#অন্ধকার_মানব(The unpredictable love)
#পর্ব_৫
লিখাঃতাজরিয়ান খান তানভি
এক ঘুসি মারে গাড়ির জানালার কাচে।মুহূর্তেই তা ভেঙ্গে দ্বিধার শরীরে পড়ার আগেই জাদ দ্বিধাকে টেনে নিজের বুকে নিয়ে নিজের পিঠ সেদিকে বাকিয়ে দেয়।
একটা একটা করে ভেঙে যাওয়া কাচ জাদ এর পিঠ থেকে টেনে বের করছে ফ্রিদা ইন্দ্রিয়াজ।ক্ষতগুলো থেকে নীল রঙের তরল বেরিয়ে আসছে।
“জাদ, এইসব কিছুর মানে কি?তুমি এতো দূর্বল কিভাবে হতে পারো?সে তোমার উপর কত ভরসা করে এই দায়িত্ব দিয়েছে তুমি কি তা জানো না।পুরো জাতি তোমার দিকে তাকিয়ে আছে,আর তুমি কিনা শেষ পর্যন্ত এভাবে আমাদের সাথে বিটরে করতে চাও।”
“প্লিজ,,স্টপ মম।জাস্ট স্টপ।”
“তুমি কি আবারো সেই ভুল করতে চাও?যা হয়েছে তা অতীত।এখন তার কোনো অস্বিত্ব নেই।”
আইভান ছেলের এমন কাজে বেশ হতাশ।সামনে বসা সোফা থেকে উঠে এসে জাদ এর ক্ষত গুলোতে হাত বুলিয়ে দিতেই তা গায়েব হয়ে গেল।
“দেখো জাদ, নিজের রাগকে কন্ট্রোল করতে শেখো।যে কাজের জন্য আমরা এসেছি তা আমাদের সম্পূর্ণ করতেই হবে।তুমি ভালো করেই জানো এইবার যদি সুযোগটা হারাই তাহলে হয়তো আমরা আর কখনো ওদের কাছে জিততে পারবোনা।আমাদের কাছে আবেগ এর কোনো দাম নেই।ওকে তোমার প্রটেক্ট করতেই হবে। আর তো মাত্র কয়েকদিন বাকী।যা ভবিতব্য তাই হবে। এইবার আমাদের জয়ী হতেই হবে।”
জাদ বেডের পাশে রাখা নিজের শার্ট নিয়ে গায়ে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।মি.আইভান বলে–
“কোথায় যাচ্ছ?”
“কাজ আছে।”বলেই সিড়ি দিয়ে নেমে যায়।
“তোমার কি মনে হয়?জাদ পারবে তো??”ফ্রিদার করা প্রশ্নে আইভান ওর নীল চোখ দেখিয়ে রাগের স্বরে বলে-
“পারতে ওকে হবেই।দ্বিতীয় বারের ভুল ক্ষমার অযোগ্য।
অন্ধকার জঙ্গল।নিশ্চুপ চারপাশ।হঠাত পাতার মর্মর শব্দ।অন্ধকার রাতের আবছা আলোয় কেই একজন একটি মেয়ের নিথর দেহ টেনে নিয়ে যাচ্ছে।আজ পূর্ণ চন্দ্রগ্রহন।ধীরে ধীরে আকাশের কালো ছায়া চাঁদকে নিজের কাছে টেনে নিচ্ছে।অন্ধকার আলোয় থাকা ব্যক্তিটির শরীর ধীরে ধীর পরিবর্তন হওয়া শুরু করলো।তার চোয়াল, মুখ বৃদ্ধি পেয়ে ভয়ংকর আকার ধারন করলো।দাত গুলো বড় হয়ে গেলো।অন্ধকারে আচ্ছাদিত চোখ দুটি হলুদ বর্ন ধারন করলো।সমস্ত দেহ কালো রঙের বড় বড় পশম দ্বারা আবৃত হয়ে গেলো।হাত পায়ের নখ বড় ধারালো হয়ে উঠল।পিঠের মাংসপেশী ফুলে এক ভয়ানক দানব আকারে পরিনত হলো। সামনে রাখা নিথর লাশটিকে ছিড়ে ছিড়ে নিজের উদরপুর্তি করছে যেনো এক স্বর্গীয়
মনোঃসুখ নিহিত রয়েছে তাতে।আর মাঝে মাঝে তার বিভৎস মুখঃধ্বনিতে নড়ে উঠল পুরো উত্তর জঙ্গল,,
আউউউউউউউ,,,,,,,,,
“আজকাল বাহিরে বের হওয়া মুশকিল।কখন,কোথায় কি হয় তা বলা যায় না।পৃথিবীটা দিন দিন বাসের অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে।” রোজ সকালে হাটতে বের হোন ইরাজ ইরাম।আজও তার ব্যতিক্রম নয়।কিন্তু সকাল সকাল কিছু একটা শুনে তার মনটাই বিষন্ন হয়ে উঠল।নিজে নিজে কথা বলতে বলতে ঘরে প্রবেশ করতেই মিসেস.ইরাম বললেন-
“সকাল সকাল কি হয়েছে আপনার?”
