বাল্যবিবাহ [সূচনা পর্ব ]

0
598

#বাল্যবিবাহ
[সূচনা পর্ব ]
লেখক – আবির চৌধুরী

–আব্বা আমি এই বিয়ে করতে পারবনা।
বিয়ের আসরের বসে থাকা চোদ্দবছরের মেয়ে নীলার মুখে এমন কথা শুনে ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিল জামসেদ আলী।

— তুই বিয়ে করবি না মানে কি? তোকে এই বিয়ে করতেই হবে।

— আব্বা প্লিজ এই বিয়েটা ভেঙে দাও। আমি এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে চাইনা। আমার এক বান্ধুবী খুব অল্প বয়সে বিয়ে করে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা গেছে।

— আরে এসব কোনো বিষয় না। হয়তো মেয়েটির অন্য কোনো সমস্যা চিল। আর শুনেছি সেই মেয়ের হাসবেন্ড নেশা করত। আর আমরা তোর জন্য যে ছেলে পছন্দ করছি সে সরকারি চাকরি করে। একটা সিগারেট ও খায়না।

— আব্বা আমি এই বিয়ে করব না। আমি পড়াশোনা করতে চাই।

— মেয়ে দের এতো পড়াশোনা করতে হয়না। একটা মেয়ে ঘরের সব কাজ জানলেই হয়। এতো পড়াশোনা করে কি হবে বল?

— আব্বা পড়াশোনা করলে নিজের জন্য ভালো হয়।আর আমি যদি পড়াশোনা করি তাহলে তোমাদের কেও সাহায্য করতে পারব। তোমাকে আর একা কষ্ট করতে হবে না বুঝার চেষ্টা করো।

— এতো পড়াশোনা করার দরকার নেই। আর এতো সন্তানের খরচ বহন করতে আমি হিমসিম খেয়ে যাচ্ছি। আমি এতো কথা শুনতে চাইনা একটু পরে বরপক্ষ আসবে।

এই কথা বলে জামসেদ আলী মেয়ের পাস থেকে উঠে চলে গেলো বাহিরে। নীলা বসে বসে কান্না করছে। আজকে নীলার কান্না কেউ দেখতে পাচ্ছেনা। হঠাৎ করে নীলার মা আনোয়ারা বেগম নীলার কাছে এসে দেখে নীলা কান্না করছে।

— মা তুই এই ভাবে কান্না করছিস কেন? ছেলে অনেক ভালো আছে। শুনেছি ছেলের নাকি এলাকায় অনেক নাম ডাক আছে।

— আম্মা তোমরা কি আমাকে নদীর জলে বাসিয়ে দিতে চাইছ?

— এমন কথা বলছিস কেন? তোর আব্বা ছেলের সাথে কথা বলছে। ছেলে তোকে বিয়ের পরে পড়াশোনা করার সুযোগ দিবে। তুই আর কান্না করিস না মা।

এমন সময় জামসেদ আলী তার স্ত্রী আনোয়ারা বেগম কে ডেকে নিয়ে গেলেন তার ঘরে।

— তোমার মেয়েকে বোঝাও এমন ছেলে সব সময় হাতের নাগালে পাওয়া যায় না।

— জ্বী, আমি ওকে অনেক্ষন বোঝালাম।

— একটু পরে বরপক্ষ চলে আসবে। নীলাকে তৈরি করে রাখো।

এই কথা বলতেই একটা চিৎকারের শব্দ শুনিতে পায় যে বর আসছে বর আসছে। নীলার বাবা নীলার মাকে বলল — বর চলে আসছে আমি তাদের খাবারের ব্যবস্থা করি।

এই কথা বলে নীলার বাবা চলে গেলেন। তারপর আনোয়ারা বেগম আবার যায় নীলার ঘরে।

— মা বরপক্ষ চলে আসছে। আর এই ভাবে কান্না করিস না তুই।

— আম্মা, আব্বাকে একটু বলনা বিয়ে টা বন্ধ করে দিতে।

— মারে তুই তো জানিস তোর আব্বা এক কথার মানুষ। উনি একবার মুখ দিয়ে যে কথা বলবে সে কথার কোনো লড়চড় হয়না। আর দেখ মা আমাদের অবস্থাও তেমন একটা ভালোনা তোর আরো দুটি ভাই বোন আছে। অনেকের কাছে ধার নিয়ে তোর বিয়ে দিচ্ছে। তুই ওই বাড়িতে গেলে খুব ভালো থাকবি মা। কোনো কিছুর অভাব হবেনা তোর। আর ইচ্ছে করলেই আমাদের সাথে দেখা করতে চলে আসতে পারবি। মন খারাপ করিস না মা।

নীলা আর কিছু না বলে আনোয়ারা বেগমকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল। একটু পরে জামসেদ আলী নীলাকে নিয়ে বাহিরে আসতে বলল।

তারপর নীলার মা নীলাকে নিয়ে প্যান্ডেলের ভিতরে চলে গেলো। নীলা নিজের হাসবেন্ডকে দেখে আবার কান্না করে দিল। কান্না করার কারণ তো আছেই। ছেলেটার বয়েস ৩৫থেকে৪০ এর মধ্যে হবে৷

নীলার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি ঝড়ছে। এবার নীলাকে নিয়ে তার বরের পাসে বসিয়ে দিল। তারপর কাজি সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করে দিলেন।

নীলার হাসবেন্ডের নাম নিলয় আহমেদ। কাজি সাহেব বিয়ে পড়িয়ে চেয়ে চলে গেলেন। এবার নীলাকে বিদায় দেওয়ার সময় হয়েছে৷ নীলা খুব কান্না করছে।

