#যে_গল্পের_নাম_ছিলনা পর্ব ২
-Farhina Jannat
২.
“কি বলছেন এগুলো আপনি? সারাজীবন মানে?”
“অত স্বপ্ন দেখার কিছু নাই। ভাবিসনা যে তোকে আমি ভালবেসে বিয়ে করার জন্য তুলে এনেছি। তোর মত মেয়েকে ভালবাসার থেকে একটা সাপকে ভালবাসাও ভাল।”
নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছেনা সিদ্রা। একটা অপরিচিত লোক তার সাথে তুইতোকারি করছে! কিন্তু কেন?
“আপনি এভাবে কথা বলছেন কেন? আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে আমি কোন অপরাধ করেছি। কি করেছি আমি?”
“তুই জানিসনা তুই কি করেছিস? ন্যাকামো হচ্ছে আমার সাথে? ওই ন্যাকামি দিয়ে তুই তোর প্রেমিকদের ভুলাতে পারবি, আমাকে না”
লোকটার কি মাথা খারাপ নাকি! যে কোনদিন কোন ছেলের সাথে প্রয়োজন ছাড়া কথাই বলেনা, তার আবার প্রেমিক!!
“আপনি এসব কি বলছেন, আমি সত্যি কিছু বুঝতে পারছিনা। কিসের প্রেমিক!?
লোকটা যেন ধৈর্য হারিয়ে ফেলল। এগিয়ে এসে ঠাস করে একটা চড় মারল ওর গালে।
“ঢং! ফিডার খাস নাকি!! রাতদিন ছেলেদের সাথে প্রেম করে বেড়িয়ে জিজ্ঞেস করা হচ্ছে কিসের প্রেমিক!!! যেন দুধে ধোয়া তুলসি পাতা। আমি মিথ্যা কথা একদম পছন্দ করিনা। একেকটা মিথ্যা বলবি তো এভাবেই চড় খাবি” চোখ-মুখ দিয়ে যেন আগুন বের হচ্ছে লোকটার।
ঘটনার আকস্মিকতায় সিদ্রা যেন স্তব্ধ হয়ে গেল। ওর মনে হল ও একটা দুঃস্বপ্ন দেখছে। চোখ খুললেই দেখবে বোনের সাথে বিছানায় শুয়ে আছে। কিন্তু চোখটা যে কেন খুলছেনা, আর দেখতে চায়না ও স্বপ্নটা। লজ্জায় আর অপমানে দুচোখ ফেটে পানি বেরিয়ে এল।
“আবার কাঁদছিস! কাঁদ যত ইচ্ছা। কিন্তু ভাবিসনা তোর কান্না দেখে আমি গলে যাবো। অনেকজনকে ভুলিয়েছিস, আর যেন না পারিস, সেজন্যই তো ধরে নিয়ে এলাম। দেখি এবার, গাছগাছালি আর পশুপাখিদের কেমন ভোলাতে পারিস। কিন্তু ওরা মনে হয় তোর রূপ দেখে ভুলবেনা” হো হো করে হেসে উঠলো লোকটা।
আর সহ্য করতে পারলোনা সিদ্রা।
“চুপ করেন!” ফোঁফাতে ফোঁফাতে বলল, “তখন থেকে কিসব আজেবাজে কথা বলে যাচ্ছেন!! কার প্রেমিক, কিসের প্রেমিক। আমার কোন প্রেমিক ট্রেমিক নাই। আপনার কথার আগামাথা আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছিনা। আপনার কোথাও কোন ভুল হচ্ছে। আমি এমন মেয়ে নই।”
“নারে, আমার কোথাও কোন ভুল হয়নি।” ডান হাত দিয়ে ওর গালদুটো জোরে টিপে ধরলো লোকটা, ব্যাথায় কঁকিয়ে উঠলো ও।
“তুই যত না না করছিস, আমার বিশ্বাস ততই পাকা হচ্ছে যে আমি ঠিক মেয়েকেই তুলে এনেছি। এবার থাক এখানে, মিস সিদ্রাতুল মুনতাহা”
একদম চমকে গেল সিদ্রা। লোকটা ওর পুরো নাম ঠিক ঠিক বলেছে!
“তোর পাপের ঘড়া পূর্ণ হয়েছে, এবার সেই সব পাপের শাস্তি আমি তোকে দিব। এমন শাস্তি দিব যে তুই কল্পনাও করতে পারছিসনা”
“আপনি ভুল করছেন। আমি……… এই যে, শুনেন, আমার কথাটা শুনেন , এই যে……” ওর কথা শেষ হওয়ার আগেই লোকটা হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেল।
সিদ্রা যেন বোধশক্তি হারিয়ে ফেলেছে। মাথা কাজ করছেনা ওর। লোকটা অন্য কারো সাথে ওকে গুলিয়ে ফেলছে, নাকি লোকটা আসলে পাগল! কিসব আবোলতাবোল বকে যাচ্ছে। রাতদিন ছেলেদের সাথে প্রেম, রূপ দেখিয়ে ভোলানো, ছি!
