এটা গল্প হলেও পারতো পর্ব-১৭

0
213

#এটা গল্প হলেও পারতো
#পর্ব ১৭
ইতিমধ্যে কেটে গিয়েছে প্রায় মাস দেড়েক, সেদিন রাতের পর থেকে আর নতুন করে কিছু এগোয় নি, তার কারণ একটাই ওদের পরীক্ষা চলছিলো, ইচ্ছে করেই পরীক্ষা চলাকালীন অর্ক ওদের বিরক্ত করতে চায় নি। একজন শিক্ষক হিসেবে ওদের পরীক্ষাটা অনেক বেশি গুরুত্ব পেয়েছে ওর কাছে। গতকাল বিকেলে পরীক্ষা শেষের পর তিয়াসা ফোন করেছিলো ওকে,

স্যার, এক্সাম শেষ হয়েছে আজ, এবার বলুন কি করতে চান?

ওর এত বেশি উৎসাহের কারণ বোঝে অর্ক, ও রিয়াকে মনে মনে একটুও পছন্দ করে না আসলে। তাই এই সুযোগে কিছুটা হলেও জব্দ করতে চায়, তবে বন্ধুত্ব নষ্ট হবার ভয়ে নিজে থেকে কিছু করতে চায় না, পুরোটাই অর্কর ঘাড় দিয়ে হয়ে গেলেই ওর সুবিধা!!

সেদিক থেকে কৌশিক ছেলেটি যথেষ্টই ভালো, রিয়া ওকে সব কিছু মিথ্যে বলেছে জানার পরেও ও রিয়া কে বাঁচানোর চেষ্টাই করে গেছে সব সময়।

ও আমাকে এক্সকারশনে গিয়ে একটা কথা বলেছিলো স্যার, আমি এখন বুঝতে পারছি ও কেনো এতো ডিপ্রেসড থাকে সব সময়!!

কৌশিকের কথায় একটু চমকে ছিলো অর্ক,

ডিপ্রেসড থাকে? বেশ হাসিখুশিই তো! বুঝিনি তো কখনো!

বুঝবেন না স্যার, ও কখনো কারোর সঙ্গে শেয়ার করে না এসব! ও বলেছিলো ও যাদেরকে ভালোবাসে, তাদেরকে কেউ ওর থেকে আলাদা করে দেয়! ওর মা নাকি ওকে ঠাকুমা, পিসিদের থেকে আলাদা করে দিয়েছে! এখন বুঝছি শুধু ঠাকুমা, পিসি নয় বাবার কাছ থেকেও ওকে আলাদা করে দিয়েছে ওর মা!! আর সত্যি বলতে ওর দোষ তো একটাই, ও কিছু কথা নিজের মতো করে বানিয়ে বলেছে হয়ত, কিন্তু তাতে কার কি ক্ষতি হয়েছে ?

কৌশিকের গলার সহানুভূতির সুর সবাইকেই অবাক করেছিলো, অর্ক মনে মনেই একটু চিন্তায় পড়েছিলো, সত্যিই তো! মেয়েটার দোষ টা ঠিক কি? হয়ত কিছু মিথ্যে কথা বলেছে ও, তার জন্যে তিয়াসা যদি মুখ খুলতে রাজিও হয়, তাহলেও ও হয়তো রিয়াকে কিছু বকাবকি করতে পারে, এর বেশি কিছু না! কিন্তু সেটা বাদে আর কি করতে পারে ও। শুধু কিছু মিথ্যে কথা বলার জন্যে তো আর পুলিশে কমপ্লেইন ও করতে পারবে না!!তিয়াসা একটু বিরক্ত গলায় বলেছিলো,

মানে? কারোর ক্ষতি হয়নি বলে যা খুশি বানিয়ে বানিয়ে নিজের মতো করে বলবে? আমার সব সময় মনে হতো ও মিথ্যে বলে স্যার, ও যতটা বলে ততোটা বড়লোক ও নয়! জানেন তো, যখনই কোথাও ওর গাড়ি নিয়ে যাওয়ার কথা উঠতো ও কোনোভাবে সেটা কে এড়িয়ে যেতো, এই শান্তিনিকেতন যাওয়ার সময়েও এই নিয়ে আমাদের কতো মিথ্যে বলেছিলো! ও গাড়ি নিয়ে গেলে ওর বাবা নাকি জেনে যাবে! এখন তো শুনছি বাবাই নাই, তার আবার রাগ!

তাতে কি? ট্রেনে গিয়ে কিছু কম আনন্দ হয়েছিলো নাকি? সবটাই তো আমিই অ্যারেঞ্জ করেছিলাম, শুধু কন্ট্রিবিউট করা ছাড়া আর কিই বা করেছিস তুই?

