অন্ধকার মানব পর্ব-৪

0
202

#অন্ধকার_মানব(The unpredictable love)
#পর্ব_৪
লিখাঃতাজরিয়ান খান তানভি

আজ প্রফেসর অ্যান্ডির ক্লাস।ক্লাস পুরো ভরপুর।জাদ এখনো ক্লাসে আসেনি।দ্বিধার নজর ক্লাসের দরজায়।কিন্তু সবাই কে অবাক করে দিয়ে ক্লাসে প্রবেশ করল প্রফেসর ইতাফ আন্দ্রিজ।সব মেয়েরা হা করে তাকিয়ে আছে।ইতাফের সে দিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। সে বলা শুরু করলো-
“প্রফেসর গোমস আজ কোনো কারনবশত আসতে পারেনি।তাই এই ক্লাসটা আমি ই নিবো।আশা করি আপনারা আমাকে সহযোগিতা করবেন।”
ক্লাস শেষে দ্বিধা ক্লাস থেকে সোজা বেরিয়ে ক্যান্টিনে চলে গেলো।ক্যান্টিনের আনাচে কানাচে সব দেখেনিলো কিন্তু কোথাও জাদ নেই। ওর মনটা ভীষন খারাপ হয়ে গেলো।বাইরের উদ্দেশ্যে পা বাড়াতেই–
“আমাকেই খুজছেন,মাই লাভ??”
জাদ এর কন্ঠ শুনেই ও পিছন ফিরে তাকায়।
“মিস করছিলেন বুঝি আমায়,মাই লাভ?”
“মোটেও না,,,(রাগ দেখিয়ে)।আর এসব কি??আমার একটা নাম আছে।”
“তাতো আমি জানি জান পাখি।আর এটাও জানি (বলতে বলতে একদম ওর কানে কাছে চলে গেলো )
আপনি আমাকেই খুজছেন”।
দ্বিধার পুরো শরীরে এক শিহরন বয়ে গেলো।ও নিজেকে জাদ এর কাছ থেকে দূরে সরিয়ে বলল–
“ক্লাসে আসেন নি কেনো??”
“ইচ্ছে করছিলো না তাই।”
“আপনি জানেন আজ,,,…,,,,,,কথা শেষ না হতেই রিপ্তি পিছন থেকে এক ধাক্কা মারলো দ্বিধা গিয়ে জাদ এর বুকের উপর গিয়ে পড়ল।
“হরিনীর মতো ছুটে এখানে কেনো এলি??আজকাল তোর আমার কথা মনেই থাকে না।সারা ভার্সিটি খুজে মরছি আর মহারাণী এখানে দাড়িয়ে আছে(রেগে বলল)”
“আপনি ঠিক আছেন তো?’
দ্বিধাকে নিজের বুকের উপর থেকে নিয়ে সোজা দাড় করিয়ে বলল।রাগে কটমট করে রিপ্তির দিকে তাকিয়ে বলল–
“আর ইউ ক্র্যাজি?ইউ সিলি গার্ল।যদি ওর কিছু হয়ে যেতো?”
ওর কথায় রিপ্তি পুরো ঘাবড়ে যায়।ভয়ে কাপতে কাপতে বলে–
“সরি আমি বুঝতে পারিনি।আসলে আমি,,,,,,,
জাদ নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে বলে–
“আই অ্যাম রিয়েলী সরি,রিপ্তি।আমি দুঃখিত।”বলেই সেখান থেকে চলে গেলো।দ্বিধা কিছুই বুঝতে পারলোনা জাদ এতো রেগে গেলো কেনো।
“সরি দ্বিধা,আমি আসলে এমন করতে চাই নি।তোর কোথাও লাগেনি তো??”
“আগে তুই বল তোর আর আমার মাঝে এই সরি কোথায় থেকে আসলো??একটা চড় মারবো।বলেই ওকে জড়িয়ে ধরল।
“ইউ আর দ্যা বেস্ট ইন দিস ওয়ার্ল্ড মাই সুইটিপাই।

দ্বিধার মনে এখনো সে খচখচানি রয়েই গেলো।সে এখনো সে রাতের কথা ভুলতে পারিনি।সেই জ্বলন্ত নীল চোখ,ঠান্ডা নিঃশ্বাস,শীতল ছোঁয়া ভাবলেই শরীর কেমন শিউরে উঠে।উফ,,,,,,,,আর ভাবতে পারছিনা।ফোনের রিংটন বেজে উঠলো,,,
“হ্যালো,মেরি জান। কি করিস??”
“সত্যিই তোর এই পারফেক্ট টাইমে এন্ট্রি করা,আই জাস্ট লাভ ইট।তুই এখনি বাসায় আয়,জরুরী কথা আছে।”
“এখন,,,,,।উহু,এখন আসতে পারবোনা।”
“প্লিজ প্লিজ বেবি না করিস না,আমার চুনিমুনি।মাম্মা কিন্তু আজ নুডলস করেছে।”
“নুডলস,,,,(খুশি হয়ে)ওকে বেবি। আই অ্যাম কামিং।