পায়ে কারো হাতের ছোঁয়া পেতেই চিন্তাসূত্র ছিন্ন হল সিদ্রার। মহিলাটা ওর পায়ের বাঁধন খুলে দিচ্ছে। কিন্তু মহিলাটার চোখের দিকে চাইতেই চমকে উঠলো ও। একরাশ ঘৃণা নিয়ে তাকিয়ে আছে, যেন কোন নোংরা জিনিসে অনিচ্ছা সত্বেও হাত পড়েছে।
“আমাকে প্লিজ ছেড়ে দেন। বাসায় সবাই চিন্তা করছে। ওই লোকটা যা বলছে সেগুলা সত্যি না। আমি ভাল মেয়ে, ওইসব কিছুই আমি করিনি, করতে পারিনা। আমাকে বিশ্বাস করেন প্লিজ।” মহিলাটার হাত ধরতে গেল ও।
এক ঝটকায় হাত সরিয়ে অগ্নিদৃষ্টি হানল মহিলা ওর দিকে। তারপর ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। খাট থেকে নামল সিদ্রা। অনেক্ষণ একভাবে থাকায় পায়ে সাড় পেতে সময় লাগল। নিচে ওর স্কার্ফটা পড়ে থাকতে দেখল। উঠিয়ে নিয়ে মাথায় পরল সেটা। ঘর থেকে বেরোতে যাবে, মহিলাটা আবার ঢুকল, হাতে একটা থালা। ও বের হতে যাচ্ছিল বুঝতে পেরে রেগে গেল মহিলা। ওর হাত ধরে ঘরের ভেতরে টানতে লাগল। হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করল সিদ্রা, বারবার ছেড়ে দেয়ার জন্য কাকুতিমিনতি করতে লাগল। মহিলা এক ঝটকা টানে ওকে বিছানায় ফেলল। হাতের থালাটা বিছানায় রেখে হাত নেড়ে আর চোখ ঘুরিয়ে কি জানি বোঝাতে চাইল ওকে।
“আপনি কথা বলছেননা কেন? বোবা নাকি!?” মহিলাটা যেন মুহূর্তের জন্য আহত হল ওর কথা শুনে। হাত নেড়ে আবার ইশারা করল আগের মত। মাঝে একবার দড়ি দিয়ে হাত বাঁধার মতও করল। এবার বুঝল সিদ্রা, ঘর থেকে বের হতে চাইলে ওকে বেঁধে রাখা হবে। মহিলা তার মানে আসলেই বোবা, কিন্তু কালা না।
তবে মহিলা ওর বোঝা না বোঝার ধার ধারলনা। অবজ্ঞার একটা দৃষ্টি হেনে মুখ ঘুরিয়ে দরজা টেনে বের হয়ে গেল। ছুটে গেল ও, দরজা ধাক্কাতে লাগল জোরে জোরে, “আমার কথা শুনেন। প্লিজ আমাকে ছেড়ে দেন। আমি কিছু করিনি, প্লিজ আমাকে বিশ্বাস করেন, প্লিজ। খালা, আমার কথা শুনেন খালা, আমাকে প্লিজ বের হতে দেন। আমাকে বাসায় যেতে দেন, প্লিজ। আমি কিছু করিনি, আমাকে বিশ্বাস করেন।”
বাইরে তালা লাগানোর শব্দ শোনা গেল। তবু থামলনা সিদ্রা, দরজা ধাক্কাতেই থাকল, সাথে মুখে অনুনয় বিনয় তো আছেই। ওর মনে হচ্ছিল, ও রিকোয়েস্ট করলে, বুঝিয়ে বললেই হয়ত ওর কথা বিশ্বাস করবে। কিন্তু কেউ আসলনা। কিছুক্ষনের মধ্যেই ক্লান্ত হয়ে গেল সিদ্রা। তাও দরজার পাশে বসে গিয়ে আস্তে আস্তে ক্ষীণ স্বরে ডাকতেই থাকল। যখন বুঝল ওর ডাক শোনার মত কেউ নেই, তখন বাধ্য হয়ে থেমে গেল। আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলোনা ও, হাঁটুর ভেতর মুখ গুঁজে ডুকরে কেঁদে উঠল। একটু পর মাথা উঠিয়ে চিৎকার করে উঠলো,
“আল্লাহ্! আল্লাহ্ গো!! এসব কি হচ্ছে আল্লাহ!!! আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছি না আল্লাহ, তুমি আমাকে বাঁচাও, এ বিপদ থেকে আমাকে রক্ষা কর তুমি, আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছিনা” এভাবে আল্লাহ্কে ডেকে ডেকে কেঁদে চলল সিদ্রা। একটু পরে আব্বু আম্মুর কথা মনে পড়ল, তাতে কান্না আরো বেড়ে গেল ওর। কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত হয়ে একসময় ঘুমিয়ে পড়ল।
Onek din dhore khujchilam. Thanks.