শ্রাবন আধারে তুমিপার্ট:শেষ

0
787

শ্রাবন আধারে তুমিপার্ট:শেষ
লেখিকা:আফরিন ইসলাম

রাই মারা গেছে ৷আবরার পাগলের মতো বিলাপ করছে ৷হাসপাতালের ডাক্তারদের কাছে যাচ্ছে ৷আর বলছে

এই ডাক্তার ভাই আমার ৷আমার বউটাকে বাচিঁয়ে দে না ৷আমার সব টাকা নিয়ে নে তোরা ৷আমার কিছু লাগবে না ৷তোরা নিয়ে যা সব ৷শুধু আমার বউটাকে বাচিঁয়ে দে ৷তোদের পায়ে পড়ি আমি ৷কিছু একটা কর ভাই তোরা ৷ কেউ কোনো কথা বলছে না ৷আবরার তার বাবার কাছে গেল দৌড়ে ৷

বাবা ও বাবা তুমি তো সব পারো ৷আমার রাইকে একটু কথা বলতে বলো না বাবা ৷আমি আর পারছি না ৷ও বাবা আমি রাইকে নিয়ে চলে যাবো অনেক দূরে ৷আর ফিরে আসবো না কখনো ৷কোনো টাকা আমার লাগবে না ৷শুধু ওকে কথা বলতে বলো না ৷

আফজাল খান ছেলের গালে হাত বুলিয়ে বললেন রাই আর আমাদের মাঝে নেই বাবা ৷টাকা দিয়ে মানুষকে বাচাঁনো যায় না ৷

তোমরা কেউ আমার আপন নও ৷সবাই আমার শত্রু তোমরা ৷আমার কাউকে লাগবে না ৷আবরার চিৎকার করে কথা বলতে বলতে রাইয়ের কাছে গেল ৷তারপর বলল

তোকে আর কি বলবো ৷তুইও তো আমাকে বুঝলি না ৷সবার মতো তুইও দিনের পর সব লুকিয়ে গেলি ৷এই কথা বল আমার সাথে ৷এই রাই কথা বল না একটু ৷আবরার চিৎকার করে কথা গুলো বলতে বলতে কেদেঁ দিল ৷

আনিলা বেগম ছেলের কাছে দৌড়ে গেলেন ৷তারপর বললেন

আবরার তুমি কি চাও না রাই এখন একটু ভালো থাকুক ৷ যদি তুমি ওকে ভালোবাসো তাহলে এভাবে পাগলামি করো না বাবা ৷ওকে নিয়ে যেতে হবে তো ৷

আবরার কোনো কথা বলল না ৷উঠে দাড়ালো আবরার ৷তারপর পর রাইয়ের নিথর শরীরটা নিজের কোলে তুলে নিল ৷রাইয়ের নিথর শরীরটা আবরার বুকের সাথে লেপ্টে আছে ৷

আনিলা বেগম আবরারকে বললেন এটা কি করছো আবরার ৷রাইকে লাশবাহী গাড়ীতে করে নিয়ে যাবে হাসপাতাল থেকে ৷

মরা মানুষকে ঐ গাড়ীতে ওঠায় মা ৷কিন্তু আমার রাই আমার কাছে মৃত নয় ৷আমি নিজেই আমার বউকে তার শেষ ঠিকানায় রেখে আসবো ৷

আবরার হেটে চলল হাসপাতালের বাইরে ৷কেউ আবরারকে বাধাঁ দিল না ৷আবরার রাইকে নিয়ে গাড়ীতে বসলো ৷তারপর গাড়ী চালাতে শুরু করলো ৷আবরার নিজের স্ত্রীকে আলতো করে জরিয়ে আছে ৷ রাই চুপ করে শুয়ে আছে ৷কোনো সাড়াশব্দ নেই ৷

অন্যদিকে আফজাল খানের মোবাইলে পুলিশের নাম্বার থেকে একটা কল আসে ৷ওপর পাশের কথা শুনেই তার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরে ৷ আফজাল খান কাউকে কিছু না বলে পুলিশ স্টেশনের দিকে গাড়ী নিয়ে বেড়িয়ে যায় ৷

আবরার গাড়ী বাড়ীতে এসে গেছে ৷ আবরার পেছনের গাড়ীতে সবাই এসেছে ৷ সবাই কাদঁছে ৷

আফজাল খান নিজের বোনের সামনে বসে আছে ৷তার চোখেও পানি ৷রুহানা খান মাথা নিচু করে বলল

আমাকে পারলে মাফ করে দিও ৷আর দ্বীপকে আমি তার পাপের শাস্তি দিয়েছি ৷আর তাকে ভালোবেসে আমি যেই ভুল করেছি ৷তার শাস্তি এখন আমি ভোগ করবো ৷রাইয়ের কাছে আর মাফ চাইতে পারলাম না ৷ সে যেন আমায় মাফ না করে ৷আমি সেটার যোগ্য নই ৷

