#যে_গল্পের_নাম_ছিলনা পর্ব ৫
-Farhina Jannat
৫.
পরদিন সকাল।
দরজা খোলার শব্দে ভাবনার জগত থেকে ফিরে এল সিদ্রা। লোকটা যেন এই ভোরবেলা ওকে জেগে থাকতে দেখে অবাক হয়েছে। হ্যাঁ, জেগেই ছিল ও। তাহাজ্জুদের সময় উঠে আর না ঘুমানোর অভ্যাস সেই হিফজ পড়ার সময় থেকে। সেই নিয়মেই ভোররাতে ঘুম ভেঙেছে ওর।
কালকে চলে যাওয়ার পর লোকটা আর আসেনি। রাতে একবার খালা এসে ২টা শুকনা রুটি আর কি একটা শাক ভাজি দিয়ে গেছিল। বিনাবাক্যব্যয়ে পানি দিয়ে গিলে খেয়ে নিয়েছে। মুক্তি পেতে হলে বেঁচে থাকতে হবে। না খেয়ে শরীর দুর্বল করে লাভ নেই, লোকটা ওকে এত সহজে ছাড়বে বলে মনে হচ্ছেনা।
কিন্তু লোকটার উদ্দেশ্যই তো বুঝতে পারছিনা, বিছানায় শুয়ে ভাবছিল সিদ্রা। নোংরা কোন উদ্দেশ্য থাকলে তো প্রথমদিনই পরিষ্কার হয়ে যেত। কিন্তু লোকটা অপরাধের শাস্তি দেয়ার কথা বলছে। আর যে নোংরা কথাগুলো ওর সম্পর্কে বলছে, সেগুলো ও করেনি। তাহলে কি লোকটা সাইকো টাইপ কিছু? অনেক বইয়ে যেমন লেখা থাকে…. ধুর! কিচ্ছু বুঝতে পারছিনা।
জংগলের ভেতর এরকম একটা ঘরে ভয়ে ঘুম আসার কথা না, কিন্তু লোকটার কথা আর ওর ভাগ্যের কথা ভেবে কাঁদতে কাঁদতে কখন যেন ঘুমিয়ে গেছিল ও।
এখন ও বসে বসে চিন্তা করছিল, ও কি করতে পারে। আমার সামনে দুইটা পথ খোলা আছে, ভাবল ও। এক, লোকটাকে বোঝানো যে উনি ভুল করছেন। দুই, পালিয়ে যাওয়া। এমন সময়ই লোকটা এসেছে।
লোকটাকে দেখেই অভ্যাসবশত স্কার্ফ টেনে মুখ ঢাকল সিদ্রা। সেটা দেখে লোকটার কি হাসি। যেন হাসতে হাসতে পেট ফেটে যাচ্ছে উনার। কিছুটা বিরক্তি আর কিছুটা ভয়ে চোখ নামিয়ে ফেলল সিদ্রা।
“ওরে ঢং!” হা হা হা, “যাকগে, রান্নাবান্না জানিস কিছু?” হাসি থামিয়ে প্রশ্ন করল লোকটা।
“কেন? আপনি জেনে কি করবেন?” মুখ দিয়ে কথাটা যেন অটোমেটিক বের হয়ে গেল।
“ছেলেভোলানো ছাড়া তোর আর কি কি গুণ আছে, জানতে হবেনা?”
“আপনাকে আমি অনেকবার বলেছি, আমি ওইরকম মেয়ে না। আপনি কেন বুঝতে চাইছেন না?” রেগে গেল সিদ্রা।
“কারণ আমি জানি তুই কেমন মেয়ে, তোর মত মুখোশধারী শয়তানের কথা বিশ্বাস করার কোন কারণ নাই আমার”
“ইন্নাল্লাহা মায়াস সবিরিন(নিশ্চয় আল্লাহ্ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন), ইয়া আল্লাহ্! আমাকে ধৈর্য দাও” বিড়বিড় করে বলল সিদ্রা। এই সাতসকালে লোকটার সাথে তর্ক করে মাইর খেতে ইচ্ছে করছেনা।
“কি বললি?”
“আমি কিভাবে বললে আপনি বিশ্বাস করবেন যে আমি সত্যি বলছি?”
“করবোনা, বলতে বলতে মুখে ফেনা উঠিয়ে ফেললেও করবনা। সো, সে চেষ্টা না করে আমার কথা শুনে চল, তাতেই তোর ভাল হবে।”
“আর যদি না শুনি?”
