#মৃত_কাঠগোলাপ- ৯
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
‘ ধ্রুব, তু-তুমি? ‘
মৃদুল বিস্ময়ে কথা বলতে ভুলে গেল। চোখের কোণ ঘেঁষে গড়িয়ে পড়ল অশ্রুবিন্দু। ধ্রুব ঠোঁট টেনে হেসে পা দিয়ে আরো হিং*স্রভাবে চেপে ধরল মৃদুলের হাতখানা। মৃদুল ব্যথায় সজোরে কুকিয়ে উঠল। ব্যথায় তার শরীর বেঁকে আসছে। ধ্রুব মৃদুলের হাতে পা রেখে মৃদুলের পাশে বসল। মৃদুলের মুখ, নাক দিয়ে গলগল করে র*ক্ত পড়ছে। ঠোঁটে, নাকের নিচে র*ক্ত জমে আছে। ধ্রুব কিছুটা র*ক্ত আঙ্গুল দিয়ে নিজের হাতে নিল। অতঃপর সেই র*ক্ত দিয়ে রাঙিয়ে দিল মৃদুলের কপাল। মৃদুল চোখ খিঁচে নিল। ধ্রুব বলল,
‘ য*ন্ত্র*ণা হচ্ছে, বন্ধু? ‘
মৃদুল এখনো ফ্যালফ্যাল চোখে চেয়ে! বিশ্বাস করতে ভীষন কষ্ট হচ্ছে, তার এত ভালো একজন বন্ধু তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। মৃদুল কম্পিত কণ্ঠে বলল,
‘ আমি তোমায় বিশ্বাস করেছিলাম। ‘
ধ্রুব হেসে ফেলল। হাসতে হাসতে একপ্রকার লুটিয়েই পড়ল মৃদুলের গায়ের উপর। মৃদুলের চোখের চাওনি ক্রমশ কাতর হচ্ছে। ধ্রুব হাসি চেপে বলল,
‘ মৃদুল, বোকা ছেলে! এত বড় হয়েছ, অথচ মানুষ চিনতে পারলে না এখনও। আমি হলাম ধ্রুব! যে কখনো কারো বিশ্বাসের যোগ্য না। তার জন্মই হয়েছে ধোঁকা দেবার জন্যে। যার জন্ম হলো এ পৃথিবীর জন্যে ক*লঙ্ক। অ*শুভ লগ্নে তার জন্ম। সে যেখানে নজর রাখে, তাই হয়ে উঠে অ*শুভ! যেদিন আমি জন্ম নিয়েছে, পুরো পৃথিবী সেদিন কেঁদেছে, বিক্ষোভ মিছিল করেছে। তোমাকেও কাঁদতে হবে, মৃদুল। ধ্রুব মানেই পাহাড়সম অশ্রু। যে ধ্রুবকে ভালোবেসেছে, সে নিজ ইচ্ছায় অশ্রুকে আপন করছে। তুমি আমায় বিশ্বাস করে ভুল করেছ, মৃদুল। মহা ভুল করেছ। এখন এই ভুলের মাসুল তো গুনতে হবে তোমার। ‘
ধ্রুবর এমন হিং*স্রতা মৃদুল পূর্বে দেখেনি। ধ্রুব হাসছে, পরক্ষণেই দাঁতে দাঁত খিচে অদ্ভুত শব্দ করছে। নীরব, ঘুটঘুটে অন্ধকার রাস্তা, ধ্রুবর তৈরি শব্দে ভয়ংকর গা ছমছমে লাগছে। মৃদুল শেষবারের মত বলল,
‘ আমায় ছেড়ে দাও, ধ্রুব। আয়েশী অপেক্ষা করছে আমার জন্যে। আমি আজ না গেলে ও মরে যাবে, ধ্রুব। ‘
ধ্রুব আবার হাসল। মৃদুলের গলায় হাত রেখে আঙ্গুল দিয়ে টিপে ধরল মৃদুলের তুলতুলে গলদেশ। মৃদুল ব্যথায় চোখ খিঁচে নিল। ধ্রুব ঘাড় ফুটিয়ে শব্দ করল। বলল,
