গল্পঃ_নয়নে_বাঁধিব_তোমায় #পর্বঃ_২৮ #লেখাঃ_আফসানা_মিমি সুহাসিনী

0
66

#গল্পঃ_নয়নে_বাঁধিব_তোমায়
#পর্বঃ_২৮
#লেখাঃ_আফসানা_মিমি সুহাসিনী
——–
বাশরের ঘর এখন পুরোটাই মাসুদার দখলে। শুধু ঘর বললে ভুল হবে পুরো বাড়িটাই মাসুদার দখলে। ইদানীং মাসুদা ঘরে বসে কী যেন কাজ করে! আকলিমা দরজায় আড় পেতে কখনো ঠুসঠাস শব্দই শুনতে পায় আবার কখনো কাগজপত্র উলট পালট করার শব্দ পায়। মেয়েটার মতিগতি আকলিমার বুঝে আসে না। ঘর থেকে বের হলে রান্না করে, খায়ও কিন্তু আকলিমাকে সাধে না। সে যে এবাড়ির বউ কেউ দেখে বলবে না। আকলিমা এই মেয়ের চালচলন দেখে অতিষ্ঠ তার উপর ছোট ছেলেকে বোরহান নিয়ে চলে গেছে। একদিনও খবর পর্যন্ত নেয়নি আকলিমার। এতদিন হাঁটু ব্যাথার অভিনয় করতে করতে আজকাল হাঁটুতে সত্যি সত্যিই ব্যাথা দেখা দিয়েছে। বেশিক্ষণ হাঁটাচলা করলে ব্যাথা বাড়ে।

সন্ধ্যায় বাশার বাড়ি ফিরে আসলো জীর্ণশীর্ণ হয়ে। সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন, ঠোঁট কে’টে র’ক্ত বের হয়ে তা শুঁকিয়ে গেছে, মাথায় বেন্ডেজ করা। আকলিমা ছেলেকে দেখে চিৎকার করে উঠে। মাসুদা তা শুনে দরজা খুলে বাহিরে দেখে, বাশারের এই অবস্থা দেখেও ভাবান্তর হলো না তার। দরজা খোলা রেখে পুনরায় ঘরে চলে গেলো। আকলিমা রাগে গজগজ করে বাশারকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলল,” কেমন মেয়েকে বউ বানিয়ে আনলি, স্বামীর করুণ অবস্থা দেখেও কাছে আসলো না!”

বাশার নিরুত্তর, সে ভাবছে নয়নাকে কীভাবে ঐ ডাক্তারের কাছ থেকে ছিনিয়ে আনতে পারবে। আকলিমার কথা শুনছেই না বুঝতে পেরে আকলিমা নিজেই মাসুদার কাছে গেলো। চুলের মুঠি শক্তকরে ধরে বাহিরে টেনে আনতে লাগলো। মাসুদা ব্যথায় গোঙরাতে লাগলো। নিজেকে বাঁচাতে সে আকলিমার পেটের দিকটায় শরীরের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে আঘাত করলো। আকলিমা কী আর সহ্য করতে পারে! ছিটকে পড়লো দরজার কাছটায় যেখান থেকে বাশারকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। ব্যাথা-বেদনার থেকে বেশি আওয়াজে আর্তনাদ করে উঠলো আকলিমা। ছেলেকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলতে লাগলো,” ও বাশার, ম’রে গেলাম রে! তোর বউ আমাকে আজ মে’রে ফেলবে। আমাকে বাঁচা বাপ, আমাকে বাঁচা!”

বিরক্তিকর দৃষ্টিতে বাশার আকলিমার কাছে এলো। হাতে ধরে উঠাতে নিলে আকলিমা গগনবিদারী চিৎকার করে বলল,” তোর বউকে তো কিচ্ছু বলবি না! বলবি কেনো? বউকে পেয়ে মাকে তো ভুলেই গেছিস। আজ তোর চুপ থাকাতে আমাকে আঘাত করেছে কাল মে’রে ফেলবে না তার কী নিশ্চয়তা আছে!”

