#মৃত_কাঠগোলাপ- ১৮
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
ধ্রুব আয়েশীকে দেয়ালের সাথে মিশে রাখে। আয়েশীর ছটফট করছে। ধ্রুব বাঁকা হেসে আয়েশীর চোখে চোখ রাখল। বলল,
‘ আমি কখনো একা ম*রব না, রক্তজবা। ম*রলে তোমায় সাথে নিয়ে ম*রব। আমি ম*রে গেলে তুমি অন্য কারো হবে, আমার তা সহ্য হবে না। তাই আমিও শ্যা*ষ, তুমিও শ্যা*ষ! ‘
আয়েশী অবাক হল। চোখ বেরিয়ে আসতে চাইল। লোকটার কথার অর্থ ধরতে পারল না। ধ্রুব এত শ*ক্ত করে আয়েশীর হাত ধরে রেখেছে, আয়েশীর হাতে কালশিটে দাগ পড়ে গেছে। ব্য*থায় হাত বোধহয় অবশ হয়ে যাচ্ছে। আয়েশী চোখ খিঁচে, ঠোঁট কা*মড়ে ধরে অস্ফুট সুরে বলল,
‘ আ-আমি ব্যথা পাচ্ছি। ‘
ধ্রুবর মস্তিষ্ক সচেতন হল। চট করে আয়েশীর হাত ছেড়ে দিয়ে সরে দাঁড়াল। আয়েশী ছাড়া পেয়ে আ*ঘাত প্রাপ্ত হাত চেপে ধরল। লাল হয়ে গেছে জায়গাটা। টনটন করছে। আয়েশী গুটিকয়েকবার জায়গাটায় ফুঁ দিয়ে ব্য*থা কমানোর চেষ্টা করল। জ্ব*লছে ভীষন। আয়েশী রেগে গিয়ে বলল,
‘ আপনি কি পাগল? আমার হাত স্পর্শ করার সা*হস কোথায় পেলেন? ‘
ধ্রুব মুখ এগিয়ে আনল আয়েশীর কানের কাছে। আয়েশী কিছুটা পেছালো। ধ্রুব হিসহিসিয়ে বলল,
‘ অধিকারবোধ থেকে সাহসের সৃষ্টি, প্রিয়তমা! ‘
আয়েশী কপাল কুঁচকে গেল। ঠিক কতটা নির্লজ্জ হলে বন্ধুর ভালোবাসাকে ‘প্রিয়তমা’ বলা যায়? ধ্রুব সকল সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। আয়েশী দাত খিঁচে দুবার ‘ ফা*লতু খা*রাপ লোক ‘ বলে গালি দিয়ে হনহনিয়ে কেবিনের দিকে পা বাড়াল। ধ্রুব পেছনে দাঁড়িয়ে রইল ঠায়। দুহাত প্যান্টের পকেটে গুঁজে বুক টানটান করে দাঁড়াল। বলল,
‘ খা*রাপের এখনও দেখেছ’টা কি? আমার আসল খা*রাপ রূপ তোমার রুহ অব্দি কাপিয়ে তুলবে, রক্তজবা। আমাকে আমার আসল রূপে ফিরে আসতে বাধ্য করো না। ‘
___________________________
কামরুল হাসানের জ্ঞান ফিরেছে। ধ্রুবসহ সবাই কামরুল হাসানকে ঘিরে দাড়িয়ে আছে। তবে কামরুল হাসানের ক্লান্ত, অবসন্ন চোখ তার আদরের মেয়েকে খুঁজে যাচ্ছে। নিজের আশেপাশে মেয়েকে না দেখতে পেরে, কামরুল হাসান মুখ খুললেন। স্ত্রীর দিকে চেয়ে বললেন,
‘ আ-আয়েশী ক-কোথায়? ‘
মনোয়ারা চুপ করে রইলেন। আয়েশীকে তিনি এখানে আসতে বলেছিলেন। কিন্তু আয়েশী আসে নি। মেয়েটার বুকটা অপরাধবোধে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। বাবার এই দুর্দশার জন্য নিজেকে দোষারূপ করছে। মনোয়ারা কতবার করে বললেন, ‘ তোর বাবা চোখ খুলে তোকেই খুঁজবে। একবার এসে দেখে যা। ‘ কিন্তু মেয়েটা আসল না। বড্ড একরোখা হয়েছে। স্ত্রীকে চুপ করে থাকতে দেখে, কামরুল হাসান ঘাড় কাত করে ওপাশ ফিরলেন। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
‘ আচ্ছা থাক, আসতে হবে না। ‘
স্বামীর বুকের কষ্ট বুঝতে পেরে, মেয়ের উপর বড্ড রাগ হলো মনোয়ারার। মেয়েকে নিয়ে আসতে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালে ধ্রুব বাঁধ সাধে। বলে, ‘ আপনি বসুন। আমি নিয়ে আসছি। ‘
মনোয়ারা পুনরায় বসেন। ধ্রুব ছেলেটা কত ভালো। তাদের পরিবারের কত খেয়াল রাখে। মানুষ হিসেবেও চমৎকার। কিন্তু মেয়েটাকে দেখ? এখনো জেদ ধরে বসে আছে। কি হয় এই সোনার টুকরা ছেলেকে বিয়ে করে নিলে? মৃদুল তো আর ফিরে আসবে না। এখন কি সারাজীবন আইবুড়ো হয়ে থাকবে নাকি? মেয়েটা কেন যে এত জেদি হলো?
