#যে_গল্পের_নাম_ছিলনা পর্ব ৩

1
609

#যে_গল্পের_নাম_ছিলনা পর্ব ৩
-Farhina Jannat

৩.
এবার সিদ্রার ঘুম ভাঙ্গল লাত্থি আর চিৎকারে। কেউ একজন ক্রমাগত লাত্থি মারছে ওকে। সাথে বলছে, “ওঠ! তোকে কি আমি আরামে ঘুমানোর জন্য এনেছি। এ অবস্থাতেও তোর ঘুম আসছে, না?”

শোয়া থেকে তাড়াতাড়ি উঠে গুটিসুটি মেরে দেয়ালের দিকে সেঁটে গেল সিদ্রা। লোকটা ওর মুখের সামনে উবু হয়ে ওর গালদুটো ডান হাত দিয়ে টিপে ধরল।

“তা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কাকে স্বপ্নে দেখছিলি? আমিও একটু শুনি”

আ! করে অস্ফুট আর্তনাদ করে হাতটা ছাড়ানোর চেষ্টা করল ও, পারলো না। লোকটা এবার মুখ ছেড়ে খাটের ওপর থালার দিকে তাকাল। তারপর বলল, “খাসনি কেন?”

“আমি খাবনা, আমি বাসায় যাব”

হো হো করে হেসে উঠলো লোকটা।
“বাসায় যাবি? এটাই এখন থেকে তোর বাসা। চুপচাপ খেয়ে নে”

“আমি খাবনা” আরো শক্ত কন্ঠে বলল সিদ্রা। নিজের কন্ঠস্বরে নিজেই চমকে গেল ও।

“শোন, ভাল কথা বলছি, যখন খেতে দিব, চুপচাপ খেয়ে নিবি। আমি অবাধ্যতা পছন্দ করিনা”

থালাটা ঠেলে দিল ওর দিকে। অবাক হল সিদ্রা, ওর ক্ষুধা লেগেছে। কিন্তু এমন অবস্থায় মানুষের ক্ষুধা কিভাবে লাগতে পারে, সেটাই ও বুঝতে পারলনা। লাগুক ক্ষুধা, খাবনা আমি, স্থির করল ও।

“আমি খাবোনা। আমি বাসায় যাবো। আমাকে ছেড়ে দেন। আপনি কেন ধরে এনেছেন আমাকে?”

“এক কথা বারবার বলতে ভাল লাগেনা আমার। বলেছি তো, কথা বলার অনেক সময় পাবি। এখন আগে খা।“ আবার রেগে যাচ্ছে লোকটা। “নাকি খাবার পছন্দ হয়নি, পোলাও বিরিয়ানি দিতে হবে নাকি তোকে?”
সিদ্রা এবার থালার দিকে নজর দিল। বাসি পান্তা, অর্ধেকটা পেঁয়াজ আর একটা কাঁচামরিচ। পান্তার টক গন্ধ এখান থেকেই পাচ্ছে।

“আমি খাবো না। পোলাও-বিরিয়ানি দিলেও না। আমাকে ছেড়ে না দিলে আমি কিছুতেই খাবো না।“ জেদ চেপে গেছে ওর।

“খাবিনা? দেখি তুই কেমনে না খাস।“ ডাক ছাড়ল লোকটা, “খালা, ও খালা!”