এমনিতেও বাশার চিন্তায় ছিলো তার উপর সারাদিনই মা’র খেয়ে গেলো। বাড়িতে এসেও অশান্তি শুরু হলো। সব মিলিয়ে বাশার নিজেকে সামলাতে পারলো না। আকলিমাকে ডিঙিয়ে গিয়ে মাসুদাকে ইচ্ছেমতো মারতে শুরু করে দিলো। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে এবার মাসুদা টু শব্দ পর্যন্ত করলো না। বাশার মারতে মারতে মাসুদাকে শুইয়ে দিয়ে দরজার কাছে আসলো। আকলিমা ছেলের রাগ দেখে ভরকে গেলো সে তো চেয়েছিল বাশার মাসুদাকে এক দুইটা চর থাপ্পড় বসিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিক কিন্তু বাশার যে এতো মারবে বুঝতে পারেনি। বাশার এসেছিল দরজা আটকাতে, আকলিমা ছেলেকে বাঁধা দিলো,” বাবা, মাথা খারাপ করিস না। এই মেয়ের কিছু হলে আমাদের জেল হয়ে যাবে। ছেড়ে দে বাপ!”

” দরজার সামনে থেকে সরে যাও, মা! এই মা’গী’র তেজ আজ শেষ করমু। কতো বড়ো সাহস, আমাকে জেলের ভাত খাওয়াবে? আজ একে না শায়েস্তা করতে পারলে আমি শান্তি পাবো না।”

বাশার যা করতে চাইছে আকলিমা তা কখনো করতে দিবে না। ছেলেকে টেনে হিঁচড়ে বাহিরে এনে নিজের ঘরে আটকে রাখে। বাশারের ঘরে উঁকি দিয়ে মাসুদার অবস্থান দেখে নিলো। মেয়েটা গুটিশুটি মেরে খাঁটের সাথে মিশে আছে। আকলিমার মনে কষ্ট নয়,আনন্দের জোয়ার ভাসছে। এবার যদি আপদ বিদায় হয়! এদিকে আকলিমার অগোচরে মাসুদা রহস্যময় হাসলো। দুর্বল শরীরে হেঁটে টেবিলের কাছ থেকে আগ থেকে সেট করে রাখা গোপন ক্যামেরা বের করে বিড়বিড় করে বলল,” খেলা এবার জমবে ভালো।”

——————————–

হাসপাতাল থেকে দশদিনের ছুটি মঞ্জুর করা হলো। এই দিনগুলোতে তূর্যের অনেক কাজ। প্রথমত নয়নাকে পুরো দুনিয়ায় সামনে স্বীকৃতি দিতে হবে দ্বিতীয়ত মাহবুব শিকদারের রিটায়ার্ড হওয়ার সময় পরের মাসে। গাজীপুর সিটিতে চাচার জন্য একটি চেম্বার খুলতে হবে। যার কাজ এখন থেকেই শুরু করতে হবে। সকাল থেকেই তূর্য দৌড়ের উপর আছে কিন্তু ফাঁকে ফাঁকে নয়নার খোঁজ ঠিকই নিচ্ছে সে। প্রায় ছয় ঘণ্টা তূর্য নয়নার থেকে দূরে তাই সে ঠিক করলো দুপুরের খাবার সে নয়নার সাথে বসেই খাবে। এমনিতেও বিবাহিত হয়েও এখনো সিঙ্গেলদের মতো জীবন যাপন করতে হচ্ছে তূর্যকে। অনুষ্ঠান না করা অবদি নয়না তার কাছে ধরা দিবে না বলে পরিষ্কারভাবে জানিয়েছে।মহারাণীর কথা কী আর তূর্য ফেলতে পারে! অগত্যা এক বাড়িতে থেকেও তূর্য ও নয়না আলাদা রাত্রিযাপন করছে।

গাড়ি মারতার রাস্তায় ঘুরিয়ে নিলো তূর্য। তার পাশের সিটেই একগুচ্ছ গোলাপের তোড়া রাখা আছে। তূর্য নয়নাকে এই পর্যন্ত কিছুই দিতে পারেনি। ফেরার পথে কিছু অলঙ্কার নিয়ে আসলো। বাড়িতে প্রবেশ করে তূর্য সময় অপচয় করলো না, নয়নার নাম ধরে হাঁক ছাড়লো। নয়না রান্না শেষ করে গোসল করতে ঢুকেছে সবে। তূর্যের ডাক তার কানে পৌঁছায়নি। নয়নার সাড়া শব্দ না পেয়ে তূর্য কিছুটা ভয় পেলো, তাড়াহুড়ো করে উপরে চলে আসলো। নয়না গোসল করছে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। দরজার কাছটায় এসে বলল,” বউ! একটা কথা শুনবে?”
ভেতর থেকে নয়নার কণ্ঠস্বর ভেসে আসলো,” কিছু বলবে, তূর্য?”