কৌশিক রাগের গলায় বলছিলো, অনির্বাণ তাড়াতাড়ি কথা ঘুরিয়ে দিয়েছিলো,

আরে ছাড় না! কি লাভ ওসব পুরনো কথা তুলে, নিজেদের মধ্যে গন্ডগোল করিস না! আর ঘোরা তো হয়ে গেছে কবেই!

কৌশিক থামে নি, রীতিমত উত্তেজিত গলায় বলেছিলো,

কথাটা লাভ, লোকসানের নয়, কথাটা অন্য জায়গায়, কি হয়েছে যদি ট্রেনেই গিয়েছি? গাড়ি তো তোরও ছিলো, তোর বাবা তো সত্যিই বড়লোক, তো তুই তোর গাড়ি নিয়ে যাসনি কেনো তখন? তিয়াসা বারণ করেছিলো, তাই তো?

এবার তিয়াসা উত্তেজিত হয়েছিলো, অর্কর উপস্থিতি সম্পূর্ন অগ্রাহ্য করে বলেছিলো,

তুই হটাৎ করে এর সঙ্গে আমাকে জড়িয়ে ফেলছিস কেনো?আমি যা বলি অনির্বাণ তাই করে নাকি? আর তুই তাহলে কি করিস? রিয়াকে যাতে গাড়ি নিয়ে যেতে না বলি আমরা তাই তো তুই নিজে আগ বাড়িয়ে দায়িত্ব নিয়ে নিলি সেদিন! কিছু বুঝি না ভাবিস নাকি! আজ পর্যন্ত তো কখনো কোনো দায়িত্ব নিতে দেখিনি তোকে!

দুজন কে তর্কে জড়িয়ে পড়তে দেখে শেষ পর্যন্ত অর্ক ইন্টারফেয়ার করেছিলো, কৌশিক কে নরম গলায় বলেছিলো,

এতো উত্তেজিত হয়ে পড়ছ কেনো? এগুলো খুব সাধারণ কথা, হয়ত তুমি ঠিকই বলেছো ওর মিথ্যে কথাতে কারো কোনো ক্ষতি হয় নি। কিন্তু ভেবে দেখো, এই হ্যাবিট টা তো ভালো নয়, আজ ক্ষতি হয়নি বলেই যে কাল হবে না, এরকম কোনো কথা আছে নাকি! মিথ্যে বলার অভ্যাসটাই খারাপ, আর তুমি একটা শিক্ষিত ছেলে হয়ে এটা কে সাপোর্ট করছো!

না, স্যার সাপোর্ট করছি না, আসলে তিয়াসা ওই ভাবে বললো তো তাই বলে ফেলেছি। কথা হচ্ছিলো রিয়া কে নিয়ে, ও সেখানে আমাকে জড়িয়ে ফেললো। আমি যে ট্রেনের টিকিট কেটেছি রিয়ার গাড়ি নিয়ে যাওয়া আটকাতে এটা কি ও প্রমাণ করতে পারবে? অহেতুক বিতর্ক তৈরি করার কোনো প্রয়োজন আছে ওর? আর যদি তাই হতো, তাহলে অনির্বাণের গাড়ি নিয়েও তো যেতে পারতাম আমরা, ও ও তো ট্রেনে যেতেই চেয়েছিলো তখন!

একটু অভিযোগের সুরে বলেছিলো কৌশিক, এবার অনির্বাণ কথা বলেছিলো,

ভুল ভাবছিস ভাই, কেউ তোকে জড়িয়ে ফেলেনি! তুই নিজের মতো করে ভাবছিস এগুলো! আমার গাড়ি নিয়েই তো যাই আমরা বেশিরভাগ সময়, আগেও গিয়েছি, এখনো যাই, আমি কখনো কিছু বলেছি তাই নিয়ে?

