এটা_গল্প_হলেও_পারতো ৩য় পর্ব

0
202

#এটা_গল্প_হলেও_পারতো
৩য় পর্ব

ইমনের চিৎকার শুনে মা নার্গিস খানম দরজায় এসে দাঁড়ালেন!
তোমরা আমাকে কি ভাবো ফুপু , আমি রবোট আমার মাঝে কোন বোধ নেই কোন অনুভূতি নেই ?
কি হয়েছে ইমন, মা উৎকণ্ঠা নিয়ে প্রশ্ন করলো!
কিছু হয়নি আমার , আমি ঠিক আছি এবং এরকম ঠিক থাকতে চাই আজীবন ! প্লিজ , প্লিজ আমাকে দয়া করে কেউ বিয়ে কর বিয়ে কর বলে পাগল করো না !
কেন আমাদের মেয়ে তুই তোর বিয়ে দেয়াটা আমাদের দ্বায়িত্ব !
মা পৃথিবীতে সব মানুষের সংসার করাটা হয় না ।‌আমার ও হয়নি !
এটা কোন ধরনের কথা ইমন‌? নার্গিস খানম প্রশ্ন করলো!
কারণ আমি যার সঙ্গে সংসার করতে চেয়েছিলাম সে নেই আমার পাশে ! আর তাকে ছাড়া কারো সঙ্গে সংসার করতে পারব না ! শোন মা , ফুপু আজকে আমি তোমাদের একটা কথা বলে দেই পরিস্কার করে, একদিন তোমাদের ঠিক করে দেয়া একটা মানুষের সঙ্গে জীবনের পাঁচটা মাস কাটিয়েছি । তার কথা ভেবে, তার কথা শুনে তাকে নিয়ে ভবিষ্যৎ সাজিয়ে পাঁচটা মাস কেটেছে আমার । মানুষ না থাকতে পারে সঙ্গে কিন্তু বোধ গুলো শেষ হয়ে যায় না ! বিশ্বাস করো আজ‌ও বোধ গুলো কে শেষ করতে পারিনি! স্বামী হিসেবে তো আবির কে ই ভেবেছিলাম এবং আজ‌ও ভাবি !
ইমন বিছানার কর্নারে বসে কাঁদছে!
মা আর ফুপু অবাক হয়ে দেখছে ইমন কে ! এ কোন ইমন ?
তোমরা প্লিজ আমাকে একটু একা থাকতে দাও মা , যাও !
ফুপু মা কে ধরে রুম থেকে বের হয়ে গেল ! ওদের অবাক হ‌ওয়ার রেশ এখনো কাটছে না ! ইমন এখনো বার বছর আগের সময়টা ধরে বসে আছে !
ইমন অনেক অনেক বছর পর এভাবে কাঁদছে !
বার বছর আগে আবির এর ফিরে আসার কিছুদিন আগেই একদিন ইমন কে ফোন দিয়ে যখন বলেছিল,
ইমন আমি আর এক মাস অপেক্ষা করতে পারছি না ! তোমাকে দেখার জন্য পাগল পাগল লাগছে! আমার টিকিট হয়ে গেছে আগামী সপ্তাহে আসছি!
ইমন সেদিন আনন্দে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিল! দিনে কতবার যে তখন ফোন দিত আবির এর পর ! ইমন কে পাগল করে দিয়েছিল !
কখন দেখব তোমাকে ইমন ?
আসলেই দেখতে পাবে !
তোমার এয়ার পোর্টে আসার দরকার নেই ! আমি তোমার কাছে যাব ! তোমার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা কোনটা বলো তো ?
আমার প্রিয় তো আমাদের বাসার ছাদ টা ! কেন?
তাহলে আমি তোমাকে তোমাদের বাসার ছাদে প্রথম দেখব !
আমাদের বাসার ছাদে ?
হুম কেন কোন সমস্যা ?
না সমস্যা নেই !
ইমন আমার দুটো চোখ তোমাকে দেখার জন্য এতটা কাতর হয়ে আছে তোমাকে বলে বোঝাতে পারবো না ! আমি কোন কাজে মনোযোগ দিতে পারছি না ! আমি ক্লাসে গিয়ে তাকিয়ে থাকি আমার মন পড়ে থাকে তোমার ছবিতে ! সে জন্যই চলে আসছি !
ঠিক আছে চলে আসো !
শুধু তোমাকে দেখব বলে ইমন !