“আর বলোনা,এই তো দু দিন আগে ৯ম শ্রেণীর একটা মেয়েকে কিছু ক্ষুধার্ত হায়েনা ধর্ষন করে শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলেছে।কি দোষ ছিল নিষ্পাপ মেয়েটার।স্বামির মৃতদেহ শহর থেকে আনতে গিয়ে মেয়েটাকেও হারালো। কি করে বাচবে বলোতো সে নারী।যার চোখে সামনে তার সবচেয়ে প্রিয় মানুষগুলো নিষ্প্রান হয়ে পড়ে আছে।হায়রে দুনিয়া, মানুষ এখন পশুর চেয়ে ও অধম।(একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লেন।আর আজ,,,
“আজ আবার কি হলো??।
“কি আর হবে।আজ আবার উত্তরের জঙ্গলে একটা মেয়ের লাশ পাওয়া গেছে।শুনলাম,মেয়েটা সম্ভবত বিদেশী।প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি দেখতে আমাদের দেশে এসেছিল।কে জানতো সেই সৌন্দর্য তার জীবনের কালো অধ্যায় হয়ে যাবে”।বলেই ডাইনিং এর চেয়ারটা টেনে বসলেন।
“গত কয়েক বছর ধরেই এমন হয়ে যাচ্ছে।আমার মেয়েটার জন্য বড় ভয় হয়।একা একা ভার্সিটিতে আসা যাওয় করে।”
“তা তুমি ঠিকই বলেছো,পারিজা।”
“ইশ আমাদের যদি একটা ছেলে থাকতো,,,,,,,,,,.
পিছন থেকে কেউ বলে উঠল–
“আমি কি ভিতরে আসতে পারি??”
“সুধানিধি(চাঁদ) আপনি কি আমার উপর এখনো রেগে আছেন?”
দ্বিধা আর রিপ্তি একটা কফি হাউসে বসে আছে।জাদ এর ঘটনা ঘটার পর ও সোজা বাসায় চলে যায়,তাই রিপ্তির সাথে কাল কথা হয়নি।সারারাত অনেকবার কল করে রিপ্তি।দ্বিধা রিসিভ করেনি।তাই ও বাধ্য হয়ে মিসেস পারিজা কে কল করে।
“আপনি এখানে কেনো?”
“আমার সুধানিধি যেখানে আমিতো সেখানেই থাকবো”।বলেই ওর পাশে বসে পড়ল।
“আপনার সাহস কি করে হয় আমার পাশে বসার?রিপ্তির দিকে কটমট করে তাকিয়ে বলল”এইসব তোর কাজ,তাই ভার্সিটি না গিয়ে এখানে নিয়ে এসেছিস আমায়।”
রিপ্তির সরল উত্তর “আমার কি দোষ?তুই মোবাইল বন্ধ করে রেখেছিস আর ও আমাকে কল করে জ্বালিয়ে মারল।”
“আই অ্যাম সরি।ক্ষমা করা যায় না,জান?”
