শ্রাবন আধারে তুমিপার্ট: ১৮
লেখিকা:আফরিন ইসলাম
সাদির গাড়ী এসে খান বাড়ীর সামনে থামলো ৷সাদি দারোয়ানকে গেট খুলে দিতে বলল ৷কিন্তু সে সাদির গলা পেয়েও খুললো না ৷কারন তাকে নিষেধ করা হয়েছে ৷যেন সাদিকে বা রাইকে ভেতরে ঢুকতে না দেয় দারোয়ান ৷ দারোয়ান যখন গেট খুললো না ৷তখন সাদির মেজাজ আরো বিগড়ে গেল ৷ সাদি রেগে দারোয়ানকে বলল
দারোয়ান চাচা গেট টা খুলে দাও ৷আমার মাথাটা তুমি গরম করো না প্লিজ ৷
আমি গেট খুলতে পারমু না সাদি বাবা ৷আমি আপনেরে ডুকতে দিলে আমার চাকরি থাকবো না ৷
সাদি এবার আর নিজের রাগ সামলাতে পারলো না ৷পাশে পরে থাকা পাথর গুলো সজোরে গেটে মারতে লাগল ৷গেট ভাঙ্গচুর করতে লাগলো ৷ আবরার মাত্রই রেডি হয়ে নিচে আসে নাস্তা করার জন্য ৷কিন্তু হঠাৎ ভাঙ্গচুরের আওয়াজ শুনে থেমে যায় ৷ এদিকে দারোয়ান খুব ভয় পেয়ে যায় সাদির কাজে ৷তাই দৌড়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকে যায় ৷
দারোয়ানকে এভাবে দৌড়ে আসতে দেখে আর ভাঙ্গচুরের আওয়াজে আবরার বলল
কি হয়েছে চাচা ৷আপনি এভাবে দৌড়ে কেন এলেন ৷আর বাইরে এত কিসের আওয়াজ আসছে ৷
দারোয়ান হাপাঁতে হাপাঁতে বলল আবরার বাবা বাইরে সাদি বাবা আইসে ৷সে বাড়ীর ভেতরে ঢুকতে চাইছে ৷কিন্তু আপনে না করছেন তাই ডুকতে দেই নাই ৷এর জন্য গেট পাথর দিয়া আঘাত করতাছে ৷আর খুলতে কইতাছে ৷
আবরার ছোট করে একটা নিঃশ্বাস নিল ৷তারপর বলল ওকে ভেতরে আসতে দাও ৷যাও গেট খুলে দাও ৷
দারোয়ান দৌড়ে গেল গেট খুলতে ৷দারোয়ান গেট খুলতেই সাদি ভেতরে ঢুকলো ৷সাদি ভেতরে আসতেই দেখলো বাড়ীর সবাই আছে ৷সাদি একবার মিশকার দিকে তাকালো ৷তারপর বলল
বেশ ভালোই হয়েছে এখানে সবাই আছে ৷ তা না হলে সত্য কথা গুলো কাদের বলতাম এখন ৷
এখানে কেন এসেছিস তুই সাদি ৷আবরার শান্ত গলায় বলল ৷
সাদি আবরার কথায় জবাব দিল না ৷খাবারের টেবিলের দিকে একবার তাকালো ৷তারপর বলল
ও মা এখানে দেখছি ভোজ সভা চলছে ৷তা এত খাবার কি করে তোদের গলা দিয়ে নামছে আবরার ৷আমি থাকতে তো এ খাবার তোদের গলা দিয়ে নামবে না ৷সাদি কথা গুলো বলেই খাবারের টেবিলের সব খাবার উল্টে ফেলে দিল ৷ কাচের জিনিস গুলো ঠাস ঠাস করে ভেঙ্গে গেল ৷কাচ টুকরোতেপুরো ড্রয়িং রুম ভরে গেল ৷ হঠাৎ সাদির গালে ঠাস করে একটা থাপ্পর পড়লো ৷ চারিদিকে পিনপিন নিরবতা ৷
সাদি সেই দিকে একবার তাকিয়ে দেখলো মিশকা দাড়িয়ে আছে ৷হ্যা মিশকাই থাপ্পরটা মেরেছে ৷ সাদির চোখে চিকচিক করছে পানি ৷ মিশকা সাদির কলার ধরে বলল
আর কত ঠকাবে আমাদের ৷আমাদের ভাই বোনের জীবনটা নষ্ট করে শান্তি হয় নি ৷এখন বাড়ীতে এসে অশান্তি কেন করছো ৷আর যার জন্য এমন করেছো তাকে তো পেয়েছো ৷তাহলে আবার কি চাই ৷অবশ্য তোমাদের মতো চরিত্রহীন লোকেরা এর থেকে আর কি বা করতে পারে ৷