রাই আর বেচেঁ নেই রুহানা আফজাল খান বললেন ৷

রুহানা খানের চোখ থেকে এক ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো ৷ তিনি বললেন আমার এই অভিশপ্ত জীবন থেকে আর মুক্তি হবে না ভাইয়া ৷ঐ মেয়েটার দীর্ঘ নিঃশ্বাস আমার পরকালও শেষ করে দেবে ৷তুমি আমার মতো একটা জঘন্য মেয়ের জন্য নিজের সময় নষ্ট করো না ৷রাইয়ের কাছে যাও ৷বাবার মতো তার শেষ কাজ গুলো করো যাও ৷ আর আমাকে এখান থেকে বের করার চেষ্টা করো না কখনো ৷

অপর দিকে রাইয়ের শেষ গোসল হয়ে গেছে ৷ একটু পরেই জানাযা ৷রাইয়ের মা , বাবা ,মামা ,মামীও এসেছে ৷তারাও কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছে ৷ সবাই রাইকে শেষ বারের মতো একবার দেখে নিল ৷

রাইয়ের জানাযা শেষ হলো ৷তারপর তাকে মাটির ঘরে রেখে দেওয়া হলো ৷সাদি নিজের হাতে সব কাজ গুলো করেছে ৷রাইকে সাড়ে তিন হাত মাটির নিচে আপন ঘরে রেখে দেওয়া হল ৷যেখান থেকে কেউ চাইলেও আর ফিরতে পারে না ৷আবরার শুধু বাগানের এক কোনায় বসে সব দেখ ছিল ৷একটা পাথরের মতো বসে আছে সে ৷তার কোনো হেলদুল নেই ৷ শুধু তাকিয়ে আছে রক্ত জবা গাছটার নিচের কবরটার দিকে ৷

একে একে খান বাড়ী খালি হয়ে যাচ্ছে ৷শুধু আত্মীয় স্বজনরা আছে ৷রুহানা খানের ব্যাপারটা সবাই জেনে গেছে ৷কিন্তু যাবে না তার কাছে ৷ বাড়ীতে এখনো কান্নার রোল ৷ সন্ধ্যা হয়ে রাতের অন্ধকার নেমে গেছে ৷

আবরার এক পলক কবরটার দিকে তাকালো তারপর উঠে দাড়ালো ৷আবরার বাড়ীর ভেতর ঢুকলো ৷তার পুরো শরীরে ধুলো বালি মাখা ৷ আবরার কারো সাথে কোনো কথা না বলে ঘরের ভেতর ঢুকলো ৷ আবরার কাবার্ড খুলল ৷সেটার ভেতর থেকে রাইকে দেওয়া তার প্রথম শাড়ী ,চুড়ি গুলো নিয়ে নিল ৷অতঃপর রাইয়ের তাকে দেওয়া পাঞ্জাবীটা বের করে নিল ৷তার পর আবারো নিচে নেমে গেল ৷মিশকা আবরার কাছে যেয়ে কাদঁতে কাদঁতে বলল

কোথায় যাচ্ছো ভাইয়া ৷

আবরার কথা বলল না ৷মিশকা আবারো বলল ভাইয়া তুমি কথা বলছো না কেন ৷

আবরার মিশকাকে ঝাড়া মেরে সরিয়ে দিল ৷তারপর বলল আমি তোকে কেন বলবো কোথায় যাচ্ছি ৷আমার বউ বাইরে ঘুমিয়ে আছে ৷সে একা থাকতে ভয় পায় জানিস না ৷তার কাছে যাচ্ছি ৷একদম আমাকে জালাবি না ৷সর সামনে থেকে ৷

আবরার আচরন অস্বাভাবিক ৷সে স্বাভাবিক ভাবে কথা গুলো বলে নি ৷রাইকে আবরার সত্যিই ভালোবাস তো ৷কিন্তু তা আর প্রকাশ করতে পারলো না ৷

আবরার রাইয়ের কবরের কাছে বসে আছে ৷ আবরার রাইয়ের মাথার দিকটায় বসে বলল

এখন খুব শান্তিতে আছো তাই না ৷আজ তোমাকে ঘুমাতে দিতে ইচ্ছে করছে না ৷ দেখেছো আজ আকাশে কত বড় চাদঁ উঠেছে ৷কত আলো চারিদিকে ৷কিন্তু দেখ আমার আকাশের চাদঁটা মাটির তলায় শুয়ে আছে ৷ কোনো আলো নেই আমার দুনিয়ায় ৷ আবরার নিজের পাঞ্জাবীর পকেট থেকে শুকনো বুনোফুল বের করলো ৷তারপর বলল দেখেছো তোমার দেওয়া বুনোফুল গুলো এখনো আছে ৷কিন্তু তুমি আর নেই ৷তোমার শাড়ীর ভাজে এখনো তোমার ঘ্রান মেলে ৷কিন্তু তুমি নেই ৷আমার ভালোবাসা আজ মাটির তলায় বন্দি ৷আবরার আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল

আল্লাহ আমার বড্ড কষ্ট হচ্ছে ৷তুমি তো অন্তরের সব জানো ৷আমাকে একটু শান্তি দাও খোদা ৷আবরার দুই চোখ পানি গড়িয়ে পড়লো ৷চোখের পানি গাল বেয়ে গলা অতিক্রম করেছে ৷

রাত একটা বাজে আবরার এখনো কবরের কাছে বসে আছে ৷অনেকে তাকে নিতে এসেছে কিন্তু যায় নি ৷তার রাই নাকি ভয় পাবে এখানে একা থাকতে ৷তাই বাধ্য হয়ে সবাই ফিরে গেল ৷

আবরার রাইয়ের ডান দিকে শুয়ে পড়লো ৷ বুকের মধ্যে রাইয়ের শাড়ীটা চেপে ধরলো ৷ আবরার রাইয়ের কবরের দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে রইলো ৷রাতের অন্ধকার আবরার নিঃশ্বদের কান্নার চোখের পানি আড়াল করলো ৷

সকাল নয়টা বাজে ৷খান বাড়ীতে আজ আবারো মানুষের ভিড় জমেছে ৷তবে আজ কেউ রাইয়ের জন্য আসে নি ৷সবাই খান বাড়ীর বড় ছেলে আবরার খান জয়কে শেষবারের মতো দেখতে এসেছে ৷ বাড়ীর সামনেই একটা খাটিয়াতে আবরার লাশটা সাদা কাপড় দিয়ে ঢাকা ৷একটু আগেই তাকে ডাক্তার মৃত ঘোষনা করেছে ৷ সকাল পাচঁটার দিকে মিশকা আর আফজাল খান আবরাকে নিতে আসে ৷অনেক ডাকার পরেও আবরার ওঠে না ৷ অনেক চেষ্টা করেও আবরারকে কেউ ওঠাতে পারে নি ৷অবশেষে আফজাল খান বাড়ীতে ডাক্তার ডাকে ৷ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষনা করে দেয় ৷ ডাক্তারের ভাষ্য মতে আপন জনকে হারানোর কষ্ট সইতে না পেরে কাল রাতেই হার্ট এ্যাটাক্ট করেছে সে ৷ যার ফলে মৃত্যু হয়েছে ৷

একটু পরেই হয়তো আবরার গোসল তারপর জানাযা হবে ৷ তাকেও রাইয়ের পাশেই কবর দেওয়া হবে ৷ রাইয়ের পাশেই কবর খোড়া হচ্ছে ৷

সবাই কাদঁছে ৷নিজের প্রান প্রিয় বন্ধকে ধরে সাদি কাদঁছে ৷ চারিদিকে আজ হাহা কার ৷কোথাও কেউ ভালো নেই ৷শ্রাবন আধারে সব ঢেকে গেছে ৷

কিছু ভালোবাসা মাটির তলায় চাপা পরে যায় ৷

.কিছু ভালোবাসা মিলনের অপেক্ষায় রয়ে যায় ৷

কিছু ভালোবাসা অপ্রকাশিত রয়ে যায় ৷

কিছু ভালো আর্তনাদ করে অপর মানুষটাকে আবারো দেখার ৷

কিছু ভালোবাসা আর্তনাদ করে আবারো ফিরে আসার ৷

কিছু ভালোবাসা হারিয়ে যায় কালের বিবর্তনের ধাধাঁয় ৷

তবুও ভালোবাসাকে ভালোবাসি ৷

সমাপ্ত

যারা এত দিন সাথে ছিলেন তাদের প্রান ঢালা ভালোবাসা ৷ সবাইকে বলবো একটু কষ্ট হলেও আপনার মনের অনুভূতি জানিয়ে যাবেন ৷ কাল নতুন গল্প আসবে ৷এই গল্পটাকে আপনারা অনেক সাপোর্ট দিয়েছেন ৷আমি যদি আপনাদের. সাথে কখনো খারাপ কোনো ব্যবহার করে থাকি তার জন্য সরি ৷ যদিও আমি কখনো খারাপ আচরন করি নি ৷ আমার ইন্ডিয়ান পাঠকদের অনেক অনেক ভালোবাসা ৷তারা আমায় প্রচুর ভালোবাসা দিয়েছে ৷ আর ভালো থাকবেন সবাই ৷নতুন গল্পে সবাইকে আমন্ত্রন রইলো 😊😊😊😊😊৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here