মুখ বাঁকিয়ে হাসল লোকটা, “চেষ্টা করে দেখতে পারিস। কালকের চড়গুলা জাস্ট ডেমো ছিল। আমি যে কি কি করতে পারি, তোর কোন ধারণা নাই। তুই যত কষ্ট পাবি, আমি তত শান্তি পাব” সিদ্রা কি বলবে বুঝতে পারছেনা। এই লোকটা আসলেই পাগল মনে হচ্ছে। কিন্তু আমি হাল ছাড়বো না। আবার কিছু বলতে যাচ্ছিল ও, কিন্তু লোকটা থামিয়ে দিল।
“হ্যাঁ, যেটা জিজ্ঞেস করছিলাম। রান্না করতে পারিস?” আবার বলল লোকটা। ডানে বামে মাথা নাড়ল সিদ্রা।
“কিছুই পারিসনা?” অবাক হল যেন লোকটা।
“ভাত, আলু ভর্তা, চা আর নুডলস। আর কিছু স্পেশাল আইটেম পারি। রেগুলার তরকারী, মাছ, গোস্ত এসব রান্না করিনি কখনো।”
“এতকিছু পারিস!” হা হা হা “তোর রান্নার গুণ শুনে তো আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম! স্পেশাল আইটেম পরে খাওয়া যাবে। যা, চা বানিয়ে আন আমার জন্য। এরপর দুপুরের রান্না করবি”
“আমি রান্না করব? কেন?”
“আমি বলেছি তাই” দাঁত কিড়মিড় করে বলল লোকটা।
“আমি পারবো না। আমি আপনার কোন কথা শুনবো না। আপনি আমাকে বাসায় রেখে আসুন”
“শুনবিনা?” এগিয়ে এসে স্কার্ফ এর উপর দিয়েই চুলের মুঠি ধরল লোকটা।
“আয়ায়ায়ায়া…… লাগছে, ছাড়েন বলছি” আরো জোরে টান দিল লোকটা। স্কার্ফটা খুলে গেল, সাথে খোপা করা চুলগুলোও। তাতে লোকটার আরো সুবিধা হল। চুলের গোছা ধরে টেনে বিছানা থেকে নামাল। সিদ্রা ব্যাথায় সমানে আর্তনাদ করছে, ছাড়েন ছাড়েন, লাগছে আমার বলছে, কিন্তু কোন ভ্রুক্ষেপ নেই লোকটার। একইভাবে হিড়হিড় করে টানতে টানতে বাইরে চুলার কাছে এনে ঝটকা মেরে ছেড়ে দিল। মুখ থুবড়ে পড়ল ও মাটির চুলার ওপর। মুখে নোনতা স্বাদে বুঝলো, ঠোঁট বা জিভ কিছু একটা কেটেছে। কান্না করে দিল সিদ্রা। কি দোষ করেছি আমি, কেন এসব হচ্ছে আমার সাথে। আল্লাহ্! এটা যেন একটা দুঃস্বপ্ন হয়, এখনি যেন ঘুমটা ভেঙে যায়।
খালা এসে ওকে হাত ধরে টেনে উঠাল, বিন্দুমাত্র মায়া বা সহানুভূতি দেখালনা। যেন ঠোঁট গড়িয়ে রক্ত পড়া খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। চাপাতি আর চিনির বয়াম এনে ঠক করে ওর সামনে রাখল, একটা ছোট পাতিলও এনে দিল।
বাধ্য হয়েই ড্রাম থেকে পানি নিয়ে চুলায় বসাল সিদ্রা। কিন্তু বিপত্তি ঘটল চুলা ধরাতে গিয়ে। চুলা কিছুতেই জ্বলেনা, খালি ধোঁয়া উঠে। ধোঁয়ায় কাশতে কাশতে নাক-চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে নাজেহাল অবস্থা হল ওর।
আগে খেয়াল করেনি সিদ্রা, বারান্দার অন্য দিকে একটা টেবিল আর দুইটা চেয়ার রাখা আছে। তারই একটাতে পায়ের ওপর পা তুলে বসে লোকটা মজা দেখছে। ও তাকাতেই এমনভাবে হেসে উঠলো, যেন কোন কমেডি সিন এসেছে টিভির পর্দায়। মেজাজ খারাপ হয়ে গেল সিদ্রার। জিদ উঠে গেল, চুলা আমি ধরিয়েই ছাড়বো। বেশ খানিকক্ষণ চেষ্টার পর অবশেষে চুলা জ্বলল। সিদ্রার মনে হল ও অসাধ্য সাধন করেছে।
হঠাৎ মাথায় একটা শয়তানি বুদ্ধি খেলে গেল সিদ্রার। চা খাবে, না? খাওয়াচ্ছি আমি। ইচ্ছে করে এক কাপ চায়ের পানিতে ৫ চামচ চা পাতি দিয়ে দিল ও। আড়চোখে দেখল লোকটা বা মহিলা, কেউ খেয়াল করেনি। এই চা খেয়ে লোকটার চেহারা কেমন হবে সেটা ভাবতেই হাসি পেল ওর।
Sidrake keno dhore eneche bujhte parchina