এর পর আর কোন কথা হয়নি কখনো আবিরের সঙ্গে ইমনের! চার দিন পর আবিরের মৃত্যু সংবাদ টা ইমন দের বাসায় নিয়ে আসে ইমনের বাবা ! উনার যে কলিগ ঘটকালি টা করেছিলেন তিনিই দিলেন। আবিরের মৃত দেহ টা ওর ডরমেটরির রুমেই পাওয়া গিয়েছিল। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট এ লিখা ছিল হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যু!
মাত্র আটাশ বছর বয়সে আবির এভাবে মারা যাবে কেউ ভাবেনি!
আবিরের লাশ ঢাকায় আনার পর ইমনদের বাসার কেউ ইমনকে যেতে দিতে চায়নি!
ইমন এর ও ইচ্ছে ছিল না মৃত আবির কে দেখার ! যে চোখ তাকে দেখার জন্য কাতর হয়ে ছিল ! বন্ধ চোখ ইমন কে দেখতে পারতো কিভাবে ? ইমন ও লাশ হয়ে যাওয়া আবির কে দেখার ইচ্ছা করনি!
খবর টা শোনার পর ইমনের কোন ফিলিংস হচ্ছিল না। শুধু বাসার টেলিফোন টা যখন হঠাৎ কারো ফোনে বেজে উঠেছিল তখনই প্রথম ইমনের বুকের ভেতর কেমন যেন শূন্যতা ভর করে উঠেছিল! ফোনের রিং শুনলেই ইমন এর বুক কেঁপে উঠতো, নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হতো।
তিন দিনের দিন নিজের ঘরের বারান্দায় বসে ছিল ইমন দূর থেকে দেখছে পোস্টম্যান দারোয়ান মোখলেস ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলছে।
খাম টা দেখেই ইমন দৌড়ে নিচে নেমে এলো ! হ্যাঁ আবিরের চিঠি! পনের দিন আগে পোস্ট করা চিঠি আবিরের মৃত্যুর আটদিন পর এসে পৌঁছেছে ঢাকায় ইমনের কাছে!
নার্গিস খানম খুব চেষ্টা করেছিলেন ইমন যেন চিঠি টা না পড়ে কিন্তু সেদিন পৃথিবীর কোন শক্তি পারেনি ইমনের কাছে থেকে চিঠি টা নিয়ে নিতে!
ইমন চিঠি নিয়ে নিজের ঘরে এসে দরজা লাগিয়ে দিল !
অনেকক্ষণ চিঠিটা বুকের কাছে জড়িয়ে রেখেছে, গালে ধরে রেখেছিল। তারপর চিঠি খুলতেই সেই সুন্দর ঘ্রাণ টা ওর নাকে লাগলো জন্মদিনে পাঠানো ব‌ই গুলোতে যে ঘ্রাণ টা পেয়েছিল ইমন।
কাঁপা কাঁপা হাতে ইমন চিঠি টা মেলে ধরলো,

ইমন,
কি করছো তুমি ? খুব অবাক করে দিলাম চিঠি দিয়ে তাই না ! আমি তোমাকে আগেই বলেছিলাম আমি গুছিয়ে চিঠি লিখতে পারি না । সে জন্যই কখনো আয়োজন করে তোমাকে চিঠি লিখিনি। আজ যখন ক্লাস শেষে ডরমেটরিতে ফিরছি অনেক ঠান্ডা ছিল বাহিরে । কফি মগটা হাতে নিয়ে কেন জানি মনে হলো তোমাকে একটা চিঠি লিখি। আমি ঢাকায় আসছি তো তোমাকে বলেছি আর মাত্র কয়েকটা দিন তাই না ! এই চিঠি হয়তো আমি যাওয়ার আগেই পৌঁছে যাবে তোমার কাছে!
ইমন, একটা মাস অপেক্ষা করতে পারলাম না বুঝলে! আমার সকাল থেকে দুপুর, দুপুর গড়িয়ে রাত সব ইদানিং তোমাকে দেখার আকুলতায় কেটে যাচ্ছে। অবস্থা এতটা খারাপ ঐ দিন হেলুসিনেশন পর্যন্ত হলো তোমাকে নিয়ে , আমি সন্ধ্যা র পর আমার রাসান বন্ধু পাবলো র সঙ্গে লাইব্রেরি থেকে ফিরছি । পাবলো তার এক দেশী স্টুডেন্ট এর সঙ্গে পথে দেখা হয়ে যাওয়াতে দাঁড়িয়ে গেল আমি ওর জন্য অপেক্ষা না করে ডরমেটরি র দিকে ফিরছি হঠাৎ মনে হল পথের অন্য পাশ থেকে তুমি হেঁটে আসছো ! আমি থমকে দাঁড়ালাম এত জীবন্ত ছিল ভাবনা টা আমার, আমি কিছুক্ষণ ওখানেই বোকার মত দাঁড়িয়ে রইলাম। পিছন থেকে পাবলো এসে ঘাড়ে হাত রাখার পর বাস্তবে ফিরে এলাম।
ইমন যখন তোমাকে নিয়ে আমি ভাবি , আমার ভাবনা গুলো এত গভীর থাকে আমার মনে হয় তুমি আমার পাশে আছো আমি তোমার হাঁটাচলা, তাকানো সব কিছু আমার আশেপাশে অনুভব করতে থাকি!