রিপ্তি একনাগাড়ে নুডলস খেয়েই চলছে।এই একটা জিনিষে এর লাগামহীন দূর্বলতা।পারিজা ইরাম বললেন–
“রিপ্তি ধীরে খাও,গলায় আটকে যাবে যে।”
“তা আর সম্ভব নয় মাম্মা।(বলেই হেসে খুন)
পারিজা ইরাম হেসে বললেন””মাই ডল,এভাবে বলেনা”।
” আনটি, আমি কিছু মনে করিনি। আমি নুডলস থেকেও ওকে বেশী ভালোবাসি,এইটা ও ভালো করেই জানে।”
মিসেস ইরাম মুচকি হেসে চলে গেলেন।দ্বিধা,রিপ্তির হাত টান দিয়ে বলল-
“হয়েছে আর খেতে হবেনা,বাকিটা বাসায় নিয়ে খাস।এখন আমার ঘরে চল।”রুমে এসেই ধপ করে বিছানায় শুয়ে পড়লো রিপ্তি।
“বল এতো আর্জেন্টভাবে ডেকে আনলি কেনো??”
“মানুষের কখনো নীল চোখ হয়??”
ও হেসে বলল-
“হয় তো। ঐশ্বরিয়া কে দেখিসনি??ওর ও তো নীল চোখ।নীল নয়না।আহা,,,কি চোখ !শি ইজ মাই লেডি ক্রাশ।”দ্বিধা বিরক্তি নিয়ে বলল-
“উফ,,তুই ও না।”সেদিন রাতের পুরো ঘটনা রিপ্তিকে খুলে বলল।রিপ্তি উঠে বসে ওর চোখগুলো রসগোল্লার মতো করে বলল-
“বলিস কি!!!!এতো কিছু হলো আর তুই এখন বলছিস?আঙ্কেল,আনটি জানে??
“জানে,কিন্তু পুরো না।”
“তোর কি মনে হয়,কে হতে পারে??”
“জানিনা,আমিতো কিছু দেখিনি শুধু অনুভব করেছি।আধোও কি সেটা মানুষ ছিলো নাকি আমি জানিনা”।
“কি সাংঘাতিক!আমার তো শুনেই গা ছমছম করছে। ”
“আচ্ছা বাদ দে।আনটি কেমন আছে??”
“ও আল্লাহ,,আমি তো ভুলে গেছি,মা তাড়াতাড়ি যেতে বলেছে।দেরি করলে একটা মার আমার পিঠছাড়া হবে না।”
“ওকে যা। সাবধানে যাস”।
রিপ্তি যাওয়ার পর ও ভাবতে লাগল আসলে কি ছিল ওইটা।সত্যিই কি জাদ ছিল।কিন্তু তা কি করে সম্ভব।এতো রাতে কি করে আসবে আমার ঘরে।কিন্তু ওই ঘ্রাণ।আর ভাবতে পারছে না।হঠাৎ ওর ছোটোবেলায় দেখা ভেন হেলসিং নামে একটা মুভির কথা মনে পড়ল।যেখানে ভ্যাম্পায়ার রূপী ভিলেন এর চোখ নীল ছিল। তাহলে কি ওইটা,,,,,,
উফ,কি ভাবছি আমি।এইসব শুধু মুভিতেই হয়,বাস্তবে না।

ঘুম থেকে উঠেই দ্বিধার চোখ ছানাবড়া। প্রফেসর ইতাফ ওর বেডের পাশে বসে ওর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।অবশ্য এইটা নতুন কিছু নয় এর আগেও এমনটা অনেকবার হয়েছে।
“প্রফেসর আপনি??”
“কেন মায়াপরী,আশা করেন নি বুঝি?
“তা নয়।আমি একদম ভুলে গিয়েছিলাম যে আজ আপনি আসবেন”।
ইতাফ চেয়ার থেকে উঠে দ্বিধার সামনে গিয়ে বসে।
“আজকাল আপনি অনেক কিছুই ভুলে যান,মায়াপরী।আপনি অনেক বদলে গেছেন।গত কয়েকদিনে আপনি আমার সাথে একবারও দেখা করেন নি।”বলেই ওর কপালে আলতো করে নিজের ঠোঁটের পরশ বুলিয়ে দেয়।
“আমি দুঃখিত প্রফেসর।আসলে,,,
ইতাফ আঙ্গুল দিয়ে ওর ঠোঁট চেপে ধরে বলে-
“শীসস,আর বলতে হবে না।আই ডোন্ট ওয়ান্ট অ্যানি এক্সপ্লেনেশন।ফ্রেশ হয়ে আসুন।আমি নিচে আপনার জন্য অপেক্ষা করছি।দ্বিধা বাধ্য মেয়ের মতো ওয়াশরুমে চলে যায়।

