শ্রাবন আধারে তুমিপার্ট: ৮
লেখিকা:আফরিন ইসলাম
আবরার কথা শেষ হতেই রাই বলল আপনার সাদি ভাইকে নিয়ে এত কেন মাথা ব্যাথা বলুন তো ৷আর সাদি ভাই আমার জন্য অপেক্ষা করছে না ৷সে খুব ভালো করেই জানে আমি আপনার কাছে আছি ৷ এখন আপনাকে গেঞ্জি পড়তে হবে ৷আপনি আমার কাছে আসুন ৷আমি পড়িয়ে দিতেছি ৷
আবরারকে সুন্দর মতো কাপড় পড়িয়ে দিল রাই ৷আবরার আর কোনো কথা বলল না ৷ তারপর বিছানায় শুইয়ে দিয়ে বলল এখন চুপচাপ শুয়ে থাকুন আমি আসছি ৷
আবরার বলল কোথায় যাচ্ছো তুমি ৷তুমি এখন কোথাও যাবে না ৷এখানেই থাকো ৷
রাই হাসলো আবরার কথায় ৷রাই মুচকি হেসে বলল আমি শাওয়ার নিতে যাবো ৷আমি বাইরে কোথাও যাচ্ছি না ৷কিছুক্ষনের মধ্যেই চলে আসবো ৷
আবরার এখন নিজের কথায় নিজেরই গালে চড় মারতে ইচ্ছা করছে ৷ রাই নিজের ব্যাগ থেকে কাপড় বের করতে ছিল ৷হঠাৎ রাইয়ের মাথায় প্রচন্ড রকমের ব্যাথা শুরু হয় ৷ রাইয়ের চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে আস্তে আস্তে ৷রাই দৌড়ে ওয়াসরুমে চলে গেল ৷ওয়াসরুমে যেয়ে রাই নিজের মাথায় চোখে মুখে পানি দিচ্ছে ৷অপর দিকে রাই কেন দৌড়ে ওয়াসরুমে গেছে এটা আবরার বুঝতে পারলো না ৷আবরার রাইয়ের নাম ধরে ডেকেই চলেছে ৷রাই নিজের মাথা দুই হাতে চেপেঁ ধরে আছে ৷নাক থেকে আবারো রক্ত আসতে আরম্ভ করেছে ৷রাই বেসিন থেকে পানি নিয়ে নিজের নাক পরিষ্কার করে নিল ৷ওপাশ থেকে আবরার রাইকে ডেকেই চলেছে ৷রাইয়ের চোখে পানি টলমল করছে ৷রাই চোখের পানি মুছে নিল ৷ তারপর ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে এলো ৷
রাইকে দেখে আবরার বলল ওভাবে কেন ওয়াসরুমে গেলে ৷আর আমি তোমাকে কতক্ষন ধরে ডাকছি ৷তুমি কেন সারা দাও নি ৷কি হয়েছে ৷ তোমার চোখে মুখে হঠাৎ কেন পানির ঝাপটা দিয়েছ ৷
রাই নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলল মাথাটা একটু ব্যাথা করছিল ৷ তাই পানির ঝাপটা দিয়েছি ৷
বেশি খারাপ লাগছে তোমার ৷ডাক্তার ডাকতে বলবো আমি ৷
না না ডাক্তার লাগবে না ৷আমি ঠিক আছি ৷আপনি শুয়ে থাকুন ৷রাই নিজের ব্যাগের কাছে গেল ৷তারপর কিছু ঔষুধের পাতা বের করলো ৷ রাই ঔষুধ গুলো থেকে কয়েকটা ঔষুধ খেয়ে নিল ৷
আবরার আস্তে করে বলল এটা কিসের ঔষুধ তুমি খেয়েছো ৷ আমাকে দেখাও তো ৷
মাথা ব্যাথার ঔষুধ ৷আপনি হঠাৎ আমাকে নিয়ে এত আগ্রহ কেন প্রকাশ করছেন ৷আমাকে নিয়ে বেশি আগ্রহ দেখাবেন না ৷তাহলে কিন্তু কাদঁতে হবে ৷শুয়ে থাকুন ৷ রাই কথা গুলো বলে ওয়াসরুমে চলে গেল ৷