ও কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না।এই ছেলেটার আচরণ বুঝা মুশকিল।কখন কি করে নিজেও জানেনা।
“সুইটিসপাই, দেনা ওকে ক্ষমা করে।বেচারা এতো করে বলছে।”
“ঠিকাছে। সকালে খেয়েছেন??”
“না”
“পিজ্জা খাবেন?”
“না”
“তাহলে?
জাদ ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিস ফিস করে বলল-আপনাকে খাবো। দিবেন খেতে?বেশী না,একটু হলেই হবে।”
দ্বিধা ওর মুখটা হাত দিয়ে সরিয়ে বলল” ছিহ!এইসব কি ধরনের কথা?”
“আপনি তো জিঙ্গেস করলেন,আর আমার যা খেতে ইচ্ছে করছে সেটাই তো আমি বললাম।”(বলেই মুচকি হাসলো)
বাড়ির মেইন ফটকে আসতেই দ্বিধা দেখলো একটি ছেলে গার্ডেনে দাড়িয়ে আছে।
“আরে আরে কে আপনি?আর আমাদের বাগানে কি করছেন?আর একদম সড়ে দাড়ান,আমার ব্ল্যাক রোজ এ একদম হাত দিবেন না”।
ছেলেটি ওর দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।
“আপনি ই দ্বিধা?বাহ্!আঙ্কেল,আনটি আপনার নাম যথার্থ রেখেছে।আপনাকে দেখলে যে কেউ দ্বিধায় পড়ে যাবে এই ভেবে যে(,ছেলেটি নিজের মুখটা একটু সামনে এগিয়ে নিয়ে বলল)–
“আপনি সত্যিই মানুষ নাকি পরী।
“বাজে কথা রাখুন।(ঝাঝালো কন্ঠে বলল)
“আমার না স্পাইসি চিকেন খুব পছন্দ।আমার আপনাকে ঠিক তেমন ই মনে হয়,মিস স্পাইসি।”
মাম্মা,মাম্মা বলে ও ঘরের দিকে যেতে লাগল,পারিজা ইরাম কে সামনে দেখেই বলা শুরু করল-
“মাম্মা,এই অসভ্য ছেলেটা কে?আর আমার ব্ল্যাক রোজ ছোয়ার সাহস হলো কি করে? পিছন থেকে ছেলেটি বলে উঠল–“আমি তো ছুইনি।”
“অসভ্য,বাদর ছেলে কোথাকার।”
পারিজা ইরাম মেয়েকে থামিয়ে বলল-
“মাই ডল,,গেস্টদের এভাবে কেউ বলে?”
‘গেস্ট”(অবাক হয়ে)
“হ্যাঁ,ওর নাম রিশাল।তোমার বাবার বন্ধুর ছেলে।”
দ্বিধা একটু শান্ত হয়।আর বলে-
“ও আচ্ছা। সে যাই হোক আমার ব্ল্যাক রোজ এর আশেপাশে যেনো না দেখি।”বলেই উপরে চলে যায়।
“কাচা লঙ্কার অনেক ঝাঁঝ।
“কি বললে?”
“বললাম,তুমি এতো কিউট একটা আনটি আর তোমার মেয়ে একদম কাচা লঙ্কার মতো ঝাঝালো”
“পাজি ছেলে একটা।”
কিচেনে চিমনির নিচে থাকা উচু জায়গায় বসতে বসতে রিশাল জিঙ্গেস করল-
“কালো গোলাপের গাছটা কি খুব স্পেশাল?”
“হুম”
“কেনো বলোতো?”
“দ্বিধার ছোট বেলা থেকেই কালো গোলাপ খুব পছন্দ।ওর যখন ১২বছর পূর্ন হলো সেইবারের জন্মদিনে ওর পাপা ওকে এই গাছটা উপহার দিয়েছিলো।”
“কোথা থেকে এনেছিল?”
“আমেরিকা থেকে”।
“কিহ!!!!!!!!!