তুই বলিসনি, তিয়াসাই তো তোর হয়ে বলে দিলো সবটা,

বিদ্রুপের গলায় বলেছিলো কৌশিক, অনির্বাণ হাত তুলেছিলো,

প্লিজ, সবটা না জেনে কমেন্ট করিস না, আগে বলতে দে আমাকে! যেদিন আমাদের শান্তিনিকেতন যাওয়ার কথা হলো, তার মাস খানেক আগে একদিন তোরা আমার বাড়িতে এসেছিলি মনে আছে? সেদিন ওখানে আমাদের দোকান থেকে কেউ কোনো একজন ভদ্রমহিলা কে ফোন করে কিছু আজেবাজে কথা বলেছিলো। ভদ্রমহিলা পরে বাবা কে ফোন করে পুলিশে কমপ্লেইন করবেন বলেছিলেন, বাবা খুব রেগে গিয়েছিলো, বোন করেছে ভেবে ওকে বকাবকিও করেছিলো। পরে বোন বলেছিলো ও নাকি মেয়েদের সবাইকেই নিচে নামতে দেখেছিলো। এবার বল, এই ঘটনা জানার পরে আর বাবা আমাকে গাড়ি নিয়ে যেতে দিতো শান্তিনিকেতন? কোন লজ্জায় গাড়ির চাবি চাইতাম?

রাত বেশ খানিকটা হয়েছিলো, রুমা টেবিলে খাবার সাজাতে শুরু করেছিলেন দেখে অদিতি বাইরে বেরিয়ে এসেছিলো তাঁকে সাহায্য করতে। টেবিলে খাবার সাজিয়ে রাখতে রাখতে ঘর থেকে আসা কথোপকথন সবটাই কানে আসছিলো ওদের, সমরেশ সোফায় বসেছিলেন, শুনতে পাচ্ছিলেন তিনিও, হটাৎ করেই অনির্বাণের কথায় চমকে উঠলো ওরা। দিতি হাতের থালা নামিয়ে রেখে প্রায় ছুটে ঘরে ঢুকে গিয়েছিলো, পেছন পেছন সমরেশ আর রুমাও।

তুমি কি বলছিলে? তোমাদের দোকান থেকে কেউ কোনো মহিলা কে ফোন করেছে?

ঘরে ঢুকে আসা অদিতির গলায় অনির্বাণ উঠে দাঁড়িয়েছিলো,

হ্যাঁ, ম্যাম! কিন্তু এটা অনেকদিন আগের কথা! আজকের নয়!

কতোদিন আগের কথা অনির্বাণ?

দিতি আর কিছু বলার আগেই উত্তেজিত গলায় প্রশ্ন করেছিলো অর্ক, অনির্বাণ ভ্রু কুঁচকে ভেবে বলেছিলো

শান্তিনিকেতনে যাওয়ারও মাস খানেক আগের কথা স্যার! কেনো বলুন তো?

তোমাদের দোকানের নম্বরটা কি?

জানতে চেয়েছিলেন সমরেশ, অদিতি আফসোস করছিলো,

ইস! একটুও যদি বুঝতে পারতাম এরকম হবে, তাহলে নম্বরটা সেভ করতাম! কেউ আমার কথা বিশ্বাস করে নি তখন!

আমি সেভ করেছিলাম, সাথী করতে বলেছিলো তখন, নম্বরটা বলো তো অনির্বাণ,

পকেট থেকে মোবাইলটা বার করতে করতে বলেছিলো অর্ক, অনির্বাণের বলা নম্বরের সঙ্গে মিলে গিয়েছিলো সেভ করা নম্বর। তিয়াসা, কৌশিক আর অনির্বাণ তিনজনেই কিছু বুঝতে না পেরে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো, তৎক্ষণাৎ অর্ক ভেবে নিয়েছিলো কৌশিকের সামনে কিছু বলবে না ও! মেয়েটা কে কোনো খবর পেয়ে সতর্ক হতে দেবেনা কিছুতেই! কৌশিক জানলেই ও সবটাই জেনে যাবে! ভেতরের উত্তেজনা দমিয়ে রেখে বলেছিলো,

না, কিছুনা! চলো খেয়ে নেবে! পরশু থেকে পরীক্ষা, এখন আর এসব সাধারণ বিষয় নিয়ে মাথা ঘামিয়ে লাভ নেই।

ওরা বেরিয়ে যাওয়ার পরেই সমরেশ উঠে এসেছিলেন,

সাথীর তারমানে কিছুটা হলেও সন্দেহ হয়েছিলো, তাই না? সেই জন্যেই বোধ হয় নম্বরটা সেভ করতে বলেছিলো তোমাকে,

অর্ক লজ্জিত হয়েছিলো, অদিতির দিকে তাকিয়ে নিচু গলায় বলেছিলো,

খুব খারাপ লাগছে! ভাবতেও পারিনি, মেয়েটা এরকম কোনো কাজ করতে পারে! কোনোদিনও সেই ভাবে কড়া হয়ে মেলামেশা করিনি স্টুডেন্টদের সঙ্গে, বরাবর বন্ধুর মতোই মিশতে চেয়েছি! তার প্রতিদান যে এই ভাবে পাবো,কল্পনাও করিনি!