‘ আজকের পর থেকে আয়েশী শুধু আমার জন্যে অপেক্ষা করবে, আমার জন্যে মরবে, আমার জন্যে বাঁচবে। তার প্রতিটা শ্বাস জুড়ে শুধু আমি থাকবো। তার প্রতিটা দোয়া জুড়ে আমার নাম থাকবে। আমার নাম, এই ধ্রুবর নাম। কিন্তু, কিন্তু… তার জন্যে তো তোকে ম*রতে হবে। তুই না মরলে আমার সমস্ত প্ল্যান ঘেঁটে ঘ হয়ে যাবে। ”
ধ্রুব নিজের ধারালো নখ চেপে ধরল মৃদুলের গলায়। নখের আঁচড়ে মৃদুলের গলা কেটে র*ক্ত বের হলো। মৃদুল ছটফট করতে লাগল। মৃদুলের য*ন্ত্রণা দেখে ধ্রুবর সুখ সুখ অনুভব হতে লাগল। ধ্রুবর চোখে খেলা করতে লাগল হিং*স্রতার র*ক্ত। ধ্রুবর চোখের সাদা অংশ লাল টকটকে হয়ে এল। ধ্রুব পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাককে ইশারা করল। ট্রাকের ড্রাইভার ইশারা বুঝে মাথা হেলালো। ধ্রুব সরে এল মৃদুলের থেকে। মৃদুল তখন অর্ধমৃ*ত। শরীর ছেড়ে দিয়ে মাটিতে পড়ে আছে সে। হঠাৎ ট্রাকের সামনের বাতি জ্বলে উঠতে দেখে, মৃদুলের গলা শুকিয়ে এল। হামাগুড়ি দিয়ে পালিয়ে যেতে চাইল ট্রাকের সামনে থেকে। তবে তার ভাগ্য তার সহায় হলো না। ট্রাক মৃদুলের গায়ের উপর দিয়ে চলে গেল। মালবাহী ভারী ট্রাকের নিচে চা*পা পড়ে মৃদুলের গা থে*তলে গেল। মৃদুল কিছুক্ষণ গলা কাটা মুরগীর ন্যায় ছটফট করে, সেখানেই মৃ*ত্য*বরণ করল।
ধ্রুব মৃদুলের মৃ*ত দেহের দিকে চেয়ে হাসল আবার। মৃত মৃদুলকে দেখতে ভীষন সুন্দর লাগছে। ধ্রুব একটা ভেজা টিস্যু দিয়ে হাতের র*ক্তটুকু মুছে নিল। তার পাশে থাকা পোষা মানুষরুপী কুকুরকে বলল,
‘ ফোন করে প্রেমিকাকে জানিয়ে দাও, তার প্রেমিকের নিষ্ঠুর মৃ*ত্যুর কথা। এও জানিয়ে দাও, তার আরেক প্রেমিক আসছে তাকে লুট করে নিয়ে যেতে। হা হা হা! ‘
ধ্রুব পাগলের মত হাসছে! তার পাশে দাড়িয়ে থাকা সেই গোলাম হতবম্ব চোখে চেয়ে রইল, পৃথিবীর এক বিশুদ্ধ ভালোবাসার মানুষের থেতলে যাওয়া ম*র*ণদেহের পানে!
__________________________________
বিয়ে বাড়ির ঝমকালো আয়োজনে ক্রমশ ভাটা পড়ছে। বিয়ে হবে না ভেবে একে একে আত্মীয়রা চলে যাচ্ছে। কিছু সংখ্যক আত্মীয়রা এখনো রয়ে গেছে। তবে তারা ব্যস্ত একে অপরের সাথে কানাঘুষা করতে। বিয়েতে বর আসে নি, কি যে লজ্জার কথা! মেয়ের দোষ আছে বোধহয়! মেয়ের চরিত্রে কি দোষ আছে? হবে হয়তো। আজকালের মেয়ে বাবা। দেখো গিয়ে কোথায় কোন নাগরের সাথে ফষ্টিনষ্টি করেছে। বিয়ের দিন বর জানতে পেরে গেছে মেয়ের লুতুপুতুর কথা, তাই বিয়েতেই আসেনি। হায় আল্লাহ! এখন এই মেয়ের কি হবে? কে বিয়ে করবে এই কলঙ্কিনী মেয়েকে?