এতক্ষন চুপ থাকলেও এবার আর চুপ থাকলো না সাদি ৷কারন এবার মিশকা তার চরিত্র নিয়ে কথা বলেছে ৷ সাদি এবার সজোরে সবার সামনে থাপ্পর মারলো মিশকার গালে ৷মিশকা ছিটকে পড়লো ফ্লোরে ৷
সাদি কিছু বলবে তার আগেই আবরার ওকে এলোপাথারী মারতে লাগলো ৷আবরার সাদিকে মারতে মারতে বলল
তোকে আমি কখনো বন্ধু ভাবি নি ৷তোকে সব সময় ভাই ভেবে এসেছি ৷আর তুই আমার জীবনটা শেষ করে দিয়েছিস ৷আমার ভালোবাসার মানুষটাকে কেড়ে নিয়েছিস ৷আর এখন আমার বোনের গায়ে হাত দিস ৷তোকে আজ আমি মেরেই ফেলবো ৷
সাদি একটা কথাও বলল না ৷একের পর এক থাপ্পর আর ঘুষি খেয়েই গেল ৷এক সময় আবরার ক্লান্ত হয়ে গেল তাই থেমে গেল ৷এদিকে সাদির নাক মুখ থেকে রক্ত বের হচ্ছে ৷আবরার সাদিকে ছেড়ে দিয়ে বলল
চলে যা এখান থেকে ৷তুই আর কখনো আমার সামনে আসিস না ৷চলে যা তুই ৷নয়তো অনেক খারাপ কিছু হয়ে যাবে ৷ আমি চাই না তোর মায়ের কোল খালি হোক ৷
আবরার উঠে যেতেই সাদি বলল আমাকে কি সত্যি কখনো ভাই মনে করেছিস আবরার ৷ যদি সত্যি নিজের আপন মনে করতিস তাহলে একটা বার আমাকে সবটা বলতে পারতিস ৷সাদি চোখের পানি মুছে বলল আমি আসলে এগুলোরই প্রাপ্য ৷ তা না হলে এত কিছুর পরেও কেউ আসে নাকি ৷যাই হোক তুই যে বলিস আমি রাইকে কেড়ে নিয়েছি ৷ তোর কাছে কি এমন প্রমান আছে এর বিরুদ্ধে ৷
আবরার পেছনে ঘুড়ে বলল একটা কথা কি জানিস তো কুকুরের লেজ কখনো সোজা হয় না ৷আর বেইমানরা কখনো নিজেদের বেইমানির কথা শিকার করে না ৷যাই হোক তোর প্রমান চাই তো ৷দাড়া তোকে প্রমান দিচ্ছি ৷
আবরার নিজের ফোন বের করলো ৷তারপর সাদি আর রাইয়ের বেশ কিছু ছবি দেখালো ৷যেখানে স্পষ্ট সাদি রাইকে প্রপোজ করছে ৷ আর রাই সাদির প্রপোজ গ্রহন করছে ৷ কিছু ছবিতে একজন আরেক জনকে খাইয়ে দিচ্ছে ৷ আরেকটা ভিডিওতে সাদি আর রাই নাচ করছে ৷
সাদি ছবি গুলো দেখে উচ্চ স্বরে হেসে দিল ৷ সাদি এখন নিজের শরীরের কথা ভুলে হাসতে ব্যস্ত ৷ সাদিকে হাসতে দেখে আবরার বলল
হাসছিস কেন এভাবে ৷এরপরও বলবি সব মিথ্যা ৷কিছু নেই তোদের মাঝে ৷
সাদির হাসি থেমে গেল ৷চেহারায় দেখা দিল হাজারো অভিভান ৷সাদি ফোনটা নিয়ে মিশকার কাছে গেল ৷তারপর বলল
মিশকা আবরার কি কখনো তোমাকে আমার আর রাইয়ের কোনো ব্যক্তিগত ছবি দেখিয়েছে ৷
না দেখায় নি আমাকে মিশকা বলল ৷
তোমার মনে আছে মিশকা তোমাকে প্রপোজ করার কিছু দিন আগের কথা ৷ঐ দিন আমি তুমি আর রাই ঘুরতে গিয়ে ছিলাম ৷তুমি আমাকে ডেয়ার দিয়ে বলে ছিলে রাইকে প্রপোজ করতে ৷
মিশকা মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো ৷
সাদি বলল ঐ দিনের ভিডিও আর ছবি গুলো সবাইকে দেখাও ৷
