#একমুঠো_রোদ_আর_প্রজাপতি_বিস্কুট পর্ব_১

0
494

#একমুঠো_রোদ_আর_প্রজাপতি_বিস্কুট পর্ব_১
#মৌমি_দত্ত

– আবির ভাই এটা কিন্তু একদম ঠিক হচ্ছে না বলে দিচ্ছি। তুমি দাবা খেলায় ভালো হবে কেন? একদম ভালো হবে না।

মিশিকা বেনুনি নাচিয়ে মাথা দোলালো বাচ্চাদের মতো। আবির হাসলো শুধু। মিশিকার বেনুনি টান দিয়ে বললো,
– সামনেই কম্পিটিশন। বাচ্চামো না করে জলদি শিখে নে৷ নাহয় কিন্তু কান ধরে উঠবোস।

আবির কথা যা বললো তা মিশিকার কানে গেলো কিনা জানা নেই । কিন্তু আবিরের দিকে একটানা তাকিয়ে হা হয়ে থাকলো মিশিকা। আবির মিশুকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে অবাক হাসলো।
– আচ্ছা তুই কি দেখিস বলতো মিশু?

ক্লাস নাইনের মিশু হালকা লজ্জা পেয়ে অন্যদিকে তাকালো। প্রশ্নের ছাপ রয়েই গেলো আবিরের মুখে। মিশু তা দেখে উঠে যাচ্ছিলো। তখনই আবির বলে উঠলো,
– মিশু! মাথাটা টিপে দে তো। মাথাটা ধরেছে রে দাবা নিয়ে থেকে থেকে।

এই বলেই আবির চোখের চশমা খুলে মাথা এলিয়ে দিলো কাঠের কেদারার হাতলে। মিশুর কিশোরি বুক কেঁপে উঠলো। হালকা লজ্জা, হালকা ভয় আর হালকা শংকা নিয়েই কয়েক পা এগিয়ে গেলো চাকুরিজীবি যুবক আবিরের দিকে। আবারও দৌড়ে দরজা পর্যন্ত গিয়ে বললো,
– চা করে আনছি। ওসব মাথা টেপার কাজ আমার না।

আবির এক হাত উঠিয়ে মিশুর পালানোতে বিষ্ময় প্রকাশ করলো। পরক্ষনেই হেসে দিলো। এমন সময় তার মুঠোফোন কেঁপে উঠলো প্রচন্ড জোড় নিয়ে। আবিরের মুখে হাসি ফুটলো। আবির দিলশাদ এই একটা ফোনের অপেক্ষায় হা হুতাশ করে কতোখানি। তা তার নিজেরও হিসেব নেই। অনিন্দিতা কল করেছে। আবির উঠে বারান্দায় চলে গেলো। কানে ধরেই বললো,
– হ্যালো!
——-
– একি! আমাকে না বলেই যাচ্ছো যে বাড়ি?
——-
– না, তা নয়। স্বাধীনতা তোমারও আছে অবশ্যই।
——-
– আচ্ছা অনি, শুনো না। অনিন,,,দি।

মিশু চা করে কাপ হাতে এসে দেখলো ঘর খালি। বুঝে নিলো নিশ্চয় তার আবির ভাই বারান্দায়। মিশু বেনুনি দুলিয়ে বারান্দায় গিয়ে দেখলো আবির বারান্দার রেলিংয়ে হাতের ভর রেখে মুখ ঢেকে আছে। মিশুর বুক কামড়ে উঠলো।
– আবির ভাই? কি হয়েছে? তুমি ঠিক আছো তো?