আশপাশের মানুষজনের এসব কানাঘুষা সবই কানে আসছে আয়েশীর। তবুও আয়েশী চুপ করে বসে আছে চেয়ারে। কারো কথার উপর টু শব্দটি অব্দি করছে না। করবে কেন? সে জানে, মৃদুল আসবে। মৃদুল তাকে কথা দিয়েছে। মৃদুল কখনো তার কথার খেলাপ করবে না। আয়েশী জানে, তার মৃদুল আসবে, আসবে মৃদুল।
বড্ড ক্লান্ত লাগছে আয়েশীর। ব্রাইডাল মেকআপ নষ্ট হয়েছে কবেই। গরমে মেকআপ গলে বিচ্ছিরি লাগছে দেখতে তাকে। অনেকেই আয়েশীর মুখ দেখে মুখ টিপে হাসছে। অথচ আফসোস, কেউ আয়েশীর মনের মধ্যে বয়ে যাওয়া এক সর্বগ্রাসী তুফানকে বুঝতে পারল না।
আয়েশীর ভাই, তুষার আয়েশীর পাশে এসে দাঁড়াল। আয়েশী তখন মৃদুলের অপেক্ষায় সদর দরজার দিকে চেয়ে। তুষার দরজার থেকে তাকাল। কেউ নেই সেখানে। আর কেউ আসবেও না। তুষার আয়েশীর কাঁধে হাত রাখল। আয়েশীর চোখ বেয়ে টপ করে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল। তুষার বলল
‘ আয়েশী, বোন আমার। ঘরে চল। আর কতক্ষণ এভাবে অপেক্ষা করবি? মৃদুল আসার হলে এতক্ষণে এসে যেত। ‘
আয়েশী দুহাতে চোখ মুছলো। পরক্ষণেই আবার ভিজে উঠল কাজল নষ্ট হওয়া তার দু চোখ। আয়েশী কম্পিত কণ্ঠে বলল,
‘ সে আসবে, ভাই। আমি জানি সে আসবে। ‘
তুষার দীর্ঘশ্বাস ফেলল। সে জানে, তার বোন পাগলের মত মৃদুলকে ভালোবাসে। তুষার গেল না। চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল বোনের পাশে। আয়েশী একটু পর গলা নামিয়ে বলল,
‘ ভাই, একটু প-পানি খাওয়াবি? গ-গলাটা খ-খুব জ্বলছে। ‘
আয়েশীর কণ্ঠে কান্নার স্রোত। অনেক কষ্টে মেয়েটা কান্না চেপে রেখেছে। পানির কথা বলতে বলতেও আয়েশী চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। বোনের এমন করুন অবস্থা দেখে তুষারের কান্না পেয়ে যাচ্ছে। তুষার আর দাঁড়ালো না সেখানে। বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে চুপচাপ পানি আনতে চলে গেল। তুষার চলে গেলে, আয়েশী আবারও চোখ রাখল সদর দরজার দিকে। মৃদুল এখনও আসছে না কেন?
#চলবে
গল্প পড়ে চুপচাপ চলে যাবেন না। কমেন্ট না করুন, কমপক্ষে একটা রিয়েক্ট করবেন। একটা রিয়েক্ট কিংবা একটা কমেন্ট একজন লেখককে অনেক বেশি উৎসাহিত করে। সবাইকে লেখিকার পক্ষ হতে অজস্র ভালোবাসা!
লেখিকার গ্রুপ,
আভার পাঠকঘর📚-stories of Ava Islam Ratri