আমি এখন তোমাকে নিয়ে কল্পনার এক জগতে চলে যাই ইমন। আমি কল্পনায় তোমাকে দেখি তুমি হালকা বেগুনি রঙের শাড়ি পরে আমার সঙ্গে ঢাকার রাস্তায় রিক্সায় ঘুরে বেড়াচ্ছো ! তুমি গল্প করছো আমি পাশে বসে তোমার গল্প শুনছি। তোমার খোলা চুল বাতাসে উড়ে এসে আমার মুখে লেপ্টে যাচ্ছে। আমি চোখ বন্ধ করে তোমার চুলের স্পর্শ পাচ্ছি আমার মুখের উপর।
কখনো কখনো আমি তোমার গায়ের মিষ্টি ঘ্রাণ পাই এমন‌ও মনে হয় ! আমি তো তোমাকে কখনো দেখিনি ইমন , তবুও মনে হয় তোমার সব কিছু আমার জানা আমি অনুভব করি ! তোমার চিন্তায় বুঁদ হয়ে থাকতে এত ভালো লাগে!
আমি যে তোমাকে এত ভালোবাসেফেলেছি তুমি কি টের পাচ্ছো ? আমি অচেনা, অদেখা এক ইমন কে ভালোবেসে ফেলেছি !
ইমন তোমাকে ক্লাসে, লাইব্রেরি তে এমনকি বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করার সময় ও চিন্তা করতে থাকি এতটা অনুভব করি আমার মনেই হয় না তুমি আমার থেকে হাজার মাইল দূরে ঢাকার কলাবাগানে আছো। আমার আর তোমার মাঝে কত সাগর, মহাসাগর, মহাদেশ , হাজার শহর কিন্তু আমি মুহূর্তে ই টপকে যাই এই সব কিছু আমি বিষুবরেখা পার হয়ে চলে আসি তোমার কাছে !
আমার হাত যদিও তোমার হাত দুটো ধরতে পারে না , আমার চোখ তোমাকে দেখতে পায় না কিন্তু আমি আমার কল্পনায় তোমার নিঃশ্বাসের শব্দ শুনি, তোমার চোখের পলক পড়া দেই, তোমার কপালের রেখা গুলো দেখি।
জানো ইমন কখন , কোন মুহুর্তে নির্ধারিত সময়ের আগেই আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তুমি সেদিন ফোনের অন্য প্রান্তে কথা বলছিলে আর হাসছিলে আমি তোমার হাসি শুনছিলাম কিন্তু আমি তোমার হাসি দেখতে পাচ্ছিলাম না ! আমার সমস্ত শরীরে কি একটা অনুভব হলো জানি না মনে হচ্ছিল কেন সেই হাসি দেখতে পাচ্ছি না , কেন আমি সেই চোখ দুটো দেখতে চাচ্ছি না ! ঠিক সেই মুহূর্তে আমি ঠিক করে ফেলেছি এক মাস অনেক দিন আমি আর থাকতে পারব না ঐ মুখ টা না দেখে !
আমি আসছি ইমন ! তুমি একটা বেগুনি শাড়ি পড়ে থাকবে যেদিন আমাদের প্রথম দেখা হবে । জারুল ফুলের রঙের দেখব তোমাকে ! ইমন আমার কথা গুলো খুব কাব্যিক শোনাচ্ছে তাই না ? আসলে আমি নিজেও আমার কথায় অবাক হয়ে যাচ্ছি আজকাল।
এই কথা গুলো জীবনেও আমি তোমার সামনে বলতে পারব না !