মিশকা সাদির কথা মতো তাই করলো ৷আর ঐ দিন যে শুধু একটু মজা করে সাদি রাইকে প্রপোজ করেছে তা আবরার বুঝে গেল ৷
তারপর সাদি মিশকাকে বলল মিশকা তুমি আমি আর রাই একবার ঘুরতে গিয়ে ছিলাম ৷তোমরা রাস্তায় ফুচকা খেতে চেয়ে ছিলে ৷কিন্তু আমি ফুচকা খেতাম না ৷তাই রাই আমাকে জোড় করে ঐ দিন তোমার সামনে ফুচকা খাইয়ে দিয়ে ছিল ৷ঐ দিনে ছবি গুলো আবরারকে দেখাও তোমার ফোন থেকে ৷সাদির কথা মতো মিশকা আবরারকে দেখালো ৷
অতঃপর সাদি বলল মিশকা তোমাকে প্রপোজ করার পর আমি তোমাকে আর রাইকে নিয়ে মজা করে নেচে ছিলাম ৷ঐ দিনের ভিডিও গুলো দেখাও আবরারকে ৷
সব কিছু দেখার পর আবরার হিসাব ওলট পলট হয়ে যাচ্ছে ৷কারন সব জায়গায় মিশকা ছিল ৷আর মিশকার ফোনের পিক গুলো দেখলে তা বোঝা যায় ৷ কিন্তু তার ফুপু যখন ছবি গুলো তাকে দিত তখন তো মিশকার ছবি সেখানে থাকতো না ৷
সাদি আবরারকে বলল আর কোনো প্রমান আছে আবরার ৷
আবরার শান্ত হলো না ৷ কঠিন গলায় বলল বুঝলাম সব মিথ্যা ৷তাহলে রাই কলেজ ফাকি দিয়ে কেন তোর সাথে দেখা করতো ৷
লাইক সিরিয়াসলি ৷রাই আমার সাথে দেখা করতো ৷কে বলেছে তোকে আবরার ৷নিজের চোখে না দেখেই বিচার করলি হ্যা ৷ তুই সত্যি জানতে চাস রাই কোথায় যেত ৷
আমি আর কিছু জানতে চাই না ৷আর না কিছু বুঝতে চাই ৷আমি আজকের ফ্লাইটে চলে যাচ্ছি এটাই শেষ কথা ৷
চলে যা আমি বাধাঁ দেব না ৷যাওয়ার আগে সত্যি গুলো জেনে যা ৷তুই একটু দাড়া আমি আসছি ৷
সাদি আস্তে আস্তে নিজের গাড়ির কাছে গেল ৷হাটঁতে খুব কষ্ট হচ্ছে ৷কপাল ফেটে রক্ত ঝড়ছে ৷হাত দিয়ে নাকের রক্ত মুছতে মুছতে সাদি হেটে চলল ৷পায়ে কাচেঁর টুকরা লেগে অনেক জায়গায় কেটে গেছে ৷তাই হাটতে পারছে না ৷
প্রায় পনেরো মিনিট পর সাদি এলো ৷সাদির হাতে তিনটা ফাইল ৷সে ফাইল গুলো একটা একটা করে খুলল ৷তারপর পড়তে লাগলো ৷ যেখানে স্পষ্ট লেখা দীর্ঘ কয়েক বছর যাবত রোগী ব্রেন টিউমারে ভুগছে ৷মাথার চারিদিকে টিউভার ছড়িয়ে পড়েছে ৷যে কোনো সময় রোগীর নাক কান মুখ থেকে রক্ত আসবে ৷রোগীর থেমে থেমে জ্বর আসবে ৷ শেষ সময় রোগীর খাওয়া দাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে ৷ রোগীর মাথার চুল পরে যাবে ৷রোগী চোখে ঝাপসা দেখবে ৷সাদি এক এক করে সব টেস্ট আর ডাক্তারের সকল নির্দেশনাবলি পড়ে শুনালো ৷কিন্তু সাদি কেন এগুলো বলছে এটাই কেউ বুঝতে পারছে না ৷
এগুলো কেন আমাদের পড়ে শোনাচ্ছিস আবরার বলল ৷
সাদি হাসল ৷তারপর কাগজ গুলো আবরার কাছে দিয়ে বলল রোগীর নামটা তো আগে দেখ ৷
আবরার একরাশ বিরক্তি নিয়ে কাগজ গুলো নিল ৷না চাইতেও একবার রোগীর নামটা দেখলো ৷ আর এতেই তার পায়ের নিচের মাটি সরে গেল ৷
(সারাদিন পর এখন একটু সময় পেয়েছি ৷তাই এখন ই দিলাম ৷দেরি করে দেয়ার জন্য সরি ৷)