তূর্য ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে বলল,” বলতে তো চাইছি অনেক কথা, উজাড় করে দিতে চাই ভালোবাসা।”

আচমকা নয়না দরজা খুলে দিলো। তূর্যের কাব্যিক কথায় ভীষণ হাসি পেলো। তূর্যের মাথার কেশবে হাত চালিয়ে বলল,” পাগল,ডাক্তার।”

তূর্য মাথা চুলকে ফুলের তোড়া নয়নার দিকে ধরলো। আকস্মিক নয়নার দিকে ভালোভাবে তাকাতে মস্তিষ্ক কিছুটা নষ্টালজিক হয়ে গেলো। অর্ধভেজা শরীর,মাথায় তোয়ালে প্যাঁচিয়ে রাখা, ঘাড়, গলায় বিন্দু বিন্দু পানি জমে আছে। তূর্যের নজরে আসলে সে শুকনো ঢোক গিলে বিড়বিড় করে বলল,” এই রূপ দেখালে সুস্থ মানুষ এমনিতেও পাগল হয়ে যাবে, যেখানে আমি তো পাগল ডাক্তার।”

নয়নার অস্বস্তি বাড়লো। সে তো স্বাভাবিক মনেই তূর্যের সামনে এসেছিল কিন্তু পরিস্থিতি এমন জায়গায় এসে দাড় করাবে কে জানতো! গোলাপের তোড়া হাতে তুলে নাকের কাছে ধরে লম্বা নিশ্বাস নিলো। গোলাপ ফুলের মাতাল করা ঘ্রাণ নাকি তূর্যের নয়া বঁধুর শরীরের ঘ্রাণ কোনটা বেশি সুন্দর! তূর্য ভাবছে। মস্তিষ্ক থেকে দুষ্ট মনোভাব সরিয়ে নয়নার হাত ধরে বিছানায় বসালো তূর্য। প্যান্টের পকেট থেকে দুইটা বক্স বের করে নয়নার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,” আমাদের বিয়ে হঠাৎ করে হওয়ার তোমাকে গহনা দিতে পারিনি। আমার ইচ্ছে ছিল, আমার স্ত্রীকে নিজের উপার্জিত টাকায় গহনা কিনে পরাবো তাই সামান্য উপহার আনলাম।”

তূর্য কথাগুলো বলতে বলতে কানের দুল ও নাকের ফুল বের করলো। নয়নার কানের দুল খুলে তূর্যের নিয়ে আসা দুল খুব যত্নে পরিয়ে দিলো কিন্তু বিপত্তি ঘটলো নাকের ফুল পরানোর সময়। তূর্য নয়নার একদম কাছাকাছি চলে গেলো। তারা একে অপরের নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছে। তূর্য এবার মনের সাথে যুদ্ধ করলো না, মন যা চায় তাই করলো। নাকের ফুল পরিয়ে সেখানে চুমু খেলো। নাক থেকে সরে এসে নয়নার দিকে গভীর নয়নে তাকিয়ে রইলো। নয়নার ঠোঁট জোড়া তিরতির করে কাঁপছে তূর্যকে তা খুব টানছে। নয়নার অনুমতি ছাড়া সে কিছুই করতে চায় না অগত্যা মনোযোগ সরাতে নয়নার মাথা থেকে তোয়ালে খুলে নিলো সে। নয়নার কপালের চুলের দিকটায় গভীরভাবে চুমু একে ধরে রাখলো। ঠোঁট সরিয়ে সেভাবে থেকেই বলক,” তুমি খুব সুন্দর, নয়ন!”

একটি বাক্য, যা প্রতিটা নারীকে লজ্জায় ফেলার জন্য যথেষ্ট। লজ্জায় নয়না মাথা নিচু করে রাখলো। পরপর তূর্যের ভারী কণ্ঠস্বর শুনতে পেলো,” একটু জড়িয়ে ধরি, নয়ন?”

এতো আকুল আবদার নয়না কর ফেলতে পারে? নিজেই হাত বাড়িয়ে তূর্যকে জড়িয়ে ধরলো। নয়নার সম্মতি পেয়ে তূর্যও মুচকি হেসে নয়নাকে জড়িয়ে ধরলো, খুব শক্ত করে। নয়নাও মুচকি হাসলো, তূর্যের বুকে মাথা রেখে বলল,” বৈবাহিক স্ত্রীর কাছে কী সব বিষয়েই অনুমতি নিতে হয়?”

(চলবে)…
#নয়নে_বাঁধিব_তোমায়

[ গল্প পোস্ট করব এমন সময় লোডশেডিং হয়ে গেলো। মানে কী যে একটা অবস্থা! এই গরমে আপনাদের কী খবর?]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here