#মৃত_কাঠগোলাপ – ২

0
930

#মৃত_কাঠগোলাপ – ২
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

সেই অনুষ্ঠানে ধ্রুবর ভীষন মনে ধরেছে আয়েশীকে। সম্পূর্ণ অনুষ্ঠানে ধ্রুবর নয়ন শুধুমাত্র একজনাতে আটকে ছিল। সে হলো, আয়েশী। আয়েশী যখন নৃত্যের তালে কোমড় দুলায়, ধ্রুবের মনে হয় তার মাথা ধরে যাচ্ছে এক অদ্ভুদ ঘোরে। আয়েশীর হাসি তো হাসি নয় যেন আস্ত এক বিষবাণ! ধ্রুবর পাথরের ন্যায় মন চট করে আয়েশীর প্রেমে নাস্তানাবুদ হয়ে গেল।

নাচ শেষ হলো! আয়েশী স্টেজ থেকে নেমে পুনরায় বন্ধুদের পাশে এসে দাঁড়ালো। ধ্রুব মনেমনে উশখুশ করছে এই অতীব সুন্দরী নারীর সঙ্গে কথা বলার জন্য। তার সুন্দর মুখের মত তার কণ্ঠেও কি জাদু আছে? তার শরীরের মেয়েলি বাঁকের ন্যায় আকর্ষণীয় কি তার আচরণও? ধ্রুবর আর তর সইলো না। ধ্রুব চট করে নিজের চেয়ার ছেড়ে স্টেজ ছেড়ে নেমে গেল। অনুষ্ঠানের অন্যান্য অতিথিরা সবাই ধ্রুবর এমন কাণ্ডে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলেন। অনেকেই তাকে পেছন থেকে ডাকতে চাইলেন। তবে ভার্সিটির ভিসি তাদের আটকে দিলেন। চোখের ইশারায় জানালেন, ‘ ধ্রুবকে না আটকাতে। যদি তারা তাকে আটকায়, তবে ধ্রুবের রাগ উঠবে। আর ধ্রুবের রাগ কতটা ধ্বংসাত্মক তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ‘ ‘
ভিসি দীর্ঘশ্বাস ফেলে আরো জানান, ‘ ধ্রুব পেছন ডাকা পছন্দ করে না। তিনি এও জানালেন, ধ্রুব কতটা মারাত্বক খারাপ মানুষ!’

ভিসির কথা শুনে সবার থম হয়ে গেল। কপাল বেয়ে ঘাম ছুঁটল। তরুণ টগবগে এক মানুষ, আর সে কি না এতটা ভয়ানক! এতটা মারাত্মক মানুষের পেছনে লাগতে না যাওয়াই ভালো বোধ হল তাদের! তাই তারা সবাই চুপচাপ নিজেদের চেয়ারে বসে ভয়ার্ত চোখে ধ্রুবকে লক্ষ্য করতে লাগল।

ধ্রুব গায়ের কালো ব্লেজার খুলে হাতে নিল। চুলগুলো হাত দিয়ে একটু পেছনে ঠেলে সুদর্শন হওয়ার চেষ্টা করল। তবে তার কোনো বিশেষ প্রয়োজন ছিল না। ভার্সিটির অন্যান্য মেয়েরা এমনিতেও ধ্রুবের আচরণে ডুবে ডুবে জল খাচ্ছে! তারা নানা ভঙ্গিমায় ধ্রুবের নজরে পড়ার চেষ্টা করছে। হায়, কি অবুঝ তারা!

আর এক কদম এগুলেই আয়েশী! কিন্তু সেই এক কদম আর বাড়ানো হলো না ধ্রুবর। হঠাৎ আয়েশীর এক ছেলে বন্ধু আয়েশীর হাতখানা নিজের মুঠোয় পুড়ে নিল। ধ্রুব স্পষ্ট লক্ষ্য করলো, ছেলেটার স্পর্শে আয়েশীর মুখে লজ্জার আভা। আয়েশী প্রাণখুলে হাসছে। হঠাৎ হঠাৎ সেই ছেলেটার কাধে মাথা রেখে সুখী সুখী নিঃশ্বাস নিচ্ছে। ধ্রুবর বুঝতে বাকি নেই, এই ছেলেটি আয়েশীর প্রেমিক পুরুষ! ছেলেটাকে আয়েশীর কাছাকাছি ভাবতেই ধ্রুবর মাথায় রক্ত উঠে গেল। কপালের রগ ফুলে নীল রঙা আকার ধারণ করল। হাত দুটো মুষ্টিবদ্ধ করে ধ্রুব দু কদম পিছিয়ে গেল। পকেট থেকে ফোন বের করে কাউকে কল করে টগবগে রাগ নিয়ে জানালো,
‘ আধা ঘন্টার মধ্যে ওই ছেলেটার লাশ আমি আমার পায়ের নিচে চাই! গট ইট? ‘