অর্কর মুখ দেখে খারাপ লেগেছিলো অদিতির নিজেরও, সেই সঙ্গে অভিমানও হয়েছিলো খুব, ওকে তখন একটুও বিশ্বাস করে নি অর্ক! ও কতো কষ্ট পেয়েছিলো তখন! রুমা এগিয়ে এসেছিলেন, ছেলের পিঠে হাত রেখে বলেছিলেন,

দোষ তোর নয়! দোষ তো তাদের, যারা তোর বন্ধুর মতো মেশা কে অন্য ভাবে নিয়ে এই সুযোগে অসভ্যতা করার চেষ্টা করছে। মন থেকে বার করে দে এসব, চল খেতে চল।

ওই জন্যেই তো নিজেদের মধ্যে স্বচ্ছতা রাখাটা জরুরি! তুমি সেটা কখনো বোঝনি। যদি তুমি নিজের দিকটা ঠিক রাখতে, এতো ক্যাজুয়াল না হতে, ফোন বন্ধ বা সাইলেন্ট করে রাখার মতো কাজগুলো দীর্ঘদিন ধরে না করতে, তাহলে কোনো বাইরের ফোন অদিতির বিশ্বাসে চিড় ধরাতে পারতো না। এই ছোটো ছোটো ব্যাপারগুলো কে ছোটো মনে হলেও এগুলোই কোনো কোনো সময় বড়ো বড়ো ব্যাপার হয়ে পড়ে। ভবিষ্যতে আশা করি তুমি সচেতন হবে এসব বিষয়ে,

পাশ থেকে বলেছিলেন সমরেশ, অর্ক মাথা নিচু করেছিলো।

বুঝতে পারছি সেটা এখন! সচেতন হবার কথা বলছো তুমি! আমার তো বিশ্বাস জিনিসটাই চলে গেলো, এরপরে তো শুধু তোমরা তিনজন ছাড়া আর কাউকে বিশ্বাস করতেও পারবো না কখনো! তুমি জানোনা বাবা, আমি কাউকে বোঝাতে পারছি না, আমার ঠিক কি রকম লাগছে!

অর্ক র মুখে দুঃখের ছাপ সবাইকেই কষ্ট দিয়েছিলো, সমরেশ উঠে পড়েছিলেন,

মানুষের ওপর বিশ্বাস হারানো পাপ! একজনের জন্যে তুমি সবাই কে অবিশ্বাস করতে পারোনা! চলো খেতে চলো!

সেদিন ওই প্রসঙ্গ চাপা পড়েছিলো এরপর, কিন্তু তিয়াসা যে যথেষ্টই বুদ্ধিমতি সেটা অর্ক বুঝেছিলো, যখন ও বাড়িতে ফিরে গিয়েই রাতে অর্ক কে ফোন করেছিলো। তখনই অর্ক বলেছিলো পরীক্ষা শেষ হলে সবটা আলোচনা করবে, সেই মতো কালকের কথার পর আজ ওদের জগু বাজারে দাঁড়াতে বলেছিলো কিন্তু কৌশিক কে না জানিয়ে!

জগু বাজারের ঠিক মুখে দাঁড়িয়ে অর্কর জন্যে অপেক্ষা করছিলো তিয়াসা আর অনির্বাণ, মেট্রো থেকে নেমে রাস্তাটা পেরিয়ে গিয়েই ওদের কে দেখতে পেলো ও আর অরিন্দম। ওদের দেখেই অনির্বাণ হাত তুললো,

স্যার, এদিকে!

গলির মধ্যে ঢুকে অরিন্দম হাত তুললো,

ওই হলুদ বাড়িটা,

কিই!

একসাথে বিস্ময় ছিটকে বেরোলো অনির্বাণ আর তিয়াসার গলায়। অর্ক কোনো কথা না বলেই বেলে হাত রাখলো, বেল বাজানোর কয়েক মিনিটের মধ্যেই দরজা খুলে বেরিয়ে এসেই চমকে গেলো রিয়া, কিন্তু সোজা চোখে কোনো প্রশ্ন না করে তাকিয়ে থাকলো ওদের দিকে। অর্ক অবাক হচ্ছিলো, মেয়েটার কি কোনো ভয় নেই!

কে এসেছে? খুলেছিস দরজা?