আবির ঝট করে মাথা তুলে তাকালো। মৃদু হাসার চেষ্টা করলো। হয়তো ভেবে নিলো মিশু বিশ্বাস করেছে। কিন্তু মিশু কি আর অতো সহজে বিশ্বাস করবে আবিরের কথায়? আবির বুঝলো মিশুর সন্দেহ যায়নি। মৃদু হেসে আবির মিশুর হাত টেনে পাশে দাঁড় করিয়ে দিয়ে আকাশের দিকে তাকাতে ইশারা করলো আঙুল দিয়ে। এরপর দু’জনেই নীরবে দাঁড়িয়ে থাকলো অনেকটা সময়। আবির দেখলো আকাশ। আর মিশু দেখলো তার আবির ভাইকে।

সন্ধ্যার আযান পড়ার ঠিক আগের মূহুর্তে আবির বাসায় পাঠালো মিশুকে। মিশুও বেনুনি দুলিয়ে চলে এলো। আফিনা মঞ্জিল আর বিলাসবাড়ি দুটো পাশাপাশি বিল্ডিং। আফিনা মঞ্জিল এর বর্তমান মালিক আবির দিলশাদ। আবির তার মা আফিনা মঞ্জিলকে নিয়ে থাকে নিচের ফ্লোরে। আর ৫ তলা ভাড়া দিয়েছে। বিলাসবাড়ি ইব্রাহিম আখন্দের। স্ত্রী মর্জিনা ও মেয়ে মিশু আখন্দকে নিয়ে তার সুন্দর সংসার। ইব্রাহিম আর আবিরের বাবা জমির ভালো বন্ধু ছিলেন। তাই পাশাপাশি বিল্ডিং বেঁধেছে। আবির মিশুকে দেখে আসছে তার জন্ম থেকে। মিশুর গুণে গুণে ১২ বছরের বড় সে। এখন আবিরের বয়স ২৮। একটা বড় বেসরকারি কোম্পানিতে ম্যানেজারের পদে চাকরি করছে সে। আর মিশুর বয়স সবে ১৫। পাড়ার মোড়ে থাকা প্রাইভেট স্কুলের ছাত্রী ক্লাস নাইনের। আবির ভক্ত মিশু আবিরের কাছে পড়তে যায়।
.
.
মিশু বাসায় আসতেই মর্জিনা মৃদু হাসলেন। মিশুও দৌড়ে গিয়ে শাক বাছতে থাকা মর্জিনাকে জড়িয়ে ধরে দুলতে লাগলো।
– আমার মেয়েটা আজকে অনেক খুশী মনে হয়। আজকে কি হয়েছে শুনি? আবির বাবা মিশুমনিকে কি বলেছে আজ?
– ধ্যাত আম্মু। তুমিও না।

মিশু লাজুক মুখে নিজের রুমে পালালো ব্যাগ কাঁধে। নামাজ পড়তে হবে যে। নামাজে যে দোয়া চাইতে হবে প্রতিদিনকার মতো, যেন তার আবির ভাই বুঝে যায় তার পিচ্চি মনের কথা। ভেবেই মুচকি হেসে দ্রুত অজু করে নামাজে বসলো মিশু। মর্জিনা মেয়ের পালানো দেখে হাসলেন। মেয়ের সাথে তার বন্ধুত্ব সূলভ সম্পর্ক। মেয়ে সবসময় এসে তাকে বলে সব কথা। মেয়ের কাছেই জেনেছে মর্জিনা যে সে আবিরকে ভালোবাসে। এতে অবশ্য আপত্তি নেই মর্জিনার। আবিরের পরিবারকে সে অনেক বছর ধরে চিনে। আবির ভালো ছেলে। জমির সাহেব মারা যাওয়ার পর থেকে নিজের পড়ালেখা আর সংসার দুটো সামলেছে আবির।

মিশু নামাজ শেষেই পড়তে বসলো। পড়ার মাঝখানে তার মাথায় আসলো আজকের কান্ডটার কথা। আনমনা হয়ে গেলো সে। আজ দিনটা বিশেষ ছিলো খুব। সে তার আবির ভাইয়ের সাথে সূর্যাস্তের সময় উপভোগ করেছে। আচ্ছা তার আবির ভাইও কি তাকে ভালোবাসে কিন্তু বলতে পারছে না? নাহয়…

রুমে মর্জিনা আখন্দের প্রবেশের আওয়াজে হুশ ফিরলো মিশুর। মাকে দেখে মিষ্টি করে হাসলো মিশু। মর্জিনার বুক কেঁপে উঠলো। মেয়েটার হাসি তার বড্ড মিষ্টি লাগে। মনে মনে আল্লাহর কাছে মিনতি করলো যেন মায়ের নজরও না লাগে তার এই হাসিমুখের, হাসি মাখা জীবনে। নিজের মেয়ের পাশে খাটে বসে মিষ্টি হাসলো সে নিজেও। এরপর মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
– আমার আম্মাটা কি ভাবে?