ইমন একটা বলব,
বিয়ের পর তোমাকে আমি ব‌উ বলে ডাকব ! দুই অক্ষরের ব‌উ শব্দটা এত মিষ্টি লাগে আমার ! তোমার ছবির সঙ্গে যখন কথা বলি , তখন তোমাকে আমি ব‌উ বলেই ডাকি! জানো খুব ইচ্ছে করে ফোনেই তোমাকে ব‌উ বলে ডাকতে ! কিন্তু খুব লজ্জা লাগে!
তুমি কি হাসছো আমার কথা শুনে ইমন! ভাবছো একোন পাগল এর সাথে জীবন কাটাতে হবে ?
আমি সত্যিই পাগল হয়ে গেছি বোধহয়, তা না হলে দুদিন আগে ক্লাসের সামনে মিলিন্ডা নামের আমার এক ক্লাস মেট কে ইমন বলে ডেকে উঠলাম কিভাবে বলো ? এটা হয়তো পাগলামী র ই লক্ষন ইমন!
ইমন তোমাকে নিজের করে নেয়ার জন্য আসছি আমি ,তুমি কয়টা দিন অপেক্ষা করো শুধু !
ইমন ব‌উ আমার অনেক ভালোবাসি তোমাকে । ভালো থেকো !
শুধুই তোমার আবির
১৯ এপ্রিল ১৯৮৮

মারা যাওয়ার খবর শুনে ইমন কাঁদতে পারেনি কিন্তু চিঠি পড়ে ইমন চিৎকার করে কেঁদেছে। বার বছর হয়ে গেছে এখন ও যদি আবিরের চিঠি টা বের করে পড়ে সে খুব কাঁদে।
সেই পাঁচ মাসে আবিরের মত ভালো বাসতে ইমন পারেনি কিন্তু আবিরের মৃত্যু র পর ইমন আবিরকে ই শুধু ভালোবেসেছে। আবির ওকে অনুভব করতো তখন । ইমন আবিরকে এখনো অনুভব করে ! আজ‌ও চিলেকোঠায় বসে থাকলে মনে হয় আবির ওর পাশে বসে আছে। প্রায় দিনই সে বেগুনি রঙের শাড়ি পড়ে চিলেকোঠায় বসে থাকে ! তখন সে আবিরের অস্তিত্ব টের পায় । মনে হয় আবির ওকে দেখছে। ছুটির দিনে সে একা রিক্সায় ঘুরে বেড়ায় শহরে। খোলা চুল গুলো যখন বাতাসে উড়তে থাকে ইমনের মনে হয় আবির ওর পাশে বসে আছে ! ওর চুল গুলো আবিরের মুখে গিয়ে স্পর্শ করছে।
পড়াশোনা শেষ করেছে কারণ আবির চাইতো ইমন নিজের পরিচয়ে পরিচিত হবে একদিন।
প্রথম প্রথম বিয়ের সম্বন্ধ আসলে পছন্দ হয়নি বলে জানিয়ে দিত ! একটা সময় যখন সেটা করার ও সুযোগ থাকতো না তখন সে উড়ো চিঠি লিখে ছেলে পক্ষের বাড়ি পাঠাত তখন বিয়ে ভেঙে যেত ! কিন্তু এবার সে ধরা ই পড়ে গেছে যে নিজের বিয়ে নিজেই ভেঙে দিচ্ছে।
ইমন পারবে না আবিরের জায়গায় আর কাউকে চিন্তা করতে । আবির মরে গিয়েও তার পুরো অস্তিত্বের সঙ্গে জুড়ে আছে।
একবার মানুষটাকে না দেখতে পারার কষ্ট আজীবন তাকে তাড়া করে ফেরে। কত টা ব্যাকুল হয়ে গিয়েছিল আবির ইমন কে দেখার জন্য! ইমন আজ‌ও আবির দের বাসায় যায় ।

দিন গিয়েছে ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে মাস , বছর ,যুগ পার হয়েছে! আবিরের মৃত্যু র একত্রিশ বছর কেটেছে কিন্তু ইমনের মনে আজ‌ও আবির সেভাবেই জুড়ে আছে! বিয়ে নিয়ে তাকে কেউ আর বিরক্ত করেনি ! মা অনেক কান্নাকাটি করতো , বোঝাতে আসতো । ফুপুরা বুঝানোর চেষ্টা করতো। বাবা চুপ হয়ে গেলেন এই প্রসঙ্গে ! ইমন তার সিদ্ধান্তে অটল ছিল সব সময় !
ছোট ভাই বোনের বিয়ে হয়েছে তারা তাদের জীবনে সুখী। ভাই আর বোনের বাচ্চাদের সন্তানের মত আদর করে ইমন!
