অন্ধকার মানব পর্ব-১৩

0
358

#অন্ধকার_মানব(The unpredictable love)
#পর্ব_১৩

লিখা✍️তাজরিয়ান খান তানভি

“এখন কেমন আছেন আঙ্কেল?”

“ভালো।”

“থ্যাংক গড।সেদিন আরেকটু দেরি হলে তো ভয়ানক কিছু হয়ে যেতো।”

“হয়তো।কিন্তু আমি জানতাম এমন কিছুই হবে।উপর ওয়ালার শুকরিয়া যে আমি বেচে আছি।নয়তো সেদিন মৃত্যুর মুখ থেকে ফেরার কোনো উপায় ই ছিল না।”

“জানেন তো,,রাখে আল্লাহ মারে কে।
আর সবচেয়ে বড় কথা,এই দুনিয়াতে যদি ভক্ষক থাকে তাহলে রক্ষক ও আছে।”

“কিন্তু,,,,তুমি আসার আগে সেখানে কেউ তো ছিল।অন্ধকার থাকার কারনে আমি স্পষ্ট তাকে দেখতে পাইনি।”

“কিন্তু আমি তো কাউকে দেখিনি।”
ইরাজ জোর গলায় বলেন,

“আমি নিশ্চিত কেউ তো ছিল সেখানে।আর সে ইতাফ থেকেও শক্তিশালী।কিন্তু ইতাফ তো মানুষ নয়,আর তার সাথে লড়ার ক্ষমতা কোনো সাধারণ মানুষের নেই।তাহলে কি আরো কেউ আছে,,,,,,
ইরাজ ইরাম ঘাবড়ে উঠে।

রিশাল তাকে আশ্বস্ত করে,
“ডোন্ট ওয়ারি আঙ্কেল।আমি থাকতে স্পাইসির কোনো ক্ষতি হতে দিবো না।”

“আই নো,মাই সন।তুমি ই তো আমার শেষ ভরসা।”

“ভালোই হয়েছে আপনি আনটি আর স্পাইসি কে অ্যাকসিডেন্ট এর কথা বলেছেন,নয়তো তারা আরো চিন্তিত হয়ে যেতো।”

“হুম”।

দ্বিধা মোবাইল হাতে পুরো ঘর পায়চারি করছে।সকাল হতে রিপ্তি কে কল করেই যাচ্ছে কিন্তু ও রিসিভ করছে না।
“এতো চিন্তিত কি নিয়ে?”
দ্বিধার রুমে ঢুকেই ওর বিছানায় শরীর এলিয়ে দেয়।মাথার নিচে দুহাত দিয়ে ওকে প্রশ্ন করে।
দ্বিধা ওর পাশে বসে মোবাইল টা ওর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে–

“দেখতো বিশবার কল করলাম রিপ্তি রিসিভ ই করছে না”।
দ্বিধা চোখ বড় করে আবার বলে-
“ওর কিছু হয়নি তো??”

রিশাল উঠে বসে-
“তুমি এতো অল্প তে ঘাবড়ে যাও কেন বলোতো??

দ্বিধা রিশাল এর হাত টেনে রুম থেকে বেরিয়ে আসে।সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে রিশাল প্রশ্ন করে–

“আরে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো??”

দ্বিধা মুখ ঘুরিয়ে বলে–
“রিপ্তিদের বাসায়।”

আমেরিকা যাকে মানুষ স্বপ্নের দেশ হিসেবেই মানে।একে ইউনাইটেড স্টেট বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেও জানা যায়।প্রায় পঞ্চাশটি রাজ্য নিয়ে এটি গঠিত এবং এটি উত্তর আমেরিকা পর্যন্ত বিস্তৃত।এর বৃহত্তম রাজধানী
নিউইয়র্ক আটলান্টিক মহাসাগরের পাশেই অবস্থিত।
এর পঞ্চাশটি রাজ্যের একটি হলো
ক্যালিফর্নিয়া।এর শহর হলো লস অ্যাঞ্জেলেস,এটি প্রশান্ত মহাসাগরের সাথে অবস্থিত।এটি চলচ্চিত্র এবং টেলিভিশন শিল্পের কেন্দ্র।

