শ্রাবন আধারে তুমিপার্ট:৩

0
802

শ্রাবন আধারে তুমিপার্ট:৩
লেখিকা :আফরিন ইসলাম

মিশকা রাইকে নিয়ে আবরার ঘরে গেল ৷মিশকা দেখলো আবরার ব্যাগের মধ্যে জামা কাপড় আর কিছু কাগজ গুছিয়ে রাখছে ৷মিশকা আবরারকে বলল

ভাইয়া তুমি হঠাৎ ব্যাগে কেন কাপড় গুছিয়ে নিচ্ছো ৷মাত্রই তো বাড়ীতে এলে ৷

আবরার কোনো কথা বলল না ৷মিশকা আবারো আবরার কাছে যেয়ে বলল কি হলো ভাইয়া বলো না ৷

এবার আবরার কঠিন চোখে একবার রাইয়ের দিকে তাকালো ৷তারপর বলল আমাকে এই মেয়েটা ফাসিঁয়েছে ৷এই মেয়েটার সাথে আমি কিছুতেই সংসার করবো না মিশকা ৷আবরার কথাটা বলেই বেড়িয়ে গেল ৷মিশকা আনিলা বেগমকে ডাকতে লাগলেন ৷আনিলা বেগম আসতে আসতে আবরার গাড়ী নিয়ে বের হয়ে গেছে ৷রাই শুধু মূর্তির মতো দাড়িয়ে ছিল ৷আবরার ফুপু রুহানা বেগম আনিলা বেগমের কাছে এসে বলল

বলে ছিলাম না ঐ মেয়েটা অলক্ষী একটা ৷দেখলি তো কিভাবে ছেলেটা চলে গেল ৷আমাদের ছেলেটাকে ফাসিয়ে কিভাবে বিয়ে করে নিল ঐ ছোট লোকের মেয়েটা ৷

আনিলা বেগম তার কথায় কান না দিয়ে আবরারকে কল করলো ৷প্রথমবারে আবরার কল রিসিভ না করলেও পরে রিসিভ করে ৷আবরার ফোন রিসিভ করতেই আনিলা বেগম বলল

আবরার বাবা তুই কোথায় যাচ্ছিস সোনা ৷

আমি আমেরিকা চলে যাচ্ছি মা আবরার বলল ৷

কেন বাবা ৷ এমন করিস না ৷পরে কিন্তু আফসোস করবি তুই ৷ রাগের মাথায় কোনো সিদ্ধান্ত নিতে নেই ৷চলে আয় বাড়ীতে তাড়াতাড়ি ৷আনিলা বেগম ঐ দিন আবরারকে অনেক বোঝায় কিন্তু আবরার ফিরে আসে নি ৷

বর্তমানে….
হঠাৎ দরজায় টোকা পড়তেই রাইয়ের ধ্যান ভেঙ্গে যায় ৷রাই পাশে তাকিয়ে দেখে চা ঠান্ডা হয়ে গেছে ৷বাইরে তাকিয়ে দেখে আলো ফুটে গেছে ৷রাই একবার আবরার ছবির দিকে তাকিয়ে দরজা খুলতে যায় ৷দরজা খুলতেই মিশকা ভেতরে আসে ৷

মিশকা বলল রাই আজ কলেজে যাবে না ৷

হ্যা আপু যাবো ৷

ওকে আমার সাথে তাহলে চলো ৷আর একটু পরে নাস্তা করতে নিচে এসো কেমন ৷

মিশকা চলে যেতেই রাই দরজা লাগিয়ে দেয় ৷রাই ছাদহীন বিশাল ডিভানে গিয়ে তার লাগানো ফুল গাছে পানি দিতে লাগে ৷আবরার একদম গাছ পছন্দ করে না ৷কিন্তু রাইয়ের গাছ লাগাতে বেশ ভালোই লাগে ৷নিজের অবসর সময় এই গাছের সাথেই রাই পার করে দেয় ৷একটু পরে রাই রেডি হয়ে নিচে নাস্তা করতে যায় ৷রাইকে দেখেই রুহানা বেগম বলল

এসে গেছে নাস্তা করতে ৷এই মেয়ে তোমার লজ্জা করে না এই বাড়ীতে থাকতে ৷নিজের মা বাপ তো খোজঁ নেয় না ৷আর যাদের কাছে বড় হয়েছো ৷ তোমার ঐ মামা মামীতো এই পর্যন্ত তোমার একটা খোজঁ নিল না ৷তা জন্মের কি ঠিক আছে ৷নাকি কুড়িয়ে পেছেয়ে তোমাকে ৷রাইয়ের চোখ পানিতে ভরে এলো ৷রাই নিজের কান্না থামাতে না পেরে দৌড়ে নিজের ঘরে চলে গেল ৷বিছানায় শুয়ে হাউমাউ করে রাই কাদঁতে লাগলো ৷

