#মৃত_কাঠগোলাপ – ১৪
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
ঘরময় তীব্র নিকোটিনের গন্ধ! ধোঁয়ার গন্ধে পাকস্থলী যেন গুলিয়ে আসে। ওসমান নেহাৎ ভদ্র লোক হওয়ায় নিকোটিন ছুঁয়ে দেখে না। কিন্তু ধ্রুবর কারণে ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও নিকোটিনের ধোঁয়া গিলতে হয়। ধ্রুব ল্যাপটপের সামনে বসে আছে। ঠোঁটে বাঁকা হাস। চোখে উজ্জ্বলতা! গায়ে জড়িয়ে থাকা ফকফকা সাদা বাথরুব, যা হাঁটু অব্দি এসে থেমে গেছে। হাঁটুর নিচে দৃশ্যমান রোমশ ত্বক! ধ্রুব সোফায় হেলান দিয়ে বসল। দু হাত দু দিকে ছড়িয়ে সোফার হাতলে রেখে তাকাল ওসমানের দিকে। ওসমান মাথা নত করে কিছু একটা ভাবছে। ধ্রুব বলল,
‘ কি ব্যাপার ওসমান? কিছু নিয়ে টেন্সড? ‘
ওসমান জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভেজাল। কিছুটা জড়তা নিয়ে বলল,
‘ আসলে, তেমন কিছু না স্যার। ‘
‘ আরে, বলো বলো। আজ মনটা ভালো। যা চাইবে তাই পাবে। সময় থাকতে সুযোগটা লুফে নাও। ‘
ওসমান এবার খানিক সহজ হল। হাতের উপর হাত রেখে ঘষছে। ওসমান বলল,
‘ স্যার, সামনের সপ্তাহে পর আমার মেয়ের বিয়ে। তাই ছুটি….’
ওসমানের কথা আটকে গেল ধ্রুবর তীক্ষ্ম শকুনি নজরে। ভ্রু দুটি ভাঁজ হয়ে যেন চোখের পাতায় নেমে এসেছে। ওসমানের আর কথা বাড়ানোর সাহস হল না। কথাগুলো গলাধঃকরণ করে নিশ্চুপ চিত্তে মাথা নত করে নিল। ধ্রুব কণ্ঠে তীক্ষ্ণতা ঢেলে ঘোষণা করল,
‘ মেয়ের বিয়ের জন্যে টাকাটাই হল মেইন। টাকা ছাড়া আজকাল ভিখারীও বিয়ে করতে চায়না। তুমি এত বছর ধরে আমার সাথে আছ। তাই তোমায় একটুখানি দয়া করাই যায়। সময়মত টাকা পৌঁছে যাবে তোমার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। ‘
ওসমান ছলছল চোখে মাথা নত করে রইল। টাকাই কি দুনিয়ার সব? তার স্ত্রী কতদিন ধরে বলছে, তাদের একটু সময় দিতে। অন্তত মেয়ের বিয়েতে স্ত্রী, ছেলে মেয়ের সাথে থাকতে। টাকার অভাব সে কখনই করে নি। ধ্রুব তাকে মাসে অনেক টাকা দেয়। কিন্তু প্রিয়জনের সাথে কাটানো মুহূর্ত কি টাকা দিয়ে কেনা যায়? ওসমানের চোখ বেয়ে টপ করে এক ফোঁটা জল গড়াল। ধ্রুব ওসমানের দিকে তাকাল না। বরং ল্যাপটপের স্ক্রিনে ভাসমান আয়েশীর ঘুমন্ত চেহারা দেখে চোখে তৃষ্ণা মেটাচ্ছে। আর কিসের অপেক্ষা? এবার তার আদরের রক্তজবাকে নিজের কাছে বন্দী করার সময় হয়ে গেছে। অনেক তো হলো এই ছল চাতুরী। এবার নাহয় জড়তার সুতো ছিঁড়ে যাক, অনুভূতিগুলো আড়াল ছেড়ে বেরিয়ে আসুক, সম্পর্ক দড়ি মজবুত হোক!
খোঁচা খোঁচা দাড়ি ভর্তি থুতনিতে আঙ্গুল ঘষে কিছু একটা চিন্তা করল ধ্রুব। অতঃপর ফিক করে হেসে ফেলল। ধ্রুবর আচমকা হাসির শব্দে ওসমান অবাক হল। ধ্রুবর দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকাল। ধ্রুব ল্যাপটপে দিকে চেয়ে বলল,
‘ আমার রক্তজবার ভাই কোথায় চাকরি করে, ওসমান? ‘
ওসমান শিউরে উঠল। আতঙ্কে বুক ভেসে গেল। এখন কি তবে আরেকটা ফুলের মত জীবন ঝরতে যাচ্ছে? ওসমান চুপ করে গেল। উত্তর না পেয়ে ধ্রুব বড় বিরক্ত হল। ভ্রুরু কুঁচকে এল। ধমকে বলল,
‘ চুপ কেন? উত্তর দাও? ‘
ওসমান কম্পিত কণ্ঠে বলে,
‘ একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে। ‘
‘ তার বাবা তো রিটায়ার্ড, তাইনা? ‘
‘ আব.. হ-হ্যাঁ স্যার। ‘
‘ দ্যাটস গুড! ‘
ধ্রুব পুনরায় ল্যাপটপে চোখে রাখল। আয়েশীর স্কার্ট বটে হাঁটুর উপরে চলে এসেছে। টপসও কোমড় থেকে সরে গেছে। কাপড় উল্টেপাল্টে বিচ্ছিরি লাগছে দেখতে। এই মুহূর্তে আয়েশীকে ভীষন আবেদনময়ী লাগছে। ধ্রুব ল্যাপটপের উপর দিয়ে আয়েশীর উন্মুক্ত কোমড়ে হাত রাখল। সঙ্গেসঙ্গে তার সারা অঙ্গে কাঁপন ধরল। চোখ বুজে গেল। মেয়েটার শরীরে কি বিদ্যুৎ খেলে? কি ভয়ঙ্কর!