এখানেই বাস করে ভ্যাম্পায়ার রাজ্য থেকে বিতাড়িত সাইকিক প্রজাতির ভ্যাম্পায়ার রা।
মল্লিকায় আলিয়া তাদের রাণী।ইশায়া ভ্যাম্পায়ার কিং এবং মল্লিকায় আলিয়ায় একমাত্র মেয়ে।গত আটশত বছর ধরে ইশায়া জাদ কে ভালোবাসে,কিন্তু জাদ ওকে একজন বন্ধুর চেয়ে বেশি কখনও ভাবে না।

পাচঁশত বছর আগে ঘটা এক ঘটনায় জাদ এর সাথে মল্লিকায় আলিয়ার সম্পর্ক পুরো সাপেনেউলে।মল্লিকায় আলিয়া তাই কখনো জাদ এর মুখোমুখি হয় না

কিন্তু মেয়েকে তিনি যথেষ্ট ভালোবাসেন।ইশায়া নিজের কষ্ট শেয়ার করতেই তার মায়ের কাছে এসেছে।মায়ের কোলে মাথা রেখে বলল–

“মম,উইল জাদ ইভার লাভ মি?”

“ইয়েস প্রিন্সেস।জাদ মাস্ট লাভ ইউ।”

“হোয়াই হি ডু দ্যাট উইথ মি?অ্যাম আই নট ওয়র্থী অফ হিম?”

“জাদ উইল ডিফিনেটলি লাভ ইউ।এজ সুন এজ দে রিটার্ন ফ্রম দেয়ার,ইউ এন্ড জাদ উইল গেট ম্যারিড।”

“ইফ আই ডোন্ট গেট হিম,আই ইউল রিয়েলি ডাই।”

“ডোন্ট ক্রাই প্রিন্সেস।আই এন্ড ইউর ফাদার অলওয়েজ উইথ ইউ।”
ইশায়া মায়ের কোলে শুয়ে চোখের পানি ফেলতে থাকে।

“কেনো এসেছিস এখানে?”

“তুই আমার কল কেন রিসিভ করছিস না?তোকে কতবার কল করলাম,,,,,,

“দরদ দেখাতে এসেছিস তাই না?(রাগে ওর দু চোখ বেয়ে পানি পরছে)

দ্বিধা ওর কাছে গিয়ে ওর হাত নিজের বাহুবন্ধনে নিয় বলল–
“সত্যি কর বলতো তোর কি হয়েছে?কেন এমন করছিস?”

“আর কি চাস তুই,সব ই তো কেড়ে নিয়েছিস।গত পাঁচ বছর ধরে প্রফেসর ইতাফ তোর পিছে ঘুর ঘুর করে।তুই কি ভেবেছিস তা কেউ জানে না?

রিপ্তি এরূপ কথায় দ্বিধা চিৎকার করে বলে–
“জাস্ট শাট আপ,রিপ্তি।তুই কি পাগল হয়ে গিয়েছিস।”

রিপ্তি হেসে উঠে–
“কেন,,,,সত্যি কথা সবসময় তেতো ই হয়।
রিপ্তি ওর গলা নিচু করে কান্না জড়ানো কন্ঠে বলে আবার বলে–
“আর কেউ না জানুক তুই তো জানতি আমি জাদ কে ভালোবাসি।তাহলে তুই কি করে পারলি এমন করতে?
কাল ক্যামিস্ট্রি ল্যাবে যা হয়েছে সব দেখেছি আমি।”

দ্বিধা বুঝতে পারলো সব।কিন্তু কি বলবে তা বুঝতে পারছে না।এইটা তো সত্যি যে জাদ এর প্রতি রিপ্তির দুর্বলতা আছে এইটা ও ভালো করেই জানে।কিন্তু জাদ তো রিপ্তি কে ভালোবাসে না।

“রিপ্তি,প্লিজ আমার কথা শোন,,,,

“তুই যা এখান থেকে।তোর কোনো কথা আমি শুনতে চাই না।”