রাই শাওয়ার নিয়ে সোফায় শুয়ে আছে ৷রাই আবরার সাথে কথা বলছে না ৷শরীরটা দিনকে দিন শুধু খারাপই হচ্ছে ৷মাথা ব্যাথায় ঘাড় ছিড়ে যাচ্ছে রাইয়ের ৷
আমার যে খুধা লেগেছে সেই খবর কি কেউ রাখে নাকি ৷দুপুর যে হয়ে যাচ্ছছ সেই খবর তো কেউ রাখে না ৷আমাকে নিয়ে ভাবার কারো সময় আছে নাকি এই বাড়ীতে ৷বিদেশেই ভালো ছিলাম এত দিন ৷
প্রচন্ড মাথা ব্যাথার মাঝেও রাইয়ের খুব হাসি পেয়েছে ৷আবরার রাইকে খোঁচা মেরে কথা গুলো বলছে ৷ লোকটা কথা না বলে যে থাকতে পারছে না তা শিকার করবে না ৷ উল্টো দোষ রাইকেই দিয়ে চলেছে ৷রাই আস্তে করে উঠে বসলো ৷তারপর আবরার কাছে গিয়ে বসলো ৷
রাই মুচকি হেসে বলল আপনার খুব ক্ষুধা লেগেছে তাই না ৷
হুমম
আমি খাবার নিয়ে আসছি ৷আপনি একটু অপেক্ষা করুন রাই বলল ৷
এখন আর কষ্ট করে খাবার নিয়ে আসতে হবে না ৷ আমি পরে খাব ৷আমার মাথাটা ব্যাথা করছে ৷তুমি বরং একটু চুল গুলো টেনে দাও ৷
আবরারকে বড্ড অচেনা লাগে রাইয়ের কাছে ৷মানুষটা আসলে কি চায় রাই বোঝে না ৷লোকটা এই ভালো তো এই খারাপ ৷রাইয়ের ভাবনার মাঝেই আবরার বলল কি হলো দেবে না ৷
রাই আবরার মাথার কাছে বসলো ৷তারপর আবরার চুলের ভেতর নিজের নরম হাত গুলোর স্পর্শ দিল ৷রাই আবরার অনেক কাছে বসে আছে ৷আবরার চোখ রাইয়ের মাঝে স্থির ৷ঐ চোখের দিকে আবরার তাকাতে চায় না ৷ঐ চোখে আবরার মরন হবে যে কোনো সময় ৷না আবরার কোনো বেইমানের চোখে তাকাবে না ৷নিজের বেহায়া চোখকে ফিরিয়ে নিতে চেয়েও আবরার ব্যর্থ প্রতি মূহূর্তে ৷ রাইয়ের গলার ডান দিকে লালচে তিলটা আবরার চোখে নেশা সৃষ্টি করছে ৷রাইকে আবরার খুটিয়ে দেখতে চায় না ৷কিন্তু এই মেয়ে বড্ড ভয়ংকর ৷
দুপুর দুইটা বাজে ৷আবরার গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে ৷রাই নিচে যেয়ে খাবার ঘরে নিয়ে আসে ৷আবরার সব কিছু গুছিয়ে নিল রাই ৷ আবরার পাশে বসে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে রাই বলল
আপনি কেন ফিরে এলেন বলুন তো ৷বিশ্বাস করুন কিছু দিন আগেও আমি আপনাকে খুব করে চাইতাম ৷আমি রোজ নামাজে আল্লাহর কাছে আপনাকে চাইতাম ৷কিন্তু এখন আর চাই না ৷আমি চলে যাওয়ার পর আপনি আবার বিয়ে করবেন ৷এই কথাটা ভাবলে বড্ড কষ্ট হয় ৷আপনাকে ছেড়ে কিভাবে যাব বলুন তো ৷আমি তো আরো মায়ায় জরিয়ে যাচ্ছি ৷এই ভালোবাসা ছেড়ে আমি কিভাবে যাব ৷আপনি এসে আমার কাজটা যে বড্ড কঠিন করে দিলেন ৷আপনার নামের শিকলে আমি আটকে যাচ্ছি আবরার ৷
চলবে ৷