ওদের দেখলে মনে হয় তার আর আবিরের সন্তান হলে হয়তো এমন‌ই হতো ! আবিরের বয়সী কাউকে দেখলে তার মনে হয় বেঁচে থাকলে আবিরের চুল গুলো হয়তো এরকম কাঁচা পাকা থাকতো ? মুখের চামড়ায় এরকম ভাঁজ পড়তো কি ?
এখন প্রতি বছর সে ম্যাসাচুসেটস যায় । আবিরের ডরমেটরির সেই রুম টাতে গিয়ে বসে থাকে অনেকক্ষণ। নতুন কোন স্টুডেন্ট তাকে কখনো বাঁধা দেয়নি রুমে ঢুকতে! চার্লস নদীর পাড়ে ঘুরে বেড়ায় ইমন।
তখন তার মনে হয় ওর পাশে আবির ও হাঁটছে। আবিরের ক্লাস রুম, লাইব্রেরি সব জায়গায় ইমন ঘুরে ঘুরে দেখে যা আবির ওকে দেখাতে চেয়েছিল । আবিরের রাশিয়ান বন্ধু পাবলোর সঙ্গে ওর যোগাযোগ হয়েছিল আবিরের বাংলাদেশী এক বন্ধুর মাধ্যমে, পাবলোই তাকে আবিরের ইউনিভার্সিটি দেখিয়েছে।
কত কথা বলেছে পাবলো আবির কে নিয়ে ! ইমন মুগ্ধ হয়ে শুনেছে। ইমন কে নিয়ে কত স্বপ্ন সাজিয়েছিল আবির ,পাবলোর কাছ থেকেই জেনেছে ইমন।
আবিরের পরিবারের সঙ্গে ইমন আজ‌ও যোগাযোগ রেখেছে।
একটা সময় আবিরের মা ওকে কাছে পেলে খুব কাদতো , বুকে জড়িয়ে রাখতো ! ইমন আবিরের রুমে গিয়ে বসতো । ওর ব্যবহার করা জিনিস পত্র নেড়েচেড়ে দেখতো। দশ বছর আগে আবিরের মা মারা গেছেন। মারা গেছেন ইমনের বাবাও !
আবির মারা যাওয়ার পর ওর ব্যবহার করা সব জিনিস ঢাকায় আসলে সেখান থেকে সে আবিরের প্রিয় পয়জন ব্রান্ডের পারফিউম টা নিয়ে এসেছিল। আবির সব সময় ইউজ করতো এই পারফিউম। ইমন যেদিন আবির কে বেশি অনুভব করে সেদিন সেই পারফিউম টা হাতে নিয়ে গন্ধ নেয় তখন তার মনে হয় সে আবিরের বুকের ভেতরে জড়িয়ে আছে!
আজ বৃদ্ধা মা, ছোট ভাই শুভ , শুভর ব‌উ বাচ্চাদের নিয়ে তার জীবন । ছোটবোন প্রিয়ম অস্ট্রেলিয়া তে সংসার পেতেছে।
এখনো আবির কে নিয়ে তার মনের গভীরে সেই আগের মত ভালোবাসাই জমে আছে। আজ প্রায় একত্রিশ বছর সে হালকা বেগুনি রঙের কাপড় ই পড়ে সব সময় ! আবির এই রঙেই তাকে দেখতে চেয়েছিল !
তার কাছে মনে হয় একটা জীবন কেন সে আরো কয়েকটা জীবন আবিরের জন্য অপেক্ষা করতে পারবে!

আজ বেগুনি রঙের শাড়ি পড়েছে ইমন । একত্রিশ বছর আগে আজ আবির আর ওর এনগেজমেন্ট হয়েছিল ! এই একটি মাত্র বন্ধনে তারা বাঁধা পড়েছিল । কিন্তু তাতে কি, ওর জন্য আবিরের দূর থেকে বলা পাঁচটা মাসের কথাই অনেক বড় বন্ধনে বেঁধেছে! আজ ইমন আবিরের পারফিউম টা লাগিয়ে চিলেকোঠায় থাকবে সারা রাত সঙ্গে আবিরের লেখা চিঠিটা নিয়ে !
নক্ষত্রের ওপারে যদি আবির থাকে আজ কি একটি বার তাকিয়ে দেখবে না ইমন কে ? আজ‌ও আবিরের জন্য ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষা করছে ইমন একটি বার দেখার জন্য !
ভালোবাসা কি এমনই হয়! কিছু অপেক্ষা কি এমন‌ই হয়!

সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here