বর -কনেকে খাইয়েছে। বর্ণালী শুধু ঈশার হাতে একটু খেয়েছে। রুমুর জন্য প্লেটে নিয়ে ওকে খুঁজতে যায়৷ ছাঁদের একপাশ দেখে অন্য পাশে যেতে নিলেই ইভান ওর পথ আগলে ধরে। তার হাতেও প্লেটে চামচ আর এক টুকরো কেক। বর্ণালী কপালের উপর আসা চুলগুলো সরিয়ে ইভানের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“পথ ছেড়ে দাঁড়াও।”
-“যদি না ছাড়ি?”
বর্ণালী বামদিকে যেতে চাইলে ইভান সে দিকে হাত দিয়ে পথ আটকায়, ডান দিকে যেতে চাইলে সে দিকেও হাত দিয়ে পথ আটকায়। তার এসব কর্মকান্ড দেখে কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়ায় ও। সে হা হয়ে ওর এমন রুপ দেখছে। একদম বউ বউ লাগছে এই মুহুর্তে। ইচ্ছে করছে একটানে তাকে কোলে নিয়ে নিতে। কিন্তু এতো মানুষের মধ্যে তা পারবে না। ইভানের হাতে প্লেটে রাখা কেক চামচ দিয়ে কেটে নিয়ে বর্ণালীর মুখের সামনে ধরে।
-“আমার হাতে একটু খাও প্লিজ।”
-“আমি খাবো না।”
-“প্লিজ একটু খেয়ে নাও।”
-“খাবো না তো বললাম।”
-“খেতে তো হবেই।”
বলেই ইভান বর্ণালীর গালে চাপ দিয়ে হা করিয়ে চামচে রাখা কেকটুকু মুখের ভেতর পুরে দেয়। চামচের কাটা একটু বেখেয়ালে লেগে বর্ণালীর ঠোঁট কেটে গেছে সেদিকে ওর খেয়ালই নেই। কেক খাইয়ে দুষ্টু হাসি হাসতে লাগে ইভান। বর্ণালীর সম্পূর্ণ ঠোঁটের আশেপাশে কেক লেগে আছে। জিব দিয়ে ঠোঁটে লাগানো কেক চেটে খেয়ে নেয়। তারপর আঙুল দিয়ে যে জায়গায় কেটেছে সেখানে চেপে ধরার চেষ্টা করতে লাগে বর্ণালী। ইভান ওর এমন অবস্থা দেখে হেসে বলে,
-“আগে না বললে খাবে না আর এখন চেটে খাচ্ছো? আমাকে বলতে আমি চেটে দিতাম।”
বর্ণালী তার কথা শুনে চোখ বড় বড় করে তাকায়ে বলে,
-“ব্যাথা পেয়েছি আমি ঠোঁটে জ্বলছে।”
-“মানে?”
-“চামচের কাটা দিয়ে কেটে ফেলেছো ইভান।”
আঙুল সরাতেই গলগল করে রক্ত বের হয় আসে। ইভান টিস্যু এনে দেয় বর্ণালী টিস্যু দিয়ে চাপ মেরে ধরে আছে। কোন কিছু না বলেই বর্ণালী দরজা দিয়ে নীচে নেমে যায়। ইভানও তার পিছু পিছু আসে। সম্পূর্ণ নীচতলা খালি, কেউ নেই। বর্ণালী ওয়াশরুম খোঁজাখুঁজি করছে। ঈশার রুম সামনে পেয়ে ওর ওয়াশরুমে যাবার জন্য রুমে ঢুকে যায়। পেছনে যে ইভান এসেছে সে দিকে ওর খেয়ালই নেই। ড্রেসিংটেবিলের আয়নায় ঠোঁট দেখতে লাগে অল্প একটু কেটেছে কিন্তু রক্ত বন্ধ হচ্ছেনা। রক্ত মুছে দিতেই আবার এসে জমছে। আয়নার মাঝে নিজের পেছনে ইভানকে দেখতে পেয়ে ঘুরে তাকায়।
-“তুমি এখানে কি করছো?”
-“সরি।”
-“ইট’স ওকে।”
-“দেখি।”
-“দূরে থাকো।”
-“আমাকে বলছো?”
-“তুমি ছাড়া এখানে কেউ আছে?”
-“আমাকে বললেই কী আমি শুনবো ভাবছো?”
-“তুমি কি আমার কথা কখনো শুনেছো?”