নীলা জামসেদ আলীকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বলে — আব্বা আমি যামুনা প্লিজ।

নীলার কান্না যেনো জামসেদ আলীর কান অব্দি যাচ্ছেনা। এবার নীলা তার বাবার পায়ে উপরে পড়ে বলতে থাকে — আব্বা গো আপনি এই বিয়া ভাইঙ্গা দেন আমি মইরা যামু।

নীলার মা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুধু কান্না করছে তার আর কিবা করার আছে? নীলাকে হালকা সাজ দেওয়া হলো। চুল গুলো বেনি করা লাল পিতা দিয়ে বাধা। ঠোঁটে লাল লিপস্টিক নেই। নাকের উপরে মস্ত বড় নাক ফুলটা যেনো আগ্নেয়গিরির জ্বালা মুখ। মেয়েটির কাজল ধোঁয়া চোখের পানি কপাল গড়িয়ে পড়ছে। তার চোখের পানির মূল্য আজ কারো কাছেই সে পাচ্ছেনা। যে মেয়েটার খিদে পেলে কান্না করলে তার মা এগিয়ে এসে খাবার থকলে খাবার এগিয়ে দিত। আর খাবার না থাকলে সান্ত্বনা দিত। সে মা আজ দাঁড়িয়ে শুধু চোখের পানি ফেলছে।

এবার নীলা বাবাকে ছেড়ে মায়ের পায়ে সালাম করল। নীলার আম্মা নীলাকে বুকে জড়িয়ে শব্দহীন কান্না করতে থাকে। আর তাকিয়ে আছে জামসেদ আলীর দিকে।

নীলার সেই পুচকে ভাই বোন গুলাও কান্না করছে এবার নীলা নিজের ভাইবোনদের জড়িয়ে ধরে কান্না করে আর কপালে চুমু খেতে থাকে।

বর পক্ষের একজন বলে উঠে — অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে আমাদের এবার যেতে হবে।

তারপর নীলাকে নিয়ে যাওয়া হলো তার শ্বশুর বাড়ি তে। অনেকেই নীলাকে দেখতে আসল। নীলার চোখে তখনও পানি। দেখতে দেখতে রাত হয়ে আসল। নীলাকে রেখে আসা হলো ফুল দিয়ে সাজানো একটা রুমের ভিতরে। নীলা একা একা সেই ঘরে বসে বসে কান্না করছে। হঠাৎ রুমের ভিতরে কারো আসার শব্দ শুনে চমকে উঠল। ঘোমটা না খুলেই বুঝতে লারল তার স্বামী ঘরে ঢুকেছে। নীলাকে বার বার বলছে তার স্বামী ঘরে প্রবেশ করলে যেনো তার পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে। আর নীলা সেটাই করল। স্বামীর পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে আবার এসে খাটের উপরে বসে রইল।

এবার নিলয় আহমেদ নীলার পাসে এসে বসল। তারপর নীলার ঘোমটা টা খুলে নীলার নিস্পাপ চেহারার দিকে তাকিয়ে সে আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারল না। ঝাপিয়ে পড়ল নীলার উপরে। নীলা অসহায় হয়ে তার কাছে নিজের সব কিছু বিলিয়ে দিল। তার স্বামী তাকে কিছুই বলার সময় ও দিলনা। নিজের খিদে মিটানোর কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়েন। আর সারা রাত নীলার উপরে শারিরীক অত্যাচার করতে থাকে। যাকে বলা হয় এক কথায় বৈধ ধর্ষণ। নীলা সারারাত নিজের স্বামীর খিদে মিটিয়ে সকালে একটু ঘুমিয়ে পড়ল। ভালো করে ঘুম হওয়ার আগেই তার শ্বাশুড়ি এসে নীলার ঘুম ভেঙে দেয়।

যেখানে মানুষ নতুন বউয়ের সাথে ভালো ব্যাবহার করে সেখানে নীলার সাথে খারাপ ব্যবহার দিয়ে তার নতুন জীবনের নতুন দিন শুরু হলো।

শ্বাশুড়ি — এই যে নবাবজাদী এখনও দেখি শুয়েই আছে? বাসার যে এতো কাজ পড়ে আছে সেই কাজ কে করবে?

নীলা ঘুমঘুম চোখে তাকিয়ে দেখে তার শ্বাশুড়ি তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। নীলা তাড়াতাড়ি করে উঠে বসে পড়ল।

— জ্বী মা আমি করে দিচ্ছি।

— তাড়াতাড়ি কোরো আমার ছেলেটা এখনও না খেয়ে আছে।

এই কথা বলে উনি চলে গেলেন। তারপর নীলা অনেক কষ্ট করে উঠে ফ্রেশ হয়ে বাসার সব কাজ করতে শুরু করল। নাস্তা বানানো থেকে শুরু করে বাসার সব কাজ শেষ করে দুপুরে রান্না টাও বসাল। রান্না বান্না শেষ করে দুপুরে গোসল করে। সবাইকে খাওয়া দাওয়া করিয়ে নিজে যখন খেতে বসে তখন দেখে বাত আছে কিন্তু কোনো তরকারি নেই। এবার নীলা একটা পেয়াজ কেটে কোনো রকমে খেয়ে নিজের রুমে আসল। শরীর খুব ক্লান্ত হয়ে আছে নীলার। তাই সে একটু রেস্ট করার জন্য খাটের উপরে শুয়ে পড়ল। এমন সময় নীলার স্বামী রুমে আসল,,,

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here