খালা ঘরে ঢুকতেই কৌতুকের স্বরে বলল, “আমাদের সম্মানিত অতিথিকে একটু আপ্যায়ন করেন, খেতে চাইছেনা যে”

মহিলা মাথা ঝাঁকিয়ে ওর সামনে বসল, থালা হাতে নিয়ে ভাত মাখল। লোকমা তুলতেই ও দু হাত দিয়ে পেছনে হটল। মহিলা বাম হাত দিয়ে ওর গাল ধরে মুখ ফাঁক করার চেষ্টা করতেই ও দুহাত দিয়ে মহিলার হাত ছুটানোর চেষ্টা করতে লাগল। ওদের ধস্তাধস্তি দেখে লোকটা এসে এক হাত দিয়ে ওর দুহাত পেছনে নিয়ে ধরে রাখল, আর আরেক হাতে চুলের মুঠি ধরল, আর মহিলা ওর মুখ ফাঁক করে একগাদা ভাত ঠুসে দিল। হঠাৎ করে টক ভাত গলায় চলে যাওয়ায় ওয়াক করে উঠল ও। থু করে ফেলে দেয়ার চেষ্টা করতেই দ্বিতীয়বারের মত চড় খেল সিদ্রা। এবারেরটা এত জোরে ছিল যে, ওর কান ঝাঁ ঝঁ করতে লাগল। মাথাটাও বোঁ করে ঘুরে উঠলো। রাগের চোটে থু করে ফেলে দিল ভাতগুলা। সাথে সাথে লোকটা ওর দুইগালে কয়টা যে চড় মারল, ও নিজেও বলতে পারবেনা। দুর্বল শরীর আর নিতে পারলনা, জ্ঞান হারাল সিদ্রা।

সিদ্রাকে নিস্তেজ হয়ে যেতে দেখে হুঁশ ফিরল যেন লোকটার। ছেড়ে দিল চুলের মুঠি আর হাত। খালাকে বলল পানি আনতে। পানি আনলে পুরো জগের পানি সিদ্রার মুখের ওপর ঢেলে দিল। জ্ঞান ফিরতেই হকচকিয়ে গেল ও। এদিক ওদিক তাকিয়ে পুরো পরিস্থিতি বুঝতে খানিকটা সময় লাগল ওর।

লোকটা খালাকে আবার ইশারা করল। খালা এসে ওর মুখে আবার ভাত ঠুসে দিল। আর কোন জোরজবরদস্তি করলনা সিদ্রা, চুপচাপ গিলে ফেলল। আসলে ইচ্ছা না থাকলেও জোর করার মত শক্তি অবশিষ্ট নেই।

পান্তাভাত এর আগে সিদ্রা কখনো খায়নি, তা না। উল্টো আলুভাজি আর মুরগির গোস্ত দিয়ে পান্তা ওর খুবই পছন্দের। বাসায় রাতের খাবারে এ দুটো আইটেমের কোনটা থাকলেই ও আম্মুর কাছে পান্তাভাত রাখার জন্য বায়না করে। কিন্তু এত দুর্গন্ধযুক্ত আর টক পান্তা, মানুষ কেন, কোন পশুও মনে হয় খেতে পারবেনা। অনেক কষ্টে বমি আটকে রাখল সিদ্রা।

আম্মুর কথা মনে পড়তেই চোখ দিয়ে অটোমেটিক পানি বের হয়ে গেল। কারো হাতে ভাত খাইয়ে নিতে সিদ্রা খুবই ভালবাসে। আম্মুর কাছে মাঝেমাঝেই খাইয়ে নেয়ার আবদার করত, আর সবসময় বোনটাও এসে তাল মেলাত। অথচ আজকে ও না চাইতেই ওকে কেউ খাইয়ে দিচ্ছে, কিন্তু দুইটার মধ্যে কতইনা তফাৎ। ওইটাতে থাকে আদর-ভালবাসা, আর এ মহিলার চোখে ঘৃণা ছাড়া আর কিছু দেখতে পাচ্ছেনা।

লোকটার দিকে তাকিয়ে মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। বিছানায় বসে এমনভাবে তাকিয়ে আছে যেন কোন সার্কাস পার্টি হচ্ছে, আর সেটা দেখে উনি খুব মজা পাচ্ছেন। একটা ঘুষি মেরে লোকটার নাকমুখ ফাটিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে, কিন্তু ও জানে, ওর দ্বারা এটা করা এককথায় অসম্ভব!

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here