আয়েশীর শরীরের স্পর্শে ধ্রুবর লোম শিহরণে যেন ঝলসে যায়। ধ্রুব চোখ বুজে মিনমিন করে বলে,
‘ দ্য টাইম হ্যাজ কাম, ফ্লাওয়ার ক্যান্ডি। বন্দি হওয়ার জন্যে অপেক্ষা করো, রক্তজবা! আর মাত্র কয়েকদিন! যত পারো উড়ে নাও। পাখনা কাটার জন্য আমি আসছি। ‘
ওসমান শুধু চেয়ে থাকে এক মানুসিক বিকারগ্রস্থ ভয়ংকর এ লোকের পানে। ক্রমাগত ঢোক গেলে। ভয়ে ঘাম জমে। এই প্রথম কোনো মেয়ের জন্যে ওসমানের করুণা হচ্ছে। ধ্রুব একটা ভালো মেয়ের জীবন তার ভয়ানক থাবায় তছনছ করতে যাচ্ছে। মেয়েটার কি দুর্ভাগ্য! দুঃখে ওসমানের চোখে জল ভরে।
______________________________
‘ ওই আর সরি মিস্টার তুষার মাহবুব! কোম্পানির ইনফরমেশন লিক করার অপরাধে আপনাকে চাকরি থেকে বহিস্কার করা হল। ‘
বসের কথা শুনে তুষারের মাথায় যেন বজ্রপাত হল। চোখে অন্ধকার দেখল। তুষার উত্তেজিত হয়ে বলল,
‘ ইম্পসিবল স্যার। আমি এ ধরনের কাজ করিনি। গত তিন বছর ধরে আমি এ কোম্পানিতে চাকরি করছি। এ কোম্পানিকে নিজের দায়িত্ত্ব বলে ভেবে এসেছি। আমি কেন এ কাজ করব? ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড স্যার। আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে। ‘
জিহাদ হোসেন গম্ভীর হয়ে কি বোর্ড হাত চালালেন। তুষারকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে বললেন,
‘ দুপুরের মধ্যেই রিজেগনেশন লেটার তোমার কাছে পৌঁছে যাবে। ইউ মে গো নাও। ‘
তুষারের মুখ তেতো হয়ে গেল। দাঁতে দাঁত লেগে গেল ভয়ংকর রাগে। যে অপরাধটি সে করেনি সে অপরাধের সাজা কেন সে পাচ্ছে? তুষার আবার কিছু বলতে যাচ্ছিল। কিন্তু বস চোখ গরম করে তাকালেন তুষারের দিকে। তুষার দমে এল। চোখ দিয়ে আগুন ঝড়িয়ে গটগট করে বেরিয়ে গেল বসের কক্ষ থেকে। তুষার চলে গেলে জিহাদ হোসেন হাফ ছাড়েন। তুষারের উপর মিথ্যা আরোপ লাগাতে তার কষ্ট হচ্ছিল। কিন্তু তিনি নিরুপায়। তার হাত যে পরিবারের মমতা দিয়ে বাঁধা।
‘ কাজ হয়ে গেছে ‘ জিহাদ হোসেন মোবাইলের কিবোর্ড চেপে নির্দিষ্ট নম্বরে মুঠো বার্তা পাঠিয়ে দিলেন। বক্স থেকে টিস্যু নিয়ে কপালের ঘাম মুছে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলেন। ভীষন অসহ্য লাগছে তার। হার্টের রোগটা কি তবে পুনরায় বৃদ্ধি পেল?
#চলবে
আমার প্রি টেস্ট এক্সামের কারণে পর্ব দেরি+ ছোট করে দিচ্ছি।
আমি পরীক্ষার পড়া ছেড়ে সময় বের করে গল্প লিখি। কিন্তু আপনাদের দু লাইন মন্তব্য করতে হাত কাঁপে। কেন? লেখকের কষ্টের মূল্য দিতে শিখুন। এই যে লেখকরা কষ্ট করে সময় অপচয় করে গল্প লেখে আপনাদের বিনোদনের জন্যে। তার কষ্টের মুল্য দিতে ছোট করে একটা রিয়েক্ট কিংবা একটা সুন্দর মন্তব্যই যথেষ্ট! আশা করছি, আমার পাঠকরা মন খুলে রিয়েক্ট ও সুন্দর মন্তব্য করে আমাকে উৎসাহিত করবেন। ভালোবাসা!
লেখিকার গ্রুপ,
আভার পাঠকঘর📚-stories of Ava Islam Ratri