ধ্রুব কেবিন থেকে বেরিয়ে গেল। চোখ ঘুরিয়ে আয়েশীকে খুঁজল। ওই তো জানালার পাশে দাড়িয়ে আছে। ধ্রুব হেঁটে গেল।
‘ আয়েশী? ‘
আয়েশী শুনল ধ্রুবর ডাক। তবে প্রত্যুত্তর করল না। ছোট্ট করে শ্বাস ফেলে চুপ করে তাকিয়ে রইল জানালার দিকে। ধ্রুব আয়েশীর পাশে এসে দাঁড়াল। নিজেও জানালার দিকে তাকাল। দশ তলার উপরে আছে তারা। এখান থেকে জানালার দৃশ্য চমৎকার দেখা যায়। চারিদিকে কোনো শোরগোল-হট্টগোল নেই। গাড়ি ঘোড়ার বি*শ্রী আওয়াজ নেই। শুধু শুনশান নীরবতা ছেয়ে রয়েছে। ধ্রুব মুচকি হেসে বলল,
‘ দৃশ্যটা সুন্দর। ‘
আয়েশী শুনল, তবে কথা বলল না। ধ্রুব একটু থেমে বলল,
‘ তোমার বাবা তোমায় খুঁজছিলেন। ‘
আয়েশীর চোখে জল ভরে। চোখের কোল ছাপিয়ে অশ্রু গড়াতে চায়। আয়েশী ঠোঁট চেপে ধরে কান্না আটকায়। তবে বেশিক্ষণ পারল না। একসময় কেঁদে ফেলে। ধ্রুব তাকায়। অন্যের জন্যে আয়েশীকে কাদতে দেখে ধ্রুবর ভালো লাগে না। আয়েশীর চোখের জলের কারণ হবে শুধু ধ্রুব। একমাত্র ধ্রুব আয়েশীকে কাদাবে, হাসাবে। আর কেউ না, এমনকি আয়েশীর জন্মদাতা বাবাও না।
ধ্রুব ঠায় চেয়ে রয় আয়েশীর পানে। কান্নার দাপটে আয়েশী নাক লাল হয়ে যায়। আয়েশী নাক টেনে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করে। ধ্রুব একসময় বিরক্ত হয়ে বলে,
‘ কাদছ কেন এত? ‘
‘ খুশিতে। আমার বাবা আমার কারণে হসপিটালের বেডে শুয়ে কাতরাচ্ছে, তাই আমার ভীষন সুখ পাচ্ছে। এই সুখে ম*রে যেতে পারছি না, তাই কাদছি। ‘
ধ্রুব ভ্রু বাঁকা করে তাকায়। এটা আবার কেমন উত্তর? ধ্রুব পকেট থেকে টিস্যু নিয়ে এগিয়ে দেয় আয়েশীর দিকে। আয়েশী নেয় না। ধ্রুব জোরপূর্বক টিস্যু হাতে ধরিয়ে দেয়। বলে, ‘ নাক মুছো। দেখতে বিশ্রী লাগছে। ‘
আয়েশী নাক টেনে হাসল। বলল, ‘ আমি বিশ্রী’ই। কারণ আমার সৌন্দর্য বিয়ের দিনেই আমায় ছেড়ে চলে গেছে। ‘
আয়েশীর কথায় ধ্রুবর কেপে উঠল যেন। এত গভীর কথা আগে কখনো শুনেনি সে। ধ্রুব ভ্রু কুঁচকে চেয়ে রইল নির্বিকার। আয়েশী পেছন ফেরে চলে যাওয়ার জন্যে পা বাড়াল। কিন্তু পুনরায় ধ্রুবর দিকে চেয়ে বলল,
‘ বিশ্রী আমি না। বিশ্রী হলেন আপনি। যে কিনা বন্ধুর ভালোবাসাকে বিয়ে করার জন্যে মরিয়া হয়ে যাচ্ছেন। ‘
আয়েশী চলে গেল। ধ্রুব দাতে দাঁত খিচে দাড়িয়ে রইল। কতবড় সাহস! ধ্রুবকে বিশ্রী বলে গেল। কথাটা আয়েশী না বলে যদি অন্য কেউ বলত, ধ্রুব তার জিহ্বা টেনে ছিঁ*ড়ে ফেলত। ছু*রির আ*ঘাতে গা ঝাঁঝরা করে ফেলত। তবে আফসোস…মেয়েটা আয়েশী ছিল। ধ্রুবর চোখ র*ক্তিম হয়ে গেল। পা দিয়ে পাশে থাকা ফুলের টবকে লা*থি দিয়ে নিচে ফেলে দিল। তবুও রাগ কমছে না। কাউকে ভ*য়ঙ্কর রকমের মা*রধর করতে পারলে, রাগটা কমবে বোধহয়। ধ্রুব গটগট পা ফেলে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে গেল।