“হা।ওর পাপা বলল ওনার একজন পরিচিত ছিলো উনিই তাকে এটা দিয়েছেন।
“কে ছিল সে?”
“সেটা তিনি কখনো বলেন নি।”
“সে যাই হোক যাকে আমি এতোবছর ধরে খুজছি তাকে আমি পেয়েগেছি।মাই স্পাইসি সোলমেট(মনে মনে মুচকি হাসতে হাসতে বলল)।
“ভিতরে আসতে পারি”
সদ্য গোসল করে বেরিয়েছে দ্বিধা।চুল দিয়ে টুপ টুপ করে পানি পরছে এ যেন এক অন্যরকম মাধূর্যতা।রিশাল অপলকভাবে তাকিয়ে আছে।
“এসেই তো পড়েছেন।আর দাঁড়িয়ে থেকে কি হবে।আসুন।”রিশাল ভিতরে এসে বলে-
“আপনি কি সবসময় রেগে থাকেন নাকি?”
দ্বিধা কোনো জবাব না দিয়ে বেডের উপর থেকে টাওয়াল টা নিয়ে বারান্দায় চলে যায় যেখান থেকে গোলাপ গাছটা স্পষ্ট দেখা যায়।ও এক পলকে তাকিয়ে আছে।রিশাল পা বাড়িয়ে ওর পাশে এসে দাড়ায়।
“কি দেখছেন এমন করে, মিস স্পাইসি?
“জানেন রিশাল,আমরা যদি কাউকে বেহিসেবি ভালোবাসি তারপর ও যদি সে ভালোবাসার প্রতিদান না দেয় তাহলে কেমন লাগে”?
“মানে?ঠিক বুঝলাম না।”
“এই যে গোলাপ গাছটা আজ ছয় বছর ধরে আমি এতো যত্ন করি কিন্তু আজ পর্যন্ত একটি ফুল ও ফোটেনি।”
“কি!!!!!!
“হ্যাঁ ”
“তাহলে আর এটা রেখে লাভ কি,উপরে ফেললেই পারেন।”
দ্বিধা ওর দিকে চোখ ঘুরিয়ে বলল-
“কাউকে ভালোবাসার মানে এই নয় যে তাকেও ভালোবাসতে হবে।ভালোবাসা কোন প্রতিদান নয়।সেটা আত্নিক সম্পর্ক।”বলেই হাত থেকে টাওয়েল রেখে বেডে বসে।
“বাহ!আপনি তো খুব সুন্দর কথা বলেন “।
ইরাজ ইরাম রুমে এসে বললেন-
“আমার প্রিন্সেস বড়াবড়ই সবচেয়ে আলাদা”
“সেটা আপনি ঠিক ই বলেছেন”।
দ্বিধা এসে ইরাম কে জড়িয়ে ধরে বলল-
“পাপা,তোমার এই বন্ধুর ছেলে একটু বেশিই বুঝে।”
“বুঝবেই তো।ওর কাজ ই এইসব না বলা কথা বুঝা।”
“মানে?”(অবাক হয়ে বলল)
“হি ইজ অ্যা প্যারানরমাল এক্সপার্ট।ভুত,প্রেত নিয়েই তো ওর কাজ।”
“সত্যিই !!!
“ইয়েস মিস স্পাইসি।”
“আপনি বুঝি ভূত দেখেছেন??”
“হ্যাঁ।তাতো অনেকবার।আপনি চাইলে আপনাকেও দেখাতে পারি।”
ইরাজ ইরাম দুজনকে তাড়া দিয়ে বললেন-
“দেখাদেখি যা হবার পরে হবে।এখন খেতে চলো।আর দেরি করলে তোমার মাম্মা আজ আমাদের আর খেতে দিবে না।শুনেই ওরা হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেলো।”
গোলাপ গাছটায় একটা ছোট কলি দেখা যাচ্ছে।হয়তো আর কয়েকদিনের মধ্যে ফুটে উঠবে।এর সাথে হয়তো কোনো রহস্যের কালো অধ্যায়ের মায়াজাল খুলবে।
চলবে,,,,,