-“তাহলে বললে কেন?”
-“তোমার সাথে কথা বলাই বেকার। এমনিতেই আমার ঠোঁটে জ্বলছে। যাও এখান থেকে প্লিজ।”
-“যদি না যাই?”
-“যেও না থাকো…. অসহ্যকর ।”
-“অসহ্যকর আমি?”
-“হ্যাঁ তুমি।”
ইভান বর্ণালীর দিকে এগিয়ে আসছে দেখে সে পেছনে সরে যাচ্ছে। তার একটাই ভয় ইভান কাছে আসলে সে কখনোই নিজেকে শক্ত রাখতে পারেনা। পারেনা ওকে দূরে ঠেলে দিতে।
-“একদম এগুবে না ইভান।”
ইভান দুষ্টুমি ভরা হাসি দিয়ে ওর একদম কাছে চলে যায়। ইভানের দ্রুত হয়ে যাওয়া হৃদস্পন্দনগুলো বর্ণালী ঠিক শুনতে পাচ্ছে। সে কি ওর হৃদস্পন্দন শুনতে পাচ্ছে? হ্যাঁ অবশ্যই পাচ্ছে। ওর প্রতিটা হৃদস্পন্দন যে শুধু তার কথাই বলে। ইভান আলতো করে তার ঠোঁটে বৃদ্ধাঙুলি দিয়ে স্পর্শ করে দেয়। বর্ণালী কেঁপে উঠে ড্রেসিংটেবিলে পেছন থেকে দু’হাত দিয়ে ধরে কাত হয়ে দাঁড়ায়। নিঃশ্বাস ঘন হয়ে এসেছে। বুক দ্রুত উঠানামা করছে। ওর দৃষ্টি নীচের দিকে নামিয়ে রেখেছে। ড্রেসিংটেবিলের উপর হলুদের বাটির দিকে চোখ যেতেই হাত দিয়ে চার আঙুল দিয়ে একটু হলুদ নেয়। বর্ণালী ওর হাতে হলুদ দেখেই চোখ বড় বড় করে বলে,
-“ইভান দেখো হলুদ লাগাবে না একদম।”
-“আমি তো কারো কথাই শুনিনা। আমি তো অবাধ্য সবসময়ই।”
-“ইভান প্লিজ দেখো রঙ বসে যাবে। এসব করো না। তুমি হলুদ লাগালে কিন্তু আমিও লাগাবো।”
বলেই বর্ণালী বাম হাতের আঙুল দিয়ে খানিকটা হলুদ তুলে নিয়ে তাকে ভয় দেখাতে লাগে।
কিন্তু কে শুনে কার কথা ইভান হাত এগিয়ে নিলেই বর্ণালী চোখ বন্ধ করে বলতে থাকে,
-“ইভান, ইভান প্লিজ, প্লিজ লাগিও না।”
সে শুনার পাত্র নয়। যা জেদ ধরে তা করেই ছাড়ে। বাম হাত দিয়ে বর্ণালীর ঘাড়ের উপর থেকে চুল সরিয়ে এক পাশে নেয়। ও চোখ কুঁচকে বন্ধ করে আছে। ইভান আয়নায় তার ফর্সা উন্মুক্ত ঘাড়ের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাচ্ছে। হাত দিয়ে হলুদ লাগাতে ঘাড়ের উপর স্পর্শ করতেই বর্ণালী নিজের মাথা এনে ইভানের বুকে ঠেকায়। নিঃশ্বাস ঘন হয়ে আসছে ওর। যে হাতে হলুদ ছিলো সে হাত দিয়ে তার পাঞ্জাবীর উপর খামচে ধরে। ঘাড়ের পাশে হলুদ লাগিয়ে বর্ণালীর চিবুক ধরে মুখটা তুলে ধরে। এখনও ওর চোখ বন্ধ। গালের মাঝে একটুখানি হলুদ মেখে দেয়। সাথে সাথে বর্ণালীর ঠোঁটের কোণে হাসি দেখতে পায় ইভান। মুখে সে সবসময় বাঁধা দেয় কিন্তু কাছে আসলে যে সে নিজেও তাকে কাছে টানে এটা হয়তো বর্ণালী কোনদিনই বুঝতে পারবেনা। আর বুঝলেও মানতে চাইবে না। ওর গালে নিজের গাল দিয়ে ঘঁষে দিতেই দাড়ির খোঁচা খেয়ে ব্যাথা পেয়ে উহ বলে আওয়াজ করে চোখ খিঁচে বন্ধ করে ঠোঁটজোড়া মুখের ভেতর পুরে