আয়েশী জানালার কাঁচে হাত রেখে শুয়ে থাকা বাবার প্রতিবিম্বের পানে চেয়ে আছে। বাবার মুখটা কি ক্লান্ত লাগছে। মনে হচ্ছে কত জনম ধরে বাবা ঘুমান নি। শরীরে একদিনেই কেমন যেন মিইয়ে গেছে। হঠাৎ কামরুল হাসান গলা চেপে ধরে উঠে বসেন। তারপরই গড়গড় করে বমি করেন। র*ক্ত বমি দেখে আয়েশীর চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যায়। আর বসে থাকতে পারে না। ছুটে যায় বাবার কাছে। কামরুল হাসান এখনো বমি করছেন। আয়েশী বাবার কাঁধে হাত মালিশ করে দিয়ে বাবার দিকে করুন চোখে চেয়ে থাকে। কামরুল হাসানের বমি থামলে তিনি বেডে হেলান দেন। দুর্বল গলায় বলেন,
‘ আ-আ-য়েশী, মা এ-এসেছিস ত-তুই? ‘
বাবা কথা বলতে পারছেন না। ভীষন কষ্ট হচ্ছে তার। আয়েশীর চোখে জল এসে যায়। সে নিজেকে দমে রাখতে না পেরে, বাবার পাশে বসে কেঁদে ফেলে। বললে,
‘ তোমাকে আমার এমন দেখতে ভালো লাগছে না বাবা। আমার জন্যে আজ তোমার এমন অবস্থা। আমায় ক্ষমা করো। আমি আসতে চায়নি তোমার কাছে। কিন্তু আমি পারিনি বাবা। তোমাকে একটু কাছ থেকে দেখতে ইচ্ছে হল। নিজেকে আটকাতে পারিনি। ক্ষমা করো আমায়। ‘
কামরুল হাসান মেয়ের মাথায় হাত বুলালেন। বললেন,
‘ কাদে না, মা। আমি ঠিক আছি। ‘
আয়েশী ফুঁপিয়ে উঠে। কামরুল হাসান ভাবেন, এবার কি বিয়ের কথা তোলা উচিত তার। তার অসুস্থতার রেশ ধরে মেয়ে নিশ্চয়ই রাজি হয়ে যাবে। হ্যাঁ, স্বার্থপর হচ্ছেন তিনি। ছেলেমেয়ের ভালোর জন্য সব বাবাই স্বার্থপর হতে পারে। কামরুল হাসান মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
‘ ধ্রুবকে বিয়ে করে ফেল, আয়েশী। তোমাকে সুখে দেখলে আমি শান্তিতে ম*রতে পারবো। ‘
আয়েশী চোখ থেকে টপ করে গড়ায়। সবার আগে তার বাবা! বাবার কথা রাখতে নাহয় নিজেই ভেতর ভেতর ম*রে গেল। কি ক্ষতি তাতে? বাবা তো ভালো থাকবে। বাবাকে ভালো রাখতে আয়েশী সব করতে পারে। এমনকি নিজেকে মে*রেও ফেলতে পারে। আয়েশী ঠোঁট কামড়ে প্রচন্ড কষ্ট নিয়ে বলে,
‘ তুমি যা বলবে, আমি তাই করব বাবা। তবুও তুমি ভালো থাকো। ‘
#চলবে
গল্প পড়ে চুপচাপ চলে যাবেন না। রিয়েক্ট, দু লাইনের কমেন্ট করবেন প্লিজ। পেজের রিচ ডাওন হয়ে গেছে।
লেখিকার গ্রুপ,
আভার পাঠকঘর📚-stories of Ava Islam Ratri