#বাল্যবিবাহ
[২য় পর্ব]
লেখক – আবির চৌধুরী
ক্লান্ত শরীর নিয়ে খাটের উপরে শুয়ে আছে নীলা। এমন সময় তার স্বামী নিলয় রুমে প্রবেশ করেন সাথে দরজাও বন্ধ করে দেন৷ নীলা তার ক্লান্ত শরীর নিয়ে আবার তার স্বামীকে খুশি করার কাজে ব্যাস্ত হয়ে যায়৷ নীলার চোখ বেয়ে পানি পড়ছে কিন্তু সেটা নিলয়ের চোখে পড়ছেনা৷ তার কারণ যে তো সুখের রাজ্যে বাস করছে৷ এবার নিলয় উঠে ফ্রেশ হতে চলে যায়৷ নীলা খাটের উপরে বসে বসে কান্না করতে থাকে। এই ভাবেই চলতে থাকে নীলার দিন আর রাত। বিয়ের ঠিক কিছুদিন পরে নীলা নিলয় কে বলল — আমার আব্বা আম্মার কথা খুব মনে পড়ছে তাদের সাথে দেখা করতে ইচ্ছে করছে খুব, আপনি যদি অনুমতি দেন তাহলে আমি আমার বাপের বাড়িত যেতে চাই।
নিলয় রাগি কন্ঠে বলে উঠল — কেন?ওই বাড়িতে কে আছে তোর? নাকি কোনো নাগর আছে তার সাথে দেখা করতে হবে?
— কি বলছেন আপনি এসব? আসলে আব্বা আম্মার কথা মনে পড়ছে তাই যেতে চাইছি।
— যেতে হবে না।
এই কথা বলেই নিলয় চলে গেলো। নীলা খাটের উপরে বসে কান্না করতে থাকে। একটু পরে অন্যঘর থেকে নীলার শ্বাশুড়ি ডাক দিল।
— জ্বী মা বলুন!
— আমাকে একটু চা বানিয়ে দাও তো। আধা বাড়িয়ে দিবে গলাটা ব্যাথা করছে খুব।
— ঠিক আছে মা আমি এক্ষুনি বানিয়ে দিচ্ছি।
তারপর নীলা চা বানাতে গিয়ে দেখে ঘরে আধা নেই। আধা ছাড়াই চা বানিয়ে নিয়ে গেল।
নীলার শ্বাশুড়ি চা মুখে নিয়ে আবার বের করে ফেলে দিয়ে বলল — এটা কি চা?
— কেন মা কি হয়েছে?
— আবার জিগ্যেস করে কি হইছে! চায়ে আধা নাই আর এতো নোনতা কেন চা?
— আসলে মা আধা নেই ঘরে। আর লবণ একটু বাড়িয়ে দিছি গলা ব্যাথা কমার জন্য।
— তোমার চা তুমি খাও।
এই কথা বলে নীলার শ্বাশুড়ি চায়ের কাপ ছুড়ে ফেলে দিল। নীলা চায়ের কাপ মাটি থেকে উঠিয়ে মন খারাপ করে তার ঘরে চলে গেল। একটু পরে নিলয় ফোন নিয়ে এসে নীলাকে বলল — তোমার আম্মা কল দিয়েছে কথা বলে নাও।
নিলয় নীলার হাতে ফোন দিয়ে বাহিরে চলে গেলো।
— কেমন আছিস মা?
— আমি তো খুব ভালো আছি তোমারা সবাই কেমন আছো?
— আমরা সবাই ভালো আছি। তোর গলাটা এমন শোনাচ্ছে কেন?
— কই না তো আমি ঠিক আছি।
— মায়ের কাছে লুকাতে পারবিনা কোনো কিছু। আমি বুঝতে পারছি তুই কান্না করছিস! কি হইছে মা আমাকে বল!
— তোমাদের খুব মিস করছি। কতদিন হয়ে গেলো তোমাদের দেখতে পাচ্ছিনা।
— তোর আব্বা কাল যাবে তোকে দেখতে।
নীলার মায়ের মুখে কথাটা শুনে খুব খুশি হয়ে গেলো। তারপর তারা আরো কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে দিল। একটু পরে নিলয় এসে ফোন নিয়ে আবার বাহিরে চলে গেলো। নিলয় তেমন একটা নীলার সাথে কথা বলে না।
পরের দিন জামসেদ আলী নীলার শ্বাশুড়ি বাড়িতে আসল মিষ্টি নিয়ে। বাসার সামনে এসে দরজার কলিং বেলে চাপ দিতেই নীলার শ্বাশুড়ি এসে দরজা খুলে দিল।
— বেয়াই সাহেব কেমন আছেন?
— জ্বী আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তা বেয়াইন সাহেবা আপনি কেমন আছে?
— আমিও ভালো আছি। ভিতরে আসুন!
তারপর তারা বাসার ভিতরে প্রবেশ করল।
— বেয়াইন সাহেবা জামাই কে দেখতে পারছিনা কেন? আর নীলা কেউ দেখতে পারছিনা।
— নিলয় তো অফিসে চলে গেছে আর বউমা মনে হয় নিজের রুমেই আছে। দাঁড়ান আমি ডেকে দিচ্ছি। বউমা এদিকে আসো তোমার আব্বা আসছে।
নীলা কথাটা শুনেই দৌড়ে জামসেদ আলীর সামনে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল।
— কিরে মা কান্না করছিস কেন? দেখ আমি আসছি।
— কেমন আছেন আব্বা?
— আলহামদুলিল্লাহ ভালোই আছি। তুই কেমন আছিস মা?