নেয়। ইভান মুখ তুলে তাকিয়ে থুতনিতে আলতো করে চুমু খায়। ওর মুখের ভাব আবারো স্বাভাবিক হয়ে আসে। হাঁটুর উপর ভর দিয়ে ঠিক সম্মুখে বসে পড়ে। আচমকাই তার পেটের উপর থেকে শাড়ি সরাতে লাগতেই একহাত ইভানের ঘাড়ে আর অন্যহাতের মুঠোয় নিজের শাড়ি শক্ত করে ধরে। ওর নিঃশ্বাসের সাথে পেটের উঠানামা দেখে ইভান নিজেকে ঠিক রাখতে পারছে না। হলুদ মাখা আঙুল দিয়ে তার পেটের উপর কিছু একটা লিখছে ইভান। বর্ণালীর তা বুঝার মতো বিন্দুমাত্র ক্ষমতা নেই এখন। সে অনেক আগেই ইভানের মাঝে ডুবে গেছে সম্পূর্ণভাবে। ইভানের লোভ লাগছে বর্ণালীর প্রতি। এতো সুন্দর করে কেন আল্লাহ ওকে গড়েছেন! কিন্তু তার নিজেকে সামলাতে হবে। এর বেশি সে কখনোই আগাতে চায় না। পেটের উপর ঠোঁট লাগিয়ে আলতো করে চেপে ধরতেই বর্ণালী ইভানের মাথার চুল খামচে ধরে। ইভান ব্যাথায় সাথে সাথে ওর ঠোঁট সরিয়ে নেয়। উঠে দাঁড়িয়ে বর্ণালীর দু’গালে ধরে বলে,
-“তাকাও আমার দিকে।”
বর্ণালী এখনও দ্রুত নিঃশ্বাস নিচ্ছে। কথা বলার শক্তিটুকু পাচ্ছেনা। এভাবে কেন করে ইভান ওর সাথে! ওকে ভেতর থেকে দুর্বল করে দেয়। নিজেকে সে শূণ্যে আবিষ্কার করে। যেখানে সে তার ভারসাম্য বজায় রাখতে পারেনা।
-“চোখ খুলো বাসন্তী।”
ইভানের কণ্ঠে নেশা কাজ করছে আজ। ওকে কাছে পাওয়ার নেশা। বর্ণালী আধবোজা চোখে ওর দিকে তাকায়। ওর ঠোঁট কাঁপছে। কেটে যাওয়া জায়গায় একটুখানি তাজা রক্ত বের হয়ে জমে আছে। ইভান হলুদ মাখা আঙুল দিয়ে রক্ত মুছে দেয়। বর্ণালীর দৃষ্টি ইভানের নেশাভরা চোখের দিকে আর ইভানের দৃষ্টি ওর কম্পিত ঠোঁটের দিকে। সে দু’হাত নিয়ে তার বুকের উপর রাখে। কিছু একটা বলার জন্য বর্ণালী ঠোঁট আলগা করতেই ইভান তার ঠোঁট আলগা করে দিয়ে ওর নীচের ঠোঁট চেপে ধরে। আর নিজেকে ধরে রাখতে না পেরে ইভানের ঠোঁটের সাথে তাল মেলাতে লাগে বর্ণালী। নিঃশ্বাসের সাথে পাল্লা দিয়ে ঘন হচ্ছে নিঃশ্বাস। ইভান ওর ঠোঁটের নেশায় মত্ত হয়ে আছে। ঠোঁটের সাথে ঠোঁটের চলার গতি বৃদ্ধি পেতে লাগে৷ বর্ণালীর নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। ব্যাথা পাচ্ছে কেটে যাওয়া ঠোঁটে। চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। জল গাল বেয়ে আসতেই দুইজোড়া ঠোঁট তাদের পিষে ফেলছে। মিষ্টি স্বাদের সাথে নোনাপানির স্বাদ মিশে এক অন্যরকম স্বাদ গ্রহণ করছে ইভান। বর্ণালী ঠোঁটের ব্যাথা সহ্য করতে না পেরে ওর বুকের মাঝে রাখা হাত দিয়ে ধীরে ধীরে ধাক্কা দিতে লাগলো। মুখ দিয়ে গুঙিয়ে আওয়াজ বের হয়ে আসছে।
💛
💛
#______চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here