বলতে বলতে ততোক্ষনে বেরিয়ে এসেছেন সেদিনের ভদ্রমহিলা, অর্ক আর অরিন্দম দেখেই অবাক গলায় বললেন,

ওমা! আপনারা! কি ব্যাপার? আসুন আসুন, ভেতরে আসুন স্যার,

রিয়া তখনও দরজা আটকে দাঁড়িয়েছিলো, মহিলা বিরক্ত হলেন, চাপা গলায় বললেন,

এটা কি ধরনের অসভ্যতা! দরজা থেকে সরে যাও, ওনাদের ভেতরে আসতে দাও!

একটাও কথা না বলে দরজা থেকে রিয়া কে সরে যেতে দেখে অরিন্দম একটু নিচু গলায় বললো,

ব্যাপার কি বলতো! মেয়েটা কি সব জেনে গেছে নাকি! কিরকম নির্বিকার ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে দ্যাখ!

ওরা ভেতরে এসে বসলো, অতো লোকের বসার জায়গা না থাকায় অনির্বাণ দাঁড়িয়ে রইলো, একটু দূরে দেওয়ালে হেলান দিয়ে শক্ত মুখে দাঁড়িয়ে রইলো রিয়াও। ভদ্রমহিলা বিনীত গলায় বললেন,

কি হয়েছে স্যার? আমার মেয়ে কি কিছু করেছে?

অরিন্দম মাথা নাড়লো,

হ্যাঁ, ম্যাডাম, খুব খারাপ লাগছে বলতে তাও সরাসরিই বলছি, আপনার মেয়ে সম্পর্কে আমাদের কিছু অভিযোগ আছে। ও আমার বন্ধুর স্ত্রী কে কিছু এমন কথা বলেছে যেগুলো ওদের সম্পর্কে জটিলতা তৈরি করেছে। এরকম বেশ কিছুদিন ধরেই ঘটছিলো কিন্তু এর কোনো প্রমাণ আমাদের হাতে না থাকায় আমরা এটা নিয়ে এগোতে পারিনি। কিন্তু একটা ঘটনার প্রমাণ আমরা জোগাড় করতে পেরেছি বলেই আজ আপনার সামনে এসেছি। ও এই ছেলেটির দোকানের নম্বর থেকে ফোন করে আমার বন্ধুর স্ত্রী কে বেশ কিছু কথা বলেছে, যেগুলো আমরা পরে আপনাকে আলাদা করে বলবো,

অনির্বাণের দিকে আঙুল দেখিয়ে রিয়ার মা কে বললো অর্ক, ভদ্রমহিলা বিস্ফারিত চোখে তাকালেও, রিয়ার মুখের ভাবে কোনো পরিবর্তন এলো না। সে অনির্বাণের দিকে তাকিয়ে খুব ঠাণ্ডা গলায় কেটে কেটে বললো,

আমি তোর বাড়ি থেকে ম্যাম কে ফোন করেছি? তুই দেখেছিস?

অনির্বাণ একটু চুপ করে থেকে বললো,

আমার বোন দেখেছে!

কি দেখেছে তোর বোন? আমি ফোন করেছি?

অনির্বাণ মাথা নাড়লো,

হ্যাঁ,ও দেখেছে তোকে,

অর্ক মনে মনেই শঙ্কিত হচ্ছিলো, অনির্বাণ যে এটা বানিয়ে বলেছে সেটা রিয়া জানে নিশ্চয়ই! কারণ ও ফোন করার সময় যথেষ্ট সতর্ক থেকেই করেছে সবটা। মেয়েটা বেশ শক্ত মনের, একে ভাঙা মুশকিল!

আর কতো শত্রুতা করবি? তিয়াসার কথায় ওঠাবসা বন্ধ কর এবার! তোদের কোনো ক্ষতি করেছি আজ পর্যন্ত, যে অহেতুক আমাকে ফাঁসাতে চাইছিস! নিজের চরকায় তেল দে না,

অনির্বাণের দিকে সোজা তাকিয়ে তীক্ষ্ণ গলায় বললো রিয়া, অরিন্দম শেষ চেষ্টা করলো,

তুমি কি মিথ্যে বলো না রিয়া? কলেজে সবাই জানে তুমি তিনতলা বাড়িতে থাকো, তোমার বাড়িতে সিসিটিভি লাগানো আছে?

রিয়া মাথা নাড়লো,

না বলি না! এটা আমার বাড়ি না! এটা মায়ের বাড়ি! আমার বাড়িতে সি সি টি ভি লাগানো আছে, মা কে জিজ্ঞেস করুন না হয়!

অর্ক চমকে তাকালো, ভদ্রমহিলা মাথা নাড়লেন,

আমরা এখানে ভাড়া থাকি, আমার শ্বশুরবাড়ি সত্যি তিনতলা, সি সি টি ভি ও আছে!
ক্রমশ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here