গভীর রাত হয়ে গেছে ৷রাই ডিভানে দাড়িয়ে আছে ৷আজ সারাদিন রাই ঘর থেকে বের হয় নি ৷আনিলা বেগম একটু আগে জোড় করে রাইকে খাইয়ে দিয়ে গেছে ৷যাওয়ার আগে পরম যত্নে রাইয়ের কপালে চুমু দিয়ে গেছেন ৷আনিলা বেগমকে কখনো শ্বাশুড়ী মনে হয় না রাইয়ের ৷নিজের মায়ের জায়গাটাই রাই তাকে দিয়েছেন ৷

মেঘে ঢাকা আকাশের দিকে তাকিয়ে রাই নিস্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে আছে ৷রাইয়ের চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে ৷হঠাৎ রাই ঢুকরে কেদেঁ দিল ৷

কেন আবরার আমার কি দোষ ৷আপনি কেন আমাকে ভুল বুঝলেন ৷আমি কেন দোষ না করেও শাস্তি পাবো ৷আমাকে আপনার সাথে বেধে কেন চলে গেলেন ৷দিনের পর দিন লোকের অপমান যে আমি আর নিতে পারছি না ৷আমি যে ক্লান্ত হয়ে পড়ছি আবরার ৷রাই কাদঁতে কাদঁতে বসে পড়লো ৷

অপরদিকে আনিলা বেগম ঘরে বসে আছে ৷কিছুক্ষন পর আফজাল খান ঘরে প্রবেশ করে ৷আফজাল খান হচ্ছে মিশকা আর আবরার বাবা ৷আনিলা বেগমকে অন্যমনষ্ক দেখে তিনি বললেন

কি হয়েছে আনিলা ৷

আজকাল রাইয়ের জন্য বড্ড চিন্তা হয় ৷আবরার চলে যাওয়ার পর আর খোজঁ নেয় নি মেয়েটার ৷মেয়েটা দোটানার মধ্যে আছে ৷আর প্রতিদিন তোমার বোনের অপমানে মেয়েটা নিজিকে আরো গুটিয়ে নিচ্ছে ৷মেয়েটার বাড়ীর কেউ তার খোজঁ নেয় না ৷কি করবো আমি বুঝতে পারছি না ৷

আফজাল খান দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে স্ত্রীকে বললেন

চিন্তা করো না সব ঠিক হয়ে যাবে ৷আমি দেখি কি করতে পারি ৷এখন চলো ঘুমাবে ৷

রাইয়ের চোখে ঘুম নেই ৷একের পর এক ধাক্কা তাকে ভেঙ্গে দিয়েছে ৷নিজের প্রিয়জনরা যেভাবে তাকে দূরে ঢেলে দিয়েছে তাতে এক চরম হতাশায় সে ভুগছে ৷হতাশা তাকে ঘিরে ধরেছে ৷মাঝে মাঝে মরে যেতে ইচ্ছে করে তার ৷কিন্তু রাই পারে না মরে যেতে ৷ আত্মহত্যা যে মহাপাপ ৷এই পাপ সে করতে চায় না ৷রাই ফুপিঁয়ে কাদঁছিল ঠিক তখনই রাইয়ের প্রচন্ড মাথা ব্যাথা শুরু হয় ৷আজকাল হঠাৎ হঠাৎ রাইয়ের মাথা খুব ব্যাথা করে ৷রাই কাউকে এই ব্যাপারে কিছু বলে নি ৷রাই ব্যাথায় মাথা চেপে ধরে ৷রাই নিজের নাকে তরল কিছুর আভাস পায় ৷রাই একটা আঙ্গুল নাকের নিচে রাখতেই তার আঙ্গুর ভিজে গেল ৷রাই নিজের আঙ্গুলটা সামনে ধরতেই লাল বর্নের রক্ত দেখতে পেল ৷রাইয়ের নাক থেকে রক্ত আসছে বিন্দু বিন্দু করে ৷রাই মাথাটা দুইহাতে চেপেঁ ধরলো ৷তারপর আস্তে করে উঠে দাড়ালো ৷রাই ওয়াশরুমে যেয়ে চোখে মুখে পানি দিল ৷তারপর একটা মাথা ব্যাথার ওষুধ খেয়ে নিল ৷

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here