— আমিও ভালো আছি।
নীলার শ্বাশুড়ি এবার বলল — বউমা বেয়াইয়ের জন্য নাস্তার ব্যবস্থা করো।
— জ্বী মা আমি এক্ষনি যাচ্ছি।
নীলার শ্বাশুড়ি নীলার সাথে এখন খুব ভালো ভাবে আচরণ করছে। নীলার বাবাকে দেখাচ্ছে এসব যে তার মেয়েকে কতটা সুখে রেখেছে তারা৷ কিন্তু জামসেদ আলী তো কিছুই জানেনা এই মানুষ গুলো ঠিক কেমন!
জামসেদ আলী বলল — বেয়াইন আমি নীলাকে কিছুদিনের জন্য আমাদের বাড়িতে নিয়ে যেতে চাই। আপনি যদি অনুমতি দেন!
— বেয়াই সাহেব আসলে কি বলব বাসায় তো নিলয় ও নেই আমি কি করে অনুমতি দেব? আচ্ছা বউমা আরো কিছুদিন থাকুক তারপর না হয় নিলয় বউমাকে নিয়ে ঘুরে আসবে।
— ঠিক আছে।
এমন সময় নীলা নাস্তা নিয়ে আসল।তারপর সবাই নাস্তা খেয়ে নিল।
নীলা নীলার বাবাকে বলল — আব্বা আজকে থেকে যাও। কাল যাবে ঠিক আছে?
— নারে মা বাড়িতে অনেক কাজ আছে অন্য একদিন এসে থেকে যাবো।
জামসেদ আলী তার মেয়ের মাথায় হাত ভোলাত ভোলাতে কথাটা বলল।
এবার নীলার শ্বাশুড়ি ভালো সাজার জন্য বলল — আরে বেয়াই বউমা যখন বলছে থেকে যান। একদিনের তো ব্যাপার!
— না আরেকদিন এসে থেকে যাবো। আজকে তাহলে আমি উঠি। যাইরে মা ভালো থাকিস। বেয়াইন আমার মেয়েটাকে দেখে রাখবেন।
— বেয়াই সাহেব কিযে বলেন না নীলা কি শুধু আপনার মেয়ে? আমারও তো মেয়ে তাইনা? আপনাকে কোনো চিন্তা করতে হবেনা।
খুশি মনে জামসেদ আলী বেরিয়ে চলে গেলো। এবার নীলার শ্বাশুড়ি নিজের আসল রুপ ধরল– বাবার সামনে এতো নেকামি করে কান্না করার কি ছিল?
নীলা কিছু না বলে মাথা নিচু করে কান্না করছে। হঠাৎ নীলার শ্বাশুড়ির চোখ পড়ল মিষ্টির উপরে মিষ্টি গুলো কম দামী হওয়াতে নীলার সামনে ছুড়ে ফেলে দিয়ে নীলাকে নানারকম ভাবে অপমান করতে থাকে। নীলা মাথা নিচু করে সব হজম করে নিল। একটু পরে নিজের রুমে গিয়ে কান্না করতে থাকে। এই ভাবে কেটে গেলো প্রায় দুই মাস।এই দুই মাসে নীলাকে অনেক অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে। নিলয় এর মধ্যে বেশ কয়েকবার নীলার গায়েও হাত তুলেছে।
দুই মাস পর।
__________________
নীলার শ্বাশুড়ি নীলাকে বলল তরকারি গরম করে রাখতে৷ তো নীলা তরকারি গরম করতে গিয়ে মাথা ঘুরে পড়ে যায়। নীলার পড়ে যাওয়ার শব্দ শুনে নীলার শ্বাশুড়ি দৌড়ে গিয়ে দেখে নীলা মাটিতে পড়ে আছে। নীলার শ্বাশুড়ি কোনরকম ভাবে নীলাকে খাটের উপরে শুইয়ে দিয়ে নিলয়কে ফোন দিয়ে বলে একটা ডাক্তার নিয়ে আসতে। নিলয় কিছুক্ষণ পরে একটা ডাক্তার নিয়ে আসে। ডাক্তার নীলাকে ভালো করে দেখে নিলয়কে বলল — কংগ্রাচুলেশনস নিলয় তুমি বাবা হতে চলছ।
নিলয় কথাটা শুনে অনেক খুশি হয়ে গেলো। এর মধ্যে নীলার জ্ঞান ফিরছে। নীলাও কথাটা শুনতে পেলো। নীলার ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসির ফুটে উঠল।
ডাক্তার বলল — ওনাকে দিয়ে কোনো ভারি কাজ করাবেন না। এই সময় ওনার খেয়াল রাখতে হবে বেশি বেশি।
নীলার শ্বাশুড়ি বলল — ডাক্তার এসব নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবেনা আমিও সন্তানের মা। আমি জানি সব কিছুই কখন কি করতে হবে।
ডাক্তার — তা হয়তো ঠিক। তবে আমার যেটা দ্বায়িত্ব সেটা আমাকে তো বলতেই হবে। তবে এতো তাড়াতাড়ি বাচ্চা নেওয়া ঠিক হয়নি।
নিলয় — ডাক্তার চলুন আপনাকে এগিয়ে দিয়ে আসি।
ডাক্তার — হুম
তারপর ডাক্তারকে নিয়ে নিলয় বাসা থেকে বের হয়ে চলে গেলো। নীলা নিজের রুমে শুয়ে থাকে।
একটু পরে নীলার শ্বাশুড়ি নীলার রুমে আসল।
চলবে,,,