#একমুঠো_রোদ_আর_প্রজাপতি_বিস্কুট পর্ব_২
#মৌমি_দত্ত
পার্কিং স্পেস পার হয়ে আবিরদের দরজার সামনে গিয়ে কলিং বেল দিলো। আবির শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে দরজা খুলে দিলো। তার ভালোই জানা আছে এখন কে আসতে পারে বা না পারে।
ঢুকে মাত্র প্রতিদিনের মতো আবিরকে দেখেই লজ্জা পেলো মিশু। দ্রুত ঘরে ঢুকে ডাইনিং টেবিলে চলে গেলো। ঠিক করতে লাগলো সব খাওয়ার জন্য। আবির তখন ড্রয়িং রুমের সোফার থেকে টাই পড়ছে। কিন্তু হঠাৎই আর্তনাদ করে উঠলো হাত ঝেড়ে। মিশু একদৌড়ে চলে এলো ড্রয়িং রুমে। এসেই দেখলো হাত ঝাড়ছে আবির। মিশু দ্রুত এসে আবিরের হাত টেনে নিয়ে এলো রান্নাঘরের সিংকের কাছে। কলের পানি ছেড়ে নিচে দিয়ে দিলো হাত৷ এরপর ভালো করে লক্ষ্য করে বুঝলো ডান হাত কেটে গেছে অনেকিটাই আঙ্গুলের দিকে।
মাথা ঘুরিয়ে কালকে রাতের বাসনগুলো খেয়াল করে দেখলো ধোয়ার জায়গায়। অনেকটাই খাবার আর আধোয়া একটা চামচ রয়ে গেছে। চোখ বড় করে রাগ দেখালো মিশু এরপর আবিরের দিকে। আবির অসহায় ভাবে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বললো,
– কাঁচের ফুলদানি হাত লেগে ভেঙ্গে গেছিলো কাল তুই যাবার পর। তাই পরিষ্কার করতে গিয়ে এই অবস্থা।
– কেন আমাকে ডাকা যেতো না? মরে গেছি আমি? মরে গেছি?
মিশুর কথা শুনে আলতো হেসে আবির মিশুর গাল টেনে দিলো।মিশুর রাগ সব মূহুর্তে গলে গেলো। তবুও মিছে রাগ বজায় রেখে ফার্স্ট এইড বক্স এনে হাত ব্যান্ডেজ করে দিলো। এরপর খাওয়ার টেবিলে টেনে এনে বসিয়ে রুটি ছিড়ে নিলো ভাঁজি তুলে নিলো রুটির ভাঁজে। আবির অবাক হয়ে সব দেখছে। মিশু এরপর খাবারটা তুলে ধরলো আবিরের মুখের সামনে।
– নাও। হা করো!
আবির নিজের বিষ্ময় চেপে খেয়ে নিলো। মেয়েদের রূপ বড় বৈচিত্র্য। একদিকে অনিন্দিতা, যে খোঁজ নিতে পারে না। আরেকদিকে মিশু, যে খোঁজ নিতে ভুলে না।
আবিরকে খাইয়ে দ্রুত নিজের টুকু খেয়ে আবিরের ব্যাগে টিফিন ভরে দিলো চামচ সহ।
– আজকের লাঞ্চ কিন্তু মাংস ভুনা আর খিচুড়ি সাথে আচার। সবটা শেষ করবে।
আবির বাধ্য ছেলের মতো মাথা নাড়ালো। মিশু তা দেখে হেসে নিজেকে শেষবার আয়নায় দেখে নিলো। এরপর বেরিয়ে এলো দু’জন বাসায় তালিয়ে লাগিয়ে রাস্তায়। আবিরের বাইকে উঠে পিছন থেকে আবিরকে জড়িয়ে ধরে বসলো মিশু। তা দেখে খানিক রাগ প্রকাশ করলো আবির।
– মিশু! তুই আর বাচ্চাটি নেই। এভাবে বসলে মানুষ কি ভাববে?
– তুমি কি ভাববে?
মিশুর পাল্টাই প্রশ্ন আবিরের কাছে। আবির ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো। তারপর আমতা আমতা করে উত্তর দিলো,
– আমি কি ভাববো আবার?
– তাহলে বাইক চালানো শুরু করো না। লোকের ভাবনা ভাবতে বসলে কেন?
আবির মৃদু হাসলো। যা আয়না থেকে ধরা পড়লো মিশুর চোখে। মিশুর মুখেও হাসি ফুটলো। সে যে এই হাসির কারণ হতে চায় বারবার।
.
.
মিশু স্কুল শেষে কোচিংয়ে এসে লাঞ্চ করতে বসেছে। এটাই তার নিয়ম। তখনই হঠাৎ মাথায় এলো মানুষটা লাঞ্চ করেছে তো। তাড়া দিলো এক মেয়ে দ্রুত খেয়ে নিতে নাহয় স্যার আসবে। বাধ্য হয়ে ভাবনা ছেড়ে একলোকমা খাবার মুখে দিলো মিশু। কিন্তু গলা দিয়ে তো নামতেই চাইছে না। নাহ! এভাবে চলা কি সম্ভব? স্যারের থেকে ছুটি নিয়ে বাসায় চলে এলো সে। আজ তার মনে চিন্তা থেকেই যাবে।
মেয়েকে এই অসময়ে বাসায় দেখে অবাক হলেন মর্জিনা। আফিনাও ফিরে এসছে আজকে মাঝ সকালে। মর্জিনা আর আফিনা বসে আড্ডা দিচ্ছিলো মিশুর বাসায়। আফিনাকে দেখেই ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো মিশু। মেয়েকে এমন অসময়ে দেখে মর্জিনা আর আফিনা চমকালো। আফিনা প্রশ্ন করে বসলেন,
– কিরে মিশু? এই অসময়ে কেন তুই? স্কুল যাস নি?