কোনো কথা শোনার আগেই ধ্রুব ধাম করে ফোন কেটে দিল। ফাঁকা এক স্থানে দাড়িয়ে ধ্রুব পলক ফেলা বিহীন নজরবন্দী করছে আয়েশী ও তার আশপাশের মানুষজনকে। একবার মেয়েটাকে নিজের হাতে এনে ফেলুক, তারপর বুঝাবে অন্যদের সাথে প্রাণখুলে হাসিমজার করার শাস্তি!

হঠাৎ একজন ওয়েটার ধ্রুবর কাছে এগিয়ে আসলো।
‘ স্যার, এনি ড্রিংকস? ‘

ধ্রুবর মনোযোগে বাঁধা পড়ায়, সে আগুন চোখে ওয়েটারের দিকে তাকাল। ধ্রুবর এমন হিংস্র চাওনি দেখে একপ্রকার গুটিয়ে গেল সেই ওয়েটার। মাথা নত করে চুপচাপ চলে যেতে নিলে, ধ্রুব তাকে আটকায়। তার হাতের ট্রে থেকে একটা ড্রিঙ্কস নিয়ে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় সেই ওয়েটারকে। ধ্রুবর ধাক্কায় ওয়েটার ট্রে শুদ্ধ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। ট্রেতে থাকা সকল কাচের গ্লাস ফটাফট মাটিতে পড়ে ভেঙে যায়! কয়েকটা কাঁচের টুকরো বিধে যায় ওয়েটারের হাতে পায়ে! ধ্রুবর এসবে লক্ষ নেই। সে হাতে থাকা কাঁচের গ্লাসটা একহাতে শক্ত করে ধরে তখনও চেয়ে আছে আয়েশীর দিকে। ওয়েটার ধ্রুবর এমন নির্লিপ্ততা দেখে হুড়মুড়িয়ে উঠে দাঁড়ায়। এক মুহুর্ত কাল বিলম্ব না করে দৌঁড়ে পালিয়ে যায় সেখান থেকে।

আয়েশী ও তার প্রেমিক পুরুষের লীলাখেলা ক্রমশ ধ্রুবর কাছে অসহ্য ঠেকছে। রাগ-টা কিছুতেই সামলানো যাচ্ছে না। রাগে ধ্রুবর হাতে থাকা কাঁচের গ্লাসটা এতই শক্ত করে ধরেছে যে একসময় সেই কাঁচের গ্লাস ধ্রুবের হাতেই ভেঙে যায়। ধ্রুব তখনো নির্বিকার। গ্লাসের কাঁচ গুলো সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে ধ্রুবের হাতে বিদ্ধ হয়ে পড়ে। ধ্রুবর হাত বেয়ে রক্তের স্রোত গড়াচ্ছে! ধ্রুব একপল জখম হওয়া হাতের দিকে তাকালো। অতঃপর ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো। হাতটা মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে নিয়ে হাতের মধ্যে লেপ্টে থাকা সমস্ত রক্ত ঠোঁট দিয়ে শুষে নিয়ে খেয়ে ফেলল। রক্তের নোনতা স্বাদ ধ্রুবর বড়ই পছন্দের!

আয়েশী ও তার প্রেমিক পুরুষ নিজেদের মধ্যে কথা বলতে বলতে রাস্তা পাড় হচ্ছে। ধ্রুব তাদের পেছনে তার গাড়ির মধ্যে কাঁচ উঠিয়ে বসে আছে। ওই তো সামনে দেখা যাচ্ছে, একটা ট্রাক আয়েশীদের দিকেই এগিয়ে আসছে। ধ্রুব বাঁকা হাসলো। এবার জমবে আসল খেল! পথের কাঁটা তবে দূর হচ্ছে!