খাবার টেবিলে ইতাফ কৌতুহলী চোখে দ্বিধাকে প্রশ্ন করলো-
“আপনি কি কোনো কারনে চিন্তিত?রাতে ঠিক মতো ঘুমাতে পারেন নি মনে হয়।”
“তেমন কিছু নয়।”
“আপনি আমার কাছ থেকে নিজেকে লুকাতে চাচ্ছেন?তা কি কখনো সম্ভব।”দ্বিধা মাথা নেড়ে বলল –
“উহু।”
পারিজা ইরাম রান্নাঘর থেকে সব দেখছিলেন।পাশে থাকা তার স্বামী কে বললেন-
“আমাদের দ্বিধার জন্য এর থেকে উপযুক্ত ছেলে আর পাবো না।ওর সব দিকে নজর। আমাদের মেয়ের মুখ দেখেই বুঝতে পারে সবকিছু।”ইতাফ দ্বিধার সাথে থাকাকালীন অন্য কারোর উপস্থিতি একদম পছন্দ করে না।তাই ইরাজ ইরাম রান্নাঘর থেকেই সবকিছু অবলোকন করছেন।স্ত্রীর কথার উত্তরে বলল–
“যা খালি চোখে দেখা যায় তা সবসময় সত্যি হয়না”।
মিসেস ইরাম স্বামীর এহেন কথায় বেশ অবাক হয়।মাঝে মাঝে তার স্বামী কে তার অন্য জগতের কেউ মনে হয়।

“আইসক্রীম খাবে??”মুখের ভিতর পুরো একচামচ আইসক্রীম দিতে দিতে জাদ কে জিঙ্গেস করল রিপ্তি।ওরা দুজন ভার্সিটির একপাশে গার্ডেনের দোলনা তে বসে আছে।রিপ্তির কাছে জাদ এর পাশে বসে খুব ভালো লাগছে মনে মনে ভাবছে–ইস!ও যদি আমাকে একটু জড়িয়ে ধরতো।”
“না।দ্বিধা কোথায়,রিপ্তি??”(শক্ত গলায় প্রশ্ন করলো)
“ও তো প্রফেসর ইতাফ এর ল্যাবে গেছে,বলল কি যেনো কাজ আছে।”
জাদ ওর দিকে তাকিয়ে অবাকের সাথে বলল–
“কি!!!!!!!বলেই দ্রুত পায়ে যেতে লাগল।পিছন থেকে ডাকতেই থাকল কিন্তু ওর সেদিকে নজর নেই।

“মায়াপরী,চুপ করে আছেন কেনো? আপনি কি জানেন কতদিন ধরে আমি আপনার হাসিটা দেখি না”।ইতাফ দ্বিধাকে ওর সামনে বসিয়ে নিজেও একটা চেয়ার টেনে ওর মুখোমুখি বসে ওর দুহাত নিজের হাতযুগলে মুষ্টিবদ্ধ করে ওকে জিঙ্গেস করল।
“কই কিছু হয়নি তো প্রফেসর”।
“আপনি আবারও সে সপ্নটা দেখেছেন?”
“না,প্রফেসর।
“তাহলে?”
“আসলে কয়েকদিন ধরে আমি সেই ভয়ংকর সপ্নটা এখন আর দেখি না।কিন্ত,,,,,,,,,ল্যাবের দরজা খুলে জাদ ভিতরে চলে এলো।এমনি কারো এতো সাহস নেই যে বিনা অনুমতিত প্রফেসর ইতাফ আন্দ্রিজ এর ল্যাবে প্রবেশ করে।জাদ দ্বিধার হাত ইতাফের মুষ্টিবদ্ধ দেখে আরও ক্ষেপে যায়।এক ঝটকায় ওর হাত ছাড়িয়ে ওকে নিয়ে বাহিরে চলে আসে।ইতাফ চুপ করে ভাবছে ওকে এখন বাধা দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
জাদ দ্বিধার হাত টেনে চলতে লাগল।
“জাদ ছাড়ো,কি করছো?ও আরও দ্রুত ওকে নিয়ে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলো।দ্বিধার কোন কথা ওর কান পর্যন্ত যাচ্ছেই না।ওকে নিয়ে সোজা গাড়িতে বসিয়ে গাড়ি স্টার্ট করলো।
কিছুদুর গিয়ে গাড়ি থামালো।গাড়ি থেকে নেমে ওকে বের করে ওর গলা চেপে ধরল।
“কি করছিলে ওর সাথে?কেনো গেলে ওর কাছে?”
ও দেখলো জাদের চোখ ধীরে ধীরে সেই জ্বলন্ত নীল শিখায় পরিনত হতে লাগল,যেনো এখনি সব শেষ করে দিবে।ওর পুরো শরীর রাগে কাপতে থাকল।দ্বিধা ভীষন ভয় পেতে লাগল আর ব্যথায় ককিয়ে উঠল।
“জাদ আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে।”দুচোখ দিয়ে ওর ঠান্ডা অশ্রু গড়িয়ে পরতে লাগল।জাদ এখনো ওর রাগী কন্ঠে বলল-
“কেনো ফিরে এলে???????
আর এলেই যখন এভাবে কেন এলে?????বলেই ওর ডান হাত দিয়ে,,,,,,,,,,

চলবে,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here