“প্লিজ একবার আমার কথা শোন।
দ্বিধা রিপ্তির গায়ে হাত দিতেই ও এক থাপ্পড় মারে দ্বিধার গালে।

“রিপ্তি,,,,,,,,,,,,,,(চিৎকার দিয়ে উঠে রিশাল )

“তুমি চুপ থাকো রিশাল।আরে,,, তুমি তো ওর হাতের পুতুল।ও যা বলে তাতেই বিশ্বাস করো।
ওর তো এক পুরুষ হয় না।”কথায় আছে–
ঘুরে ঘুরে দ্বার
খুজে বেড়ায় ফাদ।
আর তোমরা তো সব ওর সেই ফাদেই পা দিয়েছো।

দ্বিধা ওর বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে।ও শুধু নিরবে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে।ও কোনোদিন ভাবতেও পারেনি রিপ্তি ওর সম্পর্কে এমন ভাবে।যাকে ও এতো ভালবাসতো আর আজ সে কিনা ওকে,,,,,

“অনেক বলেছো রিপ্তি।আর নয়।চলো স্পাইসি।”

রিশাল ওর হাত টেনে নিয়ে যায়।

রিপ্তি ওর ঘরে গিয়ে ওর কান্নার বেগ আরও বাড়িয়ে দেয়।আর বলে–
“আই অ্যাম সরি।
আই অ্যাম রিয়েলি সরি।”

দ্বিধা নিজের ঘরের দরজা বন্ধ করে বসে আছে।রিশাল অনেক ডেকেছে কিন্তু বাইরে আসেনি।এইটা ওর অভ্যাস কখনো মন খারাপ থাকলে ও একা থাকতেই পছন্দ করে।হঠাৎ দরজায় কড়াগাত পরে,
“মাই ডল,,বাইরে এসো।জাদ এসেছে তোমার সাথে দেখা করতে।

দ্বিধা দ্রুত দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে আসে।নিচে এসে দেখে জাদ ড্রয়িং রুমে বসে আছে।রিশাল ওর বিপরীত সোফায় বসে আছে।

“আপনি,,,,এতো রাতে??

“আপনাকে দেখতে ইচ্ছে হলো তাই।”

“আপনি আর কখনো এখানে আসবেন না।”
দ্বিধার চোখে অভিমান স্পষ্ট আর গলার স্বরের জড়তা বলে দিচ্ছে হয়তো অনেকক্ষন যাবত কেদেছে।

জাদ উঠে দ্বিধার একদম কাছে চলে আসে।কোনো রকম ভনিতা ছাড়াই বলে–
“যদি আপনি বলেন,তাহলে আর কখনই আসবো না।”

জাদ এর কথায় দ্বিধার বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠে।ও নিজেকে সংযত করে বলে–
“হ্যাঁ,হ্যা,,,আর কখনই আসবেন না আপনি।আর কখনো না।”
বলেই সেখান থেকে চলে যায়।
পারিজা ইরাম দাঁড়িয়ে সবই দেখছিলেন।কিন্তু কিছুই বুঝতে পারছেন না।
জাদ রিশাল এর সামনে এসে হাত বাড়িয়ে বলে–

“হাই”।
রিশাল নিজের এক হাত অন্য হাত দিয়ে চেপে ধরে আছে।
পারিজা ইরাম ভাবছে,, এ কেমন ছেলেরে!!ওকে বলল চলে যেতে আর সে কিনা হ্যান্ডশেক করার জন্য দাঁড়িয়ে আছে।

“কি হলো রিশাল??হ্যান্ডশেক করতে ভয় হচ্ছে।

জাদ এর কথায় রিশাল এর মুখ চুপষে যায়।ও বলে–
“তুমি এখন আসতে পারো।”

জাদ ওর ওষ্ঠদ্বয় প্রশ্বস্ত করে।

এ হাসির মানে রিশাল এর অজানা নয়।কিন্তু ও যা করেছে ওর স্পাইসির ভালোর জন্যই করেছে।

এক চিলতে সুখের জন্য সারাজীবনের দুঃখকে বরন করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়।

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here