কিন্তু হঠাৎ ধ্রুবর কিছু একটা মনে পড়ল। সঙ্গেসঙ্গে সে চাল বদলে ফেলল। গাড়ি থেকে দ্রুত নেমে দৌঁড়ে আয়েশীদের কাছে এসে তাদেরকে একটানে রাস্তার মাঝখান থেকে সরিয়ে ফুটপাথে এনে ফেলল। ঠিক তখনি ট্রাকটা শো করে তাদের শরীর ঘেঁষে চলে গেল। একটু হলেও আয়েশী, মৃদুল ও ধ্রুব একসঙ্গে অ্যাক্সিডেন্ট করতে পারত। মৃত্যুভয়ে আয়েশী ভয়ার্ত চোখে খামচে ধরেছে মৃদুলকে। তার পাঁপড়ি কাপছে, ফোলা গাল দুটোতে ভয়ের স্পষ্ট আভা! ধ্রুবের কাছে আয়েশীকে তখন এক অপ্সরীর ন্যায় মনে হচ্ছিল! কিন্তু পরক্ষণেই আয়েশীকে অন্য পুরুষের সংস্পর্শে দেখে ধ্রুবর পূর্বের রাগ তরতর করে বেড়ে গেল। কিন্তু সে দ্রুত তার রাগ সংবরন করে নিল। এখন রেগে যাওয়া মানে তার সাজানো গোছানো প্ল্যানে পানি ফেলা।

সেই ছেলেটার নাম মৃদুল। সেও মৃত্যুভয়ে কিছুটা গুটিয়েই গেছে। মৃদুল একহাতে আয়েশীকে জরিয়ে ধরে কৃতজ্ঞতার চোখে তাকালো ধ্রুবর দিকে। ধ্রুব তখন কাপড়ে থাকা ধুলো ঝাড়ছিল। মৃদুল ধ্রুবকে কৃতজ্ঞতা জানাতে বললো,
‘ ধন্যবাদ, ম্যান। আপনি না থাকলে আজ হয়তো আমাদের আর বাড়ি ফেরা হতো না। রাস্তায়ই মরে পড়ে থাকতাম। থ্যাংকস অ্য লট। ‘

ধ্রুব আয়েশীর থেকে চোখ সরালো। মুচকি হেসে মৃদুলকে বললো,
‘ নট এট অল। এটা আমার কর্তব্য ছিল। বাই দ্য ওয়ে, আমি ধ্রুব! ‘

ধ্রুব হ্যান্ডশেক করার জন্যে মৃদুলের দিকে এক হাত বাড়িয়ে দিল। মৃদুল ধ্রুবর সাথে হাত মিলিয়ে বলল,
‘ আমি মৃদুল। ‘

সেইদিন থেকে ধ্রুব ও মৃদুলের একটা ভালো সম্পর্ক হয়ে যায়। তারা একে অপরের খুব ভালো বন্ধু হয়ে যায়। কিন্তু কে জানত, এসবের পেছনে ধ্রুবর এক নির্মম পরিকল্পনা ছিল। ধ্রুবর হাতে অস্ত্র মানায়, কিন্তু বন্ধুত্বের হাত, এ তো অবিশ্বাস্য!
মৃদুলের সাথে বন্ধুত্বের অভিনয় করতে করতে ধ্রুব মনেমনে তাকে খুন করার ভয়ংকর পরিকল্পনা সাজায়। এমন পরিকল্পনা যেখানে, সাপও মরবে আর লাঠিও ভাঙবে না!

#চলবে
আমি সবসময় একদিন পর পর গল্প দেই। কিন্তু কাল আপনাদের অনুরোধে আজ একটা ছোট করে পর্ব দিলাম। গল্পটাকে যারা যারা এত ভালোবাসা দিচ্ছেন, তাদেরকে অজস্র ভালোবাসা!
যারা গল্পটা পড়বেন, রেসপন্স করবেন প্লিজ!

লেখিকার গ্রুপ,

আভার পাঠকঘর📚-stories of Ava Islam Ratri

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here