মিশু হালকা লাজুক হয়ে অবাক হওয়ার ভঙ্গি করে বললো,
– কই কিছুই না তো। আমি কি ভাববো?

মর্জিনা মৃদু হেসে মিশুর মাথায় হাত বুলালো। মিশু সব খাতাপত্র খাটের একপ্রান্তে রেখে মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। মর্জিনা উৎসাহিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– হ্যাঁ রে! আবিরের কিছুতে বুঝেছিস সেও তোকে ভালোবাসে?

মিশুর মুখে লাজুক হাসি ফুটলো।
– ধ্যাত আম্মু। তুমিও না!

মর্জিনা খিলখিল করে হাসলেন। মিশু লজ্জায় মাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।

– উফফ! বল না।

মর্জিনার অনুরোধ। মিশু মাথা তুলে একচোখে চোরা ভাবে তাকালো। এরপর উঠে বসে হাঁটু জড়িয়ে বসলো। এরপর বললো,
– কি আর বলবে সে লম্বু মানুষটা? শুধু তো জানে মিশু হাত টিপে দে, মিশু চা এনে দে, মিশু আম্মুকে ডেকে দে। আজ আমি চা দিয়ে চলেই আসতাম হয়তো। কিন্তু কোনো এক কারণে লম্বু মানুষের মন অস্থির ছিলো। তাই আমার হাত টেনে তার পাশে দাঁড় করিয়ে সূর্যাস্ত দেখলো।
মর্জিনার চোখে মুখে আশা। তার আদরের মেয়েকে এদিক দিয়েও আল্লাহতা’আলা অনেক সুখ দিয়েছেন। আবিরকে দেখে যদিও তার কখনো মনে হয়নি সে মিশুকে ভালোবাসতে পারে। কিন্তু এখন সে খুশী।
.
.
ঘুম থেকে সকাল সকাল উঠে পড়লো মিশু। তাকে স্কুলে দিতে যায় স্বয়ং আবির। তাই দেরি করে আবিরকে মনক্ষুণ্ণ করতে একদমই চায় না। আর গত ক’দিন ধরে আফিনা বাপের বাড়িতে আছে। তাই তো মিশুর বাসার থেকেই তার অফিসের লাঞ্চ প্যাক হয়, সকালের খাবার রেডি হয়, রাতের খাবার যায়। সবটা বিশেষ যত্নে করে মিশু। এই জন্যেই তো আফিনা অনেক শান্তিতে ঘুরাঘুরি করতে পারেন। মিশুর উপর তার শতভাগ ভরসা আছে।

দ্রুত স্কুলের জন্য রেডি হয়ে মায়ের কাছ থেকে নিজের আর আবিরের সকালের নাস্তা আর দু’জনের জন্য লাঞ্চ বক্স নিয়ে নিলো। বাবাকে মৃদু ঘুমের মধ্যে জড়িয়ে বাই জানালো। এরপর দরজা খুলে ব্যাগ কাঁধে দ্রুত হেঁটে গেইট পার হয়ে পাশের বিল্ডিংয়ের গেইট দিয়ে ঢুকলো

চলবে……

লেখিকার আইডি লিংক: https://www.facebook.com/profile.php?id=100078483709067

পাবলিক পোস্টে ” পাঠক ” কমেন্ট করতে ভুলবেন না।কারণ লেখিকা কোনো সুপার ন্যাচারাল পাওয়ার সমৃদ্ধ মানবী নয়, আল্লাহর তৈরি সাধারণ এক বান্দি।

পর্ব ২ :
https://www.facebook.com/263481925517338/posts/422312582967604/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here