মর্জিনা প্রশ্ন করলেন,
– শরীর খারাপ লাগছে আম্মা?
মিশু দু’জনকে দুই হাত জড়িয়ে ধরে বললো,
– উফফফফ! কিচ্ছুটি হয়নি আমার। আমি আমার দুই মায়ের দোয়ায় আর আল্লাহর রহমতে ভালো আছি।
মর্জিনা আর আফিনা হেসে উঠলো। আফিনা তখনই বলে ফেললেন একটা বেঁফাস কথা।
– এই! আমার বোনের মেয়ের ছবি নিয়ে এসছি। দেখে বল তো, তোর আবির ভাইয়ের পাশে কতোখানি মানাবে? মেয়েটা না সেই রুপসী। ভার্সিটিতে পড়ছে।
মর্জিনার মুখ শুকিয়ে আসলো মেয়ের চোখে জল দেখে। কিন্তু সে তো নিরুপায়। তার বিশ্বাস আফিনা কখনো মিশুর সাথে আবিরের মিল নিয়ে ভাববেন না। মিশু আবিরের তুলনায় খুব ছোট। মিশু জল ছলছল চোখে বললো,
– বাহ! বেশ করেছো। কিন্তু আবির ভাই একজনকে ভালোবাসে।
চমকে তাকালো মর্জিনা আর আফিনা দু’জনেই। কি বলছে মিশু এসব? মিশু এই বলেই ধুপধাপ পা ফেলে চলে গেলো নিজের রুমে। আর দরজা চাপিয়ে দিলো। ফ্রেশ হয়ে এসে কান্না করতে করতে নীরবেই শুয়ে পড়লো।
আফিনার চমকানো দেখে মর্জিনা অন্যদিকে কথা ঘুরালো। কিন্তু আফিনার চোখে মুখের সন্দেহের রেখা দূর করতে পারলেন না। আর না অর্থোদ্ধার হলো তার কাছে মিশুর কথার।
.
.
আবির সবে দুই কলিগের সাথে কথা বলতে বলতে লাঞ্চ করতে টেবিলে বসেছিলো। ব্যান্ডেজ হাত নিয়ে কিভাবে খাবে তাই ভাবছিলো। কোনোমতে চেপে বাটি খুলতেই তো জান যাবে মনে হচ্ছিলো। বাটির ভিতর দেখলো পেলো দু’টো চামচ। অবাক হলো খুব আবির। পরক্ষনেই হেসে উঠলো যুক্তিটা বুঝতে পেরে। মিশু ভালোই জানে আচার হালকা পছন্দ করে আবির। তাই যে চামচ আচারে ডুবাবে তা দিয়ে খিচুড়ি খেতে পারবে না কোনোদিনও। এরপরের বক্সটা খুলতেই দেখলো মাংসগুলো টুকরো টুকরো করে দেওয়া যেভাবে আবির সচরাচর খায়। আবিরের ভ্রু আর হাসি মুখ দুটোই অদ্ভুত সুন্দর দেখালো। মেয়েটা কি তার খাওয়ার সময়ও তাকিয়ে থাকে মন দিয়ে? নিজেকে ভাগ্যবান মনে হলো আবিরের।
আবির সবে শেষ চামচ মুখে তুলেছে তখনই অদূরে দেখতে পেলো অফিসের বস ও অনিন্দিতাকে একসাথে হাত ধরা ধরি করে বসে হাসতে। অবাক হলো খুব। সব গুছিয়ে আস্তে পায়ে ওখানে গিয়ে দাঁড়াতেই অনিন্দিতা এক লাফে উঠে দাঁড়ালো। এরপর হাসি হাসি মুখ করে বললো,
– আবির তুমি? কোথায় ছিলে আজকে লাঞ্চ টাইমে? আমার সাথে নামলে না যে?
আবির অবাক হয়ে বললো,
– আমি তো একটু দূরেই বসে লাঞ্চ করেছি। উলটো তোমাকেই দেখতে পাইনি আজকে তোমার ক্যাবিনে। কল দিয়েছিলাম অফিসে এসে, ধরোনি।
অফিসের বস উঠে দাঁড়ালো। এরপর একরাশ এটিট্যুড নিয়ে বললো,
– কারণ ও এখন আমার আন্ডারে কাজ করবে। শি ইজ মাই পিএ নাও।
আবির যেন আকাশ থেকে পড়লো। সাধারণ এমপ্লয় থেকে বসের পিএ? তবুও নিজের বিষ্ময় লুকিয়ে বললো,
– বাহ! কংগ্রাচুলেশনস।
এমন সময় টাইম হয়ে গেলো সবার অফিসে ঢুকবার। আবিরও তাই পা চালিয়ে হারিয়ে গেলো সবার ভীড়ের মাঝে। অনিন্দিতা খানিকটা বিরক্তি নিয়ে বললো,
– আয়াশ বেবি! একে কি করবো বলো তো?
বস আয়াশ বললো,
– কাল বা পরশু জানিয়ে দেবে মুখের উপর যে ভালোবাসার কোনো সম্পর্ক রাখতে চাইছো না তুমি। ব্যস! এরপর আমি ওকে চাকরি থেকেও বের করে দেবো। ওর আইডিয়াস অনেক পাওয়া হয়ে গেছে যা দিয়ে আমাদের কোম্পানী ভালোই এগিয়ে যাবে কয়েক বছর।
আয়াশ আর অনিন্দিতা হেসে উঠলো হো হো করে।
চলবে…….
পর্ব ৩:
https://www.facebook.com/263481925517338/posts/422869959578533/